অভিমানে তুমি,পর্বঃ৯

0
2819

অভিমানে তুমি,পর্বঃ৯
ফারিয়া আফরিন ঐশী

আজ সকাল থেকে মিথি অনেক ব্যস্ত।কারণ আজ সায়মা আহমেদ বাড়িতে আসছেন।মিথি রান্না করছে।আর সাদি সে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। বেলা যে ১১ বেজে ১৩ মিনিট তাও তার হুস নাই।মিথি বাকি কাজটা মেইডের হাতে দিয়ে রওনা হলো সাদির ঘরের উদ্দেশ্যে।মিথি ঘরের দরজা খুলে দেখল ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। মিথি ঘরে ঢুকে আলো জ্বেলে দিলো।তারপর জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো।আচমকা আলো পড়ায় সাদি চোখ-মুখ কুঁচকে হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে বিরক্তির স্বরে বলল-কি করছিস বুচি??ঘুমোতে দে।।
মিথি কোমড়ে হাত রেখে বললো–কটা বাজে খেয়াল আছে??দ্রুত উঠুন।
সাদি–আর ১০ মিনিট প্লিজ।
কিন্তুু মিথির টানাটানিতে সাদি একপর্যায়ে উঠে ওয়াশরুম এ চলে গেল।আর মিথি তারমধ্যে সাদির বেড গুছিয়ে একটা চিরকুট লিখে তা সাদির হাত ঘড়ি দিয়ে বিছানার ওপর চাপা দিয়ে রাখল।
সাদি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রেডি হয়ে ঘড়ি পড়তে গিয়ে দেখে ঘড়িটা বেডে রাখা তার নিচে একখানা চিরকুট।সাদির বুঝতে বাকি রইল না এটা কার কাজ।
চিরকুট পড়ে সাদি হাসতে লাগল।
চিরকুটে মিথি লিখেছে–এই যে মিঃ আঁকড়ু,,দয়া করে দ্রুত খেতে আসুন নিচে।
সাদি চিরকুটটা প্যান্টের পকেটে রেখে নিচে চলে এল।
নিচে এসে সাদি টেবিলে বসে বলল–কি কি রান্না হয়েছে রে??
মিথি–পরোটা,ডিম আর আলু ভাজি রয়েছে।আর আপনি খেতে থাকুন তার মধ্যে আমি চা নিয়ে আসছি।
সাদি –প্লেট টা সাজিয়ে তুই এসে আমার পাশে বস।
মিথি প্লেট টা দিয়ে বলল–কিন্তুু চা টা–
সাদি–ওসব পড়ে হবে।
মিথি গিয়ে চুপচাপ সাদির পাশে বসে পড়ে।সাদি ১ম লোকমা নিয়ে মিথির মুখে ধরে।মিথি মুখে নিয়ে তারপর মিথি ও সাদির মুখে খাবার তুলে দেয়।এভাবে খাওয়া শেষ করার পর সাদি মিথিকে কাছে টেনে মিথির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
সাদি বেরোনোর পর মিথি সব কিছু গুছিয়ে ফ্রেস হয়ে যোহরের নামাজ পড়ে নেয়।তারপর টুকটাক কাজ করে ঘড়ির দিকে দেখে যে ৩ টা ১৮।মিথি সাদিকে ফোন দেয়।সাদি রিসিভ করে বলে–হুমম,মিথিপাখি বল।
মিথি–আপনি কি দুপুরে আসছেন বাড়িতে??
সাদি–নাহ!!একবারে মাকে নিয়ে ফিরব।
মিথি–আচ্ছা
তারপর ফোন রেখে দেয় মিথি।সায়মা আহমেদ আসবে বলে ঘরের টুকটাক কাজের ফাঁকে দুপুরে খাওয়ার কথা ভুলেই যায় সে।মাগরিবের নামাজ পড়ে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়,মেইডদের সাহায্য নিয়ে রাতের খাবার প্রস্তুুত করে ফেলে।রান্না শেষে ফ্রেস হয়ে নিচে এসে দেখে সায়মা আহমেদ আর সাদি সোফাতে বসে আছে।মিথি দৌড়ে গিয়ে সায়মা আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।সায়মা আহমেদ ও।
এর মধ্যে সাদি বলে ওঠে–বাহ!!আমি এখন পর হয়ে গেলাম।
সায়মা আহমেদ মিথি ধরেই বললেন–দেখেছিস মিথি মা,ওর কেমন হিংসে হচ্ছে!!
তারপর তারা একযোগে হেসে উঠল।বাড়িটাতে যেন প্রাণ ফিরে এলো।তারপর সায়মা আহমেদ আর সাদি ফ্রেস হয়ে খেতে বসে। একজন মেইড জানায় আজ সব রান্না মিথি করেছে।সায়মা আহমেদ মিথির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন–এতো কষ্ট কেন করতে গেলি মা??
মিথি–আরে কোনো কষ্ট না ফুপি।।রান্না করতে আমার বেশ লাগে।সবাই বেশ সুন্দর করে খেতে লাগলেও মিথি কিছুতেই খেতে পারছে না কারণ তার প্রচুর অস্বস্তি হচ্ছে। অস্বস্তির মূল কারণ হলো সাদি।সাদি তার বা হাত দিয়ে মিথির কোমড় শক্ত করে ধরে রেখেছে মাঝেমধ্যে শুরশুরি ও দিচ্ছে। বহু অস্বস্তির মাঝে তার খাওয়া শেষ হলো।তারপর মিথি সায়মা আহমেদের সাথে তার রুমে গেল।সায়মা আহমেদকে শুইয়ে দিয়ে বললো–তুমি ঘুমাও ফুপি,,কাল আমরা গল্প করবো।।সায়মা আহমেদ মিথির কথাতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে চোখ বুজলেন।মিথি ঘরের আলো নিভিয়ে, দরজা চাপিয়ে দিয়ে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে যেতে লাগল।নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগাতেই কেউ একজন তাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মিথি এই ছোঁয়ার সাথে এখন বেশ পরিচিত আর অভ্যস্ত।
মিথি কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মিথির কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদি।তারপর বলে–কি যেন লিখেছিলি চিরকুটে??
মিথি করুণ চোখে তাকিয়ে বলে–তা এখনো মনে রেখেছেন!!আমিতো মজা করেছিলাম।
সাদি–কেন??তোর সাথে আমার মজার সম্পর্ক??
মিথি–এমনিই মানে–
সাদি–ওসব মানেটানে বুঝি না।দোষ করেছিস যখন শাস্তি ও পাবি।
মিথি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে -কি শাস্তি??
সাদি–তেমন কিছু না। আমাকে ঠোঁটে কিস করবি তুই এখনি।
মিথি কাচুমাচু মুখ করে বলে–প্লিজ সাদি ভাই, এই কাজ আমি করতে পারবো না।।
সাদি–ওকে,তাহলে আমার ওয়ে তে আমি তোকে শাস্তি দেই।
মিথি–কি শাস্তি???
সাদি মিথিকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে মিথির মুখটা ২ হাতের মধ্যে নিয়ে গালের ২ পাশে চুমু দেয়,তারপর ঠোঁটের নিচে।মিথি তো চোখ বন্ধ করে আছে।এরপর সাদি মিথি নাকে কামড় বসিয়ে দেয়।মিথি চোখ খুলে সাদিকে সরিয়ে দিতে চায় কিন্তুু তা আর পারে না কারণ ততক্ষণে সাদি মিথির গলাতে মুখ ডুবিয়ে দেয়। একপর্যায়ে সাদি মিথির কাঁধের দিকটায় কয়েকটা কামড় দেয়।মিথির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর সাদি মিথিকে ছেড়ে দিয়ে দেখে মিথির চোখে পানি।সাদি–খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছিস মিথিপাখি??
মিথি চোখের পানি মুছে বলে–ধুর!! একদমই না।
সাদি মিথির কপালে চুমু দিয়ে বলে–ওকে,,তাহলে ঘুমিয়ে পড়।
সাদি চলে যাওয়ার পর মিথি ঘুমিয়ে পড়ে।পরদিন সাদি সবাই ওঠার আহেই বেরিয়ে যায়।কারণ আজ তিশার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করতে হবে।
মিথি সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের গলার অবস্থা দেখে চোখ বড়বড় করে ফেলে।তারপর বলে–হায় খোদা!!!একি অবস্থা!! আমি এখন বাইরে যাবো কেমনে??
মিথি কোনোরকমে ফ্রেস হয়ে ভালোভাবে ওড়না দিয়ে গলা ঢেকে তারপর নিচে নামল।কিন্তুু খেতে বসে মিথির অস্বস্তি আর ওড়না টানাটানি তে গলার দাগ ঠিক সায়মা আহমেদ এর চোখে পড়ল।দাগ দেখে সায়মা আহমেদ ঠিক বুঝতে পারলেন।মনে মনে সাদিকে বললেন–বাঁদর,বদমাশ ছেলে,আজ আয় বাড়িতে তারপর তোকে দেখছি।।
নিরব পরিবেশ বজায় রেখে সায়মা আহমেদ আর মিথি খাবার খেয়ে নিলেন।
অপরদিকে,,
সাদির ঠিক সামনেই তিশা কাচুমাচু করে বসে আছে।সাদির গগনবিদারী ধমকানো তে তিশা কেঁপে উঠে বলতে লাগল তার আর ইশানের পরিচয় থেকে তাদের বিয়ের সকল ঘটনা।
সাদি –ইভান কে তিশা??
তিশা ছলছল চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে বলে–আমার আর ইশানের ছেলে।এই ৪ মাস ওকে দেখিনা। যখন যখন ইশানের কথা মতো কাজ করি তখনই ছেলেকে দেখতে দেয়।
তারপর তিশা কেঁদে ওঠে।
সাদিও অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে যে মানুষ কতটা অমানবিক হলে বাচ্চার থেকে মাকে আলাদা করে দেয়।
তারপর হাতের ইশারায় রুহিকে বলে তিশাকে কাস্টাডিতে নিতে।তিশা বারবার একটা কথা বলতে থাকে–প্লিজ সাদি,আমাকে আমার ছেলের সাথে দেখা করানোর ব্যবস্হা করো।
সাদি রিদান কে ডেকে বলে–ইভানকে খুঁজে বার করতে হবে আমাদের।না জানি ইশান বাচ্চাটার সাথে কি করছে??
রিদান- ওকে স্যার।
রিদান যেতেই সাদির ফোন বেজে উঠে, সাদি ফোন বার করে দেখে তার মায়ের ফোন।সাদি ফোন রিসিভ করে বলে–হুমম মা বলো।
সায়মা আহমেদ –তুই বাড়ি ফিরবি কখন?
সাদি–বিকালের পরই মা।
সায়মা আহমেদ –ওকে,,দ্রুত ফিরবি।
সাদি–ওকে মা।
মিথি সারাদিনে খুব একটা দরকার ছাড়া ঘর থেকে আর বোরোয় না।সায়মা আহমেদ বুঝতে পেরে মিথিকে আর অস্বস্তিতে পড়তে দেন নি।সন্ধ্যাতে সাদি বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে মিথির রুমে উঁকি দিয়ে দেখে মিথি ঘুম।তাই নিজের রুমে বসে গেমস খেলতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সাদির গেমস খেলার মধ্যেই কেউ একজন কুশন বালিশ নিয়ে সাদিকে মারতে শুরু করে।সাদি ফোন ফেলে তাড়াতাড়ি নিজেকে বাঁচাতে সায়মা আহমেদ হাতসহ আঁকড়ে ধরে জড়িয়ে ধরলেন।তারপর জিজ্ঞেস করল–কি হয়েছে মা??এমন ভালো ছেলেকে মারছ কেন??
সায়মা আহমেদ রাগ নিয়ে বললেন–মারবো নাতো কি করব তোকে!!খুব পাজি হয়েছিস তুই।
সাদি কপাল কুঁচকে বলে–কেন!!আমি আবার কি করলাম??
সায়মা আহমেদ –কি করেছিস মানে??মেয়েটার গলায় ওমন রাক্ষসের মতো কামড়েছিস কেন?
সাদি একটু হেসে বলে–কি মা গো তুমি!!!ছেলে তার বৌকে কামড়েছে তার কৈফিয়ত চাইতে এসেছো।
সায়মা আহমেদ –হ্যাঁ তাই।বল দ্রুত।
সাদি–ওই একটু চেক করছিলাম।তোমার বৌমা আর সফট কেকের মধ্যে পার্থক্য কি!!!
সায়মা আহমেদ হেসে দিয়ে বললেন–বাঁদর কোথাকার।ঐ যে দুধ আছে গ্লাসে ওর মধ্যে ব্যাথার ওষুধ মিক্স করে দিয়েছি ওটা মিথিকে খাইয়ে দিয়ে আয়।
সাদি–ওকে মা।কি ভালো শাশুড়ি গো তুমি!!!
সায়মা আহমেদ –হুমম!!আমি জানি আমি অনেক ভালো।
তারপর ২ জনেই হাসতে লাগে।
তারপর সাদি গিয়ে মিথিকে ঘুম থেকে তুলে দুধ খাইয়ে দেয়।দুধ খাবার পরই মিথির কেমন বমি বমি আসতে থাকে।।সাদি–শুধু চুমুতেই তোর বমি পাচ্ছে?? আমিতো এখনো কিছু করলামই না।।
মিথি বুঝতে পেরে বলে–উফফ!! সাদি ভাই আপনি সবসময় লাগাম ছাড়া কথা বলেন।
সাদি মিথির ফেস দেখে হাসতে থাকে।মিথি একটু ফ্রেস হয়ে তারপর সায়মা আহমেদ এর কাছে যায়।
সায়মা আহমেদ –আয় মিথি মা।
মিথি–কি করছ ফুপি??
সায়মা–তেমন কিছু না রে মা।সাদির ছোট বেলার জামা গুলো দেখছিলাম।
মিথি–ওমা,কি দারুণ জামা।।
সায়মা–এগুলো ভেবেছি সাদির বাচ্চার জন্য রাখব।ওরা দেখবে ওদের বাবার জামা।
মিথি–হুমম!!তা বেশ ভেবেছো।
সায়মা আহমেদ জামাগুলো ছুঁয়ে দেখছেন।
মিথি–আচ্ছা, ফুপি শোনো আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই!!
সায়মা–হুমম বলল।।।
মিথি–ধরো,কেউ একজনকে তুমি অনেক ভয় পেতে তারপর সে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোমার কাছে আসতে লাগল কিন্তুু তুমি চাইলেও তাকে বাঁধা দিতে পারোনা।তবে এটা এই কারণে নয় যে তুমি তাকে ভয় পাও। একটা অন্য রকম অনুভূতি। এটা কেন হয় ফুপি??
সায়মা আহমেদ বুঝতে পারলেন যে মিথি সাদির ব্যাপারে নিজের অনুভূতি কনফার্ম করতে চাইছে।
সায়মা আহমেদ মিথির হাতে হাত রেখে বললেন–এই অনাকাঙ্ক্ষিত অনুভূতির নাম হলো ভালোবাসা।।
মিথি অবাক চোখে তাকিয়ে বলে–ভালোবাসা!!!
ভালোবাসালে কি করা উচিত ফুপি??
সায়মা–ভালোবাসার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভালোবাসার কথা বলা উচিত।
মিথি কিছু ভাবতে ভাবতে সায়মা আহমেদ এর ঘর ত্যাগ করেন।।সায়মা আহমেদ হাসতে হাসতে বলেন–পাগলী!!!
মিথি নিজের ঘরে গিয়ে ভাবতে থাকে তার মানে আমি সাদি ভাইকে ভালোবাসি।। সাদি ভাইকে কি বলবো যে আমি তাকে ভালোবাসি!!!সে কি মানবে??আমি তো কোনো দিক দিয়েই তার সমতুল্য নই!!তাহলে!!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here