অভ্র_নীল (সিজন-০২) #পর্ব_১০

0
552

#অভ্র_নীল (সিজন-০২)
#পর্ব_১০
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখিকা)
________
তানিয়া- নীলল সমস্যা কি পরে গেলি কি করে?
তানজু- এই জন্যই বলি খাটের কিনারে শুতে না মাঝখানে শুলে তো পরতিস না।
কাজল- কি হলো বলদের মত তাকিয়ে কি ভাবছিস বলবি তো কি ভাবছিস?

নীল ফ্লোরে বসে একবার দরজার দিকে তাকালো আরেকবার ঘুরে তানজু তানিয়া কাজলের দিকে তাকালো আবার ঘুরে হাত দিয়ে নিজের বুকে দিচ্ছে গুলি না লাগল দরজা ও তো আটকানো গুন্ডা গুলো গেলো কোথায় মানে কি স্বপন দেখছিল স্বপ্ন দেখতে দেখতে খাট থেকে পরে গেছে এটা কি সত্যি এক ধ্যানে ভাবছে নীল পেছন থেকে আবারও জোরে ডাক দিল নীল বলে। নিজের নামের ধ্বনি শুনে নীল এর হুশশ ফিরে। নীল মেঝে থেকে উঠে বিছানায় বসে আর ওদের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নটার কথা বলে। নীল এর স্বপ্নের কথা শুনে তানজু তানিয়া কাজল হাসতে হাসতে একেক জনের উপর আরেকজন হেলে পরছে। যা দেখে নীল এর বিরক্ত লাগছে। নীল ওদের হাসি থামানোর জন্য কিছু বলতে যাবে তখনই দরজায় কারো ডাক পরল কাজল হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করে “কে? ” দরজার বাহির থেকে আহিন বলল..

– আপু মা ডাকছে তোমাদের সবাইকে খাবার খাওয়ার জন্য তারাতাড়ি আসো।

কথাটা বলে আহিন চলে গেলো (আহিন হচ্ছে কাজলের একমাত্র ছোট ভাই খুব আদরের) আহিনের কন্ঠ শুনে সবাই বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে নিচে চলে গেলো সবার সাথে একত্রে বসে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে।

খাওয়া শেষ হলে সবাই সবার রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ বসে গল্প করল কাল কোথায় যাবে ঘুরতে এইসব আলোচনা করে চারজনে শুয়ে পরল।

পরেরদিন সকালে…

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে কাল ঘুরে আয়ুস মেটেনি ফাজিল ছেলেগুলোর জন্য ঠিক মতো ঘুরতেও পারেনি আজ তাই ওরা চার জন একা এসেছে ঘুরবে বলে গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গ্রামের কাঁচা রাস্তা তো সবার জানার কথাই একটু ভালো অনেকটা ভাঙা তার মাঝে পানি জমেছে কাঁদা কাঁদা হয়ে আছে দু’পাশে ধান ক্ষেত কিছুটা দূরে অনেকগুলো গরু এক সাথে ঘাস খাচ্ছে রাখাল ছেলে গাছের নিচে বসে গরু গুলোকে পাহাড়া দিচ্ছে নীল দাঁড়িয়ে দেখছিল খুব সুন্দর লাগছিল ওর কাছে প্রকৃতির উপরূপ সৌন্দর্য। এমন সময় নীল এর সামনে ছোট পুরো সাদা একটা ছাগলের বাচ্চা লাফালাফি করছিল নীলের ছাগলের বাচ্চার লাফালাফি দেখে অনেক হাসি পেলো ইচ্ছে করল বাচ্চা টাকে ছুঁয়ে দেখার নীল ঝুঁকে ছাগলের বাচ্চা টাকে স্পর্শ করতে নিলে বাচ্চা টা দৌঁড় দিলো নীল ও এক্সাইটেড হয়ে বাচ্চাটার পেছনে দৌঁড় দিলো। নীল খেয়াল করেনি ছাগলের বাচ্চা কোনদিকে দৌড় দিয়েছিল। সামনে তাকিয়ে নীল কে দেখতে পেলো না তানজু চোখ বুলিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে দেখল নীল ছাগলের বাচ্চার পেছনে ছুটছে অন্য দিকে নীল এর দিকে তেড়ে আসছে একটা কালো ষাঁড় যা দেখে তানজু ” নীলললল” বলে চিৎকার দেয়। তানজুর চিৎকারে তানিয়া কাজল নীল এর দিকে তাকালো সাথে ষাঁড় টাকেও আসতে দেখল ওরা দু’জন ও নীল কে পেছন থেকে ডাকল কিন্তু নীল শুনতে পেলো না। নীল আজ নীল জামার সাথে লাল ওড়না পরে বের হয়েছে নীলের ওড়নার দিকে কাজল খেয়াল করেনি যদি করতো তাহলে বাড়ি তে থাকতেই ওড়না পরে আসতে দিতো না। নীল হঠাৎ থেমে গেলো আর ঘুরে পাশে তাকাতেই দেখল একটা ষাঁড় গরু ওর দিকে দৌঁড়ে আসছে যা দেখে নীল শকট হয়ে বরফের মতো জমে গেলো নড়াচড়া করার ক্ষমতা জেনো হারিয়ে ফেলেছে কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় নীল এর ভাবনা লোপ পেয়েছে চিন্তা ধারণা বন্ধ হয়েগেছে। ষাঁড় এসে যেই নীল এর গায়ে আঘাত করতে যাবে ঠিক তখন কেউ একজন এসে ষাঁড়ের সামনে থেকে নীলকে হিচকা টানে সরিয়ে নিলো নীল এর গা থেকে ওড়না টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় নীলকে নিয়ে খেড়ের পাল্লার পেছনে দাঁড় করায়। ষাঁড় টা অন্য দিকে ছুটে চলে যায়। নীল ভয়ে খিচে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল হঠাৎ কে এসে ওকে বাঁচালো দেখার জন্য চোখ মিটমিট করে তাকালো। সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বা হাতের দুই আঙুল কপালে ঠেকিয়ে রেখে অন্য হাত কোমড়ের উপর দিয়ে মুর্তি মতো দাঁড়িয়ে আছে লোকটাকে দেখে নীল ভীতু গলায় তোতলিয়ে বলল।

– আ..আ..প আপনি?

নীল এর কথায় চোখ খুলে নীল এর দিকে তাকায় নীল চোখ দেখেই ভয় পেয়ে যায় রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। নীলের হাত দরে খেড়ের পাল্লার সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রাগে গজগজ করতে করতে ধমকের স্বরে বলল!

– সমস্যা কি তোমার? গ্রামে এসেছো আর এটা জানো না ষাঁড়ের সামনে লাল রঙের বস্তু পরে আসতে নেই আজ যদি আমি টাইমলি না আসতাম তাহলে ভাবতে পারছো নীল তোমার কি অবস্থা হতে পারতো। ছোটো বাচ্চা তুমি যখন দেখলে ষাঁড় তোমার দিকে ছুটে আসতে না পালিয়ে ওর সামনে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে গেলে কেনো!

নীল এর প্রচুর রাগ হচ্ছে এখন বাঁচিয়েছে ভালো কথা তাই বলে এখন এত শক্ত করে হাত চেপে ধরল জেনো মনে হচ্ছে হাতটা এখন ভেঙে ফেলবে এত কিসের শাসন উনার নীল ওর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল।

– আমাকে বাঁচিয়েছেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আর এভাবে কেনো ধরেছেন আমার হাত ছাড়ুন বলছি লাগছে আমার। কোনো অধিকার নেই আপনার আমার হাত এভাবে চেপে ধরার কে হই আমি আপনার কেউ না অভ্র প্লিজ ছাড়ুন আমার হাত৷

নীল এর কথাগুলো শুনে অভ্রর আরও রাগ হলো রক্ত মাথায় চেপে গেলো কপালের রোগগুলি ফুলে ভেসে উঠল। নীল এর হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দেহের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অভ্র দাঁত কটমট করে কঠোর গলায় বলল।

– তুমি আমার সব আমার নিঃশ্বাস তুমি আমার বেঁচে থাকার উৎস তুমি তুমি আমার সকালের মিষ্টি রোদের আভা রাতে জ্যোৎস্নার আলো তুমি আমার হৃৎস্পন্দন তুমি আমার এক অদ্ভুত ভালোলাগার মহা সাগর যে ভালো লাগার সাগরে প্রতি রাতে তলিয়ে যাই আমি যে সাগরের নেই কোনো কোল কিনারা। তুমি আমার প্রিয় মানুষ তুমি আমার এক বুক ভালোবাসা। সে ভালোবাসার মানুষের জন্য আমি হাজার বার মৃত্যুর মুখে যেতে রাজি আছি নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েও তোমাকে বাঁচাবো তুমি আমার সেই ভালোবাসার মানুষ যাকে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর সবার আগে তার মুখটা দেখতে চাই। পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা যার কোলে এনে দিতে চাই তুমি আমার সেই মানুষ আমার বুকের বা পাশটা সম্পূর্ণ দখল করে নিয়েছে যে মানুষ টা সে মানুষটা তুমি আমার আমার তুমি তোমার তুমি সম্পূর্ণ আমার তুমি চাও আর না চাও তুমি শুধুই আমার।

অভ্রর কথায় মুগ্ধ হয়ে গেছে নীল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অভ্রর প্রতিটা কথা শুনলো কথার প্রেমে পরে গেলো নীল কিন্তু অভ্রকে বুঝতে না দিয়ে নিজের থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো অভ্রকে আর বলল।

– আমি আপনাকে চাই না আমার প্রতি আমার উপর কোনো অধিকারই নেই আপনার দূরে থাকবেন আমার থেকে আমি আপনার নই।

কথাটা বলে নীল অভ্রর পাশ কেটে চলে যেতে নিলে অভ্র নীল এর হাত ধরে হিচকা টান দিয়ে খেড়ের পাল্লার সাথে আবারও আগের ন্যায় চেপে ধরে নীল এর বা হাতের পাচটি আঙুলেট প্রতিটা বাজে বাজে অভ্র নিজের আঙুল রাখে আর মুঠি বন্ধ করে নেয় অভ্র অন্য হাত দিয়ে নীল এর ঘাড়ের পেছন দিয়ে হাত ঢুকিয়ে চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলল।

– তোমার উপর অধিকার আছে কি নেই সেটা এখনই বুঝিয়ে দিচ্ছি।

অভ্রর কথার আগা মাথা কোনো কিছুই না বুঝে চোখ ছোটছোট করে তাকালো নীল মুখ খুলে কি বলতে বলতে অভ্র নীলকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নীল এর ঠোঁট জোড়া অভ্র ওর ঠোঁট জোড়ার সাথে মিলিয়ে দিলো নীল চোখ বড় বড় করে ফেলল মনে হয় নীল এর চোখ দু’টো এখনই বের হয়ে যাবে। অভ্রর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নীল কিন্তু পারছে না যত ছোটবার চেষ্টা করছে অভ্র আরও শক্ত করে ধরছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে তানজু তানিয়া কাজল আকাশ তন্ময় শুভ. ছয় জনে হা করে চোখ টমেটোর মতো টইটম্বুর করে তাকিয়ে আছে। অভ্র তো ছাড়ার নামই নিচ্ছে না নীল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে কিন্তু পারছে না অভ্র একদম ডীপলি কিস করেই চলেছে। পাঁচ মিনিট পর অভ্র নীলকে ছেড়ে দিয়ে বলে।

– তুমি শুধু আমার তুমি চাইলেও আমার তুমি না চাইলেও তুমি আমার। তোমার উপর অধিকার শুধু আমার আর এটা হচ্ছে ট্রেইলার। তুমি শুধু আমার নীল মাথায় রেখো। তোমার এই গোলাপি ঠোঁট শুধু আমার চুমু নিবে তোমার চোখ শুধু আমাকে দেখবে তুমি শুধু আমার।

কথাটা বলে অভ্র নীল এর হাত ছেড়ে দেয় আর হেঁটে চলে যাচ্ছে। নীল ঠোঁটে হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অভ্রর যাওয়ার দিকে পেছন থেকে দৌঁড়ে এসে নীল এর কাঁধে হাত রাখল তানিয়া আর বলল।

– নীল তুই ঠিক আছিস তো?

নীল পেছনে না ঘুরেই তানিয়ার হাত টা কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলো আর বলল।

– একটা অসভ্য ছেলের হাত থেকে আমার ঠোঁট টাকে বাঁচাতে পারলি না আর এখন আসছিস ঠিক আছি কি না জিজ্ঞেস করতে যা সর তোরা আমার সামনে থেকে আমার ঠোঁট চেটে পুঁটে খেয়ে নিলো ওই অসভ্য ছেলে টা। বলেই নেকা কান্না শুরু করল। নীলকে থামানোর জন্য তানজু বলল ” ছেলেটা অসভ্য হলে কি হবে দোস্ত হেব্বি হ্যান্ডসাম ” নীল তানজুর দিকে তাকিয়ে ধমক দিলো! ” তুই চুপ করবি নাকি তোকে আমি ”
নীলকে থামিয়ে কাজল বলল ” যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন চল ঘুরি গ্রাম তো দেখাই হলো না আর অভ্র ভাইয়ার থেকে দূরে থাকবি তাহলেই হবে। ” কাজলের দিকে তাকিয়ে নীল অদ্ভুত আচরণ করে বলল। ” আমি যাবো না তোরা গেলে যা আমি এখানেই থাকবো ”

নীল এর দিকে না তাকিয়ে তিনজন হাঁটা শুরু করল। আর কাজল পেছনে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল।

” এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি চলবি আমাদের সাথে আর যদি এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস ষাঁড় গরুর ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে তখন তোকে বাচাতে অভ্র আসবে না হুহ ”

নীল কাজলের কথা শুনে ভয়েই চিল্লিয়ে বলে.. ” দাঁড়া তোরা আসছি আমি ”
বলে দৌড়ে ওদের তিনজনের মধ্যে ঢুকে যায় আর ওদের সাথে হাঁটতে থাকতে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখল অভ্র আর ওর বন্ধু গুলা একটা চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে চা খাচ্ছে। নীল অভ্রকে দেখে ঠোঁট ভেংচি দিয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেলে অভ্র নীল এর মুখ ভেংচি দেওয়া দেখে হেঁসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। তন্ময় কাজলকে ডেকে ওদের কাছে যাওয়ার ইশারা করে। কাজল বারবার বলায় নীল ওদের সাথে ওই দোকানে ঢুকে ছোটো দোকান বেঞ্চ তিনটা ও ছোটো ছোটো। মেয়ে চারজন দোকানের সামনে দাঁড়াতে আকাশ বলল…

– তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো না।

আকাশের কথা শুনে কাজল তন্ময় এর পাশে বসে তানজু আকাশের পাশে তানিয়া শুভর পাশে শুধু বেঞ্চ খালি থাকে অভ্রর পাশে অভ্র পায়ের উপর পা তুলে পা নাচাচ্ছে এক হাত দিয়ে চায়ের কাপ ধরে রাখছে অন্য হাত দিয়ে চায়ের কাপের উপর আঙুল ঘুরাচ্ছে মুখে মিশে আছে বাঁকা দুষ্টু হাসি ফুটে উঠেছে এটা যে অভ্রর প্লেন ছিল বুঝতে বাকি রইল না নীল এর ইচ্ছে করে এমন করছে নীলকে পাশে বসানোর জন্য নীল ও কম কিসে বসবে না বলে প্রতিজ্ঞা নিয়েছে হুহ ঠাডার মতো দাঁড়িয়ে রইল। অভ্র ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়েই চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে শব্দ করে আর প্রতিটা চুমুকের শেষে আহ করছে সাথে বলছে দারুন।

নীল এর ইচ্ছে করছে এই শয়তান ছেলেটার বড়বড় চুলের মধ্যে হাত দিয়ে চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে চায়ের কাপের মধ্যে চুবাতে কিন্তু সেটা পসিবল নয়। চায়ের কাপ থেকে ওর মাথাটা অনেক বড় প্রচুর রাগ হচ্ছে ছেলেটার উপর কিন্তু ছেলেটা দেখতে এত কিউট ডেসিং হ্যান্ডসাম যা বলার বাহিরে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে জেনো সত্যি সত্যি প্রেমে পরে যাবে তাই যথা সম্ভবত পারে নীল ছেলের মুখের দিকে তাকায় না। ফাস্ট যেদিন দেখেছিল ভুলে আঙ্কেল বলে ফেলেছিল প্রথম দেখেই ক্রাশ খেয়ে ফেলে কিন্তু সেটা অভ্রকে নীল ভ্রোনাক্ষেপেও টের পেতে দেয় না। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তো দাঁড়িয়েই আছে। মনে মনে ভেবেছিল অভ্র বসতে বললে বসবে কিন্তু অভ্র আর বসতে বলল না নীল এর ও বসা হলো না তাি একটু অভিমান জাগলো অভ্রর উপর সবার টুকিটাকি নাস্তা খাওয়া হলে সবাই দোকান থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করে। নীল মুখ থতোবতো করে ধীর পায়ে হাঁটছে অভ্র নীল এর পেছন পেছন হাঁটছে কিছুক্ষণ হাঁটার পর সামনে তাকাতেই নীল দেখল একটা ফুচকাওয়ালা আসছে সেটা দেখে নীল লাফিয়ে উঠল আর বলল।

– আমি ফুচকা খাবো আমি ফুচকা খাবো।

নীল এর ফুচকার জন্য লাফানো দেখে অভ্র বলল।
তুমি কি বাচ্চা যে ফুচকার জন্য মাঝ রাস্তায় এমন ভাবে লাফাচ্ছ

নীল অভ্রর দিকে না ঘুরেই বলল আপনাকে কি বলছি চটর পটর করতে কথাটা বলে নীল দৌঁড়ে গেলো ফুচকাওয়ালার কাছে আর বলল ঝাল দিয়ে ফুচকা বানিয়ে দিতে।.

ফুচকাওয়ালা এক প্লেট ফুচকা বানাচ্ছিল তখন তানজু তানিয়া কাজল ওরাও বলল আরও তিন প্লেট বানান আমরা কি বানের জলে ভেসে আসছি নাকি আমাদের জন্য বানাবেন না নাকি?

ফুচকাওয়ালা- বানাচ্ছি আফা দাঁড়ান…!

চার প্লেট ফুচকা বানিয়ে দিতেই চারজনে হা করে ফুচকা খাচ্ছে ইশশ জেনো রসমালাই খাচ্ছে মনে মনে বলছে অভ্র এমন সময় নীল বলল।

– মামা ঝাল একটু বেশি দিয়েছেন অনেক ঝাল হয়েছে।
অভ্র নীল এর কথা শুনে নীলের ঠিক ডান পাশে গিয়ে দাঁড়াল আর কানে কানে ফিসফিস করে বলল।

– ঝাল যখন খেয়েছো এখন আবার একটু মিষ্টি খাবা নাকি?

অভ্রর মিষ্টি খাওয়ার কথা শুনে নীল এর গলায় ফুচকা আটকে গেলো বেচারি কাশতে শুরু করল অভ্র ফুচকা ওয়ালার কাছ থেকে এক বোতল পানি নিয়ে তারাহুরো করে মুখা খুলে নীল এর দিকে বাড়িয়ে দিলো পানির বোতল নীল হাত দিয়ে বোতল টা নিয়ে ঢোক ঢোক করে পুরো বোতল ফাঁকা করে দিল খালি বোতল টা অভ্রর হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করল।
ফুচকাওয়ালা পেছন থেকে ডাকছে। ” ও আফা আমার ফুচকার বিল তো দিলেন না ”
নীল পেছনে ঘুরে তাকালো আর চিল্লিয়ে বলল।
” ওই সাদা শার্ট পরা ছেলেটা কে ধরেন সে দিবে ” ততক্ষণে নীল এর পেছন পেছন বাকিরাও চলে আসে। সবা গুলো বিল এখন অভ্রকে দিতে হবে। অভ্র চোখ ছুটো ছুটো করে তাকিয়ে রইল বাকিদের যাওয়ার দিকে আবারও যখন ফুচকা ওয়ালা টাকা চাইলো তখন অভ্র এক ভ্রু উঁচু করে প্যান্টের পকেটে হাত দিলো মানিব্যাগ বের করার জন্য কিন্তু মানিব্যাগ নেই অন্য পকেটে হাত দিলে সেখানেও নেই গেলো কোই মানিব্যাগ সামনে পেছনে সমানে খুঁজতেছে কিন্তু নেই তো নেই। এমন সময় মনে পরল অভ্রর হাতে বোতল ধরিয়ে দিয়ে পেছন দিয়ে গিয়েছিল নীল চোখ দুটো বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলল ” নীল তখন হাতে করে মানিব্যাগ নিয়ে গেছে আর আমাকে এখানে ফাসানোর জন্য একা ফেলে গেছে। ফোন করতে হবে আকাশ কে” বলে এখন ফোন খুঁজতে থাকে কিন্তু ফোনও নেই তখন অভ্রর আবারও মনে পরে অভ্রর কাছ থেকে ফোন শুভ নিয়েছিল একটা ইমার্জেন্সি কল করার জন্য তখন আর শুভর থেকে ফোন নেওয়া হয়নি কত বড় ভুল করে ফেলেছে অভ্র নিজের বড়বড় চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে শক্ত করে টান দিয়ে রাখছে। ফুচকাওয়ালা আবারও টাকা চাইলে অভ্র বলে ” আপনি এখানে একটু অপেক্ষা করুন আমি এখনই ওদের থেকে টাকা নিয়ে আসছি এসে আপনাকে দিচ্ছি ”
কে শুনে কার কথা ফুচকাওয়ালা ঘুরে এসে অভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলে ” টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আপনাকে কোথাও যেতে দিবো না টাকা দিন আগে তারপর যেখানে ইচ্ছা যাবেন। ”

অভ্রর প্রচুর রাগ হচ্ছে এখন নীল এর উপর কিন্তু এখান থেকে বেরোতে পারলে তো নীল কে দেখবে। ওইদিকে রাস্তার পাশে অনেক গুলো মানুষকে এক সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মানুষের ভীড় ঢেলে সামনে যায় দেখার জন্য এত মানুষ একসাথে কি দেখছে সবার সামনে এসে যা দেখল তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না নীল, তানজু, কাজল, তানিয়া চারজনের হাত পা কাঁপতে শুরু হলো। ওই লোকটা যে গাড়িতে ছিল সে সহ আরও নয় জন মানুষের মৃত দেহ দেখে বোঝা যাচ্ছে এদেরকে কেউ অনেক নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন খুন করছে নীল এর মাথা ঘুরছে।
অভ্র কোনো উপায় না পেয়ে নিজের হাতের দামী ঘড়িটা ফুচকাওয়ালা কে দিয়ে দেয় আর ওখান থেকে ছুটে আসে। সামনে এত ভীড় দেখে অভ্র তারাহুরো করে দৌঁড়ে সেখানে আসে মানুষ ঠেলে সামনে যায় গিয়ে দেখে নীল কাঁপছে এই বুঝি মাথা ঘুরে পরে গেলো সাথে সাথে অভ্র নীলকে ধরে ফেলে পরা থেকে বাঁচিয়ে নেয়। পাতিলা কোলে তুলে নিয়ে ভীড় থেকে বের হয়ে আসে। তানজু তানিয়া কাজল ওদের হাত ধরে ওরা তিনজন ওখান থেকে নিয়ে অভ্রর পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে।

হাঁটতে হাঁটতে কাজলের বাড়িতে চলে আসে নীল এর এমন অবস্থা দেখে সবাই জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তাদের প্রশ্নের উত্তর আকাশ ও শুভ দিচ্ছে অভ্র নীলকে কোলে নিয়েই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় কাজল ওর রুম দেখিয়ে দিলে অভ্র নীলকে রুমের মধ্যে নিয়ে ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

দুই ঘন্টা পর…
সবাই রুমের মধ্যে বসে আছে এখনও নীলের জ্ঞান ফিরছে না দেখে সবাই অনেকটা চিন্তায় পরে গেছেন। কাজলের বাবা গ্রামের একজন সম্মানিত মানুষ সে এই ঘটনা শোনার পরেই সেই জায়গাতে চলে গেছেন।

হঠাৎ নীল চিৎকার দেয়।
নীল এর চিৎকারে সবাই ছিটকে উঠে বিছানার পাশে দৌঁড়ে এসে নীলকে জরিয়ে ধরে তানজু তানিয়া কাজল। সোফার উপর বসে আছে অভ্র, তন্ময়, আকাশ, শুভ নীল এর জ্ঞান ফিরেছে দেখে সস্তি পেলো অভ্র সামনে টেবিলের উপর থেকে জগটা নিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে হেঁটে নীল এর সামনে বিছানায় বসল গ্লাসটা নীল এর দিকে বাড়িয়ে দিলো। নীল গ্লাসটা নিয়ে একটু পানি খেলো তারপর গ্লাস টা ফিরিয়ে দিতে নিলে অভ্র বলল।

” সবটুকু পানি খাও ”

নীল অভ্রর দিকে একবার তাকিয়ে আবারও গ্লাসে ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দিয়ে পানি সবটা খেয়ে নিলো। খালি গ্লাস টা অভ্রর দিকে বাড়িয়ে দিলে অভ্র গ্লাস টা নিয়ে নীল এর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।

– তুমি তাদের দেখে এত কেনো ভয় পেলে তুমি কি তাদের চেনো?

নীল অভ্রর দিকে না তাকালো না প্রশ্নের উত্তর দিলো নীল এর চুপ থাকা অভ্রর মেজাজ গরম করিয়ে দিচ্ছে অভ্র বিছানার উপর অনেক জোরে হাত দিয়ে বারি দিলো বিছানার খাট পর্যন্ত কেঁপে উঠল আর ধমক দিলো নীলকে আর বলল।

– নীল বলো!

অভ্রর এমন আচরণে কেঁপে উঠল নীল এখন অভ্রকে দেখতে খুব ভয়ানক লাগছে আঁড়চোখে দেখতেই কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে নীল এর কথা কি ভাবে বলবে। তানজু নীল এর চুপ থাকা দেখে কালকের ঘটনা উপলব্ধি করল অভ্রর সামনে এবার অভ্র চুপ করে নীল এর সামনে থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
অভ্রর পেছনে বাকিরাও তারপর অভ্র যা করল একদম ভাবনার বাহিরে অভ্র রুম থেকে বের হয়ে সোজা

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here