অভিমান #পর্বঃ০১,০২

0
1090

#অভিমান
#পর্বঃ০১,০২
#তানিশা সুলতানা
পর্বঃ১ #প্রথম দেখা

রাত দশটা বেজে আট মিনিটে নিজের রুমে নিজের শার্ট আর টাওজার পড়ে গিটার হাতে নিয়ে খাটের ওপর আয়েশ করে একটা মেয়েকে বসে থাকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে মেঘ। মেয়েটা গিটার বাজানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সুর তুলতে পারছে না। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয় তখন বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে। গিটার টাকে ভালো করে দেখে নেয় একবার।
“নষ্ট গিটার টা এভাবে যত্ন করে রেখেছে। ধুররররর
কিছুটা শব্দ করে গিটারটা ফ্লোরে ফেলে দেয় তোহা। মেঘ হাত মুঠ করে নেয়। নিজের থেকেও বেশি যত্ন করে মেঘ এই গিটার টাকে। এই গিটার টা ওর ভীষণ প্রিয়। কখনো কাউকে এই গিটারে হাত দিতে দেয় না মেঘ। শুধু গিটার না
এই বাড়িতে মেঘের রুমে ঢোকা সম্পূর্ণ নিষেধ। রুম পরিষ্কার করার জন্যও কেউ কখনো এই রুমে ঢোকে না। তারওপর আবার এই মেয়ে মেঘেরই শার্ট পরে আছে।
মেঘ শব্দ করে দরজা ধাক্কা দিয়ে গটগট করে রুমে ঢোকে। তোহা হকচকিয়ে যায়। এক লাফে বিছানা থেকে নেমে যায়। এতো রাতে এভাবে কেউ এই রুমে ঢুকবে এটা তোহা কল্পনাও করে নি। তোহা তো ভেবে নিয়েছিলো বিয়ে বাড়ির কোলাহল ঘুমানোর জায়গার অভাব। এই রুমটাতে ও আয়েশ করে একা একা ঘুমবে।

মেঘ পূর্ন দৃষ্টিতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তোহার। শুভ রংয়ের পাতলা শার্ট পরিহিতা তোহাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায় মেঘ। শার্টের বোতাম গুলোও ভালো করে লাগানো না। তোহা বুঝতে পেরে নিজের দিকে এক বার তাকায়। শার্টের খোলা দুটো বোতাম তারাহুরো করে লাগিয়ে নেয়। মেঘকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায় তোহা। বুক টিপটিপ করছে তোহার। লজ্জায় আতস্থ হয়ে গেছে। কোনো দিকে তাকাতে ও কেমন দ্বিধা বোধ হচ্ছে। ফর্সা গাল দুটোয় লাল আভা ফুটে উঠেছে৷ এভাবে একটা ছেলের সামনে লজ্জায় পড়তে হলো? খোপা করা লম্বা খোপা করা চুল গুলো মুক্ত করে দেয়। মুহুর্তেই পিঠ ঢেকে হাঁটু ওবদি গড়িয়ে পড়ে কালো চুলগুলো। কিছু চুল সামনে নিয়ে আসে তোহা।

” হু আর ইউ?
মেঘ চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলে।
তোহা মেঘের প্রশ্নে হকচকিয়ে যায়। সামান্য একটা প্রশ্নেই কাঁপতে থাকে ভয়ে। হাত দিয়ে হাত কচলাতে থাকে। মুহুর্তেই নার্ভাস হয়ে যায়। মনে হচ্ছে কোনো ইন্টারফিউ নেওয়া হচ্ছে।
“কিছু জিজ্ঞেস করছি?
চিৎকার করে নিধির দিকে ঘুরে বলে মেঘ।
” তোহা আমি। ধমক খেয়ে ফট করে কিছুটা জোরে বলে ওঠে তোহা।
মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি নত করে নেয়। ফ্লোরেরএই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে দৃষ্টি ঘোরায়। মনে মনে আরেকটা ধমক খাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
“এখানে কি চাই? এটা কোনো লেডিস পার্লার না। বা হিন্দি সিনেমার হিরোইনদের মতো মডেলিং করা মডেলদের ড্রেস পড়ে শরীরের অর্ধেক অংশ দেখানোর জায়গা এটা না।
মেঘের স্পষ্ট ভাষার কথার লজ্জায় নুয়িয়ে যায় তোহা। ও তো মডেলদের মতো হওয়ার চেষ্টা করছিলো না। জাস্ট বোতাম দুটো খুলে ছিলো। যা গরম পড়েছে। তারওপর এই রুমে কোনো ফ্যান নেই। তাই তো বোতাম খুলে চুল বেঁধে গরম থেকে একটু শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছিলো। কে জানতো এই মুহুর্তেই আবার এখানে এনার এন্ট্রি হবে?
মনে মনেই আওড়ায় কথা গুলো। মুখে বলতে পারে না।
” এটা ভদ্র লোকের বাড়ি আর এটা একটা ভদ্রলোকের রুম। এখানে নোংরামি চলে না।
আঙুল তুলে বলে মেঘ।
তোহা অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলার সাহস ওর নেই।
মেঘ থামে। একটু দম নেয়। মেয়েটাকে চুপ থাকতে দেখে রাগটা বেরে যায়। শুধু হাত কচলাচ্ছে।
ধৈর্যর বাধ ভেঙে যায় মেঘের।
” কোনো শোক সভা পালন করা হচ্ছে না কি এখানে?
মেঘের বাঁকা কথায় মেঘের দিকে এক পলক তাকায় নিধি। কিন্তু কোনো উওর দেয় না।
“আউট
বুকে হাত গুঁজে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে মেঘ।
নিধি খুশি হয়ে মনে মনে ভেবে নেয় এক দৌড় দেবে।
” আমার টাওজার আরও শার্ট পড়ার সাহস পেলে কোথায় তুমি?
মেঘের মতো গর্জে উঠে বলে মেঘ। মেঘের এমন গর্জনে ছিটকে কিছুটা দুরে যায় তোহা। দুই হাতে কান চেপে ধরে। হাত পা রীতিমতো ঠকঠক করে কাঁপছে। এটা মানুষ না কি মেঘের গর্জন?
“অসব্ভ্য অভদ্র মেয়ে। কোথা থেকে আসে এসব ফালতু স্টুপিট।
তোহা কেঁদে ফেলে। টুপটাপ করে গাল বেয়ে পানি গড়াচ্ছে। ফুপিয়ে কাঁদছে।
” আমি খুব ভালো মেয়ে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে তোহা। কান্নার জন্য কথা গুলো থেমে থেমে বলে।
মেঘ কপালে দুটো ভাজ ফেলে তাকায় নিধির দিকে। আবার বলে কি না ভালো মেয়ে।
মেয়েটা হেঁচকি তুলে কান্না দেখে মেঘ আর কিছু বলে না।
“যাও
দরজার দিকে ইশারা করে বলে মেঘ। তোহা দ্রুত চোখের পানি মুছে নেয়। মুহুর্তেই কান্না শেষ।
তোহা দৌড় দিতে গিয়ে ধপাস করে পড়ে যায়। টাওজার ঝুলিতে অনেক বড় হয়েছে। সেটাই বেঁধেই পড়ে যায়।
কোমরে খুব ব্যাথা পায় তোহা। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সয্য করে নেয়।
মেঘ চোখ বন্ধ করে ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ছাড়ে।
” এসব উটকো ঝামেলা আমার ঘাড়ে আসে কোথা থেকে? এই বাড়িটাই আমাকে ছাড়তে হবে।
নিজের মতো করে বকবক করতে করতে হাঁটু ভাজ করে তোহার সামনে বসে। তোহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। এখন নিশ্চয় একটা চর মারবে।

মেঘ তোহার পা ধরে ঠাস করে ফেলে মেঘের সামনে। কিছুটা ব্যাথা পায় তোহা। ফট করে চোখ খুলে নেয়। মেঘ বিরক্ত নিয়ে পায়ের টাওজার গুটিয়ে তোহার পা সমান করে দিচ্ছে।
“আআমি পারবো। চট করে বলে তোহা।
” জাস্ট সাট আপ। তারাতাড়ি বিদেয় করার জন্য করছি। জাস্ট অসয্য লাগছে। আমাকে আবার যেতে হবে। উটকো ঝামেলার জন্য কিছুটা সময় নষ্ট হয়ে গেলো।
দুই পা গোটানো হয়ে গেছে মেঘ তোহার দুই গাল চেপে ধরে। আকস্মিক ঘটনায় চমকে ওঠে তোহা। গালে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে।
“কাল সকালের আগে এগুলো আমার চাই। আর নেক্সট টাইম যদি আমার চোখে সামনে দেখেছি তো খুন করে ফেলবো।
বলে মেঘ কিছুটা ধাক্ক দিয়ে ছেড়ে দেয় তোহকে। ছিটকে কিছুটা দুরে সরে য়ায় তোহা। চোখ দুটো আবার টলমল করে ওঠে। মেঘ গিটারটা তুলে গিটারে হাত বুলিয়ে সুন্দর করে খাটের পাশে রাখে পরম যত্নে । তারপর তোহার দিকে আরেক দরজা তাকিয়ে গটগট করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

মেঘ যেতেই তোহা সোজা হয়ে বসে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়। তারপর নিজের গালে হাত বুলিয়ে নেয়। চোখের পানি টুকু মুছে নেয়।
” এ মানুষ? যাক গে
বাঘ আসার আগেই আমাকে যেতে হবে। শালা জীবনেও বউ পাবি না। অভিশাপ দিলাম।
তোহা উঠে দাঁড়ায়। কোমরের ব্যথায় ঠিকভাবে হাঁটতে পারছে না। খুড়িয়ে খুড়িয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।

সাহারা হোটেলের ২০৭ নাম্বার রুমের সামনে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে মারিয়া। দীর্ঘ পাঁচ মাস চেষ্টা করার পরে মেঘরাজ চৌধুরীর সাথে একটা রাতের বেডপার্টনার হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এর জন্য প্রচুর টাকা আর সময় খরচ করতে হয়েছে মারিয়াকে।
“আমি তো আজকে রাতে জন্য সিলেক্ট হয়েছি। তো আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছো কেনো?
রাগে গজগজ করতে করতে বলে মারিয়া।
” ম্যাম স্যার পারমিশন দিলেই আপনাকে যেতে দেবো।
সোজাসাপ্টা বলে দেয় শুভ।
মারিয়া নিজের দামি ফোনটা শক্ত করে মুঠ করে ধরে। এই বুঝি ফোনটা ভেঙে গুড়িয়ে যাবে। শুভ বেশ কিছুখন যাবৎ উসখুস করছে কিছু বলার জন্য।

“এখানে সাধারণত যেসব মেয়ে আসে তারা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। মনের মধ্যে জড়তা থাকে। স্যারের সামনে যাওয়ার সময় কাঁপতে কাঁপতে যায়। কেউ কেউ তো হাত জোর করে বলে প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। টাকার জন্য আসে তারা৷ কিন্তু আপনিই প্রথম মেয়ে যে অনেক টাকা অফার করে চার পাঁচ মাস আপ্রাণ চেষ্টা করে এখানে আসলেন। কারণটা জানতে পারি ম্যাম। স্যারের বেড পার্টনার হওয়ার এতো কিউসিটি কেনো আপনার?
শুভ সাহস করে প্রশ্ন গুলো করেই ফেলে।
মারিয়া ফিক করে হেসে ফেলে। শুভর গাল টেনে বলে
” সেটা তোমাকে বুঝতে হবে না বাবু। নিজের কাজ করো।
যাচ্ছি আমি।
ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দেয় শুভকে। হাঁটুর ওপরে থাকা ড্রেসটা একটু খানি টেনে নেয়। ব্যাগ থেকে আয়নাটা বের করে একবার নিজেকে দেখে নেয় সবটা ঠিক আছে কি না?
“পারফেক্ট
আয়নায় নিজের প্রতিতছবি দেখে এক গাল হেসে বলে মারিয়া।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

মেঘ খালি গায়ে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ধবধবে সাদা আরামদায়ক বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ দেখছিলো।
দরজা খোলার শব্দে সেদিকে না তাকিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে নেয়।
মারিয়া মেঘের বডি দেখে ঘায়েল হয়ে যায়।
” ইসসস আজকে এই ছেলেটা আমার।
মিষ্টি করে হাসে মারিয়া।
” লাইট অফ করে দিয়ে চলেন আসুন।
চোখ বন্ধ রেখেই বলে মেঘ।
ধপ করে মাথা গরম হয়ে যায় মারিয়ার। পাক্কা তিনঘন্টা যাবৎ সাজুগুজু করে এসেছে। এতো অকষ্মনীয় একটা ড্রেস পড়েছে। কিন্তু মেঘ দেখলোই না। অন্য ছেলে হলে এতোখনে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে থাকতো মারিয়ার দিকে।
মেঘ চোখ বন্ধ রেখেই হাত দিয়ে ফোন খুঁজে। পেয়েও যায়। চোখ বন্ধ রেখেই কল করে শুভকে। শুভ ফোন রিসিভ করেই সরি বলে নেয় মারিয়া এভাবে ঢুকে যাওয়ার জন্য।
“আজ একটা মেয়ে কেনো?
মেঘ প্রশ্ন করে।
শুভ উওর দেওয়ার আগেই মারিয়া কিছুটা দৌড়ে এসে বলে
” আজকের জন্য আমি একাই। শুধু আজকের কেনো এখন থেকে
মারিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই

#অভিমান
#পর্বঃ২
#তানিশা সুলতানা

“এখনই আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। আমার বিয়ে হবে যাবে। অন্য কারো হয়ে যাবো আমি। আমাদের প্রবিএ সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে।
তোহার দুই বাহু ধরে উঁচু করে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে আকাশ।
” ভালো তো। নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা।
তোহা ঠোঁটের কোনে এক চিলতে মিষ্টি নিয়ে আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
আকাশ তেতে ওঠে। রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে। ফুসফুস করছে। আরও একটু কাছে নিয়ে আসে তোহাকে। তোহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। দুই হাত দিয়ে আকাশের হাত দুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
“খুব স্মার্ট হয়ে গেছিস তুই তাই না? খুব স্মার্ট হয়ে গেছিস? দয়া করছিস আমাদের? তুই ভালোবাসিস আমাকে। আমরা এক সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম তোহা। কি করে বলছিস তুই?
চোখে পানি টলমল করছে আকাশের।
তোহা নিজের সব টুকু শক্তি দিয়ে আকাশকে ধাক্কা দেয়। বেশ খানিকটা দুরে সিটকে যায় আকাশ। হতদম্ভ হয়ে যায়। মুহুর্তেই রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে যায় আকাশের।
তোহা বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে তোহা। চোখের কার্নিশে জমে থাকা পানিটুকু এদিক সেদিক তাকিয়ে গড়িয়ে পড়া থেকে আটকায়।
“এতো রাতে বিয়ের সেরোয়ানি পড়ে এখানে এসেছেন কেনো? বউ তো অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। কেউ দেখলে আমার বদনাম হবে।
উপহাস করে বলে তোহা।
আকাশ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।
” বাহহহ কাল পর্যন্ত তুমি ছিলাম। জান বাবু কলিজা কত-শত আদরের নাম ছিলো আমার। আর আজ আপনি। এতোশত আদরের নাম ভুলে কিভাবে আপনি বলছিস রে তুই? গিরগিটির মতো কি করে বদলালি তুই?
তোহার এক হাত ধরে বলে আকাশ। তোহা ঝাড়ি মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
“কথায় কথায় শরীরে হাত দেওয়া আমার পছন্দ না। আমাকে বিরক্ত কেনো করছেন? বিয়ে করতে যাচ্ছেন যান না। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি
কিছুটা চেঁচিয়ে বলে তোহা। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আকাশ।
” কোনোদিনও সুখী হতে পারবি না তুই। কোনোদিনও ভালো থাকতে পারবি না। অভিশাপ দিচ্ছি না আমি তোকে কিন্তু রিভেঞ্জ অফ নেচার বলেও তো একটা কথা আছে। আমাকে যতটা কাঁদালি না ততোটা তুই ও কাঁদবি।
আকাশ চোখের কোনের পানিটুকু মুছে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়।

ধপ করে বসে পড়ে তোহা। হাঁটু জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো কান্না।
“সত্যিই আমি কখনোই ভালো থাকতে পারবো না। সুখী হতে পারবো না আমি। ভালোবাসি আপনাকে। খুব ভালোবাসি। এর থেকেও বেশি খারাপ থাকবো আমি? আরও কষ্ট পাবো?
হেঁচকি তুলে কান্না করতে করতে বলতে থাকে তোহা। আই হেট মাই লাইফ। হেট মাই লাইফ।
” কি হবে সেই ভালো দিয়ে যে ভালোতে ভালোবাসাই থাকবে না”
এটা কেউ বুঝলো না।
কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ে।

” এবার আপনি বেড়িয়ে যান।
মারিয়াকে ছেড়ে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে বলে মেঘ।
মারিয়া এতোখন মিটমিট করে হাস ছিলো। নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মারিয়া ভেবেছিলো মারিয়াকে কাছে টেনে নেওয়া পরে মেঘ মারিয়াতে আসক্ত হয়ে পড়বে।
কিন্তু এখন মেঘের কথা শুনে ভ্রু কুচকে ফেলে।
“এখন এতো রাতে কি করে যাবো?
জামা পড়তে পড়তে বলে মারিয়া।
” আই ডোন্ট নো। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমের বাইরে দেখতে চাই। নাহলে
মেঘ কথা শেষ করার আগেই মারিয়া বলে ওঠে
“নাহলে কি? দেখুন আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না। এখানেই থাকবো
মারিয়া কথা শেষ করতেই মেঘ মারিয়ার গলা টিপে ধরে। এখনে চোখ বন্ধ মেঘের।
মারিয়ার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। দুই হাত দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে মেঘকে ছাড়ানোর।
” যেতে বলেছি।
দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে বলে মেঘ।
ছেড়ে দেয় মারিয়াকে। আবার সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে।
মারিয়া গলায় হাত দিয়ে কাশতে থাকে। চোখে মুখে রক্ত উঠে গেছে।
“মানুষ আপনি?
কাশতে কাঁশতে বলে মারিয়া।
” একজেক্সলি
আমি মানুষ নই। আমার কাছে সব মেয়েরাই এক। আপনাকে দেখে বা আপনার সাথে সময় কাটিয়ে আমি আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বো?
সিরিয়াসলি?
বোরিং চিন্তা ভাবনা আপনার।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে মেঘ।
“এনিওয়ে Only 2 মিনিটস আছে আর। তারপর যতটুকু নিশ্বাস আছে সে টুকু আর থাকবে না।
মারিয়া ব্যাগটা নিয়ে তারাহুরো করে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়।
মেঘ বাঁকা হাসে।

বেশ সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় তোহার। মনিং ওয়ার্ক করতে বেশ ভালো লাগে তোহার। সকাল সকাল রাস্তায় একটা কাক পানিও থাকে না। শিশিরে ভিজে থাকে পথ ঘাট।
চুল গুলো হাত খোপা করে হিজাব পেঁচিয়ে নেয়। মুখে একটু স্নো নিয়ে জুতো পড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। আজ একটু বেলা করে ফিরবে। এখানে একটুও ভালো লাগছে না তোহার। কবে বাড়ি ফিরতে পারবে সেদিনই শান্তি।

রুম থেকে বেরিয়েই দেখতে পায় আকাশ ডায়িং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে আছে তোহার রুমের দিকে তাকিয়ে।
তোহার আর বুঝতে বাকি নেই আকাশ ফুলসজ্জার ঘরে যায়ই নি।
বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তোহা।
পা টিপে টিপে বেড়িয়ে যায়। আকাশ জেগে গেলে হাজারটা কথা বলবে। যে গুলো শুনতে আর ভালো লাগছে না তোহার।

ফোন টিপতে টিপতে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাঁটছে তোহা। হঠাৎ কিছু একটার সাথে বেঁধে ধরাম করে পড়ে যায়। আবার কোমরে ব্যাথা পায়।
” চোখ কি পকেটে রেখে ঘুরিস না কি রে? কানা কোথাকার। না কি মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে
চোখ মুখ কুঁচকে সামনে তাকাতেই তোহা চুপসে যায়। হা করে কিছু বলতে গেছিলো হা টা হা হয়েই থাকে।
মেঘ বুকে হাত গুঁজে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে তোহার দিকে।
“প্রতিবন্ধী তুমি? হুম?
মেঘের গম্ভীর মুখের এমন কথা রেগে যায়। কিন্তু রাগটা প্রকাশ করার জন্য তো কথা বলতে হবে। তোহার মুখ থেকে কথা বের হবে না। উঠে দাঁড়ায়। ফোনের গ্লাস ফেটে গেছে।
সামনের মাসেই চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে বাবা ফোনটা কিনে দিয়েছিলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে অঝড়ে কেঁদে ফেলে তোহা।
মেঘ কপালে চারটা ভাজ ফেলে তাকায় তোহার দিকে। তোহা কেঁদেই যাচ্ছে।
” ডিসগ্রাসটিং
জোরে শ্বাস নিয়ে বলে মেঘ।
তোহাকে পাশ কাটিয়ে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে চলে যায় মেঘ।
তোহা মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁ কায়।
“আমার ফোনটা। এ্যাঁ এ্যাঁ
শালা কোনোদিন বউ পানি না তুই। সারাজীবন চিরকুমার হয়ে থাকবি।
ফুসতে ফুসতে বলে তোহা।
” সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। বউ মাই ফুট
মেঘ তোহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে।
ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে তোহা। কিছুটা দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। দরদর করে ঘামতে থাকে। মেঘ সব শুনে ফেললো। এবার নিশ্চয় মারবে।
“তোমার ফোন ভেঙে গেছে। এখানে পঞ্চাশ আছে। নতুন কিনে নিও।
মেঘরাজ কখনো কারো কাছে ঋণী থাকে না।
তোহার হাত টেনে টাকা গুলো দিয়ে বড়বড় পা ফেলে চলে যায় মেঘ। হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে তোহা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here