অভিমান #পর্বঃ১৫,১৬

0
662

#অভিমান
#পর্বঃ১৫,১৬
#তানিশা সুলতানা
১৫

আজকেই ২০২১ সালের শেষ রাত। রাত বারোটার পরেই ২০২২ সাল চলে আসবে। মেঘের বিজনেস পার্টনার রা পার্টি রেখেছে। আর মেঘকে ইনভাইট করেছে। প্রতিবছরই কোনো বড় হোটেলে হ্যাপি নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করে।
কিন্তু আজকে মেঘের যাওয়া হবে না এটা মেঘ খুব ভালো করেই জানে। কেনোনা কিছুতেই তোহা ওই পার্টিতে যাবে না। আর তোহাকে ছাড়া মেঘ যায় কি করে?
মেঘের বাড়িটাই সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। দুপুরের খাবার খেয়েই মেঘ বেরিয়ে গেছে। বিকেলে সবাই চলে এসেছে। তোহা শুভর সাথে মিলে সব কিছুর এরেন্জমেন্ট করছে। মেঘ চমকে যাবে।
অনেক দিন পর পরিবারকে দেখে তোহা ভীষণ খুশি। তোমাকে এরকম খুশি দেখে সবাই খুব খুশি হয়। ভেবে নেয় তোহা মেঘকে মেনে নিয়েছে। মেঘও পাল্টে গেছে।

তোহা নিজের রুমটা বেলুন দিয়ে সাজাচ্ছে। আপাতত এখনে তোহা একাই। যারা তোমাকে সাহায্য করছিলো তোহা তাদের পাঠিয়ে দিয়েছে বাইরে টা সাজানোর জন্য। এখানে তোহা একাই পারবে।
“কেমন আছো তোহা?
হঠাৎ কারো কথায় থমকে যায় তোহা। ফু দিয়ে বেলুন ফুলাচ্ছিলো। থেমে যায়। তার দিকে না তাকিয়েও তোহা বুঝতে পারে এই মানুষটা তোহার প্রাক্তন। যাকে তোহা খুব ভালো বাসে। আর সেও তোমাকে ভালোবাসে।
জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় তোহা। মুখে হাসি টেনে পেছনে তাকায়।
” এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো ভাইয়া?
আকাশ তোহার ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি দেখে নিজেও একটু।
“এতোটা সরল কেনো তুমি? তোমার এই সরলতাই আমাকে মুগ্ধ করে।
তোহার দিকে অপলক তাকিয়ে বলে আকাশ।
কিছুটা থমথমে খেয়ে যায় তোহা। তবুও মুখের হাসিটা বজায় রাখে।
” ও মা এখানে সরলতার কি আছে। ভালো আছি। তো বলবো না?
তারাহুরো করে বলে তোহা।
“হুমম তা তো দেখতেই পাচ্ছি। চোখের নিচে কালি। রোগা হয়ে গেছো। কালো হয়ে গেছে। কতোটা ভালো আছে তা আমি জানি।
তাচ্ছিল্য হেসে বলে আকাশ।
তোহা ভেবাচেকা খেয়ো যায়। সেটা আকাশকে বুঝতে দেয় না।
” ভাইয়া আমি চাই না আমাদের পোস্ট নিয়ে কথা বলতে। যা কপালে ছিলে তাই হয়েছে। এবার সব ভুলে নতুন করে শুরু করো।
তোহার মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়।
আকাশ এবার একটু হাসে।
“তুমি জানতে তোহা আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। তোমার জন্য জীবটাও দিয়ে পারি। তাহলে সেদিন যখন মায়া জঘন্য পিক গুলো বাড়ির সবাইকে দেখালো সেদিন তুমি কেনো আমার হয়ে কথা বললে না? কেনো বললে না সব মিথ্যে ছিলো? তাহলে তো সব ঠিক থাকতো।
আহত গলায় বলে আকাশ।
তোহা চোখ বন্ধ করে নেয়। কয়েক সেকেন্ড পরে চোখ খুলে।
” তুমি তো নিজেকে ইনোসেন্ট প্রুফ করার অনেক চেষ্টা করলে পারলে না। কারণ মায়া এডিট করে হলেও পিক গুলোতে তোমার মুখটা স্পষ্ট ছিলো।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। মেনে নাও মায়াকে। ভীষণ ভালোবাসে মেয়েটা তোমাকে
তোমাকে পাওয়ার জন্য এতোটা মিথ্যে বলে বিয়ে করলো তোমায়। শুধু মাএ তোমার সাথে থাকবে বলে। তার ভালোবাসার প্রাপ্য মূল্য দিও।
তোহা বলে।
“তুমি মেনে নিয়েছো মেঘ কে? পেরেছো ওর সাথে স্বাভাবিক হতে?
আকাশ পাল্টা প্রশ্ন করে।
” আজকে থেকে সবটা ঠিক করে নেবো। নতুন ভাবে শুরু করবো সব।
নজর কারা হাসি দিয়ে বলে তোহা। আকাশ হতাশ হয়। ভালো ভাবেই বুঝে যায়। মনের ওপর জোর খাটিয়ে হলেও আজকে তোহা মেঘকে স্বীকার করে নেবে। সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
“নতুন জীবনে সুখী হও। অনেক দোয়া রইলো তোমার জন্য।
বলে চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে চলে যায় আকাশ।
তোহা একটু হাসে।
” জীবনের সব ভুল গুলো মুছে ফেলবো আমি। সবটা নতুন করে শুরু করবো। মেঘ কে নিজের মতো করো গুছিয়ে নেবো। আমি জানি মেঘ আমাকে ভালোবাসে। আমি ওর মেহ না। মেঘের সব খারাপ স্বভাব গুলো পাল্টে দেবো আমি। আই প্রমিজ। আর ভুলে যাবো তোমাকে আকাশ।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তোহা। আবার মনোয়ন দিয়ে রুম সাজাতে থাকে।

আটটার দিকে আকাশ বাড়িতে ফেরে। প্রতিদিন সন্ধার আগেই বাড়িতে আসে। আজ ইচ্ছে করেই দেরি করেছে। এতো লোকজনের মধ্যে ভালো লাগবে না ওর। বাড়িতে গেলেই সবাই শুরু করবে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা। কোথাও যেতে দেবে না তোহা মেঘকে। কোথাও যেতে দেবে না। কোনো দেবে? তোহা তো ওর বিয়ে করা বউ। অধিকার আছে মেঘের।

বাড়িটা সাজানো দেখে বেশ অবাক হয় মেঘ। কপালে তিনটে ভাজ ফেলে। কে সাজানো বাড়িটা? কার এতো সাহস মেঘ রাজের পারমিশন ছাড়া তার বাড়িটা সাজিয়ে ফেললো?
“আমি সাজিয়েছি মিস্টার
পেছন থেকে তোহা বলে।
মেঘ পেছনে তাকায়। তোহার মুখে লাগে আছে মিষ্টি হাসি।
” কিন্তু কেনো? আবার বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে না কি?
মেঘ দুষ্টুমি করে বলে।
“বিয়ে করার ইচ্ছে না বাট থাক না বললাম
একটু ভাব নিয়ে বলে তোহা।মেঘ তোহার কথায় খানিকটা অবাক হয়। আজ তোহা মেঘের সাথে রসিকতা করছে। ভাবা যায়?
” শুনুন আজকে এখনই রুমে যাবেন না। পাশের রুমটাতে আপনার প্রয়োজনীয় সব জিনিস দেওয়া আছে। বারোটার পরে রুমে ঢুকবেন। ক্লিয়ার?
তোহা আঙুল নাচিয়ে বলে
“কিন্তু কেনো?
” সিক্রেট
“কি সিক্রেট
” বলে দিলো তো সিক্রেট থাকলো না তাই না?
“তাও ঠিক
” সো যান জামাকাপড় চেঞ্জ করে আসুন। সবাই এক সাথে খাবো।
মেঘের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
“আমি পরে খাবো।
তোহা মেঘের দুই গালে হাত দেয়।
” প্লিজ আমার জন্য
করুন সুরে বলে
তোহার করুন সুরে বলা কথা অমান্য করার সাধ্য মেঘের নেই।
“ঠিক আছে
বলেই তোহার হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়প চলে যায়। তোহা চোখে মুখে হাসে। মেঘকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবে তোহা। মেঘের টাকার অহংকারটাও থামিয়ে দেবে। মেঘকে বুঝিয়ে দেবে টাকা না থাকলেও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা যায়। টাকাই সব না। টাকা দিয়ে সব কিছু হয় না। টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায় না।

সব ছেলেরা এক সাথে খেতে বসেছে। মেঘ বাবা আর দাদার মাঝখানে বসেছে৷ সবাই খুব খুশি। আরমান চৌধুরী তোমার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসে। মেঘ বাইরে গমরভাবটা ধরে রাখলেও মনে মনে বেশ ভালো লাগছে মেঘের।
রাতের খাবারে গরুর মাংস আর রুটি। মেঘের প্রিয় খাবার। অনেক দিন খাওয়া হয়না। কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছে মেঘ।
তোহার বাবা দাদা তোমাকে এরকম খুশি দেখে মুগ্ধ হয়।
মেঘের সাথে মেয়েটা এতোটা খুশি থাকবে ওনারা ভাবতেও পারে নি।

রাত সাড়ে এগারো টায় সবাই মিলে ছাদে চলে আসে। ২০২১ সাল টাকে বিদায় জানাতে। অনেক গুলো ফানুস বাজি সব এনেছে। তোহা তো ভিডিও করতে ব্যস্ত। তোহার সাথে সঙ্গ দিচ্ছে শুভ। বেশ ফ্রী হয়ে গেছে শুভ তোহার সাথে। বাড়ির সবাই মজা করছে। আকাশ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

তোহা ছবি তোহা রেখে মেঘের পাশে দাঁড়ায়। মেঘ একটা ফানুস ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
” ধরে রাখলে হবে ওড়াতে তো হবে৷ চলুন
তোহা মেঘ আর মেঘের বাবাকে একটা ফানুস ধরিয়ে দেয়। তারপর বিভিন্ন ধাবে পেচ দিতে বলে। অনেক অনেক ছবি তোলে।
অতঃপর ১২ টা বাজলে সবাই ফানুস উড়িয়ে দেয়।
সবাই এক সাথে বলে ওঠে Happy New Year

সবাই যে যার মতো মজা করছে। তোহা মেঘের হাত টা ধরে চলে আসে।
“কি ম্যাডাম চলে এলেন যে? মজা করা শেষ
মেঘ হাঁটতে হাঁটতে বলে।
” আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার আছে তাই তো চলে আসলাম। নাহলে আরওখন থাকতাম।
মেঘ দাঁড়িয়ে যায়। তোহার দুই বাহু ধরে।
“আমার জীবনের সব থেকে বড় সারপ্রাইজ হবে সেটা যেদিন তুমি আমকে মেনে নেবে।
মেঘের কথা শুনে তোহা মিষ্টি করে হাসে।
আবার হাঁটা শুরু করে।
তোহা রুমের দরজাটা খুলে দেয়।
চোখের ইশারায় মেঘকে ঢুকতে বলে৷ মেঘ তোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে রুমে ঢুকে।
রুমে ঢুকে মেঘের মুখে হাসি ফুটে।

পুরো রুমটা ফুল বেলুন দিয়ে সাজানো। চারপাশে রঙিন কাগজে লেখা
” আজকে থেকে আপনার সাথে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে চাই”
তোহা তো আর মুখে বলতে পারবে না। তাই লিখে দিয়েছে।
মেঘ বুকে হাত গুঁজে নেয়। দরজার দিকে তাকায়। তোহা এখনো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করে।
“তোমাকে কি কোলে করে আনতে হবে?
মেঘ বলে।

চলবে

#অভিমান
#পর্বঃ১৬
#তানিশা সুলতানা

খাটের মাঝ খানে বসে আছে তোহা। চোখে মুখে লাজুকতা। এতোসব কিছু তোহা করেছে এটা ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে এই রুম থেকে। মেঘের সামনে থাকতে লজ্জা লাগছে। তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।
মেঘ তোহার সামনে খাটের সাথে পা লাগিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তোহার মধ্যে বিরাজমান।
তোহা মেঘের দিকে না তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারছে এক জোড়া চোখ তৃহ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোহার দিকে। যেটা ওকে আরও নুয়িয়ে দিচ্ছে।
গায়ের ওড়নাটা খানিকটা টেনে নেয় তোহা পা ওবদি কম্বল নিয়ে নেয়। হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। বারবার নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
“কন্ট্রোল তোহা কন্ট্রোল
মনে মনে বলছে তোহা।

“ভালোবাসো আমায়?
মেঘের প্রশ্নে থমকে যায় তোহা। কি উওর দেবে জানা নেই। লজ্জায় নুয়িয়ে থাকা মুখটা উঁচু করে তাকায় মেঘের দিকে। ভালোবাসি বললে মেঘ খুব খুশি হবে। তোহা চায় মেঘকে খুশি করতে। কিন্তু সত্যি তো এটাই ও মেঘকে ভালোবাসে না। আর বাসলেও সেটা ও উপলব্ধি করতে পারছে ন। তবে এই মুহুর্তে ভালোবাসি বলাটা তোহার কাছে যুদ্ধের মতো। বলতে পারবে না।
নরে চরে বসে তোহা। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে মাথা ঝাঁকিয়ে নেয়। নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া মাএ।
মেঘ আগের মতো দৃষ্টি তোহাতে নিবদ্ধ করে হাত ভাজ করেই দাঁড়িয়ে আছে।
” উওর জানা নেই?
পাল্টা প্রশ্ন করে বসে মেঘ।
তোহার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। এই শীতেও কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। ঠোঁট কামড়ে ওড়নার শেষের অংশ দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নেয়।
অতঃপর ঢোক চিপে ঠোঁট নারিয়ে কিছু বলার জন্য উদ্বৃত হয়।
“এতো নার্ভাস হচ্ছো কেনো? জাস্ট সিম্পল একটা কোশ্চেন। ইয়েস ওর নো?
বলতে পারছো না?
ওকে নো পবলেম। বলতে হবে না। একচুয়েলি তুমি আমাকে ভালোবাসো আর না বাসতো আই ডোন্ট কেয়ার।
বাট তবুও মনের কোথাও একটা পেইন হয়। লাভ ওয়ার্ড টা শুনতে মন চায় তোমার থেকে। তবে রিলাক্স কাঁপা-কাঁপি করার কিছু নেই।
মেঘ তোহার পাশে বসে বুকে হাত দিয়ে বলে।
তোহা মাথা নিচু করে নেয়। হাজবেন্ড হিসেবে এতোটুকুও মেঘ ডিজার্ভ করে ওর থেকে।
চোখ বন্ধ করে নেয় তোহা। তাচ্ছিল্য হাসে।
মেঘ মাথার কাছে বালিশ দিয়ে আধশোয়া হয়।
” আমি হয়ত আপনাকে ভালোবাসি না। বাট খুব রেসপেক্ট করি। আমি আমাদের সম্পর্কটাকে একটা নাম দিতে চাই। আর পাঁচটা হ্যাপি কাপল দের মতো সুখে থাকতে চাই। ছোট্ট একটা মেঘরাজ চৌধুরী চাই আমার।
শেষের কথাটা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে তোহা।
মেঘ লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তোহার দিকে তাকায়।
“আমি কি ঠিক শুনলাম?
মেঘ অবিশ্বাস্যের সুরে বলে।
তোহা দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।
” তোহা তোমার আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন।
মেঘ মুখটা গম্ভীর করে বলে।
তোহার মেঘের দিকে এক পলক তাকায়।
মুখে কিছু বলে না। চোখ ফিরিয়ে খাট থেকে নেমে যেতে নেয়। মেঘ তোহার হাত ধরে।
“রাগ বা জেদের বসে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই।
শান্ত গলায় বলে মেঘ।
” আমি সব কিছু ভুলতে চাই। আপনার সাথে সুন্দর ভাবে বাঁচতে চাই।
মেঘ আলতো হাসে। তোমাকে টান নিয়ে ভালো করে বসিয়ে দেয়।
“লাভ ইউ
তোহা মেঘের বুকে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
” এখানেই আমি শান্তি খুঁজতে চাই।
চোখের কোনে পানি চলে আসে তোহার। সেটা খুশির না দুঃখের সেটা বুঝতে পারে না তোহা।
হয় মেঘকে মেনে নিতে পারার খুশিতে।
“টাচ করতে পারি তোমাকে?
মেঘ প্রশ্ন করে কিছুটা রসিকতার ছলে। তোহা কপালে তিনটে ভাজ ফেলে মেঘের বুক থেকে মাথা তুলে
” আপনার হাতটা কোথায়?
“তোমার পিঠে? মেঘ সোজাসাপটা উত্তর দেয়।
” তাহলে কি টাচ করেন নি?
“অন্য ভাবে
আই মিন
তোহা ধ্যাত বলে আবার মেঘের বুকে মুখ লুকায়। ঠোঁটে লজ্জার হাসি।
” আমার মায়াবতী

পরের দিন গুলো খুব দ্রুত ই চলে যাচ্ছে। তিন দিন পার হয়ে যায়। পুরো পরিবারের সাথে তিন দিন কাটালো তোহা। খুব খুশিতে কাটিয়েছে। মেঘ আর মেঘের বাবার ছবিটা বড় করে টাঙিয়ে রেখেছে সিঁড়ির কাছে। আরমান চৌধুরী খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। সেই আঠারো বছর বয়সে ছেলেটা বাড়ি থেকে চলে এসেছিলো তিন লাখ টাকা নিয়ে।
জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলো মেঘকে। ছোট থেকেই মেঘের মাথাই বড়লোক হওয়ার ধান্দা। মেঘ মনে করে যার কাছে টাকা নেই তার কিছুই নেই। তাই তো সেই ছোট বয়স থেকেই টাকার পেছনে ছুটেছে। আর সফলও হয়েছে। বাড়ি ফেরে নি দীর্ঘ দশ বছর। কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি। বাবা মাকে ভুলেই গেছিলো।অবশ্য এখন ভুলেই আছে।
তবে আরমান চৌধুরীর ধীরো বিশ্বাস তোহা ঠওক একদিন তার ছেলেকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে। মেঘকে বুঝিয়ে দেবে টাকা দিয়ে সব কেনা গেলেও ভালোবাসা কেনা যায় না। বাবা মায়ে স্নেহ কেনা যায় না।

আকাশ বাড়ি চলে গেছে নিউ ইয়ারের দিনই। ভালো লাগছিলো না ওর। নিপা মেয়েটাকে ছুটি দিয়েছে মেঘ।

অনার্স প্রথম বছরের পরিহ্মার রেজাল্ট দিয়েছে। ফাসক্লাস পেয়ে পাশ করেছে তোহা। সবাই খুব খুশি। মেঘ তোহাকে কাছের একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করেছে। অবশ্য তোমাকে এ বিষয়ে কিছু বলে নি।

আজকে সবাই চলে যাবে। তোহা খুব করে কান্না কাটি করে আরমান চৌধুরী আর মেঘের মাকে আটকাতে পেরেছে। আরও কিছুদিন থেকে যাবেন তারা
বিকেলের দিকেই চলে যায় সবাই।

মাগরিবের আজান পড়বে কিছুখন পরেই। বিশাল বাড়িটার ছাঁদে যাওয়া হয় নি তোহার। মামনিকে খুব করে বলে দুজন মিলে ছাঁদে উঠেছে। পুরো ছাঁদটা গোলাপ আর বেলি ফুল দিয়ে ভরপুর। সাথে কিছু গাঁধা ফুলও আছে। ভীষণ সুন্দর। সালাম চাচা নামের একজন ছাঁদের দেখাশোনা করে। খুব ভালো করে পরিপাটি করে রেখেছেন তিনি। অবশ্য কাজে ফাঁকি দেওয়ার কোনো চান্স ও নেই। তাহলে মেঘ একটা ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেবে। তবে লোকটার মন ভালো। সব গুলো কাজের লোককেই খুব ভালো সেলারি দেয়। এই বিষয়টা খুব ভালো লাগে তোহার।

“মামনি তোমার হাবলাকান্ত ছেলের আবার সখও আছে।
তোহা দোলনায় বসে দোল খেতে খেতে মজার ছলে বলে।
মামনি উওরে হালকা হাসে। উওর দেয় না। তোহার পাশে বসে।
” তোর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিস। কটা দিন দেখতে পারলাম ছেলেটাকে।
চোখ ভরে ওঠে ওনার। তোহা তারাহুরো করে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
“মামনি কাঁদবা না প্লিজ। তোমার ছেলেকে সম্পূর্ণ ভাবে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো আমি আই প্রমিজ।
মামনি জড়িয়ে ধরে তোহাকে।

আজকে মেঘের ফিরতে দেরি হয়ে যায়। অফিসের কাজের চাপ বেরে গেছে। নতুন আরও একটা ফ্যাক্টরি তৈরি করছে মেঘ। সেখানে প্রচুর সময় দিতে হচ্ছে।
রাত দশটায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ঢোকে মেঘ। সোফায় গা এলিয়ে দেয়। এই শীতেও ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।
” মা পানি দাও
চোখ বন্ধ করে বলে মেঘ।
তোহা আরমান চৌধুরী আর মামনি অপেক্ষা করছিলো মেঘের জন্য। বাসায় ফিরলে এক সাথে খাবে। মেঘের মুখে মা ডাক শুনে খুশিতে কেঁদে ফেলেন তিনি। এক ছুটে মেঘের জন্য পানি নিয়ে যায়।

“আপনার জন্য অপেক্ষা করছি আর আপনিও এতো দেরিতে আসলেন?
গাল ফুলিয়ে বলে তোহা। মেঘ আলতো হাসে।
” সরি অনেক কাজ ছিলো।
“নো এক্সকিউজ
তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন খুব খিধে পেয়েছে।
মেঘ মিষ্টি হেসে ফ্রেশ হতে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here