#অভিমান
#পর্বঃ৯,১০
#তানিশা সুলতানা
০৯
তিনটা কোম্বল দেওয়া হয়েছে তোহার গায়ে তবুও কাঁপুনি কমছে না। ডাক্তার আর নার্সরা ভয় পেয়ে আছে। বাড়ি তো আর হাসপাতাল হয় না। তাদের মতো মতো ঔষুধ খাইয়ে দিয়েছে তবুও কাঁপুনি বা জ্বর কমার নামে নিচ্ছে না। বাড়ির কেউ এই ঘরে আসছেও না যে বলবে এখন ওকে হাসপাতালে এডমিন করানো প্রয়োজন। কি থেকে কি করবে ভাবতেই দরদর করে ঘাম ঝড়ছে ডাক্তার আর নার্সের।
“সিস্টার আপনি গিয়ে দেখুন বাড়ির লোকজনদের পান কি না।
ডাক্তার তারা দিয়ে বলে।
রাত বারোটা বাজে। যেযার মতো ঘুমচ্ছে। এগারোটার সময় শেষবার তোহার মা এসেছিলো তোহাকে দেখতে। তারপর বাবা আর বাকি সবাই এসে দেখা করে গেছে তোহার সাথে। তখন তোহা ঠিক ছিলো। তোহাই তো সবাইকে আশ্বাস দিয়েছিলো ঘুমতে যেতে ও ঠিক আছে।
তারপর মেঘ এসে দুটো ধমক দিয়ে পেপারে সাইন করিয়ে নিয়েছে সেই থেকেই তোহার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে।
আস্তে আস্তে তোহার কাঁপুনি টা কমতে থাকে। ডাক্তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ঘুমিয়ে পড়ে তোহা।
আজ মেঘের কেনো জানি ঘুম পাচ্ছে । চোখ বন্ধ করলেই তোহার মুখটা ভেসে উঠছে। ছুটে চলে যেতে মন চাইছে তোহার কাছে৷ কিন্তু আবার শেয়ারের নেশাটা যেতে না বলছে। নিজের রুমের বেলকনির বসে বেয়ার খাচ্ছে। থালার মতো চাঁদ উঠেছে আকাশে। চাঁদের চারপাশে তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। অপূর্ব এই দৃশ্য। আগে কখনো এভাবে রাতের আকাশটা দেখা হয় নি। কখনো মন খুলে আকাশের দিকে তাকানো হয় নি।
” পাশে বউ থাকলে মন্দ হতো না।
আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে মেঘ।
বউ এর কথা মনে আসতেই মনে পড়ে তোহার কথা। তখন তো তোহা খুব ভয় পেয়েছিলো।
বেয়ারের বোতলটা রেখে উঠে দাঁড়ায়।
রুম থেকে পানি এনে কুলি করে নেয়। চকলেট খেয়ে নেয় কয়েকটা যাতে গন্ধ না বের হয়। তারপর তোহার রুমে চলে যায়।
ডাক্তার আর নার্স তোহার পাশে বসে আছে। এখন একটু ভালো লাগছে।
মেঘকে রুমে ঢুকতে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
“স্যার আআপনি
ডাক্তার থেমে থেমে বলে।
” আপনারা যান এখন
শান্ত গলায় বলে মেঘ। ডাক্তার নার্স দুজন দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
“যেতে বলেছি
শক্ত গলায় বলে মেঘ।
তারাহুরো করে বেরিয়ে যায় ওনারা।
মেঘ তোহার ওপরে এতো ভারি ভারি এতো গুলো কম্বল দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। যদিও এখন শীত তবুও এতো শীত না।
একটা একটা করে কম্বল ফেলে দেয় মেঘ। তোহা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।
” ইডিয়েট গুলো। এদের ডাক্তার কে বানিয়েছে?
বিরবির করে বলে মেঘ।
গুটিশুটি করে কাচুমাচু হয়ে ঘুমিয়েছে আছে তোহা। ঘাম গুলো মুখে মুক্তোর মতো চিকচিক করছে। ছোট চুল গুলো মুখের ঘামে কপালে লেপ্টে গেছে। মেঘ তোহার পাশো বসে। সাদা লাইট অফ করে ডীম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। বেলকনির দরজা খোলা তাই বেলকনির দরজা দিয়ে একফালি চাঁদের আলো এসে পড়ে তোহার মুখের ওপর। ভীষণ মায়াবী লাগছে তোহাকে।
মেঘ আধশোয়া হয়ে তোহার মুখের ওপর থেকে ছোট চুল গুলো সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
তোহার কপালে চুমু দিতে গিয়ে থেমে যায় মেঘ। এা ঠিক হবে না। সরে আসে।
তোহার পাশে শুয়ে পড়ে।
মেয়েটার ঘাম কমছে না। মেঘ নিজের শার্ট খুলে মুখের ঘাম গুলো মুছে দেয়।
“এই মেয়েটা শুধু আমার।
ফোন বেজে ওঠে মেঘের। বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে মেঘ। বালিশে মাথা এলিয়ে দেয়।
” বল
বিরক্তি নিয়ে বলে মেঘ।
“বাসর কেমন কাটছে?
ইয়ার্কি মেরে বলে শুভ।
” বারোটা বাজালি তুই।
“সরি ইয়ার। আসলে খুব আর্জেন্ট একটা কথা ছিলো।
” বল
“সাহারা পার্কে মেয়েরা এসে বসে থাকে। আজকে তো ওই মারিয়া নামের মেয়েটা তো পাগল করে দিলো। সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল করে দিচ্ছে তুই না কি ওর হাবি। এ নিয়ে কিন্তু ভালো ঝামেলা হচ্ছে।
মেঘ চোখ বন্ধ করে নেয়।
” সকালের আগে সবটা ঠিক দেখতে চাই। মারিয়া নামটা যেনো চৌধুরী বাড়িতে না পৌছায়।
শক্ত কন্ঠে বলে মেঘ।
“তুই বুঝতে পারছিস না
কপালে হাত দিয়ে বলে শুভ।
“তুই বুঝতে পারছিস তো আমি কি বলছি? খুন করতে চাই না আমি। ভালো হতে চাই। তোহার সাথে বাঁচতে চাই। এখানে তো পোস্টের নাম আসতে দেবো না। যদি আসে তো
বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই তোহা নরেচরে ওঠে। মেঘ ফোন কেটে দেয়।
এখন আবার তোহার ঠান্ডা লাগছে। শরীর জ্বারিয়ে উঠছে। মেঘ একটা কম্বল তোহার গায়ে দিয়ে তোহার পেটের ওপর হাত দেয়। তোহা ঘুরে মেঘকে জাপ্টে ধরে মেঘের বুকে মাথা রাখে।
মেঘ প্রশান্তির হাসি হেসে তোহাকে আগলে নেয়।
” ভালোবাসি কি না জানি না। কিন্তু তোমাকে আমার চাই। খুব করে চাই।
ফজরের নামাজ পড়ে আয়েশা বেগম তোহার রুমে আসে তোহাকে দেখতে। দরজা খোলাই ছিলো। তোহার খাটের সামনে এসেই চমকে ওঠেন আয়েশা। মেঘ তোহার সাথে? এক রুমে?
মুখে হাত দেয় আয়েশা বেগম। মেঘ এতোটা উচ্ছনে চলে গেছে। একটা অসুস্থ মেয়ের সুযোগ নিয়েছে।
ডাকতে গিয়েও ডাকে না মেঘকে। খুব নিশ্চিতে ঘুমচ্ছে তোহা। তোহা যদি এটা জানতে পারে তাহলে তো খুব ভেঙে পড়বে।
এর বাকি সবাই জেনে গেলে মেঘ আর এই বাড়িতে থাকতে পারবে না। মেঘকে উনি ভীষণ ভালোবাসে।
দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে সোফায় বসে পড়ে আয়েশা বেগম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেঘ আর তোহার দিকে।
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভাঙে মেঘের। তোহার এলোমেলো চুলগুলো মেঘের মুখে এসে পড়েছে। এরকম একটা সকাল কখনোই মেঘ কল্পনা করে নি। তোহা এভাবে মেঘকে দেখলে আরও ভয় পেয়ে যাবে। মেঘের থেকে পালাতে চাইবে। খুব কাঁদবে। যেরকম কাঁদুনি স্বভাবের।
আস্তে আস্তে তোহাকে সরিয়ে উঠে বসে মেঘ।
চোখ ডলে সামনে তাকাতেই দাদিমার দিকে চোখ পড়ে।
কপালে ভাজ ফেলে তাকায় মেঘ।
“তুমি এখানে?
জুতো পড়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে মেঘ।
” তুমি এখানে কেনো? লজ্জা করলো না একটা অসুস্থ মেয়ের সুযোগ নিতে। মেয়েটা অসুস্থ মেঘ। এতটুকু মায়া হলো না তোমার।
চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে ওনার। রাগে থরথর করে কাঁপছে।
“আজিব সুযোগ কেনো নেবো?
কপালে ভাজ ফেলে বলে মেঘ।
” তাহলে তুমি এখানে কেনো? কোন অধিকারে তোহার পাশে ঘুমালে তুমি?
“বিয়ে করে নিয়েছি ওকে। তোমারা তো ছলনা করলে। কিন্তু আমি ওকে ছাড়তে পারবো না। তাই বিয়ে করে নিয়েছি। আপাতত রেজিস্ট্রি করেছি। ও একটু সুস্থ হলে ধর্মমত বিয়ে করবো। তো এখন থেকে আমি ওর সাথেই ঘুমাবো।
গড়গড় করে বলে মেঘ।
আয়েশা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
” কি বলছো তুমি?
“শুনতে পাও না? খুব তারাতাড়ি তোহাকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবো আমি।
আয়েশা বেগম চোখ বন্ধ করে নেয়।
মেঘ আয়েশা বেগমের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। চট করে চোখ খুলে আয়েশা বেগম।
” আমি অতোটা খারাপ না যতটা তুমি ভাবছো। কখনো ভলাো হওয়ার মতো কোনো রিজন পাই নি। বিলিভ মি আমি কখনোই তোহার হাত ছাড়বো না। ভীষণ পছন্দ করি ওকে আমি। তুমি তো আমার গ্রান্ডমাদার। তোমার থেকে তো কখনো কিছু চাই নি আমি। তবে আবদার করার রাইট আছে আমার। তোহারে চেয়ে নিচ্ছি আমি। আর প্রমিজ করছি খুব ভালো রাখবো ওকে।
করুন সুরে বলে মেঘ। আয়েশা বেগম কখনোই নাতির মুখে এমন আবেগপ্রবণ কথা শুনে নি। মেঘ রাজ চৌধুরী এতো আবেগী?
চলবো
#অভিমান
#পর্বঃ১০
#তানিশা সুলতানা
নতুন সূর্য নতুন কিছুর আগমন ঘটাবে তোহার জীবনে। এটা তোহা বুঝতেও পারছে না। ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে। ভীষণ শীত পড়েছে। চারদিক কুয়াশায় ঘেরা। ভোর রাতে কুয়াশা ছিলো ন কিন্তু এখন যত বেলা বাড়ছে কুয়াশার মাএাও তেমন বাড়ছে। নয়টা বাজে। কিন্তু কুয়াশার জন্য বলাটা বোঝা যাচ্ছে না। মাএই তোহার ঘুম ভেঙেছে। কেমন জানি মনে হচ্ছে তোহার পাশে কেউ ঘুমিয়েছিলো। কিন্তু কে ঘুমাবে? মা? হবে হয়ত।
গায়ে জ্যাকেট দিয়ে তারওপর চাদর নিয়ে বেলকনিতে যায় তোহা। হাত মুখ ধুতে আলসেমি লাগছে। বেলকনিতে গিয়ে মনটা ভালো হয়ে যায় তোহার। চারদিকের শিশির ভেজা পরিবেশ দেখে মুদ্ধ হয় তোহা।
রুম থেকে একটা টুল নিয়ে এসে বেলকনির রেলিং ঘেসে বসে পড়ে। গালে দুই হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
বাড়ির জন্য মনটা কেমন করছে। তোহাদের বাড়িতে কতো মানুষ। তোহার কাজিনরা আছে। তাদের সাথে মন খুলে কথা বলতে পারে তোহা নিজের পবলেম গুলো শেয়ার করতে পারে। পুকুরে লাফিয়ে লাফিয়ে গোছল করে। বিকেল হলে হাঁটতে বের হতো নদীর পারে। এখানে এসে ফেসে গেছে। এখানে মন খুলে কথা বলা যায় না। সব সময় চুপ করে থাকতে হয়। তারওপর আবার মেঘের ঝামেলা। সব মিলিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠছে তোহা।
এবার যত দ্রুত সম্ভব এখানে থেকে যেতে হবে। এতেই সবার মঙ্গল।
“তুমি এখানে কেনো?
হঠাৎ এমন একটা কথায় চমকে ওঠে তোহা। কন্ঠটা খুব চেনা তোহার৷ এটা সেই মানুষটাকে যাকে দেখলে তোহার হাত পা কাঁপতে থাকে। মন চায় পালিয়ে যেতে লোকটার থেকে।
চোখ বন্ধ করে নেয় তোহা। দিনের পরে দিন এই লোকটার অত্যাচার বেড়েই চলেছে। এটা তোহা আর মুখ বুজে মেনে নিতে পারছে না। রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছপ কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু কথা গুলো তো মুখ দিয়ে বের হয় না। মনে হয় এই জল্লাদ।
” কথা কানে যায় না? তোমার না শরীর খারাপ। তাহলে ঠান্ডার মধ্যে ওখানে কেনো বসে আছো? থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেবো তোমার।
চোখ মুখ শক্ত করে কর্কশ গলায় বলে মেঘ।
তোহা উওর দেয় না। গলা কাঁপছে।
মেঘ বেশ বিরক্ত হয়। সাথে রাগ টাও বেরে যায়। কতো বড় সাহস মেঘ রাজের কথার উওর দেয় না। অন্য কোনো মেয়ে হলে এতোখনে থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিতো। কিন্তু এই মেয়েটাকে কিছু বলতে পারছে না।
“উঠো
তোহার হাত ধরে বলে মেঘ। হাতটা খুব শক্ত করে ধরেছে মেঘ। তোহা হাতে ব্যাথা পাচ্ছে। নরম তুলতুলে হাতটাকে লোহার মতো শক্ত হাত দিয়ে শক্ত করে ধরলে ব্যাথা তো লাগবেই।
” আহহহ
বলে আর্তনাদ করে ওঠে তোহা।
মেঘ ভ্রু কুচকে ফেলে। সামান্য হাত ধরাতে কেউ ব্যাথা পায়। এটাও বিশ্বাস করতে হবে মেঘকে।
“কি হলো? পবলেম কি তোমার হ্যাঁ
রুমে চলো
হাত ধরে টান দিয়ে বলে মেঘ।
তোহার চোখ দিয়ে টুপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। শব্দ করে কেঁদে ফেলে।
মেঘ হকচকিয়ে যায়। হাতটা ছেড়ে দেয়। তোহার সামনে হাঁটু মুরে বসে মেঘ।
” কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেনো?
বিচলিত হয়ে বলে মেঘ।
তোহা নিজের হাতটা উঁচু করে দেখায় মেঘকে। মেঘ কপালে হাত দেয়।
“ওহহহ গড
তোমাকে ছোঁয়া যাবে না তুমি ব্যাথা পাও। এতো তুলতুলে কেনো তুমি? একটা বেবি হলে তো অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে তুমি। আমি যে কি করবো।
কিভাবে কোথায়,টাচ করবে? এখনো তো ফুলসজ্জা হলো না। এই ছিলো আমার কপালে।
আফসোসের সুরে বলে মেঘ।
লজ্জায় চুয়িয়ে যায় তোহা। কান গরম হয়ে গেছে। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না। লোকটা বাচ্চা পর্যন্ত চলে গেছে। সেটা আবার বড় মুখ করে বলছে। জিভ কাটা লোক একটা। একে তো তোহা কখনোই বিয়ে করবে না।
” আরে আরে লজ্জা পাচ্ছো কেনো? আমি তো এখনো টাচই করলাম না।
মেঘ খোঁচা মেরে বলে।
তোহা চোখ পাকিয়ে মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে এক দৌড়ে রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে যায়। দরজাটা ধরাপ করে বন্ধ করে দেয়।
তোহা যেতেই মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। খুব ভালো করেই চিনে নিয়েছে মেঘ তোহাকে। এই মেয়েটা কখন কাঁদতে পারে কি করলে কান্না থামানো যাবে সব মুখস্থ করে নিয়েছে মেঘ। খুব ভালোই ব্যাথা পেয়েছে হাতে। এখন মেঘ এমন উদ্ভট কথা না বললে তোহার কান্না থামতোই না। কান্না করে ভাসিয়ে দিতো।
“এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দেবে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি আমি।
চুল টেনে বলে মেঘ।
ড্রয়িং রুমে গোল মিটিং বসেছে। মেঘের কোম্পানির নতুন প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে। মেঘকে দেখাশোনা করতেই হবে। তারওপর আবার পিছে লোক লেগেছে মেঘকে বাঁধা দেওয়ার জন্য। পেছন থেকে কেউ ছুঁড়ি মারছে।
সন্ধার মধ্যে মেঘকে ঢাকায় ফিরতে হবে। আর মেঘ সাফসাফা বলে দিয়েছে যে তোহাকে নিয়েই ও ঢাকায় ফিরবে।
বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারও দেখিয়ে দিয়েছে। সবাই হতদম্ভ হয়ে বসে আছে। তোহার বাবা নিজের বাড়িতে গেছে। তোহার দাদিমা খুব অসুস্থ। তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।
আনোয়ার চৌধুরী আর আরমান চৌধুরী একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। তোহা মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই লোকটা এতোটা জঘন্য। এতো বড় নোংরা খেলাটা খেলতে পারলো তোহার সাথে? তোহার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ঠকালো তোহাকে?
কখনোই হ্মমা করবে না তোহা মেঘকে।
সবাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। তোহাকে কি করে আটকাবে সেটাই ভাবছে। আয়েশা বেগম ছেলেকে শান্ত হতে বলছে।
” তুমি আমার ছেলে এটা ভাবেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।
চেঁচিয়ে বলে আরমান। হাঁপানি রোগীর মতো হাঁপাচ্ছে। এমনিতেই হাই পেসার ওনার।
“ভাবেন না ছেলে আমাকে। আপনার ছেলে হওয়ার ইচ্ছে আমারও নেই৷ জাস্ট বউ নিয়ে নিজের প্রাসাদে যেতে চাইছি। পারমিশন নিতাম না বাট নিলাম।
পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে মেঘ। চোখে মুখে তাচ্ছিল্য।
” মেঘঘঘঘঘঘঘঘ
চোখ বন্ধ করে বসে পড়ে আরমান চৌধুরী।
“মামা আমি যাবো ওনার সাথে।
ঠোঁট চেপে কান্না আটকে বলে তোহা।
সবাই অবাক হয়ে তাকায় তোহার দিকে। মেঘ ঠোঁট মেলে হাসে। আকাশ চোখ বন্ধ করে নেয়। আকাশের বিশ্বাস ছিলো আর যাই হোক তোহা যেতে চাইবে না।
” কি বলছো তুমি? তুমি
তোহা নানাভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। কখনো মামা আর নানার সামনে মাথা তুলে কথা বলে নি তোহা।
“ভাববেন না। এই লোকটার নজরে পড়েছি আমি। আমাকে শেষ না করে উনি শান্ত হবে না। আমিও রেডি৷ দেখি উনি কি কি করে। আমিও দেখতে চাই উনি আমার সাথে ঠিক কি করে।
নাহয় মেরে ফেলবে এর বেশি কিছু তো আর না।
শেষের কথাটা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে তোহা। পৃথিবীতে সব থেকে ঘৃণিত মানুষ তোহার কাছে মেঘ। মেঘ চোয়াল শক্ত করে ফেলে৷ ভুল বুঝছে তোহা ওকে। অভিমান করেছে মেঘের ওপর।
চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরোনোর স য় তোহা কারো সাথে কোনো কথা বলে নি। শুধু মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে ছিলো। সেই চোখের চাহনিতে ছিলো হাজারো আকুতি। একটু ভরসা পাওয়ার আশা। গলা ফাটিয়ে মাকে বলতে ইচ্ছে করছিলো মা আমাকে যেতে দিও না। এই লোকটা আমাকে মেরে ফেলবে। আমি যেতে চাই না।
কিন্তু মা কিছুই করে না। হাসি মুখে হাত হারিয়ে বিদায় দেয় তোহাকে। মায়ের হাসি দেখে তোহার মায়ের ওপর অভিমান হয়। ভীষণ অভিমান হয়।
মেঘ যাওয়ার সময় একবারও কারো দিকে তাকায় না। আরমান চৌধুরী চোখ বন্ধ করে বসে আছে। বুকের ব্যাথাটা তার বেড়েই চলেছে। আকাশ নিজের রুমের জানালা দিয়ে তোহার চলে যাওয়া দেখছে।
” আই এম সরি তোহা। আমার জন্য আজ তোমার জীবনের এই অবস্থা।
চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে হাউমাউ করপ কেঁদে ওঠে আকাশ।
“আমার হ্মমা হয় না। আমার তো মরে যাওয়াই উচিৎ।
চলবে