অভ্র_নীল সিজন_০২ #পর্ব_২২,২৩

0
557

#অভ্র_নীল সিজন_০২ #পর্ব_২২,২৩
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখনীতে)
২২

গত রাতে নাঈম ভেবেছিল অভ্র মরে গেছে কিন্তু না অভ্র মরার নাটক করছিলো নাঈম চলে যেতেই প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বাহির করে গ্রুপ কল দেয়। আকাশ শুভ কল রিসিভ করলে ওদের দু’জন কে সবটা শর্টকাটে উপলব্ধি করে জায়গার নাম বলে সেন্সলেস হয়ে যায়। ফোনের অপর পাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করে বাড়ি থেকে বের হলো দু’জনে এক সাথে অভ্রকে খুঁজতে এড্রেস অনুযায়ী জায়গায় চলে আসলো। অভ্রকে রাস্তার মাঝে পরে থাকতে দেখে দু’জনে এসে তারাহুরো করে গাড়িতে উঠায় হার্টবিট তখনও ছিলো। দুজনে ধরা ধরি করে হাসপাতালে নেয়। ডাক্তার তিনটা গুলি বের করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অভ্র খুবই দূর্বল তার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগবে এখন মোটামুটি সুস্থ।

হাসপাতালের সামনে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ছুটলো। ১০৫ নাম্বার কেবিনে ঢুকল। বেডের উপর আধ শোয়া হয়ে ছিল অভ্র পাশেই ছিল তন্ময়, তানজু, কজল, আকাশ, শুভ, তানিয়া। শুভ ছুড়ি দিয়ে ফল কেটে দিচ্ছে দরজার সামনে তাকিয়ে দেখল দরজা ধরে দাড়িয়ে কাঁদছে নীল। দৌঁড়ে এসে অভ্রকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। নীল অভ্র’র কপালে গালে চুমু দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল।

নীল- তুমি বলেছিলে এইসব ছেড়ে দিয়েছো তাহলে কেনো গেলে?

অভ্র নীলকে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো ক্ষিপ্ত হয়ে বলল।

অভ্র- আমার আজকের অবস্থার জন্য তুমি দ্বায়ী শুধু তোমাকে প্রমিজ করেছিলাম বলে ওদের কোনো ক্ষতি করিনি কিন্তু এবার আমি ওদের কাউকে ছাড়বো না। তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাও আমি এমন কাউকে চাই না যার জন্য আমার সব কিছু আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। চলে যাও আমার সামনে থেকে।

অভ্রর কথাগুলো জেনো নীল এর কাছে সুইয়ের মতো বিঁধছে। চোখের পানি জেনো বাধাই মানছে না।
অভ্রর পাশে বসে দুই গালে হাত দিয়ে বলে উঠল।

নীল- কি বলছো তুমি এইসব তুমি তো আমাকে ভালোবাসো আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি আমরা সারাজীবন এক সাথে থাকবো তাই তো এটাই তো কথা ছিল অভ্র এখন এমন করে কেনো বলছো?

নীল এর হাত সরিয়ে দিয়ে ধাক্কা মারল নীল মাটিতে পরে গেলো।
নীল- আহহহ!
তানজু- অভ্র কি করছেন টা কি আপনি?
কাজল- অভ্র তুমি নীলকে এভাবে ধাক্কা কেনো দিলে?
তানিয়া- নীল উঠ তোর কোথাও লাগেনি তো?

নীল তানিয়ার হাত সরিয়ে দিয়ে আবারও অভ্রর কাছে গিয়ে তার হাত ধরে নিলো। এতে বেশ রাগ হলো অভ্র চোখ মুখ কাচুমাচু করে নিলো মুখে জমেছে এক রাশ রাগ। নীল এর হাত ছাড়িয়ে নিজে শক্ত করে ওর হাত ধরে বেড থেকে নামল। এক হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে রেখছে অন্য হাত দিয়ে বৃষ্টির হাত ধরে টানছে। নার্সরা অনেক বার অভ্রকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ও থামেনি। টেনে হাসপাতালের বাহিরে নিয়ে আসল তার পর বলল।

অভ্র- আমার পিছু ছেড়ে দাও নীল আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি সবটাই ছিল আমার অভিনয় মনে আছে ফাস্ট দেখায় তুমি আমাকে আঙ্কেল বলে ছিলে হুম তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি অভিনয় করেছি জীবনে কোনো মেয়ে আমাকে ইগনোর করেনি কিন্তু তুমি করেছিলে আর সেটা আমার পছন্দ হয়নি তাই আমি এইরকম করেছি তোমার সাথে এখন আমার খেলা শেষ তুমি তোমার মতো চলে যাও আর নয়তো এখানে শুট করবো।

হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে আস্তে আস্তে পা ফেলে ভেতরে চলে যায়। অভ্র’র সাথে আকাশ তন্ময়, শুভ রয়েছে আর এদিকে নীল এর সাথে তানিয়া কাজল তানজু নীলকে ঘিরে দাঁড়িয়ে শান্ত্বনা দিচ্ছে। তিনজনকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।

নীল- আমি কখনে ওর চোখে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু দেখিনি। ও আমাকে ভালোবাসে ও মিথ্যে বলছে আমি পারবো না থাকতে এই নীল তার অভ্রকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পরে। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন অভ্র কেনো করলো এমন? যার নেই কোনো উত্তর।
নীলকে বাড়ি নিয়ে চলে যায়। মনকে কোনো ভাবেই শান্ত করতে পারছে না। অনেকবার কল দিয়েছিল কিন্তু সে রিসিভ করেনি।
দুইদিন লাগে অভ্রর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়ার পর নিজের গ্যাং জয়েন্ট করল। নাঈম কে খোঁজার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পরেছে। দুইদিনে নীল এর শরীর প্রচুর অসুস্থ হয়ে পরেছে। না সময় মতো খাচ্ছে আর না ঘুমিয়েছে। হাসপাতালে অনেকবার গিয়েছিল শুধু একটু অভ্রকে দেখার জন্য কিন্তু অভ্র নীলকে তার কেবিনে Allow করেনি।

সন্ধ্যা ৭টা বাজে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসেছে অভ্র ড্রাইভিং সিটে আকাশ, পেছনে বসে ফোন স্ক্রল করছে শুভ.. বাহিরে ঝুমঝুম বৃষ্টি পরছে ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইছে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুটা দূর যেতেই আকাশ ব্রেক করল। অভ্র কপাল ভাজ করে রাগী কন্ঠে বলল।

অভ্র- ব্রেক করলি কেন?
আকাশ- নীল?
অভ্র: ——
শুভ- এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুই নীলকে কোথায় পেলি?
আকাশ: কেন তোরা দু’জন দেখতে পাচ্ছিস না গাড়ির সামনে বৃষ্টি তে ভিজছে।
আকাশের কথায় দু’জনে ই সামনে তাকালো।সত্যিই নীল এই বৃষ্টি তে গাড়ির সাথে দাঁড়িয়ে ভিজছে। ভ্রু উঁচু করে আকাশের উদ্দেশ্যে বলল।

অভ্র- সাইড দিয়ে গাড়ি নে।
আকাশ- কিন্তু অভ্র?
অভ্র- যা বলেছি তাই কর।
শুভ- কিন্তু ভাই এই বৃষ্টি তে ভিজলে ওর ঠান্ডা লেগে যাবে জ্বরও আসতে পারে।
অভ্র- সেটা দেখার আমার প্রয়োজন নেই। নিজে ইচ্ছে করে বৃষ্টি তে ভিজে ঠান্ডা লাগালে আমি কি করতে পারি। আকাশ গাড়ি স্টার্ট দে।

আকাশ কথামত গাড়ি স্টার্ট দিলো নীল এর পাশ দিয়ে গাড়ি যেতে নিলে নীল দৌঁড়ে অভ্রর উইন্ডের সামনে এসে হাত দিয়ে কিছু একটা বলছে। সে দিকে অভ্রর কোনো খেয়াল নেই এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে।
নীল অনেকটা দূর গাড়ির পেছনে ছুটল কিন্তু শেষে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। এ এমন কান্না যা বৃষ্টির পানির সাথে মিলে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর তখনই পেছন থেকে একটা গাড়ি তীব্র গতিতে ছুটে আসছে নীলের দিকে মাথা নিচু করে কেঁদেই যাচ্ছে।
দূর্ভাগ্য কাকে বলে নিয়তি বুঝি এটাকেই বলে।

আকাশ: নীলকে এভাবে avoid করে তুই ঠিক করছিস না। দেখেছিস মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে।
অভ্র- আমি ওর ভালোর জন্যই করছি।

শুভ: তুই ওর ভালোর জন্য করলেও কিন্তু ওর কোনো দিক দিয়েই ভালো হচ্ছে না। অভ্র তুই নীলকে নিজের থেকে দূরে সরাচ্ছিস শুধু নীল এর ভালোর দিক চিন্তা করে কিন্তু এটা কেনো বুঝছিস না নীল তোকে ছাড়া ভালো নেই। তুই ওর পাশে থাকলে নাঈম বা অন্য কেউ ওর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না ভুল করছিস অভ্র নীল এর কিছু হয়ে গেলে তার জন্য সারাজীবন প্রস্তাবি।

অভ্র- আমি তোদের কারো সাথে এই নিয়ে তর্ক করতে চাই না।
____

এই রাস্তা সবসময় ফাঁকাই থাকে তাই তীব্র গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ড্রাইভার। আর গাড়ি দ্রুত চালাতে মাশরাফ খান বলেছিলেন কারণ উনার একমাত্র মেয়ে অসুস্থ তাকে বাড়িতে খুব শীঘ্রই পৌঁছাতে হবে। হঠাৎ গাড়ির সামনে একজনকে দেখল সে রাস্তায় বসে ছিল বলে দেখা যায়নি এমনি ঘুটঘুটে অন্ধকার তার উপর বৃষ্টি বসা থেকে উঠতেই পেছন থেকে গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে দেয়। নীল ছিটকে কিছুটা দূরে গিয়ে পরে। এক্সিডেন্ট হয়েছে দেখে ড্রাইভার সহ মাশরাফ খান গাড়ি থেকে নামলেন। বৃষ্টি তে ভিজে দৌঁড়ে মেয়েটার পাশে গেলো। পুরো রাস্তায় রক্ত বৃষ্টির পানির সাথে বয়ে যাচ্ছে। হাতের পার্স চেক করে বলল।

মাশরাফ: মেয়েটার পার্স চলছে তাকে এখনই হাসপাতালে নিলে বাঁচানো যাবে। ড্রাইভার সহ দু’জন মেয়েটাকে গাড়িতে নিয়ে সিটের উপর শুয়ে দেয়। মেয়েটাকে দেখার জন্য ফোনের টর্চ লাইট অন করে মুখে ধরতেই চিৎকার দিলেন মাশরাফ খান।
এক চিৎকার দিয়ে মেয়েটাকে তুলে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। মাশরাফ খান প্রফেশনাল একজন ডাক্তার। ড্রাইভার মাশরাফকে শান্ত হতে বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো গন্তব্য হাসপাতাল।

ভাগ্য যে মেয়ে অসুস্থ বলে তারাতাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলেন সে মেয়েরই এক্সিডেন্ট হলো নিজের গাড়ির সাথে তার থেকে বড় কথা নীল এর বাবা মাশরাফ খানই নীল এর অপারেশন করবেন। মাথায় প্রচুর আঘাত পেয়েছে বাংলাদেশে এর চিকিৎসা হবে না ভেবে রাতের মধ্যেই ভোর হওয়ার আগে নীলকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলে গেলেন। এইসব কিছুই সবার অজ্ঞ।

দুইদিন হয়ে যায় নীল অভ্রকে বিরক্ত করে না কোথাও দেখার জন্য দাঁড়িয়েও থাকে না কল ও আসে না। অভ্র’র মনে শান্তি লাগছে না কোনো কিছুই মনে হচ্ছে নীল এর কিছু হয়েছে পরক্ষণেই নিজেকে সান্ত্বনা দেয় এই বলে। নীল হয়তো এখন অভ্রকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছে। তবুও একবার নীলকে দেখার জন্য নীল এর বাড়ির সামনে আসে দারওয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়৷

স্যার, ম্যাম সহ ছোটো মামনি দেশের বাহিরে চলে গেছেন। প্রতিউত্তরে কপাল চুলকালো মুচকি হেঁসে সেখান থেকে চলে গেলো। নীল এর আর কোনো খোঁজ খবর কেউ পেলো না আর নীল কাউকে বিরক্ত ও করেনি। পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে তানজু তানিয়া কাজল বেস্ট ফ্রেন্ড আত্মার মত সম্পর্ক ছিল চারজনের আর তার মধ্যে একজন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেলো। তানজু আনুমানিক করে নিশ্চয়ই নীল এর কিছু একটা হয়েছে আর নয়তো নীল দিনের পর দিন মাসের পর মাস ওদের সাথে কথা না বলে থাকতে পারতো না। অভ্রর একই অবস্থা কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। নিজের ভেতরে ভেতরে দুমড়ে মরছে। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে কেউ একজন হৃদপিণ্ডটা বের করে নিয়ে গেছে অজস্র যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের মধ্যে কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। এরই মধ্যে এক রাতে নাঈমের আস্তানায় নাঈমকে নিঃসঙ্গ ভাবে খুন করে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।
তার পর থেকেই হন্ন হয়ে খুঁজে ছিল নীল কোন দেশে গেছে কিন্তু খোঁজ পায়নি। নিজের কষ্ট কমাতে প্রতি রাতে নাইট ক্লাবে গিয়ে নেশায় ভরে থাকে।

শুভ: আগেই বলেছিলাম নীলকে নিজের থেকে দূরে সরাস না তখন যদি আমার কথাটা শুনতো তাহলে আজ ওর এই দোসা হত না।
আকাশ: ওকে এইসবের থেকে বের করতে হবে।
শুভ: কিভাবে?
আকাশ: শোন!

৬ মাস পর…

এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করেছে বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে রাস্তায় অনেক জ্যাম গাড়ির উইন্ড দিয়ে দুই হাত বের করে নৌকার মতো ঢেউ খাওয়াচ্ছিলো সামনেই ছিলো অন্য একটা গাড়ি।
উইন্ড দিয়ে মাথা কিছুটা বের করে পেছন ঘুরে ডাক দিলো..

– অভ্র শুনো না!

হঠাৎ কানে নীল এর ভয়েস আসলো তানজু কিছুটা নড়েচড়ে বসল ভুল শুনেছে ভেবে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই একটা মেয়ের হাত দেখল। মেয়েটা সামনের দিকে মুখ রেখেই হাত ঢেউ খাওয়াচ্ছে মুখ না দেখলেও এত বড় মেয়ের কান্ড দেখে হেঁসে ফেলল তানজু। গাড়িতে তখন তানজু আর ড্রাইভার একাই ছিল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। মেয়েটা আবারও বলে উঠল ‘ অভ্র ‘
এইবার নীল এর ভয়েস স্পষ্ট শুনতে পেলো তানজু আবারও মাথা ঘুরিয়ে তাকালো এবার মেয়েটা উইন্ড এর দিকে ঝুঁকে বাহিরে গাড়ি গুলো দেখছে বারবার প্রশ্ন ছুড়ছে।

নীল- অভ্র এটা কি অভ্র ওটা কি এটাকে কি বলে?

এইসব জিজ্ঞেস করছে নীলকে দেখে তানজুর চোখ ভরে যায় পানিতে নীল বলে কিছু বলতে যাবে তখনই রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যায় গাড়িপাশের টা চলে যাচ্ছে তানজু ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল।

তানজু- ভাইয়া ওই কালো গাড়িটা কে ফলো করুন।

দীর্ঘ পথ জার্নির পর এক আলিশান বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামল। গেইট খুলে দিলে গাড়ি ভেতরে ঢুকে যায়। তার পেছন পেছনই অন্য একটা গাড়ি এসে গেইটের সামনে দাঁড়ালো কিন্তু গার্ডসরা ভেতরে যেতে বাধা দিচ্ছে গাড়ি থেকে নেমে তানজু এক প্রকার তক্কাতক্কি করছে কিন্তু গার্ডসরা মানছেই না তখনই পেছন দিয়ে আরও একটা সাদা গাড়ি এসে থামল। একজন গার্ডসকে গাড়ির সামনে ডেকে প্রশ্ন ছুড়লেন।

– কি হয়েছে এখানে এত চেচামেচি কেন?
গার্ড: স্যার একটা মেয়ে ভেতরে যাওয়ার জন্য আমাদের সাথে ঝগড়া করছে আর তাকে এখানে কখনও দেখিনি অনুমতি ছাড়া তাকে আমরা ভেতরে যেতে দিতে পারিনা।

– আচ্ছা ঠিক আছে।
আর কিছু বলার আগেই মেয়েটা পেছনে ঘুরল গাড়ির উইন্ড এর সামনে দৌঁড়ে এসে বলল..

তানজু- আপ

চলবে?

#অভ্র_নীল
#সিজন_০২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
#পর্ব_২৩

দৌঁড়ে এসে গার্ডসকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। উইন্ড এর সামনে মাথা নত করে প্রশ্ন ছুড়ল.

তানজু- আঙ্কেল আপনি এত মাস পর আপনারা কোথায় ছিলেন? নীল ভেতরে গেলো আমি যেতে চাচ্ছি যেতে দিচ্ছে না আঙ্কেল আমি..
মাশরাফ- কাম ডাউন মাই চাইল্ড। গার্ডস গেইট খুলো আর ওকে ভেতরে আসতে দাও। ভেতরে চলো মা সব বলছি।

গার্ডস গেইট খুলে দিলে বাড়ির ভেতরে গেলো। তানজু একেকবার একেকটা প্রশ্ন ছুড়ছে মাশরাফ খান পকেটে হাত গুজে বাড়ির ভেতরে ঢুকছে তানজু হঠাৎ সামনে কারো কথা বলা শুনে থেমে যায় হল রুমের সামনে আসতেই দেখল একটা ছেলে সোফার উপর বসে আছে। বেশ ফর্সা, অনেক লম্বা 6 ফিটের ও বেশি হবে, একটা নেভি ব্লু টি শার্ট পরছে, আর কালো জিন্স, তার উপর গাঢ় ব্লাক কালার লেদার জ্যাকেট। চুলগুলো হাল্কা ব্রাউন তবে লাইট না। লম্বা চুলগুলো কপালের উপর এসে পরে আছে । ছেলেটাকে অমায়িক সুন্দর ও কিউট লাগছে। তানজু ছেলেটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।

তানজু- আঙ্কেল ছেলে টা কে?
তখনই সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে নেমে আসছে নীল সিঁড়ির সামনে এসে জোরে ডাক দেয়।
নীল- অভ্র…

তানজু অবাকের চরম মাত্রায় পৌছে যায় নীল একটা অচেনা ছেলেকে অভ্র বলে সম্মোধন করছে কিন্তু কেনো আর এমন বাচ্চাদের মতো আচরণই বা করছে কেনো হাজারটা প্রশ্ন ঘুরতে ওর মাথায় একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। তানজুকে নিয়ে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য লাইব্রেরি রুমে চলে গেলেন। মিসেস নিশা চেয়ার চুপ করে বসে আছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানজুর মাথায় হাত বুলিয়ে সবটা বললেন মাশরাফ খানের মুখের প্রতিটূ বুলি তীরের মতো বিধছে তানজুর বুকে এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পরল। মিসেস নিশা ছুটে তানজুর কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরলেন। রুম থেকে বের হয়ে নীল এর সামনে আসল শুরুতে ভয় পাচ্ছিল জানতো নীল কিভাবে রিয়েক্ট করবে পরক্ষণেই মিলে গেলো। প্রতিদিনই তানজু নীল এর সাথে দেখা করতে আসতে লাগল সাথে আসতো আকাশের ছোটো বোন আনিশা। আনিশার সাথে নীল এর খুব ভালো বন্ডিং হয়ে গেলো।

এক সপ্তাহ এভাবেই পার হয়ে গেলো। নীল বাড়ির মধ্যেই রয়েছে তানজু রিকুয়েষ্ট করে মাশরাফ খান পারমিশন দিলেন। কারন উনি জানে তানজুর সাথে থাকলে নীল এর ভালোই লাগবে তাছাড়া প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবে।

নীলকে নিয়ে আনিশা আর তানজু একটা পার্কে চলে আসল। নীল এটা ওটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ছে। হাসি মুখেই সব গুলোর উত্তর দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে অতি মানুষ দেখে ভয় পেয়ে তানজুর আঁচল ধরে ফেলছে। মাঝখানে আকাশ একবার কল দিয়েছিল আজ তানজুর জন্মদিন নীলকে পেয়ে তানজু সেটা ভুলেই গেছে। কাজল কল রিসিভ করেনি বলে আনিশাকে কল দেয় সে কল রিসিভ করে পার্কে আছে বলে। হাতে বেলুন কেক নিয়ে সবাই পার্কে চলে আসে শুধু তানজুকে সারপ্রাইজ দিবে বলে। পার্কে এসে তানজুকে খোজছে এদিকে মাথার উপর দিয়ে একটা প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে প্রজাপতি টা নীল রঙের মধ্যে গোল্ডেন কালার দেখতে বেশ আকর্ষণীয় লাগছিল নীল সেটা ধরার জন্য তার পেছনে ছুটতে লাগল।
পেছন থেকে চাপটে ধরল হুট করে জরিয়ে ধরায় লাফ দিয়ে উঠে পেছনে ঘুরে দেখে সবাই এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে হুট করেই চিৎকার দিয়ে উঠল..

– হ্যাপি বার্থডে তানজু….

তানজু- তোমরা সবাই এখানে কিভাবে আসলে?
আনিশা- আমি বলেছি ভাবি।
তানজু- ওওও!

ওদের সাথে অভ্রকে কোথাও না দেখে মনে শান্তি পেলো। তখনই সবার পেছন থেকে বলে উঠে.

অভ্র- হ্যাপি বার্থডে ভাবি!
তানজু: ——
অভ্র- আজ হঠাৎ পার্কে আসলেন কেনো দু’জনে?
তানজু: ——–

এমন ভাব করছে জেনো ও অভ্রকে দেখতেই পায়নি অভ্রর কথা ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছেই না।
আনিশা: আমি বলছি।
আকাশঃ হুম বল।

আনিশা: রিসেন্টলি আমাদের একটা কিউট মিষ্টি ফ্রেন্ড হয়েছে। সে যেমন মিষ্টি দেখতে তেমনই তার কথা অনেক সুন্দর। কিন্তু তার জীবনে একটা এক্সিডেন্ট ঘটে গেছে।

তানিয়া/কাজল: কিসের এক্সিডেন্ট?
আনিশা: মেয়েটা একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসতো আর সে ছেলে মেয়েকে ঠকিয়েছিল যার জন্য মাঝ রাস্তায় মেয়েটার কার এক্সিডেন্ট হয়। মাথায় অনেক আঘাত পায় ওর জীবনের সব কিছু ও ভুলে যায়। অনেক মাস কোমায় ছিল এক আজ ১০দিন হয় সে কোমা থেকে উঠে কিন্তু দুঃখের কথা হলো সে সব ভুলে যায় কোনো কিছুই তার মনে নেই পুরো একটা বাচ্চা হয়ে গেছে সে কিন্তু

শুভ: আবার কিন্তু কিসের?
আনিশা: আগে বলতে তো দিবা।
অভ্র- হুম বলো।
আনিশা: মেয়ে টা সব ভুলে গেলেও ও যেই ছেলে টাকে ভালোবাসতো সে ছেলের নাম ভুলে যায়নি। কোমা থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে। সবাই বেশ আশ্চর্য হয় এমন পেসেন্টের এত তারাতাড়ি কোমা থেকে উঠা মিরাক্কেল ছাড়া আর কিছুই নয়। লাগাতার একটা নামই উচ্চারণ করছিলো। ফ্যামিলির কাউকে চিনতে পারেনি মুখে শুধু একটা নামই ছিল।

অভ্র- ওওওওও

তানিয়া- কাজল দেখ ওই ছেলেটা কে কত হ্যান্ডসাম ইয়ার পুরাই ক্রাশ।

কাজল- এদিকেই তো আসছে?

আগেই বর্ণনা দিয়েছিলাম। সে পকেটে হাত গুঁজে দ্রুত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তানজু আর আনিশার সামনে এসে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে ভ্রু উঁচু করে চেঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।

– তোমাদের সাহস কি করে হয় আমার থেকে পারমিশন না দিয়ে ওকে এখানে বাড়ির বাহিরে নিয়ে আসার?

আকাশ- আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন আমার স্ত্রী ও বোনের সাথে?

শুভ- উনাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে।
তানিয়া: মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সে ভদ্রতা টুকু আপনার জানা নেই দেখছি।

– জাস্ট সাট আপ।
শুভ- ডাক্তার কাব…
অভ্র- দেখুন আমরা ভদ্রতার খাতিরে চুপ করে আছি আপনি এখন বেশি।
– who are you?
তানজু- আ’ম সরি। আমরা ওর ভালোর জন্য ওকে এখানে নিয়ে আসছি।
– ওর ভালো দেখার জন্য আমি আছি ওর পাশে তোমাদের কাউকে দেখতে হবে না ইউ ডাম ইঁট!

আর কিছু বলার আগেই দূর থেকে একজনের ডাক শুনে সবাই চোখ তুলে তাকালো।

নীল- অভ্র!

অভ্র নামে কে ডাকছে গলাটা জেনো অনেক চেনা সবাই সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে পরনে নীল গোলজামা এদিকেই দৌঁড়ে আসছে আর চেচিয়ে বারবার অভ্র বলে ডাকছে। মেয়ে টাকে দেখে সবাই জেনো আকাশ থেকে পরলো। অভ্র দাড়িয়ে থাকতে না পেরে পেছনে একটু হেলে পরল শুভ অভ্রর হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
এখনও মেয়েটা অভ্র বলে চেচিয়ে যাচ্ছে সবার চোখের কার্নিশে পানি এসে জমেছে। নীল কাছে এসে দাড়িয়ে পরে চোখে মুখে হাসির জলক। আবার বলে উঠে।

নীল- অভ্র তুমি এসে গেছো দেখো এটা কত সুন্দর জায়গা।
যদিও নীল এর আগেও এখানে অনেক আসছে কিন্তু ও সব ভুলে গেছে।
অভ্র- নী নী
এবার নীল আর কিছু না বলে অভ্র বলে ডেকে সোজা গিয়ে জরিয়ে ধরল। দাড়িয়ে থাকা প্রতিটা লোক অভাক হয়ে তাকিয়ে রইল তাদের মাথায় কিছুই ঢুকছে না সব টা তাদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে অভ্র ওদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু নীল অন্য কাউকে অভ্র বলে জরিয়ে ধরেছে কিন্তু কেনো?
তানজু সবার দিকে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল।

তানজু- এতক্ষণ যার কাহিনি শুনছিলে তোমরা সবাই একজনকে ভালোবেসে তার স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে সে আর কেউ না আমাদের নীল ও ওর জীবনের সব ভুলে গেছে মনে আছে তো শুধু অভ্র’র নাম।

তানজুর কথা শুনে সবাই অভ্র’র দিকে তাকালো সে তো নীলকে দেখেই যাচ্ছে। নীল তাকে ছেড়ে দিয়ে হাতে হাত রেখে বলল।

নীল- অভ্র চলো না আমার সাথে ওইদিকে পুকুরে সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটেছে।
– আচ্ছা চলো।

প্রচুর জেলাস ফিল করছে নিজের ভালোবাসার মানুষ নিজেরই সামনে অন্য একজনকে সে ভেবে জরিয়ে ধরেছে আর তার নামেই বারবার ডাকছে। নীল কথাটা বলে আবারও দৌঁড় দেয় খোলা আকাশের নিচে মুক্ত পাখির মতো ছুটে বেড়াচ্ছে।

শুভ- তুমি ডাক্তার নাহিদ খান কাব্য না?
কাব্য- হুশশশ ভুলেও এই নাম নীল এর সামনে আপনারা কেউ উচ্চারণ করবেন না।
কথাটা বলতে বলতে আবারও ডাক পরল।
নীল- অভ্র আসো না তারাতাড়ি আসো।
নীল এর ডাকে কাব্য চলে যায় তানজুর সামনে এসে প্রশ্ন ছুড়ল।
অভ্র- লোকটা কে ভাবি?
তানজু- কেনো তোমার তাতে কি? মরার জন্য মাঝ রাস্তায় যখন ফেলে গিয়েছিলে তখন মনে ছিল না ওর কি হয়েছে ঠিক আছে কি না তখনও ভাবোনি আর এখন অন্য কেউ যখন ওকে সুস্থ করার জন্য নিজের পরিচয় গোপন করে ওকে আগলে রাখছে এখন তোমার ভালোবাসা অতলে উঠছে। আমার সাথে কথা বলতে এসো না অভ্র আমার কাছে নীল এর থেকে বেশি ইমপোর্টেন্ট কিন্তু আকাশ ও নয়। নীল এর আজকের অবস্থার জন্য সম্পূর্ণ তুমি দ্বায়ী। আর হ্যাঁ ভুলেও নীল এর সামনে তোমার নাম অভ্র উচ্চারণ ও করবে না। ওকে ভালো রাখার জন্য ওর মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখার জন্য ওর অভ্র ওর কাছেই আছে তুমি দূরে থাকবে ওর থেকে লাস্ট ওয়ার্নিং আমার।
কথাগুলো বলে তানজু হেঁটে চলে যায়। তানজুর পেছনে কাজল তানিয়া আনিশাও যাচ্ছে। অভ্র সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে আকাশ ও শুভ অভ্রর কাঁধে হাত রেখে চলে গেলো। তখন অনেক বুঝিয়ে ছিল কিন্তু অভ্র ওর জেদ টাই বজায় রেখেছিল তাই ওদের নতুন করে আর বলার কিছুই নেই।

অভ্র কিছুক্ষণ একাই বসে ছিল গাছের নিচে ভাবছে নিজের জীবনের সব থেকে বড় ভুল করেছিল সেই বৃষ্টির রাতে সেদিন যদি নীলকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিতো তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।

সামনে মাথা তুলে তাকালে দেখল নীল কাব্যর পেছনে ছুটছে। ক্যান্ডিফলস কিনে নিয়ে নীল এর সামনে ধরল। নীল খুশি হয়ে নিতে নিবে তখন কাব্য উল্টো দিকে দৌঁড় দিলো। অভ্র বলে ডেকে কাব্যর পেছনে ছুটছে নীল। এক পর্যায়ে নীল কাব্য কে ধরে ফেলে আর বলে উঠে..

নীল- ইয়ে আমি জিতে গেছি অভ্র তুমি হেরে গেছো।

হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো পাশে এসে বসে কাঁধে হাত রেখে বলল।
শুভ- এই জন্যই বলে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা করতে হয়। খুব তো বলতি নীল তোকে ভুলে গেছে ভীনদেশে ভালোই আছে। সত্যি কি জানিস তোকে ভালোবেসে নীল ওর জীবনের সব ভুলে গেছে।
আকাশ- শুভ চুপ কর ওকে বলে লাভ নেই।

এদিকে সারাদিন নীল শুধু অভ্র অভ্র করছে। যা রিয়েল অভ্র’র মোটেও ভালো লাগছে না বলতে গেলে সহ্যই হচ্ছে না। হাত মুঠি বন্ধ করে এক কোণাস দাঁড়িয়ে আছে। সবাই নতুন করে নীল এর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করছে। সব শেষে সবার থেকে সরে এসে এক গাল হাসি দিয়ে অভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে।

নীল- ফ্রেন্ডস?
অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নীল আবারও বলল
নীল- ফ্রেন্ড?
অভ্র নীল এর সাথে হ্যান্ডশেক করল মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করল।
ইচ্ছুক দৃষ্টি মেলে বলে উঠে।

নীল- আমি….
আর কি বলবে পরে ভুলে গেছে অপলক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে পেছন থেকে বলল।
কাব্য- নীল…
নীল- হ্যাঁ আমি নীল!
অভ্র- আমি অভ!
বলতে গিয়েও থেমে যায় সামনে এক নজর কাব্যর দিকে তাকিয়ে বলল।

অভ্র- আমি আফরান!
কাব্য- নীল চলো আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে।
নীল- অভ্র আইসক্রিম!
কাব্য- কিন্তু নীল তোমার ঠান্ডা লাগবে।
নীল- আইসক্রিম!
কাব্য- আচ্ছা চলো কিনে দেবো কিন্তু জাস্ট একটা।
নীল- ওকে।
কাব্য- খুশি?
নীল- হু হুহ অনেক।

অভ্রর সামনে দিয়েই কাব্যর হাত ধরে অভ্র করতে করতে চলে যাচ্ছে নীল। বুকের মধ্যে চিনচিন করে জেনো ব্যাথা হচ্ছে।

নীলকে প্রতিদিন একবারের জন্য হলেও পার্কে নিয়ে আসতে হয় সাথে সবাই থাকে একত্রে অনেক মজা করে।
নীল এর ইচ্ছা আজ সবাই শহর থেকে দূর পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে পিকনিক করবে। কাব্য যা নীল এর একটা ইচ্ছা ও অপূর্ণ থাকতে দিবে না সবাইকে কল দিয়ে ইনফর্ম করে দেয়।

সবাই রেডি হয়ে একসাথেই চলে আসে। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে ওইদিকে কাব্যর এক হাত ঝাপটে ধরে আছে আর বকবক করছে। কাব্য মুখে হাসি রেখেই প্রতিটা কথার উত্তর দিচ্ছে। মিসেস নিশা ও মাশরাফ খান ও এসেছেন। তারা একটু আলাদা দাঁড়িয়ে আছেন।

পাহাড়ের উপর লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্না করল। সবাই এক সাথে খেলো।। নীল বলে উঠল
নীল- অভ্র হা করো আমি খাইয়ে দেই।
কাব্য: হুম!
অভ্র;; ———
শুধু দেখেই যাচ্ছে এখন অভ্রের চোখের সামনে ওই দিন সকালের ঘটনা ভাসছে সেদিন নীল রুটি বানাবে বলে জেদ ধরেছিল। নিজের মনেই তাচ্ছিল্যের এক হাসি হাসল।

সারাদিন একের পর একটা খেলা খেলল সবাই নীল এর সাথে কানামাছি ও খেলল। নীল অভ্র অভ্র করতে করতে অভ্রকে গিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। চোখের বাঁধন খুলে বলে উঠে।

নীল- আফরান সরি আমি অভ্রকে মনে করেছিলাম।
কাব্য- ইট’স ওকে নীল এদিকে চলে আসো।
অভ্র চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।

এক পর্যায়ে সবাই ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পরে। নীল সবার উদ্দেশ্যে বলল..

নীল- তোমরা সবাই ক্লান্ত হয়ে গেছো না আমি এখনই গাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসছি।
বলে উঠে দিলো দৌঁড় গাড়ির দরজা খুলে ভেতর থেকে পানির বোতলটা নিলো গাড়ির সিটের উপর একটা ওয়ালেট দেখল পেলো। সেটা হাতে নিয়েই চিনে ফেলল ওয়ালেট টা নিয়ে যাওয়ার পথে হাত থেকে পরে যায়। ওয়ালেট থেকে টুকিটাকি কাগজ বাতি নিচে পরে গেলো। ভিজিটিং কার্ডস আরও কিছু কার্ডস সবগুলো উঠিয়ে ওয়ালেটে রাখতে যাবে তখনই তাতে নাম দেখল।

:: ডাঃ নাহিদ খান কাব্য…

শুরুতে কিছু বুঝতে পারে না তাই সবকিছু খুলে দেখতে লাগল আইডি কার্ড এ ছবির পাশে নাম একই দেওয়া আছে। সব কিছু যাচাই করে নীল বুঝলো উনার আসল নাম নাহিদ খান কাব্য উনি অভ্র না নীলকে ঠকানো হচ্ছে সব কিছু হাতে নিয়েই ছুটে আসে। কাব্য সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ল…

নীল- কে আপনি?
কাব্য- মানে কি নীল?
সবাই উঠে দাঁড়ালো কারণ নীল কাঁদছিল।
নীল- আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন ঠকিয়েছেন!
কাব্য- নীল তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!
বলে নীল এর দিকে এক হাত বাড়াতে নিলে এক পা পেছিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে।

নীল- আপনি অভ্র নন কে আপনি মিথ্যে কেনো বলে ছিলেন আপনি?
সবাই থ হয়ে দাঁড়িয়ে নীল এর দিকে তাকিয়ে আছে কি বলছে নীল আর এ কথা জানলো কিভাবে?
হাতের কার্ডস গুলো কাব্যর মুখে ছুড়ে মারল আর বলল।

নীল- আপনি মিথ্যে বলেছেন সবাই ঠকিয়েছেন আমাকে।

মাটিতে দুইবার হাত বাড়ি দিয়ে হুংকার দিলো ‘অভ্র’।
মাটির ঘাস গুলো টেনে টেনে তুলছে আর কাঁদছে। কাব্য নীল এর কাছে আসলে নীল তাকে ঝাড়া দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে উঠে দৌঁড়ে চলে যায়। এখানে থাকা সবগুলো মানুষ কাব্য কে দোষারোপ দিচ্ছে ওয়ালেট কেনো সামলে রাখেনি। সবাই জানে কাব্য নীল এর ডাক্তার কিন্তু আসলে কাব্য নীল এর কি হয় সেটা কেউ-ই জানে না। সবার কথার প্রতিবাদে কাব্য ক্ষিপ্ত হয়ে রাগে অগ্নীকান্ড রূপ নিলো বলল।

কাব্য : আমার উপর দোষ দেওয়ার আগে নিজেদের কথা একটা বারও ভাবোনি তোমরা তো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড সেই ছোটো থাকতে তোমরা তিনজন থাকতে নীল একটা ছেলের জন্য মরতে যায় কিভাবে? আজ তিন সপ্তাহ ধরে নিজের পরিচয় গোপন রেখে অভ্র সেজে ঘুরছি। আমার থেকে বেশি কষ্ট হয় ওর জন্য তোমাদের হাহহ বলো চুপ করে আছো কেনো তোমরা জানো ও আমার কে কি হয় আমার। ও আমার আত্মা আমি কলিজার টুকরা আর আমার কলিজা আমার সামনে দিনদিন একটা ছেলের নাম ঝোপ করছে তার জন্য চিৎকার করে কাঁদছে এতে কি আমার থেকে বেশি কষ্ট তোমাদের হচ্ছে?

পেছন থেকে বলে উঠলেন মাশরাফ খান: শান্ত হও কাব্য এটা তো হওয়ারই ছিলো!
পেছনে না তাকিয়েই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল।
কাব্য: কোনটা হওয়ার ছিলো?
মিসেস নিশা: নীলকে তখন সত্য টা বোঝানো উচিত ছিলো তুমি সেটা না করে নিজেই অভ্র সেজে গিয়েছিলে এটা তোমার অন্যায় ছিলো।
অভ্র- আপনারা তখন এটা এলাউ করেছিলেন কেনো?
মাশরাফ: কি করতাম বাবা মেয়েকে বাঁচানোর জন্য তখন অভ্রকে প্রয়োজন ছিলো। আর অভ্রকে আমরা কেউ চিনতাম না শুধু নামটাই জানতাম সে জন্যই কাব্য!
কাব্য: এর মধ্যে তোমরা কেউ এসো না আমাকে নীলকে একা ছেড়ে দাও।

এখানে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন মানুষ ছাড়া সবাই ভাবছে কাব্য নীলকে ভালোবাসে।
মিসেস নিশা: তুমি ভুলে যাচ্ছো কাব্য নীল আমাদের মেয়ে।
কাব্য: তোমরা ভুলে যাচ্ছো নীল আমার আদরের একমাত্র ছোটো বোন। আর আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বোনের কতটা টেক কেয়ার করেছো সেটা আমি খুব ভালোই দেখতে পাচ্ছি তাই এখন আমার বোনের দায়িত্ব আমার ওর জন্য সব ডিসিশন আমি নেবো তোমরা এর মধ্যে আসবে না নয়তো নীলকে আমি আবারও দেশের বাহিরে নিয়ে চলে যাবো।
সবাই তো রীতি মতো হা কর রয়েছে নীল কাব্যর বোন কিভাবে সম্ভব নীলের মুখে কখনো কোনো ভাইয়ের কথা শুনেনি।
মাশরাফ খান: কাব্য তুমি কিন্তু এইরকম করতে পারো না
কাব্য: পারি আব্বু আমি পারি আর নীল এর সব আমি সব পারি।

এদিকে কাব্যর সাথে তক্ক করছে মিসেস নিশা ও মাশরাফ খান। অভ্রর তখন মাথায় এলো নীল জঙ্গলের দিকে একা ছুটে গিয়েছিল সবার পাশ থেকে অভ্র নীল যেদিকে গিয়েছিল সেদিকে ছুটল অনেকটা গভীর চলে গেছে কোথাও অভ্র নীলকে দেখছে না তা দেখে আরও ভেতরে ঢুকে গেলো বেশ অনেকটা দূর যেতেই নীলকে দেখতে পেলো একটা গাছের নিচে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে। অভ্র ছুটে গেলো নীল এর কাছে নীলকে উল্টো ঘুরিয়ে নিজের কোলে মাথা নিয়ে গালে হাত দিয়ে ডাকছে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here