অভ্র_নীল সিজন_০২ #পর্ব_১৯,২০

0
520

#অভ্র_নীল সিজন_০২ #পর্ব_১৯,২০
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখিকা)
১৯

নীল- তুমি যে এত রোমান্টিক জানা ছিল না। তোমাকে দেখে মনেই হয় না তুমি এত রোমান্টিক!

অভ্র- আচ্ছা? তো আমাকে দেখে কি মনে হয়?

নীল- গোমড়ামুখো, রাগী জাস্ট লাইক ভিলেন টাইপ!
অভ্র- আমি এত কিছু শুধু তোমার জন্য করেছি আর তোমার কাছে আমাকে ভিলেনের মতো লাগে আচ্ছা সমস্যা নেই!

কথাটা কিছু অভিমান নিয়েই বলল। নীল তার দিকে লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে উঠে দাঁড়ালো।
অভ্রর সামনে এসে সোজা তার কোলে বসে পরল। অভ্র তো রীতিমতো অবাক হলো নীল ওর দু গাল চেপে ধরে অভ্র’র কপালে দুই গালে চুমু একে দিলো আর বলল।

নীল- রাগ মলিন হয়েছে আমার জান টার?
অভ্র এক হাত তুলে নীল এর গালে রাখল মায়া ভরা চোখে নীল এর দিকে তাকিয়ে রইল।

অভ্র- আমার জানপাখির উপর আমি রাগ করে থাকতে পারি?
নীল- নাহ তো..!

নীল অভ্রের কোলেই বসে থাকল পুরো টা সময়। কোলে বসেই কাটা চামচ দিয়ে অভ্রকে খাইয়ে দেয়। অভ্র এক হাত দিয়ে নীলের কোমড় শক্ত করে ধরে অন্য হাত দিয়ে নীলকে খাইয়ে দেয়।

ঘাসের উপর বসে আছে দু’জনে নীল অভ্র’র কাঁধের উপর মাথা রেখে সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নদীর বুকে চাঁদের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে যা দেখতে খুব লোভনীয় লাগছে হাতে হাত রেখে কাঁধে মাথা রেখে চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত নীল।

সময়ের কোনো খেয়ালই নেই দু’জনের এক জনের। হঠাৎ অভ্রর ফোনে একটা কল আসে কলের রিংটোনে দু’জনেই ধ্যান ভাঙে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে অভ্র ভ্রু কুঁচকালো কল কেটে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। নীল ফোন হাতে নিয়ে টাইম লক্ষ্য করে ৪টা বেজে ২৬মিনিট ঘড়ির টাইম দেখে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো নীলকে বিচলিত দেখে অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।

অভ্র- কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
নীল- আমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দাও কিছুক্ষণের মধ্যে আজান দিবে আর আব্বু উঠবে আমাকে না দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
অভ্র- তোমার আব্বু এত সকালে কেনো উঠবে?
নীল- কেনো উঠবে মানে কি নামাজ আদায় করার জন্য উঠবে আর উঠে মসজিদে যাবে। মসজিদে যাওয়ার আমাকে আর আম্মুকে নামাজের জন্য ডেকে তুলে আর সেই সময় আমাকে না দেখলে কি হতে পারে ভাবতে পারছো আমাকে এখনই নামিয়ে দিয়ে আসো। নয়তো আমি একাই হাঁটতে হাঁটতে চলে যাবো।

অভ্র- তুমি সারারাত দিন হাঁটলেও বাড়ি পৌঁছাতে পারবে না আমরা এখন নদীর পাড়ে আছি শহর থেকে অনেক কিলোমিটার দূর।
নীল- প্লিজ!
অভ্র- এভাবে প্লিজ বললে পাথরও গলে যাবে চলো।

বাইক স্টার্ট দিলো নীল অনেক শক্ত করে জরিয়ে ধরলো অভ্রকে। আর সে যেত দ্রুত পারে নীলকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফুল স্পিডে বাইক চালাচ্ছে। ফজরের আজান দেওয়ার ১০ মিনিট আগে অভ্র নীলকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। বাইক থেকে নেমে এক দৌঁড়ে বাড়ির মধ্যে চলে যায়।
অভ্র সেখানেই বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নীল রুমে ঢুকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অভ্রকে চলে যেতে বললেই অভ্র আবারও বাইক স্টার্ট দেয়।

কথা অনুযায়ী ফজরের আজান পরলে নীলকে ডাকতে আসেন ওর বাবা কিন্তু এসে দেখে নীল সজাগ তাই খুশি হয়ে তিনি মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নামাজ আদায় করে নীল বিছানায় শুয়ে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।

আজ আর কলেজ যাওয়া হলো না সারারাত জেগে ছিল তাই এখনও পরে পরে ঘুমাচ্ছে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাচ্ছে। এদিকে কলের উপর কল দিয়ে বিরক্ত হয়ে গেছে।
ঘুম থেকে উঠে দেখে সকাল হয়ে গেছে। মুখের সামনে হাত দিয়ে হাই তুলতে তুলতে বলল।

নীল- দেখি তো কয়টা বাজে?

ফোন হাতে নিয়ে তো পুরো হা হয়ে গেছে নীল। এত গুলো মিসড কল একটাও শুনতে পায়নি। এখন সকাল নয় দুপুর হয়ে গেছে। ফোনের লক খুলে সাথে সাথে কল বেক করল।
কল রিসিভ করতেই উত্তম মাধ্যমে কতগুলো কথা শুনালো অন্তিমে কল কেটে দিলো রাগ দেখিয়ে।

নীল- এত কেউ ঘুমায় তোর ঘুমের কিছু একটা করতে হবে আমাকে বুঝা গেছে।

নিজেই নিজেকে বলে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
দুপুরে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে। মিসেস নাজমা নীল এর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ল।

নাজমা- সকালের ব্রেক ফাস্ট দুুপুর ১টায় করলে দুপুরের লাঞ্চ কখন করে মানুষ?
নীল- সরি আম্মু একদিনেই তো!
নাজমা- একদিন যে কবে প্রতিদিনে পরিনিত হবে সেটা বুঝতেও পারবা না এর পর থেকে জেনো এমন না হয়।
নীল- ওকে আম্মু!

বিকালে একটা লাল গোল জামা পরে নেয়। চোখে গাঢ় করে কাজল দেয় ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরে!

খোলা আকাশের নিচে হাত ধরে দু’জনে হাঁটছে আর নানান কথা বলছে। অভ্র মুখে হাসি রেখে নীলকে এক মনে দেখছে সেদিকে নীল এর কোনো খেয়ালই নেই ও তো ওর মতো বলেই চলেছে মাঝেমধ্যে কথার মাঝে হেঁসে দিচ্ছে।
এভাবেই চলতে থাকলো ওদের প্রেম কাহিনী। দু’জন দুজনকে ছাড়া কিছুই বুঝে না এখন। দেখতে দেখতে তানজিলা আর আকাশের বিয়ের দিন চলে আসলো।
বিয়ের কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই অভ্র নীল আর বাকিদের ও অনেক হাত ছিলো।
__________________
আদ্রিক: আম্মু তোমার আর আব্বুর বিয়ের গল্প শুনবো না তুমি স্কিপ করো। শুধু অভ্র নীল এর গল্প বলো।
তানজু: কি বললি তুই?
আদ্রিক: আমি আবার কি বললাম?
তানজু: আমার আর তোর আব্বুর বিয়ের গল্প শুনবি না। যা তোকে আর বলবোই না ধর একা একাই খা।

খাবার প্লেট টা আদ্রিকের হাতের উপর রেখে তানজু উঠে চলে গেলো।

রাতে তিনজনে এক সাথেই ডিনার কমপ্লিট করল। আদ্রিকের সাথে একটা কথাও বলেনি তানজু আদ্রিক খুবই বুদ্ধিমান ছেলে তার বুঝতে বাকি নেই তার আম্মু বেশ ভালোই রাগ করেছে। আদ্রিকের মুখটা চুপসে যায় সে ভাবনায় ব্যস্ত এর পরে যদি আর গল্প ওর আম্মু না শোনায় তখন ও কি করবে। যেভাবেই হোক ওর তানজুর রাগ ভাঙাতেই হবে চলে যায় নিজের রুমে।

তানজু আকাশের সাথে সংসার নিয়ে টুকটাক কথা বলল। কি লাগবে কোন কোন জিনিস ফুরিয়ে গেছে এইসবই বলে। আকাশ আজ অনেক ক্লান্ত প্রকাশ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর তানজুও আকাশের পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পরে।

_______

নীল- অভ্র প্লিজ আগের বারের মত আমাকে এইবারও ফিরিয়ে দিও না অভ্র অতিরিক্ত চাই তোমাকে অতিরিক্ত ভালোবাসি তোমাকে আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া। অভ্র প্লিজ আমাকে একবার জরিয়ে ধরে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া আমি যে অনেক ভালোবাসি তোমাকে আমার ধম বন্ধ হয়ে যাবে তুমি আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলে প্লিজ আমাকে একবার জরিয়ে ধরো প্লিজ কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলো আমি শুধুই তোমার যেমন আগে বলতে প্লিজ বলো অভ্র বলো না।

অভ্র- আমি চাই না তোমাকে সরে যাও আমার জীবন থেকে তোমার চেহারাও আমি দেখতে চাই না নীল মুক্তি দাও তুমি আমাকে চলে যাও আমার জীবন থেকে আর কখনো ফিরে এসো না জাস্ট চলে যাও।

কথাগুলো বলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। পেছনে ঘুরে এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে সোজা হেঁটে চলে যাচ্ছে। পেছনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠল…

নীল- আমি তোমাকে ভালোবাসি। অভ্র একটা কথা জেনে রেখো আমি নীলাঞ্জনা নীল আমার মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত শুধুই তোমাকেই ভালোবেসেছি।

কথাগুলো অভ্র শুনেও গুরুত্ব দিলো না। পেছনে না তাকিয়েই এক হাত তুলে নাড়াচ্ছে মানে ‘ বাই ‘ জানাচ্ছে।
আর তখনই এক চিৎকার দিলো।

নীল- অভ্রওওও…….

চিৎকার টা খুবই ভয়ংকর ছিলো চিৎকারে অনেক আহত কন্ঠ মিশে ছিলো। নীল এর এমন চিৎকার কানে আসতেই অভ্র পেছনে ঘুরে তাকালো এবার সেও চিৎকার দিলো।

অভ্র- নীলললললল!

________

তানজু- নীলললললললললল!

চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল। তানজুর চিৎকারে আকাশ ঘুম থেকে তারাহুরো করে উঠে দেখল তানজু প্রচুর ঘামছে সাথে কাঁপছে অনেক ভয় পেয়ে আছে সঙ্গে সঙ্গে আকাশ তানজুকে নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে নেয়। আকাশকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলে তানজু মুখে শুধু একটাই কথা।

– নীল, নীল, নীল।

আকাশ- তানু প্লিজ শান্ত হও নীল এর কিছু হয়নি। তুমি আবারও স্বপ্ন দেখেছো। তানু কান্না থামাও তানু।
বলে কয়েকবার ঝাঁকালো তানজু আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই চলেছে খাটের পাশেই ছিল টেবিলে বিছানা থেকে নেমে এক গ্লাস পানি এনে তানজুর হাতে দিলো। ঢকঢক করে সবটা পানি খেয়ো নিলো। তানজু নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয়।

স্কুল থেকে ফেরার পথে দোকান থেকে একটা চকলেট কিনে নিয়ে আসে আদ্রিক মায়ের রাগ কমানোর জন্য বাড়িতে এসে কলিংবেল চাপতে তানজু দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। ভেতরে ঢুকেই তানজুর দিকে চকলেট প্যাকেট বাড়িয়ে দেয় তানজু চকলেট দেখে মুচকি হাসি দেয়। তার বুঝতে বাকি নেই কেনো আদ্রিক চকলেট এনেছে পরের ঘটনা জানার জন্য তাই মাকে ঘুষ দিচ্ছে। তানজু ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে এক গাল হেঁসে বলল।

তানজু- আমি এখন ব্যস্ত হাতে কিছু কাজ বাকি আছে ওইগুলো হয়ে গেলেই শোনাবো ঠিক আছে। এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে না-ও..!

আদ্রিকের মুখের দিকে তাকালে তানজু সব ভুলে যায়। কারণ আগেই বলেছিলাম আদ্রিক দেখতে অনেকটা পুরো নীল এর মতো হয়েছে আর স্বভাবও নীল এর পেয়েছে। নীল ও ঠিক এমন টাই করতো যখন তানজু রাগ করতো দোকান থেকে সবগুলো চকলেট কিনে নিয়ে এসে তানজুর কোলে রাখতো আর ছেলেও নীল এর স্বভাব টা ধরে রাখছে।

পুরানো স্মৃতি মনে করতে চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। বা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো।

বিকালে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে তানজু চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। গল্প শোনার জন্য সে আজ বাহিরে বন্ধু দের সাথে খেলতেও যায়নি। তাই একটু আদর দেখাচ্ছে।

তানজু- তুই তো আমাদের বিয়ে কিভাবে হলো শুনতে চাস না তাই তার পর থেকেই বলি।

আদ্রিক- সমস্যা নাই তুমি ওখান থেকেই বলো।
তানজু- আমাদের বিয়ে বাকি ৪/৫ টা বিয়ের মতো নর্মাল ছিল তাই না বললেই হয়।
আমাদের বিয়ের ১সপ্তাহ পর নীল এর বাবা-মা ব্যবসার কাজে দেশের বাহিরে চলে যান নীল বাড়িতে একা থাকে কিন্তু নীল এর দেখভালের জন্য স্টাফ এর অভাব ছিলো না ওইদিন নীল অভ্রর সাথে ফোনে কথা বলছিল আর তখনই এক চিৎকার দেয় ফোনটা ফ্লোরে পরে অফ হয়ে যায় আর ওইদিকে অভ্র সব ছেড়ে…

চলবে?

#অভ্র_নীল
#সিজন_০২
#পর্ব_২০
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখিকা)

কানে ফোন লাগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে ওই পাশ থেকে কথা বলছে নীল শুধু হু হা হ্যাঁ হুম তে উত্তর দিচ্ছে।
অভ্র- ভয় লাগছে?
নীল- কেনো?
অভ্র- বাড়িতে আন্টি আঙ্কেল নেই তুমি একা আছো তাই!
নীল- না ভয় লাগছে না আমি অভ্যস্ত।
অভ্র- ভয় লাগলে বলো আমি এখনই চলে আসছি।
নীল- তুমি এসে কি করবে শুনি?
অভ্র- তোমাকে পাহারা দেবো।
নীল- প্রয়োজন নেই।

এদিকে নীল হেঁটে কিচেনে চলে যায়। টেবিলের উপর থেকে ছুড়ি ও ফল নিয়ে কাটছে টুকটাক শব্দ হচ্ছে! সেটা শুনতে পেয়েই প্রশ্ন ছুড়ল।

অভ্র- কি করছো তুমি বলো তো?
নীল- ওই ফল কাটছি..
অভ্র- তাহলে তুমি কথা বলছো কিভাবে?
নীল- ফোন কাঁধের উপর রেখে মাথা দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখেছি।
কথা বলতে বলতে নীল অন্য মনস্ক হয়ে পরে। আর তখনই ছুড়ি দিয়ে হাত কেটে যায়।

নীল- আহহহহহ….!
অভ্র- নীল কি হয়েছে হ্যালো নীল তুমি ঠিক আছো?

আর কিছু বলার আগেই ফোনটা কাঁধের উপর থেকে পরে বন্ধ হয়ে যায়। অন্য হাত দিয়ে কাটা হাত চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পরে চোখ দিয়ে পানি পরছে।
ওইদিকে কলিংবেল বাজতে একজন মহিলা স্টাফ দরজা খুলে পরিচয় জিজ্ঞেস করলে। মহিলাকে উপেক্ষা করে দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকে পরে আর পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মারে।

– কিচেন কোন দিকে?
স্টাফ- ওই দিকে।

হাত দিয়ে ইশারা করে বাম সাইডের দিকে দেখালো। অভ্র সেদিকেই ছুটে গেলো গিয়ে দেখে ফ্লোরে রক্ত দিয়ে ভরে গেছে তার মাঝে বসে হাত চেপে ধরে কাঁদছে। দৌঁড়ে গিয়ে সেখান থেকে টেনে তুলে। পকেট থেকে রুমাল বের করে কাটা হাতের উপর চেপে ধরে কিচেন থেকে বের হয়। দু’জন স্টাফ কিচেনের রক্ত ক্লিন করে।
এখন রক্ত বের হওয়া বন্ধ হয়েছে নীল এর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।

অভ্র- ফাস্ট হেড বক্স কোথায়?
নীল- ওই ড্রয়ারে আমি নিয়ে আসছি।
অভ্র- এখানে চুপ করে বসো।
নীল- নিশ্চুপ ……………..!
অভ্র- Excuse me miss!
মহিলা স্টাফ- জি স্যার!
অভ্র- আমাকে ড্রয়ার থেকে ফাস্ট হেড বক্স টা এনে দিবেন প্লিজ।
মহিলা স্টাফ- এখনই এনে দিচ্ছি।

হাত থেকে রুমাল টা খুলে খুব ভালো করে কাটা জায়গাটা ক্লিন করে দেয়। যত্ন সহকারে ও আলতো ভাবে ব্যান্ডেজ করে দেয়। নীল এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাত্রারিক্ত ক্ষোভ নিয়ে চেচিয়ে উঠল।

অভ্র- কেনো গিয়েছিলে কিচেনে?
নীল- বলেছিলাম তো খিদে খিদে পাচ্ছে তাই গিয়েছিলাম আর ফল দেখে খেতে ইচ্ছে করল হাতে নিয়ে কাটছিলাম তোমার সাথে কথা বলতে বলতে অন্য মনস্ক হয়ে পরেছিলাম আর তখনই ছুড়ি দিয়ে।

অভ্র- ছুড়ি দিয়ে হাত কেটে ফেলো তাই তো।
নীল- হুহহ!
অভ্র- আবারও হুহ বলছে।

রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে পাশে টি টেবিলের উপর খুব জোরে লাথি মারল। টেবিল কিছুটা দূরে উল্টে পরল। রাগে গজগজ করে বলল।

অভ্র- এর পর থেকে কিচেনে ভুলেও যাবে না যা প্রয়োজন হবে স্টাফ দের জানাবে এত গুলো স্টাফ থাকতে নিজের কি হাল করেছো। তুমি কি বুঝো না আমার আত্মা কষ্ট পায় তোমার কিছু হলে এরপরও যদি না হয় আমাকে বলবে আমি সব করে দেবো ২৪ ঘন্টা ছায়ার মতো থাকবো তবুও তোমার গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেবো না। নিজের খেয়াল রাখো জানপাখি তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি পাগল হয়ে যাবো।

নীল- আমার কিছু হয়নি দেখো তুমি!
অভ্র- হুশশ কে বলেছে কিছু হয়নি জানপাখি কত রক্ত বয়ে গেছে কতটা জাগা কেটে গেছে তোমার কতটা কষ্ট হচ্ছে আমার মাথায় রক্ত চেপে গেছে আমি তোমার কষ্ট ভাগ করতে চাই কিভাবে করবো বলো না।
নীল- অভ্র কি বলছো কি তুমি?
অভ্র- আমিই আমিই….
মাথা এদিক সেদিক করতেই একটু দূরে টেবিলের উপর একটা ছুড়ি দেখতে পেলো ফল কাটার ছুড়ি। হেঁটে গিয়ে ছুড়িটা নিয়ে হাতের উপর চালিয়ে দিলো রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। নীল চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এসে কিছু মহিলা স্টাফ দের ডাকে তারা এসে অভ্র’র হাত থেকে টেনে ছুড়িটা নিয়ে নেয়। অনেক কষ্টে এক হাত ব্যান্ডেজ করে দেয় অন্য মেয়েদের ধরতে দিচ্ছিল অভ্র তাই ওকেই করতে হলো তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। খানিকক্ষণ বাদ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল।

নীল- এত কেনো ভালোবাসো আমায়?
অভ্র- তুমি যে আমার প্রাণভ্রোমরা নীল। তোমাকে ছাড়া আমি এখন নিজেকে কল্পনা ও করতে পারি না। প্লিজ কখনো একা করে ছেড়ে যেও না।
প্রমিজ করো।
নীল- ওকে প্রমিজ করলাম কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না যাই হয়ে যাক আমি সব রকম পরিস্থিতিতে তোমার ঢাল হয়ে তোমার পাশে থাকবো। এই প্রমিজ নীল করলো তার অভ্র’র কাছে।
অভ্রর এক হাত দিয়ে নীলকে জরিয়ে নিলো।

দুইদিন বাদ…

ফুপির বাড়ি থেকে ফিরছে রাতে সেখানেই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু নীল এর ওর বাড়ি ছাড়া বাহিরে থাকতে ভালো লাগে না তাই ফিরে যাচ্ছে?
চলতি গাড়ির সামনে একজন মাঝারি বয়সের লোক এসে পরল। শরীরে তার ক্ষত জায়গায় জায়গায়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে নৃশংস ভাবে কেউ মেরেছে আর কোনো ভাবে পালিয়ে এসেছেন। গাড়ির উইন্ডো-র সামনে এসে বারবার কাচ বাড়ি দিচ্ছে আর বলছে।

অচেনা লোক- প্লিজ আমাকো বাঁচান ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
নীল- কারা আপনাকে মেরে ফেলবে?
কথাটা বলে দরজা খুলে দেয় লোকটা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেছে। নীল আবারও জিজ্ঞেস করলে। নীল এর দিক পেছনে আঙুল দিয়ে ইশারা করে। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালে দেখে পাঁচ’জন মানুষ কে তিনজন মানুষ খুব মারছে। নীল এর কাছে লোকটা বারবার বলছে।

– প্লিজ আমাকে বাঁচাও মা আমাকে ওরা মেরে ফেলবে।

নীল এর লোকটার উপর মায়া হলো। গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকালো। গাড়ির উইন্ড দিয়ে বাহিরে তাকালে ল্যাম্পপোস্টের নিচ দিয়ে একটা লোক হেঁটে যাচ্ছে ভালো ভাবে তাকাতেই নীল জোরে ডাক দিয়ে উঠে…

নীল- অভ্র….
পাশ থেকে লোকটা নীল এর মুখ চেপে ধরলো কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে বলল।

– একদম চিৎকার দিবি না তাহলে এখানেই ভেজা উড়িয়ে ফেলবো।
কথাটা বলে সামনে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল।

– চল গাড়ি চালা আমি যেখানে বলবো সেখানে গিয়ে থামবি আর নয়তো দুজন কেই এখানে উড়িয়ে ফেলবো।

ড্রাইভার ভয় পেয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। নীল উইন্ড দিয়ে বাম হাত বের করে হাত নাড়াচ্ছে। এত রাতে এই নির্জন রাস্তায় নীল এর ডাক শুনে এদিক সেদিক তাকাতে দেখল গাড়ির উইন্ড দিয়ে এক হাত বের করে নাড়াচ্ছে। হাত দেখে অভ্রর চিনতে সময় লাগলো না ওই হাত আর কারো নয় ওর জানপাখির। নীল এর হাতে এক ব্রেসলেট দেখে চিনে ফেলে। কারণ ব্রেসলেট টা নীলকে অভ্র গিফট করে ছিলো আর নিজের হাতেই পরিয়ে দেয়। কোনো কিছু না ভেবেই বাইক স্টার্ট দিলো।

একটা গোডাউনের সামনে গাড়ি থামল।
নীল এর কপালে বন্দুক ঠেকিয়েই গাড়ি থেকে নামলেন। ভেতরে ঢুকে তাকে একটা চেয়ারের উপর বসানো হলো আশে পাশে লোকের অভাব নেই। সবাই জেনো নীলকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। একেক জনের দিকে তাকাচ্ছে তো ভয়ে কাঁপছে সামনে বসে থাকা লোকটা হাতে বন্দুক ঘোরাতে ঘোরাতে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

– তুই ওকে চিনিস?

নীল- কাকে? ( আমতা আমতা করে পাল্টা প্রশ্ন করে)

– ওই যাকে তুই অভ্র বলে ডাকছিলি?

নীল- হ্যাঁ চিনি!

– তুই জানিস ও কে আর ওকে কিভাবে চিনিস?

নীল- ও অভ্র আমার ব….

নীল আর কিছু বলার আগেই নীলকে থামিয়ে দিয়ে বলল।

– আরে বোকা মেয়ে ও কোনো অভ্র নয়। ওর পরিচয় সবাই জানে কিন্তু ওকে কেউ চিনে না আর একবার ওকে যদি কেউ একবার দেখে তাহলে সে আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারে না। আর আমিও হয়তো আজ মরে মরে থাকতাম শুধু তোর জন্য বেঁচে গেলাম।

নীল- আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আর অভ্র খুব সাধারণ একটা ছেলে সহজ সরল।

লোকটা উচ্চ সুরে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। হাসি থামিয়ে বলল।

– ও অভ্র নয় ওর আসল পরিচয় অন্য কিছু।

নীল- যা বলবেন ক্লিয়ার করে বলুন পেহলিয়া কেনো বুঝাচ্ছেন।

নীল এর উচ্চ সুরে বলা কথায় একটা লোক এসে নীল এর চুলের মুঠি ধরে মুখের মধ্যে পিস্তল ঢুকিয়ে দেয়। সামনে থাকা লোকটা বলল ‘ ছাড় ওকে। একটা ছেলের ভুয়া পরিচয় জানে তার আসল পরিচয় আগে জানাই ওকে তারপর না হয় মেরে ফেলেছিস। ‘

লোকটার পেছন থেকে একজন বলে উঠল।

– বস মেরেই যখন ফেলবো তাহলে আমরা সবাই একটু আনন্দ ফুর্তি করে তারপর মেরে ফেলবো এটা আমাদের আবদার। এত সুন্দর ফুলটুসি মেয়েকে শুধু শুধু মেরে ফেলবো আমাদের খিদে মিটানোর অনুমতি দেন বস।

– আচ্ছা দিয়ে দিলাম।

নীল- কি বলছিস কি আপনি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার আমি আপনাকে বাচিয়েছি আর আপনি আমার সাথে।

লোকটা- তুই জানিস আমাকে তুই কার থেকে বাঁচিয়ে ছিস সে যদি জানতে পারে তোর জন্য আমি বেঁচে গেছি তাহলে সে তোকে খুঁজে এমনি মেরে ফেলবে তারপর আমাকে খুঁজবে এত রিস্ক কেনো নিতে যাবো আমি তার থেকে ভালো হয় তুই আমার হাতেই মর। আর যাকে অভ্র বলে চিনিস সে অভ্র না।
ও আর কেউ নয় ‘মাফিয়া-গ্যাংস্টার আফরান চৌধুরী”। আফরান কে মাফিয়ার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ধরা হয়। এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যারা আফরান চৌধুরীর নাম জানে না। আমেরিকা কে বিশ্বে সবথেকে প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই আমেরিকান আন্ডারগ্রাউন্ড বর্তমানে তার আন্ডারেই। সবাই বলে আফরান বেশ ইগোস্টিক এ্যান্ড এটিটিউড ওয়ালা। আপন বলতে নিজের কেউ নেই। তবে ফরেইন কান্ট্রি তে আফরান থাকা টা তেমন পছন্দের না। নিজের দেশেই থাকতে তার ভালো লাগে। সৌন্দর্যের নিয়মের বাইরে রয়েছে আফরান। ছেলেরাও যে এত্তো পরিমাণে সুদর্শন হয় তা আফরান কে না দেখলে হয়তো বোঝার কোন উপায়ই নেই। আফরানের পার্সোনালিটি এক কথায় অসাধারণ। যে কেউ প্রেমে পরতে বাধ্য। অত্যাধিক স্মার্ট হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অফার এসেই থাকে তার কাছে কিন্তু সেগুলোতে দেওয়ার মতো সময় কই তার। তবে যে যেমন তার সাথে আফরান তেমন। জেদ-রাগ নাকের ডগায় বসবাস করে। আমি অনেক বছর ধরে তার সাথে কাজ করি কিন্তু রিসেন্টলি আমার উপর ওর সন্দেহ হয়। আমি তার থেকে লুকিয়ে যা করতাম সে সব কুকীর্তির কথা আফরান জানতে পেরে যায়। আমি সহ আমার কয়েকজনকে মেরেও ফেলে আমি নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসি আর তাতে সম্পূর্ণ হাত তোর। এখন ভাব তুই যাকে অভ্র সহজ সরল ছেলে বলে জানিস সে আর কেউ নয় মাফিয়া গ্যাংস্টার আফরান চৌধুরী।

নীল- আমি বিশ্বাস করি না।

– তোর বিশ্বাস করা আর না করায় কোনো কিছুই যায় আসে না। তোদের যা ইচ্ছা কর এই মেয়ের সাথে আমি চললাম।

কথাটা বলে সে গোডাউন থেকে বেরিয়ে পরে। এদিকে ক্রমাগত সবগুলো লোক নীল এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নীল পিছিয়ে যাচ্ছে আর চোখ দিয়ে পানি পরছে। পেছাতে পেছাতে এক কাটুনের সাথে পা লেগে নিচে পরে যায়। একজন লোক নীল এর সামনে এসে ঝুঁকে এক হাত বাড়ালো। নীল দুই চোখ খিচে বন্ধ করে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে চিৎকার দেয়।

পেছন থেকে শুট আউটের শব্দ আসছে। মাত্রারিক্ত ক্ষোপ আর রাগ নিয়ে সামনে যাকেই পাচ্ছে আড়াল থেকে তাকেই শুট করছে।

পেছনে ঘুরে একজন লোককে দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল।

– তুই কে রে এখানে কি করে এলি?

প্রতিউত্তরে কিছু না বলে তার বুকের পাঁজর বরাবর শুট করল। সবার নজর এখন সামনে থাকা লোকটার দিকে তাই পেছন থেকে নীল উঠে দাঁড়ালো। সেখান থেকে পালানোর রাস্তা খুঁজছে। দুইদিক দিয়েই শুট আউট হচ্ছে এদিকে একেক জনের গায়ে গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পরছে। দরজার সামনে গিয়ে হঠাৎ পেছন থেকে কারো ডাক শুনে পেছনে তাকালো। একজন নীল এর দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। নীল এর দিকে শুট করতেই নীল চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে দুই হাত কানে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। গুলি চলল কিন্তু নীল এর কোনো কিছুই হলো না। চোখ মিটমিট করে তাকিয়ে সামনে দেখে এক চিৎকার দিলো।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here