অভিমান #পর্বঃ১১,১২

0
532

#অভিমান
#পর্বঃ১১,১২
#তানিশা সুলতানা
১১

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে। মাথার ওপরে থাকা সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢেলে পড়েছে। মৃদু বাতাস বইছে। সেই বাতাসের সাথে তোহার চুল গুলো উড়ছে। চুল গুলো খোপা করতে মনে নেই তোহার। লম্বা চুলগুলো গাড়ির ছিট ছাড়িয়ে নিচে পড়ে গেছে। কিছু চুল বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ে এসে মেঘের মুখে পড়ছে। ডাভ শেম্পুর ঘ্রাণ আর চুলের একটা ঘ্রাণ দুটো মিলিয়ে পাগল করে দিচ্ছে মেঘকে। চোখ বন্ধ করে স্মেল নিতে থাকে মেঘ। কিন্তু ডাইভে নজর দিতে হবে চুলে মাতাল হলে নির্ঘাত এক্সিডেন্ট করবে। তাই হালকা কেশে চোখ এদিক সেদিক ফেরায় তোহা।
“তোমার চুল গুলো বাঁধো।
তোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে মেঘ।
তোহা তো এক মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘের কথা তোহার কানে পৌছায় না।
” ওই হেলো
চুল বাঁধো
তোহার চুল ধরে হালকা টান দিয়ে বলে মেঘ। তোহা নরেচরে ওঠে।
সাইড ব্যাগ থেকে ক্লিপ বের করে চুল আটকে নেয়।

মেঘের রাজ প্রাসাদে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধা হয়ে যায়।
মেঘ তারাহুরো করে গাড়ি থেকে মেনে তোহার দরজা খুলে দেয়। তোহা তখনও নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে আছে অনমনষ্ক হয়ে।
“নামো
মেঘ তোহার দিকে ঝুঁকে বলে।
তোহা চমকে তাকায় মেঘের দিকে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। খিঁচে চোখ মুখ বন্ধ করে নেয়। মেঘের নিশ্বাস তোহার মুখে পড়ছে।
মেঘ এক পলক তাকায় তোহার খিঁচে থাকা মুখ টার দিকে। কেমন শুকিয়ে গেছে। ভয়ে ঠোঁট কাপছে। মেঘ মৃদু হাসে। তোহার সিট বেল খুলে তোহার মুখে ফু দিয়ে দুরে সরে আসে। তোহা ওড়না মুঠো করে ধরে। বুক টিপটিপ করছে।
” ওই হ্যালো এখানেই কি রাত কাটানোর ইচ্ছে আছে না কি?
মেঘ হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলে।
তোহা চোখ খুলে। মেঘকে এতো দুরে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এদিক সেদিক তাকিয়ে নেমে পড়ে।
“ছি ছি কি সব বাজে চিন্তা করলে তুমি।
মেঘ দুষ্টুমি করে বলে।
তোহা মুখ বাঁকিয়ে হাঁটতে শুরু করে। মেঘ লাগেজ টানতে টানতে মিষ্টি মিষ্টি হেসে তোহার পেছন পেছন আসে। হাত দিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়।

বিশাল বড় বাড়ি। চার তালা। বাহির থেকেই দেখতে অপূর্ব বাড়িটা। না জানি ভেতরটা কতো সুন্দর।
বাড়ির সামনে গোলাপ ফুলের বাগান। সাদা, কালো গোলাপী সব ধরনের গোলাপি আছে।
” এটা হলো আমার বাড়ি। নিজের টাকায় বানিয়েছি। এটা আমার প্রসাদ। তুমি এখানকার রানী।
মেঘ তোহার থেকো দু পা এগিয়ে গিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বলে মেঘ।
তোহা কিছু বলে না। হেঁটে হেঁটে ভেতরের দিকে যায় তোহা। মেঘও পেছন পেছন যায়।

বাড়ির ভেতরটা বাইরের থেকেও সুন্দর। পুরো বাড়িটা সাদা। সাদা সোফা সাদা ফ্লোর। দেয়াল টাও সাদা।
ওরা ভেতরে ঢুকতেই একটা মধ্য বয়ষ্ক পুরুষ দৌড়ে এগিয়ে এসে।
“মেঘ বাবা এসেছো? কিছু লাগবে? কফি খাবে? বা অন্য কিছু?
তারাহুরো করে বলে লোকটা।
” হুম। নুডলস রান্না করে নিয়ে এসো।
লোকটা মাথা নারিয়ে চলে যেতে নেয়। আবার থেমে যায়। তোহার দিকে তাকায়। মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে আর প্রশ্ন করা হয় না এটা কে?
চুপচাপ মাথা নিচু করে চলে যায়।
তোহা বেশ বুঝতে পারলো লোকটা জমের মতে ভয় মেঘকে।
“ভুতের রাজা মনে হয় উনি। তাতে সবাই ভয় পায়।

“চলো
মেঘ তোহাকে বলে রুমের দিকে যায়। তোহা পেছন পেছন যায়।
রুমটা খুব একটা বড় না। তবে বেশ গোছালো আর সুন্দর। দামি দামি আসবাবপত্র রুমে।
“এটা আজ থেকে তোমার আর আমার রুম।
মিষ্টি হেসে বলে মেঘ।
তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। লোকটার হাসিতে গা জ্বলে যাচ্ছে তোহার।
মুখ বাঁকিয়ে খাটের দিকে চলে যায়। বেশ ক্লান্ত লাগছে। ড্রেস চেঞ্জ না করেই বিছানায় বসে পড়ে তোহা। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে বাড়িতে কল করার জন্য।
” শোনো তোমার ফোনটা আমাকে দিয়ে দিবা। আমি ফোন দেবো সেটা ইউজ করবা। ক্লিয়ার।
মেঘ আঙুল তুলে তোহার সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
ফোন করে নিশ্বাস ছাড়ে তোহা। হাতের ফোনটা মেঘের সামনে ঠাস করে ফেলে দেয়।
“শোনো তোহা আজ থেকে তোমার ড্রেস গুলো তুমি পড়বা না। আমার শার্ট প্যান্ট পড়বে। আগে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খেতে এখন খাবে না। আমি চিবিয়ে দেবো তুমি গিলবার। আজ থেকে তোমার পা দিয়ে হাঁটবে না। আমার পা দিয়ে হাঁটবে। আজ থেকে
তোহা এক নাগারে বলতে থাকে।
মাঝখানে মেঘ বলে ওঠে
” থাক থাক
বুঝতে পেরেছি। এসব করতে ইচ্ছে করছে তোমার। নো পবলেম আমার তাতে কোনো পবলেম নেই। আমি চিবিয়ে দিতে পারবো। আমার পা দিয়ে হাঁটতে পারো। রইলো বাকি ড্রেস। সেটা নাহয় শুধু আমার শার্ট গুলো পইড়ো তাতেও হবে। হিন্দি ফ্লিমের নায়িকা। তোমার দেখতে জাস্ট হট লাগবে।
দুষ্টু হেসে কথা গুলো বলতে বলতে তোহার পাশে বসপ পড়ে মেঘ। শেষের কথাটা তোহাকে ধাক্কা দিয়ে বলে।
তোহা তাজ্জব বনে যায়। এই লোকটা তো সাংঘাতিক খারাপ। ঠোঁট কাটা। ছি ছি কি সব কথা বললো।
লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে নেয় তোহা। শুকনো ঢোক গিলে। কথা বলাই উচিৎ হয় নি ওর। তোহা তো ভুলেই গেছিলো ও একটা হনু মানের সামনে বসে আছে।
“লজ্জা পাওয়ার কি হলো? এখনো তো শার্ট পড়লেই না। আমার কিন্তু লজ্জা পাওয়াটা ভালো লাগে না।
মেঘ হালকা শক্ত গলায় বলে।
তোহা কটমট চোখে তাকায় মেঘের দিকে।
” হনুমান
বিরবির করে বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। মেঘ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। যাক তবুও তো আজ তোহা কথা বললো।

রাত দশটা বাজে। তোহার ভীষণ খিদে পেয়েছে। ভুতুড়ে বাড়ি মনে হয় তোহার এই বাড়িটাকে। লোকজন নেই। শুধু তোহা মঘ আর ওই লোকটা। এখানে থাকবে কি করে তোহা?
এই তো এখন কিছু খাওয়ার জন্য বাইরে বের হতে চাইছে কিন্তু পারছে না ভয়ে। কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। মেঘও তেই তখন বেরিয়ে গেছে এখনো আসলো না। জানতেও চাইলো না কিছু খাবে কি না। এই হলো রানীর মতো রাখার নমুনা। খুন করে জেলে গিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে তোহার।

বেলকনির জানালার পর্দা নরছে। উড়ে গিয়ে ঠিক তোহার মুখের ওপর এসে সাদা আলো পড়ছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে তোহা। কাচুমাচু হয়ে বারে বারে ঢোক গিলছে। নির্ঘাত হনুমানটা এখানে ভুত পালে।
এখন তোহা করবে কি? এখান থেকে বের হবে কি করে?

এমন সময় দরজা খুলে কেউ রুমে ঢোকে। তোহা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
মেঘ হকচকিয়ে যায়। হঠাৎ হলোটা কি?
তোহা শক্ত করে জাপ্টে জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে।
মেঘ তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখ বন্ধ করে আলতো হাসে। যে কারনেই হোক তোহা নিজে থেকে জড়িয়ে ধরেছে মেঘকে। মেঘের বুকে মাথা রেখেছে। এর থেকে শান্তির আর কি হতে পারে?

“আআপনি কেনো চলে গেছিলেন?
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে তোহা।
” রিলাক্স রিলাক্স
কি হয়েছে বলো।
তোহার দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বলে মেঘ।
তোহা ঘামছে।
“আপনার বাড়িতে ভুত আছে।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তোহা।
” কিহহহহ
ভুত
সিরিয়াসলি?
মেঘ ভ্রু কুচকে বলে।
তোহা মেঘের হাত ছাড়িয়ে খানিকটা দুরে গিয়ে দাঁড়ায়।
“এখানে ভুত আছে। থাকবো না এখানে আমি। ভুতে খেয়ে নেবে আমাকে। আপনি তো আমাকে ছুড়ি বা বন্দুক দিয়ে মারতে পারছেন না তাই এখন ভুত দেখিয়ে মারতে চাইছেন।
চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তোহার।
” কি সব বলছো?
পাগল হয়ে গেছো? এখানে কোনো ভুত টুত নেই। এখানে শুধু আমি আর তুমি।
শান্তনা দিয়ে বলে মেঘ। তোহা কটমট চোখে তাকায় মেঘের দিকে।
মেঘ এগিয়ে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখায় তোহাকে। অন্য বাড়ি থেকে আলো এসে পড়ছে। নিজের বোকামির জন্য তোহা কিছুটা লজ্জা পায় কিন্তু কিছু বলে না।
“আআমি একা এই বাড়িতে থাকতে পারবো না।
তোহা থেমে থেমে বলে ওঠে।
” আমি আছি তো।
“সব সময় তো থাকবেন না।
” তাহলে তুমি চাইছো আমি সব সময় তোমার কাছাকাছি থাকি। আমার কোনো পবলেম নেই। আমার তো ইচ্ছেই করে তোমাকে ভালোবাস
তোহার দিকে এগোতে এগোতে বলে। তোহা ঢোক গিলে পিছনে যাচ্ছে।
মেঘের কথা শেষ হওয়ার আগেই বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনতে পায়।
তোহা ভয় পেয়ে যায়।
“এতো রাতে কে এলো?
মেঘ মনে মনে বলে।
মেঘ যেতে নেয়।

চলবে

#অভিমান
#পর্বঃ১২
#তানিশা সুলতানা

মাঝরাতে বাড়ির মধ্যে হট্টগোল। মারিয়া নামের মেয়েটা তার বাবা মা চোদ্দ গুষ্টি আর মিডিয়া নিয়ে এসে দাবি করছে ও মেঘকে বিয়ে করবে। দরজা ধাক্কানোর শব্দে মেঘ এসে দরজা খুলে দিতেই জাপ্টে জড়িয়ে ধরে মারিয়া মেঘকে। মেঘ কপালে ভাজ ফেলে তাকায়। কিছুখন আগেই মারিয়া খবর পেয়েছে যে মেঘ ঢাকায় ফিরেছে। খবর পেয়েই বাবা মাকে নিয়ে ছুটে এসেছে।
তোহাও মেঘের পিছু পিছু চলে আসে।
মারিয়াকে মেঘের বাহুডোরে দেখে তোহা সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে যায়। বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।

“কি হচ্ছে এসব
মেঘ গর্জে উঠে বলে। মারিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। মারিয়া গিয়ে মায়ের ওপর পরে। মা সামলে নেয়।
” এতো রাতে এখানে ড্রামা করতে এসেছেন আপনারা? কি চাই?
হাত মুঠো করে বলে মেঘ।
“আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে তোমাকে।
গম্ভীর গলায় বলে মারিয়ার বাবা।
মেঘ ভ্রু কুচকে তাকায়।
” করতে হবে। আদেশ করছিস? মেঘরাজকে আদেশ?
হাত তালি দিয়ে বলে মেঘ। ভরকে যায় মারিয়ার বাবা মা। মারিয়া কাঁদছে।
“তোর মেয়ে আমার বাড়ির রাধুনি হওয়ার যোগ্যও না। আমার এক রাতের বেডপার্টনার হয়েছিলো। তার জন্য অনেক টাকা দিয়েছি। এটার যোগ্যই ও। মেঘরাজ চৌধুরীর বউ হওয়ার অধিকার এরকম মিডেল ক্লাস ব* দের নেই।
চোয়াল শক্ত করে বলে মেঘ।
তোহা চোখ বন্ধ করে নেয়। ছি কি ভাষা। ভুল তো মেয়েটার একার না। পুরো দোষটা তো ওনার তবুও কেমন খারাপ বিহেব করছে।
মারিয়ার বাবা মা লজ্জিত হয়। সাথে করে নিয়ে আসা সাংবাদিকরা ভিডিও করে যাচ্ছে। আজকের ব্রেকিং নিউজ এটা। ভেবেছিলো মেঘকে মিডিয়ার ভয় দেখিয়ে বিয়ে করাবে মারয়াকে। কিন্তু হলো তার বিপরিতটা।
” মেঘ তোমার কাছে রিকোয়েস্ট করছি। আমার মেয়েটার বদনাম হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ভীষণ ভালোবাসে ও তোমাকে। বাঁচবে না তোমাকে ছাড়া। আমার যত টাকা আছে সব দিয়ে দেবো তোমাকে। প্লিজ
হাত জোর করে বলে মারিয়ার বাবা।
মেঘ হাসে। কপাল চুলকায়।
“মেঘরাজকে টাকার গরম দেখাস? গ্রেট।
তোর মেয়ে আর কতো ছেলেকে ভালোবাসা দেখিয়েছে?
চোখ বন্ধ করে নেয় মারিয়া। সয্য হচ্ছে না আর। পাগল পাগল হয়ে গেছে মেঘের জন্য। এতো অপমান করছে ওকে। একটুও মায়া হচ্ছে না।
” দুই মিনিট সময় দিলাম। বেড়িয়ে যা এখান থেকে। না হলে
বাকি টুকু বলে না মেঘ।
মারিয়া চোখ মুছে এগিয়ে আসে।
“সব অপমানের জবাব দেবো। বিয়ে আমি তোমাকেই করবো। ভিডিও আছে আমার কাছে। রাতটা ভাবার জন্য সময় দিলাম।
বলেই হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় মারিয়া। পেছন পেছন মারিয়ার বাবা মা। মিডিয়ার লোকেরাও বেড়িয়ে যায়। মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মেঘ জানতো এটাই হবে।
দরজা বন্ধ করে পেছনে তাকাতেই দেখতে পায় তোহা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
” কি হয়েছে?
“মেয়েদের আপনি সম্মান করতে পারেন না। আর পারবেনও না। এটা আমি আপনার থেকে আশাও করি না। কিন্তু বাবার বয়সী একটা মানুষকে তুই তরকারি করতে আপনার বিবেকের বাঁধে না? লজ্জা করে না?
একটা মেয়েকে আপনি কি বললেন? তা কে আপনি ব্যবহার করেছেন। তাহলে এখন কেনো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন? আর আমার লাইফটা কেনো শেষ করলেন? আমার সাথেও না হয় তাই করতেন যা এই মেয়ের সাথে করেছেন। তবুও তো আপনার সাথে থাকতে হতো না। ঘৃণা করি আপনাকে আমি। মরে যাবো আমি তবুও আপনার সাথে থাকবো না। নোংরা আপনি। আপনার মুখটাও দেখা পাপ। আই হেট ইউ।
বলতে বলতে কান্না করে ফেলে তোহা।
মেঘ দুই হাতপাখা মাথা চেপে ধরে। আবারও ভুল বুঝলো তোহা ওকে। সব হলো ওই মারিয়ার জন্য। মারিয়াকে তো ও ছাড়বে না। খুন করে ফেলবে।

” আমি বাড়ি যাবো। প্লিজ দিয়ে আসেন। এখানে থাকলে আমি মরে যাবো। আমাকে একটু দয়া করেন। একটু দয়া করেন। আমি বাঁচতে চাই।
হাত জোর করে কাদতে কাঁদতে বসে পড়ে মেঘের পায়ের কাছে।
মেঘ তোহার পাশে বসে। তোহার হাত দুটো ধরে।
“প্রথম দিন তো তাই কষ্ট হচ্ছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
শান্ত গলায় তোহার হাতে চুমু দিয়ে বলে মেঘ।
চোখ মুছে তাকায় মেঘের দিকে। ঘৃণাটা আরও বেরে যায়। এই লোকটার মনে দয়া মায়া নেই। পাথর উনি।
মেঘের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় তোহা।

” তুমি যা বলবে আমি করবো। সব বাজে স্বভাব পাল্টে ফেলবো। ওই মেয়েটার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো তোমাকে দেখার আগে। পোস্ট ও আমার। আমি প্রমিজ করছি আমার পেমেন্ট ওর ফিউচারে তুমি কোনো বাজে কিছু শুনবা না। প্রমিজ।
কান ধরে করুন গলায় বলে মেঘ।
“আমি পরিবারের সাথেই থাকতে চাই। একা থাকতে পারবো না। আমার ভরা সংসার চাই। যেখানে শশুড় শাশুড়ী সবাই থাকবে। যেখানে ভালোবাসা থাকবে। পারবেন?
আপনার বাবা মাকে আপনার এই প্রাসাদে আনতে? বাবাকে বাবা বলে ডাকতে?
সোজা হয়ে বসে বলে তোহা।
মেঘ উওর দেয় না। তোহা মলিন হাসে।
” আপনি শুধু মেয়েদের ব্যবহার করতে পারেন। কারো মন বুঝতে পারেন না। আই হেট ইউ। আপনি কখনোই আমার মন পাবেন না।
তোহা উঠে হনহনিয়ে চলে যায়৷ রুমে গিয়ে ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজার সাথে লেপ্টে বসে কাঁদতে থাকে তোহা। মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।

মেঘ চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠ করে নেয়।
“ছাড়বো না ওই মারিয়াকে।

কিচেনে গিয়ে নুডলস গরম করে রুমে চলে আসে মেঘ। তোহা যে দরজা বন্ধ করে দেবে এটা জানতো মেঘ। তাই এক্সটা চাবি নিয়ে আসে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখে তোহা ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে কাঁদছে। মেঘ বিছানার ওপর নুডলসের বাটি রেখে তোহার হাত ধরে।
” উঠো
শক্তি খাটিয়ে টেনে উঠায় তোহাকে।
তোহার দুই গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
তোহা অভিমানে মাথা নিচু করে আছে। পণ করেছে আর কখনোই কথা বলবে না এই বাজে লোকটার সাথে। আর সকাল হলেই পালিয়ে যাবে এখান থেকে।
“এখানে সত্যি সত্যিই ভুত আছে। যারা বেশি কাঁদে তাদের ঘাড় মটকে দেয়।
মিষ্টি করে হেসে বলে মেঘ।
তোহা তাতেও কোনো রেসপন্স করে না। মাথা নিচুই থাকে। ফুঁপাতে থাকে।
মেঘ তোহাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে হাত মুখে পানি দিয়ে দেয়। নিজে যত্ন সহকারে মুখ মুছিয়ে দেয়। তোহা কিছুই বলছে না।
খাটে বসিয়ে তোহার মুখের সামনে খাবার ধরে।
তেহাই বিনা বাক্যে খেয়ে নেয়। খিধে একদম সয্য করতে পারে না মেয়েটা। তাই আর খাবারের ওপর রাগ দেখালো না। নাহলে ছুঁড়ে ফেলে দিতো।
” তুমি যদি আমাকে প্রমিজ করো আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তাহলে আমি তোমাকে ভরা একটা সংসার দেবো। যেখানে সবাই থাকবে। কিন্তু আগে আমাকে প্রমিজ করতে হবে। আর আমি জানি তুমি কথার খেলাপ করো না।
মেঘের কথা শুনে তোহা খাবার চিবানো বাদ দিয়ে মেঘের মুখের দিকে তাকায়।
“প্রমিজ করছো তো।
হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে মেঘ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here