অভিমানে তুমি,পর্বঃ১২
ফারিয়া আফরিন ঐশী
সায়মা আহমেদ সাদির ঘরে প্রবেশ করেই বললেন–ওই বাঁদর ছেলে,ছাড় ওকে,,রেডি হতে হবে।
সাদি মিথিকে জড়িয়ে ধরে আছে এখনো আর মিথি লজ্জায় সাদিকে ছাড়ানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে লাগল।সাদি মিথিকে জড়িয়ে রেখেই বলল–আরে তুই মাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছিস কেনো!!!মা হলো আমাদের বান্ধবী,, বুঝলি।
সায়মা আহমেদ সাদির পিঠে চড় দিয়ে বলে–বাঁদর ছেলে,দ্রুত ছাড় ওকে।।ওর রেডি হতে হবে।।
বলেই সায়মা আহমেদ হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন।
মিথি এবার সাদির বুকে কিল দিতে দিতে বললো–বাজে লোক তুমি,,ফুপির সামনে কেমন লজ্জা দিলে আমায়।।
সাদি–আরে ধুর!!মায়ের সামনে কিসের লজ্জা, বললাম যে মা আমার বান্ধবী।
মিথি–তাও!!ছাড়ুন আমায়।।
সাদি–আচ্ছা যাহ ছেড়ে দিলাম।বিয়েটা হোক তারপর তোকে দেখছি।
মিথি মুখ ভেংচি দিয়ে বলে–আমি দেখবো কি দেখো তুমি!!!
তারপর মিথি চলে যায় সায়মা আহমেদ এর ঘরের উদ্দেশ্যে।
মিথি দরজায় নক করতেই সায়মা আহমেদ বললেন–ভেতরে আয়,মিথি মা।।
মিথি ঘরে এসে মাথা নিচু করে বেডে বসল।
তা দেখে সায়মা আহমেদ মুচকি হেসে মিথির মাথায় হাত রেখে বললেন–এতো লজ্জা পেতে হবে না মা!!সাদি তো ঠিকই বলেছে আমি হলাম তোদের বান্ধবী।
তোর যেকোনো সমস্যা, তুই আমাকে বলবি।এমনকি সাদির বিরুদ্ধে ও যদি কোনো নালিশ থাকে তাও।
মিথি একটু সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে ছলছল চোখে বলল–ঠিক আছে ফুপি।।
সায়মা আহমেদ ভ্রু কুচকে বললেন–ফুপি!!!কিসের ফুপি??আমি তোর মা এখন বুঝলি!!
মিথি–ঠিক আছে আম্মু।
সায়মা আহমেদ এবার মিথির কপালে চুমু দিয়ে বললেন–এবার খেতে হবে তোর,,,কারণ একটু পর সাজতে বসবি তখন আর খাওয়া হবে না।।
আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
সায়মা আহমেদ হাত ধুয়ে এসে মিথিকে খাইয়ে দিতে লাগলেন,মিথি চুপচাপ খেয়ে নিল।
তারপর পার্লারের লোক আসলে মিথি নিজের ঘরে চলে যায় সাজতে।।
সন্ধ্যা ৬.৩০,,,
সাদি দের ড্রইংরুমে বহুল লোকজনের সমাহার,সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলাতে ব্যস্ত।সায়মা আহমেদ অফ হোয়াইট কালারের শাড়ি পরেছেন,কানে,গলায়,হাতে রয়েছে হালকা স্বর্ণের গহনা।।তিনিও ব্যস্ত কিছু মহিলাদের সাথে কথা বলতে।আর সাদি সে তো আজ পুরো হিরো।সাদি হালকা পার্পেল আর হোয়াইট মিশেলের শেরোয়ানী পরেছে, হাতে রয়েছে ডেনিম ব্লাক বেল্টের ঘড়ি।সাদি তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে আর তার ফাঁকে বারবার সিড়ির দিকে তাকিয়ে মিথির আসার অপেক্ষা করছে।
সাদি সহ সকলের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিথি সিড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।সাদি মিথিকে দেখে পুরো ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। মিথিকে যেন আজ অপরুপ সুন্দরী লাগছে।
মিথিও পার্পেল আর হোয়াইট মিশেল নেটের গাউন পরেছে।গাউনটাতে ধাপ করা অনেকটা ঘের।কানে হোয়াইট স্টোনের দুল,গলাতে স্টোনের কন্ঠহার,হাতে রয়েছে স্টোনের ব্রেসলেট।মুখে রয়েছে হালকা মেকআপ আর ঠোঁটে রয়েছে বেবি পিংক লিপস্টিক। মিথি গাউন টা উঁচু করে সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল।শেষ সিড়িতে আসা মাত্রই সাদি এগিয়ে এসে মিথির দিকে হাত বারিয়ে দিল।মিথিও মুচকি হাসি দিয়ে সাদির হাত ধরলো।সায়মা আহমেদ তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন–বাহ!!কি সুন্দর মানিয়েছে আমার ছেলে-মেয়ে ২ জন কে।দোয়া করি খুব সুখি হ তোরা।
সাদি একহাতে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল–তোমার মতো কুল মা দোয়া দিয়েছে তারমানে আমরা অবশ্যই সুখি হবো।
তাদের কথার মধ্যে একজন মহিলা এগিয়ে এসে মিথির মুখ আলতো করে ছুঁয়ে বললেন–বাহ!!সায়মা ভাবি,,আপনি যা বলেছেন তার থেকে সুন্দরী আপনার বৌমা।
সায়মা আহমেদ একটু হেসে বললেন–হুমম,,ভাবি,,আমার বৌমা আসলেই অনেক সুন্দরী।
আগন্তুুক মহিলা–সাদি বাবার পছন্দ আছে।।
সাদি–ধন্যবাদ আন্টি।।তারপর সায়মা আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলল–মা!!আমি মিথিকে নিয়ে আমার বন্ধুদের সাথে একটু আলাপ করিয়ে দেই।
সায়মা আহমেদ –ঠিক আছে।। যা।।একটু পরই অনুষ্ঠান শুরু করব।
সাদি আর মিথি হেঁটে তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে চলে গেল।
সাদি মিথিকে তার বন্ধুদের সামনে নিয়ে বলল–দোস্তগণ,মিট মাই ওয়াইফ!!
সাদির বন্ধুরা একেএকে নিজেদের পরিচয় দিয়ে মিথির সাথে পরিচিত হলো।
কথাবার্তার মাঝখানে সায়মা আহমেদ সাদিকে ডেকে মিথিকে নিয়ে স্টেজে আসতে বললেন।
সাদি মিথিকে নিয়ে স্টেজে এসে তাদের জন্য রাখা বসার জায়গাতে ২ জনে বসল।
যথাযথ নিয়মে তারা আংটি বদল করল।সবাই করতালি দিয়ে তাদের নতুন জীবনের ১ম ধাপে পা রাখার জন্য শুভেচ্ছা জানাল।সবার কথার মাঝে সাদি মিথির কোমড় শক্ত করে ধরে বলল– কংগ্রাচুলেশন,ডিয়ার ওয়াইফ।
মিথি মুচকি হেসে লজ্জাতে মাথা নিচু করে রইল।
অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত ১০ টা বেজে গেল।মিথি ফ্রেস হয়ে কেবল বেডে শুতে যাবে তার আগেই সাদি কোথা থেকে ধুম করে এসে মিথিকে কোলে তুলে নেয়।
তারপর ছাদে গিয়ে,মিথিকে জড়িয়ে নিয়ে দোলনায় বসে থাকে।
মিথি–আমরা এখন এখানে কেনো এলাম??
সাদি–এলাম,তোকে কিছু কথা বলার ছিল তাই!!
মিথি–কি কথা??
সাদি–বলবো সবই।।আগে আকাশের দিকে দেখ কি দারুণ চাঁদ।
মিথি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে –হুমম,,অনেক সুন্দর।
সাদি মিথির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে–দেখ মিথিপাখি, এই ১৫ তারিখ আমাদের বিয়ে,এরপর আমরা একে ওপরের সাথে মিলে যাব।কাল থেকে তুই,আমি ব্যস্ত হয়ে পড়বো।হয়তো বিয়ের আগের প্রয়োজনীয় কথা গুলো তোকে বলা ই হবে না।
মিথি–কি কথা??
সাদি–আমি চাই বিয়ের পরের কোনো কথা আমরা একে ওপরের থেকে লুকাবো না।তোর যেকোনো কথা তুই আমার সাথে সবার আগে শেয়ার করবি।
মিথি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলে–তোমার সব কথাতে আমি রাজি।তুমি কথা দাও তুমি আমাকে কখনোই ছাঁড়বে না।
সাদি–কখনো না।।তোকে ছাড়ার জন্য ধরিনি।।ছাড়ার হলে অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম।
মিথি –হুমম।তুমি আর কি যেন বলবে??
সাদি–খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবি,,তোর আগের বিয়েটা ওই লোকটার সাথে—
মিথি হঠ্যাৎ হাইপার হয়ে বলে–প্লিজ,ওই কথা তুলো না,আমার খুব ভয় হয়।আমি জানি আমি বিধবা,উনি আমার জন্যই মারা গিয়েছেন।
সাদি মিথিকে শান্ত করতে জড়িয়ে ধরে বলে–বিয়েটা হলে তবে তো তুই বিধবা হবি!!
মিথি সাদিকে ছেড়ে বলে–মানে???
সাদি–হুমম,তোর মনে আছে তোদের ধর্ম মতে বিয়ে হয়নি,শুধু রেজিস্ট্রি হয়েছিল,পেপার গুলো নকল ছিল।ঐ লোকটা নারী পাচারকারী ছিল।
মিথি অবাক চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে রইল।
সাদি–এটা আমি জেনেছি বেশ অনেকদিন আগেই।জেনে খুব খুশি ছিলাম যে,তোর আর আমার বিয়েটা তার মানে সব দিক দিয়েই বৈধ।
মিথি ফুপিয়ে ওঠে।সাদি মিথিকে জড়িয়ে ধরে বলে–আমি কখনো চাইনি তোকে অবৈধ ভাবে স্পর্শ করতে,আমাদের বিয়ে বৈধ জানার পরেই তোকে টাচ করেছি।
এটা ছিল তোর আমাকে প্রোপোজ করার দিনের সন্দেহের উত্তর। আমি জানি তোকে আরও আগে জানানো উচিত ছিল।
মিথি সাদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে–তুমি জানো আমি ভাবতাম আমি বিধবা বলে আমার কপালে বেশি সুখ নেই,খুব ভয় হতো তোমার কাছে আসতে।
সাদি–সরি মিথিপাখি,,তোকে আগে জানালে তুই এই কষ্ট টা পেতিস না।বাট আমি একটু সিউর হতে চাইছিলাম।আর তারপর বিভিন্ন ঝামেলাতে তোকে আর বিষয়টা জানাতে পারিনি।তাই আজ তোকে জানালাম।
মিথি–খুব ভালোবাসি তোমাকে,,আজ থেকে আমি খুব করে বলবো তুমিই আমার স্বামী আর কেউ না।
সাদি–তা আমি কি চুপ করে থাকবো নাকি।
মিথি–আচ্ছা, তুমি যখন সব জানতে তাহলে এই ইদ্দত পালন করালে কেন আমাকে দিয়ে??
সাদি–এই ব্যাপারটা তোকে আমি এখনই বলতে পারছি না মিথি পাখি।।বাট পরে তুই জানতে পারবি।।
মিথি-ঠিক আছে,তুমি যা ভালো মনে কর তাই।
সাদি–হুমম।
সাদি তারপর মিথিকে কাছে টেনে নিয়ে আসে মিথির চুল সরিয়ে গলায় নিজের মুখ গুজে দেয়।আজ যেন মিথির মাঝেও কোনো বাধা নেই।সেও তার হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে সাদিকে।
অন্যদিকে,
হাত-পা,চোখ বাঁধা অবস্হায় চেয়ারে পড়ে আছে বাড়ির মেইডের ইউনিফর্ম পরিহিত একজন লোক।ঠোঁট থেকে রক্ত পড়ছে।বোঝাই যাচ্ছে যে কেউ তাকে ঘুষি দিয়েছে।সামনে রিদান আর রুহি বসে লোকটার সেন্স ফেরার অপেক্ষা করছে।তার মধ্যে ই বেজে ওঠে রিদানের ফোন।।রিদান ফোন বের করে দেখে সাদির ফোন।রিদান ফোন রিসিভ করতেই সাদি বলে–সেন্স ফিরেছে ওর??
রিদান–স্যার,, চোখ পিটপিট করছে,এখনি ফিরবে মনে হয়।
সাদি–ওকে,আসছি আমি।
সাদি মিথিকে দোলনা থেকে কোলে নিয়ে মিথির রুমে শুইয়ে দেয়।তারপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।ওদের বাগানের স্টোর হাউজের দিকে।গিয়ে দেখে রিদান বসে আছে।
সাদি আসতেই রিদান উঠে দাঁড়িয়ে বলে–সেন্স ফিরেছে স্যার।।।
সাদি–চোখ খুলে দাও ওর।।
লোকটির চোখ খুলে দেওয়া মাত্রই হালকা আলোয় সাদিকে দেখে আতকে ওঠে।
সাদি লোকটির গাল টিপে ধরে বলে–তার মানে তুই!!যে কিনা আমাদের প্রত্যেক মুহূর্তের ছবি,আপডেট ইশানের কাছে দিচ্ছিস। মেইডের বেশ ধরে তুই ভেবেছিলি আমি ধরতে পারব না।
লোকটি কোনোমতে বলে–স্যার মাফ করুন আমায়,টাকার লোভে করেছি এই কাজ।।তবে আমি একা না আপনার বাড়ির আরও কয়েকজন মেইড এই কাজে যুক্ত।
সাদি কপাল কুঁচকে বলে–কারা কারা??
লোকটি–আমি তাদের চিনি না স্যার।আমরা কেউ ই জানি না কে কে জড়িত আমরা!!!সাদি লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে বলে–রিদান,,ওকে নিয়ে যাও।।আর খোঁজ লাগাও বাড়ির আর কোন মেইড এই কাজে জড়িত।
রিদান–ওকে স্যার।।
রিদান,রুহি লোকটিকে নিয়ে চলে গেলে।সাদিও ভেতরে চলে যায়।
তারপর নিজের ঘরে গিয়ে ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে ফোন বের করে ফোন দেয় ইশানের বর্তমান নম্বরে–
ফোন রিসিভ হতেই সাদি বলে–কি রে!!ছবি,ভিডিও এর পিক্সেল ঠিকঠাক আছে তো??
ইশান–তুইই!!
সাদি–হুমম,,আমি।তুই আমার এতো খবর নিস আমারও তো দায়িত্ব আছে তোর খবর নেওয়ার।
ইশান দাঁত কটমট করে বলে–তুই কি ভেবেছিস তুই আমাকে এভাবে আটকে রাখতে পারবি??
সাদি–হুমম,, এমন কিছু ভেবেছি বাট প্লানটা একটু পরের।।
ইশান রেগে ফোন ছুঁড়ে ফেলে দেয়।ফোনটা নিচে পড়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে রইল।
সাদি একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করে।
ওমনি পেছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।।–তুমি আবার সিগারেট খাচ্ছ??
সাদি পেছন ফিরে হালকা হেসে বলে–অনেকদিনের অভ্যাস,হুট করে ছাড়ি কিভাবে বল??
মিথি মুখটা একটু অন্যরকম করে বলে–কি পাও এটা খেয়ে বুঝি না!!!
সাদি সিগারেট ফেলে বলে –আচ্ছা,১৫ তারিখ থেকে আর খাবো না।তুই কাছে থাকলে তো আর লাগে না।।
মিথি–মানে??আমি আর সিগারেট এক নাকি??
সাদি–তুই যেকোনো নেশার ওপরে।তোর নেশায় সব কিছু পানসে লাগে।
মিথি একটু ভাবুক হয়ে বলে–তাই বুঝি!!
সাদি মিথিকে কাছে নিয়ে বলে–হুমম,, তাই।
তারপর মিথির এক অবাক করা কাজে সাদির চোখ ২ টো রসগোল্লা হয়ে যায়।
মিথি সাদির ঠোঁটে নিজে চুমু দিয়েছে।
সাদি তো পুরো অবাক।।সাদি–এটা কি তুই মিথি পাখি??
মিথি একটু লজ্জামাখা মুখ নিয়ে বলে–হুমম।।তুমিই তো বলেছ আমাদের আগে বিয়ে হয়েছে।।তারমানে আমি তোমার বউ,তাই চুমু দিতেই পারি।
সাদি মিথি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে–হুমম,দিতেই পারিস।।কিন্তুু আমিও বা তোর কাছে ঋণী থাকব কেনো!!তোর পাওনা শোধ করে দিবো এখনি।।
বলেই সাদিও মিথিকে জড়িয়ে নেয়।দখল করে নেয় তার প্রিয়তমার ওষ্ঠদ্বয়।।
চলবে