অভিমান #পর্বঃ১৩,১৪

0
517

#অভিমান
#পর্বঃ১৩,১৪
#তানিশা সুলতানা
১৩

এই মুহুর্তে তোহার ফিলিংটা এমন হচ্ছে যে ও এক্সাম হলে বসে আছে আর ওর কোনো কোশ্চেন কমন পড়ে নি। মেঘের খুব ছোট আর সহজ প্রশ্নের উওর খুঁজছে তোহা। উওর জানা নেই। তোহা তো এই ভয়ংকর মানুষটির সাথে থাকতে চায় না। এখানে তো কোনো ভালোবাসা নেই। এখনে শুধু জোর জবরদস্তি চলে।
ভালো তো বাসতো আকাশ তোহাকে। আর তোহা আকাশকে। আহা সে কি টান। স্কুল কলেজ শেষে পড়ন্ত বিকেলে দুইজন হাত ধরে হাঁটতো। কখনো কখনো রাস্তার পাশে ঝাল মুড়ি ফুসকার দোকান পেলে তোহা লাফিয়ে উঠতো। আকাশ কিনে দিতো। রাতে কম্বল মুরি দিয়ে ফিসফিস করে কথা বলতো। কতো ভালো ছিলো দিন গুলো। ফুলের মতো নিষ্পাপ ছিলো তোহা আর আকাশের ভালোবাসা। সেখানে কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা ছিলো না। মেহ বা আকর্ষণও ছিলো না৷ শুধু ছিলো অফুরান্ত ভালোবাসা।
কোথায় হারিয়ে গেলো সেই দিন গুলো? কোথায় হারিয়ে গেলো সেই মুহুর্ত গুলো? কোথায় গেলো সেই মনের কোনে জমিয়ে রাখা হাজারো অভিমান?

“তোহা কিছু বলছি আমি।
মেঘের কর্কশ গলায় কথায় তোহা চমকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। মুখের খাবারটা না চিবিয়েই গিলে ফেলে।চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” আমি আপনার মোহ মাএ। খুব তারাতাড়িই আপনার মোহ কেটে যাবে। তখন ওই মেয়েটার মতোই ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। তো প্রমিজ করে নিজেকে ছোট করতে চাই না। ভালোবাসা মানে টাই বোঝেন না আপনি।
আমি শুধু ভোগ করতে জানেন।
ভালোবাসতাম আমি। পবিত্র ভালোবাসা। আমার আর তার ভালোবাসায় ছিলো মনের টান। যোগাযোগ ছাড়াও হঠাৎ করে আমাদের দেখা হয়ে যেতো। অন্য রকম ফিলিং আসতো। তার সামনে গেলে কি থেকে কি করবো গুলিয়ে ফেলতাম।
ভালোবাসা নিয়ে মজা করতে নেই। ভালোবাসা খুব সুন্দর এক অনুভূতি। এই অনুভূতিকে কখনোই অসম্মান করতে হয় না। আগলে রাখতে হয় বুকের ঠিক (বা পাশটায় হাত দিয়ে) এখানটায়।
ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে হবে তার সাথে সব সময় থাকতে হবে তাকে ছুঁতে হবে এমনটা না। ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটিকে সারাজীবন বুকের মাঝে আগলে রাখতে হয়। তাকে বছরের পর বছর না দেখলে দুর থেকে তাকে ফিল করার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসার মানুষটিকে সম্মান দিতে জানতে হয়। তার ইচ্ছে গুলোর দাম দিতে হয়।
তার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে যখন বিশ পাঁচিশ বছর তাকে দেখবেন তখন যাতে বুকে হাত হাসি তার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন আমি এখনো তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি।
এক মনে এক দৃষ্টিতে পলক হীন ভাবে তাকিয়ে কথা গুলো বলে তোহা। তোমার চোখের কুর্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে তোহার। মুখে ফুটে ওঠে না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা।
হতদম্ভ হয়ে যায় মেঘ। মনের মধ্যে ঝড় বইতে থাকে। তোহা আর আকাশের সম্পর্কের কথা খোঁজ নিয়ে জেনেছে মেঘ। কিন্তু তোহা আকাশকে এতোটা ভালোবাসতো সেটা কল্পনাতেও ভাবে নি।
“আমি আপনার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো। থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবো। মেয়ে মানুষ তো আপনার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে অন্য কাউকে তো বিয়ে করতেই হবে। একা তো বাঁচা যায় না।
পারলে ভালোবাসা দিয়ে আটকে রাখেন আমায়। জোর করে প্রমিজ করিয়ে না।
চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় তোহা। বেলকনিতে চলে যায়। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে তোহার। কিন্তু মেঘের সামনে কান্না করে নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চায় না। তাই তো একটু স্পেস পাওয়ার জন্য বেলকনিতে গেলো।
মেঘ হাতের বাটি নামিয়ে রাখে।
দুই হাতে মাথা চেপে ধরে। রাগে মাথা টগবগ করছে।
মায়াকে খুন করে দিতে ইচ্ছে করছে। এতোটা কষ্ট দিয়েছে তোহাকে।
আবার মনে মনে মায়াকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। মায়া এমনটা না করলে তো আর মেঘ তোমাকে পেতো না।
মেঘের আর খাওয়া হয় না। তোহার কথায় পেট ভরে গেছে।

একটু কান্না করার পরে তোহা বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় এসে বসে।
মেঘ ফ্রেশ হয়ে মাথায় চিরুনি দিচ্ছে।
” আমি কি অন্য রুমে ঘুমাবো?
মেঘ আয়নার মধ্যে তোহার দিকে তাকিয়ে বলে।
তোহা মলিন হাসে।
“এখানেই থাকতে পারেন। ওই যে বললাম মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
তোহা খাটের এক পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ে। চুল গুলো এলোমেলো।
” ওঠো
মেঘ তোহার হাত ধরে বলে।
তোহা খানিকটা চমকে ভ্রু কুচকে ফেলে।
“মানে
হকচকিয়ে বলে তোহা।
মেঘ তোহার হাত ধরে বসিয়ে দেয়। তোহা মনে মনে ভয় পাচ্ছে। কাচুমাচু হয়ে যায়
মেঘ চিরুনি নিয়ে তোহার পেছনে বসে।
” পাক্কা চল্লিশ মিনিট ইউটিউব দেখে বিনুনি করা শিখেছি।
মিষ্টি করে হেসে বলে মেঘ।
তোহা মুখ বাঁকায়৷ ঢং করে চুল বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। ইমপ্রেস করার ধান্দা। যেই বলেছি চেষ্টা করছি তখনই লাই পেয়ে গেছে। লুচু কোথাকার।
বিরবির করে বলে তোহা।
তোহার উওর না পেয়ে মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এর থেকে উওর আশাও করে না মেঘ।
খুব যত্ন সহকারে আস্তে আস্তে তোহার মাথা আচড়ে দিচ্ছে মেঘ। যেনো তোহা একটুও ব্যাথা না পায়।
তোহার ঘুম পাচ্ছে। বসে বসেই ঝিঁমুচ্ছে। কিছু বলার সাহসও পাচ্ছে না। কি বললেি তো ফ্রী তে ধমক পাবে।
পাক্কা আধ ঘন্টা লেগে যায় মেঘের বিনুনি শেষ করতে। বিনুনির দিকে তাকিয়ে লম্বা শ্বাস টানপ মেঘ। যেনো কোনো যুদ্ধ জয় করে আসলো।
তোহা ওভাবেই শুয়ে পড়ে৷ ঘুমে ঢুলছিলো রীতিমতো।

মেঘ তোহার ঘুমন্ত মুখের দিকে এক পলক তাকায়। কান্না করার ফলে চোখের পাপড়ি ভিজে আছে। হয়ত ঠান্ডা লাগছে তাই কাচুমাচু হয়ে যাচ্ছে। পায়ের নিচ থেকে কম্বল নিয়ে তোহার গায়ে পেঁচিয়ে দেয় মেঘ। চিরুনি মাথার পাশে রেখে তোহাকে হালকা জড়িয়ে ধরে।
“ভালোবাসা নিয়ে তুমি যে লম্বা ভাষণ দিলে সেটাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দেবো আমি। আমার ভালোবাসাটাকে আমি উদাহরণ করে রাখবো। ইতিহাসের পাতায় লিখতে পারবো না ঠিকই কিন্তু সবাই বলবেই মেঘ রাজের মতো কাউকে কখনো এতোটা ভালোবাসতে দেখি নি বউকে।
কিন্তু যার মনে এক জন পুরুষ বসবাস করছে তার মনে কি করে জায়গা পাবো আমি? কি করে?

সকাল সকাল কলিং বেল বাজতে শুরু করে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে মেঘ। বুকের ওপর কারো ভারি নিশ্বাস পড়ছে। মেঘ চোখ খুলে তাকায়৷ তোহা ঘাপড়ি মেরে শুয়ে আছে বুকের ওপর। মৃদু হেসে তোহার মাথায় একটা চুমু দিয়ে তোমাকে সরিয়ে তরিঘরি করে উঠে বসে মেঘ। এই অবস্থায় তোহা দেখলে মেঘের সামনেই আসবে না। আবার ভুল বুঝবে মেঘকে।
” আজকে আমি সেটাই করবে যেটাতে তুমি আর আমি এক হয়ে থাকবো।

দরজা খুলে কাজের মেয়েটাকে ভেতরে আসতে বলে মেঘ। কালকেই মেয়েটাকে কাজের অফার দিয়েছিলো। মেয়েটা অল্প বয়সী। গরীব ঘরের মেয়ে। মেয়েটার কাজ সারাদিন তোহার সাথে থাকা। আর তোহার কি প্রয়োজন তা এগিয়ে দেওয়া। এটুকুই মেঘ দিয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটা বললো ও রান্না বান্না ঘর মোছা সব কাজই করে দেবে শুধু পাঁচ হাজার সেতারি দিতে হবে। মেঘ বিশ হাজার দেবে বলেছে। মেয়েটার খুশি আর দেখে কে? খুশিতে সকাল সকালই চলে এসেছে

“স্যার কি রান্না করবো?
মেয়েটার নাম নিপা। নিপা বলে।
মেঘ হাই তুলে বলে
” বিরিয়ানি
“মানে বলছিলাম ব্রেকফাস্টে বিরিয়ানি?
মেয়েটা অবাক হয়ে বলে।
” বেশি কথা আমি পছন্দ করি না। জাস্ট যা বলবো করবা। পাল্টা কোনো প্রশ্ন নয়। আর কোনোরকমে এদিক সেদিক দেখলে জানে মেরে দেবো।
হুমকি দিয়ে বলে মেঘ।
নিপাহ কাচুমাচু হয়ে যায়।
“ঠিক আছে
বল কিচেনে দৌড়ে চলে যায়।
মেঘ বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে চলে যায়। সুন্দর মুহুর্তটা নষ্ট করে দিলো সাথে ঘুমটাও। ডিসগ্রাসটিং।

রুমে গিয়ে দেখে তোহা বসে বসে ঝিমুচ্ছে।
” বাড়িতে কল করেছিলাম আমি। মিসেস আয়েশা আর ওনার পুএবধুর সাথে কথা হয়েছে।
মেঘ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
মেঘের কথা শুনে তোহার ঘুম উড়ে যায়। মেঘ নিজে থেকে বাসায় কল করে কথা বলেছে।ভাবা যায়? পর মুহুর্তে আবার মেজাজ বিগড়ে যায়। ফস করে নিশ্বাস নেয় তোহা।
“হ্যাপি
তোহার পাশে বসে বলে মেঘ।
” মা হয় আপনার। মা আর দাদিমা। মিসেস কি? মা বলতে পারেন না?
রাগ দেখিয়ে কপাল কুচকে বলে তোহা।
“তোমার জন্য কথা বলছি। জাস্ট এতোটুকুই। তোমার জন্য এর থেকে বেশি করতে পারবো না।
ঠাস করে শুয়ে বলে মেঘ।

তোহা নেমে যায় খাট থেকে।

চলবে

#অভিমান
#পর্বঃ১৪
#তানিশা সুলতানা

আজকে তোহা খুব খুশি। কারণ মেঘ অফিসে যাওয়ার আগে বলে গেছে আজকে বাড়িতে তোহার মা বাবা দাদা দাদি এক কথায় সবাই আসবে এখানে। সোই খতা শুনেই তোহা লাফানো শুরু করে দিয়েছে। মেঘ বলে গেছে দুপুরের খাবারটা বাড়িতে এসে খাবে। সকালে না খেয়েই চলে গেছে। অফিসে জরুরি কাজ আছেে।
লম্বা চুল গুলো আচড়ে নেয় তোহা। কাঠি দিয়ে চুল বেঁধে নেয়। মেঘ তোহার জন্য এতো এতো জামাকাপড় এনেছে। তোহা গোলাপি একটা থ্রি পিছ পড়ে নেয়।
রুম থেকে বেড়তে নিলেই মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে ওঠে। ফ্লোরেই বসে পড়ে তোহা।
দীর্ঘ পাঁচ মাস যাবৎ এই রোগটা ফিল করতে পারছে তোহা। থেকে থেকে মাথা ঘোরায়। চোখে অন্ধকার দেখে। শরীর দুর্বল তাই এমনটা হয়েছে এটা তোহার ধারণা। বাবা মাকে বললে টেনশন করবে তাই আর বলে নি। ফার্মেসি থেকে ডাক্তারকে বলে ঔষুধ এনে খেয়েছে। তাতেই একটু কমে।

পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে থাকার পরে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় তোহা। মেঘ বেরুনোর আগেই খাবার অর্ডার দিয়ে গেছিলো। সেই খাবার কিছুটা খেয়ে ব্যাগ থেকে ঔষুধ বের করে খেয়ে নেয়। তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে কিচেনে চলে যায়।
নিপা রান্না করছে। তোহা নিপার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“নাম কি তোমার?
তোহা এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করে।
” নিপা। আপনার?
মুখ বাঁকিয়ে বলে নিপা।
“তোহা। খেয়েছো কিছু? এতো বেলা হলো?
তোহা জিজ্ঞেস করে।
” হুমম স্যার দিয়ে গেছিলো খাবার।
নিপা একটু হেসে বলে
“গুড। তো রান্না কতদূর?
” প্রায় শেষ
আপনি রুমে গিয়ে বসে থাকুন আমি খাবার দিয়ে আসবো।
নিপা বিরিয়ানি নামাতে নামাতে বলে।
“আমি হেল্প করি না তোমায়।
” লাগবে না। স্যার দেখলে বকা দেবে।
তারাহুরো করে বলে নিপা।
“আরে কিচ্ছু বলবে না।
তোহা জোর করে নিপার সাথে কাজ করতে থাকে। বিরিয়ানি সাথে শেমাই। শেমাই তোহার খুব পছন্দ। তাই তো বলে শেমাইও রান্না করতে। তোহা রান্না পারে না। কখনোই রান্না করতে হয় নি। রান্না তো দুর রান্না ঘরেও ঢুকে নি কখনো। আগ্রহ নিয়ে নিপার থেকে শিখছে তোহা। যাতে দ্বিতীয় বার রান্না করতে পারে।
রান্না শেষ করতে করতে বারোটা বেজে যায়।
তোহা সকাল বেলা রুটি খেয়েছিলো। ভীষণ খিদে পেয়েছে। বিরিয়ানি আর সেমাই দেখে খিধে আরও বেরে গেছে। নিপারও নিশ্চয় খিধে পেয়েছে।

তোহা গোছল সেরে নেয়। নিপাহ ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর নিপাকে সাথে নিয়ে খেতে বসে। নিপা বসতে চায় না তোহা জোর করে বসায়।
” বলছিলাম আমি আপনার সাথে খাবো?
নিপা কিছুটা বিব্রত বোধ করে বলে।
“আপনি আপনি ছাড়ো তো। আমরা বেষ্টফ্রেন্ড এখন থেকে ওকে। আর প্রতিদিন তুমি আমার সাথেই খাবে।
নিপার প্লেটে বিরিয়ানি দিতে দিতে বলে তোহা।
নিপা তোহার কথা শুনে অবাক হয়। মালিকরা সাধারণত খুব অহংকারি হয়। কথাই বলতে চায় না। এর এই মেয়েটা ওর সাথে বসে খেতে বলছে।

” দুপুর তো হয়েই এলো তুমি তোমার বরের জন্য অপেক্ষা করবে না? এক সাথে খেতে পারতে তো।
নিপা বলে।
তোহা চমকে ওঠে৷ নিপার দিকে এক পলক তাকায়।
সত্যিই তো মেঘের জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ ওর। যেহেতু মেঘ বলে গেছে আজ দুপুরে বাড়িতে এসে খাবো।
তোহা হাত গুটিয়ে নেয়।
“থ্যাংক্স। আসলে আমি ভুলেই গেছিলাম। প্রচন্ড খিধে পেয়েছে তো তাই। আচ্ছা এক কাজ করো। তুমি খেয়ে নাও আমি ওনাকে কল করি দেখি কতো দুর।
” আমি
নিপা বলতে নেয়। তোহা বাঁধা দিয়ে বলে।
“কোনো এক্সকিউজ না। খাবে তুমি। যতোটা পারো ততোটাই খাবে। আসছি আমি
নিপা কৃতজ্ঞতার হাসি হাসে। প্রথমে ভেবেছিলো তোহা হয়ত খুব অহংকার হবে। মেঘ রাজের বউ বলে কথা। কিন্তু এখন তো উল্টো টা দেখছে।

রুমে এসে ফোনটা হাতে নেয় তোহা। কালকেই মেঘ নতুন ফোন দিয়েছে তোহাকে৷ আর তোহার ফোনটাও নিয়ে নিয়েছে। মেঘের নাম্বার সেভ করাই ছিলো। তাই আর খুঁজতে হলো না। কল দেয়।
প্রথমবার রিং হতে হতে কেটে যায়। তোহা বেশ বিরক্ত হয়। ফোন রেখে যায় কোথায়। আবারও কল দেয়। এবারও তাই। রাগ হয় তোহার। কল দিতেই থাকে দিতেই থাকে।
চুয়ান্ন বার কল দেওয়ার পর পঁয়তাল্লিশ বারের মাথায় কল রিসিভ হয়।
” কি মনে করেন নিজেকে? হাঁদারাম একটা। কখন থেকে কল করছি। সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন। এটিটিউট দেখানো হচ্ছে আমাকে। শুনুন আমি দরজার ছাড়া আপনাকে কখনোই কল করবো না। নেহাৎ আজকে খিধে পেয়েছে তাই।
এক নাগারে কথা গুলো বলতে থাকে তোহা।
“ম্যাম আমি শুভ
শুভ রিনরিনিয়ে বলে। তোহার একদমে এতোগুলো কথা বলা শুনেই ভয় পেয়ে গেছে শুভ।
তোহা দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। ছি ছি ছি কি ভাবলো শুভ।
” আপনার বন্ধু কোথায়?
আস্তে করে বলে তোহা।
“মেঘ তো বাড়িতে চলে গেছে। ভুলে ফোনটা রেখে গেছে।
কথাটা শুনেই তোহা কল কেটে দেয়। কপাল চাপকে পেছনে তাকাতেই চমকে ওঠে। মেঘ বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
” আআপনি
থেমে থেমে বলে তোহা।
“তুমি একদমে এতোগুলো কথা বলতে পারো? বিশ্বাসই হচ্ছে না৷
” তো বলবো না। কখন থেকে অপেক্ষা করছি। খিধে পেয়েছে। পেটে হাত বুলিয়ে বলে তোহা।
“তো খাও নি কেন?
মেঘ টাই খুলতে খুলতে বলে।
” বললাম তো মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই অপেক্ষা করছিলাম। পাঁচ মিনিট দিলাম।
বলেই তোহা চলে যায়। মেঘ বুকে হাত দেয়। আহা

বাড়ির সবাই রেডি হয়েছে মেঘের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। মায়া এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যাবে না মায়া। তোহার সামনাসামনি হওয়ার ইচ্ছে ওর নেই। কেমন বাঁকা বাঁকা কথা বলে।
আকাশ কেমন তাকিয়ে থাকে তোহার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে। নিজেকে বড্ড অপরাধি মনে হয় মায়ার। নিজেকে জেদের বসে নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য দুটো মানুষকে আলাদা করেছে ও। কখনোই সুখি হবে না মায়া৷ এটা মায়া বুঝে গেছে।
“জোর করে পাগলামি করে শুধু পাগল উপাধি টাই পাওয়া যায়
কারো ভালোবাসা না”
হারে হারে বুঝে গেছে মায়া।

একে একে সবাই বেরিয়ে যায়। কেউ মায়াকে একবার জিজ্ঞেসও করে না যাবে কি না। অবহেলায় পড়ে থাকে এই বাড়িতে। না খেয়ে থাকলেও কেউ জিজ্ঞেস করে না খেয়েছে কি না।
আকাশ তো ফিরেও তাকায় না।
সবাই বেরিয়ে যেতেই ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে মায়া৷ হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
“জীবনের খুব বড় ভুলটা করে ফেলেছি আমি৷ এখন কি করবো আমি?

আজ একটা খুব সুন্দর অনুভুতির সাথে পরিচিত হলো মেঘ। তোহা আর মেঘ এক সাথে বসে খেয়েছে। খাওয়ার সময় তোহা এটা সেটা অনেক গল্প করেছে। মাকে কোন ঘড়ে থাকবে। দাদিমাকে কতোদিন পরে দেখবে। বাবাকে জড়িয়ে ধরবে।
এসব গল্পই করেছে। মেঘ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো তোহার দিকে।
” খুব মিছ করো না সবাইকে?
তোহার হাতের ওপর হাত দিয়ে বলে মেঘ।
“হুমম খুব। আসলে আমি তো বাবা মাকে ছাড় কখনো থাকি নি।
” সব ঠিক হয়ে যাবে।
“হুমমম
তোহা মুচকি হেসে বলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here