অভিমানে তুমি,পর্বঃ১৫

0
2311

অভিমানে তুমি,পর্বঃ১৫
ফারিয়া আফরিন ঐশী

সাদি মিথিকে রুমে এনে দরজা লক করে দিল তারপর মিথির ২ হাত চেপে ধরে বলল–বল কোথায় গিয়েছিলি??
মিথি চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।।
মিথির চুপ থাকা যেন সাদির রাগ দ্বিগুন করে দিচ্ছে।।
সাদি মিথিকে ঝাঁকিয়ে বলল–বল কোথায় ছিলি এতো রাত অবধি??কোনো ভদ্র বাড়ির বৌকে দেখেছিস ১০ টা অবধি বাইরে থাকতে??
মিথি এবারও চুপ।সাদি এবার মিথিকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে চোখ বন্ধ করে বার কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটা দমিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।তারপর মিথির কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল–কেন করছিস এমন??কি হয়েছে তোর??কোনো সমস্যা থাকলে বল আমি সলভ করে দিব।।
মিথি এখনো চোখটা নামিয়ে মুখে কুলুপ দিয়ে আছে।
সাদি–তুই তো আমায় কথা দিয়েছিলি যে কোন কথা লুকোবি না তাহলে??কি লুকোচ্ছিস বল আমায়??
মিথি এবার সাদিকে ধাক্কা দিল সাদি কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে সামলে অবাক দৃষ্টিতে মিথির দিকে তাকাল।
মিথি চিল্লিয়ে বলল–লুকিয়েছ তো তুমি।।কথা তুমি রাখোনি।।তাহলে আমি কেন রাখব!!!
সাদি আবার মিথির কাছে এসে বলল–কি লুকিয়েছি আমি??
মিথি–এখন ভালো সাজার কোনো দরকার নেই।।সব জানি আমি।।
সাদি কপাল কুঁচকে মিথিকে ধরে বলল–কি জানিস তুই??কি করেছি আমি??
মিথি সাদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
সাদি তো বেশ অবাক।।এর মধ্যে সাদির ফোন বেজে উঠল।সাদি ফোন চেক করে দেখে রিদানের কল।
সাদি ফোন রিসিভ করতেই রিদান বলল–স্যার,আপনার দাদুর খোঁজ পেয়েছি।সাদি কোনো কিছু না ভেবেই রিদানের পাঠানো ঠিকানাতে চলে যায়।সাদি হাই স্পিডে গাড়ি চালিয়ে ২৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যায় পুরানো একটা বন্ধ গোডাউনের কাছে।।সাদিকে দেখে রিদান সহ আরও ২ জন অফিসার ওখানে পৌঁছে যায়।।
গোডাউনের ভেতর পৌঁছানোর পর ৩ তলার একটা রুমে সাদির দাদু(সোহেল আহমেদ)কে হাত-পা বাঁধা অবস্হায় দেখতে পান।।সাদি তার দাদুর হাত দেখেই চোখের পানি ছেড়ে দেয় কারণ ইশান তার অনামিকা আঙ্গুল কেটে নিয়েছে।।
সোহেল আহমেদ ও সাদিকে দেখে চোখের পানি ফেলে বলে–আমায় বাঁচাও দাদুভাই প্লিজ।।
সাদি ওর দাদুর দিকে এগোতে যাবে ঠিক তখনি কেউ একজন বলে ওঠে–একদম এগোবে না দাদুর দিকে।।
পরিচিত কন্ঠ শুনে সাদি ফিরে দেখে মিথি।।
সাদি কপাল কুঁচকে বলে–একি!!তুই এখানে।।হাতে গান কেন??
মিথি সাদির দিকে বন্দুক রেখেই বলে–আমি জানি তুমি দাদুকে মারতে চাও।।কিন্তুু পারবে না।।তুমি এগোলেই কিন্তুু আমি শুট করবো।
সাদি তাও মিথির দিকে এগিয়ে যায় তখনি তার পেছন থেকে ইশান বেরিয়ে আসে,মুখে ডেভিল হাসি।।মিথির হাত থেকে বন্দুক নিয়ে একহাতে মিথিকে ঠেসে ধরে পরপর ২ বার শুট করে সাদিকে।।মিথি তো অবাকের চরম সীমায়।।সাদির বুকে আর হাতে গুলি লাগায় সাদি সেন্সলেস হয়ে যায়।মিথি কাঁদতে কাঁদতে বলে–কি করলেন আপনি??ওকে মারলেন কেন??
ইশান তখন ডেভিল হেসে বলে–ওকে মারার জন্যই তো এতকিছু জান।।
মিথি তেড়ে গিয়ে ইশানকে থাপ্পড় মারে।।তারপর বলে–তারমানে তুই এতোদিন মিথ্যা বলেছিস।।আর আমি বোকার মতো তোকে বিশ্বাস করে সবাইকে কষ্ট দিয়েছি।।
ইশান–হুমম তাই।। এখন ড্রামা বন্ধ করো আর চলো।
ইশান মিথির হাত ধরতেই রবিন, রিদান,রুহি ইশানে পায়ে শুট করে ইশান হাতের বন্দুক ফেলে বসে পড়ে।।তারপর বাকি অফিসার এসে ইশানকে নিয়ে যায়।।আর সাদিকে দ্রুত রিদান আর রবিন মিলে গাড়িতে উঠায় উদ্দেশ্য হাসপাতাল কারণ সাদির প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে।।
মিথি তো কাঁদতে কাঁদতে অবস্হা কাহিল।।তখন রবিন মিথির মাথায় হাত রেখে বলে–তুমি এখানে কিভাবে এলে বৌমা??
মিথি তখন জানায়,,
১ মাস আগে আমার ভার্সিটিতে পরিচয় হয় নীলের সাথে।।আমাকে একদিন সাদিকে নামিয়ে দিতে দেখে জানতে চান সাদির ব্যাপারে।।তারপর বিভিন্ন কথায় কথায় বলেন উনার মাকে নাকি ফুপি মেরেছেন।।দাদুকে সাদি আটকে রেখে অত্যাচার করছে।ওনার ছোট বাচ্চার মাকে ও সাদি আটকে রেখেছেন।।আমি বিশ্বাস করতে চাই নি।।তারপর দাদুর আঙ্গুল৷ সাদি কেটে দিয়েছেন এমন ভিডিও দেখান।।তারপর ফুপি আর সাদির বিভিন্ন সময়ের কথার রেকর্ড ও শোনান।।
তারপর বাড়ির স্টোরে ওনাদের ছবি দেখে বাড়ির পুরাতন মেইডকে জিজ্ঞেস করলে তিনিও জানান যে নীলের কথা সত্যি।আমি শুধু বাচ্চাটার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। তাই আমিও বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম।
রবিন সব শুনে বললেন–তোমার ব্রেন ওয়াশ করেছে বৌমা!!তুমি এখানে কিভাবে এলে??
মিথি–নীল ফোন করে বলল সাদি নাকি আজ দাদুকে মেরে ফেলবে।।তারপর ওর পাঠানো ঠিকানাতেই
সি এনজি করে আরকি!!
রবিন–বুঝেছি।।
তারপর রবিন,রিদান আর রুহি মিথিকে পুরো ঘটনা খুলে বলে।।
মিথি তো আফসোস আর অবাকও।।
হসপিটালে পৌঁছে সাদিকে ওটিতে নেওয়া হল।।দ্রুত হলো কারণ অন্য অফিসাররা রিদানের কথামতো সব রেডি করে রেখেছিল।
মিথি ওটির বাইরে বসে একভাবে কাঁদছে।।আর মনে মনে বলছে–হায় খোদা!!আমি অন্য একজনকে কিভাবে বিশ্বাস করলাম।।আমি ওকে ব্যাপারটা খুলে বললেই সব মিটে যেত।।এখন কি হবে!!!
মিথির অস্হিরতা দেখে রবিন ওর মাথায় হাত রেখে বলল–চিন্তা করো না বৌমা।।সাদি ঠিক হয়ে যাবে।
সাদির মা রুহির কাছ থেকে সব শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তারপর রুহি বাড়িতে গিয়ে সায়মা আহমেদ কে হসপিটাল এ নিয়ে আসলো।।
সায়মা আহমেদ আসতেই মিথি এগিয়ে গিয়ে হাত ধরতেই ঝাটকা দিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলল–এই তোর ভালোবাসা আমার ছেলের প্রতি??যেখানে তুই আমাদের বিশ্বাসই করিস না।।আমার ছেলে তোর জন্য পাগল।।তোকে পাওয়ার জন্য কতকিছু করেছে। আর তুই—ছি!!!
মিথি কেঁদেই যাচ্ছে।। অন্যায় তো সে করছে নিজের পরিবারের প্রতি অবিশ্বাস করে।।তবে সব ঠিক ও এখন তাকেই করতে হবে।
সায়মা আহমেদ কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লেন।।
১ ঘন্টা পর ডাক্তার ওটি করে বের হলো।।সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে এগিয়ে গেল।।
ডাক্তার জানাল–সাদি এখন ঠিক আছে।গুলি বের করা হয়েছে৷ বাট ব্লাড লসের কারণে অনেক উইক।
কিছুক্ষণ পর বেডে দিলে সবাই দেখা করতে পারবে।।
সবাই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
সাদিকে কেবিনে দেওয়া হলো কিন্তুুু সাদির এখনো সেন্স নাই।মিথি সাদির কেবিনে ঢুকতে গেলে সায়মা আহমেদ হাত চেপে ধরে বলেন–মারতে তো গিয়েছিলি পারিসনি বলে কি আবার যাচ্ছিস আমার ছেলেকে মারতে!!মিথির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।।
সায়মা আহমেদ নিজে ভেতরে চলে গেলেন।সায়মা আহমেদ গিয়ে অজ্ঞান সাদির মাথাতে হাত বুলিয়ে চোখের পানি মুছলেন।।তারপর বললেন–ডাক্তার বলেছে তুই কালই বাড়ি যেতে পারবি।।চিন্তা করিস না।।মা আছে তো।।তোর বান্ধবী তো আমি।।
আবার চোখের পানি মুছে নিলেন।।তখন দরজা খুলে রবিন আসলেন।।সায়মা আহমেদ পেছন ঘুরে দেখলেন রবিনের পেছনে মাথা নিচু করে মিথি দাঁড়িয়ে আছে।
সায়মা আহমেদ রাগে ফুঁসে উঠলেন তারপর এগিয়ে গিয়ে নিচু স্বরে বলল–ওকে আনলে কেন রবিন??
রবিন–দিদি,,মানুষ মাত্রই ভুল।। ক্ষমা করে দিন।।আর তাছাড়া ইশানের ট্রাপে পা দিয়েছিল।।ভগবানের কৃপায় মিথির কোনো ক্ষতি করেনি ইশান।।
সায়মা আহমেদের পা জড়িয়ে ধরে মিথি বলে উঠল– ক্ষমা করে দাও আম্মু প্লিজ।।আমাকে শাস্তি দেও তুমি কিন্তুুু দূরে সরিয়ে দিও না।।
সায়মা আহমেদ এমনিই মিথিকে ছোটবেলা থেকে অনেক ভালোবাসেন তারওপর সাদি মিথিকে পছন্দ করার পর যেন তার ভালোবাসা আরও দ্বিগুন হয়।
তিনি পা থেকে মিথিকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরেন।।
তারপর মিথির চোখ মুছে দিয়ে বলেন–আর এমন করবি না।।খুব কষ্ট পেয়েছি আমি।
মিথি–সরি আম্মু আর হবে না।।
তারপর সায়মা আহমেদ আর রবিন কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।।
মিথি সাদির কাছে গিয়ে সাদির সারা মুখে এলোপাতাড়ি চুমু খেল।।তারপর কপাল ঠেকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল–সরি।। খুব ভূল হয়ে গিয়েছে।। তুমি আমায় ক্ষমা করবে তো??

সাদির পাশে বসে থাকতে থাকতে মিথির চোখ একটু লেগে এসেছিল।। সাদি একটু খানি আওয়াজ করতেই মিথি জেগে উঠে।।সাদির কষ্ট হচ্ছে ভেবে ডাক্তার ডাক দেয়।।ডাক্তার এসে জানায় সাদি সুস্হ আছে।।তারপর সাদিকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়।সবাই একে একে সাদির সাথে দেখা করে।।সায়মা আহমেদ তো আলতো হাতে সাদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।।সাদি একহাতে তাকে জড়িয়ে নিয়ে বলে–ও গো বান্ধবী,, এখনো সুস্থ আছি।।কেঁদো না।।
এই পুরোটা সময় মিথি কেবিনের এক কোনায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল আর শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচাচ্ছিল।। তা সাদির নজর এড়ায় নি।সাদি ও ডাকে নি। রবিন ইশানের ট্রাপটা সাদিকে জানাল।।ইশান এখন কাস্টাডিতে আছে।। সবাই একে একে চলে যায়।কেবিনে রয়ে যায় সাদি,মিথি আর একজন নার্স।
সাদি–সিস্টার,,আম হাংরি।।প্লিজ এরেন্জ সাম ফুড।।
নার্স –ওয়েট এ মোমেন্ট মিঃআহমেদ।।
মিথি এখনো সেম জায়গায় স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।আর ভাবছে সে কাছে গেলে সাদির রিয়েকশন কেমন হবে!!!
সাদি দেখেও না দেখার ভান করে আছে।কারণ এবার সেও অভিমান করেছে।।কেনো মিথি তাকে অবিশ্বাস করলো।।
একজন নার্স খাবার এনে সাদির সামনে রাখল।।তারপর বলল–ওয়েট,, খাবার আগের মেডিসিন গুলো খেতে হবে।।
সাদি –ওকে।।
নার্স মেডিসিন চেক করতে করতে বলল–মিসেসঃআহমেদ আসুন আপনার হাজবেন্ডের মেডিসিন গুলো বুঝে নিন।।কাল তো ওনার রিলিজ হয়ে যাবে।।
মিথি নার্সের কাছে এগিয়ে আসতেই সাদি বলল–দরকার নেই,,,আমার মেডিসিন আমি বুঝে খেতে পারব।।
নার্স–বাট—
সাদি–ইউ মে লিভ নাউ।।আমি প্রেসকিপশন দেখে খেয়ে নিবো মেডিসিন।।
সাদির কথাতে নার্স বেরিয়ে গেল।।তারপর সাদি খাবার ট্রলি কাছে টেনে নিল। ডান হাতে গুলি লেগেছিল তাই বা হাত দিয়ে চামচ ধরে খাওয়ার চেষ্টা করছে।।
মিথি এগিয়ে সাহায্য করতে গেলেই সাদি চোখ গরম দিয়ে তাকাল তাতে মিথি আর এগোনোর সাহস পেল না।।
এখন শুধু মিথির অপেক্ষা সাদির ক্ষমা প্রাপ্তির।।ভালোবাসাতে বিশ্বাস হলো মূল,,মিথি সেই খুটিতে আঘাত করেছে,, ঘা শুকোতে সময় লাগবে।।তবে শুকোবে।।ভালোবাসা হয়তো আবারও আগের মতোই হবে তবে অপেক্ষা সময়ের।।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here