অভিমানে তুমি,পর্বঃ৬

0
3340

অভিমানে তুমি,পর্বঃ৬
ফারিয়া আফরিন ঐশী

প্রায় ১৫ মিনিট পরে সাদি হসপিটাল পৌঁছে রিসেপশনে জিজ্ঞেস করল –মানজিয়া মিথি কত নম্বর কেবিনে আছে??
রিসেপশনিস্টঃলেট মি চেক স্যার।।
সাদিঃডু ইট ফাস্ট
রিসেপশনিস্টঃস্যার,মানজিয়া মিথি ১২ তলার ৩০৯ নং কেবিনে আছেন।
সাদিঃওকে,থ্যাংকস।।
বলে সাদি লিফটে উঠে ১২ তলায় যায় তারপর কেবিনের সামনে রিদানকে দেখতে পায়।
রিদান সাদি কে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সাদির দিকে এগিয়ে আসতেই সাদি জিজ্ঞেস করল–মিথির কি অবস্থা??
রিদান–ম্যামের ট্রিটমেন্ট চলছে স্যার,ডক্টর এখনো কিছু জানাননি।।বড় ম্যামের খোঁজ পেয়েছেন কি?
সাদি –না, মায়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
রিদান–ইশান স্যারই কি তাহলে—
সাদি–মনে তো তাই হচ্ছে।।দেখি–
বলতে বলতেই সাদি মিথির কেবিনে প্রবেশ করল।ডাক্তার মিথিকে চেক করে।তারপর ডাক্তার সাদির দিকে এগিয়ে হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে–হ্যালো,মিস্টার আহমেদ!!হাও আর ইউ??
সাদি–আম পারফেক্টলি ফাইন ডক্টর।। মিথি কেমন আছে??
ডাক্তার–মাথার চোট টা একটু ডিপ।বাট সি ইজ ওকে নাও।কিছুক্ষণ পরেই ইনশাআল্লাহ সেন্স ফিরবে।
সাদি–ওকে,থ্যাংক ইউ ডক্টর।
তারপর ডাক্তার আর ২ জন নার্স কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।রিদান কেবিনে আসতেই সাদি বলে–হসপিটালে সিকিউরিটি বাড়াও।আর আমি এখন আছি মিথির কাছে। তুমি মা আর ইশানের ফোন ট্রেস করো দ্রুত।বাকিটা আমি দেখছি।
রিদান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে চলে যায়।
সাদি এসে মিথির বেডের পাশে রাখা চেয়ারে বসে মিথির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কয়েকটা চুমু দেয়।তারপর বলে–আচ্ছা,মিথিপাখি,বলতো কবে একটু শান্তি পাবো?তোকে নিজের মতো করে পাবো।আর পারছি না আমি।।তোর ভালোর জন্য ৫ বছর তোর থেকে দূরে থেকেছি,ইশানের কথা মতো তিশাকেও বিয়ে করতে চেয়েছিলাম,ওর কথাতে তোকে জানোয়ারের মতো ঐ দিন মেরেছি।।
সাদির চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরছে।
চোখটা মুছে আবারো মিথির হাত ধরে বলে–তুই চিন্তা করিস না মিথিপাখি,আমি সব ঠিক করে দিবো।আর তুই যখন আমার জীবনের সাথে জড়িয়েই গিয়েছিস তখন তুই শুধু আমার।আমারই থাকবি।কোনো ইশানকে তোকে নিয়ে যেতে দিবো না আমি।।
সাদির ফোনটা বেজে ওঠাতে সাদি খুব সাবধানে মিথির হাতটা ছেড়ে নামিয়ে রেখে। ফোনটা রিসিভ করে অপরপাশের ব্যক্তির কথা শুনে বলে–ওয়াট দেয়ার,আমি আসছি।ফোন রেখে সাদি মিথির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।।

অতীত,,,
সকাল ১০.১৫,,
ফুপি আমাকে ডেকে বলল–চল,মিথি মা,আজ তোকে নিয়ে একটু শপিং এ যাবো।
আমিও লাফিয়ে উঠে ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম–ওক্কে, আমি এখুনি রেডি হয়ে আসছি।।
উপরে এসে সাদি ভাইয়ের ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনি ভেতর থেকে একখানা হাত আমার বা হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে গেল আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম আচমকা এমন হওয়াতে। চিৎকার করতে যাব তার আগেই একটা হাত আমার মুখ চেপে ধরল।কোনোমতে একটা চোখ খুলে দেখি সাদি ভাই মুখে ডেভিল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি কপাল কুঁচকে দুচোখ মেলতেই সাদি ভাই আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে হাতটা দেয়ালে ঠেকালেন।তারপর বললেন–কি রে বুচি!!!এতো লাফাতে লাফাতে কই যাচ্ছিস??
মিথি একটু মুখটা ফুলিয়ে বলল–ফুপির সাথে শপিং এ যাচ্ছি।।
সাদি–তাই নাকি।
বলেই মিথির মুখ ধরে ২ গালে চুমু দিল।মিথি একটু রাগী স্বরে কপাল কুঁচকে বলে–আপনি এমন কেন করেন সাদি ভাই??
সাদি–কেমন??ভ্রু নাচিয়ে।
মিথি মুখে রাগ ভাব ফুটিয়ে সাদিকে মুখ ভেংচি দিয়ে বলে–একদম বাজে টাইপ,সরুন,রেডি হতে হবে।।
সাদি–ও আচ্ছা।। আমি বাজে টাইপ তা কি বাজে কাজ করেছি তা না বললে আজ তোকে ছাড়ছি না।
মিথি এদিক ওদিক তাকিয়ে সাদির থেকে বাঁচার বহু চেষ্টা করলাম,শেষে ব্যর্থ হয়ে বললাম–ছেড়ে দিন প্লিজ সাদি ভাই।।
সাদি ভাই ছেড়ে দিয়ে বললেন–আচ্ছা যা,ছেড়ে দিলাম বাট বাড়িতে ফিরে আয় তারপর তোকে দেখছি।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বেরিয়ে এলাম।তারপর রেডি হয়ে নিচে আসতেই ফুপি বলল,–চল তাহলে বেরোই।।
ফুপির পেছন পেছন গিয়ে গাড়িতে উঠলাম।তারপর শপিং এ গিয়ে বেশ অনেককিছু কেনাকাটা করলাম।তারপর বাড়ি ফেরার পথে ফুপি বললেন –চল, রাস্তার পাশের দোকান থেকে ফুচকা খাই ২ জন।।
আমি ফুচকার নাম শুনে বললাম–চলো ফুপি।।ফুচকা আমার দারুণ পছন্দ।
তারপর রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ফুচকাওয়ালার থেকে ফুচকা অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।আর আমি, ফুপি টুকটাক কথা বলতে লাগলাম। আচমকা একদল কালো মাস্ক পরা লোক এসে ফুপির মাথায় বারি দিল ফুপি সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলে, ওই লোকগুলো ফুপিকে ধরে গাড়িতে উঠাতে যাচ্ছে।। আমার হাত একজন লোক শক্ত করে ধরে রাখায় আমি শুধু চিৎকার করছি।তারপর ওরা ফুপিকে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিবে তখন আমার হাত ধরে থাকা লোকটা গাড়িতে ওঠার আগে আমাকে জোরে ধাক্কা দিলো আর আমি রাস্তার ধারে রাখা ইটের সাথে মাথায় বারি খেলাম।তারপর তো আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।তারপর আর কিছু মনে নেই।
সাদি বাড়িতে বসে কাজ করছিল ঠিক তখনই সাদির ফোনে কেউ একজন ফোন করে ওর ফোনে। সাদি সবটা শুনে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়।মিথিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হসপিটাল এ পাঠায়।তারপর নিজের মাকে খুঁজতে থাকে।
বর্তমান,,,

সাদি হসপিটালের বাইরে এসে দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সাদিকে দেখে এগিয়ে এসে বলে–গুড নুন স্যার।
সাদি–হুমম।।ইশানের আপডেট কি রুহি??
রুহি–স্যার,,ইশান তিশাকে একটা রুমে ৮ দিন আটকে রেখেছিল।তারপর তিশাকে ওর লোকজন দিয়ে কোথায় শিফট করেছে তা এখনো জানিনা।তিশা আর ইশানের ছেলে একটা বেবি কেয়ার সেন্টারে আছে।ছেলেটা এবার ৩ বছরের হবে।আর ইশান গত ২ দিন ধরে মিসিং।ফোন ও বন্ধ।বাপিকে দিয়ে ট্রেস করার চেষ্টা করেছি বাট নো রেসপন্স।
সাদি–হুমম।।বুঝলাম।ইশানের খোঁজ না পেলে মা আর দাদুকে পাবো না।
লিসেন রুহি আই ওয়ান্ট ইশান।
রুহি–ওকে স্যার,উই আর ট্রাইং আওয়ার বেস্ট।

সাদি–ওকে,ফাইন্ড হিম ছুন।
রুহি–ওকে স্যার।
রুহি চলে যাওয়ার পর সাদিও গাড়িতে উঠে।ড্রাইভারকে বলে–ইনটেলিজেন্স অফিস চলো।
অফিসে পৌঁছাতেই সব কর্মরত অফিসাররা সাদিকে স্যালুট দেয়।
সাদি সোজা গিয়ে একজনের কেবিনের দরজায় নক করে বলে–মে আই কাম ইন স্যার??
রবিন রায়(ইনটেলিজেন্স হেড অফিসার)–কাম ইন সাদি।।আই আম ওয়েটিং ফর ইউ।
সাদি–সরি ফর লেট স্যার।আসলে আমার উড বি বেশ ইনজুরড।আজকের অ্যাটাকে।
রবিন–ইয়াহ আই নো।।রুহি টোল্ড মি।।হাও ইজ সি নাও?
সাদি-সি ইজ আউট অফ ডেন্জার নাও।বাট মাই মাদার ইজ মিসিং।
রবিন–ইয়াহ আই নো।। আমার মোস্ট প্রবাবলি মনে হচ্ছে কাজটা ইশান আর তার গ্যাং এর।।ওর তো তোমাদের সাথে আবার পারসোনাল প্রবলেম ও আছে।
সাদি–জি স্যার।।ওর যে কি প্রবলেম আমি রিয়েলি জানি না।।ওর মা মানে আমার চাচি সেই বা কোথায় তাও জানি না।ইভেন ইশান এসব আড়ালে বসে করছে আমার সামনেও আসছে না।লাস্ট ৮ মাস আমি, রুহি,রিদান অনেক চেষ্টা করেছি বাট নো রেজাল্ট।
রবিন–হুম আই নো।।ইভেন ইশান তো তোমার উডবি মিথির বাবাকে ভয় দেখিয়ে মিথিকে একজন ৪৫ বছরের নারী পাচারকারীর সাথে বিয়ে দিচ্ছিল।
সাদি–ইয়েস স্যার,বিয়েটা হয়েছিল আমি খবর পেয়ে পৌঁছানোর আগে।কিন্তুু ইশান কেন জানি না ঐ লোকটাকে ট্রাকচাপা দিয়ে মেরে ফেলে।
রবিন–হুমম।রুহি তো এমন ইনফরমেশন ই দিলো।বাট মিথির সাথে এমন কেন করছে তা রুহি জানতে পারে নি।
সাদি–তবে স্যার এটা সিউর যে ইশানের মাফিয়া গ্যাং এর সাথে কানেকশন আছে।
রবিন–ইউ আর রাইট নয়তো এতগুলো খুন একা করা সম্ভব নয়।
সাদি–ইয়েস স্যার।
রবিন–সাদি তুমি আমাদের বেস্ট সিক্রেট এজেন্ট।আই থিংক এই কেসটাও আগের গুলোর মতই তুমি সলভ করবে।
সাদি–আম ট্রাইং স্যার।বাট—
রবিন–আই নো,, তুমি মিথির জন্য ওয়ারিড বাট চিল ম্যান।ওর সিকিউরিটির জন্য তোমার বাড়ির মেইড,দারোয়ান, কুক এসব কাজে আমাদের বেস্ট অফিসারদের রেখেছি।
সাদি-থ্যাংক ইউ স্যার।
রবিন–হুমম।।বেস্ট অফ লাক।আর বৌমাকে সুস্হ করে বাড়ি নিয়ে যাও সব ঝামেলা মিটলে তোমার বিয়েতে কজ্বি ডুবিয়ে খাব।
সাদি একটু হেসে বলে–সিউর স্যার।
রবিন–চিন্তা করো না,তোমার মাকে খোঁজা হচ্ছে।
তুমি আপাতত বৌমার কাছে যাও।ওর লাইফ রিস্ক আছে।
সাদি –ইয়েস স্যার।
তারপর স্যালুট দিয়ে সাদি অফিস থেকে বেরিয়ে আবার হসপিটালের পথে রওনা হয়।
মিথির কেবিনে এসে দেখে মিথি চিল্লাচ্ছে।সাদি দ্রুত মিথির কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে– কি হয়েছে মিথি পাখি??
মিথি–সাদি ভাই, ওরা ফুপিকে নিয়ে গিয়েছে।। বাঁচান ফুপিকে।
সাদি মিথিকে জড়িয়ে ধরে রিলাক্স হতে বলল।নার্স ঘুমের ইনজেকশন পুশ করতে গেলে সাদি মানা করে আর তাদের বেরিয়ে যেতে বলে।
নার্সরা বেরিয়ে গেলে সাদি মিথির কোমর জড়িয়ে ধরে কিন্তুু মিথিকে কিছুতেই ঠান্ডা করতে না পেরে মিথির ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।আতঙ্কে থাকা মিথি যেন একদম শিথিল হয়ে যায়।চুপচাপ চোখ বন্ধ করে সাদিকে ফিল করে।কিছুক্ষণ পর সাদি মিথিকে ছেড়ে দিয়ে ওকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে–কিচ্ছু হয় নি মিথিপাখি।।সব ঠিক আছে।আমি আছি তো।মিথি ও শক্ত করে সাদিকে জড়িয়ে ধরে বলে–ফুপিকে দ্রুত বাড়ি নিয়ে আসবেন তো??
সাদি মিথির মুখটা একটু উপরে তুলে চোখের মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে–হুমম,নিয়ে আসবো।বাট এখন তোকে দ্রুত সুস্থ হতে হবে তা না হলে মা কে খুঁজে আনতে আমাকে সাহায্য করবি কিভাবে!!
মিথি–বলুন আমায় কি করতে হবে।
সাদি মিথিকে ছেড়ে ওর নাক টেনে বলে–এখন আপাতত খেতে হবে।
সাদি নার্সকে বললো খাবার দিতে,নার্স খাবার দিয়ে গেলে সাদি মিথিকে খায়িয়ে দেয়। অল্পএকটু খাওয়ার পরই মিথি সাদির হাত থেকে চামচ টা নিয়ে বলে-এবার আপনি খান,আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।। আপনি অনেকক্ষণ কিছুই খান নি।
সাদি–তুই জানলি কিভাবে??
মিথি সাদির মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলে—আমি মানজিয়া মিথি বুঝলেন, আমি সব জানি।
সাদি–হুমম বুঝলাম পাগলী মিথি।
মিথি রাগ দেখিয়ে বলে–আবারো পাগলী বলছেন।
খাওয়া শেষ করে সাদি মিথিকে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দেয়।তারপর বলে–তুই একটু রেস্ট নে।। আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।
বলে সাদি চলে যেতে নিলে মিথি সাদির হাত চেপে ধরে, সাদি পেছন ঘুরে মিথির দিকে ঝুঁকে বলে– কিছু বলবি??
মিথি–সাবধানে যাবেন আর ফুপিকে তাড়াতাড়ি খুঁজে আনুন।।
সাদি মিথির ঠোঁটের পাশে, গালে আর কপালে চুমু দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে–কথা দিলাম, খুব তাড়াতাড়ি মা কে খুঁজে আনবো।।তারপর সাদি কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

অপরদিকে,,,,
সায়মা আহমেদ(সাদির মা)হাত -পা,চোখ বাধা অবস্হায় একটা চেয়ারে বসে আছেন।দরজা খুলেই ইশান প্রবেশ করল।তারপর আলো জ্বেলে সায়মা আহমেদের সামনে বসে, তার চোখ খুলে দিয়ে বলল—কেমন আছো চাচিমনি??

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here