অভিমানে তুমি,পর্বঃ২
ফারিয়া আফরিন ঐশী
সাদি ভাই বাড়িতে আসা মাত্রই ফুপি উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন –কোথায় ছিলে সাদি?
তার সোজাসাপটা উত্তর –তিশা কে খুঁজতেছিলাম।।
ফুপি রেগে চিল্লিয়ে উঠে বললেন–তুমি বুঝতে পারো না আমার কথা নাকি তোমার কমনসেন্স কাজ করছে না?তোমাকে কাল হাজার বার বললাম যে তিশা পালিয়েছে আর—
বাকিটুকু বলার আগেই সাদি ভাই চিল্লিয়ে বললেন-হতেই পারে না।।তিশাকে ওই অপয়া মেয়েটা সরিয়ে দিয়েছে,ওর লোভ ছিলো শহুরে বাড়িতে বিয়ে করে আসার তাই।আমি সব জানি।বউ তো হয়ে এসেছে এবার ও হাড়ে হাড়ে টের পাবে।ওর জীবন নরক করে তুলব।কাল মেরেছি আজ আবার মারব।
বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে ফুপি সজোরে এক থাপ্পর মারে সাদি ভাইয়ের গালে।যে ফুপি ফুপার মারা যাওয়ার পর নিজ হাতে সবকিছু সামলেছেন কিন্তুু কখনো সাদি ভাইয়ের গায়ে আঁচর লাগতে দেননি,তিনি আজ সাদি ভাইকে থাপ্পর মারলেন।(সাদি ভাইয়ের বাবা মানে ফুপা বছর ২ আগে মারা যান,ফুপার নিজস্ব ব্যবসা আছে ওটাই সাদি ভাই আর ফুপি মিলে দেখাশোনা করেন)সাদি ভাই যেন অবাক চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।ফুপি বললেন–জানোয়ার,মানুষ করেছি আমি,ঘেন্না হচ্ছে তোকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিতে।ছি!!তুই কাপুরুষের মতো মেয়েমানুষের গায়ে হাত তুলেছিস।ছি!!বলেই ফুপি নিজের ঘরে চলে গেলেন।আমি ড্রইংরুমে দাঁড়িয়ে রইলাম,সাদি ভাই ও অশ্রুভেজা রক্তাক্ত চক্ষু আমার ওপর নিক্ষেপ করে প্রস্হান করলেন।বুঝতে পারলাম না আমার ওপর রাগ দেখানোর কারণ। আমি দ্রুত ফুপির রুমে গেলাম।দেখলাম ফুপি কাঁদছেন।আমি যেতেই আমার সামনে হাতজোড় করে বললেন –ক্ষমা কর, মিথি মা আমায়।
নিজের ছেলেকে বাঁচাতে আমি তোর জীবন নষ্ট করলাম।
আমি ফুপির হাত ধরে বললাম-বাদ দাও ফুপি।আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো সব ভালোই হবে।
আচ্ছা ফুপি তিশাপুর ব্যাপারটা আমাকে একটু ক্লিয়ার করবে?কাল ওতো ঝামেলাতে পুরোটা বুঝলাম না।
তারপর ফুপি বলল-শোন তাহলে,তিশার সাথে সাদির পরিচয় হয় সাদি বিদেশ থেকে আসার পর।সাদির পছন্দ বলে আমিও মানা করতে পারিনি।তবে তিশার ব্যাপারে খোঁজ নিতে আমার পারসোনাল এ্যাসিসটেন্ট রিদান কে লাগিয়ে দেই।ওদিকে সাদি বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াতে আমি ওদের নিয়ে বাড়িতে যাই।বিয়ের ঠিক আগের দিন রাতে রিদান আমায় জানায় যে তিশার আগে ইতালিতে ১ বার বিয়ে হয়েছিলো।
১ম স্বামীকে সে নিজে হাতে খুন করে ইতালি হতে পালিয়ে আসে।২য় বিয়ে হয় ইন্ডিয়া তে ওখানে তার একটা বাচ্চা ও আছে।২য় স্বামী হলো তার কলেজ জীবনের প্রেমিক।তাদের দলে ১৫ জন লোক আছে এদের কাজ হলো তিশাকে বিভিন্ন জায়গায় বিয়ে দিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া, কেউ দিতে অস্বীকার করলে তাদের মেরে ফেলতেও ২ বার তারা ভাবে না।অনেকে তিশার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে। বিষয়টা জানার পর আমি সাদিকে বলার বহু চেষ্টা করি কিন্তুু সাদি কস্ট পাবে আবার বিয়েটা ভাঙলে আমাদের সম্মানের ব্যাপার ভেবে তোকে বলি সাদিকে বিয়ে করতে।আর তিশার কিছু প্রমাণ আমার ফোনে রিদান পাঠিয়েছিল তা দিয়ে ভয় দেখিয়ে ওকে আসর ছেড়ে পালাতে বলি।রিদানের প্লান ছিলো তিশা গ্রামের চৌরাস্তা ওবধি আসার পর ওকে ধরবে ও পুলিশের কাছে দিবে কিন্তুু চৌরাস্তা ওবধি তিশা আসার পর হঠ্যাৎ একটা কালো গাড়িতে তিশাকে নিয়ে যায়।রিদান অনেক চেষ্টা করেও ওদের ধরতে পারিনি।তবে খোঁজ চলছে,, আশা করি অনেক দ্রুত পেয়ে যাবো।আর আজব ব্যাপার কি জানিস!!!আমার সেই প্রমাণ রাখা ফোন টা বিয়ের ঝামেলাতে কোথায় যেন গায়েব হয়ে গিয়েছে।। ওটা থাকলে সাদিকে দেখানো যেতো।।
আমি ভাবতে লাগলাম একটা মেয়ে এতটা খারাপ।।
ফুপির ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।। ফুপি বলল–আমি ভাবছি সাদিকে বিষয়টা জানাবো।তুই কি বলিস?
আমি উত্তরে বললাম-তুমি,আমি বললে আর কি সে বিশ্বাস করবে ফুপি? ভাববে তিশার নামে দোষ দিচ্ছি।
ফুপি বলল–তুই ঠিক বলেছিস।।প্রমাণ ও নেই ওকে বিশ্বাস করানোর মতো।।।
আমি উত্তর এ বললাম–হুমম।
সময় দেখে ফুপি বলল–চল খেয়ে আসি।
সারাদিনে ফুপির সাথেই ছিলাম।সাদি একবারও ঘর থেকে বের হয় নি।।সারাদিনে ঘোরাঘুরি করলেও এটা বুঝলাম যে ব্যথাতে জ্বর আসছে।রাতে খাওয়ার পর ফুপি পেইনকিলার আর নাপা খেতে দিলেন।ফুপি কে এরমাঝে জানালাম আমি পড়াশোনা করতে চাই।
ফুপি জানালেন আমাকে আবার পড়াশোনা করাবেন।কালই খোঁজ নিবেন ভার্সিটি সম্পর্কে।। আমি বেশ খুশিই হলাম।মাঝে অনেকটা গ্যাপ আছে তাও আমি পড়তে চাই।বেশ বেশ খুশি খুশি মনে ঘরের সামনে আসতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল এটা ভেবে না জানি সাদি ভাই আবার কি করে!!!আল্লাহর নাম করে ঘরের দরজা খুলে দেখি পুরো ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। আলো জ্বালাতেই দেখি একগাদা সিগারেটের টুকরা মেঝেতে পড়ে আছে।বুঝলাম তিনিই ফুঁকেছেন এগুলো।মনে মনে ভাবতে লাগলাম –এই লোক সিগারেট খায় তার মানে মদ ও খায় তারমানে গাঁজাও খায়।।ছি ছি!!!
ভাবনার মধ্যে বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন সাদি ভাই। তাকে দেখে জীবনে ১ম ছোট খাট ক্রাশ খেলাম।।সে এখন কালো থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর উপরে সাদা শার্ট পরে আছেন।চুল গুলো ভিজা বলে এলোমেলো ভাবে কপালে পড়ে আছে।ভাবনার মাঝে আমার সামনে এসে তুরি বাজালেন সাদি ভাই। আবারও গা জ্বালানো একখানা কথা বললেন–জানি আমি দেখতে বেশি সুন্দর,তাই বলে ঘরের মধ্যে এমন খাম্বার মতো দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবি।।
নজর লেগে যাবে আমার।।
তার কথায় কপাল কুঁচকে মুখ ভেংচি দিলাম।
সাদি ভাই তখন আমায় বললেন ফ্রেস হয়ে আয়।।
তার ভালো ব্যবহারে আমিতো পুরো অবাক।।এই আখরু এতো ভালো কথা বলছে।। ব্যাপার কি!!!ঘাপলা আছে অবশ্যই। ভাবনার মাঝে আবার তিনি ধমকে উঠলেন।।আমি ভয় পেয়ে কাপড় নিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হতে লাগলাম।২ মিনিট অন্তর অন্তর সাদি ভাই নক করছেন।এই লোক এমন একটা ভাব করছে যেন আমাকে না দেখে ১ সেকেন্ড ও থাকতে পারছেন না।।আজব!!!
বের হতেই বললেন–বাথরুমে কি ঘুমিয়ে পড়েছিলি?স্টুপিড।
আমি আমতা আমতা করে বললাম–আমার ফ্রেস হতে একটু সময় বেশি লাগে?
সাদি ভাইয়া –হুমম বুঝেছি।।যা বিছানায় গিয়ে বস।।
আমি বিছানায় বসে আছি আর সাদি ভাই উল্টোদিক ঘুরে কি যেন করছেন।।
কিছুক্ষণ পর এক বক্স ওষুধের মধ্যে হতে একখানা ওষুধ আর পানি দিয়ে বললেন খেয়ে নিতে।।
আমি তো রসগোল্লার মতো চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।হঠ্যাৎ এতো ভালো হয়ে গিয়েছে দেখে।
সাদি ভাইয়া –ওমন পেঁচার মতো চোখ করে কি দেখছিস?
আমি–ভাবছি,,,আপনি আমায় এই ওষুধ খাইয়ে মারার প্লান করছেন না তো?
সাদি ভাইয়া –ওয়াট রাবিশ!!এটা পেইনকিলার।।
মারতে যাবো কেনো তোকে।।
সাদি ভাইয়ার ধমকানিতে বলতে পারলাম নাহ যে আমি আগে একটা পেইনকিলার খেয়েছি।।আবারও খেয়ে নিলাম।।সাদি ভাই এবার আমায় বললেন –তুই ঘুমিয়ে পড়, আমি একটু বের হচ্ছি।
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম–এতো রাতে??
সাদি ভাইয়া –হুমম।। কাজ আছে।।।
আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলাম না কারণ তিনি আলো নিভিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন।আমি কিছুক্ষণ শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম।। তখন সাদি ভাইয়ের কিছুক্ষণ আগের ভালো ব্যবহার আর কেয়ারিং টা মনে পড়ল।।বেশ ভালোই লাগছিলো।।
এসব ভাবনার মাঝখানে কখন যে ঘুমালাম জানিনা।
সকালে চোখ মেলে দেখি ১১ টা বাজে।এতো বেলা ওবধি ঘুমালাম।।ছি!!উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে একজন মেইডকে সাদি ভাই এর কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল তিনি নাকি বাড়িতে ফেরেননি।।
বেশ টেনশন করতে লাগলাম।।ফুপি নিচে এলে তাকে জানালাম।।ফুপি ফোন করে দেখল ফোন বন্ধ।
সারাদিনে সাদি ভাইয়ের কোনো খোঁজ পেলাম না।ফুপির টেনশনে বিপি ফল করেছে।ফুপিকে ওপরে তার ঘরে রেখে আমি ড্রইংরুমে সাদি ভাইয়ের অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠ্যাৎই একটা ফোন এলো ল্যান্ডলাইনে আমি রিসিভ করে যা শুনলাম তার জন্য প্রস্তুুত ছিলাম না।।তাড়াতাড়ি ফোন ফেলে বাইরে দৌড়ে এলাম।চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে লাগল।।
চলবে