অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-১৩||

0
1311

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৩||

২৫.
ঋতুর পরিবর্তনে সবাই অসুস্থ। প্রথম দিন থেকেই ইমন আর তূর্যের জ্বর। তারা টানা দুইদিন স্কুলে যায় নি, আর তূর্য তার থিয়েটারেও যাচ্ছে না। গতকাল থেকে আহনাফের জ্বর জ্বর লাগছে। প্রচন্ড মাথা ব্যথার জন্য সে বিছানা ছাড়তে পারছে না। তবুও সে অসুস্থ শরীর নিয়ে দোকানে গিয়েছিল। দোকানের মালিক ভালো লোক। তিনি আহনাফকে কিছুদিন ছুটি দিয়ে দেন। এদিকে আজ সকাল থেকেই অরুণিকা অসুস্থ। সে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। তার নুইয়ে পড়া দেখেই সবাই বুঝে গেছে, এই ভাইরাস জ্বর এবার তাকেও ধরেছে। সবারই ওষুধ চলছে। আপতত আরাফ আর ইভান সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। তাহমিদেরও শরীর তেমন ভালো যাচ্ছে না। এর মধ্যে পুরো রাত বসে বসে নাস্তা বানিয়ে, সে সকালে স্কুলের পর তার দোকান খুলতে গেছে। এতোদিন ইমন তার সাথে ছিল। এখন ইমনের শরীর ভালো নেই, তাই সে একাই এসেছে। আজ রোদটাও খুব অসহনীয় লাগছে। তাহমিদের মাথাটাও ভারী হয়ে আছে। ক্রেতাকে ডাকার মতো তার কোনো শক্তিই নেই। সে শুধু একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই শতাব্দী তার বান্ধবী স্রেয়ার সাথে নৃত্যের ক্লাসে যাচ্ছিল। তাহমিদকে দেখেই সে দাঁড়িয়ে গেল।

স্রেয়া শতাব্দীকে বলল,
“তাড়াতাড়ি চল। দাঁড়িয়ে গেলি কেন?”

শতাব্দী অন্যমনস্ক হয়ে বলল, “মিষ্টি মশাই।”

স্রেয়া ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“কি বললি? বুঝি নি তোর কথা।”

শতাব্দী তাহমিদের সামনে এসে দেখলো তার একটা মিষ্টিও আজ বিক্রি হয় নি। তাহমিদও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শতাব্দী তাহমিদের পাশে এসে বলল,
“মিষ্টিমশাই। কি করছো এখানে?”

শতাব্দীর কন্ঠ শুনে তাহমিদের ঘোর কাটলো। সে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমুচ্ছিলো।

তাহমিদ শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি!”

“হ্যাঁ, নাচ শিখতে যাচ্ছি, দেখলাম তুমি এখানে।”

তাহমিদ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“মিষ্টি বিক্রি করতে এসেছি।”

তাহমিদের শুকনো মুখটা দেখে শতাব্দীর কষ্ট হলো। সে তাহমিদের কপালে হাত রেখে বলল,
“এমা, অনেক জ্বর এসেছে।”

তাহমিদ হালকা হেসে বলল,
“আরেহ না। প্রচন্ড রোদ তাই শরীর গরম হয়ে গেছে।”

“হয়েছে। এই রোদে তোমার সুন্দর চেহারাটা পুড়িয়ে ফেলতে হবে না। বাসায় যাও। দেখো তোমার পুরো মুখ লাল হয়ে গেছো। মনে হচ্ছে কেউ তোমার পুরো মুখে শুধু চড় দিয়ে গেছে।”

তাহমিদ ভ্রূ কুঁচকে শতাব্দীর দিকে তাকালো। শতাব্দী বলল,
“মা, যখন পুচকিকে মারে, তখন এভাবেই গাল লাল হয়ে যায়। তবে আমি কখনো মার খাই নি।”

তাহমিদ হাসলো। শতাব্দী বলল,
“মিষ্টিগুলো আমি খেয়ে ফেলি?”

তাহমিদ আহত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। শতাব্দী তাহমিদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আরেহ মিষ্টিমশাই, কিনে নেবো তো। এমনিতে দিতে বলছি না।”

এবার তাহমিদ মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“ক’টা লাগবে?”

“সব দাও।

“সব?”

“হ্যাঁ। সব। তুমি তো জানোই, আমার মিষ্টি অনেক প্রিয়।”

“তোমার তো সবই প্রিয়।”

শতাব্দী হালকা হেসে বলল,
“মিষ্টিমশাই যা বানায়, তাই আমার প্রিয়। সবই না।”

কথাটি শুনে তাহমিদ এক নজর শতাব্দীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টিগুলো প্যাকেটে ঢুকাতে লাগলো।

এদিকে শতাব্দী সব মিষ্টি কিনে নিয়ে চলে গেলো। আর তাহমিদ বাসায় এসে ধপাস করে মেঝেতে শুয়ে পড়লো। শরীরের ভার ছেড়ে দেওয়ায় সে মেঝেতে পড়ে হালকা ব্যথাও পেয়েছে। এদিকে বাসায় আরাফ আর ইভান নেই। ইমন আর তূর্য ঘুম। আহনাফের প্রচন্ড জ্বর। সেও আধোঘুমে আছে।
তাহমিদ অনেক কষ্টে মাথা তুললো। এই মুহূর্তে তার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। কিভাবে বাসা অবধি এসেছে সে নিজেও জানে না।
এদিকে অরুণিকা বসে বসে খেলছিল। সে তাহমিদকে কাঁপতে দেখে তার কাছে এসে বসে বলল,
“তাহমিদ, তোমার কি হয়েছে?”

তাহমিদ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“ওপাশ থেকে একটা বালিশ এনে দাও তো।”

অরুণিকা বালিশ এনে তাহমিদের মাথার নিচে দিয়ে বলল,
“আমি তোমার মাথায় হাত দেবো?”

“না, তুমি আমার জন্য একটা কাঁথা এনে দাও।”

অরুণিকা আশেপাশে কাঁথা খুঁজতে লাগলো। বাসায় মাত্র দুটি কাঁথা ছিল। একটা এখন ইমন আর তূর্য ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আরেকটা আহনাফের দখলে। অরুণিকা বিছানায় উঠে আহনাফকে কয়েকবার ডাকলো। আহনাফ হুম, হুম শব্দ করে আবার ঘুমিয়ে গেলো। অরুণিকা এবার টেনেটুনে কাঁথাটা আহনাফের কাছ থেকে নিয়ে তাহমিদের উপর চড়িয়ে দিলো। তাহমিদ একপাশে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর আহনাফ ঠান্ডায় কাঁপতে লাগলো। সে বিড়বিড় করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। অরুণিকা আবার আহনাফের কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি কি বলছো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

অরুণিকা একদম আহনাফের মুখের কাছে কান লাগিয়ে দিলো। এবারও সে কিছু বুঝলো না। তাই সে আবার আহনাফকে ডাকলো।

“এই আহনাফ, উঠো। কি বলছো?”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে চোখ খুলে অরুণিকাকে দেখে বিরক্তির সুরে বলল,
“কি সমস্যা তোমার? যাও এখান থেকে।”

“তুমি কি বলছো?”

আহনাফ ধমক দিয়ে বলল,
“আরেহ যাও বলছি। যাও।”

অরুণিকা এক ধমকে চুপ হয়ে গেলো। আহনাফ কিছুক্ষণ পর হালকা চোখ খুলে দেখলো, অরুণিকা ঠোঁট ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আহনাফ হালকা হাসলো। অরুণিকাকে টেনে বুকের উপর বসিয়ে বলল,
“অরু, আমার শরীর ভালো না। একটা কাজ করবে?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল, “কি কাজ?”

“একবার আমার বাম পায়ে হাঁটবে, আরেকবার ডানপায়ে। এরপর দুই হাতে। তারপর মাথার চুলগুলো একটু পর পর টেনে দেবে। তারপর মাথায় আর কপালের দুই দিকে একটা মাসাজ করে দেবে। মনে থাকবে তো? আর আমি ঘুমাচ্ছি, আমাকে কিছুক্ষণ পর পর ডাকবে না। ঠিক আছে?”

অরুণিকা আহনাফের কথা মতো তার হাত পায়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো। আর কিছুক্ষণ পর পর তার চুল টেনে দেওয়ার পাশাপাশি মাথাটাও টিপে দিতে লাগলো। কয়েকবার এমন করার পর, অরুণিকার বেশ মজাই লাগছিল। আহনাফের পা দুটি তার কাছে রেল লাইনের লোহার পাতের মতো মনে হচ্ছে। সে দেয়াল ধরে ধরে সেই পায়ের উপর হাঁটছে আর লাফাচ্ছে। এদিকে অরুণিকাকে কাজ দিয়ে আহনাফ আরাম করে ঘুমাচ্ছে।

প্রায় আধাঘন্টা পর অরুণিকা ক্লান্ত হয়ে আহনাফের পায়ের উপরই ঘুমিয়ে পড়লো। আরাফ আর ইভান বাসায় এসে দেখলো সবাই ঘুমাচ্ছে।
তারা দু’জনই সবার জ্বর মাপলো। ইমন আর তূর্যের আপতত ১০০ ডিগ্রি। আহনাফের ১০২। আর তাহমিদের ১০৩ হয়েছে। তবে অরুণিকার জ্বর নেই। আরাফ আর ইভান তাড়াতাড়ি তাহমিদকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ইভান ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে আহনাফ আর তাহমিদকে খাইয়ে দিলো। বাকী রাত আরাফ আর ইভান দু’জনই তাদের মাথায় জলপট্টি দিয়ে গেলো। সকালে সুরাইয়া আলেয়া খালাকে দিয়ে তাদের ব্যবহারের জন্য পানি আনালেন, আর ঘরটাও পরিষ্কার করিয়ে দিলেন। সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবারটা সুরাইয়া রেঁধে দিয়ে গেলেন।

সন্ধ্যায় শতাব্দী বাসায় এলো। বাসায় এসে দেখলো আহনাফ আর তাহমিদ ঘুমাচ্ছে। বাকীরা বসে আছে। ইমন শতাব্দীকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি হঠাৎ?”

“হুম, তোমার শরীর ভালো?”

“হুম, এখন ভালো আছি। কিন্তু ভাই একটু অসুস্থ।”

“গায়ক সাহেব কোথায়?”

“ওর শরীর ভালোই আছে। রাতের খাবার কিনতে গেছে।”

“আরেহ, এখন বাইরে বেরুতে গেলো কেন? আরো কিছুদিন বিশ্রাম কর‍তে পারতো?”

আরাফ বলল,
“ওর বাসায় ভালো লাগছিল না, তাই। ওকে তো বললাম আমিই গিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু আমাকে যেতে দেয় নি।”

“ওহ, মিষ্টিমশাই কি ঘুমোচ্ছে?”

“হুম।”

শতাব্দী পা উঁচিয়ে তাহমিদের ঘুমন্ত মুখটা দেখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাহমিদ উল্টোদিকে ফিরে ঘুমাচ্ছিল, তাই আর দেখা সম্ভব হয় নি। এবার শতাব্দী বলল,
“কাল থেকে আমাদের পূজা শুরু। এখন তো স্কুলও ছুটি। সবখানেই তো ছুটি, কাজেও যেতে হবে না। শুনো, মা বলেছে তোমাদের দাওয়াত করতে। তাই সবাইকে দাওয়াত দিতে এসেছি। তোমারও এসো। খালাদের কতোবার বলি, ওরা আসে না। দূর থেকেই দেখে।”

আরাফ বলল,
“আমরাও দূর থেকেই দেখবো না হয়। সবাই তো এখন অসুস্থ।”

“আচ্ছা, সমস্যা নেই। আমি সব বুঝি। তোমাদের ধর্মে বারণ আছে। পূজোয় যাওয়া যায় না। থাক, তোমাদের ধর্মের নিয়মগুলোকে আমরাও সম্মান করি। মাও তো বুঝে। কিন্তু ওই যে সবাইকে বলার একটা রীতি আছে। থাক, না এলে আসবে না। তাও আমরা সবাইকে দাওয়াত দেই। বাসায় অতিথি এলে অনেক ভালো লাগে।”

শতাব্দী থেমে বলল,
“আরেকটা কথা, মিষ্টিমশাই সুস্থ হলে কিন্তু ভালোই হতো। মিষ্টান্নভোজন কিন্তু ভালোই চলতো।”

ইমন বলল,
“হুম, কাল এই বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছিল। থাক, সমস্যা নেই। এই মুহূর্তে ওর সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ।”

“আমি সৃষ্টিকর্তাকে বলবো, যাতে এই ঘর থেকে সব রোগ কেটে যায়।”

আরাফ বলল, “ইনশাআল্লাহ।”

“কি বললে এটা?”

“আল্লাহ যদি চায়, তবে অবশ্যই হবে।”

শতাব্দী মুচকি হেসে বললো,
“আসি তাহলে।”

২৬.

ছ’জন অরুণিকাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা হতে চললো অরুণিকাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা বিসর্জন। রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। বাঁধনকে বাসায় আটকে রাখা দায়। সে তার বন্ধুদের সাথে দেবী বিসর্জন দেখতে চলে গেছে। সাথে নিয়ে গেছে অরুণিকাকে। এখন বাঁধন ফিরে এসেছে, কিন্তু অরুণিকাকে হারিয়ে ফেলেছে। এদিকে আরাফ আর ইভানের ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। তারা দু’জনই বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। ইমন আর তূর্য পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। আহনাফ এখনো দুর্বল, আর তাহমিদের জ্বর ওঠানামা করছে।

অসুস্থতা, দুর্বলতা সব ভুলে এখন ছ’জনই দিশাহারা হয়ে গেছে। তারা পাগলের মতো ছুটোছুটি করছে তাদের অরুকে একনজর দেখার জন্য।

অনেকক্ষণ খোঁজার পর আরাফ ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তূর্য একপাশে বসে বার-বার মনকে বোঝাচ্ছে, তার টুইংকেলকে সে এখনই ফিরে পাবে। এদিকে ইভান জ্বরের ঘোরেই বাঁধনকে দুটো চড় বসিয়ে দিয়েছে। বাঁধনের ফুঁপোনো দেখে সুরাইয়া ছেলেকে আর বকলেন। তিনিও আলেয়া খালাকে নিয়ে আশেপাশে খুঁজতে লাগলেন। আহনাফ আর তাহমিদ অনেক দূরে চলে গেছে। কিন্তু কোথাও অরুণিকাকে পায় নি। শতাব্দীদের পরিবার বাসায় ফেরার পর সব শুনে অনেক ভয় পেলো। কারণ বিসর্জনের সময় পদদলিত হয়ে অনেকেই আহত হয়। বাচ্চাদের ওইসময় দূরে রাখা হয়। অরুণিকা যদি ভীড়ের মধ্যে পড়ে, তাহলে হয়তো কোনো অঘটন ঘটে যাবে।

আহনাফ এসব শুনে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এবার সে একাই বেরিয়েছে। যেই দিক দিয়েই অরুণিকার যাওয়া সম্ভব, সেই দিক দিয়ে হেঁটে নদীর ঘাট পর্যন্ত গিয়েছে। নদীর ঘাটের কাছে এসেই আহনাফ সেখানেই বসে পড়লো। তার মাথাটা ভো ভো করছে। ইচ্ছে করছে বাঁধনকে বেধড়ক পেটাতে। তখনই পেছন থেকে দুটি হাত তার গলা জড়িয়ে ধরলো। সেকেন্ডের জন্য আহনাফ থমকে গেলো। পেছন ফিরে দেখলো, অরুণিকা কান্নাভেজা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ বসা থেকে উঠে অরুণিকাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অরুণিকা আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি অনেক ভয় পেয়েছি, জানো? ওরা অনেক পঁচা।”

আহনাফ অরুণিকাকে ছেড়ে দিয়ে তার মুখের দিকে তাকালো। কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কার কথা বলছো?”

“দু’টো আংকেল।”

আহনাফ ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“কি করেছে তোমার সাথে?”

তখনই সামনে একজন দম্পতি এসে দাঁড়ালো। তাদের দেখে আহনাফ দাঁড়িয়ে গেলো। অপরিচিত মহিলাটি বললেন,
“ও তোমার কে হয়?”

“আমার চাচাতো বোন। আপনাদের পরিচয়?”

“আমরা এখানে বিসর্জনের সময় এসেছিলাম। তারপর একপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। তখন দেখলাম দু’জন মাঝবয়সী লোক ওকে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু ও বারবার হাত ছোঁড়াছুড়ি করছিল, যেতে চাইছিল না। আমার সন্দেহ হলো, তাই আমি আমার স্বামীকে বললাম। তারপর ওকে নিজেদের কাছে রাখলাম। এতোক্ষণ আশেপাশে খুঁজছিলাম যদি কেউ নিতে আসে। আমাদের বাড়ি কাছেই। তাই ওকে বাসায় নিয়ে গেলাম। ও অনেক কান্নাকাটি করছিল। এখন থানায় যাওয়ার আগে আরেকবার এলাম এদিকটাই। তারপর ও তোমাকে দেখেই দৌঁড়ে এলো।”

আহনাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বলল,
“আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা আমাদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওর কিছু হলে, আমাদের কি হতো ভাবতেই পারছি না।”

সেই দম্পতি হাসিমুখে বিদায় নিলো। আহনাফ ফোন বের করে বাসায় জানালো অরুণিকাকে পাওয়া গেছে। তারপর অরুণিকাকে কোলে বসিয়ে কিছুক্ষণ নদীর ঘাটে বসলো। তার শরীর এখনো কাঁপছে। তার হাতের মুঠোয় অরুণিকার হাত। অরুণিকার চোখেমুখে এখনো ভীতি। কিন্তু ভীতির মাঝে থেকেও সে বুঝে গেছে, সে এই মুহূর্তে নিরাপদ স্থানেই আছে, তাই তো এতো শান্ত হয়ে বসে আছে। তার চোখে ভয় থাকলেও একটা আলাদা প্রশান্তির রেশ ফুটে উঠেছে। এই চাহনির ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এক বাক্যে বলা যায়, এক অবুঝ বালিকা বেলাশেষে ফিরে পেয়েছে তার শান্তির ঠিকানা।

আহনাফ অরুণিকার ছোট্ট হাতে তার ঠোঁট চোয়ালো, আর ফুঁপিয়ে উঠলো। অরুণিকা আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফের চোখ ছলছল করে উঠলো। বলল,
“অরু, খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, সেই ভয়ংকর মুহূর্তটা আবার ফিরে এসেছে। মনে হচ্ছিল সব মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে।”

অরুণিকা আহনাফের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“আমি আর তোমাদের না বলে বের হবো না। তোমাদের সব কথা শুনবো।”

আহনাফ মুচকি হেসে বলল,
“আরাফ, ইভান, ইমন, তাহমিদ আর তোমার রকস্টার তোমার জন্য বসে আছে। চলো বাসায়।”

আহনাফ অরুণিকার হাত ধরে তাদের গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে। সূর্যও অস্তগামী হচ্ছে। অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় আকাশটা লালচে হয়ে গেছে। অরুণিকা সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো, আর আহনাফকে প্রশ্ন করতে লাগলো, আকাশ এতো বড় কেন? আকাশ লাল হয়ে গেছে কেন? আকাশ নীল হয় কেন? আকাশ কিভাবে ধরা যাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন। আহনাফ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, আবার অজানা প্রশ্নগুলোকে পাশ কাটিয়ে প্রসঙ্গ পালটে দিচ্ছি। এভাবেই তারা গল্প করতে করতে বাসায় চলে এলো।

চলবে-

(🌻ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here