অভিমান #পর্বঃ১৭,১৮

0
627

#অভিমান
#পর্বঃ১৭,১৮
#তানিশা সুলতানা
১৭

আজ নতুন ভার্সিটিতে তোহার প্রথম দিন। মেঘ আর শুভ দুজন মিলে তোহাকে ভার্সিটিতে দিতে এসেছে। ভার্সিটির সবাই এক নামে চেনে মেঘরাজ কে। চিনবেই না কেনো এতো বড় বিজনেসম্যান। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। মেঘ তোহার ডিপার্টমেন্টের হেডের সাথে তোহার পরিচয় করিয়ে দেয়।
দুইজন লোককে তোহার পাহারায় রেখে চলে যায় মেঘ।
প্রথম দিন খুব ভালোই কাটে তোহার। খুব বেশি কথা বলা পছন্দ করে না তোহা। আর অচেনা মানুষদের সাথে তো কথা বলতেই পারে না। তাই চুপটি করে বসে থাকে ক্লাসের এক পান্তে। কেউ আর যেচে কথা বলতে আসে না তোহার সাথে। তারা ভাবে হয়ত তোহা ইগোর জন্য কথা বলছে না। তারা তো জানে না অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে তোহা পারে না তোহা।

তিনটে ক্লাস শেষ হতেই ছুটি হয়ে যায় ওদের। তোহা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়ে ক্লাস থেকে। গেটের বাইরের মেঘের গাড়িটা আর চেনা দুজন লোককে দেখে তোহা মুচকি হেসে গাড়িতে বসে।

বাসায়,এসে মামনির সাথে গল্প করে নতুন ভার্সিটি দেখতে কেমন? টিচাররা কেমন? কেমন লাগলো? সব কিছু।

আজ বিকেল বেলাতেই মেঘ বাসায় চলে আসে। আজকেই চলে যাবেন আরমান চৌধুরী আর মামনি। এ নিয়ে অবশ্য মেঘের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু তোহা একা থাকবে তোহার খারাপ লাগবে এটা ভেবেই চলে এসেছে।

আরমান চৌধুরী যাওয়ার সময় মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বলে
“তোহাকে দেখে রেখো।
মেঘ প্রতিউওরে শুধু মাথা নারায়৷ মামনি খুব কাঁদে যাওয়ার সময়।
ওনার চলে যেতেই মাগরিবের আজান পরে যায়। শুভকে আজকে মেঘ ওর বাড়িতেই থাকতে বলেছে। বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে খুব।
তোহা মাগরিবের নামাজ আদায় করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
মেঘ পেছন থেকে তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোহার ঘাড়ে নাম ডুবিয়ে দেয়।
তোহা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” মুড অফ করে থেকো না প্লিজ। তোমাকে এরকম দেখতে ভালো লাগে না আমার।
ফিসফিসিয়ে বলে মেঘ।
তোহা জমে যায়। শক্ত হয়ে দাঁড়ায়।
“ককই মুড অফ না তো।
থেমে থেমে বলে তোহা।
” তাহলে হাসো।
“আপনি তো আমার পেছনে হাসলে দেখবেন কি করে?
মেঘ ছেড়ে দেয় তোহাকে। তোহা হাফ ছাড়ে। এই লোকটার হুটহাট এ্যটাক এ তোহা খুব ভয় পেয়ে যায়।
তোহা মেঘের দিকে বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসে।
” পাগলি
মেঘ তোহার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে।
তোহা মাথা রাখে মেঘের বুকে।
“এখানে আসার পরে তো কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলেন না? চলুন না পুরো শহরটা ঘুরে ঘুরে দেখি।
তোহা আবদারের সুরে বলে।
” কাজের ভীষণ চাপ। এখন যাওয়া পসিবল না। একটু ফ্রী হয়ে নেই তারপর নিয়ে যাবো।
মেঘ তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
“আপনার কাজ শেষ হওয়ার আগেই না আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
মেঘ ছিটকে দুরে সরিয়ে দেয় তোহাকে। তোহা খানিকটা চমকে ওঠে। মেঘের শরীর কাঁপছে থরথর করে।
” ককি বললে তুমি?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেঘ।
“আমি জাস্ট মজা করেছি। তোহা মেঘের হাত ধরে বলে।
” এরকম মজা আর করবে না।
মেঘ চেঁচিয়ে বলে।
তোহা ভয় পেয়ে যায়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তোমাকে মেঘ।
“আর বলবে না এসব কথা প্লিজ।
করুন সুরে বলে মেঘ।
” যেদিন সত্যিটা জানতে পারবেন সেদিন কি করে সামলাবেন নিজেকে?
মনে মনে বলে তোহা। চোখের কুর্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে।
“আপনার কাছে আমি তো কখনো কিছু চাই নি। আজ একটা জিনিস চাইবো দেবেন?
” বলো
“আমার বেবি চাই। চোখ বন্ধ করপ বলে তোহা।
” এখন না।
“এখনই প্লিজ
মেঘ তোহার মাথায় চুমু দেয়।
” তোমার পড়াশোনা?
“পড়াশোনা করবো তো। প্লিজ না করবেন না।
তোহার করুন সুরে বলা আবদারটা ফেলতে পারে না মেঘ।

দুই জন কাজের লোক বাড়িয়েছে মেঘ। নিপা তো আছেই তোহার সাথে। মেঘের কাজের চাপটাও বেরে গেছে। কাজ শেষ হলেই তোমাকে নিয়ে পুরো ঢাকার শহরটা ঘুরবে মেঘ। তারপর বাড়ি গিয়ে থাকবে অনেক দিন। এতো দিনে মেঘ রিলাইজ করেছে ফ্যামেলির সাথে থাকলে কতো হ্যাপি থাকে ও। খুব মিস করে বাড়ির লোকদের। কিন্তু মুখে স্বীকার করে না। কিন্তু কাজই শেষ হচ্ছে না।

তোহার ভার্সিটি পড়াশোনা আর নিপার সাথে আড্ডা দিয়ে দিন কেটে যাচ্ছে। প্রতিদিন নিয়ম করে বাড়িতে কথা বলে তোহা। মেঘ কেও বলায়। প্রতিদিন কি কি করলো? সব মায়ের কাছে বলে তোহা। এটা ওর প্রতিদিনকার রুটিন।
কিন্তু ক্রমশ তোহার শরীরটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মাথা ব্যাথাটা আগের থেকেও অনেক বেড়েছে। রাতে মেঘকে বলেছিলো ভালো লাগছে না। মাথা ব্যাথা করছে। মেঘ বললো এসো আমি মাথা ম্যাসাজ করে দেই ঠিক হয়ে যাবে। তোহা আর কিছু বলে নি।

কেটে গেছে পাঁচ মাস। এই পাঁচমাসে পরিবারের সাথে দেখা হয় নি তোহার। মেঘও আর ফ্রী হয় নি। ঘুরতেও নিয়ে যায় নি তোহাকে। তবে হ্যাঁ প্রতিদিন নিয়ে করে ঘন্টায় ঘন্টায়,তোহার খোঁজ নিতে ভুলে না মেঘ।

ছাঁদে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো নিপা আর তোহা। নিপার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে তোহার। দুজন একই ভার্সিটিতে পড়ে। এক সাথেই যাওয়া আসা করে।
কয়েকদিন যাবৎ তোহার বমি হয় এটা তোহা কাউকে বলে নি। তোহা জানে ও প্রেগন্যান্ট তবুও ও মেঘকে জানাতে চায় না। ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকাপও করাতে চায় না মেঘের সাথে। কারণ মেঘ কেনো এতো ব্যস্ত থাকবে। এতো টাকা খাবে কে? করবে কি এতো টাকা দিয়ে?

দশ দিন আগে ভার্সিটি থেকে গেছিলো হাসপাতালে। চেকআপ করিয়ে এসেছে। রিপোর্টে পজিটিভ এসেছে। তিন মাস চলছে। তোহা খুব খুশি। বাড়ির কাউকেই জানায় নি। আশায় আছে মেঘ ফ্রী হয়ে গেলে একদম সামনা সামনি গিয়ে সারপ্রাইজ দেবে।

“তোহা ঠিক আছো তুমি?
নিপা তোহার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে। তোহার চোখ দুটো লেগে আসছে। শরীরের ভর রাখতে পারছে না। নিপার কথা কানে এসেছে কিন্তু উওর দেওয়ার শক্তি টুকু নেই।
” এই তোহা
নিপা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। তোহা ফ্লোরে পড়ে যেতে নিলে জড়িয়ে ধরে নিপা। চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়। শুধু মেঘ বলে ডাকছে।
তোহার চিৎকারের অন্য কাজের লোকেরাও ছুঁটে চলে আসে ছাঁদে। তোহাকে এই অবস্থায় দেখে সবার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। কেউ যায় মেঘকে কল করতে আর কেউ যায় তোমাকে ধরে রুমে আনতে।

মেঘের আসতে দেরি হচ্ছে বলে নিপা নিজেই তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিপাকে সাহায্য করে অন্য কাজের লোকরা। মালি চাচা ড্রাইভ করে।
মেঘের বাড়ি থেকে বিশ মিনিটের পথ বড় হাসপাতালের। সেখানেই নিয়ে যায় তোহাকে।

নিপার শরীর থরথর করে কাঁপছে। হাসপাতালের করিডোরে হাঁটু মুরে বসে কাঁদছে নিপা। নিপার এই চোখের পানিই বলে দিচ্ছে ও ঠিক কতোটা ভালোবাসে তোহাকে।

আধঘন্টা পরে মেঘ আসে। নিপাকে হাঁটু মুরে বসে কাঁদতে দেখে পা দুটো থেমে যায় মেঘের। হাঁটার শক্তি নেই। কোনো রকমে মনের জোরে নিপার সামনে আসে। নিপার সামনে হাঁটু মুরে বলে
“আমার তোহা
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেঘ।
নিপা মাথা তুলে তাকায় মেঘের দিকে।
” আসলেন কোনো? থাকেন আপনি আপনার কাজ নিয়ে। আপনার তো টাকা চাই। যান না টাকার কাছে। বউয়ের প্রতি কোনো খেয়াল আছে আপনার? লোভী লোক একটা।
আপনার বউ তিন মাসের প্রেগন্যান্ট জানেন আপনি? কেমন স্বামী আপনি?
রাগে গিজগিজ করতে গর্জে উঠে বলে নিপা। মেঘ নিপার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। তোহা প্রেগন্যান্ট আর ও জানেই না?
বসে পরে মেঘ। মাথায় দুই হাত দেয়
নিপা ডুকরে কেঁদে ওঠে।
“তোহা চেয়েছিলো আপনাকে আর পরিবারকে খুব বড় সারপ্রাইজ দেবে। তাই রোজ আপনাকে জিজ্ঞেস করতো কবে ফ্রী হবেন। আর আপনার কাজই শেষ হলো না।
মেঘের চোখে পানি টলমল করছে। এতো বড় ভুল কি করে করলো?
শুভ অবাক দৃষ্টিতে নিপাকে দেখছে। নিজের মালিকের জন্য কতোটা ভেঙে পড়েছে মেয়েটা। মনে হচ্ছে ওর আপন বোন অসুস্থ।

ডাক্তার বেরিয়ে আসে। শুভ এগিয়ে যায়।
” ডাক্তার আমার ভাবি কেমন আছে?
“এখন ঠিক আছে। ওনার মাথা চেকআপ করানো দরকার। তাছাড়া সবই ঠিক আছে। বেবিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
তবে যত্ন নেওয়া হয় না ওনার। মেবি একা একা থাকে। ওনাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
বলেই এক্সকিউজ মি বলে ডাক্তার চলে যায়।
মেঘ মাথা তুলে ডাক্তারের চলে যাওয়ার দেখে।
” সরি আপনাকে এসব বলা ঠিক হয় নি। আসলে খুব টেনশন হচ্ছিলো তোহার জন্য। আপনার দয়ায় আমার পরিবার চলে। ভেরি সরি।

চোখের পানি মুছে বলে নিপা। মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে তোহার কেবিনে চলে যায় নিপা।
মেঘ এখনও দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে আছে।
“সব কাজ বন্ধ এবার থেকে সবটুকু সময় তোহাকে দেবো। আমার টাকার প্রয়োজন নেই। আমার তোহা থাকলেই হবে।
মেঘ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে।

হাতে স্যালাইন চলছে তোহার। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে।
নিপা তোহার মাথায় হাত বুলায়। তোহা চোখ মেলে তাকায়। নিপাকে দেখে মলিন হেসে চারপাশে চোখ বুলায়। কিন্তু মেঘকে কোথাও দেখতে না পেয়ে মনটা বিষন্ন হয়ে ওঠে।
” আমার অসুস্থতার খবরও ওনাকে আমার কাছে আনতে পারলো না?

চলবে

#অভিমান
#পর্বঃ১৮
#তানিশা সুলতানা

তোহার অসুস্থতার খবর পেয়ে পরিবারের সবাই চলে আসে। তিন ঘন্টার মধ্যেই তারা হাজির হয় হাসপাতালে। সবার সাথেই তোহা কথা বলছে কিন্তু মনটা মেঘকে খুঁজছে। একটা আবারও মেঘ তোহার সামনে আসে নি। জিজ্ঞেসও করে নি কেমন আছো?
বেবির কথা শুনে মেঘ কি খুশি না? মনে মনে ভাবছে তোহা।
আকাশ এক দৃষ্টিতে দেখছে তোহাকে। ছয় মাসে পুরো পাল্টে তোহা। আকাশ এতোখন যাবৎ তোহার সামনে আছে একবারও তাকায় নি। কিন্তু আকাশ ভালোই বুঝতে পারছে তোহার টানাটানা চোখ দুটো মেঘকেই খুঁজছে।
কবুল শব্দটার কি শক্তি। এক নিমিষেই সব সম্পর্ক ভেঙে দেয়। মন জুড়ে থাকা অসীম ভালোবাসাকেও ভুলিয়ে দেয়। অচেনা অজানা মানুষটার প্রতি মায়া সৃষ্টি করে দেয়।
তোহার মা তোহাকে খাইয়ে দিচ্ছে। খানিকক্ষণ পরেই বড় ডাক্তার আসবে তোহাকে দেখতে।

আকাশ বেরিয়ে যায় তোহার কেবিন থেকে। ওখানে থাকতে একদম ভালো লাগছে না।
বাইরে এসেই দেখতে পায় মেঘ মাথায় হাত দিয়ে করিডোরে বসে আছে।
আকাশ ধপ করে মেঘের পাশে বসে। মেঘ এক পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার আগের মতো মাথায় হাত দিয়ে বসে।
“তোহা তোকে খুঁজছে।
একটু হাসে আকাশ।
তোকে বাহবা না দিয়ে পারছি না। কতো অল্প সময়েই মন জয় করপ নিলি তোহার। এতোটাই ইমপ্রেস করে ফেললি যে মেয়েটা তোকে ছাড়া কিছু বোঝেই না।
কিন্তু আফসোস কদর করতে পারলি না।
শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে আকাশ।
মেঘ উওরে কিছু বলে না। মনের মধ্যে ঝড় বইয়ে মেঘের।
” তুই বাবা হতে চলেছিস। তোর বউ প্রেগন্যান্ট। তুই কি খুশি না?
মেঘ উওর দিচ্ছে না বলে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আকাশ।
মেঘ উওর দেয় না। বেশ বিরক্ত আকাশ। এমনিতেও আকাশ মেঘকে পছন্দ করে না। তার কারণ আকাশ নিজের চোখে দেখে বাবা মা আর পরিবারকে মেঘের জন্য কাঁদতে। তাদের খুব কষ্ট দিয়েছে মেঘ। যে পরিবারকে কষ্ট দিতে পারে তাকে আকাশ ভালো বাসে না।
“শোন তোকে একটা রিকোয়েস্ট তোহাকে কষ্ট দিবি না তুই। তোর যত টাকা চায় আমি দেবো। আমার ভাগের সব টা তোকে দিয়ে দেবো কিন্তু তুই তোমাকে কষ্ট দিবি না।
মেঘের হাত ধরে বলে আকাশ৷ আকাশের চোখে পানি চিকচিক করছে। করুণা ভরা কন্ঠে বলে।
মেঘ অবাক হয়ে দেখছে আকাশকে। কতো ভালোবাসে তোহা। আর ও শুধুমাত্র কাজ কাজ করে।
মেঘ হাতটা সরিয়ে নেয়। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে নেয়।
” এখন যা তোহা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। তোকে দেখতে চাইছে।
আকাশ মেঘের হাত ধরে টেনে তুলে।
মেঘকে তোহার কেবিনে নিয়ে যায়।

মেঘকে দেখে তোহা চোখে মুখে মলিন হাসে। এতোখনের অপেক্ষার অবসান ঘটলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মেঘ তোহার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
“আরমান তৌফিককে নিয়ে যাও মিষ্টি নিয়ে এসো।
আনোয়ার চৌধুরী বলে ওঠেন।
” নাহহহহহহহহ
মেঘ হুংকার দিয়ে বলে ওঠে। সবাই চমকে তাকায় মেঘের দিকে।
“কেনো?
তোহার বাবা জিজ্ঞেস করে।
” আগে ডাক্তার তোহাকে চেকআপ করে বলে ও ঠিক আছে তারপর মিষ্টি।
গম্ভীর গলায় বলে মেঘ। মেঘের কথা শুনে সবাই থমকে যায়।
থমথমে মুখে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। মেঘ আর তোমাকে একটু একা সময় কাটাতে দিয়ে যায়।
আকাশ যাওয়ার সময় দরজাটা ভিরিয়ে দিয়ে যায়।
“আপনি এতোখন আসলেন না কেনো? আপনি কি রাগ করেছেন? বেবি হওয়াতে আপনি খুশি না?
তোহা এক বারে এতোগুলো প্রশ্ন করে বসে।
মেঘ তোহার মাথার কাছে টুল টেনে বসে।
তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কপালে লেপ্টে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে কপালে চুমু খায়।
” আই এম সরি। আর কখনোই এমনটা করবো না আমি। আমার উচিৎ ছিলো তোমাকে সময় দেওয়া। তুমি যেখন বলেছিলো তোমার মাথা ব্যাথা করছে তখনই তোমাকে ডাক্তার দেখানো। সব ভুল আমার।
বলতে বলতে চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে মেঘের। মেঘের চোখের পানি গুলো তোহার চোখের পাতায় পড়ে।
তোহা মুচকি হাসে। মেঘের এক গালে হাত দেয়।
“আপনার কোনো দোষ নেই। আমি ভাগ্য মানি। যেটা আমাদের কপালে লেখা আছে সেটা হবেই। কেউ ফেরাতে পারবে না। তো এটা নিয়ে নিজেকে দোষ দেবেন না। এটা হওয়ারই ছিলো তাই হয়েছে।
মিষ্টি হেসে বলে তোহা।
মুগ্ধ হয়ে দেখে মেঘ তোহাকে।কতোটা সিদ্ধ মেয়েটা। কতোটা স্বচ্ছ একদম পানির মতো।
তোহা মেঘের হাতটা তোহার পেটের ওপর রাখে। মেঘের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।
” এখানে তুবা আছে। আমাদের মেয়ে হবে। আর ওর নাম রাখবেন তুবা। কেমন?
মেঘের বুকের ভেতর দ্বিতীয় বার ধক করে ওঠে।
“এখনই কেনো বলছো? নামটা তুমিই রাখবা। দুজন এক সাথে রাখবো।
মেঘ পেটে গাল ছুঁয়িয়ে বলে।
তোহা কিছু বলে না। চোখ বন্ধ করে নেয়।
” অনেক অভিমান জমে আছে আপনার প্রতি। কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারবো না। আপনার বিধস্ত চেহারা আমি দেখতে পারবো না। থাক না কিছু অভিমান না বলা।না ই বা জানলেন আপনি। আপনি একটু গুরুত্ব দিলে আমি সারাজীবন আপনার সাথে থাকতে পারতাম।

দুপুরের পরেই চেকআপ করা হয় তোহাকে। ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে আনোয়ার চৌধুরী আরমান চৌধুরী তৌফিক আকাশ আর মেঘ খানিকটা দুরে দাঁড়িয়ে আছে।
ডাক্তার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” ওনার মাথার পেছনটা আগে থেকেই হয়। ফার্মেসি থেকে ঔষুধ খেয়ে দমিয়ে রেখেছিলেন। কয়েক মাস যাবৎ ব্যাথাটা বেড়েছে। সমস্যা টা গুরুতর হয়ে উঠেছে।মাথার ব্রেইনে একটা পর্দা পড়েছে। আগে থেকে ঠিকঠাক চেকআপ করে মেডিসিন নিলে ঠিক হয়ে যেতো। কিন্তু এখন উনি প্রেগন্যান্ট মেডিসিন নিতে পারবে না।
আসলে আমরা এখন বুঝতেই পারছি কি করবো?
ডাক্তার হতাশ হয়ে বলে।
সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। আদরের মেয়েটার মধ্যে এতোবড় রোগ দেখা দিয়েছে এটা কেউ মানতে পারছে না।
মেঘ নিজের চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
তোহার প্রতি একটু কেয়ারফুলি হয়ে এতোটা হতোই না।
“আমার বাচ্চা চাই না আমার বউকে সুস্থ করে দিন।
যত টাকা লাগে দেবো।
মেঘ চিৎকার করে বলে।
” দেখুন মিস্টার মেঘ
এখানে টাকার কোনো প্রশ্ন নেই। আমি মনে করি মানুষের জীবনের থেকে বড় কর কিছুই নেই। আমি টাকার জন্য মানুষকে চিকিৎসা করি না। সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের জন্য চিকিৎসা করি।
বাচ্চা টা না চাইলেও কিছু করার নেই। কারণ তিন মাসের বেশি হয়ে গেছে বেবি টার। এখন এবর্শন করতে গেলেও মিসেস মেঘের জীবনের ঝুঁকি থাকবে।
আকাশ চোখ বন্ধ করে হাত মুঠ করে নেয়।
মেঘ ধপ করে বসে পড়ে। চারপাশ শুন্য শুন্য লাগছে। তৌফিক হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। আনোয়ার চৌধুরীর চোখেও পানি। শক্ত হয়ে বসে আছে আরমান চৌধুরী।
“ডাক্তার কিছু একটা করুন।
” আপনারা ভেঙে পরবেন না। আমি হালকা কিছু মেডিসিন দিচ্ছি। এখন এগুলোই খাওয়াবেন। পঁনেরো দিন পরের চেকআপ করাবেন। আটমাসেই সিজার করতে হবে ওনাকে। তারপর পোপার্লি টিটমেন্ট শুরু করতে হবে। আল্লাহ যদি চান তবে সুস্থ হবেন ইনশাআল্লাহ কিন্তু আল্লাহ না চাইলে তো আর
কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘ ছুটে বেরিয়ে যায় ডাক্তারের কেবিন থেকে।
তৌফিক কান্না আটকাতে পারছে না। এক মাএ মেয়ে।

তোহাকে জানানো হয় নি কিছুই। সবাই তোহার সামনে স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। বুঝতে দেবে না তোহাকে।
নিপা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ কারণ তোমাকে নিয়ে যাবে ওনারা। নিপা তো একা হয়ে যাবে। দেখতে পারবে না তোহাকে।

“তোহাকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি তুমি কি যাবে আমাদের সাথে? না কি তোমার কাজ আছে।
আনোয়ার চৌধুরী জিজ্ঞেস করে মেঘকে।
মেঘ কোনো কথা না বলে চুপচাপ তোহার পাশে গিয়ে বসে গাড়িতে।
আকাশ ডাইভ করছে।
নিপা এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। শুভ ছাড়া কেউ দেখতে পায় না নিপার সেই কান্না। তোহা ক্লান্ত হয়ে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে মেঘের ওপর। নিপার কথা মনে নেই।
মুহুর্তেই শ শ করে দুটো গাড়ি চলে যায়।
নিপা এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। আর কি কখনো দেখা হবে তোহার সাথে? আর কি এক সাথে ভার্সিটিতে যেতে পারবে? পড়ন্ত বিকেলে ছাঁদে বসে গল্প করতে পারবে? আর কি তোহার লম্বা চুল গুলো আঁচড়ে দেওয়ার সুভাগ্য হবে নিপার।
” ভীষণ মিস করবো আমি তোমায় তোহা। ভীষণ মিস করবো।
চিৎকার করে বলে নিপা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here