অভিমানেই আছো তুমি?,part:02

0
1268

অভিমানেই আছো তুমি?,part:02
Writer:-TanjiL Mim

?
মাঝরাতে ব্যস্তহীন রাস্তায় দৌড়াচ্ছি আমি’!!আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে কিছু বাজে ছেলে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার’!!এখন কে বাঁচাবে আমায়’!!কিছুক্ষণ আগে মেলা থেকে ঘুরে বাড়ি ফিরছিলাম!! মিষ্টি তাদের বাড়ির রাস্তা চলে আসায় সে চলে গেল’!!আমিও আনমনেই হেঁটে যাচ্ছিলাম এমন সময় কতোগুলো বাজে ছেলেকে পিছনে আসতে দেখে ভয়ে ঘাবড়ে যাই আমি’!!ধীরে ধীরে স্পিড বারিয়ে পরক্ষণেই দৌড়াতে শুরু করলাম আমি’!!আর ছেলেগুলো দৌড়াচ্ছে আমার পিছন পিছন’!!এতটা রাত হয়ে যাবে বুঝতেই পারি নি’!!

“বর্তমানে দৌড়াচ্ছি আমি……

“এদিকে গাড়ির উপরে বসে লাগাতার বিঁড়ি খেয়ে চলেছে আদিত্য’!!তার পাশে তার বন্ধুরাও আছে’!!মাঝে মাঝেই আদিত্য এমন করে মাঝরাতে ব্যস্তহীন রাস্তায় এসে বসে থাকে’!!কেন করে সেটা তার বন্ধুরা জানে না’!!ভয়ে কখনো জিজ্ঞেস করতেও পারে না’!!

||
“হাঁপাতে হাঁপাতে একটু দাঁড়িয়ে পরলাম আমি’!!হর্ঠাৎই সামনে আদিত্যকে দেখে নিমিষেই ভয় গায়েব হয়ে গেল আমার’!!এমন একটা মুহূর্তে আদিত্যের সাথে দেখা হয়ে যাবে সেটা ভাবতে পারি নি’!!এমন সময় পিছনে এসে দাঁড়ালো ছেলেগুলো’!!সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে আদিত্যের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি’!!তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বললামঃ

————“জানেমন এতরাতে এইভাবে তোমার সাথে দেখা হয়ে যাবে এটা ভাবতেই পারি নি’!!প্লিজ ওই গুন্ডাগুলোর হাত থেকে বাঁচাও আমায়…..

||
“এদিকে আদিত্য এতরাতে একটা মেয়েলি কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে আরেকবার সিগারেটে টান দিয়ে মুখ থেকে ধুয়া উড়িয়ে সামনের দিকে তাকালো’!!আবারও আরুশিকে দেখে কিছু বললো না সে’!!ওর পিছনে থাকা ছেলেগুলোর দিকে শুধু একবার তাকালো’!!তারপর ওর বন্ধুদের একটা ইশারা করতেই ওরা দ্রুত গতিতে আরুশির পিছনের ছেলেগুলোর দিকে দৌড়ে গেল’!!আদিত্যের বন্ধুদের এভাবে দৌড়াতে দেখে বাজে ছেলেগুলো ভয়ে দৌড়ে পালালো’!!

“এদিকে আমি এইভাবে ছেলেগুলোকে দৌড়াতে দেখে খুশি হয়ে বললামঃ

————“থ্যাংকু জানেমান…’!!

“আমার কথা শুনে আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে এসে বললোঃ

————“এতরাতে এখানে কি করছো….(গম্ভীর আওয়াজে)

————-“ও কিছু না একটু বান্ধবীর সাথে মেলায় ঘুরতে এসেছিলাম……

“এমন সময় আদিত্যের বন্ধুরা এসে বললোঃ

———–“ভাই সবগুলো ভয়েই পালিয়ে গেছে…….

“ছেলেটির কথা শুনে আমি খুশি হয়ে বললামঃ

————“চলে গেছে খুব ভালো…..(হাতে তালি দিয়ে)তা তোমরা এতরাতে কি করছো এখানে…….

————–“ওহ কিছু না ভাই একটু হাঁটতে বেরিয়ে ছিল……

————–“ওহ গাড়ি করে হাঁটতে বেরিয়েছে…..

“সাথে সাথে আদিত্য রেগে গিয়ে বললোঃ

————“এত বক বক না করে বাড়ি যাও,এত প্রশ্ন কেন তোমার…..

————-“না মানে এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম’!!তারপর চুপ করে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি’!!আমাকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদিত্য দমক দিয়ে বলে উঠলঃ

————-“কি হলো কথা কি কানে যাচ্ছে না…..

“সাথে সাথে আমি নেকা কান্না দিয়ে বললামঃ

————-“একা যাবো না আমায় বাড়ি পৌছে দেও জানেমন….

————-“কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তোমার…..

————“আমার মাথা ঠিকই আছে তোমার টা গেছে দেখছো একটু আগে কতোগুলো বাজে ছেলে পিছু নিয়েছিল কোথায় বলবে তোমায় পৌঁছে দেই আমি তা না……

“আরুশির কথা শুনে আদিত্য কিছু একটা ভেবে রাশেদকে বললোঃ

———-“রাশেদ তুই গিয়ে ওকে ওর বাড়ি পৌঁছে দিয়ায়……

———–“ও কেন যাবে তুমি যাবে জানেমন…..
আচ্ছা চলো জানেমান আমরা একসাথে হেঁটে বাড়ি যাই……

“আমার কথা শুনে আদিত্য চোখ গরম করে তাকালো আমার দিকে’!!কিন্তু পাত্তা দেয় কে’!!হুট করেই আদিত্যের হাত ধরে হাঁটা শুরু করলাম আমি’!!সাথে আদিত্যের বন্ধুরাও ছিল’!!কেউ কিছু বললো না আদিত্য নীরবতায় চললো’!!হাঁটছি আর আদিত্যের হাত ধরে বলছিঃ

————“জানেমন আমরা বিয়ের পর এইভাবে রোজ রাতে ঘুরতে বের হবো ঠিক আছে’!!তারপর এওতো এওতো পিক তুলবো’!!তারপর সেগুলোর এলবাম তৈরি করে বাড়ির দেয়ালে সাজিয়ে রাখবো ঠিক আছে’!!আমার মতো আমি বক বক করে চলেছি আর আদিত্য তার মতো চুপ করে হেঁটে চলেছে আর বিঁড়ি টেনে চলেছে’!!হুট করেই দাঁড়িয়ে পরলাম আমি’!!তারপর আদিত্যের কাছ থেকে বিঁড়িটা হাতে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে বললামঃ

————-“আমি এতো বকবক করছি আর তুমি আছো একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে যাচ্ছো…..

“হুট করেই আদিত্য আমার হাত চেপে ধরে তার কাছে এনে রেগে গিয়ে বললোঃ

————“তোমার সমস্যা কি বলো তো’!!সারাদিন শুধু বকবক করো’!!আর তোমায় আমি বিয়ে করবো না একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবে না’!!বিয়ে করলে অন্য কাউকে করবো তারপরও তোমায় করবো না…….

“আদিত্যের কথা শুনে আমি রেগে বললামঃ

———–“কি আমায় ছেড়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে তোমার খবর আছে’!!আর তোমার আমাকে বিয়ে করার দরকার নেই’!!বিয়ে আমি তোমায় করবো’!!

“এই বলে হুট করেই আদিত্যের পকেট থেকে তার ফোনটা বের করে উড়াধুরা ছবি তোলা শুরু করে দিলাম আমি’!!কেন করলাম জানা নেই আমার তবে ভালো লাগছিল’!!আদিত্য আমার কাজ দেখে রেগে বললোঃ

————–“এসব কি করছো তুমি…….

————-“তুমি যাতে আমায় ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে না পারো আর ব্যবস্থা করছি’!!এই বলে আদিত্যের খুব কাছে ছবি তোলা শুরু করে দিলাম’ আমি’!!আমার কাজে আদিত্য বিরক্ত হয়ে তার ফোনটা নেওয়ার জন্য লাফালাফি করতে শুরু করল’!!

“কিন্তু আমি দেবো না’!!এক পর্যায়ে আরুশি আদিত্যের গালে কিস করে বসে আর তার হাতে মোবাইলের ক্যামেরা অন থাকায় ভুল ক্রমে ক্লিক হয়ে যায় আর ফটো উঠে যায়’!!হুট করে এমন কিছু হবে সেটা হয়তো আদিত্য আরুশি কেউ বুঝতে পারে নি’!!আদিত্য তার ফোনটা হাতে নিয়ে চেঁচিয়ে বললোঃ

————“এসব কি করলে তুমি,বেয়াদব মেয়ে’!!

“আদিত্যের দমকে কেঁপে উঠলাম আমি’!!পরক্ষণেই কিছু না ভেবে দৌড়ে আদিত্যের কাছ থেকে চলে আসলাম আমি’!!জানি ওখানে থাকা মানেই বিপদ’!!একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে’!!কিন্তু ইচ্ছে করে কিছু করিছি কি’!!

“আর আদিত্য রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল’!!আর হাজারটা গালি দিতে লাগলো আরুশিকে বেশি বার বেড়ে গেছে মেয়েটা…..

||

“বাড়ি এসে সোজা দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলাম আমি’!!পরক্ষণেই মুচকি হেঁসে আমি ঘুম……

“এভাবেই কাটছিল আদিত্য আর আরুশির দিন’!!প্রতিদিন বিভিন্ন ভাবে আরুশি আদিত্যকে বিরক্ত করতো’!!নানাভাবে জ্বালাতন করতো’!আর আদিত্য শুধু তাকে ইগনোর করতো আর অপমান করতো’!!আরুশি ভেবেছিল কখনো না কখনো আদিত্য তাকে ভালোবাসবেই’!!তার প্রতি একটু হলেও ফিলিংস ছিলো আদিত্যের’!!কিন্তু তার এই ধারণা ভুল প্রমানিত হলো সেদিন……..

__________________________________________

_______________________

“আজকে ভার্সিটির নবীন বরন অনুষ্ঠান’!!এ বছরের যারা নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে তাদের জন্য’!!আর আমি সিনিয়র হওয়ার জন্য তার দায়িত্ব আমাদের উপরও পরেছে’!!আজকে সবাই শাড়ি পড়ে ভার্সিটি যাবে আমিও যাবো ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে খুব’!!শাড়ি বরাবরই ফেভারেট আমার’!!একটা কলা পাতা রঙের শাড়ি পড়ে নিলাম,চুলগুলো খুলে দিলাম,চোখে হালকা কাজল, হালকা মেকাপ দিয়ে আমি তৈরি’!!এমন সময় রুমে আসলো মিষ্টি ও শাড়ি পরেছে’!!তারপর দুজনেই খুশি হয়ে চলে গেলাম ভার্সিটিতে’!!

||
“দুপুর দিকে প্রায় সবার স্যার ম্যামদের ভাষন শেষ করে অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে’!!একরাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বসে ছিলাম আমি’!!

||

“এদিকে আদিত্য আর তার বন্ধু বান্ধব একটা ছেলেকে ধরার জন্য দৌড়াচ্ছিল’!!ছেলেটির দোষ ছিল ছেলেটি ড্রাগ পাঁচার করতো আর আদিত্য এটা জানতে পেরে যায় কোনোভাবে’!!আর ছেলেটিকে ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে আদিত্য’!!আদিত্যের সামনে থাকা ছেলেটি দৌড়াতে দৌড়াতে একপর্যায়ে একটা ভার্সিটির ভিতর চলে যায়’!!আর তার পিছন পিছন আদিত্যও ভিতরে ঢুকে যায়’!!

||

“করো তালির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই বাড়ির ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো’!!এমন সময় চারিদিকে গুলির শব্দ সাথে সবার দৌড়াতে দেখে ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!সবাই দৌড়াচ্ছে কেন’!!এমন সময় মিষ্টি বললোঃ

———–“আরুশি তাড়াতাড়ি ছুটে আয়’!!ওর কথা মতো আমিও দৌড়াতে শুরু করলাম’!!এমন সময় কোথা থেকে একটা ছেলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে বললোঃ

———–“ওইখানে দাঁড়া আদিত্য,তা না হলে এই মেয়েটার মাথা গুলি মেরে উড়িয়ে দিবো আমি…..

“ছেলেটির কথায় আমিও তাকালাম আদিত্যের দিকে’!!ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠল আমার’!!আবার কোথাও থেকে মন বলে উঠছিল আদিত্য বলবে আমায় ছেড়ে দিতে’!!কিন্তু আদিত্য…….

“ছেলেটির এমন কাজে আদিত্য হাসলো’!!হেঁসে বললোঃ

————-“তাই নাকি তা দে না,ও আমার বউ না অন্যকিছু যে তুই ওকে মেরে ফেললে আমি ভয় পাবো আর তোকে ছেড়ে দিবো……

“এদিকে আদিত্যের এমন কথা শুনে আমি হা হয়ে গেলাম’!!আমি মরে গেলেও কিছু যায় আসে না আদিত্যের’!!মুহূর্তের মধ্যে আদিত্যের প্রতি আমার সব ইচ্ছে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল’!!সেদিনের আদিত্যের দেওয়া আঘাত আমি মেনে নিতে পারি নি’!!আমি মরে গেলেও যার যায় আসে না’!!সে আর যাই হোক কোনোদিনও আমায় ভালো বাসতে পারবে না’!!

“এদিকে আদিত্যের কথার তালে তালে আদিত্যের বন্ধুটা পিছন থেকে ছেলেটি ধরে ফেললো আর আমায় ছাড়িয়ে ছেলেটি ধরে চলে গেল তারা’!!ছেলেটি ছেড়ে দিতেই মিষ্টি এসে ধরলো আাময়’!!মুহূর্তের মধ্যে সব কালো অন্ধকারে ডুবে গেল অতিরিক্ত ভয় আর আঘাত দুটো একসাথে মস্তিষ্কের কোনে এসে ধাক্কা মারলো আর আরুশি জ্ঞান হারালো’!!

||

“সেদিনের পর থেকে আরুশি আর আদিত্যকে জ্বালাতন করে নি’!!আর না কখনো ওর সামনে গেছে’!!পুরো একমাস ঘর বন্দী থেকেছে সে’!!না কারো সাথে তেমন কথা বলেছে’!!শুধু রুমের ভিতর বসে আদিত্যের সব স্মৃতি একে একে দাফন দিয়েছে’!!এর ভিতর তার বাবাও তাকে বিয়ের জন্য তারা দিচ্ছিল আর সেও রাজি হয়ে যায়’!!কিন্তু এই ভাবে হুট করে আদিত্য এমন কিছু করবে সেটা কল্পনার বাহিরে ছিল আরুশির……..

__________________________________________

_______________________

————-“কি হলো গাড়ি থেকে বের হও আমরা এসে পড়েছি’!!হর্ঠাৎ আদিত্যের মুখে এমন কথা শুনে আরুশি তার কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো’!!মিটমিট চোখে বাহিরে তাকিয়ে দেখলো’!!

“ইয়া বড় একটা বাড়ি’!!আরুশি বের হলো না গাড়ি থেকে’!!আরুশির কাজ দেখে আদিত্য কোলে তুলে নিল আরুশিকে’!!

“আদিত্যের এমন কাজে আরুশি অবাক হয়ে তাকালো’!!কষ্ট হচ্ছে তার পুরনো কথাগুলো ভেবে’!!শুধু মস্তিষ্কের কোনে একটা কথাই বাজলো তার’!!কেন এমন করলো আদিত্য…….

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here