অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-১১||

0
1614

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১১||

১৯.
অরুণিকা শুকনো মুখে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাফ অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। অরুণিকা আরাফের টি-শার্ট খামচে ধরে চেঁচিয়ে বলল,
“তোমরা পঁচা। আমি তোমাদের সাথে কথা বলবো না।”

আরাফ অরুণিকার হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
“অরু, এতো জেদ কিন্তু ভালো না। তুমি তো লক্ষী মেয়ে, তাই না?”

“আমি ভালো। তোমরা পঁচা। তুমি, আহনাফ, ইভান, তাহমিদ তোমরা সবাই পঁচা। শুধু রকস্টার আর ইমন ভালো।”

ইমন মুচকি হেসে অরুণিকার পাশে বসে বলল,
“আমরা যেহেতু ভালো, তাহলে আমাদের কথা রাখবে না?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ, রাখবো। কিন্তু আমার কথাও রাখতে হবে।”

“অরুণিকা, আমরা সবাই তোমার কথা রাখবো। কিন্তু একটু অপেক্ষা করতে হবে। এখন তুমি যা চাইছো, তা দেওয়া সম্ভব না।”

অরুণিকা হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করে বলল,
“না, আমার লাগবেই লাগবে।”

ইভান ইমনকে সরিয়ে দিয়ে অরুণিকার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“আরেক বার যদি জেদ দেখাও, আমার কিন্তু হাত উঠে যাবে।”

আরাফ অরুণিকাকে ইভানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“হাত উঠে যাবে মানে? তুই ওকে মারবি? ও যা চায়, তা না পেলে কি আমরা ওকে মেরে চুপ করাবো? আর তুই ওকে মারবি, এটা কোন সাহসে বলছিস?”

ইভান আরাফকে আশ্বস্ত করে বলল,
“আমি ওকে শুধু ভয় দেখাচ্ছি।”

আরাফ শীতল কণ্ঠে বললো,
“ভয় দেখাতে হবে না।”

অরুণিকা আরাফের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আরাফ, তুমি আমাকে সাইকেল কিনে দেবে না?”

“অবশ্যই দেবো। কিন্তু এখন না।”

“না, আমার আজকেই লাগবে। এখন লাগবে।”

অরুণিকা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“আমি বাবার কাছে যাবো। তোমরা সবাই পঁচা।”

তাহমিদ অরুণিকার দিকে একটা চকলেট বিস্কুট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি এটা খাও। তোমার পছন্দের মিল্ক চকলেট বিস্কিট।”

“আমি খাবো না। আমার সাইকেল লাগবে।”

“হঠাৎ তুমি সাইকেল কেন চাইছো?”

“বাঁধনকে চাচ্চু সাইকেল কিনে দিয়েছে৷ ও আমাকে ওটা ধরতে দেয় না৷ ওদের সবার সাইকেল আছে। শুধু আমার নেই। ওরা আমায় খেলায় নেয় না। ওরা বলেছে সাইকেল না থাকলে আমার সাথে খেলবে না। আমি ওদের সাথে খেলতে চাই।”

“যারা তোমার সাথে খেলতে চায় না, তাদের সাথে তুমি কেন খেলবে?”

“না, আমি ওদের সাথে খেলবো।”

এবার তূর্য বলল,
“শতাব্দী খেলে না তোমার সাথে?”

“শতু আপু তো খেলে না। ও সারাদিন পড়ে।”

এবার ইভান বলল,
“ও লক্ষী মেয়ে তাই পড়ে। এখন তুমিও ওর মতো পড়াশুনা করবে, তারপর তোমাকে সাইকেল কিনে দেবো।”

অরুণিকা এবার মুখ ফুলিয়ে টেবিলের নিচে বসে পড়লো। আহনাফ বলল,
“ওখানেই বসে থাকো। তারপরও অন্তত চুপ করে থাকো। তোমার চ্যা চ্যাগুলো মাথায় লাগছে।”

অরুণিকা মুখে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আহনাফ বিরক্তির সুরে বলল,
“এসব কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।”

তূর্য কিছু একটা ভেবে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো। মিনিট দশেক পর সে শতাব্দীকে বাসায় নিয়ে এলো।

শতাব্দী আজ অনেক দিন পর অরুণিকাদের বাসায় এসেছে। তাকে দেখে বাকীরা অবাক হলো। ইমন আরাফকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ইশারায় ইভান, তাহমিদ আর আহনাফের দিকে তাকাতে বললো। ইভান আর আহনাফ অবাক চোখে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে আছে, আর তাহমিদ তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।

আরাফ সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল,
“কেমন আছো, শতাব্দী? অনেক দিন পর বাসায় এসেছো!”

শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“হ্যাঁ, গায়ক সাহেব আমাকে নিয়ে এসেছে। শুনলাম, আমার ছোট সখী সবার সাথে রাগ করে বসে আছে।”

শতাব্দী এই বলে টেবিলের নিচে গিয়ে অরুণিকার পাশে এসে বসলো। অরুণিকা শতাব্দীকে দেখে বলল,
“শতু আপু, ওদের সাথে কথা বলো না। ওরা সবাই পঁচা।”

“কেন পঁচা বলছো, সাইকেল কিনে দিচ্ছে না তাই?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। শতাব্দী আবার বলল,
“আমার একটা ছানা আছে। কিন্তু তোমার টুন-ঝুন আছে। এই মহল্লায় কারো কাছে টুন-ঝুন আছে?”

অরুণিকা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“শুধু আমার কাছেই আছে।”

“হ্যাঁ৷ এখন বাকীদের সাইকেল আছে। কিন্তু সাইকেল তো কথা বলতে পারে না৷ নড়াচড়া করতে পারে না৷ নিজ থেকে খেলেও না। শুধু তুমি যতোক্ষণ পা দিয়ে ঘুরাবে ততোক্ষণ চলবে। আর তোমার কাছে দু’টো পাখি আছে। ওরা তোমার সাথে কথা বলতে চায়। যদিও এখনো কথা শিখে নি। কিন্তু তুমি ওদের কথা বলা শেখাতে পারো। খোকাও কি এখনো কথা বলতে পারে, ঠিকভাবে হাঁটতেও পারে না। কিন্তু সবাই তার সাথে খেলে, তার সাথে কথা বলে। তুমিও তোমার টুন-ঝুনের সাথে খেলবে৷”

অরুণিকা হামাগুড়ি দিয়ে টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো। শতাব্দীও ওর পিছু পিছু বেরিয়ে এলো। অরুণিকা এবার তাহমিদের কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি টুন-ঝুনকে আমার সাথে খেলতে দাও না কেন?”

শতাব্দী হেসে বলল,
“ওই যে মিষ্টি মশায়ের ঘর যে নষ্ট হয়ে যাবে৷”

তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে শতাব্দীর দিকে তাকালো। এরপর অরুণিকার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“এখন থেকে আমি তোমার সাথে খেলবো। টুন-ঝুনও আমাদের সাথে খেলবে। আমরা সবাই মিলে অরুণিকা আর টুন-ঝুনের সাথে খেলবো।”

“সত্যিই?”

“হ্যাঁ, সত্যি।”

“শতু আপুও খেলবে?”

শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“যদি কারো আপত্তি না থাকে।”

আহনাফ বলল,
“অবশ্যই। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আর তোমাকে ধন্যবাদ অরুকে বোঝানোর জন্য।”

শতাব্দী মুচকি হেসে বিদায় নিলো।

২০.

আজ কয়েক পদের মিষ্টি বানিয়ে তাহমিদ বাজারের দিকে গেলো। ভ্যান কেনার মতো টাকাও তাদের কাছে নেই। তাই প্লাস্টিকের বক্সে মিষ্টিগুলো নিয়ে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে পথচারীদের কেনার জন্য অনুরোধ করতে লাগলো। তবে সে একা বের হয় নি। তার সাথে ইমনও ছিল।
রোদের তাপে দু’জনের মুখ লাল হয়ে গেছে। আর তাহমিদের চোখেমুখেও অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। এই পেশাকে সে যথেষ্ট সম্মান করে, কিন্তু সে কখনো ভাবতেই পারে নি, সে নিজেই একদিন রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মিষ্টি বিক্রি করবে। এখন প্রতিদিনই মিষ্টি, জিলাপি, সন্দেশসহ বিভিন্ন ঝাল নাস্তা বানিয়ে কখনো বাজারে, কখনো বা পার্কের সামনে চলে যায়। তবে সে কখনোই হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরে নি। কারণ প্রতিদিনই তার সব ক’টা নাস্তায় বিক্রি হয়ে যায়৷ বিকেলের দিকে মানুষের ভীড় বেশি থাকে, তখন অনেকেই মিষ্টি কিনে খায়।
এদিকে তূর্য সিনথিয়ার খালার সাহায্যে একটি ছোট গানের দলের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা পূজায় গান গেয়ে টাকা আয় করে। তবে সেই দলে তূর্যই খুব কম টাকা পায়। সে যেহেতু বয়সে অনেক ছোট, এর চেয়ে বেশি টাকা সে আশা করতে পারবেও না।
অন্যদিকে আহনাফ কাজের জন্য এদিক-ওদিক ছুটছে। তার মধ্যে এমন কোনো সৃজনশীলতা নেই, যা দিয়ে সে নিজে কিছু করতে পারবে৷ তাই এই মুহূর্তে তার শারিরীক শ্রম দিয়েই টাকা আয় করতে হবে। কিন্তু কাজ পাওয়া এতো সহজ না। আর তার চেয়ে কঠিন কাজের জন্য মানুষের কাছে অনুনয় করা, যা আহনাফের দ্বারা সম্ভব না।

বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে আহনাফ রাস্তায় বসে পড়লো। আশেপাশে এলোমেলো ভাবে তাকাতেই চোখ পড়লো একটা বাইকের দিকে। সে বসা থেকে উঠে বাইকটির সামনে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই তার পুরোনো স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো। হঠাৎ একটা লোক তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এই এভাবে কি দেখছিস?”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে লোকটির দিকে তাকালো। আহনাফের মুখের ভাব দেখে লোকটি তার বাইকে বসতে বসতে বলল,
“তোর বাবা-দাদার ক্ষমতা নেই এমন বাইক কেনার।”

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“বাইক কিনতে ক্ষমতা লাগে না, টাকা লাগে।”

“কি বললি তুই?”

“অদ্ভুত! আমি কি আপনাকে চিনি? এভাবে হুট করে ধাক্কা দিয়ে এমন মন্তব্য কেন করছেন?”

“তুই আমার বাইক চুরি করতে এসেছিস আমি ভালো করেই জানি। এখন তোকে পুলিশে দেবো।”

“বাইকের চাবি আপনার কাছে। আমি কি বাইক কাঁধে করে নিয়ে পালাবো? ডাকেন পুলিশ।”

“আচ্ছা, আমার সাথে খবরদারি। দাঁড়া, তুই।”

আহনাফ বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা, দাঁড়াচ্ছি।”

লোকটা সত্যিই পুলিশ ডাকালো। এরপর পুলিশ এসে আহনাফকে থানায় নিয়ে গেলো। সে নিজের যুক্তিসঙ্গত কথাগুলো তাদের শুনিয়ে গেলো, কিন্তু কেউই তার কথায় কর্ণপাত করলো না। সে শুধু অবাক হয়ে সবার গা-ছাড়া ভাব দেখতে লাগলো। সন্ধ্যায় সালেহ আলী আর সুরাইয়া বাবা-মার পরিচয়ে আহনাফকে ছাড়াতে এলেন, সাথে কিছু টাকাও দিতে হলো।

বাসায় এসেই সুরাইয়া রাগী কন্ঠে বললেন,
“এতো গোঁ ধরে থাকলে হয়! পুলিশ ডাকার কথা যখন বলেছিল, তখনই তুমি ক্ষমা চেয়ে নিতে পারতে।”

আহনাফ চুপ করে রইলো। ইমন হাসতে হাসতে বলল,
“নায়ক সাজতে গিয়ে চোর হয়ে ফিরে এসেছে।”

আহনাফ রাগী দৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকালো। ইমনের দেখাদেখি কিছু না বুঝে অরুণিকাও মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। আহনাফ অরুণিকার নাক টেনে তাকে সামনে এনে বলল,
“তুমি হাসছো কেন?”

অরুণিকা নাক ঢলতে ঢলতে বলল,
“ডুমুরাপি মিথ্যে বলেছে কেন?”

ডুমুর ঠোঁটে হাত দিয়ে ইশারায় অরুণিকাকে চুপ করে থাকতে বললো। আহনাফ অরুণিকার মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে এনে বলল,
“কি বলেছে ডুমুর?”

“বলেছে..”

ডুমুর অরুণিকাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“না ভাইয়া, আমি কিছু বলি নি। ও মিথ্যে বলছে।”

“ও তো এখনো কিছুই বলে নি। কি শেখাচ্ছো তুমি ওকে?”

সুরাইয়া বললেন,
“কি বলেছিস তুই বাবুনকে?”

ডুমুর কোনো উত্তর না দিয়ে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সুরাইয়াও বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে পড়লেন।

আহনাফ আবার অরুণিকাকে জিজ্ঞেস করলো,
“এই, ও কি বলেছে?”

অরুণিকা বলল,
“ডুমুরাপি বলেছে, একবার পুলিশের লাঠির পিটুনি খেলে সবাই বিড়াল ছানা হয়ে যায়। কোথায় তুমি তো আর বিড়াল ছানা হও নি। আমার নাকে ব্যথা দিয়েছ। এখন আমি কার সাথে খেলবো? আমি ভেবেছি আমার একটা বিড়াল ছানাও থাকবে। তারপর আমি, টুন-ঝুন আর বিড়াল ছানা একসাথে খেলবো।”

অরুণিকার কথা শুনে আহনাফ শব্দ করে হেসে উঠলো। অরুণিকার নাক হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে বিড়াল ছানা বানিয়ে রাখতে চাও? কিন্তু আমি তো বাঘের ছানা।”

“তুমি বাঘের ছানা? বাঘ তো মানুষ খেয়ে ফেলে। তুমি কি এখন আমাকে খেয়ে ফেলবে?”

“না, আমি লক্ষী মেয়েদের খাই না। কিন্তু যারা কথা শুনে না, তাদের খেয়ে ফেলি।”

অরুণিকা হুট করে আহনাফের মুখে খামচি দিয়ে আরাফের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো। আহনাফ গাল ধরে বলল,
“এই মেয়ের নখগুলো তো মারাত্মক বড় হয়েছে। ওর নখ কেটে দে।”

অরুণিকা পা ধাপিয়ে বলতে লাগলো,
“না, না, না। আমি নখ কাটবো না।”

ইদানীং ছ’জনের পড়াশুনা কিছুই হচ্ছে না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘরের কাজ সেরে স্কুলে চলে যায়, আর বাসায় ফিরে অরুণিকাকে খাইয়ে নিজেদের কাজের জন্য বেরিয়ে পড়ে। কেউ রাতে বাসায় ফিরে, কেউ ফিরে সন্ধ্যায়। সন্ধ্যায় আসার পর প্রতিদিনের মতো সবাই তাহমিদকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করে।

এদিকে আহনাফ একটা ঘড়ির দোকানে চাকরি পেয়েছে। রাস্তায় বিজ্ঞাপনের লিফলেট দেখেই সে এই কাজ খুঁজে পেয়েছিল। তার চাকরিটা খুব সুখের। সারাদিন এসির নিচে বসে কাস্টমারদের কাছে ঘড়ি বিক্রি করা, নষ্ট ঘড়ি ঠিক করে দেওয়া, ব্যাটারি লাগানো এসবই করতে হয়। দোকানের মালিকের একই জায়গায় আরেকটা দোকান আছে। তার ওখানেই বসতে হয়। তিনি অনেক দিন ধরেই এমন কমবয়সী ছেলে খুঁজছিলেন। তিনি মনে করেন, কমবয়সী ছেলেদের শাসনের মধ্যে রাখা যাবে। আর আহনাফের ঘড়ির ব্র‍্যান্ড সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকায়, তিনি আহনাফকে কাজে নিয়ে নেন। সকালে মালিক নিজেই দোকানে বসেন। এরপর আহনাফ আসার পর তিনি চলে যান। তবে আরাফ একটা টিউশন পেয়েছে আহনাফের জন্য। রাত ন’টায় দোকান বন্ধ করে মালিকের কাছে চাবি দিয়ে আহনাফ সেই টিউশনটাও করাতে যায়।
মেয়েটির নাম যতি। আহনাফের বয়সী। মেয়েটিকে শুধু ইংরেজি পড়ানোর জন্যই তাকে রাখা হয়েছে। তবে সে বাকী পড়াশুনাতেও মাঝে মাঝে যতিকে সাহায্য করে। যতির বাবা-মা ইচ্ছে করে অল্প বয়সী ছেলেকে শিক্ষক হিসেবে রেখেছেন। তাদের ধারণা যতির চেয়ে বয়স বেশি হলে সে ইতস্ততবোধ করবে, একই বয়সের হলে বন্ধুর মতো সব সহজে বুঝে নিতে পারবে। আর আহনাফের ইংরেজি বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকায়, তাকে না বলার কোনো কারণ ছিল না। তবে চাইলে তারা মেয়ে শিক্ষিকা রাখতে পারতেন, কিন্তু যতির মা সন্দেহবাতিক স্বভাবের। কারণ যতির বাবা, রুবেল আহমেদ, একজন ব্যবসায়ী। তিনি বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকেন, আর ঘরে বসেই ব্যবসা দেখাশুনা করেন। অন্যদিকে যতির মা, রুমানা বেগম অফিসেই থাকেন। তার ধারণা, তিনি মেয়ে শিক্ষিকা বা মেয়ে কাজের লোক রাখলে স্বামীকে হারিয়ে ফেলবেন। তাই বাসায় পুরুষ কাজের লোক রেখেছেন, আর মেয়ের জন্য পুরুষ শিক্ষক।
যদিও যতির বাবা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য মানুষ, কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, তিনি স্ত্রীর বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন নি।

২১.

“মাওশিয়াত, আমার নাম মাওশিয়াত, অনেকে মৌ বলে ডাকে, অনেকে ওশিয়া বলে ডাকে। তুমি আমাকে কোন নামে ডাকবে?”

“ভুসি।”
ইভানের উত্তর শুনে ক্লাসের সবাই অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।

মাওশিয়াত হেসে বলল,
“ভুসি নাম দেওয়ার কারণ?”

ইভান মাওশিয়াতের দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলো। মাওশিয়াত হেসে বলল,
“যখন জানোই না, ভুসি মানে কি, তাহলে ডাকছো কেন? আচ্ছা, আমিই বলে দেই, ভুসি সাধারণত রাফেজকে বোঝায়। পেটের যতো ধরণের রোগ আছে সবকিছুর জন্য এটা অনেক উপকারী শস্য। এখন তুমি মেনে নিচ্ছ, আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

ইভান চলে আসতে যাবে, তখনই মাওশিয়াত হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“বন্ধু হতে পারি?”

ইভান হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি আগ্রহী নই।”

ইভান চলে যেতেই ইমন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি চাইলে আমার বন্ধু হতে পারো।”

মাওশিয়াত মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমি তোমার মতো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী নই, যে ক্লাসে প্রতিদিন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।”

ইমন হাত সরিয়ে নিলো। মাওশিয়াত হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। তূর্য ইমনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“এসব মেয়েগুলো আমাদের জন্য সৃষ্টি হয় নি। এরা পড়াশুনা ছাড়া কিছুই বুঝে না।”

“ভাই তো কোনো আগ্রহ দেখায় নি, তবুও মেয়েটা ওর সাথে কথা বলেছে।”

“আরেহ, এই মেয়ে খুবই মেধাবী, নতুন ভর্তি হয়েছে। এই মেয়ে শুধু মেধাবী ছাত্রদের সাথেই কথা বলে, তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করে। আর ইভান তো এই ক্লাসের টপার। স্বাভাবিক, কথা বলবেই। কারণ ওর ইভানকে টপকে সামনে এগুতে হবে, বুঝেছিস?”

“তুই এতোকিছু কিভাবে জানলি?”

“ক্লাসে নতুন মেয়ে এসেছে, আর রিকি দা স্টার তথ্য নেবে না, তা কি হয়?”

ইমন হাসলো আর বলল,
“দেখিস, আমি ওর বন্ধু হয়েই ছাড়বো।”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here