অমানিশা❤️,পর্ব-১
লেখিকা_মালিহা খান❤️
গ্রীষ্মের দাবদাহ চলছে তখন। দুপুর বেলাতেই হাঁপিয়ে উঠে পৃথিবী। তেমনি এক ঘর্মাক্ত দুপুরে হুট করেই দেখা হয়েছিলো খুব অপরিচিত দুজনের।
শুক্রবারের নিষ্কর্মা দ্বিপ্রহর। খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে চমৎকার এক ভাতঘুমের মাঝে উৎকট কলিংবেল বাজলো। একবার নয়, দু’বার নয়, একটু থেমে থেমে পরপর পাঁচবার। মুনতাহা অবশ শরীর টেনে উঠে বসলো তেঁতো মুখে। মাথার উপর ভনভন করে ফ্যান ঘুরছে। সিলিং কাঁপছে। তবু ঘামতে ঘামতে গলার নিচটা পুরো ভিজে উঠেছে। পরণের সুতির কামিজ কুঁচকে বাজে অবস্থা। একটা ঢিলে বেণী করে শুয়েছিলো। বেসামাল ঘুমে তারও অকাল মরণ!
আরেকবার কলিংবেল বাজলো। ধ্যাত্! কে আসলো এইসময়? বাবা না থাকলে সে কখনোই দরজা খোলেনা। কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। তাছাড়া সচরাচর কেউ আসেওতো না।
আবার কলিংবেল। এবার ক্ষিপ্রবেগে বিছানা ছাড়লো মুনতাহা।
ঘামে ভেজা শার্ট গায়ে শ্রান্ত ধরণে দাড়িয়ে আছে আরশাদ। স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা কপাল বাহুতে মুছে নিয়ে আরেকবার কলিংবেলটার দিকে হাত বাড়ালো সে। তবে সুইচ চাপতে হলোনা। তার আগেই ভেতর থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ শোনা গেলো,”কে?”
বাড়িয়ে রাখা হাত গুটিয়ে নিলো আরশাদ। গলা পরিষ্কার করে বললো,”জি, মাহতাব আংকেল আছেন? একটু বাসার চাবিটা দিতে বলুন।”
মুনতাহা মুখস্তের মতো উওর দিলো,”আব্বু বাসায় নেই। পরে আসুন।”
আরশাদ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। কথা বাড়ালোনা। বলার ঢং শুনেই বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটাকে বলে চাবি উদ্ধার করা সম্ভব নয়। নিচে মালপত্র নিয়ে ট্রাক দাড়িয়ে আছে। এমনেই অনেকক্ষণ হয়েছে, আরো সময় গেলে নিশ্চিত হাজারখানেক টাকা বেশি দিতে হবে। পকেট থেকে ফোন বের করলো আরশাদ। অবিলম্বে ডায়াল করলো “Mahtab Uncle” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটায়।
ওপাশের মানুষটার সাড়াশব্দ না পেয়ে আবারো বিছানার দিকে পা বাড়ালো মুনতাহা। চোখ ফেটে ঘুম পাচ্ছে। দূর্দমনীয় নিষুপ্তি!
ফোন রিসিভ হলো দ্বিতীয়বারে। আরশাদ সালাম দিয়ে বিনীত কন্ঠে বললো,”আংকেল, আসলে চাবিটা তো আপনার কাছে। আমি দাড়িয়ে আছি। আপনার বাসায় বেল বাজিয়েছিলাম। আপনার মেয়ে দরজা খুললোনা। বললো, আপনি বাসায় নেই।”
ওপাশ থেকে সহজ উওর এলো,
—“হঠাৎ একটা জরুরী কাজে বেরোতে হয়েছে। চিন্তা করোনা। আমি মুনকে বলে দিচ্ছি চাবিটা দিতে। তুমি একটু অপেক্ষা করো।”
আরশাদ ফোন রাখলো। পাঁচ- সাতমিনিটের ব্যবধানে দরজা খুললো মুনতাহা। চোখে তখনো রাজ্যর ঘুম। কেবলমাত্র বাবা ফোন করে বলেছে বলেই এতো সাধের ঘুম রেখে এতক্ষণ যাবত চাবি খুঁজছিলো সে।
আরশাদ একবার তাকালো। সেই খুলে যাওয়া বেণী, তৈলাক্ত ত্বক আর এলোমেলো গায়ের ওড়নায় ছিলো সুপ্ত বিরক্তি। আপনমনেই কয়েকবার আওড়ালো সে,”মুন, মুন, মুন, শেষবার এলো, “চাঁদ”।”
মুনতাহা হাত বাড়িয়ে দিলো। আরশাদ চাবি নিতে নিতে দেখলো, মেয়েটার নখে মেহেদি দেয়া। লাল রঙা মেহেদি। কি গাঢ় রং তার!
___________
মাহতাব সাহেব ফিরলেন বিকেলের দিকে। চাবি দিয়ে দরজা খুললেন। বেল বাজাননা কখনো। মুনতাহা প্রায়ই ঘুমিয়ে থাকে। বেলের শব্দে সেই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটুক তিনি চাননা একদম। মেয়েকে নিয়েই তার পৃথিবী, জগত সংসার, সমস্তকিছু।
ধারণা ঠি ক, মুনতাহা ঘুমাচ্ছে। ঘরের দরজা খোলা। এই বিশাল ফ্ল্যাটে সারাটাদিন একা একা থেকে মেয়েটার পুরোদমে একা থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম কি ভয় পেতো! মাহতাব সাহেব কাজে যেয়ে ফোন কানে নিয়ে বসে রইতেন। মুনতাহা একটু পর পর বলতো,”আব্বু আছো?”
আবার মাঝেমধ্য বলতো,”আব্বু আমি একটু ঘুমাই? তুমি লাইন কেটে দিবে? কেটোনা কিন্তু… ঠি-ক আছে?”
তিনি মুচকি হেসে উওর দিতেন,”কাটবোনা মা, তুমি ঘুমাও।”
মুনতাহা সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়তো। তিনি লাইন কাটতেননা। দু’তিনঘন্টা পেরিয়ে গেলে আবার একটা সদ্য ঘুম ভাঙা কন্ঠের ডাক,”আব্বু আছো?”
টেবিলে খাবার গোছানো নেই। ক্ষিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। দুপুরে কোনরকমে নাকেমুখে গিলেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ভালোকরে খাওয়া হয়নি। মেয়েকে ডাকতে ইচ্ছে করছেনা। মা
হতাব সাহেব গোসলে ঢুকলেন। আধঘন্টা বাদেবেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাবেন তার আগেই দেখলেন টেবিলে ভাত রাখা, তরকারি রাখা। চকচকে ধোঁয়া প্লেটের পাশে গ্লাসে পানি অবধি ঢালা। মুখে হাসি এলো।
মুনতাহা লবণের কৌটো হাতে রান্নাঘর থেকে বেরোতে বেরোতে বললো,” তুমি আমাকে ডাকবেনা আব্বু? এ্যালার্ম না বাজলে তো ঘুমই ভাঙতো না।”
—“তুই এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছিলি? কেনো?”
মুনতাহা উওর দিলোনা। মিষ্টি করে হাসলো মাত্র। মেয়েটার হাসিতে জাদুকরের জাদুকাঠির ছোঁয়া আছে নিশ্চিত। মাহতাব সাহেব খেতে বসলেন। মুনতাহা বসলো পাশে।
___________
লোডশেডিং হয়েছে। অন্ধকারে জবজব করছে ঘর। হাঁসফাঁস করতে করতে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো মুনতাহা। কাঁসার থালার মতো ইয়া বিশাল শশীকর দখল করেছে অন্তরীক্ষের একাংশ। ঘর থৈ থৈ করে উঠলো রুপালি কিরণে। মুনতাহা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অন্ধকারেই ডাকলো,
—“আব্বু? কই তুমি? একটু চলোনা সাথে। ছাদে যাবো। কাপড়গুলো আনিনি সন্ধ্যায়।”
মাহতাব সাহেব সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এলেন। হাতে টর্চলাইট। মুনতাহা দরজার পাশ থেকে স্যান্ডেল পায়ে দিলো। একটা ঝনঝনে পুরুশালী কন্ঠ শোনা যাচ্ছে,” ওটা ওপাশেই রাখো না আম্মা। ঠি কই তো লাগছে।” ফাঁকা ঘরে যেমন প্রতিধ্বনি হয় তেমনি প্রতিধ্বনি হচ্ছে শব্দগুলো।
মাহতাব সাহেব দরজা খুললেন। সামনের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। মোমবাতি জ্বালানো ভেতরে। সেই দোদুল্যমান হলুদ আলোয় আসবাবপত্র নিয়ে টানাটানি করছে আরশাদ। মাহতাব সাহেব এগিয়ে সৌজন্যমূলক জিজ্ঞেস করলেন,
—“কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
আরশাদ এতক্ষণ খেয়াল করেনি। পরণে তার সাদা স্যান্ডোগেন্জি। মোমবাতির আলোয় লম্বাটে ছায়ামূর্তির আবির্ভাব আর মাহতাব সাহেবের কন্ঠে মুখ তুললো সে। মুচকি হেসে বললো,”না আংকেল, সমস্যা হয়নি। সব গোছগাছ করতে একটু সময় লাগছে। এই আরকি।”
মাহতাব সাহেব মুনতাহার হাত ধরে রেখেছেন। সবসময়ই ধরে রাখেন। একটু চোখের আড়াল হলেই মেয়ের অঘটন ঘটে যাবে যেনো।
সিড়িতে প্রচন্ড গরম। মুনতাহা বামহাতে মুখে বাতাস করার মতো ভঙ্গি করলো। ধরে রাখা হাতটা একটু নাড়িয়ে বললো,”আব্বু, চলোনা।”
মাহতাব সাহেব পিছে ফিরলেন। আহাজারি করে। বললেন,”আহহা! ঘেমে গেছিস তো পুরো।” মুনতাহা বেখেয়ালিতে জর্জেট কাপড়ের ওড়না টেনে মুছতে গেলো।
মাহতাব সাহেব থামিয়ে দিলেন,”ওটা দিয়ে মুছিস না, ঘষা লাগবে। দাড়া।” বলেই অতিদ্রুত পকেট হাতরালেন তিনি। রুমাল পেলেননা। অসন্তুষ্ট কন্ঠে বললেন,”রুমালটাও ঘরে রেখে এসেছি।”
এতক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো না। মাহতাব সাহেবের পিছে ছোট্ট দেহটা ঢাকা পরে গেছিলো। তিনি সরে দাড়ানোয় মুনতাহাকে নজরে এলো আরশাদের। সিঁড়ির জানলার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলোর বাহার।
ভীষণ ঘর্মাক্ত আড়ম্বরহীন চাঁদমুখে তখন এক টুকরো জ্যোৎস্না এসে লুঁটোপুঁটি খাচ্ছে।
__________
আকাশে রং নেই। সাদা মসৃন জমিন। একটা রং মাখানো তুলির ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন। একটু এলোমেলো, একটু রঙিনেই মানায় তাকে। এতো সাদা, এতো পাংশুটে, এতো ফ্যাকাশে আবার আকাশ হয় নাকি?
আকাশ হবে অপরাজিতার মতো নীল, গোধুলীরবেলায় তা রূপ নিবে রক্তজবার, রাতের আঁধারে মনে হবে একগুচ্ছ কালো গোলাপের হাসি।
সকালটা সুন্দর নয়। ঝকঝকে নয়। কদাকার! এক্কেবারে শ্রীহীন!
মাহতাব সাহেব উঠলেন আটটার দিকে। ঘর থেকে বেরিয়ে একবার চোখ বুলালেন মুনতাহার ঘরে। দরজা খোলাই থাকে।
মেয়েটা ওর মায়ের মতো। সবসময় বা’হাতটা মেলে ঘুমায়। আজও ব্যাতিক্রম নয়।
কলিংবেল বাজলো। মুনতাহা নড়েচড়ে উঠলো। দ্বিতীয়বার বাজা-র আগেই তড়িঘড়ি দরজা খুললেন তিনি।
আরশাদ দাড়িয়ে আছে। গায়ে সাদা শার্ট। নিমীলিত কন্ঠে বললো,
—“এতো সকালে বিরক্ত করার জন্য সরি আংকেল। আসলে অফিসে যাচ্ছি তো। আপনার কাগজগুলো দিলে ভালো হতো। কাল তো সরকারি ছুটি। ব্যাংক বন্ধ থাকবে।”
মাহতাব সাহেব কিছু একটু ভেবে ভেতরে ঢুকতে দিলো তাকে। সচরাচর তিনি কাউকেই বাসায় ঢুকতে দেননা। কিন্তু এই ছেলেটাকে বাইরে দাড় করিয়ে কাগজ আনার জন্য ভেতরে যাওয়াটাও একটু কেমন যেনো লাগছে। সে তো আর নিজের কাজে আসেনি। এসেছে উনার কাজেই।
আজকার যুগে এমন ছেলে পাওয়াই যায় ক’টা?
আরশাদ সোফায় বসলো। সাদা সোফা। ঘরের রংটাও সাদা। চট করে চোখ গেলো খোলা দরজার দিকে। এখান থেকে রুমের পুরোটাই দেখা যায়। মেয়েটার এক পা বেরিয়ে আছে। পাজামা গোড়ালি থেকে অনেকটা উপরে। মাহতাব সাহেব পাশের ঘরে ঢোকার আগে খুব সন্তর্পণে দরজাটা টেনে দিলেন। যদিও তিনি আরশাদকে চেয়ে থাকতে দেখেননি। তবু ভেতরে ভেতরে একটু লজ্জিত বোধ করলো আরশাদ। চোখ নামিয়ে নিচের দিকে চেয়ে রইলো একান্তভাবে।
মাহতাব সাহেবের সাথে ব্যাংকেই প্রথম দেখা। তিনি ব্যাবসায়ী মানুষ। লেনদেনের ব্যাপারে সহসাই ব্যাংকে আনাগোনা। সেদিন কিছু টাকা ট্রান্সফার আর উইথ ড্র করতে গিয়েছিলেন। দেখা গেলো, উনার এ্যাকাউন্টে সমস্যা হয়েছে।
বিকাল প্রায় পাঁচটা বাজে। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে সাড়ে পাঁচটার দিকে। এদিকে উনার টাকা ট্রান্সফার করাটা জরুরি। তার উপর কার্ড কাজ করছেনা। টাকা তুলতেও পারছেননা। আরশাদ ওই ব্যাংকেই
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত। বয়স্ক মানুষ বিপদে পরেছে দেখে সে নিজ থেকেই সব দেখলো।
কাজ হয়ে গেলো পনেরো বিশমিনিটেই। সেই থেকেই পরিচয়। এই ঘটনা প্রায় দেড়মাস পুরনো। এতদিনে তাদের সম্পর্কটা একটু হলেও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
মা আর দাদি কে নিয়েই আরশাদের সংসার। বাবা মারা গিয়েছে গতবছর রোজায়।
মাহতাব সাহেব বেরিয়ে এলেন। হাতে সাদা কাগজ, ব্যাংকের বিষয়েই। আরশাদ সোজা হয়ে বসলো। মাহতাব সাহেব বসলেন মুখোমুখি সোফায়।
মুনতাহা বেরোলো মিনিটপাঁচেক পরে। পরণে একটা ঢোলা কামিজ। বাইরে কেউ আছে সে বুঝতে পারেনি। বের হয়ে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। আরশাদ তার উপস্থিতি টের পেতেই চোখ নামিয়ে কাগজের দিকে চেয়ে রইলো।
মাহতাব সাহেব ইশারায় তাকে ভেতরে যাওয়ার জন্য বলতেই মুনতাহা চুপচাপ চলে গেলো। দরজা আটকে দিলো নিশব্দে। খুব নিসাড়ে।
মাহতাব সাহেব হাল্কা কেঁশে বললেন,”ও মুনতাহা, আমার মেয়ে। আসলে বাসায় সচরাচর মানুষ আসে না তো তাই তোমাকে দেখে একটু ভয় পেয়ে গেছে।”
আরশাদ মৃদুকন্ঠে উওর দিলো,”জি বুঝতে পেরেছি আংকেল।”
_____________
আকাশে সেদিনও ভয়ঙ্কর পূর্ণিমা। সাঁঝবেলার পুন: পুন: প্রভন্জনে যখন ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে ছিলো মুনতাহা ঠি ক তখনই বাসার সামনের টং দোকানের কাছে বাইক থামালো আরশাদ। গায়ে তার সবসময়কার মতো ঘামে ভেজা সাদা শার্ট। হাতের পশম লেপ্টে আছে। মাথার হেলমেটটা খুলে, মানিব্যাগ থেকে চকচকে সবুজ রংয়ের নোট এগিয়ে দিয়ে গোলমেলে গলায় হাঁক ছাড়লো সে,”মামা? ব্যানসনের প্যাকেট দিও।”
দোকানদার ব্যস্ত ভঙ্গিতে উওর দিলো,”ব্যানসন নাই ভাই। গোল্ড হবে।”
আরশাদ বিরক্তি নিয়ে তাকালো। মনে মনে মুখ খারাপ করে পাঁচশ টাকার নোটটা ঢুকিয়ে রাখলো। এবারো বের করলো একটা সবুজ নোট। তবে বিশটাকার। আর তিনটে নীল একশটাকা। গোল্ডলিফ মুখে রুচেনা। তবু নিতে হবে। সিগারেটের জন্য এখন আবার মোড় ঘুরে বড়দোকান অবধি যেতে ইচ্ছা করছেনা।
দোকানদার প্যাকেট দিলো। আরশাদ ঠোঁটের ফাঁকে নিয়ে লাইটার ধরাতেই নজরে এলো ছাইরঙা ওড়নার আচঁল।
পাঁচতলা বাসার ছাদের রেলিং বেয়ে নিচের তলার বারান্দার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া গাছের মাঝে বাজে ভাবে আটকে গেছে। সেটা ছাড়ানোর জন্যই টানাটানি করছে মেয়েটা। আরশাদ মুখ দিয়ে ধোঁয়ার বহর ছাড়তে ছাড়তে গভীরভাবে খেয়াল করলো চাঁদের রুপালি আলোয় মুনতাহার কুঁচকানো মুখশ্রী, কপালের মাঝে সৃষ্টি হওয়া গাঢ় দুটো ভাঁজ। বিরবির করলো সে,
—“চাঁদে চাঁদে সংঘর্ষ! দারুণ তো।”
ধৈর্যহারা হয়ে জোরে একটা টান দিলো মুনতাহা। ঝরঝর করে পাঁচ- সাতটা পাতা ঝরে পড়লো রাস্তায়। গাছটা কাঁপছে। তবু ওড়না ছুটলোনা।
সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেললো আরশাদ। পায়ের নিচে পিষে দিলো অতিদ্রুত। নতুন আরেকটা ধরালো। ফেলে দিলো একটানেই। নাহ্! রুচছেনা একদম! ওড়না ততক্ষণে ছিঁড়ে গেছে। তবু ছুটেনি।
একটার পর একটা! সেই সন্ধ্যায় রাস্তার কালো পিচেই পিষ্ট হলো তিনশত বিশ টাকা।
চলবে