অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-১৯||

0
1271

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১৯||

৩৪.
অরুণিকার জন্য ছ’জনই এবার স্কুলে যাওয়ার সময়সূচী ভাগ করে নিলো। প্রতিদিন ছ’জনের মধ্যে একজন স্কুলে না গিয়ে অরুণিকাকে স্কুলে দিয়ে আসে, আবার নিয়েও আসে৷ আর যেদিন তাদের অবশ্যই স্কুলে উপস্থিত থাকতে হয়, সেদিন অরুণিকাকে দিয়ে আসার সময় স্কুলের স্টাফকে বলে আসে যাতে তারা না আসা পর্যন্ত অরুণিকা স্কুলেই থাকতে পারে। তাদের স্কুল ছুটির ব্যবধান দুই ঘন্টা। এই দুই ঘন্টা অরুণিকা তার স্কুলেই সময় পার করে। কখনো কখনো আরাফ গিয়ে অরুণিকাকে তাদের স্কুলে নিয়ে এসে একটা ক্লাসরুমে বসিয়ে রাখে৷ শতাব্দীর বাবা আরাফদের স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় এটা নিয়ে কোনো অসুবিধে হয় নি।

আজ আরাফ স্কুলে যায় নি। সে ছুটির পর অরুণিকাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে দেখলো অরুণিকা স্কুলের মাঠে তার বয়সী বাচ্চাদের সাথে দৌঁড়াচ্ছে। আরাফ তাকে ধরতে যাবে তখনই অরুণিকা দৌঁড়ে একপাশে গিয়ে বলল,
“আরাফ, তুমি আমাকে ধরতে পারবে না।”

আরাফ অরুণিকাকে ধরার জন্য তার পিছু পিছু ছুটতে লাগলো। এদিকে অরুণিকা হাসছে আর দৌঁড়াচ্ছে। আরাফও অরুণিকার সাথে খেলছে। তার বেশ মজায় লাগছিলো। কিন্তু হঠাৎ আরাফ থেমে গেলো। তার মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো। কানে বাজছে কয়েকটি বাক্য,

“আরাফ, দোলনায় ধাক্কা দেবে না? আরেকটু জোরে ধাক্কা দাও। আরাফ, তোমার তো শরীরে একটুও শক্তি নেই।”

“আরাফ, দেখি কে আগে ওই সীমানায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে। আমি নাকি তুমি?”

“আরাফ, দেখি আমাকে ধরতে পারো কিনা। যদি পারো তাহলে আজ এক প্লেট ভেলপুরি খাওয়াবো।”

অরুণিকা আরাফের কাছে ছুটে আসতেই তার ঘোর কাটলো। অরুণিকা বলল,
“আরাফ, তুমি খেলবে না আমার সাথে?”

আরাফ মুচকি হেসে বলল,
“অন্য দিন। আজ বাসায় চলো।”

অরুণিকা তার ব্যাগটা আরাফকে ধরিয়ে দিলো। আরাফ অরুণিকার হাত ধরলো।

রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে আঠারো বছর বয়সী কিশোর, আর তার হাতের মুঠোয় আবদ্ধ সাত বছর বয়সী মেয়ে শিশুর হাত। ছেলেটির চোখে শূণ্যতা। মেয়েটির চোখে উচ্ছ্বাস। ছেলেটির মন ভাঙা। মেয়েটির কোমল মন গড়তে শুরু করেছে। এই শূণ্যতা-উচ্ছ্বাস আর ভাঙা-গড়ার যোগসূত্রই তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।

দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ। তাহমিদ এখন ভালোভাবেই তার মিষ্টান্নভোজন সামলাতে পারছে। ব্যবসায় অধিক সময় দেওয়ায় তার জন্য ভালো একটা পথও খুলে গেছে। তার হাতে তৈরী মিষ্টি আর নাস্তা এখন আশেপাশের লোকেদের কাছেও পরিচিতি পেয়েছে। আর ভাগ্যক্রমে তার একটা রেস্টুরেন্টেও চাকরি হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টটি মধ্যমমানের হওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সেখানে প্রতিদিন যাওয়া আসা হয়। আর তাহমিদের তৈরি নাস্তা সেই রেস্টুরেন্টটিকে আরো বেশি পরিচিতি দিয়েছে।
এদিকে আরাফ মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য পড়াশুনা করছে। আর তাহমিদ আর ইমন দু’জনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হবে। তবে আপতত তারা কয়েকমাস পড়াশুনা থেকে ছুটি নিয়েছে। এই ছুটিতে তাহমিদ তার রেস্টুরেন্টে সময় দিচ্ছে। আর ইমন একা একাই বিভিন্ন ব্যায়াম শিখছে, পাশাপাশি সে বিভিন্ন মহল্লার ফুটবল খেলায় অংশ নিচ্ছে। এদিকে তূর্যের পড়াশুনার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। তবুও ইভানের জোরাজুরিতে সে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। আর ইভান ফার্মেসিতে আর আহনাফ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তবে আহনাফ পাশাপাশি কম্পিউটারের দোকানে কাজ নিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক মাসের জন্য সে যান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সে মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে তার এই ব্যস্ততা যতি একদমই বুঝতে চাইছে না। যদিও আহনাফের পক্ষ থেকে যতি এখনো তার বন্ধু। কিন্তু যতি এই সম্পর্কে বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে। সে প্রতি ঘন্টায় কয়েকবার আহনাফকে ফোন দেবে। আর এসবে আহনাফ প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং আহনাফ যতির কাছ থেকে দূরত্ব রাখছে। তবে যতোই সে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছে। যতি ততোই আহনাফের কাছে আসতে চাইছে। এমনকি সে মাঝে-মাঝে বাসায় এসে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

তূর্যের ‘রিকি দা স্টার’ ইউটিউব চ্যানেলটি এখন খুবই পরিচিতি পেয়েছে। মাসে সে এখন বিশ হাজার টাকা আয় করছে। এই টাকা দিয়ে সে অরুণিকার পড়াশুনার পুরো খরচ বহন করছে। বর্তমানে তাহমিদ আর তূর্যই বাকিদের তুলনায় বেশি আয় করছে।

অন্যদিকে ইমন আর মাওশিয়াতের বন্ধুত্ব আগের মতো থাকলেও এবার ইভানের সাথে মাওশিয়াতের সম্পর্কটা বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। ইভান এর আগে তার পক্ষ থেকে মাওশিয়াতের সাথে ওতোটা ঘনিষ্ঠ হয় নি। তবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর ইভান মাওশিয়াতের সাথে বেশিই সময় পার করেছে। কারণ তারা দু’জনই ফার্মেসিতে ভর্তি হয়েছে। তবে ইমন এই ব্যাপারে মনে মনে ক্ষিপ্ত। যদিও সে ইচ্ছে করেই ফার্মেসিতে ভর্তি হয় নি। কারণ তার সে বিষয়ে পড়াশুনা করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। তার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি সে তাদের পারিবারিক ব্যবসাটাও সামলাবে। তার বাবারও সেই ইচ্ছে ছিল। কারণ ইভানের ব্যবসায় কোনো আগ্রহ ছিলো না।

৩৫.

আজ মাওশিয়াত আর ইভান একসাথেই বাসায় ফিরছিলো তখনই ইমন তাদের রাস্তায় দেখে ফেলে। বাসায় এসেই ইমন ইভানের উপর খুবই রেগে যায়। চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
“ভাই, তুই জানিস আমি মাওশিয়াতকে পছন্দ করি। তবুও তুই ওর সাথে কেন ঘুরাঘুরি করছিস?”

ইভান অবাক হয়ে বলল,
“তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? ও আমার ক্লাসমেট। ওর বাসা আসার সময় পরে, তাই আমি ওকে নামিয়ে দিয়েছিলাম।”

“আমি দেখেছি তোরা কিভাবে হাসাহাসি করছিলি।”

তূর্য ইমনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“ইমন, তুই খুব সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিস। আমি চাই না তোরা দুই ভাই ওই মেয়েটার জন্য ঝগড়াঝাঁটি কর। কি আছে ওর মধ্যে?”

ইভান তূর্যের দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ঝগড়াঝাঁটি করার প্রশ্নই আসে না। মাওশিয়াত শুধুই আমার ক্লাসমেট। আমরা একই সাথে দুই ক্লাস শেষ করেছি। এরপর স্কুলের কোনো পরিচিত বন্ধুই আমার সাথে ফার্মেসিতে ভর্তি হয় নি। তাই ওর সাথেই আমার বেশি কথাবার্তা হয়। ইনফ্যাক্ট, আমরা খুব ভালো বন্ধুও হয়েছি। কিন্তু এখানে ওকে পছন্দ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।”

ইমন ইভানের কথা শুনে কিছুটা শান্ত হলো। তারপর মলিন মুখে বললো,
“ও তো এখন আমার সাথে কথাও বলে না।”

“ও তোর কথা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে। বাসায় আসার সময় পায় না, নয়তো তোর সাথে দেখা করতো।”

“আচ্ছা, এই কথা তুই আমাকে কেন বলিস নি?”

“ইমন, আমি ক্লাস থেকে এসেই টিউশন করাতে যাই। আমার মনেই থাকে না এসব। আর আজকাল তো আমরা কেউ আড্ডা দেওয়ার সময় পাই না। এসব মনে করে বলার সময় কি এখন আমাদের আছে?”

এবার আরাফ বলল,
“তোরা প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে পড়ে আছিস? এখন এই সময়টা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়।”

ইমন হুট করে বলে উঠল,
“আজ যদি রুহানি বেঁচে থাকতো, তাহলে তুই এই কথা বলতি না।”

ইমনের কথায় সবাই চুপ হয়ে গেলো। আহনাফ চেঁচিয়ে বললো,
“ইমন, তুই দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস।”

আরাফ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তখনই সে শতাব্দীর মুখোমুখি হলো। শতাব্দী তাকে দেখেই বলল,
“আরাফ, কি হয়েছে তোমার?”

“কিছু না।”

শতাব্দী আরাফের পিছু পিছু এসে বলল,
“বলো, কি হয়েছে?”

তাহমিদ শতাব্দীর হাত ধরতেই সে পেছন ফিরে তাকালো। তাহমিদ তাকে ইশারায় চলে যেতে বললো। এরপর আহনাফ আর তাহমিদ অনেকক্ষণ আরাফের পাশে বসে ছিল।
নিরবতা ভেঙে তাহমিদ বলল,
“রুহানির মৃত্যুর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের বয়স তখন মাত্র বারো-তেরো ছিল। তুই এখনো ওকে নিয়ে ভাবিস। ওর জন্য কষ্ট পাস।”

আরাফ কাঁপা কন্ঠে বললো,
“সেদিন আমার জন্যই ওর সাথে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল।”

আহনাফ বলল, “এখানে তোর দোষ নেই।”

“আমারই দোষ ছিল। অরুণিকাকে দেখলেই আমার রুহানির কথা মনে পড়ে। ওর বয়স তখন দশ কি এগারো ছিল। ওর মুখটা আমাদের অরুণিকার মতোই মায়াবি ছিল। স্কুল ছুটির পর ওর সাথেই খেলতাম। ও আমাকে দেখে লজ্জায় নুইয়ে পড়তো। এটা ভালোবাসা ছিল না। এটা ভালো লাগা ছিল। আমার পক্ষ থেকেও তাই ছিল। সব মেয়েদের ভীড়ে ওকেই আমার চোখে পড়তো। তারপর বন্ধুত্ব। ওই আমার প্রথম মেয়ে বান্ধবী। আমরা একসাথে খেলতাম, বাসায় ফিরতাম। আমি অবচেতন মনে ওকেই ভালোবাসার জায়গা দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় যা হয়েছিল, তা আমি কখনোই ভুলবো না।”

আরাফ চোখ বন্ধ করতেই তার সেই অতীতটা মনে পড়ে গেলো। কিন্তু আরাফ সেই ঘটনা আর মনে করতে চাইছে না। সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। বাসায় এসে আবার পড়তে বসে গেলো। ইমন আরাফের কাছে ক্ষমা চাইলো। আরাফ মলিন হেসে বলল,
“রুহানি আর মাওশিয়াত সম্পূর্ণ আলাদা। মাওশিয়াত তোর ভালোলাগার মানুষ। আর আমি রুহানির অপরাধী।”

গোসল সেরে বাথরুম থেকে বের হয়ে মাথা মুছছিলো আহনাফ। অরুণিকা তাকে দেখেই চোখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। আহনাফ তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এভাবে খিলখিল করছো কেন?”

“তুমি জামা পরো নি কেন? তোমার তো একদমই লজ্জা নেই।”

আহনাফ ধমক দিয়ে বলল,
“এই ইঁচড়েপাকা মেয়ে, তুমি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো? সরো এখান থেকে।”

আহনাফ মুখে প্রকাশ না করলেও অরুণিকার কথায় সে লজ্জা পেয়েছে। এখন থেকে তাকে এই বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। যদিও এটা পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়। তবে অরুণিকা যেহেতু এটাকে অস্বাভাবিক ভাবছে, তার সেই ভাবনাটা মিথ্যে প্রমাণ না করাই ভালো। এভাবেই তো সে নিজেকে আলাদা করতে শিখবে, আর বুঝতে শিখবে কোনটা দৃষ্টিকটু, আর কোনটা ভালো। আহনাফ যদি তাকে বোঝায়, এটা পুরুষদের স্বাভাবিক অভ্যাস, এতে কোনো সমস্যা হয় না। তখন অন্য পুরুষের অস্বাভাবিকতাগুলোও অরুণিকার কাছে স্বাভাবিক লাগবে।

আহনাফ কাপড় পরে অরুণিকার নাক টেনে ধরে বলল,
“আমি তোমাকে দেখি নি। আমি তো জানি না তুমি এখানে বসে আছো।”

“কেন? তোমার চোখ কোথায় থাকে?”

“আমার সাথেই থাকে।”

“আমার তো মনে হয় পকেটে থাকে।”

“এই ইঁচড়েপাকা মেয়ে, তোমাকে এসব পাকা পাকা কথা কে শিখিয়েছে?”

“আমার কতো বন্ধু আছে! তুমি হিসেবও করতে পারবে না। তারা শিখেয়েছে।”

“আচ্ছা, তুমি এতো বন্ধু দিয়ে কি করবে?”

“খেলবো। বেশি বন্ধু হলে অনেক মজা করা যায়।”

“যাও এখন, ইঁচড়েপাকা।”

“আমি ইঁচড়েপাকা না। তুমি ইঁচড়েপাকা।”

“ইঁচড়েপাকা অর্থ জানো?”

“হ্যাঁ, জানি।”

“কি, দেখি বলো তো?”

“যে পাকা পাকা কথা বলে।”

“কে বলেছে তোমাকে?”

অরুণিকা হেসে বলল, “রকস্টার বলেছে।”

“ওই বদমাশ ছেলেই তোমাকে এসব কথা শিখিয়েছি, তাই না?”

“রকস্টার না, তুমি বদমাশ। তুমি ইঁচড়েপাকা। তুমি ফোনাপুর সাথে সারাদিন পাকা পাকা কথা বলো।”

আহনাফ চোখ বড় বড় করে অরুণিকার দিকে তাকালো। তারপর অরুণিকাকে ঝাঁকিয়ে বলল,
“এই মেয়ে, কি বলো এসব? ফোনাপু কে আবার?”

“ওই যে যার সাথে ফোনে কথা বলো। ওই যে মাঝে-মাঝে বাসায় এসে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে ওই মেয়েটা।”

আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি ওর সাথে পাকা পাকা কথা বলি এই কথা তোমাকে কে বলেছে?”

অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল, “বলবো না।”

“না বললে চটকানি দেব।”

“রকস্টার আর ইমন বলেছে।”

আহনাফ বিড়বিড় করে বললো,
“এই দুইটার আর তো কোনো কাজ নেই। সারাদিন আমার পেছনেই লেগে থাকবে।”

এদিকে মাওশিয়াত সন্ধ্যায় ফোনে ইভানের ছবি দেখছে। ছবি দেখে সে আনমনে হাসছে। স্কুলের চেয়ে এখন কলেজে উঠেই যেন সে ইভানের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। ইভানও এখন তাকে অনেক সময় দেয়। তবে সে জানে না এই অনুভূতির নাম কি! তার ইভানকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, তার সাথে যতো সময় কাটায়, মনে হয় কম হয়েছে। এই অনুভূতির কোনো নাম না থাকুক। তবুও সে ইভানকে এভাবেই অনুভব করতে চায়।

এদিকে রাতে ভাত খাওয়ার সময় অরুণিকা মুখে হাত দিয়ে বসে রইলো। কোনোভাবেই সে ভাত খাবে না। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তার কান্না করার কারণটাও কেউ বুঝতে পারছে না। আরাফ তার কাছে এসে মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“অরু, বলো আমাকে, কি হয়েছে তোমার?”

অরুণিকা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ইভান বলল,
“ড্রামাকুইন। ওর কিছুই হয় নি। নাটক করতেই ওর বেশি ভালো লাগে।”

তাহমিদ বিরক্ত হয়ে বলল,
“খাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে, অরুণিকা। চুপচাপ খেয়ে নাও।”

তূর্য ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“ভাই তোরা এতো অদ্ভুত কেন? ওর নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। নয়তো এভাবে তো আগে কখনো কান্না করে নি।”

আহনাফ বাটির ঢাকনা উলটে তূর্যকে বলল,
“সবজি দেখে কাঁদছে। তাকে মাছ আর সবজি দিয়েই আজ খেতে হবে।”

অরুণিকা ফুঁপিয়ে কেঁদে মাথা নাড়লো। আরাফ বলল,
“বলো অরু।”

অরুণিকা দাঁত দেখিয়ে বলল,
“দাঁতে ব্যথা করছে।”

আরাফ অরুণিকার দাঁত দেখে বলল,
“আরেহ, দাঁত পড়বে। এখানে কান্না করার কি আছে!”

ইমন খাওয়া ছেড়ে উঠে বলল,
“আমি ওর দাঁত ফেলবো।”

অরুণিকা দৌঁড়ে উঠে গেলো। ইমন বলল,
“বাচ্চা, তুমি ইমনের হাত থেকে পালাতে পারবে না। ফুটবলের মতো জোরে একটা কিক দেবো আঙ্গুল দিয়ে। তোমার দাঁত হবে বল, আমার আঙ্গুলগুলো হবে পা। দেবো একটা কিক, ওমনি টপ করে নিচে পড়ে যাবে।”

ইভান ইমনের কান টেনে দিয়ে বলল,
“তোর দাঁত ফেলার ব্যাখা শুনে ও আর এই জন্মে তোর কাছে দাঁত ফেলবে না।”

“দেখা যাক।”

অরুণিকা দৌঁড়ে আরাফের পেছনে নিজেকে আড়াল করে বলল,
“আমি দাঁত ফেলবো না। এটা আমার দাঁত। ও কেন ফেলবে?”

ইভান বলল,
“ওর সাহস নেই তোমার দাঁত ফেলার।”

কথাটি বলেই অরুণিকার কাছে এসে বলল,
“ডাক্তার একটা ওষুধ দেবে। ওটা খেলে দাঁত আবার শক্ত হয়ে যাবে।”

অরুণিকা ইভানের দিকে তাকিয়ে বললো, “সত্যি?”

“হ্যাঁ, সত্যি। দেখি তো কেমন হয়েছে?”

আরাফ বলল,
“হ্যাঁ, অরু। দেখাও তো একটু।”

অরুণিকা হাঁ করতে ইভান এক টান দিয়ে দাঁতটা ফেলে দিলো। ব্যস অরুণিকা তার সব শক্তি দিয়ে ইভানকে ইচ্ছেমতো ঘুষি মারলো। আর আরাফকে খামচি দিলো। তূর্য সেই সুযোগে অরুণিকার মুখ পরিষ্কার করিয়ে দিলো। আহনাফ তা দেখে বলল,
“এই বেটা সবসময় কোনো কাজ না করেই অরুর প্রিয় হয়ে যায়৷ পড়াবে ইভান, খাওয়াবে তাহমিদ, তার বাকি কাজ করবে আরাফ, আর তার প্রিয় রকস্টার।”

তূর্য কলার নাচিয়ে বলল,
“কেন তোমার সমস্যা কোথায়? তোমার তো ফোনাপু আছে, তাই না টুইংকেল?”

অরুণিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। আহনাফ চোখ ছোট করে তূর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here