#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১২||
২২.
ইভান অরুণিকাকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু অরুণিকার কাছে পড়াশুনা নামক শব্দ আর ইভান নাম, এই দুইটিই মারাত্মক ভীতিকর। সন্ধ্যা হলেই অরুণিকা কখনো মলিন মুখে বসে থাকে, কখনো বা বিছানায় শুয়ে অসুস্থ হওয়ার ভান ধরে বলতে থাকে,
“আমার পেট ব্যথা করছে।”
পেট ব্যথা অরুণিকার সাধারণ অজুহাত। প্রথম কয়েকদিন সবাই ভেবেছিল সত্যিই বোধহয় সে অসুস্থ। কিন্তু যখনই পড়াশুনা করার সময় পেরিয়ে যেতো, ব্যস ওমনি সে বিছানা ছেড়ে উঠে আবার ঘরে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করে দিতো। আজও এর ব্যতিক্রম হয় নি।
ইভান বাংলা বর্ণমালা শেখার বই নিয়ে বসার সাথে সাথেই অরুণিকা একপাশে দাঁড়িয়ে গেলো। ইভান হাতের ইশারায় অরুণিকাকে তার পাশে বসতে বললো। আর সে দৌঁড়ে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো৷ ইভান তাকে বিছানা থেকে টেনে তুলে মেঝেতে বসিয়ে বলল,
“আজও তোমার পেট ব্যথা করছে, তাই না!”
অরুণিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। ইভান বলল,
“একটু পর ডাক্তার এসে তোমার পেটে কয়েকটা ইনজেকশন দিয়ে যাবে, তারপর সব ব্যথা সাঁই করে চলে যাবে।”
অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল,
“না, না। এখন আর ব্যথা নেই।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে এখন পড়ো। দেখি বলো তো, এটা কি?”
“জানি না।”
“বলো স্বর অ।”
“বলবো না।”
ইভান চোখ গরম করে বলল,
“অরুণিকা, বলো স্বর অ।”
অরুণিকা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, “স্বর ও।”
“ও না অ।”
“ও।”
“একটা চড় দেবো বলছি। বলো অ।”
“অ।”
অ বলতে বলতেই সে ফুঁপিয়ে উঠলো৷ তখনই গেইটে শব্দ হলো। শতাব্দীর কন্ঠ শুনে অরুণিকা উঠতে যাবে তখনই ইভান চোখ বড় বড় করে তাকালো। সেই চোখ দেখে অরুণিকা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো, এরপর আবার নিজের জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লো।
এদিকে তাহমিদ গেইট খুলতে গিয়ে দেখলো শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিদকে দেখে সে বলল,
“মিষ্টি মশাই, বাড়িতে ঢুকতে দেবে কি?”
তাহমিদ কোনো উত্তর না দিয়ে গেইট খুলতে লাগলো। হঠাৎ তার চোখ পড়লো শতাব্দীর দিকে। সে মিটমিটিয়ে হাসছে। তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“হাসছো কেন?”
শতাব্দী হাসি থামিয়ে বলল, “এমনি।”
তাহমিদ দরজা খুলতেই শতাব্দী বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলল,
“মিষ্টি মশায়ের এতো পরিশ্রম হয় যে আজ সে নিজের যত্ন নিতেই ভুলে গেছে। আয়নায় গিয়ে নিজেকে একবার দেখে আসো।”
তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকালো। শতাব্দী তার চুলের দিকে ইশারা করতেই সে মাথায় হাত দিলো। আর সাথে সাথেই ময়দার গুঁড়োগুলো তার শার্টের উপর পড়লো। তাহমিদ ইতস্ততভাব নিয়ে বলল,
“অরুণিকা ময়দা নিয়ে খেলছিল। ওকে কোলে নিয়েছি, ও হয়তো মাথায় লাগিয়ে দিয়েছিল।”
শতাব্দী হেসে বলল,
“যাক, বাবা। আমার ছোট সখী একটা ভালো কাজ করলো।”
“এখানে ভালো কাজের কি হলো?”
“এই যে জানলাম, মিষ্টি মশাই এলোমেলো থাকলেও ভালো লাগে।”
তাহমিদ অবাক হয়ে শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে রইলো। শতাব্দী হেসে ভেতরে ঢুকে অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“ছোট সখী কি করছো তুমি?”
অরুণিকা এতোক্ষণ পড়া ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল। শতাব্দীকে দেখেই সে হুমড়ি খেয়ে শতাব্দীর কোলে বসে পড়লো। ইভান তা দেখে শতাব্দীকে বলল,
“এখন ওর পড়ার সময়। তুমি এই সময় কেন এসেছ? তোমার পড়াশুনা নেই?”
শতাব্দী চোখ ছোট করে ইভানের দিকে তাকালো। অরুণিকা শতাব্দীর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,
“শতু আপু, আমার পড়াশুনা করতে ভালো লাগে না। আমি খেলবো।”
শতাব্দী ইভানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যেই বাড়িতে এমন ভয়ংকর মাস্টারমশাই আছে, সেই বাড়িতে যাইহোক আর পড়াশুনা হয় না। শুধু বকুনিঝকুনিই চলে।”
ইভান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুমি কি বলতে চাইছো?”
“বলতে চাইছি, তুমি বাচ্চাদের শুধু বকাবকি করো। তোমার কাছে কেউ পড়তে চাইবে না।”
“এতোগুলো টিউশন করাচ্ছি চোখে পড়ছে না? ওরা কিভাবে পড়ে?”
শতাব্দী মনে মনে বলল,
“হ্যাঁ, সব ক’টা ছাত্রই যে তাকে মুখ ভুজে সহ্য করছে সেটা বুঝতে পারছে না।”
পরের দিন ক্লাসে ঢুকতেই মাওশিয়াতের মুখোমুখি হলো ইভান। সে সামনে এগুতেই মাওশিয়াত তার সামনে এসে দাঁড়ালো। পাশ কাটতে যাবে আবার সে সামনে এসে দাঁড়ালো। এবার ইভান ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“তোমার সমস্যাটা ঠিক কোথায়, আমি বুঝতে পারছি না।”
মাওশিয়াত হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আমরা চাইলে ভালো বন্ধু হতে পারি। আমি আমার নোটসগুলো তোমার সাথে শেয়ার করবো।”
“আমার এসবের প্রয়োজন নেই।”
“কেন? তুমি নোট করে পড়ো না বুঝি?”
“তোমার জেনে কি হবে?”
“আমি তো পড়ি, তাই।”
ইভান পাশ কাটতে যাবে তখনই মাওশিয়াত বলল,
“আমি কিন্তু কখনো দ্বিতীয় হই নি। সবসময় প্রথম হয়েছি।”
“তো!”
“তোমার নিশ্চয় ভয় লাগছে! কারণ এবার আমিই প্রথম হবো।”
“তোমার পরীক্ষা আমার চেয়ে ভালো হলে তুমি প্রথম হতেই পারো। এখানে ভয় পাওয়ার কি আছে?”
“আরেহ, তোমার জায়গাটা আমি নিয়ে নেবো..”
ইভান মাওশিয়াতকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“উফ, মারাত্মক অসহ্যকর তো তুমি!”
ইভান কথাটি বলেই চলে গেলো। মাওশিয়াত ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইল। তখনই ইমন এসে বলল,
“হাই, ম্যাও।”
মাওশিয়াত চোখ বড় বড় করে ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি বললো, তুমি?”
“হাই, ম্যাও।”
মাওশিয়াত রাগী কন্ঠে বললো, “ম্যাও কে?”
“তুমি!”
“আমি মাওশিয়াত। ম্যাও না।”
ইমন আমতা আমতা করে বলল,
“ওহ সরি। ওই দিন যে বললে অনেকে তোমাকে ম্যাও বলে ডাকে।”
“অসভ্য, ফাজিল, বদমাশ ছেলে। মৌ বলে ডাকে। ম্যাও না। যাও এখান থেকে। গাধা একটা।”
মাওশিয়াত কথাটি বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো। আর ইমন মুখ ছোট করে মাওশিয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তখনই তূর্য তার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ওই দেখা যায় ক্লাসরুম, ওই আমাদের বেঞ্চ,
এখানেতে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাও আপুর ব্যাঙ।”
ইমন চোখ ছোট করে বলল, “ব্যাঙ কে?”
“আর কে হবে? তুই।”
“তুই মজা করছিস আমার সাথে?”
তূর্য গানের সুরে বলল,
“আমি তো মজা করি নি, মজা ব্যাঙের উপরে নেমেছে।”
ইমন তূর্যের হাত সরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো। তূর্যও শিস বাজাতে বাজাতে ক্লাসে ঢুকে পড়লো।
সন্ধ্যায় যতিকে পড়াতে গেলো আহনাফ। ঘরে ঢুকেই দেখলো যতি আজ সেজেগুজে বসে আছে। আহনাফ চেয়ারে বসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,
“আজ আংকেল বাসায় নেই?”
“না, বাবা ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে গেছে। এই কয়েকদিন মা আর আমি আছি।”
“এখন আন্টি কোথায়?”
“অফিসে। মায়ের তো রাত হবে ফিরতে। তার কতো কাজ!”
“বাসায় কেউ নেই?”
“না, শুধু তুমি আর আমি।”
“তাহলে আমি অন্যদিন আসি।”
“কেন?”
“এভাবে কেউ নেই, ভালো দেখাচ্ছে না।”
“চিন্তা করো না। আমি তোমার ক্ষতি করবো না। আমি কি ডাকাত নাকি!”
“তুমি সেজেগুজে বসে আছো কেন?”
“ওহ, সেজেছি, কারণ আমি আজ আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছিলাম।”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বলল, “বয়ফ্রেন্ড!”
“হ্যাঁ, আমি তাকে একটা অনুষ্ঠানে দেখেছি। তারপর নম্বর আদান-প্রদান হয়েছে। সেই থেকেই প্রেম।”
“ওহ আচ্ছা।”
“দেখবে?”
“কাকে?”
“আরেহ বোকা, আমার বয়ফ্রেন্ডকে।”
আহনাফ ইতস্ততভাব নিয়ে বলল,
“তোমার ইচ্ছা। চাইলে দেখাতে পারো।”
যতি একটা ছবি দেখালো। আহনাফ নিজের ছবি দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। যতি হেসে বলল,
“কেমন বোকা বানালাম তোমায়, তাই না?”
“মানে? এসবের মানে কি!”
“মানে একদম পরিষ্কার। আমার কোনো প্রেমিক নেই। আমি কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলি নি। আজ আমি তোমার জন্য সেজেছি। কারণ আমার তোমাকে ভালো লাগে। সোজাসাপ্টা বলে দিলাম। আমাদের কিন্তু দারুণ মানাবে।”
আহনাফ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“যতি, আমি তোমাকে পড়াতে এসেছি।”
“তো!”
“এটা সম্ভব না।”
“কেন সম্ভব না? আমাদের ধর্ম এক। আমাদের বয়সের পার্থক্য নেই। আমাদের অনেক ভালো বন্ধুত্বও হয়েছে। আমাদের সম্পর্কটা খুব জমবে।”
“কারণ আমার এসবে কোনো আগ্রহ নেই। আমার বাবা-মা মারা গেছে। আমার জীবনটাই খুব এলোমেলো। আমি এসব ঝামেলা আমার জীবনে চাই না।”
“আমি ঝামেলা?”
“হ্যাঁ, ঝামেলা। আর আজ থেকে আমি তোমাকে আর পড়াবো না।”
“দাঁড়াও, আহনাফ। আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি আর এসব বলবো না। অন্তত আমাকে পড়াও।”
“সবকিছু জানার পর এখানে দুই মিনিট দাঁড়ানোও আমার জন্য ক্ষতিকর।”
“আচ্ছা, আমরা শুধু বন্ধু হয়ে থাকি?”
“আমার এতো বন্ধুর প্রয়োজন নেই।”
কথাটি বলেই আহনাফ বেরিয়ে এলো। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। অথচ সে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ফিরিয়ে দিলো। এটাই তো আবেগের বয়স। কিন্তু আজকাল কোনো আবেগই তাকে উচ্ছ্বাসিত করে না। বাড়িতে ঢুকেই সে মেঝেতে বসে পড়লো। অরুণিকা আহনাফের কাছে এসে বলল,
“আমার জন্য চকলেট এনেছো?”
আহনাফ মুচকি হেসে দুইটা চকলেট বের করে অরুণিকার হাতে দিলো। সে চকলেট দুটো হাতে নিয়ে দৌঁড়ে গেলো তার মাটির বাক্সের কাছে। বাজার থেকে আরাফ তাকে মাটির বাক্স কিনে দিয়েছে। সেখানেই সে প্রতিদিন চকলেট জমিয়ে রাখে। ছ’জনই বাইরে থেকে এলে অরুণিকার জন্য বিভিন্ন ধরনের চকলেট আনবে। অরুণিকা সেগুলো বাক্সে রেখে দেবে। তারপর যখন ইচ্ছে সেখান থেকে নিয়ে খাবে আর চকলেটের প্যাকেটগুলো আবার আরেকটা বাক্সে জমিয়ে রাখবে। প্রথম কয়েকবার তাহমিদ সেই প্যাকেটগুলো ফেলে দিয়েছিল। কারণ প্যাকেটে অনেকবারই পিঁপড়ে ধরে গিয়েছিল। শেষমেশ অরুণিকার কান্নাকাটি দেখে সে বাকী প্যাকেটগুলো ধুয়েই সেই বাক্সে রেখে দিয়েছে।
২৩.
যতি এভাবে কাউকে না বলে বাসায় চলে আসবে সেটা আহনাফের মাথায়ও আসে নি। যতিকে দেখে আরাফ, ইভান, ইমন, তূর্য আর তাহমিদ আহনাফের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যতি ব্যাগপত্র একপাশে রেখে বলল,
“আমি তোমার সাথেই থাকবো। তুমি যা খাওয়াবে, তাই খাবো। পড়াশুনাও করবো না। প্লিজ আমাকে ফেলে দিও না।”
আহনাফ চেঁচিয়ে বললো,
“তোমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে? আমি এখুনি তোমার বাবা-মাকে ফোন দিচ্ছি!”
যতি আহনাফের পা ধরে বলল,
“প্লিজ, বাবা-মাকে ফোন দিও না। আমাকে মেরে ফেলবে।”
হঠাৎ অরুণিকার দিকে চোখ পড়তেই যতি বলল,
“এই মেয়েটা কে?”
অরুণিকা যতির কাছে এসে বলল, “তুমি কে?”
যতি বলল,
“আমি আহনাফের গার্লফ্রেন্ড।”
আহনাফ রাগী কন্ঠে বলল,
“তোমার মতো ব্রেইন লেস মেয়ে আমি একটাও দেখি নি।”
আহনাফ একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই যতিকে বাসা থেকে বের করে দিলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যতি আবার চলে গেলো। তূর্য বলল,
“এই মেয়ে এখন কোথায় যাবে?”
আহনাফ বলল,
“যেখান থেকে এসেছে, সেখানেই যাবে।”
এবার আরাফ বলল,
“আমরাও তো টিউশন করাচ্ছি। এমন শুধু তোর সাথেই হয়েছে।”
“হ্যাঁ, কারণ আমার ভাগ্যে টিউশন লেখা নেই, তাই। আর এই মেয়ে বাসার ঠিকানা পেলো কিভাবে?”
“আমি কিভাবে বলবো? তুই বলেছিস হয়তো।”
দেখতে দেখতে ছ’মাস কেটে গেলো। শতাব্দীর সাথে এখন আরাফ আর ইমনের খুব ভাব জমে গেছে। আহনাফের সাথেও ভাব জমতে শুরু করেছে। ইভান এখন আর শতাব্দীর আগমনে বিরক্ত হয় না। তারা এখন শতাব্দীকে ভালো বন্ধু মনে করে। প্রতিদিন তারা লুডু, ক্যারাম বা অরুণিকার সাথে পুতুল খেলায় যোগ দেয়। তবে পুতুল খেলায় বাঁধন আর ডুমুরের উপস্থিতিও থাকে।
তূর্য আগের দলে কাজ করার পাশাপাশি, আরেকটা গানের দলে যোগ দিয়েছে। মোটামুটি নিজের পড়াশুনার খরচটা সে বহন করতে পারছে। তাহমিদ ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেছে। মিষ্টান্নভোজন নামে একটা ছোট দোকান খুলেছে। তবে দোকানের সামনে দু’টো চেয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই। ছোট একটা প্লাস্টিকের টুলের উপর সে তার মিষ্টির থালাটা বসিয়ে রাখে। উপরে একটা ট্রান্সপারেন্ট প্লাস্টিক দিয়ে রাখে, যাতে মাছি বা ধুলোবালির হাত থেকে বাঁচানো যায়। টুলের নিচে কাগজ দিয়ে লিখে রেখেছে মিষ্টান্নভোজন নামটি। অনেকেই তার বানানো মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। এরপর অনেকে তো বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে মিষ্টির অর্ডারও দিয়ে যায়। সে এখন অনেক টাকা আয় করতে পারছে। তা দিয়ে তাদের ব্যাচেলর সংসারের পুরো টাকাটা উঠে যায়। অন্যদিকে ইভান আর আরাফের টিউশনের টাকা দিয়ে তাদের পড়াশুনার খরচ আর ইমন আর আহনাফের খরচটাও উঠে যাচ্ছে। সাথে কিছু সঞ্চয়ও হচ্ছে। আহনাফ এখনো সেই ঘড়ির দোকানেই কাজ করে। তবে সেখানে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। এ নিয়ে তার কোনো ঝামেলা নেই। আরাফ টিউশন বাবদ কিছু টাকা আহনাফ আর অরুণিকার জন্য জমিয়ে রাখে৷ মোটামুটি তাদের অবস্থা এখন ভালোর দিকে। আগামী মাসে তূর্যের জন্মদিনে তারা তূর্যকে গিটার উপহার দেবে। এতোদিন তূর্য অন্যের গিটার ব্যবহার করে গান গেয়েছিল। এবার নিজের গিটার ব্যবহার করবে। ভাবতেই তাদের খুব ভালো লাগছে।
অন্যদিকে মাওশিয়াতের সাথে ইভানের বন্ধুত্ব না হলেও মোটামুটি তারা কথাবার্তা বলা শুরু করেছে। তবে ইমনের জন্যই সেটা সম্ভব হয়েছে। কারণ ইমনই মাওশিয়াতের সাথে বন্ধুত্ব করার লোভে ইভানকে অনুরোধ করেছে যাতে মাওশিয়াতের সাথে কথা বলে। আর ফলশ্রুতিতে এখন ইমন মাওশিয়াতের ভালো বন্ধু। অন্যদিকে যতিও মাঝে মাঝে আহনাফের সাথে দেখা করতে তার মহল্লায় চলে আসে। কিন্তু আহনাফ কখনোই তাকে সুযোগ দেয় নি। যতিও চুপচাপ উপেক্ষিত হয়ে চলে যায়। আবার কয়েক সপ্তাহ পর ঠিকই চলে আসে। এই মেয়ে যে আসলে কি চায়, তা আহনাফ নিজেও বুঝতে পারে না।
চলবে-