#অভ্র_নীল সিজন_০২ #পর্ব_২৪,২৫,২৬
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
২৪
সূর্য ডুবু ডুবু অবস্থা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে নীল এখনো অজ্ঞান পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে হাঁটছে বহু পথ পারি দেওয়া হয়ে গেছে। শরীর ক্লান্ত হয়ে পরেছে মনে হচ্ছে ঘন জঙ্গলে হারিয়ে গেছে। কাছের নিছে শুইয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে এমন সময় দূর থেকে ঝুমঝুম শব্দ শুনতে পাচ্ছে। এক নজর তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করল কিছু পথ পারি দিতেই সামনে এক বিশাল ঝর্না দ্বারা দেখতে পেলো। নিচে নদী বয়ে যাচ্ছে কি সুন্দর পানি। হাঁটু জল পানিতে নেমে হাতে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলে সমস্ত ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আশে পাশে তাকিয়ে চারদিক টা একবার পর্যবেক্ষণ করে নিলো। দেখে মনে হচ্ছে না এখানে কোনো বিপদ আছে বা হিংস্র পশুর আগমন ঘটবে। তখনই মনে পরল নীলকে গাছের নিচে একা রেখে এসেছে এই বনে পশু পাখিদের অভাব নেই। পেছনে ঘুরে চিতা বাঘের মতো ছুটল। নীলকে গাছের নিচে যেভাবে শুইয়ে রেখে গিয়েছিল অভ্র এখনও সেভাবেই আছে। নীলকে সুস্থ দেখে মনে শান্তি পেলো আবারও আগের ন্যায় পাঁজা কোলে তুলে নিলো। হাঁটতে হাঁটতে ঝর্ণার কাছে আসল। নদীর কিনারে নীলকে শুয়ে দিয়ে দুই হাত দিয়ে কুশ করে পানি নেয়। নীল এর মুখে ছিটেফোঁটা পানি দিলে পলকের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরতে আচমকা চিৎকার দিয়ে উঠে বসে। অভ্র তার দুই হাত দিয়ে নীল এর হাত শক্ত করে চেপে ধরে দু’বার ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ নীল কি হয়েছে এমন করছো কেনো? ‘
সামনে অভ্রকে দেখে ‘ আফরান ‘ বলে ডাক দিয়ে অভ্রর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে বলে উঠে।
‘ বাঘ ‘
‘ কোথায় বাঘ এখানে বাঘ নেই ‘ অভ্র বলল।
‘ ছিলো তখন ‘
‘ তুমি একা একা ঘন জঙ্গলে কেনো আসছে এত গভীরে তো বাঘ আর বাদ বাকি হিংস্র পশুও আছে আল্লাহর রহমত তোমার কিছু হয়নি। এ রকম কেনো করেছে ‘
দৃষ্টি নত রেখেই কাঁপা স্বরে নীল উত্তর দেয়।
‘ সবাই আমার সাথে অভিনয় করেছিলো একটা অচেনা ছেলেকে অভ্র বানিয়ে আমার সামনে এনে দিলো। আমি সব ভুলে গেছি বলেই তো তারা আমার এই অবস্থার সুযোগ নিয়েছে। ‘ কথাগুলো বলে নীল কান্না করে দেয়।
গাল বেয়ে পানিটা হাত দিয়ে মুছে বলল।
‘ তোমার এই অবস্থার সুযোগ কেউ নেয়নি তুমি জানো এতদিন যে অভ্র সেজে অভিনয় করছিলো সে কে? ‘
‘ কে? ‘ নীল কান্না ভেজা কন্ঠে বলল।
‘ সে হচ্ছে তোমার বড় ভাই, ভাবতে পারছো তুমি তোমার ভাই তোমাকে কত বেশি ভালোবাসে তুমি যাতে সুস্থ হয়ে যাও তার জন্য তোমার কাছে অভ্রর চরিত্রের অভিনয় করেছে যাতে তোমার এই অবস্থায় তোমার মাথায় চাপ না পরে। আমার কথা বুঝেছো তুমি? ‘
‘ আমার ভাই সত্যি আমার ভাই? ‘
‘ হুম, আমি না তোমার বন্ধু আমি কি তোমাকে মিথ্যে বলতে পারি বলো? ‘
‘ আফরান? ‘
‘ হুম বলো! ‘ নীল এর চুল কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে অভ্র বলল।
‘ আফরান তুমি তো আমার ফ্রেন্ড তুমি সাহায্য করবে আমাকে আমার অভ্র কে খুঁজতে? ‘
অভ্র: ——নিশ্চুপ!
নীল- বলো না করবে কি না?
অভ্র: আমার কথা ভালো করে শুনবে নীল আর বুঝার চেষ্টাও করবে।
নীল- কি কথা?
অভ্র: নীল শুনো তোমার স্মৃতি হারিয়ে গেছে তোমার কোনো কিছুই মনে নেই সব ভুলে গেছো শুধু অভ্র নামটা তোমার স্মৃতির পাতায় আবদ্ধ রয়েছে। এখন তুমি ভাবো তোমার ভাই তোমার সামনে অভ্র সেজে ছিল তুমি তাকেই অভ্র ভেবেছো এখন তোমার সামনে আরও একজন যদি অভ্র সেজে আসে তুমি তাকেও চিনতে পারবে না এর থেকে ভালো তুমি আমার কথা শুনো। সময়ের অপেক্ষা করো যেদিন তোমার স্মৃতি ফিরে আসবে তুমি সেদিন নিজে তোমার অভ্র’র খোঁজ করবে তার আগে নয়। পৃথিবীতে সার্থপর মানুষের অভাব নেই নিজেদের সার্থ্য রক্ষার জন্য তারা সব করতে পারে। আর আমি তোমাকে প্রমিজ করছি যেদিন তোমার স্মৃতি ফিরে আসবে আমরা দু’জন এক সাথে অভ্রকে খুঁজে বের করবো। ততদিন আমার ফ্রেন্ড হয়েই থাকবো।
নীল- সত্যি বলছো আমার সব মনে পরে গেলে তুমি আমাকে অভ্রকে খুঁজতে সাহায্য করবে?
অভ্র: তোমার সব মনে পরে গেলে আমাদের আর তাকে খুঁজতে হবে না তুমি নিজেই চিন্তে পারবে।
নীল- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আর অভ্র’র খোঁজ করবো না শুধু সময়ের অপেক্ষা করবো।
অভ্র: লক্ষী মেয়ে। সামনে লক্ষ্য করেছো?
নীল- কি?
অভ্র নীলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হেঁসে চোখ দিয়ে ইশারা করল সামনে তাকাতে। নীল ইশারা না বুঝতে পেরে কপাল চিন্তিত করে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল…
নীল: কি?
অভ্র: উফফ ফু..
চলবে?
#অভ্র_নীল
#সিজন_০২
#পর্ব_২৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
কপালে হাত রেখে মাথা ঘুরিয়ে দিলো সামনে ঝর্ণা দেখে বসা দেখে উঠে দাঁড়িয়ে লাফাতে শুরু করল তিন চার বছরের বাচ্চাদের মতো অভ্রর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুড়ল..
‘ এটাকে কি বলে? ‘
নীল এর অবুঝ মায়া ভরা মুখ টার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তারপর প্রতিউত্তরে ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল।
‘ এটা ঝর্ণা ‘
‘ ওও ‘
আর কিছু বলার আগেই দুই হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে মাটিতে বসে পরল। অভ্র ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুড়ল.
‘ কি হয়েছে নীল তুমি ঠিক আছো? ‘
নীল- খিদে পেয়েছে আমার পেটের ভেতরে ইন্দুর লাফালাফি করতেছে।
নীল এর কথা শুনে অভ্র ফিক করে হেঁসে দেয়। হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পরে নীল কপাল ভাজ করে ঠোঁট কাপড়ে প্রশ্ন করল।
‘ আফরান হাসছো কেনো তুমি? ‘
‘ এমনি! খিদে পেয়েছে তোমার তাইতো? ‘
নীল দুইবার মাথা উপর নিচ করল মানে হ্যাঁ খিদে লেগেছে তার।
অভ্র: আচ্ছা চলো আমার হাত ধরে উঠো।
এক হাত নীল এর দিকে বাড়িয়ে দিলো নীল হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো অভ্র’র হাত শক্ত করে চেপে ধরেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ এত অন্ধকারে আমরা কোথায় যাবো চারদিক থেকে কেমন কেমন আওয়াজ আসছে আমার খুব ভয় করছে ‘
চারদিক নিস্তব্ধতা,অন্ধকার। আশপাশ থেকে ভয়ংকর ভয়ংকর আওয়াজ ভেসে আসছে অনেক পশুপাখির ডাক ভেসে আসছে। গাছপালায় জেনো কিছু আছে যার অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে ডালের নাড়াচাড়া তে এইসব জায়গা আজ নতুন নয় অভ্র’র কাছে নীল এর হাত শক্ত করে চেপে ধরেই বলল।
‘ ভয় পেয়ো না আমি আছি তো তোমার সাথে আমি থাকতে দ্বিতীয় বার তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। আমরা আপাতত দেখবো এখানে কোনো ফল গাছ আছে কি না এখন চলো। ‘
চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার নীল সাহস পাচ্ছে না এক কদম পা বাড়াতে নীল এর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে অভ্র বুঝতে পারে নীল ভয় পাচ্ছে। প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করল ফ্লাশলাইট অন করার জন্য কিন্তু ফোন বন্ধ হয়ে রয়েছে হয়তো চার্জ শেষ আর অন ও হচ্ছিল না। এদিক সেদিক নজর ঘুরাচ্ছে কিন্তু এই অন্ধকারে তেমন কিছুই চোখে পরছে না। চাঁদ পুরো টা ডুবে রয়েছে মেঘের আড়ালে। পা দিয়ে মাটিতে কিছু একটা খুঁজছে। পায়ের জুতার সাথে মাঝারি সাইজের দুটা পাথরের ছোঁয়া লাগলে বসে দু’টো হাতে নিলো। পাথরের গায়ে হাত বুলিয়ে বলল।
‘ হুম এগুলো দিয়েই হবে ‘ বলে উঠে দাঁড়ালো।
নীল অভ্রর এক হাত এখনো ধরে আছে অভ্র হাত ছাড়াতে নিলে পারছে না। তাই বেশি জোর করেনি একটা গাছের সামনে এসে নীল এর হাতে পাথর দুইটা দিয়ে বলল।
‘ এগুলো ধরো আমি গাছ থেকে দেখি একটা ডাল ভাঙ্গতে পারি কি না. ‘
নীল পাথর দুটো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। গাছটা ছোট-ই ছিলো তাই সহজেই একটা ডাল ভাঙ্গতে সক্ষম হয়ে গেলো। পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে ডালটার সাথে ভালো ভাবে পেঁচিয়ে বেঁধে নিলো। রুমাল বাঁধা ডালটা পাশে রেখে পাথর দুইটা দিয়ে মাটিতে বসে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে। বার পাঁচেক এমন করার পরই হুট করে আগুম জ্বলে উঠল।
নীল অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ এটা কিভাবে করলে? ‘
‘ যাদু! এখন চলো। ‘
‘ কোথায়? ‘
বলে আবারও এদিক সেদিক মাথা ঘুরিয়ে দেখছে।
অভ্র- চিন্তা করো না কিছু হবে না জীব জন্তু আগুন দেখলে কাছে আসে না।
নীল- সত্যি তো?
অভ্র- হুম সত্যি!
দু’জনে হাঁটছে কিছুদূর আসার পর একটা গাছ চোখে পরল গাছ টা বেশ বড় আর গাছের ডালে ডালে কিছু ফল ঝুলে আছে। অভ্র ডালটা নীল এর হাতে দিয়ে গাছে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গাছে প্রথম বার উঠতে নিলে পিছলে পরে যায় মাটিতে লেটকে বসে আছে। অভ্রকে পরতে দেখে নীল ফিক করে হাসি দেয়। নীলকে হাসতে কিছুটা লজ্জাবোধ করল পরক্ষণেই পা থেকে জুতা খুলে গাছ বেয়ে উপরের ডালে উঠে চরল। কয়েকটা ফল পারতেই নিচ থেকে নীল চিৎকার দিয়ে উঠে. হুট করে চিৎকার শুনে গাছ থেকে লাফ দিয়ে নামে নীল এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো এক দৌঁড়ে গাছের পেছনে লুকিয়েছে। নীল কে ধরে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ নীল কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করলে কেন? ‘
‘ আমার পায়ে কি জেনো লেগেছিল ভূত মনে হয়’ ভয়ে থমথমিয়ে কাঁপছে।
‘ ভূত? তোমার সামনে না এসে পা ছুঁয়ে চলে গেছে। ‘
‘ হ্যাঁ ‘ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
‘ আচ্ছা ডালটা দাও আমিও একটু দেখি ভূত দেখতে কেমন আবারও ভূত দেখার অনেক সখ! ”
গাছের আড়াল থেকে সামনে এসে দেখল একটা কাঠবিড়ালি মাটিতে বসে ফল কামড়াকামড়ি করছে। অভ্র ফের গাছের পেছনে এসে নীলের হাত ধরে টেনে বলল।
‘ চলো তোমাকে ভূত দেখাই ‘
‘ নাহহ ভূত আমাকে খেয়ে ফেলবে! ‘
‘ এসো বলছি! ‘
রাগী কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল আগুনের আলোয় অভ্র’র চোখ একটু ভয়ংকর লাগছে এক শুকনো ঢোক গিলল। মস্তক নত করে অর্ধেক অভ্র’র পেছনে লুকালো।
সামনে তাকিয়ে নীলকে উদ্দেশ্য করে বলল।
‘ দেখো তোমার ভূত কত বেশি কিউট ‘
নীল অভ্র’র পেছন থেকে মাথা একটুখানি বের করল। সামনে দেখতে পেলো একটা কাঠবিড়ালি যা কে নীল ভূত ভাবছিলো। কাঠবিড়ালির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো বিড়ালি মাথা তুলে নীল এর দিকে এক নজর তাকিয়ে দৌঁড়ে পালালো।
‘ খুব কিউট না ভূত টা? ‘ অভ্র বলল।
‘ হুম ‘
‘ ওটা ভূত না ওটা কাঠবিড়ালি আর এই না-ও তোমার জন্য ফল। এইগুলো খেলে খিদে কমবে! ‘
অভ্র আগুন জ্বালানো লাঠি টা নীল এর হাত থেকে নিয়ে মাটিতে পুতে দিলো। নীল মাটিতে বসে কামড়ে কামড়ে ফল খাচ্ছে একটু একটু খাচ্ছে আর বাদ বাকিটা অভ্রকে দিচ্ছে আর বলছে।
‘ না-ও খাও ‘
মুখে তৃপ্তি ময় হাসি রেখে হাত থেকে ফল নিয়ে নীল এর জুঠা টাই খাচ্ছে। এদিকে রাত গভির হয়ে গেছে জঙ্গলের আশপাশ থেকে তীব্র গতিতে কারো ছুটে আসার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে হয়তো কোনো বড় ও হিংস্র প্রাণী হবে নীল অভ্র’র হাত শক্ত করে চেপে ধরে নেয়। নীল এর হাতের উপর নিজের এক হাত রেখে বলে উঠে..
‘ ভয় পেয়ো না আগেই বলেছি কোনো জীবজন্তু আগুনের কাছে আসে না। ‘
নীল শান্ত চোখে অভ্র’র দিকে তাকালো। কপালের উপর এসে পরে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল।
‘ ওই দেখো নীল নদীর বুকে কি সুন্দর চাঁদের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে ‘
বেশ কিছুক্ষণ নদীর কিনারে বসে চাঁদ দেখছে আর এদিকে ঝিমোচ্ছে। অভ্র নীল এর দিকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন ছুড়ল..
‘ ঘুম পাচ্ছে?’
নীল অভ্রর দিকে তাকিয়ে মাথা উপর নিচ করল।
অভ্র মুচকি হেঁসে নীল কে উদ্দেশ্য করে বলল।
‘ এদিকে আসো! ‘
‘কেনো? ‘
‘ আমার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমাবে তাই এখানে তো আর বালিশ পাবে না। ‘
‘ কিন্তু? ‘
‘ ভয় পেয়ো না আমি তোমাকে টাচ্ করবো না! আমি না তোমার বন্ধু বিশ্বাস করতে পারো ‘
নীল ঘুমে ডুলুডুলু অবস্থা ঘুমে পরেই যাচ্ছে এত কিছু না ভেবে আধ শোয়া হয়ে অভ্র’র বুকের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করল।
নীলের ঘুমন্ত মায়াবী চেহারার উপর তাকিয়ে আছে অভ্র মুখে মধ্যে চিনচিন করছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। বুকের মধ্যে এক অজানা উথাল-পাতাল ঢেউ শুরু হয়েছে। যাকে এত কষ্ট দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ছিল পরিস্থিতি আজ তাকেই নিজের বুকের উপর এনে রেখেছে। এই বুকের উপর মাথা নীল আগেও রেখেছিল কিন্তু আজকের অনূভুতি টা ভিন্ন।
ভোর হয়েছে সূর্যের তাপ ক্ষিপ্রে পরছে নীল এর মুখের উপর। এক হাত দিয়ে চোখ ঢলতে ঢলতে দুমড়ে মুচড়ে চোখ মেলে তাকালে। চোখ মেলে উপলব্ধি করল অভ্র গাছের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে নীল হাল্কা মৃদু স্বরে বলল।
‘ আফরান ‘
একবার নাম নিতেই চোখ মেলে তাকিয়ে নীল এর গালে হাত রেখে হরবরিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলল….
চলবে?
#অভ্র_নীল
#সিজন_০২
#পর্ব_২৬
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
নদীর মধ্যে একটা হাত ভেসে আছে একটু খানি। এদিকে হাতে কিছু ফল নিয়ে আসে কিন্তু কোথাও নীলকে দেখতে পাচ্ছে না। অভ্র ভাবতে লাগে, এই এত গহীন জঙ্গলে নীল একা একা গেলো কোথায়? নাকি আবারও একা রেখে গেছ বলে ভয় পেয়ে কোনো গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরেছে।
ফল গুলো গাছের নিচে এক সাইডে রেখে আশে পাশে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরল সাথে জোরে জোরে নীল বলে চিৎকার করে ডাকছে। কিন্তু কোথা থেকেও নীল এর কোনো হদিস পাচ্ছে না। বেশ চিন্তিত হয়ে পরল এবার আর শান্ত হয়ে বসতে পারল না। এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে করতে আগের জায়গায় চলে আসে। এক চিৎকার দিয়ে মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরে সামনে বসা চুলগুলো দুইহাত দিয়ে ধরে মুঠি বন্ধ করল কপালে ঠেকিয়ে রেখে দুই ফোঁটা চোখের জল বিসর্জন দিলো।
এভাবে বসে থাকলে তার চলবে না। যে করেই হোক নীলকে খোঁজে বের করতেই হবে।
বলেই উঠে দাঁড়ালো সামনে নদীর বুকে ছচ্ছ জলের দিকে এক নজর তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। অন্য দিকে ঘুরে দুই কদম এগিয়ে যায়। কিছু একটা ভেবে থেমে যায় বলে উঠে…
‘ পানিতে কি জেনো একটা দেখলাম মনে হলো। ‘
কথাটা বলে সিইওর হওয়ার জন্য আবারও পেছনে ঘুরে নদীর কিনারে আসল। নদীতে চোখ বুলাতে দেখতে পেলো এক টা হাত কিছুটা পানিতে ভেসে আছে৷ কিছুক্ষণের জন্য জেনো অভ্র ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। দেহ নিস্তেজ হয়ে গেছে ঠালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তখনই গাছের ডালে বসা একটি পাখি জোরে জোরে ডাকতে শুরু করল। পাখির ডাক কানে যেতেই বাস্তবে ফিরে আসল অভ্র হুশশ ফিরতেই পানিতে তাকালো এতক্ষণ হাত ভেসে ছিল কিন্তু এখন হাত টাও পানিতে তলিয়ে গেছে।
‘ নীল…. ‘
বলে চিৎকার দিয়ে লাফ দিলো পানিতে। পানি পরিস্কার তাই পানির নিচে সব কিছুই দেখা যাচ্ছে। বেশিক্ষণ পানির নিচে থাকতে না পেরে একটু পর পর বাহিরে পানির উপরে ভেসে উঠে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও পানির নিচে ডুব দেয়। বেশ কয়েকবার উপরে আসার পর নীলকে পেলো না। হাল ছাড়ল না আবারও ডুব দিলো এইবার পানির তলে যেতে একটা হাত দেখতে পেলো। সাঁতার কেটে গিয়ে হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে একহাত দিয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে সাঁতার কেটে উপরে চলে আসল।
একটা গাছের নিচে নীলকে শুয়ে দেয়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে নার্স পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেছে। অভ্রকে এখন শক্ত থাকতে হবে দূর্বল হলে চলবে না। নিজের চাল শক্ত করে নীল এর পেটে আলতো করে চাপ দিতে লাগল। মাথা কাত হয়ে মুখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। পেট থেকে হাত সরিয়ে দুই হাতে অভ্র ওর হাত দিয়ে স্লাইড করছে। এক হাতের তালু কিছুটা গরম অনুভব করলে অন্য হাতে স্লাইড করছে দুইটা হাতের তালু গরম হয়ে গেলে পায়ের দিক টায় যায়। মাটিতে বসে নীল এর দুই পা নিচের কোলে তুলে নিয়ে এক এক করে দুই পায়ের তালুতে স্লাইড করছে। এতে তেমন লাভ হচ্ছে না ভাবে।
পা মাটিতে রেখে আবারও মাথার কাছে আসে মাথা কোলে নিয়ে বারবার নীল বলে ডাকছে কোনো সাড়াশব্দ নেই। নীল এর পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এখনই ওকে গরম অনুভব করাতে হবে আর নয়তো নীলকে বাঁচানো যাবে না। নীলকে মাটিতে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে অভ্র ছুটে জঙ্গলের দিকে গেলো। তারাহুরো করে কয়েকটা লাকড়ি নিয়ে আসলো। নীল এর পাশে লাকড়ি গুলো রেখে পাথর দিয়ে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না কারণ অভ্রর পুরো গা ভিজে আছে বিরক্ত হয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে রাগে বলে উঠে…
‘ আরে ভাই জ্বলে যা জ্বল বলছি আমার নীলের জীবন মরণের প্রশ্ন প্লিজ জ্বলে যা আল্লাহ প্লিজ আগুন জ্বালিয়ে দাও আল্লাহ ‘
বলার সাথে সাথেই পাথরে আগুন জ্বলে উঠল। লাকড়ি গুলো দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। আরও কিছু লাকড়ি এনে নীল এর চারপাশে জ্বালানি জ্বালিয়ে রেখে দিলো। চারপাশ গরম হয়ে গেছে। নীল এর হাতের তালুতে অভ্র ওর হাত রেখে গষছে। এখন একটু একটু করে নীল এর শরীর গরম হচ্ছে নীল এর পার্স ও ফিরে এসেছে হার্ট ও বিট করছে। কিন্তু এখনো সেন্স আসেনি। বারবার গালে হাত রেখে নীল বলে ডাকছে কিন্তু নীল এর কোনো হুশশ নেই সে অজ্ঞ। হাতে পায়ের তালুতে বারবার গষছে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর নীল হালকা হাত পা নাড়ালো যা দেখে অভ্র’র কলিজা ঠান্ডা হলো। এক হাত মুঠ করে মুখ চেপে ধরল চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। নীল এর পায়ের কাছ থেকে উঠে গিয়ে নীলকে তুলে জরিয়ে ধরল। বুকের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে ধরে রাখল। নীল হুশ ফিরছে বুঝতে পেরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে মাটিতে শুইয়ে দিলো। আলতো করে কপালে চুমু একে দিয়ে নীল নীল বলে ডাকতে শুরু করল।
মাথা এদিক সেদিক করে নাড়াচ্ছে কানের মধ্যে কারো ডাকের আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে চোখ হাল্কা মিটমিট করে চোখ খুলল। প্রচন্ড জ্বলছে জ্বালা অনুভব করে আবারও চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে নেয়।
‘ নীল ঠিক আছো কথা বলো নীল ‘ নীল এর দুই বাহু চেপে ধরে অভ্র বলল।
‘ চোখ জ্বলছে ‘ দুই হাত দিয়ে চোখ ঢলতে ঢলতে বলল।
‘ চোখ গষছো কেনো আরও বেশি জ্বলবে তুমি বসো আমি পানি নিয়ে আসছি। পানির ছিটে ফোঁটা দিলে জ্বলা কমবে। ‘
বলে নীল এর পাশ কেটে উঠে নদীর কিনারে আসল। দুই হাতের তালুতে পানি নিয়ে। নীল এর পাশে এসে নীলকে বলল।
‘ হাত পাতো ‘
নীল দুই হাত একসাথে করে করলে অভ্র পানি টুকু নীল এর হাতে রাখে। অবশ্য হাতে আঙুলের ফাঁকে পানি ফোঁটা ফোঁটা পরে গেছে যতটুকু ছিল সবটা দিলো আর বলে উঠে..
‘ পানি টুকু ছিটকে চোখে দাও.. ‘
অভ্র’র কথা অনুযায়ী পানি টুকু চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলে নীল একটু শান্তি পায়। চোখের জ্বালা কমে এবার নীল চোখ মেলে তাকিয়ে নিজের সামনে উপলব্ধি করল অভ্র কে মিনিট কয়েক অভ্র’র দিকে তাকিয়ে রইল। দু’জনেই চুপ রইল। নীল মাথা নিচু করে নিলে অভ্রর নীল কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ল…
‘পানিতে পরলে কি ভাবে? ‘
‘ ………….. ‘ নীল নিশ্চুপ!
‘ পানির কাছে কেনো গেছিলে? ‘ ধমক দিয়ে বলে উঠে।
ধমক শুনে কেঁপে উঠে নীল এক হাত আরেক হাতের উপর রেখে মাথা নত করেই বলল।
______
ভোর সকালে….
দুইটা গাছে দুইটা পাখি বসে মিষ্টি মধুর স্বুরে গান গাইছে। পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে নীল এর ঘুম ভেঙে যায় পুরো রাত ঘুমিয়েছে ঘুমও ভালো হয়েছে এখনও ঘুমাতো শুধু পাখি গুলোর জন্য পারলো না। অভ্র পুরো রাতই জেগে ছিল সারা রাত নীলকে দেখেছে আরও অতীতের নানা স্মৃতিচরন করেছে। ফজরের আজানের একটু আগে আগে চোখ লেগে যায় তাই গাছের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমায়। এটা জঙ্গলে তাই বুঝা মুস্কিল এখন রাত কয়টা বাজে বা আজান কখন দিবে অনুমান করল।
চোখ দু’টো গোলগোল করে গাছের ডালের পানে তাকিয়ে রইল৷ পাখি দু’টো দেখতে অনেক সুন্দর আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি পাখিগুলো নীল এর নজর কেড়ে নিয়েছে তাদের সৌন্দর্যের তারায় এবং তাদের মিষ্টি মুখের কিচিরমিচির আওয়াজে যা নীলকে মুগ্ধ করেছে। দুই গালে হাত রেখে বসে পাখিদের পর্যবেক্ষণ করছিল। কিছুক্ষণ পর পাখি দুটো উড়ে গেলো নীল নিরাশ হয়ে পেছনে তাকালো। ঘুরে দেখল অভ্র ঘুমাচ্ছে অভ্রর সামনে বসে বলে উঠে..
‘ আফরান ‘
একবার নাম নিতেই চোখ মেলে তাকিয়ে নীল এর গালে হাত রেখে হরবরিয়ে তড়িঘড়ি মেরে উঠে বসে বলে উঠল….
‘ কি হয়েছি নীল ঠিক আছো তুমি? ‘
‘ আমি ঠিক আছো? ‘
‘ ঠিকই আছি তবে ঘাড়ে একটু ব্যাথা অনুভব করছি ‘
নীল অভ্র’র দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা দেখে অভ্র বলল।
‘ কিছু বলবে? ‘
অভ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল..
‘ আমার খিদে পেয়েছে ‘
‘ তোমার এখন খিদে পেয়েছে আর পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে তাই তো.’ অভ্র বলল।
নীল অভ্র’র দিকে তাকিয়ে মাথা উপর নিচ করল মানে হ্যাঁ ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে। নীল এর দিকে তাকিয়ে দুইবার মাথা নাড়িয়ে বলল।
‘ অপেক্ষা করো আমি কিছু ফল নিয়ে আসছি তোমার জন্য আমারও পেটের মধ্যে চু চু করছে। নীল কিছু বলল না দুইবার মাথা নাড়ালো। অভ্র কে যাওয়ার জন্য পারমিশন দিলো।
অভ্র নীল এর মাথায় হাত বুলিয়ে উঠে চলে গেলো।
এদিকে নীল অভ্র’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল তখনই একটা নীল প্রজাপতি উড়তে উড়তে নীল এর দিকে আসছে সেটা নীল খেয়াল করে।
প্রজাপতির সৌন্দর্য দেখে নীল এর মন আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠে। অতি খুশি হয়ে এক হাত প্রজাপতির দিকে বাড়িয়ে দিলো মুখে ফুটে উঠেছে এক চিলতে হাসি। প্রজাপতি টা উড়ে এসে নীল এর হাতের উপর বসল। হাতটা একটু নড়তেই সে উড়ে গেলো তার পিছু পিছু নীলও ছুটল। নীল খেয়ালই করেনি। কখন যে প্রজাপতির পিছু নিতে নিতে ঝর্ণার কাছাকাছি চলে গেছে। প্রজাপতি টা উপরের দিকে উড়ে যাচ্ছে নীল মুখ ভাড় করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে পেছনে একটু শরীর ঝুঁকে যায়। নিজেকে সামলানোর জন্য পেছনে এক পা ফেলে কিন্তু নীল পেছনে তাকায়নি ও কিসে পা ফেলছে। পেছনে পাথর ছিলো অনেক বছর ধরে পানিতে ডুবা বলে পিছল হয়ে গেছে। নীল এর পা পাথরের উপর রাখতেই পা পিছলে যায়। হুট করে এমন হবে নীল ভাবেনি নীল নিজেকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে ব্যর্থ হয় ততক্ষণে নীল নদীতে পরে যায়। পানিতে পরে অনেক বার তীরে উঠার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সাঁতার না জানায় পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানির তলদেশে তলিয়ে যায় তারপর কিছু মনে নেই।
কথাগুলো বলে মাথা নত করে রাখলো। নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে কেনো একা ছেড়ে গেলো কেনো সাথে নিয়ে গেলো না। মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে চাপা গলায় রাগী ভাব নিয়ে বলল।
‘ বোকা তুমি নীল একটা প্রজাপতির পেছনে ছুটে গিয়েছিলে গেছো তো গেছো চোখ দেখবে না তুমি কোথায় আছো। আজ যদি আমি সময়ে না আসতাম ভাবতে পারছো কি হতো তোমার এমন বাচ্চামো কেনো করো কতটা আতঙ্কিত হয়ে পরে ছিলাম। ভয় পেয়ে গেছিলাম। একটুর জন্য মনে হয়েছিল এই বুঝি তোমাকে আমি আবারও হার.. হারি… ‘
আর কিছু বলার আগেই অভ্র’র মনে পরল নীলকে বলপ কোনো লাভ নেই কারণ ও এইসব বুঝবে না অভ্র’র বেকুলতা বুঝবো না কারণ তো সবারই জানা। এই নীল যে অভ্রকে ভুলে গেছে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। কোনো কিছুই বুঝেনি বোকার মতো মাথা নত করে বসে রয়েছে মনের মধ্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সে অনুতপ্ত.. বেশি কথা বাড়ালো না নীল এর কপালে হাত রেখে তাপমাত্রা চেক করল। গাছের নিচ থেকে ফল নিয়ে পানিতে ভালোভাবে ধূত করে নেয়। নীল এর শরীর এখনও হাল্কা ঠান্ডা জলন্ত লাকড়ি গুলো ফুরিয়ে আসছে ফলগুলো নীল এর হাতে দিয়ে খেতে বলে লাকড়ি আনতে গেলো। পেছন থেকে অবশ্য নীল অভ্রকে সুধিয়ে ছিল।
‘ তুমি খাবে না? ‘
পেছনে না তাকিয়েই প্রত্যত্তরে জানায়।
‘ নাহ আমার খিদে মরে গেছে তোমার কান্ডজ্ঞান হীনতম কর্ম দেখে, ‘ অভ্র বলল।
নীল বেচারী বোকার মতোন ফল খাচ্ছে। স্যরি তো বলেছে একবার আর কত বলবে। কিছুক্ষণ পর অভ্র লাকড়ি এনে জ্বলতে থাকা লাকড়ি গুলোর উপর রেখে দেয়।
নীল এর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে অভ্র মাটিতে বসলো। অভ্র’র দিকে এক নজর তাকিয়ে পাশে অভ্র’র জন্য বাঁচিয়ে রাখা ফলগুলো তার দিকে বাড়িয়ে দিলো। এক নজর তাকিয়ে বলল।
‘ খাবো না আমি ‘ অভ্র বলল।
‘ তুমি না তখন বলেছিলো তোমার পেটে চু চু করছে। ‘
‘ এখন করছে না! ‘
‘ ওকে! না খেলে নাই আমার বলার প্রয়োজন ছিল আমি বলেছি এখন কেউ খেতে না চাইলে তো আর তাকে জোরপূর্বক খাওয়ানো যায় না। এইগুলো ও না হয় কিছুক্ষণ বাদ আমিই খাবো ‘
বলে ফলগুলো আগের জায়গায় রেখে দিল।কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল।
‘ কেউ খেতে না চাইলে তাকে জোর করতে হয় ভালো ভাবে বলতে হয় খেতে। আর তুমি কেমন মেয়ে একবার বলেছো আমি না করেছি দ্বিতীয় বার না বলে উল্টো বলছো কিছুক্ষণ পরে তুমিই খাবে। মায়া দয়া নাই নাকি তোমার পাশান মাইয়া। ‘
অভ্র’র কথায় অভ্র’র দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে দেয় নীল। তাকে হাসতে শুনে আঁড়চোখে উষ্ক কন্ঠে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ হাসছো কেনো এমব ভাবে পাগল রাণী?
‘ আমি তো এমনি এমনি বলছিলাম আমি খাবো। এই না-ও ‘
ফলগুলো হাতে নিয়ে অভ্র’র দিকে বাড়িয়ে দিলো। একটা ফল হাতে নিয়ে মুখে দিতে অভ্র থু থু করে ফেলে দিলো। বা হাতের উল্টো পুঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে নীলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে..
‘ ছিহহ মুখটাই নষ্ট হয়ে গেলো। এই ফল গুলো তুমি কিভাবে খেলে? এগুলো তো পানসে, কাল রাতেও খেয়েছো আর এখনও, কিভাবে খেয়েছো তোমার কাছে কোনোরকম লাগেনি? ‘ ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ লেগেছিল কিন্তু তুমি আমার কোন এত যত্ন ও কষ্ট করে ফল গুলো গাছে চড়ে পেরে এনেছো আর আমি একটু পানসে বলে ফেলে দেবো কিছুতেই না। ‘
বলেই এক গাল হাসি দিলো। নীল এর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। নীল এর দিকে একটু মিনিট খানেক তাকিয়ে থাকলে অভ্র’র মাথায় নেশা চড়ে যায় ইচ্ছে করে মাতাল হতে কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলাতে সক্ষম হয়।
‘ নীল আমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে তোমার বাড়িতে সবাই দুশ্চিন্তা করছে। ফোন বন্ধ তাই আমি তাদের ইনফর্ম করতে পারিনি?
‘ একটু থাকি না আর একটু’ নীল বাচ্চাদের ন্যায় বায়না করার মতো করে বলল।
‘ নীল অন্য কোনোদিন ঘুরতে নিয়ে আসবো আবার এবার চল৷ ‘
______
ওইদিকে বাড়িতে সব পাগল পাগল অবস্থা মিসেস নিশা কান্নাকাটি করছেন। তাকে শান্ত করছে তানিয়া, লাজল, তানজু মিস্টার মাশরাফ ও বেশ চিন্তিত ২৪ ঘন্টা না হওয়া পর্যন্ত , তো আর মিসিং কমপ্লেইন করতে পারবে না। কাব্য হল রুমে পায়চারি করছে সোফার উপরে বসে আছে তারা অনেকে বসে আছে তো অনেক হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য শান্ত হয়ে বসতে পারছে না। রাগে হাত পা চিবোচ্ছে জঙ্গলে থেকে কাল আসতে চায়নি সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো বলে সবাই বুঝিয়ে নিয়ে আসে। তানজু অভ্র কে এর পিছু নিতে দেখেছিল সেটা সবাই কে জানাতে সবাই ফিরে আসে তবে নিশ্চিন্তে বসতে পারে না।
দুশ্চিন্তা তো হয় তারপর ফোনও বন্ধ কাব্য তানজুর দিকে রাগান্বিত অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল।
‘ তোমার কথা বিশ্বাস করে আমি চলে আসছি কিন্তু যদি নীল এর সাথে আফরান না থাকে তাহলে কি হবে? ‘
‘ আমরা বুঝতে পারছি আপনার দিকটা কিন্তু আপনি আমাদের বিশ্বাস করতে পারেন অভ্… আফ.. আফরান নীল এর কিছু হতে দেবে না সহি সালামত বাড়ি নিয় আসবে। ‘ আকাশ বলল।
কাব্য ভ্রুকুঞ্চন করে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ তোমরা এত সিইওর হয়ে কি করে বলছো অভ্র নীল এর কিছু হতে দিবে না। ‘
কথার প্রসংগ পাল্টে শুভ বলল।
‘ আমরা আফরানের ছোট বেলার বন্ধু আমরা ওকে চিনি ও যেভাবেই হোক নীলকে নিয়ে আসবে। ‘
‘ তোমরা একটু চুপ করো তোমাদের কিচিরমিচির আমার ভালো লাগছে না, আমার মেয়ে টাকে পাওয়া যাচ্ছে না আর তোমরা তর্ক করছো। ‘
শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছলেন সাথে বিরক্ত হয়ে কথা গুলো বলল মিসেস নিশা। নিজের স্ত্রী কে শান্ত্বনা স্বরূপ মাশরাফ খান বললেন।
‘ শান্ত হও নীলকে আমরা পেয়ে যাবো৷ ‘
‘ তুমি এত স্থীর হয়ে বসে আছো কিভাবে তোমার কি চিন্তা হচ্ছে না আমার মেয়েটার জন্য এত পাশান কেনো তোমার হৃদয়? ‘ মিসেস নিশা বললেন।
‘ এ তুমি কি বলছো নিশু তোমার কি মনে হচ্ছে আমার কলিজার টুকরার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে না শুধু তফাৎ তোমার মতো আমি কেঁদে শব্দে প্রকাশ করতে পারছি না। ‘
মিসেস নিশা স্বামীর বুকে হেলে পরলেন আর কাঁদতে শুরু করলেন। এমন সময় পেছন থেকে তানিয়া মেইন ডোরের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল….
‘ ওই তো নীল চলে আসছে। ‘
তানিয়ার কথা সবার কানে যেতে সবাই সামনে তাকালো দৌঁড়ে নীল এর কাছে গেলো মিসেস নিশা মেয়েকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। নীলকে নিয়ে সোফায় বসানো হলো সবাই অনেক কথাই জিজ্ঞেস করছে। এক এক করে সবার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এবং কাল থেকে আজ এই পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব এক্সপ্লেইন করল।মিসেস ও মিস্টার খান অভ্র’র কাছে গিয়ে হাত ধরে কৃতজ্ঞতা জানালো।
কাব্য কিছুটা দূরে গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীল এর সামনে আসার সাহস হচ্ছে না তার কারণ তার বোন যে তাকে কাল কত কিছু বলেছে।
নীল সবার সাথে কথা শেষ হলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো কাব্য পাশে দাঁড়িয়ে বলল।
‘ ভাইয়া ‘
কাব্য চোখ বন্ধ করে দেয়ালের সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিল। এক হাতের দুইটা আঙুল চোখের উপর রেখে আলতো চেপে ধরে ছিল নীল এর আওয়াজ আসতেই হাত সরিয়ে চোখ খুলে নীল এর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল…
‘ কি বললি? ‘
‘ ভাইয়া তুমি তো আমার ভাইয়া সেই ভাইয়া যে আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে আর আমার ভালো’র জন্য তুমি নিজে এত দিন তোমার পরিচয় গোপন রেখে আমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছো তুমি পৃথিবীর বেস্ট ভাইয়া ‘
কাব্যর চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরে একপা সামনে এগিয়ে গিয়ে দুই হাত দিয়ে নীলকে জরিয়ে ধরে। কপালে আলতো করে চুমু একে প্রশ্ন করে।
‘ তোকে এইসব কে বলেছে? ‘
নীল মাথা পেছনে ঘুরিয়ে হাত দিয়ে অভ্র’র দিকে ইশারা করে বলল।
‘ আফরান বলেছে আমার নতুন বন্ধু! ‘
কাব্য এক হাত দিয়ে চোখের ফোঁটা পানি মুছে মাথা নাড়িয়ে কৃতজ্ঞতা জানালো।
অভ্র প্রতিউত্তরে মুচকি হেঁসে দুইবার চোখের পলক ফেলল ।
_______
অভ্র এক সাইডে কাব্য কে নিয়ে বলল..
‘ আমি নীলকে বুঝিয়েছি আমার মনে হয় না আজ কের পর থেকে ও আর কখনো অভ্র অভ্র করবে আর যদিও করে তাহলে তোমরা ওকে বলবে অভ্র বলতে কেউ নেই সবটাই ওর কল্পনার প্রতিচ্ছবি ‘
কাব্য নিজেকে সামলাতে না পেরে অভ্রকে জরিয়ে ধরে থ্যাংকস জানালো। দুপুরে ভরপুর খাওয়া দাওয়ার পর সবাই যারযার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
______
৪ মাস পর…
এদিকে সবার সাথেই নীল এর আগের মতো সম্পর্ক হয়ে যায়। সবার সাথে আগের মতো দুষ্টামি ফাজলামি তে মেতে উঠে শুধু কোনো কিছু মনেই পরেনি স্মৃতি ফিরেনি।
রেস্টুরেন্টে বসে সবাই কোল্ড কফি খাচ্ছিল তখন তানজু সবার উদ্দেশ্যে বলল।
”সবার জন্য একটা খুশির খবর আছে? ‘ তানজু বলল।
‘ কি খবর? ‘ কাজল!
‘ আমরা মনে হয় খালামনি হতে যাচ্ছি ‘
হাসতে হাসতে তানিয়া বলল মজা করেই বলেছে কথাটা। উপস্থিত সবাই কে অবাক করে দিয়ে তানজু বলল।
‘ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস আমি মা হতে চলেছি আর তোরা খালামনি ‘
সবাই হা করে তানজুর দিকে তাকিয়ে আছে সব থেকে বেশি অবাক হয়েছে আকাশ। চেয়ার থেকে উঠে এসে তানজুকে জরিয়ে ধরল। কপালে গালে কিস করল পেটের উপর হাত রেখে শীতল কন্ঠে বলল।
‘ সত্যি বলছো তুমি তানজু আমি বাবা হবো?’
তানজু মাথা নাড়ালো। আকাশ তানজুকে জরিয়ে ধরল। সবাই খুশিতে আত্মাহারা। নীল চট করে বলে উঠল
‘ ছেলে হলে নাম আমি রাখবো.!’
তানজু, ‘ কি নাম রাখবি ঠিক করেছিস? ‘
নীল, ‘ হ্যাঁ ‘
তানিয়া, ‘ আচ্ছা বল তো কি নাম শুনি। ‘
নীল বলল, ‘ আদ্রিক ‘
নামটা শোনার সাথে সাথে নীল এর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো অভ্র কারণ নীল এই নামটা ওদের বিয়ের পর প্রথম ছেলে হলে রাখবে বলেছিল।
‘ নামটা বেশ সুন্দর ‘ কাজল বলল।
‘ কিন্তু এই নাম তুই কোথা থেকে শুনেছিস ‘ তানিয়া!
‘ জানি না তবে নামটা আমার অনেক ভালো লাগে হুট করেই মনে পরে গেলো। কথা দে তানজু ছেলে হলে এই নামই রাখবি। ‘
‘ আচ্ছা কথা দিলাম নাম এটাই রাখবো আদ্রিক ‘
_____
আদ্রিক: আম্মু!
তানজু- হ্যাঁ বাবা!
আদ্রিক: তোমরা আমার নাম টা এই জন্য রেখেছিলে কারণ নীল আন্টি বলেছিলো তাই?
তানজু: হ্যাঁ বাবা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।
আদ্রিক: জানো তো আম্মু আমার এই নামটা আমার একটুও পছন্দ ছিল না কিন্তু আজ থেকে আমার নামটা আমার অনেক প্রিয় হয়ে গেলো।
তানজু: কেনো নীল রেখেছে বলে?
আদ্রিক: হ্যাঁ আম্মু! ( একটু লজ্জা মাখা ভঙ্গিতে বলল)
তানজু: পাগল ছেলে। (হাসতে হাসতে বলল)
আদ্রিক: জানো আম্মু আমার মনে হচ্ছে আমি নীল আন্টির প্রেমে পরে গেছি।
বলে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল। ছেলের কথা শুনে তানজুর হাসতে হাসতে বেহুঁশ হওয়ার মতো অবস্থা।
আদ্রিক: আম্মু আমি নীল আন্টির সাথে দেখা করব।
তানজু: দেখা করবো বাবা গল্পটা শেষ হোক।
আদ্রিক: ঠিক আছে পরো কি হলো তারাতাড়ি বলো।
তানজুঃ তারপর এক সন্ধ্যা বেলা সমস্ত শহর অন্ধকারে ছেয়ে গেলো….
আদ্রিক: আম্মু হরর স্টোরির মতো বলছো কেনো ভয় লাগছে তো।
তানজু: আচ্ছা তাহলে শোন তারপর হঠাৎ তখন..
চলবে?