#অভ্র_নীল সিজন_০২ #শেষ_পর্ব_২৭
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখিকা)
পুরো শহর জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে বলতে কারেন্ট চলে গেছে। বাড়িতে নীল একা অন্ধকারে নীল ভয় পায় রুমের এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। কাব্য, মাশরাফ খান কাজের জন্য গাজীপুরের বাহিরে গেছেন। বিকেল বেলায় ছোট বেলার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছেন মিসেস নিশা তার বান্ধবী আজকে বিদেশ চলে যাচ্ছে তাই দেখা করতে যাওয়া। উনিও তো জানতেন না এমন অবস্থা হবে।
বিছানার উপর ফোন রিং হচ্ছে ফোন হাতে নিয়ে দেখল অচেনা একজনের নাম্বার থেকে কল। কল রিসিভ করে কানে লাগাতে অপর পাশ থেকে বলল..
‘ ভয় পেয়ো না আমি এখানেই আছি বেলকনিতে চলে আসো। ‘
ফোন কানে লাগিয়ে হেঁটে বেলকনির গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখল নিচে অন্ধকারে একজন দাড়িয়ে আছে। সে আবারও বলল.
‘ আমি ফোন রাখছি, তুমি ফ্লাশলাইট অন করে এখানে চলো আসো ভয় পেয়ো না। ‘
কল কেটে নীল মোবাইলে ফ্লাশ লাইট অন করল। একটু একটু ভয় লাগছে এত বড় বাড়িতে একা ভয় তো একটু লাগবেই। বাহিরে এসে সোজা এক দৌঁড় দেয় ছেলেটার সামনে পৌঁছালো হাপাতে হাপাতে বলল..
‘ আফরান আর একটু আগে কেনো আসোনি তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। ‘
‘ ভয় পাচ্ছিলে জেনেই তো আসলাম। ‘ অভ্র বলল।
‘ কিন্তু আমি তো তোমাকে ডাকিনি তাহলে তুমি কিভাবে বুঝলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম? ‘
‘ কারণ আমরা বন্ধু তাই বুঝে নিয়েছি ‘
‘ ও আচ্ছা ‘
‘ এখন আমার সাথে! ‘ অভ্র বলল।
‘ কোথায়? ‘
‘ তুমি না নীল বড্ড বেশি প্রশ্ন করো। এখন কোনো কথা না চলো। ‘
নীল: নিশ্চুপ…..!
দু’জন পাশাপাশি হাঁটছে তবে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে। এই অন্ধকার রাস্তায় আলোহীন ল্যাম্পপোস্টের নিচে দু’জনে পাশাপাশি হেঁটে চলেছে।
_____
এক সপ্তাহ পর…
অভ্র শাওয়ার নিচ্ছিল তখন ওর ফোনে লাগাতার রিং হচ্ছে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে চটজলদি শাওয়ার শেষ করে এক সাদা টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হয়ে আসল।
অন্য হাতে আরেকটা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটা হাতে নিলো। ফোনের দিকে কয়েক সেকেন্ড ভ্রুকুঞ্চন করে তাকিয়ে কল রিসিভ করে কানে লাগাতে অপর পাশ থেকে বলল।
‘ তুই যেখানেই আছিস তারাতাড়ি চলে যায়। ‘ আকাশ বলল।
রেডি হয়ে বাইক নিয়ে জায়গা মতো পৌঁছে যায়।
নীল এর বাড়ির ভেতরে যেতেই কাব্য উঠে এসে অভ্রকে এক হাতে জরিয়ে নেয় আর বলে…
‘ স্যরি দোস্ত তোমার নাম্বার আমার কাছে ছিল না তাই আগে থেকে কিছু বলতে পারিনি বাধ্য হয়ে আকাশ কে কল দিতে হলো তোমাকে। ‘
‘ কি হয়েছে সিরিয়াস কিছু আমাকে এভাবে আসতে বলল কেন? ‘
‘ এসো তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই! ‘
অভ্র কোনো কিছুই বলল না কাব্যর সাথে গেলো। হল রুমে সোফার উপর বসে আছে একটা ছেলে অভ্রকে তার সামনে নিয়ে গিয়ে বলা হলো।
‘ ও হচ্ছে আফরান আমাদের সবার বন্ধু ওর কথাই তোকে বলেছিলাম আমাদের নীলকে দুইবার বাঁচিয়ে ছে ওই সেই ‘
‘হ্যালো! আপনার সাথে পরিচিত হলে খুশি হলাম।’
কাব্য আবারও বলল, আফরান ও হচ্ছে আমার ছোটো বেলার ফ্রেন্ড নিলয় আর নীল এর হবু বর. তোমরা সবাই কথা বলো আমি নীলকে নিচে নিয়ে আসছি।
অভ্র নিজের কানকে জেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। কিভাবে সম্ভব আর নীল রাজি হলো কিভাবে? এমন সময় কাঁধে কারো হাত রাখায় পেছনে তাকালো। অভ্র’র দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করল সাইডের যাওয়ার জন্য সেও দ্বিমত করেনি।
‘ ভাবছিস তো নীল কিভাবে মেনে নিলো। ‘
অভ্র কথা বলতে পারছে না চোখ দু’টো দিয়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে।
আকাশ আবারও বলল, ‘ সব কিছু তোর জন্যই হয়েছে এই ছয় মাসে তুই নীল এর ব্রেইন ওয়াশ করেছিস অভ্র বলতে কেউ নেই। আর দেখ যখন নীল একটু স্বাভাবিক হয়েছে তাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আবারও হারিয়ে ফেলার আগে নীলকে সবটা বল অভ্র এখনও দেরি হয়ে যায়নি।
প্রতিউত্তরে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।
‘ আমি ভালো নই আমার জন্য নীল আগেও এক্সিডেন্ট করে সব ভুলে গেছে। আমি চাই না এবার আর তেমন কিছু হোক নিলয় ভালো ছেলে আর কাব্য নীল এর ভাই কোনো ভাই- ই তার বোনের বিয়ে বাজে ছেলের সাথে দিবে না নিলয় সব দিক দিয়ে নীল এর জন্য পারফেক্ট যা আমি নই ছেড়ে দে এইসব অতীতের কথা আর বলিস না। অতীতের পান্না সব সময় উল্টাতে নেই। ‘
কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলে আকাশ অভ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে।
‘ অভ্র তুই আবারও ভুল ডিসিশন নিচ্ছিস। নীল এর যেকোনো সময় সব মনে পরে যেতে পারে তখন? ‘
‘ তত দিনে ওর বিয়েও হয়ে যাবে রে। ‘
‘ অভ্র ‘
‘ হুশশ আফরান অভ্র মৃত! ‘ (আকাশের ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে কথাগুলো বলল।
ওইদিকে সিঁড়ি দিয়ে নীলকে নিয়ে আসা হচ্ছে। ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে হবে শুধু নিজেরা নিজেরাই। পিংক কালারের লেহেঙ্গা পরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। নীল খুব একটা সাজেনি সিম্পল সাজেও তাকে অপরূপ সুন্দর লাগছে। নীলকে নিয়ে নিলয় এর পাশে বসানো হলো। নীল চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখল অভ্র দাঁড়িয়ে আছে চোখ টলমল করছে। অভ্রকে দেখে নীল এর বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল।
রেজিস্ট্রার কাগজে নিলয় সই করে দিলো। নীল এর সামনে দেওয়া হলো নীল হাতে কলম নিয়ে আঙুলের ফাঁকে রেখে অভ্রর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মনের মধ্যে উথাল-পাতাল ঢেউ বইছে। অভ্র এইসব নিজের চোখের সামনে দেখে সইতে পারবে না বলে নীল এর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
ঝিম ধরে আছে নীল এর মাথা সব কিছু জেনো আবছা আবছা দেখছে মাথা ঘুরছে। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেয় কেনো জানি আফরানের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে মন বিচলিত হয়ে উঠেছে দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে রেখে তার পরেই ‘ অভ্র ‘ বলে চিৎকার দিলো।
চিৎকার দিয়ে চোখ মেলে তাকালো সামনে ডেস্কের উপর থেকে সব ছুঁড়ে ফেলো দিলো। আর চিল্লিয়ে বলল..
‘ এ বিয়ে হতে পারে না আমি মানি না এই বিয়ে ‘
নীল এর হঠাৎ কি হলো কেউ বুঝতে পারছে না সবাই আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। নীল আবারও বলতে শুরু করল..
‘ আমি অভ্র কে ভালোবাসি। আমার জীবন শুধু অভ্র’র জন্য বাঁচবো তো শুধু অভ্র’র জন্য মরবো তো অভ্র’র জন্য আমার লাইফে অভ্র ব্যতিত দ্বিতীয় কোনো পুরুষের কোনো জায়গা নেই! ‘
‘ অভ্র বলতে কেউ নেই নীল ‘ কাব্য বলল..!
‘ একদম আমার কাছে আসবি না তুই তনু। আমার সব মনে পরে গেছে মিথ্যে বলার কোনো প্রয়োজন নেই ‘
উপস্থিত সবাই বিস্মিত কাব্য চুপ হয়ে গেলো। আকাশ তন্ময়, শুভ, তানিয়া, কাজল ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠল৷
‘ আমাকে আমার অভ্র’র থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না কখনোই না মৃত্যু ছাড়া অভ্র নীল কখনো আলাদা হবে না। ‘
বলেই পেছনে ঘুরে আকাশ এর সামনে দৌঁড়ে গেলো। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ আমার অভ্র কোথায় জিজু…? ‘
আকাশ নীল এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল!
‘ ওদিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ‘
একটু সময়ও নষ্ট না করে লেহেঙ্গা হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত তুলে দৌঁড় দিলো।
এই ব্যস্ত রাস্তায় কাঁদছে আর দৌঁড়াচ্ছে। এক হাত দিয়ে চোখে পানি মুছতে তো অন্য হাত দিয়ে লেহেঙ্গা ধরে আছে। হাইওয়ে রাস্তার সাইড দিয়ে যাচ্ছিল অভ্র পেছন থেকে চিৎকার দিয়ে ডাক দিয়ে বলে উঠে….
‘ অভ্র…..’
নীল এর ভয়েস শুনে অভ্রর চলা স্টপ হয়ে যায় পা থেমে যায় পেছনে ঘুরতেই ঝড়ের বেগে ছুটে এসে জরিয়ে ধরে অভ্রকে।
কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে কেঁদে শার্ট ভেজাচ্ছে নীল। নিজের থেকে ছাড়িয়ে নীল এর বাহু চেপে ধরে প্রশ্ন ছুড়ল।
‘ নীল তুমি এখানে কি করছো? তোমার না আজকে বিয়ে বর কোথায় তোমার ‘ অভ্র
‘ পাগল হয়ে গেছো তুমি অভ্র ভুলে গেছো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি। আমার সব মনে পরে গেছে অভ্র আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে তোমার জায়গায় কোনো দিনও কল্পনা করি নাই আর তুমি ভাবলে কি করে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবো? ‘
‘ নিলয় ভালো ছেলে নীল তোমার জন্য পারফেক্ট ফিরে যাও আর তাকেই বিয়ে করে। আমি তোমাকে কি বলেছিলাম তুমি হয়তো ভুলে গেছো সেদিন বলেছিলাম তো আমি শুধু সব কিছু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করেছিলাম। ‘
‘ আমি বিশ্বাস করি না অভ্র আমি জানি তুমি আমাকে ভালো বাসো তবে কেনো নিজেকে আমাকে কষ্ট দিচ্ছো কেনো নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? ‘
‘ তোমার বিশ্বাস করা আর না করায় আমার কোনো কিছুই যায় আসে না নীল ছাড়ো আমাকে। ‘
কথাটা বলে নীল এর হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো।
নীল- অভ্র প্লিজ আগের বারের মত আমাকে এইবারও ফিরিয়ে দিও না অভ্র অতিরিক্ত চাই তোমাকে অতিরিক্ত ভালোবাসি তোমাকে আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া। অভ্র প্লিজ আমাকে একবার জরিয়ে ধরে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া আমি যে অনেক ভালোবাসি তোমাকে আমার ধম বন্ধ হয়ে যাবে তুমি আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলে প্লিজ আমাকে একবার জরিয়ে ধরো প্লিজ কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলো আমি শুধুই তোমার যেমন আগে বলতে প্লিজ বলো অভ্র বলো না।
অভ্র- আমি চাই না তোমাকে সরে যাও আমার জীবন থেকে তোমার চেহারাও আমি দেখতে চাই না নীল মুক্তি দাও তুমি আমাকে চলে যাও আমার জীবন থেকে আর কখনো ফিরে এসো না জাস্ট চলে যাও।
কথাগুলো বলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। পেছনে ঘুরে এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে সোজা হেঁটে চলে যাচ্ছে। পেছনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠল…
নীল- আমি তোমাকে ভালোবাসি। অভ্র একটা কথা জেনে রেখো আমি নীলাঞ্জনা নীল আমার মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত শুধুই তোমাকেই ভালোবেসেছি।
কথাগুলো অভ্র শুনেও গুরুত্ব দিলো না। পেছনে না তাকিয়েই এক হাত তুলে নাড়াচ্ছে মানে ‘ বাই ‘ জানাচ্ছে।
আর তখনই এক চিৎকার দিলো।
নীল- অভ্র…….
চিৎকার টা খুবই ভয়ংকর ছিলো চিৎকারে অনেক আহত কন্ঠ মিশে ছিলো। নীল এর এমন চিৎকার কানে আসতেই অভ্র পেছনে ঘুরে তাকালো এবার সেও চিৎকার দিলো।
অভ্র- নীলললললল!
তানজু- নীলললললললললল!
হাইওয়ে তে নীল অভ্র ওদের থেকে কিছুটা দূরে বাকিরা দাড়িয়ে ছিল। চোখের পলকে সব জেনো পাল্টে গেলো। কোথা থেকে এসে এক মাইক্রো নীলকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। নীল এর রক্তাক্ত শরীর মাটিতে পরে আছে পুরো রাস্তা রক্ত দিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে। অভ্র দৌঁড়ে এসে নীল এর কাছে বসলো মাথা তুলে কোলে উঠিয়ে নিয়ে পাগলের মতো করছে। নীল খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। ওদিকে তানজু চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে এমনি তে মা হতে চলেছে। সবাই দৌঁড়ে নীল এর কাছে আসল। নীল মিটমিট করে চোখ খুলে তাকালো অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলল..
‘ অভ্র শুরু থেকেই তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু চেয়েছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। ভালোবাসার মানুষের চোখে ভালোবাসা দেখতে ভালো লাগে। তুমি যখন রোজ গোলাপ নিয়ে অপেক্ষা করতে আমার ইচ্ছে করতো তোমাকে গিয়ে জরিয়ে ধরি আর বলি আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তোমার এতবার বলার পরও আমি বিশ্বাস করি না তুমি আমাকে ভালোবাসো না আমি জানি তুমি আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো তবে আমাকে বাঁচানোর জন্য নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখো কারণ তোমার শত্রুর অভাব নেই। জানো কি অভ্র ভালোবাসার মানুষের সাথে মরেও শান্তি যা বিচ্ছেদে নেই। ‘
কথার মাঝখানে কাব্য দুই হাত নীল এর দিকে বাড়িয়ে বলল..
‘ বোন তোর কিছু হবে না আমি তোকে এখনই হসপিটাল নিয়ে যাবো৷ ‘
‘ আমাকে টাচ করো না ভাইয়া আমাকে মন ভরে অভ্রকে দেখতে দাও কথা বলতে দাও.. ‘
‘ অভ্র খুব ভালোবাসি তোমাকে সারাটি জীবন তোমার সাথে থাকতে চেয়েছিলাম তা আর হলো না। তুমি কি জানো নীল ছাড়া অভ্র অচল আর অভ্র ছাড়া নীল। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না অভ্র আগেই বলেছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে তোমার সাথে রাখতে চাইলে না। আমার কাছে সময় বেশি নেই তুমি কি লাস্ট বারের জন্য আমাকে জরিয়ে ধরে বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো প্লিজ অভ্র বলো না আমার হাতে সময় বেশি নেই..! ‘
চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি পরছে কথাও ঠিকমতো বলতে পারছে না কোনো রকম টেনে টেনে কথাগুলো বলল নীল৷
‘ তোমার কিছু হবে না নীল আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো এখনই ‘
বলে নীলকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। কিছুদূর দৌঁড়ে যেতে নীল আবারও বলল।
‘ ভালোবাসি প্রচুর তোমাকে আমরা ভালোবাসার প্রদীপ অভ্র নীল৷ আজ নীল তার প্রদীপ নিভিয়ে অভ্রকে মুক্তি দিয়ে চলে যাচ্ছে। ‘ নীল বলল…!
‘ তুমি প্লিজ এইসব বলো না চুপ করো প্লিজ। ‘ কাঁদতে কাঁদতে বলল অভ্র।
এদিকে নীল এর রক্তে অভ্র’র শার্ট ভিজে চিবচিবা হয়ে গেছে। নীল তার এক হাত তুলে অভ্র’র গাল ছুঁয়ে বলল।
‘ শেষ ছোঁয়া ‘
কথা বলা শেষ হতেই গাল থেকে হাতটা নিচে পরে গেলো। নীল এর আত্মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে উড়ে গেলো। নীলকে কোলে নিয়ে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পরল। নীল এর মুখের দিকে তাকিয়ে বারবার নীল বলে ডাকল কোনো শাড়া শব্দ না পেয়ে মাটিতে শুয়ে দিলো।
‘ নীল উঠো নীল কি হয়েছে তোমার নীল তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া নীল। তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না এখনই উঠে বসবে তাই তো নীল কথা বলো চোখ খোলো নীল তুমি না শুনতে চেয়েছিলে আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না। শোনো নীল আমি চিৎকার করে বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি প্লিজ নীল তাকাও আমার দিকে আমাকে ছেড়ে তুমি যেতে পারো না নীলললল… i can’t live without you… প্লিজ উঠো নীললল আমাকে ক্ষমা করে দাও নীল আমি আর কখনো তোমাকে নিজের থেকে দূরে সরাবো না আমার বুকের মধ্যে খানে তোমাকে আগলে রাখবো নীল আমাকে অভ্র বলে ডাকো নীল। আমাকে তুমি মারো প্লিজ আমাকে তুমি মারো বকো কাটো যা ইচ্ছা করো তাও ফিরে আসে নীল। নীলললল উঠো এই নীল উঠো বলছি ‘
নীল এর নিস্তেজ দেহ বুকের সাথে মিশিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে আর এইসব বলছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। নীল যে না ফেরার দেশে পারি দিয়েছে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলেগেছে। খোলা আকাশের নিচে নীল এর দেহ জরিয়ে ধরে কান্না ও চিৎকার শুনে হাইওয়েতে জ্যাম পরেছে রাস্তার সব গাড়ি থেমে দেখতে এসেছে কেনো চিৎকার করে কাঁদছে।
এতে কি কোনো ফায়দা হচ্ছে যে যাওয়ার সে চলেই গেছে। সবাই মিলে নীল এর থেকে অভ্রকে আলাদা করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
হাইওয়ে থেকে বাড়িতে আসা হলো। পুরো বাড়ি জুড়ে মরা কান্না সারা রাত নীল এর দেহের সামনে বসে বাড়ির সবাই কেঁদেছে। সকাল হতেই দাফনের কাজ সম্পূর্ণ হয়। এর মধ্যে সবাই কাঁদতে কাঁদতে কতবার যে বেহুঁশ হয়েছে তার ঠিক নেই। নিজেদের প্রিয় বান্ধবী ছেড়ে চলে গেছে তারা কেউ নিজেদের মধ্যে নেই।
পুরো পৃথিবী জেনো থমকে গেছে।
_____
আদ্রিক: আম্মু তারপর অভ্র আঙ্কেলের কি হলো…?
তানজু: তারপরে আমরা আর অভ্র কে কোথাও খুঁজে পাইনি। তোর জন্মের সাত মাস পর আমি তুই আর তোর আব্বু বিকেলে বাড়ি ফিরলাম। সেদিন ঠিক যে জায়গা টায় নীল এক্সিডেন্ট করে মারা গেছিলো ঠিক সেথায় অভ্রকে বসে থাকতে দেখি। শুরুতে আমরা পাগল ভাবি তাি তোয়াক্কা করি না কিন্তু তোর আব্বুর তার বন্ধু কে চিন্তে ভুল হয় না। সেদিন আমরা জানতে পারি নীল মারা যাওয়ার পর অভ্র যে উধাও হয়ে গিয়েছিল তারপর নিজের সব কিছু ভুলে পাগল হয়ে যায়। নিজের অস্তিত্ব ভুলে নীল এর সুখতাপে পাগল হয়ে যায়।
কথাগুলো বলে তানজু কান্নায় ভেঙে পরে। আদ্রিক নিজেও কাঁদছে সে ভেবেছিল গল্পের শুরুটা দারুন ছিল শেষটাও দারুন হবে কিন্তু হলো উল্টো। ছোটো আদ্রিক মা’কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। আর চিৎকার করে আল্লাহর কাছে বলছে…
‘ অভ্র নীল এর সাথে অবিচার কেনো করলা তুমি আল্লাহ! কেনো তাদের ভালোবাসা অপূর্ণ রেখে দিলা কেনো মিলিয়ে দিলে না তাদের কেনো আল্লাহ কেনো? ‘
আদ্রিককে জরিয়ে ধরে কাঁদছে নিজেকে সামলাতে একটু সময় লেগে যায়। মা’য়ের চোখের পানি দুই হাত দিয়ে মুছে দিয়ে আদ্রিক বলল..
‘ তুমি প্রতি রাতে লুকিয়ে কাঁদতে সেটা কি নীল আন্টির জন্য আম্মু? ‘
তানজু দু’বার মাথা উপর নিচ করল। ছেলেকে জরিয়ে ধরে আরও কান্নায় ভেঙে পরল। কারণ যে একটাই নীল এর রূপ নিয়ে এসেছে আদ্রিক ওকে যে পুরো নীল এর মতো দেখতে।
_____
ছেলের হাত ধরে টেনে বাড়ির ভেতরে একটা বন্ধ রুমের ভেতরে লক খুলে ঢুকল। অন্য সব রুমের থেকে এই রুমটা অনেক পরিস্কার ও গুছানো। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। আদ্রিক অবাক হয়ে তানজুর দিকে তাকালো।
তানজু হেঁটে গিয়ে রুমের ডান পাশে থাকা একটা বড় লাল পর্দা টা টান দিলো। পর্দা টা পরে যাওয়া পরই তার আড়ালে থাকা একটা মেয়ের ছবি ফুটে উঠল। ছবিটা দেখে তাতে হাত বুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল।
‘ আদ্রিক এটা তোর নীল আন্টি ‘
ছবি দেখে মুগ্ধ হয় আদ্রিক এত সুন্দর নীল সে কল্পনা করেনি। ছবির কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ চোখ জুড়ালো। মার কাঁধের উপর হাত রেখে বলল।
আদ্রিক: মা আজ থেকে আমি তোমার ছেলে আদ্রিক নই। আজ থেকে আমি তোমার নীল….
কথাটা শুনে মাথা তুলে ছেলের দিকে তাকালো হাউমাউ করে কেঁদে আদ্রিক কে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু একে দিয়ে কাঁদতে লাগল আর বলল আমার নীল তুই-ই তো আমার নীল তোর মুখ পানে তাকিয়েই তো বেঁচে আছি আমি তুই-ই তো আমার একমাত্র বেঁচে থাকার কারণ। তোর মধ্যেই তো ফুটে উঠে ভেসে উঠে নীল এর প্রতিচ্ছবি নীল এর ভালোবাসা অভ্র নীল….!
______ সমাপ্ত ______