অভ্র_নীল (সিজন-০২) #পর্ব_১১,১২

0
537

#অভ্র_নীল (সিজন-০২)
#পর্ব_১১,১২
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখিকা)
১১

সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আকাশ শুভ অভ্রর পেছনে যায়। অভ্র বাড়িতে অনেক দূরে জঙ্গলে চলে যায় সেখানে একটা গাছের গায়ে হাত দিয়ে পাঞ্চ মারছে দুই তিনটা পাঞ্চ মারতেই হাত দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু হয়। পেছন থেকে আকাশ শুভ অভ্রকে ধরে আর বলে পাগলমো কেনো করছে?
অভ্র ওদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলে।

‘ ওদের সবগুলোকে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু মাটি চাপা দেওয়া হয়নি কেনো? ‘

শুভ ধীর কন্ঠে অভ্রর উদ্দেশ্যে বলল!

” অভ্র রিলাক্স ব্রো এত হাইপার হস না প্লিজ ”

অভ্র শুভর দিকে তাকাল আকাশ অভ্রর দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো।

” তুই চলে যাওয়ার পরপরই আমরা মাটি চাপা দিয়ে দিতাম কিন্তু সেখানে গ্রামের কিছু মানুষ পৌঁছে যায় আর আমরা বডিগুলো সেখানে রেখে আসি কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ কোনো প্রমান হবে না কোনো ছাপ পাবে না শরীরে আমরা সেই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি ”

অভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে কন্ঠ কঠোর কর্কট স্বরে বলল।

” ভুলেও জেনো এমন ভুল আর না হয়। ”

কথাগুলো একটু শক্ত ভাবেই বলেছে আকাশ শুভ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দু’জনের দিকে একবার তাকিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে সাদা রুমাল বের করে রক্তাক্ত হাতে অন্য হাত দিয়ে পেঁচিয়ে নিলো আকাশ আর শুভর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারল এবং এলো মেলো পা ফেলে সেখান থেকে হেঁটে চলে গেলো।

আকাশ ও শুভ অভ্র চলে আসার পরও বেশ খানিকক্ষণ ওখানেই কাছের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে জঙ্গলের মাঝ বরাবর গাছের শরীরে রক্ত গাছের নিচে মাটিতে রক্ত এগুলো পুলিশ বা কারো চোখে পরলে তখন অন্য প্রবলেম হতে পারে ভেবেই দাঁড়িয়ে রইল জঙ্গলের ঠিক বা পাশের দিকে কিছুটা হেঁটে গেলেই একটা পুকুর। দু’জনে সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো জঙ্গলের জোরজার পার করে পুকুরের সামনে চলে আসে আর আশে পাশে দুজনেই চোখ বুলাতে লাগল পানি তো আর হাতে করে নিয়ে যাওয়া যাবে না কিছু একটা পাত্র লাগবে যেটা তে পানি নিয়ে যেতে পারবে। এদিক সেদিক তাকাতেই লক্ষ্য করল পুকুরের পাশে ঘাটে একটা ভাঙ্গা বোল পরে আছে সাথে একটা ময়লা ভর্তি বোতল দুজনের দুইটা হাতে নিয়ে নিলো আর পুকুরের পানিতে সুন্দর করে ধুয়ে নিয়ে পানি ভরে নিলো। আবারও জোরজার পার করে আগের জায়গাতে চলে আসে। ছিটিয়ে পানি দিয়েও রক্ত তেমন উঠল না তাই গাছ থেকে পাতা ছিড়ে গাছের শরীর থেকে ঘষে রক্ত তুলে পানি দিয়ে ধুয়ে দিলো মাটিতে জায়গায় জায়গায় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পরে আছে সেগুলো জুতো দিয়ে ঘষে পানি ঢেলে দেয়। তারপর দু’জনে আগের স্থানে পৌঁছে যায় পুকুরের পানিতে হাত ধুয়ে নেয় ভাঙ্গা পাত্র গুলো যেখান থেকে নিয়েছিল সেই আগের স্থানে রেখে দেয় দু’জনে তখনই জঙ্গল থেকে প্রস্থান করল।

এদিকে পুলিশ এসে উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞাসা বাধ করছেন

” বডি গুলো প্রথম কে দেখেছে এখানে আর এদেরকে গ্রামে আগে দেখেছে কি না! ”

গ্রাম থেকে কিছুটা দূরেই শহর আর শহরে ঢুকতেই পুলিশ স্টেশন তাই পুলিশ আসতে বেশি সময় লাগেনি। পুলিশের কথা শুনে উপস্থিত অনেকেই ভয় পেয়ে যায়। গ্রামের মানুষ অনেক সহজ সরল হয় তারা অল্পতেই ভয় পায় আর এখন তো মার্ডার কেস না জানি পুলিশ তাদের কাউকে ধরে নিয়ে যায় নাকি এইসব মনে মনে ভাবছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর আদিল অনেক স্মার্ট ও বুদ্ধিমান তাই উনি সবার মুখের দিকে এক নজর তাকাতেই বুঝে জান সবার ভেতরে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে ভয়ে ভীতু হয়ে আছে সবাই।

ইন্সপেক্টর আদিল সবার উদ্দেশ্যে শান্ত গলায় বললেন।

” ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি বা আমরা কেউ আপনাদের কোনো ক্ষতি করবো না শুধু সত্যি বলুন এরা কিন্তু মোটেও সাধারণ লোক ছিল না এরা এক একজন ক্রিমিনাল এদের নামে পুলিশ স্টেশনে হাজারটা FIR ফাইল পরে আছে এদেরকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না এরা একটা বড় গ্যাং এর সাথে জড়িত। আর পুলিশে এদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছিল না আমরা আপনাদের কাছে রিকুয়েষ্ট করছি সত্যি কথা বলার জন্য যে যা জানেন সবটা সত্যি করে বলেন আমি কথা দিচ্ছি কারো কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। ”

গ্রামের মানুষের কথা শুনে আদিল আশাহত হলেন। কেউ কিছুই বলতে পারল না কেউ জানে না এরা কারা কোথা থেকে ও কখন এসেছে৷ একজন তো বলল।
সে ও তার সঙ্গী রা রাতে মাছ ধরতে বড় নদীতে যায় সেখান থেকেই ফিরছিল তখন এখানে এদের বডি দেখতে পায় আর আশে পাশের মানুষ কে রাতের গভীরে ঢেকে জাগিয়ে তোলে।। আদিল লোকটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারল.

” রাতে দেখেছেন তাহলে রাতেই কেনো কল দেননি আমাদের সকালে কেনো দিয়েছেন? ”

লোকটা থুতুমুতু খেয়ে বলল

” আমরা তখন হঠাৎ এতগুলো মানুষের বডি দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম সকালের সূর্য ফুটতেই তো আপনার কল করে জানিয়ে ছিলাম আপনাদের মধ্যে কেউ একজন কল রিসিভ করে ছিল। তারপরেও আপনাদের আসতে দেরি হয়ে যায় তাই আমি আবার কল দেই পরে আপনি রিসিভ করেন আর এখানে চলে আসেন।

চলবে?

#অভ্র_নীল
#সিজন_০২
#পর্ব_১২
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখনীতে)
____________
রাত প্রায় সাড়ে ১১টা হঠাৎ কাজলের ফোন বেজে উঠল কাজল ওয়াশরুমে ছিল। ফোন বাজছে শুনে বলল।
” রুমে কি কেউ আছিস থাকলে কল রিসিভ কর ”

নীল সোফার উপর বসে হেলান দিয়ে ফোন স্ক্রল কর ছিল কাজলের কথা কানে আসতেই উঠে আঁড়চোখে কাজলের ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো। কল স্কিনে ফুটে উঠেছে কলিজা নাম দেখেই নীল বুঝে যায় কে কল দিয়েছে। কল রিসিভ না করেই নীল কাজলের উদ্দেশ্যে বলল।

” তোর কলিজা কল দিয়েছে তারাতাড়ি বের হয়ে আয় ”

কলিজা মানে তন্ময় কল দিয়েছে শুনে তারাহুরো করে কাজল বের হলো বাথরুম থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে ফোন টা হাতে নিলো ততক্ষণে অবশ্য কল কেটে গিয়েছিল কাজল কল বেক করল অপর পাশ থেকে একটা মিষ্টি ভয়েস উপলব্ধি করল উপর পাশ থেকে যা যা বলল কাজল শুধু হা হু করেই উত্তর দিলো কিছুক্ষণ পর কল কেটে দিলো। তানিয়া তানজু ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে জেগে আছে শুধু কাজল আর নীল।
কাজল নীলের দিকে গোলগোল চোখ করে তাকালো আর বলল।
” নীল উঠ আর চল আমার সাথে একটু ”

নীল ফোনের উপর চোখ রেখেই উত্তর দিলো।
“কোথায় যাবো এত রাতে?”

কাজল কোনো কিছু না বলে নীল এর হাত থেকে ফোনটা টেনে কেঁড়ে নিলো হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বের করিয়ে নিয়ে বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। নীল অপলক দৃষ্টিতে চোখ ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে কাজলের দিকে কাজল বাড়ির এদিক সেদিক চোখ বুলাচ্ছে কাউকে দেখা যাচ্ছে না তো আবার। কাউকে দেখতে না পেয়ে দরজা খুলে কাজল নীল এর হাত ধরে বেরিয়ে পরে।

বাড়ির পেছনের দিকে দু’জনে হাতে হাত ধরে দাড়িয়ে আছে ঘুটঘুটে অন্ধকার। গ্রামের প্রতিটা ঘর আলোহীন এখানে শহরের মানুষদের মতো গ্রামের মানুষেরা অর্ধেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে না সন্ধ্যে নেমে এলেই ঘুমিয়ে পরে নির্জন এি রাতের আঁধারে দু’টি মেয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই নীল এর গা কেঁপে উঠছে দূর দিগন্ত থেকে ভেসে আসছে রাত জাগা ক্ষুধার্ত পশুদের আর্তনাদ তারা জেনো খাবারের খোঁজে ডাকছে আর এদিকেই আসছে। নীল ভয়ে ঘেমে একাকার হয়েগেছে কাজলের হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিস্তেজ কন্ঠে কাজলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারল..

” এই ভয়ংকর রাতে আমরা দু’জন এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেনো? চল ভেতরে যাই না জানি কোন গাছের আগায় জ্বীন-ভূত বসে আছে আবার কি সব পশু ডাকাডাকি করছে আমার খুব ভয় করছে চল প্লিজ আমি এত তারাতাড়ি মরতে চাই না। আমার এখনো বিয়ে হয় নাই.”

কাজল নীল এর হাত নিজের হাতের উপর থেকে ছাড়িয়ে কন্ঠ কঠোর করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল।

” আমার মনে হয় আগে তিনটা চারটা বিয়ে হয়েছে? ”
“না তা হয় নাই কিন্তু দুইদিন পরে তো হবে আমার তো তাও হবে না কবে যে হবে সেটাও জানি না এখন এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চল ভেতরে যাই দুইদিন পর তো বিয়ে হবেই বাসর ঘরে ঢুকে ইচ্ছে মতো দেখে নিস এখন চল প্লিজ ভয় লাগছে আমার ”
” তুই এদিক সেদিক তাকাচ্ছিস কেন তাই তো ভয় পাচ্ছিস চোখ বন্ধ করে রাখ কোনোদিকে তাকাস না তাহলেই ভয় লাগবে না। ”

” এই অবস্থায় চোখ বন্ধ করে রাখা যায়? ”

” আচ্ছা তাহলে ঘোর আমার দিকে আমি তোর চোখে কাপড় বেঁধে দিচ্ছি তাহলেই আর কিছু দেখতে পাবি না আর দেখতে না পেলে ভয় ও লাগবে না ”

কথাটা বলে কাজল ওর কোমড়ে গুঁজে রাখা রুমালটা বের করে নীল এর চোখে বেঁধে দিলো আর বলল!

” এখন টু শব্দ টিও করবি না চুপচাপ আমার হাত ধরে হাঁট বুঝলি ”

কাজলের কথা শুনে নীল আবারও মুখ খুলে জিজ্ঞেস করল!

” কোথায় হাঁটবো কোন দিকে হাঁটবো? ”
“বলেছি না কোনো প্রশ্ন করবি না চুপচাপ হাত ধরে হাঁটা শুরু কর আমি যেদিকে নিয়ে যাবো সেদিকেই যাবি! ”

নীল আর প্রতিউত্তরে কিছু বলল না শুধু দু’বার মাথা নাড়ালো। হাত ধরে দু’জনে হাঁটছে নীল কিছুক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও আর থাকতে পারছে না শিয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে খুব কাছে থেকে তাই নীল ভয় পেয়ে হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরল। হাতটা বেশ সফট নরম ধরে থাকতে খুব ভালোই লাগছে। নীল বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারল না মুখ ফসকে বলেই ফেলল।

” কাজকলা তোর হাতটা এত সফট হলো কি করে অনেক নরম আমার বেশ ভালোই লাগছে ধরে থাকতে ইচ্ছে করছে ঠোঁটের সামনে এনে ঠাসস করে একটা চুমু দিয়ে দেই ”

নীল এর কথা শুনে নীল এর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। নীল হাতটা নিজের ঠোঁটের সামনে এনে সত্যি সত্যি হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁটের আলতো পরশ একে দিলো। নীল এর ঠোঁটের পরশ হাতের উপর বেয়ে এক অজানা শিহরণ বয়ে গেলো অভ্রর হৃদয় জুড়ে নিজেকে শান্ত করার জন্য রাস্তার পাশের বড়ই গাছের কাটার উপর হাত মুঠ করে চেপে ধরল। হাতের মধ্যে কাটা ফুটে রক্ত বের হলো অভ্রর অনূভুতি চাপা পরে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে নীল এর হাত ধরে আবারও হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ চলে এসেছে নীল শুধু বকবক করেই চলেছে কিন্তু পাশে থাকা কাজল কোনো সাড়াশব্দ দিচ্ছে না এটা ভেবেও নীল অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে।

” কাজল তুই চুপটি মেরে আছিস কেনো কিছু তো বল। তুই চুপ করে আছিস আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো ভূতের সাথে হাঁটছি ”

কিছুদূর হাঁটার পর নীল অনূভব করল পায়ের নিচে সিঁড়ি তাই সাবধানে এক পা দু পা করে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। সিঁড়ি দিয়ে নামার পর ঘাট থেকে পা বাড়িয়ে কিছু একটার উপর পা রাখল নীল এর হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে যাতে নীল পানিতে পরে না যায়।
নীলকে বসানো হলো নীল এদিক সেদিক হাত বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কিসের উপর নীলকে বসানো হয়েছে কিন্তু নীল কিছুতেই বুঝতে পারছে না কি এটা শুধু মনে হচ্ছে কাঠ এদিকে নীল অনেক বার কথা বলছে কিন্তু কাজল কোনো সাড়াশব্দ দিচ্ছে না এবার অতিরিক্ত হচ্ছে এত বার ডাকার পরও সাড়া দিচ্ছে না দেখে নীল চোখের উপর থেকে কাপড় টা এক টানে খুলে ফেলল আর সামনে দেখল একটা বার্থডে কেক কেকের উপর মোমবাতি জ্বলজ্বল করছে। কেক আর জলন্ত মোমবাতি দেখে নীল এর মুখে খুশির জলক ফুটে উঠল। মুখে হাসি রেখে নীল সামনে তাকালো। দুই পায়ের মধ্যে দুই হাত মুঠি বন্ধ করে রেখে ঝুঁকে বসে আছে মোমবাতির আলোতে দেখতে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রং লম্বা ঘন কালো চুল কিছুটা কপালের উপর এলোমেলো হয়ে পরে আছে পরনে নীল টি-শার্ট দেখতে জাস্ট অপূর্ব লাগছে নীল জেনো চোখের পলক ফেলতে পারছে না চোখ দুটো অভ্রর সৌন্দর্যের উপর এতদিন অভ্রর দিকে তেমন ভাবে না তাকালেও আজ নীল এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মোমবাতির আলো অভ্রর মুখে পরছে যা নীলকে অভ্রর প্রতি আকর্ষিত করছে। অভ্র বেশ কিছুক্ষণ নীল এর দিকে তাকিয়ে রইল। নিচের দিকে তাকিয়ে হালকা মৃদু হেঁসে জিব দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো ডান হাত দিয়ে দু/তিনবার চুটকি বাজালো চুটকি বাজার শব্দে নীল এর হুশশ ফিরে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে বারবার এবং সামনে তাকাচ্ছে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করছে অন্ধকারে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না তবে নীল এটা বুঝতে পেরেছে ও মাটিতে নেই জলা স্থলে আছে মানে পানির উপর আছে আর এতক্ষণ যে হাত বুলিয়ে শুধু কাঠ পাচ্ছিল সেটা আসলে নৌকা ছিল। নীলকে চিন্তিত দেখে নীল এর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ল..

” কি দেখছো? ”

অভ্রর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নীল প্রশ্ন ছুড়ল।

” এইসব কি আমি এখানে কি করে এলাম? কাজল কোথায় কোন জায়গা এটা, কোথায় আছি আমি, আপনি কোথা থেকে এলেন ”

অভ্র একটু নড়েচড়ে বসল আর ধীর কন্ঠে বলল।
” পায়ে হেঁটে এসেছো! কাজল তন্ময়ের সাথে, এটা হচ্ছে পুকুর, এটা হচ্ছে পানির উপরের জায়গা, তুমি এখন নৌকার উপরে আছো! আর আমি তোমার পাশে তোমার হাতে হাত রেখে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এসেছি! ”

অভ্রর বলা কথাগুলো শুনে নীল রেগেমেগে দাঁড়িয়ে বলল।
” আপনি ইয়ার্কি করছেন আমার সাথে? ”

নীল উঠে দাড়ানোর সাথে নৌকা ও একটে হেলেদুলে পরে যার ফলে নীল একটু ভয় পেয়ে যায়। অভ্র সামনের টেবিল টা শক্ত করে ধরে ভ্রু কুঁচকে নীল এর দিকে তাকিয়ে বলল।

” চুপচাপ এখানে শান্ত হয়ে বসো আর নয়তো ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিব! ‘

নীল চোখ ছোটো-ছোটো করে কপাল ভাজ করল মনে মনে অভ্রর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করল।
এত রাতে পানিতে ফেলে দিলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না জানি সাপ-টাপ কোই আছে আবার ঠান্ডা পানি এইসব কল্পনা করে চুপটি মেরে বসে যায়।

সময় ঘড়িতে ১২টা বাজতেই মোবাইলে টুং টুং বেজে উঠল। অভ্র পাশে থেকে ছুড়িটা নিয়ে নীল এর দিকে বাড়িয়ে দিলো। আর মুখে বলতে থাকল…

Happy birthday too you….my dear wifey…

ছুড়িটা হাতে নিয়ে নীল অভ্রকে দেখছে আর ছুড়িটা ঘুরাচ্ছে। অভ্র নীল এর মাথায় কি চলছে বুঝে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে হেঁসে ফেলে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে তবুও জেনো হাসি থামছে না। এই হাসির দিকে জেনো আ জীবন তাকিয়ে থাকা যাবে। বারবার অভ্রর সৌন্দর্যের কাছে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে নীল এর দু’টি চোখ তবুও নিজেকে সামলে নীল বিরক্তিকর ভাব নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

“আপনি এভাবে হাসছেন কেন”

অভ্র হাসা বন্ধ করে নীল এর দিকে তাকালো আর বলল।

“তোমার চিন্তা ধারা বুঝতে পেরে ”
“আমি কি ভাবছি সেটা আপনি বুঝেছেন এটাই বলতে চাচ্ছেন? ”
“হুম”
“what the ফাউ কথা”
“ফাউ কথা না সিরিয়াস কথা”
“আচ্ছা তাহলে বলেন তো আমি কি ভাবছিলাম?”
” তুমি ভাবছিলে”
“কি?”
“তুমি ভাবছিলে”
“কিহহহ?”
“ছুড়িটা আমার গলায় চালিয়ে দিবে আর এখান থেকে পালিয়ে যাবে”

নীল হা করে তাকিয়ে রইল অভ্রর মুখের দিকে সত্যি সত্যি কিভাবে বুঝলো মনে মনে ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পরল।
অভ্র হাত কপালে ঠেকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করল। মোমবাতি ফু দিয়ে নিভাতে আর এক কাটতে কিন্তু নীল মুখ ভেংচি দিয়ে ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। সেটা অভ্রর চোখ এড়ালো না ও উঠে গিয়ে নীল এর পাশে বসল। এই নির্জন রাতে দু’টি ছেলে মেয়ে খোলা আকাশের নিচে সাথে ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগছে কানের কাছে সুর তুলছে মশা মাছি এমন সময় গা ঠান্ডা হয়ে আসছে হালকা বাতাসে নীল কাঁপছে শীতে।
শীত এখনও পুরো পুরি যায়নি আর পুকুরে পানির উপরে তো ঠান্ডা শীতল বাতাসে নীলকে এমন সময় অভ্র এসে নীলের পাশে বসে নীলের হাতের উপর হাত রাখল নীল কেঁপে উঠল। ভীতু চোখে অভ্রর দিকে তাকালো অভ্র নেশা ভরা চোখের গভীরে তলিয়ে গেলো। অভ্র নীলের হাত ধরে ছুড়ি দিয়ে কেকের গায়ে ছুঁয়ালো। নীলের চোখের দিকে তাকিয়ে কেক কেটে ছুড়ি পাশে রেখে নীল এর মুখের সামনে ধরল নীল অভ্রর চোখের গভীরে এতটাই তলিয়ে গিয়েছিল যে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না কি করছে কি না করছে সে জ্ঞান টাও হারিয়ে ফেলল। অভ্র কেকের পিছ নীলের মুখের আরেকটু সামনে ধরতে নীল হা করল এক কামড় কেকে বাকি অংশ কেক অভ্র নিজে মুখে দিলো। ” সবাই বলে একেক জনের খাওয়া টা খেলে নাকি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী অভ্র নীল এর মুখের জুটা খেলো যাতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় অনেক এত বেশি যেখানে পিপীলিকার যেতে পারে অত টুকু ও রাস্তা না থাকে। ” অভ্র নীল এর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে নীল ও অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে এমন সময় চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠল জিজিঁ পোকার আলো তে অভ্র নীল এর চোখের সামনে মুখ নিলো। নীল অভ্রকে কাছে আসতে দেখে খিচে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো। অভ্র নীলের একদম কাছে চলে আসে নীলের ডান হাতের উপর অভ্রর হাত রাখল নীল এর হার্টবিট জোরে জোরে বিট করতে শুরু করল। অভ্র নীল এর ঠোঁটের কাছে নিজের মুখ নিলো। অভ্রর গরম নিঃশ্বাস নীল এর মুখের উপর পরছে। নীল এর হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। অভ্র নীল এর ঠোঁট জোড়ার দিকে তাকিয়ে রইল ঠোঁট জোড়াও কাঁপতে শুরু করেছে। তা দেখে অভ্র ঠোঁট বাঁকা করে এক গাল হাসি দিলো। নীল এর কানের কাছে মুখ নিয়ে কানে কানে বলল।

” ভয় নেই আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না। কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে আমার নেই আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি আর যাকে ভালোবাসা যায় তার প্রতি খারাপ চিন্তা ভাবনা কখনো আসে না আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না কিন্তু আমি বাসি নিজের থেকেও বেশি আজ তোমার জন্মদিন এই দিনে তোমার জন্ম হয়েছিল তাই এই দিন টা কে সরনীয় করার জন্য কাজল ভাবির সাহায্য নিয়ে তোমাকে এখানে নিয়ে আসছি শুধু তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করার জন্য অন্য বাজে intension আমার নেই। অবৈধ ভাবে তোমাকে টাচ করার চিন্তা আমি কল্পনা ও করি না। সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে তোমাকে চাই! তুমি তাকাতে পারো আর তোমাকে ঘিরে যারা তোমার জন্মদিনের সাক্ষী হতে এসেছে তাদের কে দেখো কতই না সুন্দর লাগছে। জোনাকিপোকাদের সোনালী আলো সব জায়গায় ছড়াছড়ি দেখে মনে হচ্ছে এই সোনালী আলোর মধ্যে একজন রাজকন্যা বসে আছে যার রূপ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের আসায়। তারা জেনো তোমার সৌন্দর্য বাড়াতে এসেছে তোমার জন্মদিনের সাক্ষী হতে এসেছে তারা চোখ খুলে দেখো আর কান পেতে শুনে তাদের জিজিঁ শব্দে গান।

কথাগুলো বলে অভ্র নীল এর সামনে থেকে সরে যায় হাতের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয় আগের জায়গায় গিয়ে বসে পরে। নীল আলতো চোখে চোখ খুলে তাকালো। চারদিকে সোনালী জোনাকিপোকা ঝিলমিল করছে সাথে তাদের জিজিঁ শব্দ। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য নীল আজ প্রথম উপলব্ধি করেছে আর তা শুধু
অভ্রর জন্য এই জোনাকি পোকার কথা অনেক শুনেছে কখনো দেখা হয়নি কারণ শহরে জোনাকি পোকা নাই বললেই চলে। এই অপরূপ দৃশ্য মন কেড়ে নিয়েছে নীল এর পোকা গুলোর আলোতে সব কিছু জ্বলজ্বল করছে সব কিছুই দেখা যাচ্ছে। নীল এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে আর খিলখিল করে হাসছে মুগ্ধ হয়ে দেখছে অভ্র বেশ খানিকক্ষণ বাধ হঠাৎ অভ্রর ফোন বেজে উঠল। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল কাজল এর নাম্বার থেকে কল আসছে কল রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে বলল।

” অভ্র ভাইয়া যেখানেই থাকো জলদি নীলকে নিয়ে চলে আসো আমাদের এখনই বাড়ি ফিরতে হবে ”
” ওকে আসছি দশ মিনিট টাইম দাও ”

কল কেটে দিয়ে নীলকে বলল।
” ঠিক হয়ে বসো আমরা ঘাটে ফিরে যাবো। ”
নীল মুখ কালো করে নিলো কপাল ভাজ করে ঠোঁট জোড়া চিবিয়ে চিবিয়ে বলল।
” এখনই চলে যেতে হবে এত তারাতাড়ি আর একটু থাকি না। ”
নীল এর কথা শুনে অভ্ররও ইচ্ছে করছে না ফিরে যেতে কিন্তু ও যে নিরুপায়। নীলকে বসতে বলে নৌকা ঘুরিয়ে নিলো।

রাস্তায় দু’জনে পাশাপাশি হাঁটছে নীল আঁড়চোখে অভ্রকে উপলব্ধি করছে অভ্রর চোখের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসছে হঠাৎ পথে থাকা কিছু একটার উপর পা লেগে পরে যেতে নিলে অভ্র নীল কে ধরে ফেলে। নীল আনইজি ফিল করছে অভ্রর স্পর্শ করায় তা বুঝে নীলকে দাঁড় করিয়ে অভ্র সরে যায়। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে হাঁটছে নীল পিছু পিছু হাঁটছে। হঠাৎ অভ্রর সামনে গিয়ে বলল।

” আপনি সিটি বাজাতে পারেন?”
“কেনো কোনো সন্দেহ আছে?”
নীল এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন শুনে সিটি বাজানো বন্ধ করে ভ্রু কুঁচকে পাল্টা প্রশ্ন করল। নীল অভ্রর কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো আবারও হাঁটতে শুরু করে বলল।

“সন্দেহ নেই তবে আমার সিটি বাজিয়ে সুর তুললে ওটা শুনতে খুব ভালো লাগে। ”
নীল এর কথা শুনো এবার অভ্র সিটিতে সুর ঢুকালো। দু’জনে হাঁটতে হাঁটতে কাজল আর তন্ময় এর সামনে চলে আসে। নীল কাজলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কাজল বলে।

“happy birthday jan”

নীল প্রতিউত্তরে কিছু বলল না ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল কাজলের দিকে অভ্র আর তন্ময় বিদায় নিয়ে চলে গেলো বাইকে উঠে নীল পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইল অভ্রর যাওয়ার দিকে তখন কাজল নীল এর কাঁধে হাত রেখে বলল।

” এভাবে তাকিয়ে থাকিস না নজর লেগে যাবে ”

কাজলের কথায় নীল এর হুশশ ফিরে পথের দিক থেকে চোখ সরিয়ে কাজলের দিকে চোখ ছোটো-ছোটো করে তাকালো। কাজল নীল এর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।

” কেমন ছিল First date সোনা”

এবার বুঝি একটু বেশিই বলে ফেলেছে কাজল। নীল দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

” আমার চোখ বেঁধে ওর সাথে পাঠিয়ে দিলি আর এখন বলছিস ডেট কেমন ছিলো বজ্জাত ছেড়ি আজকে তোর হচ্ছে ”

কথাটা বলে নীল কাজলের পেছনে ছুটল। দু’জনেই দৌঁড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পরল দরজা লাগাতে গিয়ে জোরে শব্দ হলো। বাহিরে রুম থেকে কাজলের ছোটো চাচা চেচিয়ে উঠল আনতাজি প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

” ওখানে কে রে কে ওখানে? ”

কাজল আর নীল ভয় পেয়ে হাত ধরে দু’জনে দিলো দৌঁড় এক দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় তারপরে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। দু’জন দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে সোফার উপর বসে পরল।
কে দেখে ওদের হাসি।
হাসি থামিয়ে কাজল আবারও প্রশ্ন ছুড়ে মারল।
” কি বলবো অভ্র ভাইয়া উম্মাহ টুম্মাহ দিছে নাকি রে ওইদিনের মতো? ”
” ইশশ তোর লজ্জা লাগে না এইসব জিজ্ঞেস করিস?”
” না লাগে না তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এখন বল দিলো কি না?”
“ধ্যাত ওইসব কিছুই হয়নি। আর যা হয়েছে সবটা আমার কল্পনার বাহিরে এই রাতের কথা আমি কখনো ভুলবো না। এখন চল ঘুমাই। ”
” কি এমন হলো যা তুই ভুলতে পারবি না? ”
” আর কিছু বলতে পারবো না এখন চল ঘুমাই ”

কথাটা বলে নীল বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরল। চোখে মোটেও ঘুম নেই শুধু চোখের সামনে দৃশ্য গুলো ভাসছে অভ্রর কিউট ফেস মিষ্টি ভয়েস কানের কাছে বলা কথাগুলো গানে বাজছে রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল হচ্ছে এতদিন অভ্রকে তাচ্ছিল্য করলেও আজ অভ্র নীল এর মনের অনেক টা জায়গা দখল করে নিয়েছে। ওইদিকে অভ্রর ও সেম অবস্থা বারান্দার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর নীল এর কথা ভাবছে। অভ্রকে ভাবতে ভাবতে নীল ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। অন্য দিকে হঠাৎ অভ্রর ফোন বেজে উঠল কল রিসিভ করে অপর পাশ থেকে কিছু একটা বলল সেটা শুনে অভ্র কফির মগ টা ঠাসস করে নিচপ রাখল কল কেটে রুমে ঢুকে চোখ দিয়ে ইশারা করল। চারজনেরই এক সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরল।

পরেরদিন সকালে…

চলবে……?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here