অভিমানে তুমি,পর্বঃ২০ (অন্তিম পর্ব)

0
5433

অভিমানে তুমি,পর্বঃ২০ (অন্তিম পর্ব)
ফারিয়া আফরিন ঐশী

সাদি জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে মিথি তার উপহার দেওয়া শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে।সাদি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মিথিকে জড়িয়ে ধরল।।বলল–তুই তো আজ আমাকে পাগল বানানোর প্লান করেছিস মনে হচ্ছে!!
মিথি সাদির দিকে ঘুরে বলল–নতুন করে পাগল করার কি আছে,, আপনি তো আগে থেকেই আমার পাগল।।
সাদি মুচকি হেসে বলল–কথা সত্যি।।
এরপর মিথি সাদিকে জড়িয়ে ধরল।।একে অপরকে আবিষ্কারের মাঝে কেটে গেল তাদের আরও কিছু সময়।।
সাদি-মিথির বিয়ের ১ বছর পর মিথি কন্সিভ করে।।সেদিন সাদির খুশি যেন ছিল আসমান ছোঁয়া। কিন্তুু দূর্ভাগ্যবশত ১৬ সপ্তাহে মিথির মিসক্যারেজ হয়।।এতে মিথি ভেঙে পড়লেও সাদি ভেঙে পড়ে নি।।সাদি পুরো সময় মিথির পাশে ছিল।সাদির ভালোবাসাতে মিথি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।।অবশেষে সাদি মিথির অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তাদের বিয়ের ৩ বছরের মাথায় মিথি আবারও কন্সিভ করে।।এবারও সাদি আগের বারের মতোই খুশি তারসাথে কিছুটা ভয় ও ছিল।।সাদি,সায়মা আহমেদের যত্নে কেটে যায় ৯ মাস।।মিথির কোল জুড়ে আসে তাদের মেয়ে সামিরা।।
সেদিন তো সাদি পুরো হসপিটাল এ মিস্টি বিতরণ করেছিল।।আহমেদ বাড়ির প্রাণ সামিরা।।অতঃপর ১০ বছরের সাজা শেষ করে ইশান বের হলে সাদি নিজে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে।।ইশান নিজের কাজে অনুতপ্ত হয়েই আসতে চায় নি।।কিন্তুু সবার জোড়াজুড়িতে নাও করতে পারেনি।।
বর্তমান,,
মিথি সাদির বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।।নীরবতায় আঘাত করে সাদি বলল–আচ্ছা,কাল তিশার সাথে একবার কথা বলা উচিত।।কি বলিস??
মিথি–হুমমম,ভাইয়ার লাইফটা তো এমন ছন্নছাড়া ভাবে চলতে পারে না।।
সাদি–কাল তুই,আমি আর মা যাবো।।
মিথি–ওকে।।ইভু বাবু কতো বড় হয়ে গিয়েছে তাইনা।।
সাদি–হুমমম!!যদি ভুল না হই তাহলে ১৪/১৫ বছরের হবে।।
মিথি–হুমম।
সাদি–সব আলোচনা হলো।।এখন চল!!
মিথি–কোথায়??
সাদি–বলবো না।।
এভাবে খুনশুটিতে তাদের আরও একটা রাত কাটে।।
পরদিন,,
তিশার বাড়িতে সবাই উপস্থিত হয়।।কিন্তুু তিশা অনড় সে ইশানের সাথে থাকবে নাহ।।ইশান যা করেছে তার ক্ষমা হয় না।
সবাই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে এলো।।এরপর অনেকগুলো দিন কাটে ইশানের শুধু তিশার কাছে ক্ষমা চেয়ে।।
এরপর একদিন তিশাকে পার্কে ডাকে ইশান।।।
বলে–শেষবারের মতো দেখা করতে।।
তিশা যথাসময়ে পার্কে এসে দেখে ইশান বসে আছে।।
তিশা–কি বলবে বলো??
ইশান–এতো তাড়া কিসের??
তিশা–রাতের বাসে আমি চলে যাব।।তাই তাড়া।।
ইশান এবার তিশার হাত ধরে বলে–তিশা প্লিজ মাফ করো আমায়।।চলো না নতুন করে শুরু করি সব।।
অন্তত আমাদের বাচ্চার জন্য।। প্লিজ।।
তিশার কোনো উত্তর না পেয়ে ইশান পকেট থেকে একটা ছুড়ি বের তিশার হাত ছেড়ে নিজের বা হাতের রগের ওপর ধরে বলে–ঠিক আছে, তিশা।তুমি যখন ফিরবে না তখন আমার বাঁচারও কোনো দরকার নেই।।কারণ আমি আমার পরিবার চাই,তাছাড়া বাঁচতে পারব না।।
তিশা ভয়ার্ত কন্ঠে ইশানকে বলে–প্লিজ ইশান,ডোন্ট ডু দিস৷।। ফেলো ছুড়িটা।
ইশান–নো তিশা।।
ইশান এবার যখনি ছুড়ি চালাতে যাবে তখন তিশা দৌড়ে গিয়ে ইশান কে জড়িয়ে ধরে।।
ইশানও হালকা হাতে জড়িয়ে ধরে।।।
তিশা এবার ইশানের হাত সামনে এনে বলে–হাত তো কেটে গিয়েছে।। হসপিটাল চলো।।
ইশান একটু হেসে বলে–যাস্ট একটু চামড়া কেটেছে।।এতে কিছু হবে।।গাড়িতে বসে ফাস্ট এইড করে নিবো।।
এরপর তিশাকে বাড়িতে নামিয়ে,ইশান বাড়ি ফিরল।।।
উদ্দেশ্য বাড়ির সবাইকে বলবে কাল তিশাকে নিয়ে আসতে।।ইশান এসে সায়মা আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে বলল–চাচিমনি,তিশা বাড়িতে আসতে রাজি হয়েছে।।
সায়মা আহমেদ খুশি হয়ে বললেন–কি খুশির খবর।।
কালই যাব আমরা।।
সোহেল আহমেদ বাধা দিয়ে বলল–না বৌমা।।
সবাই ভ্রু কুঁচকে বলল–কেন??
সোহেল-ইশান তিশার বিয়েতে আমরা কেউ উপস্থিত ছিলাম না।তাই আমি চাই ওদের আবার বিয়ে দিয়ে তাই তিশা নাতবৌকে এ বাড়িতে আনতে।।কি বলো সবাই??
সাদি–গ্রেট আইডিয়া দাদুন।।
সোহেল–তাহলে চলো কাল কথা বলে ডেট ঠিক করি।।তারপর শুভ বিবাহ!!!
সবাই আনন্দ খুশিতে মেতে ওঠে।।।
পরদিন,,
আহমেদ বাড়ির সকলে তিশাদের বাড়িতে যায়।।প্রস্তাব নিয়ে।তিশার পরিবারও রাজি হয়।।সবার সম্মতিতে ২ সপ্তাহ পরের তারিখ ঠিক হয়।।
এটুকুসময়ে ইভান আর ইশানকে সবাই দিতে চায় কারণ সবকিছুর সাথে মানাতে ইভানের তো সময় প্রয়োজন।।
বিয়ের সব কিছু আয়োজনে ২ সপ্তাহ বেশ ভালোই কাটে সবার।।এরমধ্যে ইশানের চেষ্টায় ইভান ও সবার সাথে অনেক এডজাস্ট করে নিয়েছে।।বিয়ের দিন সবাই বরযাত্রী চলে যাচ্ছে।। আর সাদি মিথিকে বসিয়ে রেখেছে তার কারণ হলো কালই জেনেছে সবাই মিথি আবারো কন্সিভ করেছে।।সবার আনন্দের মাত্রা তিনগুন করতে এটাই যথেষ্ট ছিল।।
মিথি বিরক্ত হয়ে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে।।
সাদি–ওমন করে তাকাচ্ছিস কেন শুনি??
মিথি গোমড়া মুখ করে বলল–তা নয়তো কি!!সবাই চলে গিয়েছে৷ আর তুমি আমাকে ওদের সাথে যেতে দিলেনা।
সাদি–হুমম।।কারণ তুই আমার সাথে যাবি।।
মিথি-ওদের সাথে গেলে কি হতো??
সাদি মিথির সামনে বসে হাতটা ধরে বলে–অনেক কিছু হতো। ২ বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছিস অথচ তোর বুদ্ধি এখনো হাঁটুতে।ওদের সাথে গেলে লাফালাফি করে চোট লাগিয়ে নিতিস আবার তখন।।রিস্ক নিতে চাই না আমি।।
মিথি মুখ ফুলিয়ে রইল।।সাদি মিথিকে জড়িয়ে ধরে টুপ করে মিথির ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে–রাগ করিস না প্লিজ।।
মিথি ও হেসে দেয়।।।
এরপর সাদি রেডি হয়ে তারপর মিথিকে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে পৌঁছাল।।
খুবই আনন্দের৷ সাথে কেটে গেল ইশান তিশার বিয়ে।।
এখন তিশা বাসর ঘরে দাঁড়িয়ে আছে আর ইশান তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।।
ইশান–আমার একটা ইচ্ছে আছে জানো।।
তিশা–কি ইচ্ছে??
ইশান–আমার ঠিক সামিরার মতো একটা ছোট্ট তিশা চাই।।।
তিশা লজ্জা পেয়ে যায়।।ইশান তিশাকে কোলে নিয়ে তাদের নতুন জীবনের সূচনার পথে অগ্রসর হয়।।
আর সাদি-মিথি আজ ও বসে আছে ছাদে রাখা দোলনাতে।।একে অপরের সাথে কাটানো ১১ বছরের বহু স্মৃতি তাদের মন জুড়ে।।ভুল বোঝাবুঝি হলেও এতো বছরে তাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা একটুও কমেনি। তারা আজও একে অপরের জন্য একই অনুভতি ব্যক্ত করতে ব্যস্ত।।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here