#অভ্র_নীল,২৪,২৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_২৪
মেসেজ সেন্ট করে ফোন বুকের সাথে মিশিয়ে গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে দুই চোখ বেয়ে অনবরত পানি জড়ছে.!
অভ্র সবে মাত্র মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে এসে বসছে সাথে আকাশ ও শুভ…!
আকাশ- ভাই আজকে তুই আঙ্কেল এর সাথে সিলেট চলে গেলে আমরা দু’জন কিছুতেই মিটিং সামলাতে পারতাম না।
শুভ- কারেক্ট ছে….!
নিলয়- কক্ষে প্রবেশ করে…!
নিলয়- অভ্র স্যার…! একটা কথা বলার ছিলো… মনে হচ্ছে খুব ইমপোর্টেন্ট.!
অভ্র- হুম বলো….!
নিলয়- স্যার আপনার ফোনে অনেকগুলো কল আসছে।
অভ্র- কার?
নিলয়- জানি না স্যার আননোন নাম্বার!
অভ্র- তাহলে রেখে দাও…. এখন দেখতে পারবো না পরে দেখবে এমনেই মিটিংয়ের জন্য টায়ার্ড হয়ে গেছি।
শুভ- ওদের নেকামি গুলা দেখে আমার ইচ্ছে করছিলো একটা ঘুসি দিয়ে নাক ভেঙে দিতে এমনিতেই লেইট করে আসছে তার পরে আবার নেকামি শুরু করছিলো।
আকাশ- আমারও সেম শুধু ক্লাইন্ট বলে বেঁচে গেলো।
নিলয়- স্যার সাথে একটা মেসেজ ও আছে আপনি প্লিজ একটু চেক করেন অনেক গুলো কল দিয়েছে আপনি মিটিংয়ে ছিলেন তাই দিতে পারিনি।
অভ্র- উফফ নিলয়! দাও ফোন দাও না দেখা পর্যন্ত তো আবার তুমি ছাড়বে না নাছোড়বান্দা বলি হারি তুমি।
নিলয়- এই যে ফোন!
অভ্র ফোন হাতে নিতেই ৩০মিসড কল…!
দেখে কৌতূহল বসত লক খুলে আগে মেসেজ দেখে।
আননোন নাম্বার- অভ্র প্লিজ হেল্প মি..! (জোরে জোরেই পড়ল অভ্র)
আকাশ- কে হেল্প চাইছে তোর কাছে?
অভ্র- জানি না!
শুভ- তুই ভালো করে নাম্বার টা দেখ!
অভ্র- হুম!
অভ্র– ০১৩৮৬৯৮৭৫**
২বার নাম্বার চেক করার পর।
অভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
আকাশ- কি হয়েছে?
শুভ- কিরে এভাবে দাঁড়ালি কেন?
অভ্র- এই এই নাম্বার তো
আকাশ- কার নাম্বার.!
ওইদিকে দ্বিতীয় লোক- দেখ এখানে থাকা সেফ না আমাগো জানিসই তো ওই ভাঙ্গা বাড়িতে ভূত আছে যার জন্য রাতে এই রাস্তায় রাতে মানুষ আহে না চল পালাই।
প্রথম লোক- ওই ওই ঠিক কইছে চল যাইগা।
সন্যগয়না টাকা তো পাইছিই..!
তৃতীয় লোক- ওই মাইয়ারে আমি…!
দ্বিতীয় লোক- চল চল মাইয়ারে পরে দেখিস আগে ভূতের হাত থেকা তো বাঁচি..!
তৃতীয় লোক- চল..
তিনজনেই লিডারের কাছে যাচ্ছে।
নীল ভূতের কথা শুনে জেনো বরফের মতো জমে গেছে নীল যেই গাছটার নিচে বসে আছে তার পাশেই বাড়িটা…
নীল ওরা যেতেই উল্টো খোলা মাঁঠের দিকে দিলো দৌঁড়…!
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আর একটু হলেই পানিতে পরে যেতো সামনে একটা বড় পুকুর,, আশে পাশে শুধু কয়েকটা বড় বড় গাছ অনেক দূরে দূরে তাও…!
রাতের অন্ধকারে তেমন কিছে দেখা যাচ্ছে না।
নীল- আল্লাহ আজ কি সব বিপদ তুমি আমার উপরেই দিয়েছো এখন কোথায় যাবো আমি প্রথমে ওই লোকগুলো পরে ভূত এখন পানি….!
বলে নীল পেছনে ঘুরতেই দেখলো।
কি জেনো একটা ওর দিকে হেঁটে আসছে ছোটো একটা আর চোখে লাইট জ্বলছে।
নীল- ভূতততততততত…! (নীল ভূত ভেবে চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে সেখানেই পরে যায়)
শুভ- তোতলানো বন্ধ করে বল! কার নাম্বার?
অভ্র- এটা নীল এর নাম্বার! নীল আমাকে এত গুলো কল দিয়েছিলো কেনো আর হেল্প চেয়ে মেসেজেই বা দিয়েছে কেনো নীল তো বাড়িতে…!
আকাশ- তুই সিউর এটা নীল এর নাম্বার?
অভ্র- আমার বউয়ের নাম্বার আমি চিনবো না!
শুভ- তারাতাড়ি কল বেক কর!
অভ্র তারপর সাথে সাথেই কল বেক করে।
কিন ফোন বন্ধ?
(নীল পরে যাওয়ায় ওর হাত থেকে ফোনটাও পরে বন্ধ হয়ে যায়)
অভ্র- ওর ফোন বন্ধ বলছে। কেবিনের মধ্যে পায়চারি করছে আর বার বার কল দিচ্ছে।
শুভ- আন্টিকে কল দে…!
অভ্র সাথে সাথে মিসেস চৌধুরী কে কল দেয়।
মিসেস চৌধুরী কল রিসিভ করতেই।
অভ্র- মা নীল কোথায় ওর ফোন বন্ধ কেনো?
মিসেস চৌধুরী- নীল কে বেয়াই বেয়ান নিতে আসছিলো ওদের বাড়ি গেছে।
অভ্র- কি আমাকে বলো নি কেনো আগে?
মিসেস চৌধুরী আর কিছু বলার আগেই অভ্র কল কেটে দেয়!
অভ্র- নীল আমাদের বাড়িতে নেই ওদের বাড়িতে গেছে।
আকাশ- তাহলে রিলাক্স থাক!
শুভ- রিলাক্স কিভাবে থাকবে ভাবি ওখানে থাকলে অভ্রকে এতগুলো কল + ওই মেসেজ কেনো দিতো অভ্র তুই আঙ্কেল কে কল দে!
অভ্র মিস্টার সরকার কে কল দিয়। দুইবার রিং হওয়ার পর মিস্টার সরকার কল রিসিভ করেন রাত এখন ১১টার একটু বেশি বাজে…!
মিস্টার সরকার- হ্যালো বাবা বলো এত রাতে কল দিলে?
অভ্র- বাবা আপনি আমার সাথে নীলের….
আর কিছু বলতে না দিয়ে মিস্টার সরকার বললেন।
মিস্টার সরকার- নীল তোমাকে সব বলে দিয়েছে?
অভ্র- কি বলবে?
মিস্টার সরকার- কি জানি বাবা আমি তো জানি না। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম বলেছিলো শুধু তোমাকে বলবে তোমাকে জানাতেই হবে।
অভ্র- ও এজন্যই কল দিয়েছিলো।
মিস্টার সরকার- হ্যা অনেক ইমপোর্টেন্ট কথা নাকি বলবে অনেক টেনশনেও ছিলো।
অভ্র- আচ্ছা নীল এখন কোথায় ফোন বন্ধ কেনো?
মিস্টার সরকার- কি বলো তুমি নীল তো রাতে না খেয়েই ডিনার টেবিল থেকে উঠে যায় তোমাদের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়েছে তোমাকে কি জেনো বলতেই হবে।
অভ্র- আপনাদের বাড়িতে নেই।
মিস্টার সরকার- নাহ,, নীল তোমাদের বাড়িতে যায়নি তো কোথায় গেলো আমার মেয়ে?
অভ্র- না না বাবা নীল আমাদের বাড়িতে পৌছে গেছে আমি এখনো অফিসে আর মা বলেছিলো আপনাদের সাথে নীল আসছে তাই আপনাকে কল দিলাম টেনশন করবেন না আমি এখনি বাড়ি যাচ্ছি।
মিস্টার সরকার- আচ্ছা বাবা রাখি আমার মেয়ে এতদিন পরে এসেও থাকতে পারেনি তোমার জন্য চলে গেছে ওকে নিয়ে একদিন এসে কেমন আমাদের ও ভালো লাগবে।
অভ্র- জি বাবা।
আকাশ – কি হলো ব্যাপারটা?
অভ্র- নীল ওদের বাড়িতেও নেই আমাকে কি একটা ইমপোর্টেন্ট কথা বলার জন্য নয়টার আগেই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে কিন্তু আমার বাড়ি পর্যন্ত নীল পৌঁছায় নাই রাস্তায় নীল এর কোনো বিপদ হয়েছে নীল আমাকে বলেছিলো নীল যদি কোনো দিন বিপদে পরে তাহলেই আমাকে কল দিবে তর আগে কল দিবে না আর আজ নীল সত্যি সত্যি বিপদে পরেই আমার কাছে হেল্প চেয়েছে আর আমি বলেই চিৎকার দিয়ে টেবিলের উপর সব ফেলে দেয় ফাইল টেবিল ল্যাপ আরও সব কিছু নিচে পরে যায়।
অভ্র- আমার নীল এর যদি কিছু হয় আমি সব কিছু তছনছ করে দিবো বলেই জরে একটা হুংকার দিয়ে নিচে বসে পরে…!
অভ্র ক্ষিপ্ত বাঘের মতো হয়ে আছে রাগে মুখ নাক লাল হয়ে গেছে
চোখ দুটো রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে।
আকাশ- তুই শান্ত হো আমরা নীলকে খুঁজে পেয়ে যাবো চল আমরা নীলকে খুঁজি গিয়ে।
শুভ- আকাশ ঠিক বলেছে অভ্র এখানে বসে সব ভেঙে তছনছ করার থেকে গুরত্বপূর্ণ কাজ আমাদের এখন ভাবিকে খোঁজা…!
নিলয়- ভাবির লাস্ট ফোনের লোকেশান চেক করে আমরা জানতে পারবো ভাবির ফোন কথায় বন্ধ হয়েছে।
আকাশ- আমি টের্ছ করছি…!
অভ্র উঠে দৌঁড়ে কেবিন থেকে বের হলো। সব স্টাফ রা অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে ওকে দৌঁড়াতে দেখে অভ্রর পেছনে আকাশ, আকাশের পেছনে শুভ আর শুভর পেছনে নিলয়।।
স্টাফরা– স্যাররা এভাবে দৌঁড়াচ্ছে কেনো?
সব ওদের মাথার উপর দিয়ে গেলো।
অভ্র ড্রাইবিং সিটে বসতে গেলেই…!
নিলয়- স্যার গাড়ি আমি চালাচ্ছি আপনি পেছনে বসেন শান্ত হয়ে।
অভ্র আকাশ শুভ পেছনে বসে।
নিলয় গাড়ি চালাচ্ছে।
আকাশ- নীলের ফোনের লাস্ট লোকেশান কড়োই তলা দেখাচ্ছে তিন রাস্তার মোড়ে….!
নিলয়- আমি গাড়ি সেদিকেই নিচ্ছি.!
কড়োই তলা বলা হয় এই জায়গা টাতে বড় কড়োই গাছ সাথে তিন রাস্তা তাই কড়োই তলা তিন রাস্তার মোড়….! (আমাদের এখানে এই গাছের নাম এটাই তাই আমি এই নামই লিখছি)
৩০মিনিটের মধ্যে গাড়ি কড়োই তলা কড়োই গাছের নিচে থামে…!
.
#চলবে …..?
#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_25
______
৩০মিনিট গাড়ি কড়োই তলার কড়োই গাছের নিচে থামে…!
অভ্র তারাহুরো করে গাড়ি থেকে নেমে পাগলের মতো হণ্য হয়ে নীলকে খুঁজছে আর চিৎকার করে ডাকছে…!
সাথে আকাশ শুভ নিলয় ও নীলকে খুঁজছে…!
পুরো জায়গা খুঁজে নিয়েছে কোথাও নেই…!
প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে কিন্তু নীলকে কোথাও পায়নি।
তিন রাস্তার মাঝ খানে ধপ করে বসে পরে অভ্র…!
খোলা আকাশের নিচে চিৎকার করে নীল কে ডাকছে..!
আকাশ- অনেক তো খুঁজলাম চল বেশি দেরি না হতে পুলিশের কাছে যাই…!
শুভ- ২৪ ঘন্টা না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ কিচ্ছু করবে না।
নিলয়- তবুও আমরা কমপ্লেন করতেই পারি.!
আকাশ অভ্রকে ধরে গাড়িতে উঠাতে যাবে।
অভ্র আমরা ওই বাড়ির পেছনে দেখিনি। চল আমার মন বলছে আমার নীল ওখানেই আছে…!
অভ্র পেছনে ঘুরে দৌঁড় দিলো… ওরাও পিছু পিছু আসছে…!
খোলা মাঠের মধ্যে ছুটতে অভ্র আর নীল বলে চিৎকার করছে। নিলয় লাইট মেরে…
নিলয়- ওই খানে কেউ আছে হয়তো ওই নিচে পরেছে আছে।
নিলয়ের কথা শুনে সবাই পেছনে ঘুরে। লাইটের আলোতে স্পষ্ট বুজা যাচ্ছে কেউ মাটিতে শুয়ে আছে।
অভ্র দৌঁড়ে যায়…. গিয়ে দেখে মুখে লাইট মারতেই অভ্র নীলকে উঠিয়ে জরিয়ে ধরে….!
অজ্ঞান নীলকে জরিয়ে কপালে গালে চুমুতে শুরু করে অভ্র….!
আকাশ- ও সেন্সলেস ওকে হসপিটালে নিতে হবে.!
অভ্র নীলকে কোলে তুলে নেয়।
নিলয় লাইট নিয়ে ঘুরতেই দেখে নীল এর ফোন পরে আছে নিলয় ফোনটা তুলে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।
গাড়িতে উঠে বসে অভ্র পাশেই নীল।
নীলকে জরিয়ে ধরে রেখেছে অভ্র।
অভ্র- অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি ভেবেছিলাম আমি আমাী আত্মা টাকে হারিয়ে ফেলেছি.! বলেই কপালে চুমু দেয়।
হসপিটাল…..!
ডাক্তার আঙ্কেল নীলকে চেক-আপ করে বললো।
খুব দূর্বল আর হয়তো বা কোনো কারণে খুব ভয় পেয়েছে তাই সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমি স্যালাইন দিয়ে দিয়েছি কাল সকালের মধ্যে সেন্স চলে আসবে টেনশন করিস না।
অভ্র- থ্যাংক ইউ আঙ্কেল….! এই ব্যাপারে কাউকে বলার দরকার নেই।
ডাক্তার- ওকে।
সারারাত নিলয় আকাশ শুভ হাসপাতালেই ছিলো অভ্রর সাথে আর অভ্র নীল এর বেডের পাশে…!
সকালে……..!
নীলের একটু জ্ঞান ফিরতেই ভূত বলে চিৎকার করে বসে পরে.!
অভ্র তৎক্ষনাৎ নীলকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
অভ্র- কোথাও ভূত নেই। দেখো আমি তোমার অভ্র। নীল তাকাও আমার দিকে…!
নীল চোখ খুলে অভ্রর দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয় আর অভ্রকে জরিয়ে ধরে।
নীলের কান্না জেনো অভ্রর কলিজায় গিয়ে আঘাত করছে।
অভ্র- কাল কি হয়েছিলো নীল…….?
তুমি নদীর পারে পৌঁছালে কিভাবে…?
নীল চোখের পানি মুছে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরের সব ঘটনা খুলে বললো…!
আকাশ টিটকারি মেরে..!
আকাশ- চোখে লাইট জ্বলছিলো তুমি ভালো করে দেখবে না। রাতে তো বিড়ালের চোখে লাইট জ্বলে।।
অভ্র- আকাশ… নীল তখন ভয় পেয়ে ছিলো।
অভ্র- নিলয় পানির গ্লাস টা দাও তো…
নিলয়- ইয়েস স্যার। নিলয় গ্লাস দিতেই
..
অভ্র- পানি পুরো টা খাও….!
নীল ঢকঢক করে পুরো পানি খেয়ে নিলো…!
অভ্র- এখন বলো কি এমন ইমপোর্টেন্ট কথা বলার ছিলো তোমার যার জন্য না খেয়ে অত রাতে বাড় থেকে বেরিয়ে পরে ছিলো আর এত বড় ঝামেলায় নিজেকে জরিয়ে ছিলে…!
নীল এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে……..!
নীল– মারিয়া…
অভ্র- মারিয়া কি নীল…?
নীল- আমার ফোন আমার হাতেই ছিলো আমার ফোন কোথায়…?
নিলয়- ভাবি আমার কাছে আমি তখন সেখানে নিজে পরে থাকতে দেখে নিয়ে আসি এই যে নিন। (পকেট থেকে ফোন বের করে নীলের হাতে দেয়)
নীল ভিডিও টা বের করে….!
অভ্র- নীল মারিয়া তোমাকে কিছু বলেছে কি?
নীল- মারিয়া আমাকে কিছু বলে নি!
অভ্র- তো……?
নীল- ভিডিও টা দেখুন….!
বলেই ভিডিও টা প্লে করে হাতে ধরে ওদের চার জনের দিকে ফোন ঘুরিয়ে ধরছে যাতে ওরা ভালো করে ভিডিও টা দেখতে পারে….!
অভ্র ভিডিও টা শেষ হতেই বসা থেকে উঠে সেই চেয়ারেই লাথি মারে যে চেয়ারে বসে ছিলো…!
ওই মেয়েকে আমি ছাড়বো না ওর এত বড় সাহস…!
আকাশ- দেখ অভ্র এটা হসপিটাল এখানে সিন ক্রিয়েট করিস না। চল আমরা পুলিশের কাছে যাই আর প্রুফ এই ভিডিও টা দেখাবো তারপর সাথে নিয়ে বাড়ি যাবো…!
অভ্র- তাই করতে হবে চল….!
নীলকে সাথে নিয়ে শুরুতে পুলিশ স্টেশন যায় পরে পুলিশ সাথে নিয়ে চৌধুরী হাউজ আসে পুলিশ দের বাহিরে রেখে… ওরা সবাই ভেতরে আসে.!
মিসেস চৌধুরী- আরে বাহহহ আজ চাঁদ সূর্য কোন দিকে উঠছে সব ছেলে আমার এক সাথে বাড়ি আসছে…!
মারিয়া- অভ্র তুমি রাতে বাড়ি ফিরোনি কেনো? তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। বলে অভ্রর হাত ধরতে নিলেই অভ্র কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় মারিয়ার গালে মারিয়া তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায়…!
অভ্র- মিস লেয়লা………! (বলেই চিৎকার দেয়) মিস লেয়লা কিচেন থেকে দৌঁড়ে আসে তারপর দু’জনের ক্লাস নেয় অভ্র….!
অভ্র- তোদের সাহস হয় কি করে আমার নীল এর উপর প্রতিশোধ নিতে আসিস তাও আবার আমারই বাড়িতে আমার নীলকে আমার থেকে দূরে সরানোর প্লেন করিস…!
মারিয়া ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে…!
মারিয়া- তুৃমি মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছো আমার উপর…!
আ…ম
আর কিছু বলার আগেই অভ্র আরও একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়…!
মারিয়া নিচে পরে যায়। দুই গালে থাপ্পড়ের দাগ স্পষ্ট
অভ্র- মিস লেয়লা আপনি আমার মায়ের বয়সি তাই আমি আপনাকে কিছু বললাম না। কিন্তু আমি আপনাদের ছেড়ে দেবো না। লজ্জা করে না ফুপি হয়ে নিজের ভাগ্নীর এইসব কাজে সাহায্য করতে…!
মিসেস চৌধুরী- ফুপি কি বলছিস তুই…!
আকাশ- সব কিছু মিসেস চৌধুরী কে বুজিয়ে বলে।
অভ্র- ইন্সপেক্টর ভেতরে আসুন আর এদের নিয়ে যান।
পুলিশ ভেতরে এসে ওদের হাতে হাতকড়া পরাচ্ছে.!
লেয়লা- আমাদের কোনো অপরাধ নেই আমরা নির্দোষ?
মারিয়া- আমাদের অপরাধ কি?
অভ্র- দাঁড়ান অফিসার ওদের অপরাধ টা একটু দেখে যাক ওরা আর নয়তো জেলে বসে ঘুম আসবে না।
অভ্র ভিডিওটা প্লে করে দেয়……..শেষ হতেই..!
অভ্র নীল এর হাত ধরে।।।
অভ্র- আমি অভ্র চৌধুরী আর ও মিসেস অভ্র চৌধুরী..!
অভ্র আমার পাশে থাকে না যে যে কেউ এসে নীলকে অভ্রর থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। নীল অভ্রর বুকের বা পাশে থাকে যেখান থেকে নীলকে সরানো ইম্পোসিবল।
নিয়ে যান ওদের……!
নীল অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে…!
পুলিশ ওদের নিয়ে চলে যায়।
শুভ চুপিচুপি তোয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে।
শুভ- কি রে তোর লাভ স্টোরির খবর কি?
তোয়া- আর বইলো না ভাইয়া ব্রেকআপ…!
শুভ- কেন কেন ব্রেকআপ কেন?
তোয়া- হালায় ১নাম্বারের লুচ্চা। মেয়েদের সাথে লুচ্চামি করে তাই আমি ব্রেকআপ করে চলে আসছি।
শুভ- লাইফের ফাস্ট লাভ তাও আবার একটা লুচ্চার সাথে…? খুব কষ্ট হচ্ছে তোর জন্য বাই দ্যা ওয়ে তোর লুচ্চার নাম কি?
তোয়া- শাওন শাওন শাওন তোমার চাচাতো ভাই…! বলেই মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায় নিজের রুমের দিকে।
শুভ- কিহহহহহ শাওন…….! ( অবাক হয়ে)
অভ্র হল রুমের টি-টেবিলে লাথি মেরে চিৎকার করে বলে।
অভ্র- আমি এত বড় ভুল করলাম কি করে কি করে করলাম।
সোজা রুমে চলে যায়, সারাদিন দরজা খুলে নাই রুমেই ছিলো…! সারাদিন কেই অভ্রকে ডাকতেও যায়নি।
রাতে……..
নীল অভ্র কে ডাকতে দরজা নক করতেই অভ্র দরজা খুলে দেয়.!
দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কেঁদেছে.! মারিয়ার জন্য নয় সেই ছোট্ট পরীর জন্য…
নীল- যা হওয়ার হয়ে গেছে তাতে আপনার কোনো দোষ ছিলো না নিজেকে সামলান প্লিজ..! নিচে চলুন সবাই আপনার জন্য ডাইনিং টেবিলে ওয়েট করছে।
অভ্র- আমার খিদে নেই তুমি গিয়ে খেয়ে নাও… বলেই রুমে ডুকতে গেলে…!
নীল অভ্রর হাত ধরে ফেলে! অভ্র নীল এর দিকে ঘুরে তাকায়।
নীল- সারাদিন কিচ্ছু খাননি প্লিজ চলুন। আমার জন্য না হয় একটু খাবেন প্লিজ….!
অভ্র- তুমি এভাবে বললে আমি না করতে পারি চলো…!
সবাই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে কেউ অভ্রকে কিচ্ছু বলছে না।
অভ্র কোনো রকম একটু খেয়ে উঠে চলে গেলো।
নীল- আমি সামলে নেবো ওকে তোমরা চিন্তা করো না।
মিস্টার চৌধুরী- তোর উপর আমাদের সবার বিশ্বাস আছে।
মিসেস চৌধুরী– মা যেভাবেই পারিস আমার ছেলে টাকে আগের মতো করে দে প্লিজ….!
তোয়া- ভাবি ভাইয়ার সাথেই এমন হওয়ার ছিলো। তুমি তো জানো না ভাইয়া ওর ছোটোবেলার সেই বান্ধবী টাকে কত্তো খুঁজেছে যতবার বাংলাদেশে আসছে ততবার খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি তাই হঠাৎ মারিয়া আপু আসায় ভাইয়াও বিশ্বাস করে নেয়।
নীল- হুম আমি উঠি গিয়ে দেখি অভ্র কি করছে।
মিসেস চৌধুরী- যা।।
আজ কেউ ঠিক মতো খায়নি। নিজের ছেলের এই অবস্থায় কোনো বাবা মা বোন স্ত্রী খেতে পারে?
নীল রুমে এসে দেখে কোথাও অভ্র নেই। অভ্র বারান্দায় আছে ভেবে বারান্দায় যায় কিন্তু সেখানেও অভ্র নেই।
নীল- অভ্র সিউর সাদে গেছে আমাকেও সাদে যেতে হবে।
বলে নীল পেছনে ঘুরতেই দেখলো বিছানার উপর একটা ডায়েরি…!
ডায়েরি পুরো টা কালো…!
নীল ডায়েরি টা হাতে নিয়ে এটাই হয়তো সেই ডায়েরি। যেটাতে অভ্রর ছোটোবেলার ফ্রেন্ড এর কথা লেখা আছে তখন হয়তো ডায়েরি টা হাতে নিয়েই কেঁদেছে আর তুলে রাখতে ভুলে গেছে হয়তো।
আমার কি উচিত হবে কিন্তু আমার যে পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কারো পার্সোনাল ডায়েরি পারমিশন ছাড়া পড়া উচিত না। সেটা অন্য কারো বলা হইছে নিজের হাসবেন্ডের টা বলে নাই। যা হবার হবে পড়েই ফেলি।
নীল ডায়েরি টা খুলতেই অবাক হয়ে গেলো।
ডায়েরির প্রথম পাতায় বড় করে লেখা।
পরী
নীল- পরী….. পরী মানে…. নিজেকে সামলে পরের পাতা উল্টায় সে পাতা পড়ে নীলের চোখে পানি চলে আসে। তারপরের পাতা পরে নীল কেঁদেই ফেলে। তারপরের পাতা পরে নীল নিজেকে সামলাতে না পেরে ডায়েরি সহ ফ্লোরে বসে পরে। কাঁদছে আর ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছে।
এত মোটা ডায়েরির শুধু ১০টা পাতায় পরীকে নিয়ে লেখা আছে….! আর কোথায় অভ্রর ছোটো বেলার দেওয়া নাম কোথাও লেখা নাই। ওদের ছোটোবেলার বন্ধত্ব ১০দিনের ছিলো। সে ১০দিনের সব কথা ছোটো বড় সব কথা অভ্র ডায়েরি তে লিখে রাখছে।
নীল ডায়েরি টা বুকের সাথে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে….!
নীল- অভ্র…. অভ্রই আমার ছোটোবেলার মেঘ যার অপেক্ষায় আমি এত বছর ছিলাম সেই মেঘ আমার এত কাছে ছিলো আমি চিনতে পারিনি সেই মেঘকে আমি পাবলিক প্লেসে চড় মেরেছিলাম আমার অভ্র আমার মেঘ……
বলেই ডায়েরি হাতে নিয়ে রুম থেকে দোঁড়ে বেরিয়ে গেলো।
অভ্র সাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে…..!
নীল দৌঁড়ে এসে অভ্রর ঠিক পেছনে দাঁড়ায়….
চাঁদের জ্যোৎসনার আলোর জন্য সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
নীল- অভ্র……!
অভ্র পেছনে নীল এর কন্ঠ শুনে পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়
অভ্র- তুমি এখনো ঘুমাওনি নীল…?
নীল তোমার চোখে পানি কেনো তুমি কাঁদছো কেনো?
নীল- অভ্র….!
অভ্র- নীল কিছু বলবে বলো কি বলতে চাও?
নীল অভ্রর দিকে তাকিয়ে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে.!
.
.
.
#চলবে …..?