অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-১৬||

0
1247

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৬||

২৯.
আজ পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। সবাই ক্লাসে এসে বসে আছে। মাওশিয়াত চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে। তূর্য তা দেখেই হাসতে লাগলো। ইমন তাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“হাসছিস কেন? দেখ ওর মন কতো সুন্দর! তাই এই মুহূর্তে বাকীদের মতো বকবক না করে আল্লাহকে ডাকছে।”

তূর্য মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“পরীক্ষা শেষ, খাতাও কাটা শেষ। শুধু শুধু এসব করে কি লাভ?”

“তুই চুপ কর। তুই এসব বুঝবি না।”

শ্রেণি শিক্ষক ক্লাসে এসে সবার প্রথমে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করে তাদের হাতে রেজাল্ট কার্ড ধরিয়ে দিলেন। তারপর স্যার এসে তূর্যের দিকে রেজাল্ট এগিয়ে দিলেন। তূর্য ভয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলো।

স্যার বললেন,
“অল্পের জন্য ফেইল কর নি। পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন সবগুলোতেই তোমার অনেক খারাপ নম্বর এসেছে। তুমিই পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম নম্বর তুলেছ। আমার তোমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ভালো লাগে, কারণ তুমি ভালো গান গাইতে পারো। কিন্তু পড়াশুনাও তো করতে হবে। তাই না?”

তূর্যের দিকে তাকিয়ে মাওশিয়াত বাঁকা হাসি দিলো। তূর্য চোখ ছোট করে তার দিকে তাকালো। এবার প্রথম দশজনের নাম ঘোষণা করা হবে। ষষ্ঠ ধাপে ইমনের নাম ডাকা হলো। ইমন খুশিতে স্যারের কাছ থেকে রেজাল্ট কার্ড নিয়ে মাওশিয়াতের দিকে তাকালো। কিন্তু মাওশিয়াত দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছে। আহনাফ পঞ্চম হয়েছে, আর আরাফ হয়েছে তৃতীয়। এবার মাওশিয়াত মুখ তুললো। তার দৃষ্টি একবার স্যারের দিকে, আরেকবার ইভানের দিকে। সে চাইছে এবার যেন ইভানের নামটাই নেওয়া হোক। কিন্তু না। স্যার মাওশিয়াতকেই ডাকলো। আর ইভানই প্রথম হলো। স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইমন মাওশিয়াতের কাছে এসে বলল,
“অভিনন্দন মাওশিয়াত।”

মাওশিয়াত রাগী দৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকালো। তার রাগী চোখ দুটি ছলছল করছে। রাগ আর দুঃখ দুটিই মাওশিয়াতকে ঘিরে ধরেছে। সে তার সামনে থাকা বোতলের ঢাকনা খুলে বোতলের সব পানি ইমনের মাথায় ঢেলে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় ইমনসহ যারা যারা ক্লাসে উপস্থিত ছিল সবাই নির্বাক হয়ে গেল। তখনই তাদের ক্লাসের আরেকটি মেয়ে মাওশিয়াতকে থামিয়ে বলল,
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? তুমি কি এই কাজটা ঠিক করলে? ও তোমাকে অভিনন্দন দিতে এসেছে, আর তুমি?”

মাওশিয়াত তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“একটা ভিখারির মেয়ে আমাকে বলবে কোনটা ঠিক, আর কোনটা বেঠিক?”

ইভান ইমনের হাত ধরে মাওশিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি মেয়ে মানুষ, তাই আজ অনেক বড় ঝামেলা বাঁধে নি। নয়তো আমি কতোটা ভয়ংকর হতে পারি, তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।”

মাওশিয়াত ইভানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তোমার ভাই আমাকে অপমান করতে এসেছে। আমাকে খোঁচা দিতে এসেছে, আর তুমি আমাকে শাসাচ্ছো?”

তূর্য চেঁচিয়ে ইমনকে বলল,
“এই মেয়ে কতোটা স্বার্থপর দেখেছিস? আমি তোকে আগেই বলেছি ও তোর সাথে বন্ধুত্ব করেছে ইভানের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য।”

আহনাফ আর আরাফ ইভানকে টেনে ক্লাস থেকে বের করে আনলো। যদি মাওশিয়াতের কোনো কথায় ইভান আরো ক্ষেপে যায়, তাহলে এই ছেলে দেখবেই না তার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিদ আর তূর্য ইমনের কাঁধে হাত রাখলো। আর ইমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ইমনকে দেখে সেই মেয়েটি একটা রুমাল এগিয়ে দিয়ে মাওশিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“হয়তো আমি গরিব ঘরের মেয়ে, কিন্তু কাউকে কষ্ট দিতে পারি না। কিন্তু বড় ঘরের মেয়েরা এতো সুখের মাঝে থাকে, তবুও তাদের চোখে মানুষের অনুভূতি মূল্যহীন।”

তূর্য রুমালটি নিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিলো। তারপর তারা ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো।

এদিকে অনেকক্ষণ ধরে ইমন স্কুলের মাঠের বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছে। আর তাকে ঘিরে বসে আছে তার ভাই আর চার বন্ধু। হঠাৎ তাদের দিকে এগিয়ে এলো ক্লাসের সেই মেয়েটি। একই ক্লাসে পড়লেও ইমনের চোখ সেই মেয়ের দিকে কমই গিয়েছিল। শ্যামলা মেয়েদের দিকে হয়তো ছেলেদের দৃষ্টি সহজে পড়ে না। তবে আজ তার সুন্দর ব্যবহার ছ’জনকেই মুগ্ধ করেছে। মেয়েটি ইমনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“কি ব্যাপার, বাসায় যাবে না?”

তাহমিদ বলল,
“যদি ওর মন ঠিক হয়।”

ইমন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি নাম তোমার?”

মেয়েটি অবাক কন্ঠে বলল,
“আমি তো টেন থেকেই তোমাকে চিনি। দুই বছরে তুমি আমার নামও জানলে না?”

ইমন তূর্যের দিকে তাকালো। তূর্য বলল,
“আরেহ, ও সায়ন্তনী। তুই সত্যিই চিনিস না? ও খুব সুন্দর নৃত্য করতে পারে।”

ইমন মুচকি হেসে বললো,
“আমি তোমার নামটাই জানতাম না। তোমাকে তো দেখেছি।”

সায়ন্তনী বলল,
“আমি তোমাদের সবার নাম জানি। তূর্যের সাথে অনেক কথা হয়েছিল।”

তূর্য বলল,
“আমার আশেপাশে মেয়ে আছে, আর আমি কথা বলবো না, তা কি হয়?”

তূর্যের কথায় সবাই হাসলো। সায়ন্তনী বলল,
“আমার তাড়া আছে। কাজে যেতে হবে।”

ইমন বলল,
“তুমি কি কাজ করো?”

“আমি দোকানে কাজ করি। আমার মায়ের চায়ের দোকান আছে। আমি ওখানেই বসি। মা অসুস্থ, তবুও স্কুলে থাকলে একটু বসে। আমাদের বাবা নেই। আমি দোকানে না বসলে মা-ভাই উপোস থাকবে।”

ইভান সায়ন্তনীর কথা শুনে বলল,
“আমাদের বন্ধু হবে?”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে ইভানের দিকে তাকালো। এরপর সবাই সায়ন্তনীর সাথে বন্ধুত্ব করলো। শুধু আহনাফ বলল,
“এর আগে একটা মেয়ে বন্ধু জুটিয়েছিলাম, সে এখনো পিছু ছাড়ছে না। আবার কোনো বন্ধু বানাতে চাই না।”

ইভান বলল, “সবাই যতির মতো না।”

সায়ন্তনী হেসে বলল,
“তাহলে আমার ভাই হয়ে যাও। বন্ধু হতে হবে না।”

আহনাফ হেসে বলল,
“ওকে আজ থেকে আমরা ভাই-বোন।”

এদিকে মাওশিয়াত ক্লাস থেকে বের হয়ে দেখলো সায়ন্তনী ইভান আর ইমনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মাওশিয়াতের কেন যেন ব্যাপারটা ভালো লাগলো না। সে কোনো কিছু না ভেবেই ইমনের সামনে এসে দাঁড়ালো আর বলল,
“ইমন, সরি। আমি এমনই। রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আমি ভেবেছি ইভান প্রথম হয়েছে, তাই তুমি আমাকে খোঁচা দেবে।”

মাওশিয়াত কাঁদো কাঁদো মুখ করে ইমনের দিকে তাকালো। ইমনের মন মুহূর্তেই গলে গেলো। কিন্তু ইভান ইমনকে আটকে দিয়ে মাওশিয়াতকে উত্তর দিলো,
“তোমার মতো বদমেজাজী মেয়েগুলো কখনোই বন্ধু হওয়ার যোগ্য না। তার চেয়ে সায়ন্তনী অনেক ভালো।”

মাওশিয়াত সায়ন্তনীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। সায়ন্তনী মাথা নিচু করে রাখলো। মাওশিয়াত ইমনের কোনো উত্তর না পেয়ে চুপচাপ চলে গেলো।

সেদিন মাওশিয়াত বাসায় গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করলো। সে কখনো দ্বিতীয় হয় নি। তাই এই ফলাফলে সে খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে ইমনকে অকারণে আঘাত দিয়েছে তাই। সে সারাদিন বসে ভাবলো, ইভান প্রথম হলেও সব সারির শিক্ষার্থীদের সাথেই তার বন্ধুত্ব আছে। অথচ মাওশিয়াত সবসময় প্রথম সারির শিক্ষার্থীদের সাথেই বন্ধুত্ব করবে। হয়তো তার এমন ব্যবহারের জন্য সৃষ্টিকর্তা তার উপর অসন্তুষ্ট। কিন্তু আর যাই হোক আজ সে সায়ন্তনীকে ইমন আর ইভানের সাথে একদমই সহ্য করতে পারছিলো না। মাওশিয়াত চায় না, তার বন্ধুরা অন্য কারো বন্ধু হোক। তাই সে মনে মনে ভাবলো, যে করেই হোক সে ইভান আর ইমনের মনে তার প্রতি ভালো লাগা সৃষ্টি করিয়ে তাদের ভালো বন্ধু হবে।

৩০.

তূর্য আজ গানের অডিশন দিতে গেলো। প্রতি বছরই কলকাতার শিশু সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে একটা গানের প্রতিযোগিতা হয়। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সব ব্যবস্থায় করে দিলেন সুমন রয়। অনেক দিন ধরেই সেই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে তূর্যের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। কিন্তু আজ সে অডিশন থেকে বাদ পড়লো। আর এরপর থেকে সে মলিন মুখে বসে আছে। তার পাঁচ বন্ধুর সান্ত্বনা, সায়ন্তনীর দেওয়া আশা, অরুণিকার মিষ্টি কথা, শতাব্দীর দেওয়া উৎসাহ কোনো কিছুই তাকে স্বাভাবিক করতে পারছে না।

টানা এক সপ্তাহ সে চুপচাপ বসে ছিল। এক সপ্তাহ পর তূর্য বলল,
“আমার গান ভালো হোক বা হোক, আমি গান গাওয়া ছাড়বো না। কেউ শুনুক বা না শুনুক আমি জোর করে তাদের শোনাবো। তারা বাধ্য হয়ে আমার গান শুনবে।”

তাহমিদ অবাক কন্ঠে বলল,
“জোর করে কিভাবে শোনাবি?

তূর্য ফোন হাতে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রায় পনেরো মিনিট পর সে ফোনটা তাহমিদের দিকে এগিয়ে দিলো। তাহমিদ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো তূর্য একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলেছে। সে বাকীদের দিকে তূর্যের মোবাইল ফোনটা এগিয়ে দিলো।

আহনাফ বলল,
“তাহলে তুই ইউটিউবে ভিডিও ছাড়বি?”

তূর্য বলল,
“হ্যাঁ, তূর্য ছাড়বে না। এই গানগুলো রিকি ছাড়বে। আজ থেকে আমার দুটো পরিচয় থাকবে। আমি তোদের কাছে তূর্য, যার পড়াশুনা ভালো লাগে না। তবুও সে এখন থেকে পড়বে, আর পাশাপাশি ছোট ছোট দলে গান গাইবে। আর আমার দ্বিতীয় পরিচয় হবে রিকি, দা রকস্টার। যে গান গাইবে কোনো বাঁধা ছাড়া, কিন্তু কেউ তাকে দেখবে না।”

“মানে তুই নিজেকে প্রকাশ না করে গান ছাড়বি?”

“হুম। এটাই হবে আমার গানের জীবনের শুরু। রিকির জন্ম আজ থেকেই শুরু হলো। প্রথম গানটা আমি কালই ছাড়ব।”

আহনাফ বলল,
“ব্যাকগ্রাউন্ডটা কিন্তু আমিই সাজাবো।”

এদিকে অরুণিকার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে কয়েক মাস হলো। সুরাইয়া ঘরে এসে ছ’জনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“বাবুনের তো ছ’বছর হয়ে গেলো! বলছি কি ওর কর্ণ ছেদন করিয়ে দিলে ভালো হতো।”

আরাফ ভীত কন্ঠে বললো,
“ও ব্যথা পাবে না?”

আহনাফ বলল,
“এসবের কোনো দরকার নেই।”

সুরাইয়া বললেন,
“আরেহ বাবা, বড় হলে আরো ব্যথা লাগবে। আর মেয়েদের কানের দুল পরতে হয়৷ এটা তো মেয়েদের শখ। দেখবে কিছুদিন পর ও নিজেই পরতে চাইবে। তখন কি করবে?”

তাহমিদ বলল,
“চাচী ঠিকই বলেছে। ওকে কানের দুল পরলে দারুণ লাগবে। মাঝে মাঝে শতাব্দীর কানের দুলগুলো কানের কাছে ধরে রাখে, তখনই দেখতে খুব মায়াবী লাগে।”

আহনাফ রাজী হলেও আরাফ কোনোভাবেই অরুণিকার কর্ণ ছেদন করাতে চাইছিলো না। শেষমেশ বাকীদের জন্য সে আর নিষেধও করলো না।

এদিকে পার্লারে গিয়ে আরাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। একটা মেয়ে এসে অরুণিকার দুই কানের যেই পাশে ছেদন করবে, সেই দুই পাশ চিহ্নিত করে রাখলো। অরুণিকার পাশেই আরেকজন কর্ণ ছেদন করতে এসেছে। সে মেয়েটি অরুণিকার চেয়ে বড় জোর দুই-তিন বছরের বড় হবে। মেয়েটি ভয়ে কাঁপছিল। মেয়েটিকে দেখেই অরুণিকা আরাফকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আরাফ, আমার ভয় করছে। আমাকে ওরা ব্যথা দেবে।”

আরাফ অরুণিকার সামনে আসা চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকে দিয়ে বলল,
“অরু, তোমার কিছু হবে না। আমি আছি তো।”

আহনাফ পাশেই বসা ছিল। সে অরুণিকার হাত ধরে বলল,
“একদমই ব্যথা লাগবে না। দেখি, চোখ বন্ধ করো।”

অরুণিকা মাথা নেড়ে বলল,
“না, করবো না।”

পার্লারের মেয়েটি হেসে অরুণিকার এক কানে দুল পরিয়ে দিলো। ব্যস অরুণিকার কান্না শুরু। সে ব্যথায় কান ধরে বসে আছে। পার্লারের মেয়েটি বলল,
“এতো ব্যথাও করে না। ও একটু বেশিই কাঁদছে?”

আরাফ বলল,
“এমনি এমনি কেন কাঁদবে? নিশ্চয় বেশি ব্যথা করছে।”

আরাফ দ্বিতীয় কানটি ছেদন করতে দিচ্ছিলো না। এবার আহনাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বসলো। মেয়েটিও তার কাজ করে ফেললো। এদিকে অরুণিকা রাগে ফুঁসতে লাগলো। সে দাঁত দিয়ে আহনাফের হাত কামড়ে ধরেছে। আহনাফও চুপচাপ ধৈর্য ধরে ছিল। কর্ণ ছেদনের পর অরুণিকা ক্ষোভ নিয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। পুরো রাস্তা সে আরাফের কোলে বসে ছিল। আহনাফ কিছু বললেই কানে হাত দিয়ে রাখতো। বা আরাফের কান ঢেকে রাখতো, যাতে আহনাফের কোনো কথা আরাফের কানে না যায়। অরুণিকার এমন ব্যবহারে আহনাফ প্রচন্ড বিরক্ত। আরাফও তো প্রথম দুল পরানোর সময় ওকে কোলে নিয়েছিল, তাহলে রাগ সব তার উপর কেন হবে?

আহনাফ অরুণিকার হাত ধরতে যাবে তখনই অরুণিকা হাত সরিয়ে দিয়ে আরাফকে বলল,
“আমি দুষ্টু ছেলেদের সাথে কথা বলি না।”

আহনাফ তার হাত দেখিয়ে বলল,
“আর একটা বদমাশ মেয়ে যে আমার হাত কামড়ে দিয়েছে, ওর সাথে কি কথা বলা উচিত?”

অরুণিকা মুখ ফুলিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ বলল,
“আরাফ, রিকশা থামানো উচিত। চল, ওকে এখানে রেখে আমরা চলে যাই। মেয়েটা দিন দিন বেশি দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে।”

অরুণিকা কথাটি শুনে আরাফকে ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরলো। এরপর আহনাফের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“আমি তোমার সাথে কখনো কথা বলবো না।”

আহনাফ বলল,
“আচ্ছা, সরি। এক কানে দুল পরলে কি ভালো লাগবে বলো? তোমার শতু আপু কি এক কানে দুল পরে? এখন তুমি কানে দুল পরবে। তোমার জন্য নতুন নতুন দুল কিনে আনবো, ভালো হবে না?”

“সত্যি? আমার জন্য দুল কিনে আনবে?”

“হ্যাঁ, সত্যি।”

“অনেকগুলো?”

“একদম এক বক্স।”

অরুণিকা আবার মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“তুমি আনবে না। আরাফ আনবে।”

আরাফ হেসে বলল,
“আচ্ছা, আমি আনবো।”

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“দিনশেষে আমিই খারাপ। যেমন দাদা, তেমন নাতনি। দাদাও এমন করতো। যে যা-ই করুক, সব দোষ আমার উপরই দিতো।”

“কারণ দাদা তোকে বেশি ভালোবাসতো।”

“আচ্ছা, তাহলে দাদার নাতনি কি আমাকে বেশি ভালোবাসে?”

আরাফ হাসলো। আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। আরাফ আহনাফের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“দাদা-দাদি অরুকে খুব পছন্দ করতো। তোর দাদির কথাগুলো মনে আছে?”

আহনাফ অন্যদিকে চোখ সরিয়ে বলল,
“আমি এসব মনে করতে চাই না।”

“কিন্তু আমি জানি তোর মন থেকে কিছুই মুছে যায় নি। আমি তোকে চিনি। আমার চেয়ে তোকে কে ভালো চিনবে বল?”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here