অভ্র_নীল,১৩( বাসর রাত),১৪

0
1286

#অভ্র_নীল,১৩( বাসর রাত),১৪
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১৩ [বাসর রাত]
______

বাসর রাত____
অনেকক্ষণ ধরে এতোগুলো মানুষের সামনে বসে আছে কিছুটা অসস্তি হচ্ছে অচেনা এত গুলো মানুষের সামনে একা বসে আছে।
আর এত ভাড়ি ভাড়ি গহনা ড্রেস মেক-আপ জাস্ট বিরক্ত লাগছে।

নীল এর দিকে অনেক বার লক্ষ করেছেন মিসেস চৌধুরী দেখেই বুঝতে পারছেন মেয়েটার এই সব পড়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে।
তাই নিজের হাতের কাজ শেষ করেই একজন সার্ভেন্ট কে ডেকে বললেন উনার রুমে ৩০মিনিট পর এক প্লেট খাবার নিয়ে আসতে সার্ভেন্ট ওকে বলে চলে যায়।
মিসেস চৌধুরী সোজা নীল যেখানে বসে ছিলো সেখানে চলে যায় আর নীল এর সাথে কথা আছে বলে নীল এর হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে আসে। নতুন শাশুড়ী মার এমন আচরণে অনেকটাই অবাক হয়েছে নীল।
রুমে প্রবেশ করতেই দরজা বন্ধ করে দেয়।
আর নীলকে নিয়ে ডেসিনটেবিল এর সামনে টি টেবিলে বসায় মাথা থেকে উড়না খুলে দিলো!
নীল শুধু তাকিয়ে দেখছে কি না কি বলবে আর কি ভেবে বসবে তার ঠিক নেই!
নীল– শুনেছি শাশুড়ী রা দজ্জাল হয় মনে মনে বলে ঢোক গিললো! মনে মনে!
মিসেস চৌধুরী– ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি বাঘ ভাল্লুক নই! তোমার মা-র মতোই একজন মা আজ থেকে তোমার ও মা! কিছুক্ষণ পর কেউ দরজা নক করছে!
মিসেস চৌধুরী দরজা খুলে দেখে সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে এসেছে তার হাত থেকে খাবার ট্রে টা নিয়ে দরজা পুনরায় আটকে দিলেন!
নীল এর পাশে এসে বসলেন!
মিসেস চৌধুরী– জানি না কখন খেয়েছিস খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুই আমার বড় মেয়ে আর তোয়া আমার ছোটো মেয়ে! বলছে আর নীল কে খাইয়ে দিচ্ছে নীল আগে ভাবতো শাশুড়ী রা ভালো হয় না কিন্তু ওর শাশুড়ী কে না দেখলে বুঝতেই পারতো না সবাই খারাপ হয় না।
মিসেস চৌধুরী– কিরে কি ভাবছিস?
নীল– মা তুমি কি করে বুঝলে আমি কিছু ভাবছি?
মিসেস চৌধুরী– কারণ তুই যে আজ থেকে আমার মেয়েরে পাগলী মেয়ে! উঠে দাঁড়িয়ে নীল এর কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন।
নীল– এত ভালো শাশুড়ী হয় আমাকে এখনই কতো আদর করছে। মানে আমার আগের চিন্তা ভাবনা কি সব ভুয়া ছিলো
মিসেস চৌধুরী ১গ্লাস পানি নীল এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন- পানিটা খেয়েনে! অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে আমার রুমেই কিছুক্ষণ রেস্ট নে তারপর তোকে তোর রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোয়া ওরা আসবে।
রাত প্রায় ১২টা বাজতে চললো!
তোয়া ও ওর সাথে ওর ভাই বোনেরা সব গুলা এসে হাজির ভাবি কে নিতে এসেছে।
নীলকে নিয়ে অভ্রর রুমে প্রবেশ করালো।
পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো নীলকে খাটের মধ্যে খানে বসিয়ে ওরা সব চলে গেলো। বাহিরে এসে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে লক করে দেয়!
রাত ১২ঃ৩৪মিনিট অভ্রর আসার খবর নেই ওরা ওয়েট করতে করতে ঘুম চলে আসছে! হাহহহহ
রাত– ১২ঃ৫০ অভ্র আসছে আর এসেই দেখে সবগুলা ওর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
অভ্র– কি ব্যাপার সব এক সাথে আমার রুমের দরজার সামনে কি করছিস? যা সর রুমে গিয়া রুমা, সর সর ভেতরে যেতে দে।
সবাই সাথে সাথেই এক সাইডে চলে আসলো।
অভ্র– গুড! বলেই দরজার খুলতে যাবে দরজা লক!
অভ্র– ওয়া কি দরজা লক কেন? (ওদের দিকে তাকিয়ে)
তোয়া আর ভাই-বোন — আগে টাকা দাও তারপর ভেতরে যেতে দেবো দরজার লক ও খুলে যাবে।
অভ্র– টাকা কিসের টাকা?
তিথি– আরে অভ্র বিয়ে করেছিল ফুলসজ্জায় যাবি আর টাকা দিবি না তা কি হয়? (সব গুলা মিটমিটিয়ে হাসছে)
অভ্র– আমি কোনো টাকা টুকা দিতে পারবো না! বলেই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়
তিথি– আচ্ছা লাগবো না তোর টাকা ওই চল রে সবাই! ও এখানেই দাঁড়িয়ে থাকুক আমাদের কি।
সবাই হাঁটা দিলো।
অভ্র সবাইকে থামিয়ে!
অভ্র– ওই কই যায় কই যাস? চাবি দিয়া যা।
তিথী– দিতে পারি যদি টাকা দেস তো।
অভ্র বুঝতে পারলো আর কোনো উপায় নেই।
তাই বলেই দিলো আচ্ছা বল।
কত দেবো! মানিব্যাগ হাতে নিয়ে।
স্বপ্না– এই তো গুড বয়! দে ৫০.০০০ হাজার!
অভ্র– কিহহহ ৫০.০০০ হাজার যা সর দিমু না!
তিথী– বউয়ের কাছে যেতে চাইলে তো দিতেই হবে।
অভ্র– ওওও এই ব্যাপার! কিছুক্ষণ পর আচ্ছা দিচ্ছি আগে এক হাতে নিয়ে আমাকে চাবি দেখা।
তোয়া– এই তো চাবি! হাত জাগিয়ে।
অভ্র– এখুনি দিচ্ছি টাকা! বলেই মানিব্যাগ থেকে একটা ৫০ টাকার নোট বের করে বলে এটা কত র
টাকা?
শুভ্র– কেন ভাই ৫০!
অভ্র আরও একটি নোট বের করে আর এটা–
সারফারাজ– হাজার!
অভ্র– ঠিক কইছোস! এই লো তোদের ৫০হাজার (ডেভিল হাসি দিয়া)
তিথি’স্বপ্না’তিয়া– ভাই এইগুলা ঠিক না! (সেড ফেস বানিয়ে)

অভ্র– যা দিয়েছি তাতেই খুশি থাক আর নয়তো দিলাম তোদের আব্বুকে ডাক.! (অভ্র ফ্যামিলির সবার বড় ছেলে আর সব ভাই বোন ওর ছোটো)

তিথি’স্বপ্না’তিয়া– সব সময় এই গুলা বলেই ভয় দেখাস
অভ্র– তোয়া চাবি দে..!
তোয়া– অভ্রকে জমের মতো ভয় পায়! তাই চাবি দিয়ে দেয়!
আর বাকিরাও ভয় পায় কিন্তু সব সময় না। অভ্র একবার রেগে গেলে খুব ভয়ংকর এক ধমকে সবাই মুতে দেয়.

ওইদিকে— আকাশ শুভর ও একই অবস্থা টাকা না দিলে ঢুকতে দেবে না! বেচারা তাদের তো আর অভ্রর মতো বুদ্ধি নাই গেলো তাদের টাকা দিতেই হলো।

ওরা ওদের বাসর ঘরে ডুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় তারপর লাইটও অফ হয়ে যায় আর ওরা ঘুমিয়ে পড়ে! (এত বেশি লিখতাম না আমার লজ্জা করে)

অভ্র রুমে প্রবেশ করে দরজা লক করে! পেছনে ঘুরে দেখে বড় ঘুমটা দিয়ে ফুলে সাজানো বিছানার উপর নীল বসে আছে!
নীল এর কাছে গিয়ে বিছানায় বসে আর ঘুমটায় হাত দিয়ে তুলতে যাবে তখনই নীল অভ্রর হাত ঝাড়া দিয়ে দেয় শরীরের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে!
অভ্র বিছানায় কিনারে বসে ছিলো তাই তাল সামলাতে না পেরে ঠুস করে নিচে পরে যায়!
নীল লেহেঙ্গা ধরে বিছানা থেকে নেমে একটু দূরে সরে যায়!
অভ্র- কি করছো কি তুমি নীল? (নীচে বসে থেকেই জিজ্ঞেস করলো)
নীল- আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা ও করবেন না! আমি আপনাকে পছন্দ করি না জোর করে বিয়ে করেছেন এখন কি জোর করে পুরুষত্ব ফোলাবেন আমি আপনার স্ত্রী কাগজে কলমে কিন্তু আমি মানি না আপনাকে স্বামী বিয়ে করার আগে জিজ্ঞেস করেছিলেন বিয়েতে রাজি কি না জোর করে দেহ পাবেন মন পাবেন না. (এক নিশ্বাসে বললো নীল চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে)

নীল এর বলা শেষের কথা টায় অভ্রর প্রচুর রাগ উঠে চোখ চোখ বড় বড় ও লাল হয়ে যায় উঠে দাঁড়িয়ে নীল এর সামনে গিয়ে দুই বাহু চেপে ধরে বলে-
অভ্র– আমি তোমাকে ভালোবাসি! তাই নিজের করে নিয়েছি নিজের বুকে স্থান দিয়েছি। ভালোবেসে কাছে পেতে চাই।
জোর করে দেহ ভোগ করতে নয়। আমার ভালোবাসা কে অপমান করো না নীল তুমি ততদিন না আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে ততদিন তোমার কাছে আমি অভ্র চৌধুরী যাবো না তোমাকে ছোঁয়া তো দূরের কথা যাও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরো!
এই বলে নীল এর হাত ছেড়ে দিয়ে হনহনিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো! চেয়েছিল বাহিরে চলে যাবে কিন্তু বিয়ে বাড়ি আত্মীস্বজন রা সবাই নিচে আড্ডা দিতেছে ছোট ভাই বোনেরা গান বাজাচ্ছে তাই রুমের মধ্যে কি হয়েছে কেউ শুনতে পায়নি।
নীল অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল তারপর নিজের দুই বাহু দুই হাত দিয়ে ধরে বিছানায় বসতে বসতে যেইভাবে ধরে ছিলো মনে হচ্ছিল জেনো ভেঙেই ফেলবে আল্লাহ গো কি ব্যাথা করছে! শয়তান একটা (মুখ ভেংচি দিয়ে অভ্রকে নিয়ে নীল এর কোনো মাথা ব্যাথা নেই বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে ৫মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখায় ঘুমের দেশে লুটিয়ে পরে)

অভ্র বেলকনির দোলনায় বসে দুই হাঁটুর মধ্যে দুইহাত ভাজ করে বসে আছে নীল এর জায়গায় অন্য কেউ হলে আজ খেতো ধুমধারাকা?

অভ্র রাতে আর রুমে আসে না দোলনায় দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পরে।
অভ্রর কানে ভোরের আজানের ধ্বনি যেতেই ঘুম ভেঙে যায় দোলনা থেকে উঠে চোখ ঠলতে ঠলতে রুমে চলে আসে। এসে দেখে নীল কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে!
অভ্র নীল এর পাশে গিয়ে ওকে ডাকতে থাকে!
অভ্র – নীল উঠো ফজরের আজান দিচ্ছে নামাজ আদায় করে নাও.
২/৩ বার ডাকার পর নীল এর ঘুম ভেঙে যায় তারপর কোনো কিছু বলে না! চুপচাপ বসে আছে।
অভ্র বুঝতে পারে নীল ড্রেস চেঞ্জ করতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না।
অভ্র রুমের ড্রয়ার থেকে শপিং ব্যাগ বের করে এনে নীল এর সামনে বিছানায় রাখলো আর বললো শাওয়ার নিয়ে এটা পরে নিতে আসার সময় জেনো অযু করে আসে এক সাথে নামাজ পরবে।
নীলও মাথা নিচু করে হা বোধক মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়!
ওয়াশরুমের ভেতরে–
নীল– এমন বিহেভ করছে যেনো রাতে কিছুই হয় নাই কি জানি বাবা আমাকে যা বলছে আমি তাই করি!

১০মিনিট পর নীল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।
পড়নে গোলাপি আর নীল রঙের মধ্যে একটি গোল জামা সাথে ওড়না দিয়ে হিজাব পরে বের হয়েছে অভ্র নীল এর দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে ঘুরে যায় কারণ নীলকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে
বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবে নীল আসতেই অভ্র দৌঁড় দিলো ওয়াশরুমে ওযু করার জন্যে তারপরেই দু’জনেই ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়!
আজ তো নীল এর বৌ-ভাত..! নিজে অনেক কাজ বলে অভ্র চলে গেলো!
নীল চুপচাপ বেলকনিতে চলে গেলো বেলকনিতে গিয়ে নীল অনেকটা অবাক হলো কারণ এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল গাছ.!
বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে রুমে চলে আসে।
একা একা রুমে ভালও লাগছে না আর কিছু না ভেবে নীল সোজা রুম থেকে বেরিয়ে পরে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে!
ওইদিকে অভ্র ও এইদিকেই আসছে ফোন রেখে গেছে নিতে আসছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামছে কিছুটা ভয় পেয়ে নতুন বউ যদি কেউ কিছু বলে সেটাই ভাবছে হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ ভোওওও করে উঠলো নীল পেছনে তাকাতে যাবে পা স্লিপ করে পরে যেতে নিলো।
নীল– আহহহহহহহ
তোয়া— ভাবি……! (চিৎকার দিয়ে)
তখনই অভ্র নিচ থেকে নীলকে ধরে ফেললো!
নীল ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আর অভ্র নীল এর ভয় মাখানো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
কিছুক্ষণ পরে গিয়ে ব্যাথা কেনো পায়নি ভেবে চোখ খুলে দেখে ওকে ধরে রাখছে তারাহুড়া করে ওর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো পরে তোয়ার দিকে তাকিয়ে অভ্র তোয়া এখন যদি তোমার ভাবি পরে যেতো তখন কি হতো?
তোয়া– সরি ভাইয়া আমি বুঝতে পারিনি। সরি ভাবি
(কান্না মিশ্রিত কন্ঠে)
নীল– ইট’স ওকে।
অভ্র– এইরকম ভুল জেনো আর না হয়!
তোয়া– ওকে।
অভ্র চলে গেলো ওর রুমে!
তোয়া নীল এর সামনে এসে।
তোয়া– কোথায় যাচ্ছো ভাবি?
নীল– আমি তো কিছুই চিনি না কোথায় আর যাবো রুমে একা একা ভালো লাগছিলো না তাই নিচে যাচ্ছিলাম।
তোয়া– আসো তোমাকে আমাদের বাড়ি চিনাই… হিহিহি
নীল– আচ্ছা চলো।
তোয়া নীল কে নিজের সাথে করে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো।
তোয়া– ভাবি এটা আমার রুম!
নীল– আচ্ছা খুব সুন্দর পরিপাটি ও সাজানো গোছানো!

তোয়া– হিহিহি! সব সময় থাকে না ভাইয়ার ভয়ে গুছিয়ে রাখি। ভাইয়া অগোছালো জিনিস পছন্দ করে না তাই
নীল– ও আচ্ছা!
তোয়া– হুহ এখন চলো বাকি জায়গা দেখিয়ে আসি!
নীল মাথা নাড়ালো মানে হ্যাঁ..
তারপর এক এক করে সব কিছু দেখাচ্ছে আর বলে দিচ্ছে কোথায় কি আছে কোনটা কি কার রুম কোনটা বাড়িতে কে কে আছে আরও অনেক কিছু সব শেষে সাদে চলে আসে!
নীল সাদে এসে আবারও অবাক হয়।
এখানেও ফুলের বাগান সাদের এক পাশে সব ধরনের ফুল গাছ আর দেখে মনে হচ্ছে কেউ গাছগুলোর বেশ যত্ন নেয়। তাই এত সুন্দর!
তোয়া– কি হলো ভাবি চলো!
নীল– তোয়া এই বাগান?
তোয়া– ওও এইগুলো ভাইয়া করে ভাইয়ার আবার ফুল বাগানের অনেক সখ নিজেই সব দেখা শোনা করে আর যখন থাকে না তখন একটা সার্ভেন্ট করে!
আর তোমাদের রুমেও তো বেলকনিতে ভাইয়া জঙ্গল করে রাখছে বলতে গেলেই ধমক খেতে হয় তাই কেউ কিছু বলে না।
চলো এখন নিচে যাই।
নীল– হুম চলো!
এত ক্ষণে প্রায় ৭টা বাজতে চললো!
সবাই নাস্তা খেতে বসে যায় নীলকেও বসতে বলে মিসেস চৌধুরী তারপর নেক্সট পার্টে বলবো?

Part -19

নাস্তা শেষ করে সবার যার যার কাজে লেগে পড়ে৷ নীলকে সাজানোর জন্য ততক্ষণে পার্লার থেকে মেয়ে চলে আসে!
দীর্ঘ ২ঘন্টা পর!-
নীলকে সাজানো শেষ হয়, পার্লারে লোকেরা চলে যায়।
আর বিশ্লেষণ দিতে পারবো না বৌ ভাতের অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আছে শুধু খাওন আর খাওন ওইভাবেই ভেবে নেন।
বিয়ের ৩ দিন পর থেকে-!
৩দিন পর থেকে বলছি কারণ এই ৩দিন নীল অতি অবহেলা করেছে + ইগনোর করেছে, নীল এর এই ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে কাজের বাহানায় অফিসেই রাত পার করতো অভ্র.

তিন দিন পর থেকে সেই আগের ন্যায় অভ্র নীলকে কলেজ ড্রপ করে অফিস যাচ্ছে আবার ছুটির টাইমে এসে ওকে বাড়িতে ড্রপ করে দিচ্ছে এভাবেই চলছে।
এদিকে বাড়ির সবার সাথে নীল এর খুব ভালো বন্ডিং হয়ে গেছে,, সবাই ওকে নিজের করে নিয়েছে এবং নীল ও সবাই কে আপন করে নিয়েছে।
তোয়া ছোটো থেকে ছোটো ব্যাপারে ভাবি ভাবি বলে দৌঁড়ে আসে। আর মিসেস চৌধুরী মিস্টার চৌধুরী নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে খেয়াল রাখে নীল এর তাই নীলের ওদের আপন করতে দেরি হয়নি কিন্তু অভ্র কে কেনো মেনে নিতে পারছে না! এই প্রশ্নের উত্তর ও পেয়ে যাবেন খুব শীঘ্রই.

বিকেল বেলা নীল ও তোয়া প্রতিদিন সাদে যায় দু’জনে বেশ গল্প করে সাথে গাছ গুলোতে পানি দেওয়া সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা গাছ গুলো ঠিল ঠাক মতো বিদ্ধি পাচ্ছে কি না এই আর কি।
সন্ধ্যায় চৌধুরী ফ্যামিলির সবাই হল রুমে এক সাথে বসে গল্প করছে নীল আর তোয়া ও তাদের কাছে গিয়ে সোফায় বসে পরে।
সবাই টুকটাক কথা বলছে! অভ্র বিজনেস এর মিটিং নিয়ে কিছু একটা বলছে।
আর সামনে টেবিলের উপর রাখা আছে আপেল আর ছুঁড়ি নীল এর অনেক ইচ্ছে করছে একটা আপেল কেটে খেতে নীল আপেল যে খুব একটা পছন্দ করে তেমন না কিন্তু এখন কেনো জানি খেতে ইচ্ছে করছে। আর কিছু না ভেবেই খোপ করে একটা আপেল নিলো আর ছুঁড়ি টা নিয়ে আপেল কাটতে যাবে তখনই তোয়া বলে ভাবি সাবধানে কেটে জেনো না যায়, নীল- এই ব্যাপার না কিচ্ছু হবে না বলেই ছুঁড়িতে একটু চাপ দিতেই
নীল— আহহহহ।
নীল এর চিৎকার শুনে বসা অবস্থায় সবাই নীল এর দিকে তাকায় হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে নীল এর চুইচুই করে রক্ত বের হচ্ছে অভ্র সোফা থেকে উঠে দৌঁড়ে এসে নীল এস হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে। আর তোয়াকে বলে ফাস্ট টড বক্স নিয়ে আসতে এখনি অভ্র খুব শক্ত ও চেপে ধরে রেখেছে হাত তাই আর রক্ত বের হতে পারছে না। কিন্তু হল রুমের মেঝে ভরে গেছে নীল এর রক্তে আর নীল এর ড্রেস রক্তে চুপচুপা হয়ে গেছে।
তোয়া আসতেই খুব সু্ন্দর ও যত্ন করে নীল এর হাত ব্যান্ডেজ করে দেয় অভ্র নীল অন্য দিকে ঘুরে আছে ব্যাথায় গুঙরাচ্ছে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
ব্যান্ডেজ করা শেষ হতেই।
অভ্র- চোখ কোথায় থাকে তোমার সাবধানে কাজ করতে পারো না আর পারোই না যখন অন্য কাউকে বলতে সে কেটে দিতো তোমার লা পর্বার জন্য কত খানি কেটে গেছে ২/৩ কেজি রক্ত পড়েগেছে
২/৩ কেজি কথাটা শুনে নীল হেসে দেয়।
অভ্র– দেখো আবার হাসছে।
মিসেস চৌধুরী– অভ্র এমনেই মেয়েটার হাত কেটে গেছে আর তুই এখন উল্টো বকছিস। থাম তোয়া তুই নীলকে ওর রুমে নিয়ে যা,, নীল মা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তোমাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে।
নীল– এই টুকু কাটার জন্য হাসপাতাল ডাক্তার কেনো? কোনো দরকার নেই। এমনি ঠিক হয়ে যাবে।
অভ্র– মা যা বলেছে তাই হবে যাও তারাতাড়ি।
দুজনেই চুপচাপ রুমে চলে আসে।
১০ মিনিট পর নীল রেডি হয়ে নীচে চলে আসে।
অভ্র নীলকে নিয়ে হসপিটাল চলে যায়,,
ডাক্তার শেখ অভ্রর বাবা ছোটো বেলার বন্ধু + ওদের পারিবারিক ডাক্তার, নীল যখন রেডি হতে রুমে গিয়েছিল তখন অভ্র উনাকে কল দিয়েছিল উনার এখন অনেক পেশেন্ট সিরিয়াল থাকার জন্য উনি যেতে পারবে না নীলকে নিয়ে উনার চেম্বারে যেতে।
অভ্রর নাক মুখ লাল হয়ে আছে বেশ রেগে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
চেম্বারে….!…
ডাক্তার আঙ্কেল ব্যান্ডেজ খুলে খত টা দেখলে আর নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয় তারপর প্রেসক্রিপশনে কয়েকটা ঔষধ আর একটা মলম লিখে দেয়।
তারপর ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে পরে।
অভ্র গাড়ি ড্রাইব করছে নীল মাথা নিচু করে ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ করেই গাড়ি থেমে যায় নীল মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে বাজারে ফলের শপের সামনে গাড়ি ব্রেক করেছে অভ্র, নীল চুপ করে বসেই আছে অভ্র সীট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে যায় হেঁটে ফলের শপের সামনে গিয়ে দেখে দেখে প্রায় ৬/৭ কেজি সব ধরনের ফল কিনলো।
তারপর গাড়িতে উঠে আবার আগের ন্যায় কার ড্রাইব করছে মাঝে মধ্যে নিজের এক হাত দিয়ে কপালে এসে পরা চুলগুলো সরাচ্ছে ভাবছে নীল একবার হলেও তাকাবে না কিন্তু না ভেটকি মাছ চুপ করে নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে মনে মনে বলে আবার ড্রাইবিং এ মনোযোগ দেয়।
রাস্তায় জ্যাম থাকায় আসতে কিছুটা লেট হয়েছে।
কার পার্ক করে বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাচ্ছে, কলিং বেলের শব্দ পেয়ে একটা সার্ভেন্ট যাচ্ছিল দরজা খুলতে তাকে বাধা দিয়ে মিসেস চৌধুরী বললেন। আমার ছেলে আর বউমা আসছে আমিই দরজা খুলবো। তুমি যাও।
সার্ভেন্ট– ওকে ম্যাম।
মিসেস চৌধুরী দরজা খুলেই- আসছিস তোরা? এত লেট হলো কেনো?
নীল– মা ওই রাস্তায় জ্যাম ছিলো তাই।
মিসেস চৌধুরী- আচ্ছা এখন আয় ভেতরে আয়!
অভ্র– তুমি দরজা খুললে কেনো সার্ভেন্ট রা সব কোই?
মিসের চৌধুরী– করিম আসছিলো দরজা খুলতে তোরা আসছিস ভেবে আমিই তাকে বাধা দিয়ে নিজেই খুললাম বলতেই মিসেস চৌধুরীর চোখ পড়তেই
এই গুলো কি এত তোর হাতে?
অভ্র– ও হ্যাঁ নাও ধরো। সব গুলো প্যাকেট মিসেস চৌধুরীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে।
মিসেস চৌধুরী– কিন্তু এগুলো কি?
অভ্র– ফল সবগুলো।
মিসেস চৌধুরী- সব গুলো পাগল হয়েছিস নাকি এত ফল আনতে গেলি কেনো? বোকার মতো।
অভ্র সোফার উপর নিজের কোট খুলে রাখতে রাখতে উত্তর দিলো– সব গুলো নীল এর জন্য,
নীল চোখ বড় বড় করে মিসেস চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে এ ছেড়া কি কইতাছেডা কি মাথার তার কি ছিড়ছে নাকি এত গুলা ফল নাকি আমার জন্য মানুষ না রাক্ষস মনে করে নাকি ও সরি থুক্কু রাক্ষসী মনে করে নাকি! এই ছেড়া কি পাগল হইছে নাকি (মনে মনে)
মিসেস চৌধুরী– তুই কি পাগল হয়েছিস নাকি এত গুলো ফল ও একা কি করে খাবে?
অভ্র– জানি না কিন্তু সব গুলো ওকেই খেতে হবে আর যদি তা হয় বুঝোই কি করবো।
মিসেস চৌধুরী– কিন্তু বাবা শোন।
অভ্র- কোনো কিন্তু না মা ও ফল কাটতে গিয়ে হাত কেটেছে তাই ওকে ফল দিয়েই শাস্তি দেওয়া হবে আর হা যা রক্ত বের হয়েছে সব তো পূরণ হতে হবে। তাই আর কোনো কথা না সব গুলো ওকেই খাওয়াবে আমি রুমে যাচ্ছি রেডি হয়ে অফিস যাবো!
সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে– ও হ্যাঁ নীল আর দু দিন কলেজ যাওয়ার কোনো দরকার নেই বাড়িতে থেকেই রেস্ট করবে! বলেই হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপর চলে গেলো।
নীল– মা এত গুলো ফল.! কান্না জড়িত কন্ঠে
মিসেস চৌধুরী নীল এর মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু করার নেই রে মা বলেছে যখন করতেই হবে। আর কোনো উপায় নেই।
নীল– তাই বলে সব গুলো।
মিসেস চৌধুরী– তুই রুমে গিয়ে রেস্ট কর যা আমি কিছু ফল কেটে সার্ভেন্ট দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি!
নীল- মা এখনই ফল!
মিসেস চৌধুরী– হুম এখনই
নীল– আচ্ছা আমি তোয়ার রুমে যাচ্ছি।
মিসেস চৌধুরী– আচ্ছা যা তোয়া তোর কথা অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলো এখনো আসছিস না কেনো এই সেই অনেক কিছু যা দেখা করে আয়।
নীল সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে সোজা তোয়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করবে তখনই শুনতে পায় তোয়া কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
নীল ও ফাজলামো করে দরজার পাশে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করছে।
তোয়া– বাবু আমিও তোমাকে খুব মিস করছি সোনা ময়না জাদু কলিজা আলাবু আলাবু উম্মাহ উম্মাহ
আরও অনেক কিছু.
নীল এবার দরজা নক না করেই ভেতরে চলে এলো দরজা লক ও করেনি মেয়েটা দরজা খোলেই বাবু সোনা করছে। মনে মনে।
হাত হাত কোমড়ে দিয়ে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
ফোনের ওপাশ থেকে– বাবু তোমাকে কতদিন দেখি না তোমাকে অনেক মিস করছি তুমি একটা উম্মাহ দেও না বাবু।
তোয়া– একটু আগেই তো কতো গুলা দিলাম।
— এখন আরেকটা দাও আর বড় করে দিবা।
তোয়া শুয়া থেকে উঠে বসে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে কান থেকে সরিয়ে ঠোঁটের কাছে নিয়ে — উম্মমমমমমমমমমমমমাহহহহহহ বলে পেছনে ঘুরতেই।
ফোনটা হাত থেকে টুপুস করে বিছানায় পরে যায়।
তোয়া তোতলিয়ে– ভা… ভা… ভাবি… তু.. তুমি ক..খন এলে?
নীল– ওই যে তখন যখন তুমি সোনা বাবু জানু কলিজা নাড়িভুড়ি উম্মাহ উম্মাহ করতে ছিলা তখন।
তোয়া– কিহহহহহ? হা করে?
নীল– মুখ বন্ধ করো আর নয়তো মশা ডুকে পরবে।
তোয়া মুখ বন্ধ করে নেয়।
তোয়া– ভাবি প্লিজ কাউকে বইলো না আমাকে মাইরাই ফেলবে ভাইয়া আমাকে. (কান্না কান্না কন্ঠে)
বিছানায় বসতে বসতে নীল- এই টুকু বয়সে প্রেম করছো আর এখন ধরা পরে বলছো জানলে মেরেই ফেলবে?
তোয়া– ভাবি প্লিজ?
নীল- ২টা শর্তে কাউকে বলবো না! যদি রাজি থাকো তাহলে ভাবতে পারি।
তোয়া- হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার সব কথাতেই আমি রাজি যা বলবা তাতেই রাজি।
নীল– আগে শুনে তো নাও শর্ত কি।
তোয়া- শুনতে হবে না আমি রাজি।
নীল- কিন্তু আমি তো বলবোই। শুনো এই-যে আমার হাত দেখছো এটা তো জানোই কিভাবে কাটছে আমার এখন শাস্তি ফল কাটতে গিয়ে হাত কেটেছে এখন ফল দিয়েই শাস্তি দিয়েছে ৭/৮ কেজি ফল আমার একলা খেতে হবে তো তোমার শাস্তি হচ্ছে আমার সাথে আমার সাথে ফল তোমাকে শেয়ার করতে হবে ৪ কেজি তোমার খেতে হবে।
তোয়া– কি বললা ভাবি এত গুলা আমি একলা খাবো কিভাবে?
নীল– জানি না শর্ত এটাই আর দ্বিতীয় শর্ত তোমার সোনা বাবুর সম্পর্কে সম্পর্কে আমাকে সব বলতে হবে।
তোয়া– সেটা না হয় বলবো ভাবি কিন্তু এত গুলা ফল
নীল– ফলের ব্যবস্হা আমি পরে করে নেবো এখন তোমার লাভ স্টোরি বলো।
তোয়া তারপর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীলকে সব কিছু খুলে বলে।
নীল অবাক হয়ে — ২ বছরের প্রেম মানে তুমি ক্লাস 7 থেকা প্রেম করো?
তোয়া– হো ভাবি!
ওইদিকে অভ্র ফোন নিয়ে চলে যায়।
মিসেস চৌধুরী ফল কেটে নিজেই নিয়ে আসছেন।
বউ শাশুড়ী ননদ খুব গল্প করছে আড্ডা দিচ্ছে আর নীল ভুলিয়ে ভালিয়ে ওনাদের কেও ফল খাওয়াচ্ছে। রাত ০৯টা সবাই ডিনার টেবিলে ওয়েট করছে কিন্তু অভ্রর আসার খবর নেই অফিসে কাজের চাপ অনেক বেশি।
অনেকক্ষণ ওয়েট করার পর, তোয়া অভ্রকে কল দেয়,
১বার কল বাজার পর দ্বিতীয় বার অভ্র কল রিসিভ করতেই
তোয়া- ভাইয়া তুমি কখন আসবা?
অভ্র– আমার আসতে লেট হবে সবাই ডিনার করে নে আর নীলকে খাওয়ার পর মেডিসিনের কথা মনে করিয়ে দিস।
তোয়া- ওকে ভাইয়া রাখি।
কল কেটে দিয়ে বললো।
তোয়া– ভাইয়া বলছে তার আসতে লেট হবে সবাইকে খেয়ে নিতে আর ভাবি তোমাকে বলতে বলছে খাওয়ার পর মেডিসিন খেয়ে ঘুমাতে।
নীল অনেকটা অবাক হলো কারণ অভ্র অফিসে কাজ করছে সেখানেও ওর কথা ভুলেনি ওর ঔষধের কথা ঠিক মনে আছে।(মনে মনে)
নীল– হুম খেয়ে নেবো।
নীল এর হাত কাঁটায় মিসেস চৌধুরী নীলকে খাইয়ে দিচ্ছে এটা দেখে তোয়া একটু হিংসুটে কন্ঠে বললো।
তোয়া- বড় মেয়েকে পেয়ে সবাই ছোটো মেয়ের কথা ভুলেই গেছে হুহহ
মিসেস চৌধুরী– আরে হিংসুটে মেয়ে আয় তোকেও খাইয়ে দিচ্ছি।
তোয়া- হা। তারপরে মিসেস চৌধুরী দুই মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছেন।
নীল- আমি আর খেতে পারবো না আম্মু আমার এমনিতেও ফল খেয়ে পেট ভরে গেছে আর না প্লিজ আর খেলে আমার পেট ফেটে যাবে।
তোয়া– সেইম আম্মু আমিও আর খাবো না।
মিস্টার চৌধুরী– এত ফল এক সাথে খেয়েছো কেনো তোমরা? (খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলেন)
মিসেস চৌধুরী– স্বাদ আর শখ করে খায়নি। তোমার বজ্জাত ছেলে ফল কাটতে গিয়ে হাত কেটেছে তাই ৭/৮ কেজি ফল কিনে এনেছে আর সব গুলো নীলকে খেতে হবে এরা নীলের পানিশমেন্ট।
মিস্টার চৌধুরী- কি? কি বলো? এত ফল ও একা কি করে খাবে?
মিসেস চৌধুরী– তোমার ছেলেকে তো আবার কিছু বলাও যায় না রাগে গোজ গোঁজ করে কার মতো হয়েছে কে জানে।
তোয়া, নীল- আচ্ছা আমরা শুতে গেলাম গুড নাইট!
মিস্টার চৌধুরী- গুড নাইট!
মিসেস চৌধুরী- গুড নাইট তবে তোয়া রুমে গিয়েই পড়তে বসবে আর নয়তো ঘুমাবে ফোন ঘাটাঘাটি একদম করবে না!
তোয়া- আম্মু কি যে বলো না আমি কি ফোন ঘাটাঘাটি করি না আনতাজি… ( একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
নীল– কি বললা আবার বলো তো..! (তোয়ার দিকে ঘুরে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে)
তোয়া– হিহিহি কিছু বা ভাবি চলো আমরা যাই। বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে চলেগেলো। যার যার রুমে চলে গেলো। রুমে কেউ নেই নীলের বেশ ভালোই লাগছে।

ঘড়ির সময় রাত প্রায় ১১ঃ৩৯
অভ্র এখনো আসেনি নীল বিছানার উপর শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পরে বিছানার এক পাশে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে পেছনে একটু ঘুরলেই খাট থেকে নিচে পরে যাবে!

ঘড়ির কাটা টিক টক টিক টক করে চলেই যাচ্ছে!

সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।
রাত ২টা বেজে ৪০মিনিট হঠাৎ বাড়ির মেইন গ্যাটে কয়েকবার কলিংবেল বাজার শব্দ পেয়ে একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয় আর অভ্র ভেতরে ঢুকে পরে।
অভ্র– এতক্ষণ লেগেছে কেনো দরজা খুলতে সেই কখন থেকে দাড়িয়ে ছিলাম।
সার্ভেন্ট– ছোটো সাহেব ক্ষমা করবেন আসলে অনেক রাত হয়েছে তো তাই ঘুমিয়ে গেছিলাম।
অভ্র– আচ্ছা যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।
সার্ভেন্ট– আপনার খাবার সাহেব?
অভ্র– না না তার দরকার নেই। আমি অফিসেই খেয়েছিলাম। যাও ঘুমাও বলে অভ্র সিঁড়ি চড়তে লাগল রুমের সামনে এসে দেখলো রুমের লাইট অন করা আর দরজাও খোলা তার মানে কি নীল এখনো ঘুমায়নি
বলে রুমে প্রবেশ করে দেখে বিছানার উপর ৩/৪টা বই রাখা আছে বা পরে আছে অগোছালো উলোট পালোট করে ফেলছে মেয়েটা সোফার উপর কোট খুলে ছুঁড়ে মারলো আবার পেছনে তাকালো এবার দেখতে পাচ্ছে নীল একদম খাটের কিনারে শুয়ে আছে….

#চলবে …..?

#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১৪
______
নীল একদম খাটের কিনারে শুয়ে আছে……
অভ্র নীলের পাশে এসে দাঁড়ালো বুঝতে পারছে না কি করবে। ওকে ডাকলে তো ওর ঘুম ভেঙে যাবে আর ওকে যে একটু দরে সরিয়ে দেবে সেটার ও উপায় নেই কারণ নিজের কথার খেলাফ করে না একবার বলেছে নীল না চাইলে ওকে স্পর্শ করবে না মানে করবে না!
বিছানার উপর থাকা বই গুলো নিয়ে জায়গা মতো বুক স্টোরে রেখে দিলো। বাহিরে বেশ শীত পরেছে রুমের মধ্যেও শীত পরছে নীল শীতে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বিছানার উপর থেকে কম্বল নিয়ে নীলের উপর দিয়ে দিলো নীলও ঘুমের মধ্যে কম্বল পেয়ে জাপ্টে ধরলো যেনো ও কম্বলের জন্যই অপেক্ষা করছিলো অভ্র নীল এর এই কান্ড দেখে মুচকি হাসলো তারপর বিছানার পাশে মেঝেতে হেলান দিয়ে বসে পরলো। নীল পেছনে পরতে গেলো অভ্রর সাথে লেগে পরবে না এটা ভেবে সারা রাত সেখানে বসেই পার করে দিলো। শরীর ক্লান্ত ছিলো বলে বসে বসেই বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
সকালে….!
নীল ঘুম থেকে উঠে বসে দেখলো ওর উপর কম্বল দেওয়া বিছানার উপর বইগুলো ও নেই কিন্তু রাতে শুয়ার সময় বই গুলো এখানেই ছিলো আর ও তো কম্বল ও নেয়নি তাহলে কিভাবে কি ভাবতে ভাবতেই দেখতে পেলো খাটের পাশেই মেঝেতে বসে ঘুমাচ্ছে অভ্র আর নীল খাটের একদম সাইডে নীলের এইটা বুঝতে আর বাকি রইলো না যে বই অভ্র সরিয়েছে আর কম্বলও অভ্র-ই দিয়েছে।
কিন্তু অভ্র এখানে কেনো ঘুমিয়েছে এটা ৫মিনিট ভাবার পর অভ্র আমি পরে যাবো ভেবে এখানে বসে ঘুমিয়ে যায়নি তো আবার আমি তো অনেক ফিল্মে এমন টা দেখেছি। ইশশ বেচারা সারারাত এখানে বসে বসে ঘুমিয়েছে কত কষ্টই না হয়েছে ডাক দিবো কি কিন্তু কিছু যদি বলে এত কেনো ভালোবাসেন আমাকে আপনি? এই বলে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে আসলাম একটা পিংক কালারের শাড়ি নিয়ে আসছি তোয়া বলেছিলো ও আজকে শাড়ি পরবে তাই আমিও পরবো হিহিহি শাড়ি কোনো ভাবে পেচিয়ে রুমে আসলাম কিন্তু মনে হচ্ছে না এটা শাড়ি পরা হয়েছে শাড়ির কুঁচি ধরে এদিক সেদিক করতে করতে রুমে ঢুকছিলাম হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেলাম আর ঠাসস পরে পরে গেলাম অসভ্য লোক আমি পরে গেছি ধরবে তা না করে হি হি হা হা হু হু করে হাসছে কেমনডা লাগে এখন আপনারাই বলেন।
আমি পরে গেছি আর আপনি হাসছেন উঠতে উঠতে বললাম চোখে দেখেন না না-কি কোন দিকে তাকিয়ে চলেন যে আমার মতো লম্বা মানুষ টাকে দেখলেন না!
আচ্ছা তুমি কোন দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলে যে আমাকে দেখতে পেলে ন?
নীল– আপনাকে দেখতে আমার ভয়েই গেছে! হুহহ (মুখ ভেংচি দিয়ে)
কি কিছু বললে? (অভ্র)
এটা কি পরেছে শাড়ি পরতে জানো না শুধু পেঁচিয়ে রাখছো?
নীল– না জানি না তো আপনার কি? এখন সরুন সামনে থেকে আমি তোয়ার কাছে যাবো শাড়ি ঠিক করার জন্য। (মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে)
আজ পর্যন্ত নীল অভ্রকে ঠিক মতো দেখেইনি।
অভ্র– আমারই তো সব সোনা আসে আমিই পরিয়ে দেই।
নীল– এই না আপনি ছুবেন না আমাকে।
অভ্র– না ছুঁয়েও পড়ানো যায়।
নীল– কিভাবে? (ভ্রু কুচকে নিচের দিকে তাকিয়ে)
অভ্র- তোমার একটা শাড়ি দাও আমাকে।
নীল- কেন কেন?
অভ্র- যা বলি তাই করো শাড়ি নিয়ে আসো।
নীল আর কিছু না বলে একটা শাড়ি নিয়ে আসলো অভ্র শাড়িটা নেওয়ার জন্য অবশ্য হাত বাড়িয়ে ছিল কিন্তু নীল শাড়িটা সোফার উপর রেখে দেয়,
অভ্র- উফফ এই মেয়েটাকে যে কি করবো।
সোফার উপর থেকে শাড়িটা নিলো তারপর অভ্র আমি যেভাবে যেভাবে করবো সেভাবে সেভাবে করবেই ঠিক আছে।
নীল- হ্যাঁ।
তারপর অভ্র নিজে একটু একটু করে শাড়ি পড়ছে আর সেইভাবে দেখে দেখে নীল নিজে শাড়ি পরছে।
শাড়ি পরা শেষ একদম পারফেক্ট (অভ্র)
নীল একটু আড়চোখে অভ্রর পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো শাড়ির কুঁচি দেখে হাসি আটকে রাখতে পারলো না হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
অভ্র- ও হাসলো কেনো এটা বলে পেছনে ঘুরতেই রুমের বড় আয়নায় নিজেকে আবিস্কার করলো। ওও সিট আমি আর শাড়ি আল্লাহ কেউ দেখলে মান সম্মান ইজ্জত একটারও কোনো টাই থাকবো না থুক্কু তিন টাই তো এক। এই বলে শাড়ি খুলে সোফার উপর ছুড়ে মারলো আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
হল রুমে সবাই নীলকে দেখে অবাক কারণ দেখে মনে হচ্ছে শাড়ি অভ্র নিজে হাতে পরিয়েছে। তোয়া আর বাকি বোনেরা যখন ছোটো ছিলো তখন অভ্রই ওদের শাড়ি পরিয়ে দিতো তাই সবাই নীলকে দেখে ভাবছে শাড়ি অভ্রই পরিয়ে দিয়েছে।
মিসেস ও মিস্টার রাজ চৌধুরী নিজেদের দিকে তাকাচ্ছেন আর মুচকি হাসি দিচ্ছেন।
নীল– মা বাবা তোমরা হাসছো কেনো?
মিস্টার চৌধুরী– না রে মা এমনি বলে আবার ও চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।
মিসেস চৌধুরী– তোকে তো শাড়ি বেশ সুন্দর লাগে মাশা আল্লাহ কারো নজর জেনো না লাগে।
এখন চলো ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি।
মিস্টার রাজ- হু চলো। দু’জনেই চলে গেলো।
তোয়া- ভাবি শাড়ি কি তোমাকে ভাইয়া পরিয়ে দিয়েছে নাকি?
নীল- না তো আমি পরেছি।
তোয়া- ভবস এই ভাবে শাড়ি শুধু ভাইয়া পরায় সত্যি বলো।
নীল- তোমার ভাইয়া পরাই নাই সে দেখিয়ে দিছে আমি পরেছি।
তোয়া– ও কিন্তু ভাইয়া পরিয়ে দিলে বেশ ভালো হত কত রোমান্টিক সিন…(একটা ডেভিল হাসি দিয়ে)
নীল- বেশি পেকে গেছো তুমি খেতে চলো এখন।
তোয়া– হু চলো।
কিছুক্ষণের মধ্যে অভ্র ও রেডি হয়ে নিচে চলে আসে। ঘাড়ে হাত দিয়ে রাখছে আর উফ উফ করছে।
ডাইনিং টেবিল..
মিসেস চৌধুরী- কি হয়েছে বাবা তুই ঘাড়ে হাত দিয়ে রাখছিস কেন?
অভ্র- ওই কিছু না মা শুধু ব্যাথা করছে নাড়াতে পারছি না।
মিস্টার চৌধুরী- রাতে ঘুমিয়েছে কিভাবে যে ঘাড় ব্যাথা করছে আর আজ তো চায়নিজ দের সাথে মিটিং আছে তোমার সমস্যা মিটিং করবে কিভাবে?
অভ্র– আমি ঠিক সামলে নেবো।
নীল- আমি কিছু করতে পারি।
তোয়া- তুমি কি করবে ভাবি?
নীল- সেটা করলে ১মিনিটেই ঘাড় ব্যাথা ঠিক হয়ে যাবে।
অভ্র নীলের দিকে তাকিয়ে আছে নীল তোয়ার দিকে।
মিসেস চৌধুরী- কি সেটা।
মিস্টার চৌধুরী- যা করার কর মা কিন্তু ওকে সুস্থ করে দে।
নীল- তোয়া আমাকে বেলুন এনে দিতে পারবে!
(এই বেলুন সেই ফুটকা ফুলানোর বেলুন না, এটা রুটি বেলার বেলুন)
মিসেস চৌধুরী- আমি সার্ভেন্ট কে বলছি এখনি দিয়ে যাবে ওয়েট।
তারপর একটা সার্ভেন্ট এসে বেলুন দিয়ে যায়।
নীল সেটা নিয়ে ঠিক অভ্রর পেছনে দাঁড়ায় তারপর অভ্রর যে পাশে ঘাড় ব্যাথা সেখানে বেলুন দিয়ে পলিশ করছে মানে রুটি বেলার মতো করছে আরকি।
বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে মালিশ করায় অভ্রর ঘাড় ব্যাথা নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
এতে সবাই নীল এর প্রশংসা করে শুধু অভ্র বাধে।
অভ্র- আজ বিকালে তিয়া তিথি স্বপ্না আসবে আর কিছুদিন এখানেই থাকবে।
তোয়া– উফ বেশ মজা হবে।
অভ্র- আমার শেষ আমি উঠলাম, আর হ্যা শুধু মজা করলে হবে না পড়তেও হবে।
নীল– আমারও শেষ।
মিস্টার চৌধুরী– আমিও উঠি গেলাম।
নীল আর তোয়া হল রুমে এসে টিভির সামনে বসে পরে। অভ্র সেখানে এসে দাড়িয়ে পরে তারপর একটা সার্ভেন্ট কে বলে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসতে।
তারপর নীলের পাশে বসে হাতের পুরাবো ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে নতুন ব্যান্ডেজ করে দেয় আর মেডিসিন নীল এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরে।
যাওয়ার আগে মিসেস চৌধুরী কে বলে যায় ফুডস দেওয়ার জন্য বার বার বলে যায়।
তোয়া- চলো ভাবি আমার রুমের বেলকনিতে যাই সে খানে মাঠে খেলা হচ্ছে আমার বেলকনি থেকে দেখা যায়।
নীল– হু চলো।
তোয়া– আম্মু আমরা আমার রুমে যাচ্ছি।
মিসেস চৌধুরী– আচ্ছা যা আমি সেখানে ফল পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নীল – আবার ফল।
তোয়া- জীবনটা তেনা তেনা!
বেলকনিতে কিছুক্ষণ আগেই সার্ভেন্ট এসে ফল দিয়ে গেছে এক গাদা দু’জনেই বিরক্তি নিয়ে খাচ্ছে কত আর খাওয়া যায়।
নীল – একটা কাজ করলে কেমন হয়?
তোয়া কি কাজ ভাবি?
আমাদের কে এখন কেউ দেখছে না তো ফল গুলো ওই মাঠে খেলছে ছেলেদের ডেকে দিয়ে দেই।
তোয়া- অস্থির আইডিয়া কিন্তু ভাবি পোলাপান গুলা ফল নিবে কিভাবে।
নীল– কেন বলের মতো কেচ ধরবে।
এই বলে দুই জনেই ছেলেগুলো কে ডাকা ডাকি শুরু করলো বাচ্চা গুলো দৌঁড়ে আসলো তারপর এক এক করে সবাইকে সব ফল দিয়ে দিলো বাচ্চা গুলো ফল পেয়ে বেশ খুশি।
আর ওরাও খুশি খাওয়া থেকে তো বাঁচলো।
দুপুরে মিসেস চৌধুরী তোয়া নীল লাঞ্চ করে যার যার রুমে চলে আসে।
মিস্টার চৌধুরী কল দিয়ে আগেই বলে দেয় তারা লাঞ্চে বাড়ি আসতে পারবে না।
নীল রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে।
বিকাল ৪টা কারো চিল্লা চিল্লিতে নীলের ঘুম ভাঙ্গে।
রুম থেকে হল রুমে এসে দেখে তোয়া তিয়া স্বপ্না তিথি বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হাসছে।
নীলকে দেখে তিয়া- ভাবি এসো।
তিথি- আমার পাশে বসো।
স্বপ্না- কেমন আছো ভাবি?
নীল– আলহামদুলিল্লাহ ভালো! তোমরা?
তিথি- আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো।
স্বপ্না- বিয়ের দিন তো ঠিকঠাক ভাবে পরিচয় হয় নাই আজকে আমরা প্রচুর আড্ডা দিবো ওকে।
তিয়া– একদম ঠিক বলছিস।
মিসেস চৌধুরী- মেয়েরা অনেক তো আড্ডা দিয়েছো এই না-ও এখন ফল খাও সবাই!
নীল– তোয়া!
তোয়া- ভাবি যাক এই বার আমরা ছাড়াও অন্যরা এই ফল খাচ্ছে আল্লাহ বাঁচাইছে।
নীল– ঠিক বলছো তোয়া।
নীল– হ্যাঁ হ্যাঁ খাও খাও সব শেষ করতে হবে কিন্তু তোমাদের। ওরাও খেয়ে নেয় ভালা মানুষের মতো।

রাত ১১ টা এখনো অফিস থেকে বাড়ি ফিরেনি।
সবাই ডিনার করে যার রুমে চলে গিয়েছিলো।
তিয়া তিথি স্বপ্না নীল আর তোয়াকে রুম থেকে সাথে করে সাদে নিয়ে আসে এবং দীর্ঘ ১ঘন্টা ধরে দুনিয়ার সব পেঁচাল পারতাছে।
নীল- মেয়েরাও লুচি হয় ওদের না দেখলে জানতামই না।( মনে মনে)
তিথি– ভাবি তোমার কখনো কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো না?
নীল– না!
তিয়া– বলো কি আমাদের তো ৪/৫টা করে আছে একটা গেলে আরেকটা।
স্বপ্না– আমাদের অভ্রর ও কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো না ও কখনো কোনো মেয়ের প্রতি আগ্রহ দেখায় নাই।
তিথি– অভ্র তো জাতির ক্রাশ!
তিয়া– শুনেছিলাম অভ্রর নাকি ছোটো বেলায় একটা বান্ধবী ছিলো নাম জানি না। তাকে নিয়ে অভ্র রোজ ডায়েরী লিখতো এখন লিখে কি না জানি না। ছোটোবেলার বন্ধুত্ব হঠাৎ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তারপর অভ্র বাংলাদেশে এসে ওই মেয়েটাকে অনেক খুঁজে ছিলো কিন্তু পায়নি। আর এই বার এসে তোমাকে পেয়ে গেছে।
নীল- ওওও..!
তিথি- ভাইয়ার মধ্যে তোমার কি বেশি ভালো লাগে?
নীল– নিশ্চুপ!
তিয়া- অভ্রর গালে তিলটা বেশ কিউট তিলটার জন্য বেশি কিউট লাগে অভ্রকে তাই না বলো ভাবি।
নীল– কিছু না বলেই হ্যাঁ বলে দেয়!
তোয়া– কিন্তু!
স্বপ্না তুই চুপ থাক।
তিথি– ভাবি অভ্র ভাইয়াকে কি তুমি এখনো ঠিক মতো দেখনি নাকি?
নীল– কেনো?
তিয়া– কারণ অভ্রর গালে কোনো তিল নেই।
নীল– উফফ (বলে মাথা নিচু করে আছে)
তিথি– ভাইয়াকে কি তোমার পছন্দ নয়?
স্বপ্না- ভাইয়া পুরাই কিউটের ডিব্বা আর তুমি তোমার স্বামীর গালে তিল আছে কি না জানো না।
নীল– আসলে……..!
আর কিছু বলতে যাবে পেছন থেকে অভ্র আরে তোরা সবাই এখানে আড্ডা দিচ্ছিস আর আমাকে ছাড়া নোট ফেয়ার।
রাত ১২টা!
তিয়া– ও তোর আসার সময় হয়েছে।
তিথি– হুম তুই তো আকাশের চাঁদ তোকে তো খুঁজেই পাওয়া যায় না!
অভ্র- হয়েছে আর বলিস না অফিসে এত কাজ ছিলো না সব শেষ করতে করতে লেট হয়ে গেলো।
তারপর বল সব কেমন চলছে।
আরও ১ঘন্টা সব গুলা সাদে বসে আড্ডা দিলো।
রাত ১টা অভ্র ধমকে সবগুলোকে রুমে পাঠিয়ে দিলো আর নীলকে সাথে নিয়ে রুমে চলে আসে। নীল বিছানায় বসে আছে অভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে নীল এর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরে। নীল কিছুটা অবাক হলেও পরে কিছু বলে না কারণ অভ্রর হাতে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসছে মানে ব্যান্ডেজ করতে আসছে।
আর সেটাই করছে।
নীল অভ্রর ফেস দেখার চেষ্টা করছিলো কিন্তু দেখতে পারছে না কারণ অভ্র মেঝেতে বসেছে সাথে ওর লম্বা ঘন চুল গুলো কপালের উপর পরে আছে তাই শুধু চুলই দেখা যাচ্ছে।
এত চেষ্টা করেও দেখতে পায় নাই।
অভ্র উঠে গিয়ে সোফাতে শুয়ে পরে। নীল বিছানায় শুয়ে আছে আজ কিছুতেই নীলের ঘুম আসছে না শুধু বারবার মনে পরছে ছোটোবেলার কথা।
অভ্র সারাদিনের ক্লান্তির জন্য ঘুমিয়ে পরে।
নীল ছোটোবেলায় যখন ৮বছর রোজ পার্কে যেতো আর সেখানেই একটা ছেলের সাথে দেখা হয়েছিলো ছেলেটার সাথে কথা বলে ও দু’জনেরই ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয় দুই জন দুই জনের নাম দেয় পরী আর মেঘ.
হঠাৎ একদিন ছেলেটা পার্কে আসে না পরী খুব টেনশন করে কিন্তু সে আসে না। সেদিন পরী বাড়ি ফিরে যায়। তারপরেও ২দিন মেঘ আসে না পরী নিজের মধ্যে ভেঙ্গে পরে অনেক কান্নাকাটি করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মেঘের সম্পর্কে পরী কিচ্ছু জানতো না এমন কি ওর নাম টাও জানতো না! তারপরের দিন আগের ন্যায় পরী তার মেঘের জন্য অপেক্ষা করছিলো বেশ কিছুক্ষন পর একটা গাড়ি আসলো আর পার্কে ঠিক পরীর সামনে এসে থামলো। গাড়ি থেকে নামলো মেঘ পরীর সামনে এসে বলে সে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে বিদেশ পড়াশোনার জন্য কিন্তু ও কখনোই পরীকে ভুলবে না পরী সব সময় মেঘের মনে থাকবে। পরী যেনো তার মেঘকে কখনোই ভুলে না যায় মেঘ ফিরে আসবে আর পরী জেনো মেঘের জন্যে অপেক্ষা করে। পরীও তার মেঘকে প্রমিস করে ছিলো যত যাই হয়ে যাক পরী মেঘের থাকবে আর তার জন্যই অপেক্ষা করবে তারপর মেঘ চলে যায়। পরী সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো পাথরের মতো আর অঝরে অপলকভাবে তাকিয়ে ছিলো মেঘের যাওয়ার দিকে। আর নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে নোনাজল বেয়ে পরছে।
সেদিনের পর আর মেঘ ফিরে আসেনি। মেঘের অপেক্ষাতেই ছিলো পরী কিন্তু মাঝ খান থেকে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ডুকে পরলো অভ্র চৌধুরী! এইসব ভাবতে ভাবতেই নীলের চোখ গেলো অভ্রর উপের সে ঘুমিয়ে আছে শীতে কাঁপা-কাঁপি অবস্থা নীল বিছানা থেকে নেমে অভ্রর কাছে গিয়ে অভ্রর গায়ে কম্বল মুড়ে দেয় আর নীলের চোখ গিয়ে পরে উপর আর চোখ আটকে যায়। এক অদ্ভুত নেশালো চোখে তাকিয়ে আছে অভ্রর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ নীলের ধ্যান ভেঙ্গে যায়। নীল সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে বিছানায় ধপ করে বসে পরে এই প্রথম আজ নীল অভ্রকে দেখেছে পাশেই পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় কি করতে যাচ্ছিল নীল তুই অন্য কারো মায়ায় পরতে পারিস না তুই শুধু মেঘের পরী আর কারো না এই বলে অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পরে। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে।
নীল– আজ কি আমি কলেজ যেতে পারবো।
অভ্র – হুম পারবে কিন্তু আমি ড্রপ করে দিয়ে আসবো।
নীল– সেটাই তো করছেন দীর্ঘ দেড় মাস ধরে। (মিনমিন করে বলে)
তিথি– কিছু বললে ভাবি?
নীল– না কিছু না।
তিয়া– অভ্র আজ কিন্তু বিকালে অফিস থেকে চলে আসবি আমরা সবাই বাহিরে ঘুরতে যাবো।
অভ্র- আমি চেষ্টা করবো।
স্বপ্না- চেষ্টা নয় আসতেই হবে।
অভ্র- আচ্ছা ওকে বাবা ওকে।
মিসেস চৌধুরী– তোদের ৩জনের কত্তো বড় অভ্র, আর তোরা তুই তুই করে বলিস এখনো, ছেলেটার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তো ভাইয়া বল।
তিয়া, তিথি, স্বপ্না- বলবা না ফুপি! চাঁচি আম্মু!
তারপর নীলকে সঙ্গে নিয়ে অভ্র চলে গেলো।
কলেজে ড্রপ করে দিয়ে অফিস চলে যায় অভ্র এদিকে কলেজে এতদিন পর কেমন কেমন জেনো লাগছে। ক্লাসে প্রবেশ করে শুধু কাজল ওর সিটে বসে আছে আর বাকি স্টুডেন্ট রা ওদের সিটে শুধু খালি পরে আছে তানজু আর তানিয়ার সিট।
নীলকে দেখে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে কাজল আরে কত্তো দিন পর দেখা বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে।
কত কথা বলার বাকি কত কিছু।
নীল– তানজু, আর তানিয়া কোই
.
.
.

#চলবে …..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here