অভিমানেই আছো তুমি?,part:04,05

0
1089

অভিমানেই আছো তুমি?,part:04,05
Writer: TanjiL Mim
Part-04

?
কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে বুঝতেই ঘুম ভাঙল আমার’!!পাশে আদিত্যকে দেখে কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত ছিল ভুলে গেছি’!!রাগ অভিমান সব একসাথে মাথার ভিতর ভন ভন করছে’!!হুট করেই আদিত্যকে সরিয়ে উঠিয়ে পরলাম আমি’!!বিরক্ত লাগছে সবকিছু’!!আনমনেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি”!!তারপর শাড়ির কুঁচি ধরে হাঁটতে শুরু করলাম’!!আদিত্যের রুমটা বিশাল বড়’!!চারিদিকে রয়েছে সব দামিও জিনিসপএ’!!হর্ঠাৎই চোখ গেল বিছানা থেকে কিছুটা দূরে থাকা একটার আয়নার দিকে’!আনমনে হাঁটতে হাঁটতে সেখানে চলে গেলাম আমি’!!পুরো শরীর ব্যাথা করছে আমার’!!কালকের সাজে এখনো সজ্জিত আমি’!!আয়নার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম আমি’!!চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে’!!গায়ের গয়নাগুলো সব উলোটপালোট হয়ে রয়েছে’!কাজল সব লেপ্টে গেছে!!এক কথায় বলতে গেলে পাগলের মতো দেখাচ্ছে আমায়’!!সব একে একে খুঁলতে শুরু করলাম আমি’!!কানের ভাড়ি দুল,গলায় থাকা ভাড়ি নেকলেস’!!শাড়ির অবস্থাও যাচ্ছে তাই হয়ে গেছে,কিন্তু কথা হলো এটা খুললে পড়বো কি আমি,আনমনেই প্রশ্নটা করে বসলাম নিজেকে…..

“এমন সময় চোখ বন্ধ করেই আদিত্য বলে উঠলঃ

———-“ওই আলমারিতে অনেকগুলো শাড়ি সেলোয়ার-কামিজ সহ আরো অনেক জিনিসপএ আছে যেটা ভালো লাগে পড়ে ফেলতে পারো…..

“আদিত্যের কথা শুনে কিছু বললাম না আমি’!এই মুহূর্তে কোনোকিছু বলার মুডে নেই আমি’!!হাঁটতে হাঁটতে আলমারির সামনে দাঁড়ালাম’!!কিন্তু আলমারির চাবি…….

“আদিত্য তার হাত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

————“এই চাবি……

“এইবারের আদিত্যের কাজে অবাক আমি’!!বুঝলো কেমনে’!!আমার ভাবনার মাঝে আদিত্য চোখ খুলে বলে উঠলঃ

————“এতে না বোঝার কি আছে আলমারির কাছে যাচ্ছো চাবি ছাড়া খুলবে কি করে….

”আদিত্যের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই হাত থেকে চাবিটা নিয়ে নিলাম আমি’!!তারপর আলমারি খুলতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল’!!এত জামাকাপড়’!!তাদের মাঝখান থেকে একটা রেড কালার শাড়ির দিকে চোখ গেল কেমন আনমনেই ওটা হাতে নিয়ে চলে ওয়াশরুমে’!!

||

“এদিকে আদিত্য হাসলো’!!তারপর আবার চোখ বুঝে নিলো সে’!!হর্ঠাৎই কারো চেঁচানো শুনে লাফ দিয়ে উঠলো আদিত্য’!!বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে যাওয়ার আগেই আরুশি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললঃ

———“আরশোলা…..

||

“এদিকে আচমকা এমনটা হওয়াতে আদিত্য প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষনেই হাসলো সে’!তারপর আরুশির কানের কাছে ঝুঁকে বললোঃ

———-“সকাল সকাল এই ভাবে চমকে দিলে আমি তো থার্ড এটাক করবো ডারলিং’!!

||

“এতক্ষণ পর কারো মুখ এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি’!!ছোট বেলা থেকেই আরশোলা খুব ভয় পাই আমি’!!কিছুক্ষন আগে শাওয়ার অন করতেই আচমকা একটা আরশোলা দেখে ভয়ে ঘাবড়ে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি’!!এই মুহূর্তে এক বিচ্ছিরি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি’!!লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার’!!আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আমি’!!আদিত্যকে হাসতে দেখে রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না’!!আচমকাই আদিত্যকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে আবার দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম আমি’!!ভয় করছে এখন…..চোখ খুলতে আবারো আরশোলাকে দেখে আবারো চেঁচিয়ে উঠলাম আমি’!!আবার ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম’!!ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি’!!আজকের গোসল করা হবে না মনে হয় আমার’!!

||

“এদিকে আমার কান্ড দেখে আদিত্য হাসতে হাসতে শেষ’!!কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না’!!আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলামঃ

———-“এতো হাসার কি আছে হুহ….

“আদিত্য তার হাসি থামিয়ে বললোঃ

———–“হাসবো না আদিত্যের মতো একজন সাহসী ছেলের বউ হয়ে তুমি কিনা সামান্য আরশোলা দেখে ভয় পাচ্ছো…..

———–???

———-“ওভাবে তাকানোর মতো কিছু বলি নি,তবে যাই বলো আরশোলাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত…..

————“ধন্যবাদ দিবেন মানে ওটাকে তো ধরে এনে পিটানো উচিত…..

“হাসলো আদিত্য’!!

“কিছুক্ষণের জন্য হলেও আদিত্যের হাসির দিকে চোখ আঁটকে গেল আমার,কি সুন্দর হাসি’!!ছেলেটা এতো সুন্দর কেন,হর্ঠাৎই আবার পুরনো কথা ভেবে রাগ উঠলো আমার’!!একটু গম্ভীর গলায় বললাম আমিঃ

————“হাসা শেষ হলে হয়ে গেলে এখন বলা হোক আমি গোসল করবো কোথায়……

“আমার কথা শুনে আদিত্য তার হাসি থামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে এগোতে লাগলো’!!আচমকা আদিত্যের এমন কাজে ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!তবে প্রকাশ করলাম না স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে পরক্ষণেই আবার চোখ নামিয়ে ফেললাম…..

||

“এদিকে আদিত্য এগোতে এগোতে আমার একদম কাছে চলে এসেছে’!!শরীরের পরম দাঁড়িয়ে উঠলো আমার’!!শ্বাস বেরিয়ে আসার উপক্রম’!!আদিত্য ওয়াশরুমের দরজার দিকে হাত লাগিয়ে দাঁড়ালো’!!তার এমন কাজে প্রায় ঘাবড়ে গেছি আমি’!!ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার….

“আচমকা আদিত্য ঝুঁকে পরলো আমার দিকে’!!সাথে সাথে খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি’!!

||

“এদিকে আদিত্য আরুশির কাজে হাসলো’!!তারপর আরুশির কানের কাছে ঝুঁকে বলে উঠলো সেঃ

———“এইভাবে ভেজা অবস্থায় সামনে আসলে নিজেকে কন্ট্রোল করা যে দায় হয়ে দাঁড়াবে সুন্দরী…..

“আদিত্যের মুখে এমন একটা কথা শুনে পুরোই শকট খেলাম আমি’!!এতক্ষণ পর মনে পড়েছে আমি যে ভিজে গেছিলাম’!!ছিঃ ছিঃ কি একটা বিচ্ছিরি অবস্থা’!!আমি রাগী লুক নিয়ে আদিত্য দিকে তাকালাম’!!ইচ্ছে করছে শালার মাথাটা বারি মেরে ভেঙে দেই……

“হুট করেই আদিত্য ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভিতর ঢুকে পরলো’!!আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও আরশোলা না দেখে বলে উঠল সেঃ

———-“চলে গেছে এখন গোসল করে নেও….

“আদিত্যের কথা শুনে আদিত্যের পিছন থেকে টিপ টিপ চোখে তাকালাম আমি আশেপাশে’!!সত্যি নেই কি পাজি আরশোলা মাইরি…..

“উফ বাঁচা গেল……

“তারপর আর কি আদিত্য চলে গেল’!!আমিও ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম….

||

“এদিকে আদিত্য হাসতে হাসতে শেষ’!!আসলেই পাগলী একটা……

__________________________________________

_______________________

“বিকেলে আনমনেই বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি’!!কষ্ট হচ্ছে খুব’!!পরিবারের সবাই আমাকে ঘৃনা করছে’!!কোথাও না কোথাও এসবের জন্য আমি দাই’!!কিন্তু এখনো বুঝলাম আদিত্য এমন কিছু কেন করলো’!!এই প্রশ্নটা মাথা খারাপ করে দিচ্ছে আমার’!!এমন সময় আকাশে কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো পুরো শহরটা’!!আকাশের গর্জন করছে’!!হয়তো তুমুল বেগে বৃষ্টি হবে’!!হর্ঠাৎই মনে পড়ে গেল এই বৃষ্টির দিনে ছোট ভাইয়ের সাথে করা দুষ্ট মিষ্টি মজা গুলো’!!ছাঁদে উঠে লাফালাফি’!!দিনগুলো সত্যি খুব সুন্দর ছিল ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি’!!

||

“কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘের কোল থেকে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো’!!গাছের পাতা সহ আশেপাশের জায়গায় থেকে টপ টপ করে বৃষ্টির শব্দ এসে কানে বাজতে শুরু করল’!!আনমনেই বেলকনির রেলিং এর বাহিরের হাত চলে গেল আমার’!!বৃষ্টি বরাবরই পছন্দের আমার’!!আজকেও ভালো লাগছে’!!বেলকনিতেও বৃষ্টির পানি ছিটকে আসছে ভিতরে’!!বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি আমি’!!হুট করেই ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো’!!আনমনেই দাঁড়িয়ে আছি আমি আর বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার পুরো শরীর’!!চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির পানির গায়ে মাখাচ্ছি আমি’!!!

_______________________

“এদিকে আদিত্য রুমে ঢুকে দেখলো…..

“পুরো রুম অন্ধকারে ঢেকে গেছে’!!তবে বাহিরের মৃদু আলোতে সবটা দেখা যাচ্ছে’!!আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও আরুশির দেখলো না আদিত্য’!!হর্ঠাৎই আর চোখ গেল’ বেলকনির দিকে’!!মৃদু আলোতেই আদিত্য হেঁটে চললো আরুশির কাছে’!!

||

“পুরনো কথাগুলো সব ভেসে আসছে সামনে’!!পরিবারের কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে, আবার আদিত্যের অবহেলাগুলোও সব একে একে বেরিয়ে আসছে’!!চোখ বেয়ে পরছে পানি’!!কেন এমন হলো আমি তো ভুল কিছু করি নি আনমনেই ভালোবেসেছিলাম আদিত্যকে’!!আর ভালোবাসা মানুষকে এতো কষ্ট দেয় জানা ছিল না আগে’!!ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছি আমি’!!বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি মিশে এক যাচ্ছে…..

~ “হুট করেই কেউ পিছন থেকে হাত দিল কাঁধে’!!হর্ঠাৎ কি হলো জানা নেই হুট করেই তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমি’!!তারপর কেঁদে কেঁদে বলে উঠলাম আমিঃ

———–“কেন এমন করলে তুমি,আমি তো শুধু ভালোবসেছিলাম তোমায়,হাজার হাজার স্বপ্ন বুনেছিলাম তোমায় নিয়ে,তোমায় তো শুধু ভালোই বেসেছিলাম আর ভালোবাসলে বুঝি এতো কষ্ট পেতে হয়,কেন এমন করলে আদিত্য,ডুকরে কথাগুলো বলে কেঁদে উঠলাম আমি’!!আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে……

||

“এদিকে আরুশির প্রশ্নের উত্তর কি দিবে জানা নেই আদিত্যের’!!এতক্ষণ চুপটি করে শুধু আরুশির কথা গুলো শুনতে ছিল আদিত্য’!!

“সে জানে সে ভুল করেছে বড় ভুল করে বসেছে তার নিজেকে বুঝতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে’!!আর তার এই ভুলের জন্য সে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে আর আরুশিকেও কষ্ট দিচ্ছে’!!কিছু না বলেই আদিত্য আরুশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল’!!দুজনেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে’!!কিন্তু সেদিকে তাদের কোনো হুস নেই’!!আনমনেই দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে’!!দুজনের মনেই কষ্ট আছে’!!কারোটা প্রকাশ পাচ্ছে আর কারোটা বুকের গহীন অতলে ডুবে আছে,হয়তো কোনো একদিন প্রকাশ পাবে হয়তো না………

~ রাত_১১ঃ০০টা………

“কাঁথা মুড়ি দিয়ে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আরুশি’!!আর তার পাশে তার হাত শক্ত করে ধরে আছে আদিত্য’!!নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে তর’!!কিন্তু সে কি করতো যদি সত্যি সত্যি আরুশির অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যেত তাহলে সে কি করে বাঁচতো’!!ছোট বেলা থেকেই সে একা থাকে হর্ঠাৎ যখন কাউকে নিয়ে বাঁচতে চাচ্ছে তখনি সে দূরে সরে যাচ্ছে কেন??উওর মেলে না আদিত্যের…….

চলবে……

অভিমানেই আছো তুমি?
Writer: TanjiL Mim
part:05

?
সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ভরে গেছে চারপাশ’!সূর্যের হালকা তাপ মিশানো রৌদ্দুর এসে পড়ছে আদিত্যের মুখে’!!বিছানায় মাথা দিয়ে আরুশির হাত জড়িয়ে ধরেই কাল রাতে বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে’!!ধীরে ধীরে চোখ খুললো আদিত্য’!!এখনো ঘুমের রেশ কাটে নি তার’!!চোখ খুলে আরুশির ঘুমন্ত ফেসের দিকেই তার চোখ আঁটকে গেল’!!আনমনেই আদিত্যের হাত চলে আরুশির গালের কাছে’!!গালে হাত রাখতেই চমকে যায় আদিত্য’!!কারন আরুশির গাল প্রচন্ড বেগে গরম’!!অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজলে যা হয় আরকি’!!আদিত্য নিজের হাত সরিয়ে আরুশির কপালে হাত দিলো’!!তারপর নিজের কপালেও হাত দিয়ে তাপমাত্রা দেখতে লাগলো’!!আদিত্য বুঝে কালকে বৃষ্টিতে ভিজেই আরুশির জ্বর এসেছে’!!আদিত্য বিছানা থেকে উঠে একটা বাটিতে করে পানি নিল’!!তারপর শুকনো কাপড় ভিজিয়ে আরুশির কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো’!!তারপর নিজের ফোনটা বের করে ডাক্তারকে কল করলো’!!

“কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার চলে আসলো’!!আরুশিকে দেখে কিছু ঔষধের নাম লিখে দিল আর কয়েকঘন্টা পর পর মাথায় জলপট্টি দিতে বললো’!!আদিত্য তার লোকেদের বলে ঔষধ আনিয়ে নিল….

||

“টিপ টিপ চোখ মেলে তাকালাম আমি’!!অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে’!!চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে পানি পরছে আপনাআপনি,চোখ দুটো জ্বলছে ভিষন,আমি ভুজে গেছি কালকের বৃষ্টিতে ভেজার পরিনতি হয়েছে এমন’!!হর্ঠাৎই মনে হলো কপালে ঠান্ডা ঠান্ডা রেশ বয়ে যাচ্ছে’!!হুট করেই উঠে বসলাম আমি’!!কপাল থেকে সরিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ভাবপ বসে রইলাম’!!এমন সময় দরজা খুলে হাতে সুপ নিয়ে রুমে ঢুকলো আদিত্য’!!আমায় এইভাবে বসে থাকতে দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে সুপের বাতি পাশের টেবিলে রাখতে রাখতে বললোঃ

———-“বসছো কেন শুয়ে থাকো….

“নিশ্চুপ ভঙ্গিতে আদিত্যের মুখের দিকে তাকালাম আমি’!!আদিত্য আমার চাহনি দেখে বলে উঠলঃ

———–“আমি জানি তুমি খুব ক্লান্ত তাই চুপটি করো শুয়ে থাকো আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি,আচ্ছা ওয়েট….

“এই বলে আদিত্য আমায় ধরে পিছনে একটা বালিশ দিয়ে শুয়িয়ে দিল’!!আদিত্যের কাজে অবাক আমি’!!কি করতে চাইছেন উনি…..

“হুট করেই আদিত্য সুপের বাটি হাতে নিয়ে বললোঃ

———–“হা করো……

“অবাক চোখে তাকালাম আমি আদিত্যের দিকে’!!আমার চাহনী দেখে আদিত্য বলে উঠলঃ

————“কি হলো হা করতে বলেছি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলি নি…..

“ছলছল চোখে তাকালাম আমি আদিত্যের দিকে’!!হুট করেই আদিত্য মুখের ভিতর সুপ দিয়ে দিল’!!আমি অবাক হয়েই আনমনে খেতে শুরু করলাম…..

“কিছুক্ষণ যেতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি’!!আদিত্য আমার কাজ দেখে রেগে বলে উঠলঃ

———-“সবটা খেতে হবে…….

———-“আর খেতে ইচ্ছে করছে না……

———-“সেটা বললে তো শুনছি না…..

“একপ্রকার জোর করে আদিত্য পুরো সুপ খাইয়ে দিল আমায়’!!তারপর রুমাল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে আমায় শুয়ে দিয়ে চলে গেল আদিত্য’!!আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম আদিত্যের দিকে’!!”এত বদলে গেল কি করে…..’!!রাগ, অভিমান দুটোই হচ্ছে এই মুহুর্তে যদি বদলানোরই ছিল আগে কেন বদলানে তুমি…..

“সারাদিনটাই আদিত্যের সেবায় কেটে গেল’!!অদ্ভুত লাগলো সবকিছু আদিত্য বদলে গেছে’!!তাহলে কি ও আমায় ভালোবাসে’!!নাকি অন্যকিছু মস্তিষ্কের কোনে প্রশ্ন এসে নাড়া দিল,উওর তো শুধু আদিত্যই দিতে পারবে…….

||

“রাতঃ০২টা……
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলাম আমি’!!আদিত্য পাশেই বসে ঘুমিয়ে আছে’!!অদ্ভুত এক মায়া আছে আদিত্যের মুখে’!!সারাদিন ঘুমিয়ে থাকলে কি আর রাতে ঘুম আসে নাকি’!!তারওপর জ্বর কোনোকিছু ভালো লাগছে না’!!হর্ঠাৎই মায়ের কথা মনে পড়ে গেল আমার’!!আগে জ্বর আসলে মাকে সারারাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকতাম’!!বড্ড মন খারাপ হচ্ছে এখন,আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি’!!চারিদিকে আধো অন্ধকারে ঢেকে গেছে’!!জানালা ভেদ করে রাতের মৃদু আলো আসছে রুমে’!!ক্লান্ত মাখা শরীর নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে জানালার পাশে দাঁড়ালাম আমি’!!আকাশটা পুরো পরিষ্কার’!!কোথাও কোনো তাঁরার রেখা নেই’!!আনমনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আমি……..

||

“এদিকে আদিত্য আচমকাই ঘুম ভেঙে যায় তার’!!আবছা চোখে পাশে আরুশিকে না দেখে ঘাবড়ে আঁতকে উঠলো সে’!!লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো সে’!!চারপাশে চোখ বুলিয়ে জানালার পাশে আরুশিকে দেখতে পেয়ে সস্তির নিশ্বাস ফেললো সে’!!যেন তার আপন মনে প্রান ফিরে পেয়েছে’!!এই জন্যই বলা হয়েছে…..

“কারো মায়ায় জড়িয়ও না প্রিয়’!!প্রিয় মানুষটা একটু চোখের আড়াল হলেই দম বন্ধ হওয়ার পরিনতিতে চলে যায়’!!বরাবরই আদিত্য ভালোবাসা কি জানা ছিল না তার’!!তাই হয়তো এখন একটু বেশি ভয় তাঁর…’!!!হুট করেই আদিত্য দৌড়ে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আরুশিকে……

||

“আচমকা কেউ জড়িয়ে ধরাতে ঘাবড়ে গেলাম আমি’!!শরীর কাঁপছে আমার’!!

———–“তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো,জানো তোমায় না দেখতে পেয়ে কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি…..(আদিত্য)

“আদিত্যের মুখের কথা শুনে কি উওর দিবো আমি ভুলে গেছি’!!অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু শরীর সেটা যাচ্ছে না’!!আর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেই হয়তো আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো’!!আনমনেই আদিত্যকে বলে উঠলাম আমিঃ

———–“আমায় বিছানায় নিয়ে চলুন……

“আদিত্য আমার কথা শুনেই কোলে তুলে নিল’!!তাঁরপর বিছানায় নিয়ে এসে বসিয়ে দিয়ে বললোঃ

————-“না ঘুমিয়ে ওখানে কি করছিলে তুমি……

————-“ভালো লাগছে না আমার ঘুমাবো আমি……

“বিনিময়ে আদিত্য কিছু বললো না আরুশিকে চুপটি করে বিছানায় শুয়ে দিলো সে’!!

“কষ্ট তারও হচ্ছে আরুশির বলা কথাগুলো তার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করো দিচ্ছে’!!তারপরও কিছু বলতে পারছে না কারন এটা তার পাপ্য……

~ কিছুক্ষণের মধ্যেই আরুশি ঘুমিয়ে পরলো’!!আদিত্য আরুশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সেও ঘুমিয়ে পরলো’!!

~ “মাঝখানে কেটে গেল অনেকগুলো দিন’!!এই কয়েকদিন আদিত্য অনেক যত্ন নিয়েছে আরুশির’!!সারাদিনরাত আরুশির সুস্থতার জন্য সব করে গেছে সে’!!এখন আরুশি পুরো পুরো সুস্থ’!!আদিত্য ভেবেছে আজকে আরুশিকে তার মনের কথা বলে দিবে সব তারপর আরুশি যা করে’!!তার বিশ্বাস আরুশি তাকে ক্ষমা করে দিয়ে সব আবার আগের মতো করে ফেলবে’!!একগুচ্ছ গোলাপ কিনে গাড়ি ড্রাইভ করছে সে’!!মনটা ফুরফুরে লাগছে তার,অনেকদিনের ইচ্ছে আজ পূরণ করে ফেলবে সে’!!

||

“বিছানায় বসে আছি আমি’!!হাতে ফোন উদ্দেশ্য হলো বাড়িতে একটা ফোন করা’!!কতোদিন হয়ে গেছে বাড়ির কারো সাথে না কথা হয়েছে না দেখা হয়েছে’!!খুশি মনে ফোনটা তুলে বাড়িতে একটা ফোন করলাম আমি’!!প্রথম কলে কেউ ফোন তুললো না’!!আবারো ফোন করলাম আমি’!!ওপাশ থেকে এসে ছোট ভাই রুহান ফোন ধরে বললোঃ

———-“হ্যালো……

“আমি খুশি হয়ে বললামঃ

———–“ভাই আমি কেমন আছিস তুই……

————“তুমি কেন ফোন দিয়েছো আপু…..

“রুহানের কথা বুকের ভিতরটা দক করে উঠলো আমার’!!আমি শান্ত মনে বলে উঠলামঃ

———–“ভাই এইভাবে কথা কেন বলছিস আম্মুকে ফোন দেয়…….

———–“আপু তোমার জন্য আব্বু আম্মুকে অনেক মেরেছে, তুমি এমন কেন করলে…….

“রুহানের কথা শুনে কষ্ট হচ্ছে এখন’!!আমি কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলামঃ

———–“বিশ্বাস কর ভাই আমি কিছু করে নি….

“এমন সময় রুহানের কাছ ফোন নিয়ে আব্বু দমকের স্বরে বলে উঠলঃ

———–“কোনো সাহসে তুমি আমাদের ফোন দিয়েছো,তোমাকে বলে দিয়েছি না আমাদের কাছে তুমি মৃত…….

———–“বাবা……

“আর কিছু বলা বা শোনার আগেই আব্বু ফোনটা কেটে দিল’!!

“ওপর পাশ থেকে আরুশি বেশ কয়েকবার হ্যালো করলেও কেউ শুনলো না তার আর্তনাদ……

||

“আরুশি কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলঃ

———-“কি করে বোঝাই তোমাদের আমি কিছু করি নি……

“চেঁচিয়ে কাঁদতে লাগলো আরুশি’!!বিছানার চাঁদর উলোটপালোট কর ফেলেছে সে’!!যন্ত্রনায় বুক ফেটে যাচ্ছে তার’!!ছোট ভাইটাও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে’!!যেটা মটেও মেনে নিতে পারছে না আরুশি……

||

“এদিকে কিছুক্ষন পর…….

“আদিত্য রুমে ঢুকে রুমের অবস্থা দেখে চমকে উঠলো সে’!!আরুশির সামনে গিয়ে বললোঃ

———-“এসব কি করেছো তুমি,কি হয়েছে…..

“আদিত্যের কথা শুনে রেগে যায় আরুশি’!!আদিত্যের কলার চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠল সেঃ

———-“এমন কেন করেছেন আপনি,আপনার জন্য আজ আমার এই অবস্থা,কে বলেছিল এই ভাবে বিয়ে করতে,শুধু মাএ আপনার জন্য আজ আমার পুরো পরিবার ঘৃনা করছে,কেউ আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলতে চাচ্ছে না’!!কি ভুল ছিল আমার আপনি চেয়েছিলেন আমি আপনার লাইফ থেকে সরে যাই,সরে এসেছি তাহলে কেন এমন করলেন’!বলতে বলতে ঢুকরে কেঁদে দেয় আরুশি……

“আদিত্য হুট করেই বলে উঠেঃ

———–“ভালোবাসি তোমায় আমি…..

“আদিত্যের কথা শুনে হাসলো আরুশি’!!তারপর বলে উঠলঃ

———-“ভালোবাসেন হাসালেন তো মিস্টার “আদ্রিয়ান আহমেদ আদিত্য”!!আপনার মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না যে আমার মৃত্যুর কথা শুনে ভয় পায় না সে আর যাই হোক আমায় ভালোবাসতে পারে না……

———-“কেন বুঝতে পারছো না আমি সত্যি কথা বলছি…..

———“আপনাকে আমার কিছু বোঝাতে হবে না বেরিয়ে যান রুম থেকে, আমার আপনাকে সহ্য হচ্ছে না,বেরিয়ে যান বলছি……

———“আমার কথাটা তো শোনো…..

———“আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না….

“বেরিয়ে যান(চেঁচিয়ে)

“আদিত্য আর কিছু বলতে পারলো না রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে’!!আর আরুশি চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল’!!ভুল করেছে সে আদিত্যের মতো একটা মানুষকে ভালোবেসে………

||

“আরুশির বলা কথাগুলো এসে চুরির মতো আঘাত করছে আদিত্যের বুকে’!!না সে কিছু বলতে পারছে না না সহ্য করতে পারছে………

||

“আদিত্য একটা রুমে ঢুকে স্ব-জোরে গোলাপ ফুল ছিটকে ফেলে দিলো’!!অনেকগুলো ড্রিংকের বোতল নিয়ে বসে পরলো নিচে’!!তারপর একটা ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল সেঃ

————“কেন সব সময় আমার সাথেই এমনটা হয় “মা”,যখনি ভাবি নিজেকে গুছিয়ে নিবো তখনি কেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়,কেন….

“কথাগুলো বলতে বলতে ড্রিংক করছে আদিত্য,তার যে খুব কষ্ট হচ্ছে,বুকের ভিতর ছারখার হয়ে যাচ্ছে…….

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here