#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-০৩||
০৬.
কাঁদায় হাঁটতে হাঁটতে ছ’বন্ধুরই পা ব্যথা হয়ে গেছে। এদিকে কাঁধে ব্যাগ তো আছেই। আর আরাফের কোল থেকে অরুণিকার নামার কোনো লক্ষণই নেই। তাই তার হাতটাও প্রচন্ড ব্যথা করছে। আরাফের বাচ্চা কোলে নিয়ে হাঁটাচলার অভ্যাস নেই। কোলে নিলেও পাঁচমিনিটের বেশি রাখেই নি। আর আজ প্রায় এক ঘন্টা ধরেই অরুণিকাকে কোলে নিয়ে আছে।
আধা ঘন্টার রাস্তা এক ঘন্টায় পার করলো তারা৷ কাঁদায় হাঁটার অভ্যাস না থাকায় এতো সময় লাগলো। রাস্তাটা এতো ছোট যে সেদিকে গাড়ি প্রবেশের কোনো সুযোগই নেই। আর তিন চাকার রিকশাও রাস্তায় পাওয়া যায় নি। বৃষ্টিতে গ্রামটি একদম জনমানবশূণ্য হয়ে গেছে। আরেকটু এগিয়ে যেতেই ইটের রাস্তা দেখা গেলো। যদিও ভাঙা ইটের রাস্তা, তবুও অন্তত সহজে হাঁটা যাবে। ইটের রাস্তা দেখেই ইমন খুশিতে গদগদ হয়ে সেদিকেই দেখিয়ে দিতে দিতে বলল,
“ভাই, এখন একটু শান্তিতে হাঁটা যাবে।”
ব্যস অমনি ইটের রাস্তায় পা দেওয়ার আগেই ইমন পা পিছলে ব্যাগসহ ধপাস করে কাঁদার উপরেই পড়ে গেলো। শব্দ শুনে অরুণিকা ইমনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। অরুণিকাকে হাসতে দেখে ইমন প্রচন্ড লজ্জা পেলো। বাচ্চা একটা মেয়ের সামনে সে এভাবে নিচে পড়ে গেলো? তার উপর রহমত চাচাও আছেন। অচেনা মানুষের সামনে এভাবে সম্মানহানি না হলেও পারতো! ইভান আর তূর্য ইমনকে টেনে উঠালো। অরুণিকার হাসির ঢেউ যেন এবার উপচে পড়লো। সে একটা আঙ্গুল ইমনের দিকে তাক করে, আরেক এক হাত দিয়ে মুখে চেপে হাসছে। হাসার চেয়ে অভিনয় করছেই বেশি। এবার ইভান অরুণিকার দিকে বড় বড় করে তাকাতেই সে আবার মুখ ঘুরিয়ে আরাফের কাঁধে মাথা ফেলে দিলো।
হাঁটতে হাঁটতে তারা চারচালা মাটির ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। আহনাফ ঘরটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। বাকীরা চুপ। তারা বুঝেছে, এটাই তাদের নতুন বাসস্থান। তবুও তূর্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আংকেল আমাদের এখানেই থাকতে হবে?”
রহমত চাচা মলিন মুখেই বললেন,
“বাবা কয়েকটা দিন কষ্ট করো না হয়৷ আমি সব ব্যবস্থা করে তোমাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবো। ওখানে তোমরা এর চেয়ে ভালো ঘরেই থাকবে।”
তাহমিদ ঘরে ঢুকতেই কাঠের চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে ঘরের ভেতরে গিয়েই পড়লো। কোনোভাবে পা গুঁটিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,
“শুরুটাই যদি এমন হয়, তাহলে এর শেষটা কেমন হবে?”
আরাফ বলল,
“শুরুটা কষ্টের হলেই তো সমাপ্তি সুন্দর হবে।”
আরাফ মুখে এ কথা বলে বাকীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করলেও সে ঘরটা দেখে মনে মনে দমেই গেছে। শুরুতেই বসার ঘরের মতোই লম্বাটে ঘর। ভেতরে একটা দরজা। দরজার ওপারে অনেক বড় একটা রুম। আর সেই রুমে একটাই জানালা। জানালাটির পাশেই আরেকটা দরজা৷ ইভান সেই দরজাটি খুলে অবাক কন্ঠে বলল,
“ওয়াশরুম কোথায়? রান্নাঘরও তো নেই।”
রহমত চাচা সেই দরজা দিয়ে বের হয়ে একপাশে দেখিয়ে বললেন,
“ওটা টয়লেট। আর পাশেরটা গোসলখানা। রান্নার চুলাটা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। মাটির চুলা তো তাই। তোমাদের তো রান্না করতে হবে না। তোমাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আমিই করে দেবো।”
রহমত চাচার কথা শুনে তারা একে-অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। রহমত সাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করে দেবেন। তিনি চলে যাওয়ার পর ইমন ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কাঁচা টয়লেট, তার উপর টিউবওয়েল চেপে বালতিতে পানি ভর্তি করা, কি একটা নতুন ঝামেলায় পড়লো সে। বালতি থেকে পানি নিয়ে কি কাঁদা পরিষ্কার করা যায়? একপাশের কাঁদা তুলতে তুলতেই বালতি খালি হয়ে গেছে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর সে মনের মতো নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে বেরিয়ে এলো।
এদিকে অরুণিকা গুঁটি গুঁটি পায়ে এ-ঘর ও-ঘর হাঁটছে। নতুন বাসায় এসে সে সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছে। চৌকাঠের এপারে দাঁড়িয়ে ওপারে লাফ দিচ্ছে। এটাই তার নতুন খেলা। অনেকক্ষণ দৌঁড়াদৌঁড়ি করে অরুণিকা আরাফের সামনে এসে বলল,
“আমি ভাত খাবো।”
অরুণিকার মুখে এমন কথা শুনে সবাই তার দিকেই তাকালো। কাল সন্ধ্যা থেকে এই বেলা পর্যন্ত মেয়েটা তো শুধু হালকা নাস্তায় খেয়েছে। তার গায়ের জামাটাও অপরিষ্কার। রক্তের দাগগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে দেওয়ার পরও এখনো লালচে-সোনালি দাগ দেখা যাচ্ছে। আহনাফ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমরা কি ভাত খাচ্ছি? আমাদের কিছু খেতে দেখেছো?”
আহনাফের কথায় অরুণিকা মুখ ভার করে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“মা’র কাছে যাবো। মাকে ফোন দাও।”
আহনাফ আরাফকে কিছু বলতে না দিয়ে অরুণিকাকে টেনে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল,
“এখানেই চুপচাপ বসে থাকো। একটা কথাও বলবে না।”
আরাফ আহনাফকে আটকাতে গেলে আহনাফ বলল,
“তুই ওকে আস্কারা দিস না। তুই ভালোভাবেই জানিস ওর আবদারের শেষ হয় না। আজ এটা, কাল ওটা। এখন থেকেই ওকে দমিয়ে না রাখলে, আমাদের মাথা খেয়ে ফেলবে। তুই পারবি চাচীর মতো ওর পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিতে? আমি পারবো?”
আরাফ নরম কন্ঠে বলল,
“ও তো অনেক ছোট। ও তো আবদার করবেই। আমরা ওর বয়সে কতো আবদার করেছি। ওর তো এখন সেই বয়সটাই চলছে। জানিস, আমাদের চেয়ে ওর বেশি কষ্ট হচ্ছে। ও তো জানেই না কি হয়েছে। চাচ্চু আর চাচীকে ছাড়া ও কখনোই একা ছিলো না। কাল সারারাত আমাকে চাচ্চুর কথা বলেছে। আমি ওকে কোনো উত্তর দিতে পারি নি। আমি চাচ্চুর শেষ কথাটা রাখতে চাই। তোর বাচ্চা পছন্দ না, তাই তোর ওকে বিরক্ত লাগছে। কিন্তু আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমিই না হয় ওর দায়িত্ব নেবো।”
আরাফের কথা শুনে আহনাফ চুপ করে রইলো। তার বাচ্চা পছন্দ না, তাই বাচ্চার আশেপাশে থাকতে চাইবে না, এটা তো সম্ভব না। এখন তো তার এই পরিবেশটাও পছন্দ না৷ তবুও তাকে এখানেই থাকতে হচ্ছে। কথায় জোর না পেয়ে আহনাফ ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ালো। এই সময়টাই সে স্কুল থেকে বাসায় ফিরতো। মা তার ক্লান্ত ছেলের ব্যাগ কাঁধ থেকে টেনে নিয়ে ঠান্ডা শরবত এগিয়ে দিতেন। কখনো কখনো বাসায় কি কি হয়েছে, সেটাই মিনমিন করে বলতে থাকতেন। আহনাফ মায়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতো না। এসেই ফোন নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তো। পকেট থেকে ফোনটা বের করে শক্ত করে চেপে ধরলো আহনাফ। মায়ের বলা কথাটা বারবার তার কানে বাজছে,
“তোকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে দেবো। সারাদিন তুই ফোন নিয়েই থাকিস। আমার কথা শুনার তো কেউই নেই। বিয়ের পর তুই ফোনই দেখিস, আমি আমার বউমার সাথেই গল্প করবো।”
আহনাফ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তূর্য তার পাশে এসে তার কাঁধে হাত রাখলো। আহনাফ কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমি মায়ের কথাগুলো কখনোই মনোযোগ দিয়ে শুনি নি। মা বলেই যেতো, আর আমি ফোনেই ব্যস্ত থাকতাম। কথা বলতে বলতেই রুম থেকে বেরিয়ে যেতো। মা বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি আবার দরজাটা বন্ধ করে দিতাম। আরাফ ঠিকই বলেছে, আমার চেয়ে বেশি অরুর কষ্ট হচ্ছে। ও তো সারাদিন চাচীর সাথেই ছিল। আমি মাকে এতো অবহেলা করার পরও আমার এতো খারাপ লাগছে। ওর তো আরো খারাপ লাগবে।”
তূর্য মলিন মুখে বলল,
“আমি মাকে বলেছিলাম গানের এলবাম বের করার সুযোগ পেলে, প্রথম গানটি তার জন্যই লিখবো। কিন্তু এখন হয়তো স্বপ্নটাই বেঁচে আছে, মা আর নেই। আমার পিকনিকে যাওয়া উচিত হয় নি। শেষ সময়ে না হয় পরিবারের সাথেই থাকতাম।”
এরপর কিছু দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। আর দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। রহমত সাহেব কয়েকটা প্যাকেট আর খাবারের বক্স নিয়ে এলেন। প্যাকেটগুলোতে ছ’জনের জন্য দুই সেট করে জামা আর প্যান্ট এনেছেন। আর অরুণিকার জন্য সাত-আটটার মতো ফ্রক আর প্যান্ট। অরুণিকা নতুন জামা পেয়ে খুব খুশি হলো। রহমত চাচা তার সাথে ষোলো-সতেরো বছরের একটি মেয়েকেও এনেছেন। মেয়েটি এই গ্রামের দোকানদারের মেয়ে। রহমত সাহেবের হাতের জিনিসপত্র এগিয়ে দিতেই সে সাথে এসেছিল। কিন্তু রহমত সাহেব তাকে অরুণিকাকে গোসল করিয়ে, ও ভাত খাইয়ে দিয়েই যেতে বললেন।
অরুণিকাও ধিনধিন করে তার সাথে চলে গেলো গোসল করতে। ব্যস কিছুক্ষণ পর অরুণিকার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠার শব্দ শুনেই তাহমিদ সেদিকে ছুটে গেলো।
গোসলখানায় কোনো দরজা নেই। চারদিকে চটের বস্তা। সেটাকেই পর্দা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাহমিদ কাছে গিয়েই শুনলো মেয়েটি অরুণিকাকে চাপা কন্ঠে গালিগালাজ করছে। অরুণিকার মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলছে,
“কাঁদলে তোর মুখ সেলাই কইরা দিমু। চুপ কর।”
তাহমিদের এবার রাগ উঠে গেলো। বাইরে থেকেই চেঁচিয়ে বলল,
“এই মেয়ে তুমি ওকে বকছো কেন এভাবে? বের হয়ে আসো বলছি।”
মেয়েটি চটের বস্তার ফাঁক দিয়ে মুখ বের করে বলল,
“বকা দিমু কেন? ও দাঁড়াইতেছেই না। বিরবির করতাছে। তাই সুন্দরভাবে দাঁড়াইতে কইলাম।”
তাহমিদ ধমকের সুরে বলল,
“যাও এখান থেকে। যাও।”
তাহমিদের চেঁচামেচি শুনে রহমত সাহেব আর বাকিরা বেরিয়ে এলো। তাহমিদের কথা শুনে রহমত চাচা মেয়েটিকে বকলেন। এরপর সে চুপচাপ গিয়ে অরুণিকাকে জামা পরিয়ে বাইরে আনলো। অরুণিকার চোখ ফুলে গেছে। সে।ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা যে তাকে মেরেছে তার চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আরাফ অরুণিকাকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ধীরে ধীরে ওর কান্না ভারী হতে লাগলো। হাত দেখিয়ে আরাফের দিকে তাকালো। হাতে চিমটে দেওয়ার দাগ আছে। রহমত সাহেব চুপ করে রইলেন। এরপর আহনাফের এক ধমকে মেয়েটি দৌঁড়ে চলে গেলো। তারপর আরাফ আর তূর্য অরুণিকাকে নিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে হাঁটলো। ওর মন শান্ত হওয়ার পর ঘরে ঢুকে খেতে বসলো।
০৭.
ঘরে একটা মাত্র বাতি, তাও আবার এর আলোটা সোনালি হলুদ। এমনিতেই আরাফের চোখে সমস্যা, এখন এই আলোতে সে কিছুই ভালোভাবে দেখছে না। এদিকে ভাতের সাথে মাছ। পেটে ক্ষুধা থাকায় তারা খেয়েই ফেললো। কিন্তু অরুণিকা সেই দশমিনিট ধরে মুখে ভাত নিয়ে বসে আছে। আরাফ প্রায় আধাঘন্টা খাওয়ালো। এরপর তূর্যের হাতে দিয়ে উঠে গেলো।বাকিটুকু অরুণিকা তূর্যের হাতেই খেলো। এদিকে তূর্যের হাত শুকিয়ে গেছে, ভাতটাও একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে। ওভেন তো দূরের কথা এই বাড়িতে চুলাও নেই। রহমত সাহেব বললেন,
“ওর জন্য আলাদা মেয়ে রাখতে হবে। তোমাদের কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়ার আগেই আমার আত্মীয়কে একটা মেয়ে খুঁজে রাখতে বলবো।”
আহনাফ বলল,
“বাচ্চা মেয়ে না। একটু বয়ষ্ক হলে ভালো হবে। আমরাও কিছুটা কম্ফোর্ট পাবো।”
রহমত সাহেব হেসে বললেন,
“আরেহ, ওটা তোমাদের চিন্তা করতে হবে না।”
রাতে ঘুমানোর সময় বাঁধলো আরেক ঝামেলা। অরুণিকার একা ঘুমানোর অভ্যাস নেই। আরাফ একটু দূরেই তাকে বিছানা করে দিলো। সেখানেই সে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। এবার আর তাকে শান্ত করার উপায় নেই। সে এখন মায়ের কাছে যাবেই যাবে। তূর্য অরুণিকাকে কোলে নিয়ে বলল,
“একটা গান শুনবে?”
অরুণিকা কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
“শুনবো না। মায়ের কাছে যাবো। মাকে আসতে বলো।”
তূর্য অরুণিকার অনুমতি ছাড়াই গান গাইতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর অরুণিকা শান্ত হয়ে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে সে একদম ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু বাকীদের ঘুম আসছে না। তবুও তারা ঘুম ভাগ করে নিলো। নয়তো দেখা যাবে অরুণিকার ঘুম ভাঙলেও তারা ঘুমের রাজ্যেই থাকবে। ভোর চারটা পর্যন্ত আরাফ, তূর্য আর ইমন ঘুমিয়েছে। চারটার পর আহনাফ, ইভান আর তাহমিদ। তবে অরুণিকার ঘুম ভেঙেছে সকাল দশটায়। তারা ভেবেছিল অরুণিকা রাতে কান্নাকাটি করে যদি বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, তখন আরেক বিপদ হবে। কিন্তু ওর ঘুম তো আরো বেশিই ভারী। ভাঙার নামই নেই নি।
তিনদিন তারা নেটওয়ার্কের বাইরে ছিল। রহমত চাচা ছাড়া আর কেউ তাদের সাথে দেখা করতে আসে নি। কারো ফোনে চার্জ নেই। এখানে ফোনে চার্জ দেওয়ার সুইচ বোর্ডও নেই। দুইদিন বৃষ্টি পড়েছিল, তাই গরমও লাগছে না। নয়তো ফ্যান না থাকার যন্ত্রণাটা নতুনভাবে যুক্ত হতো। তিনদিন পর রহমত সাহেব একটা পত্রিকা নিয়ে এলেন। পত্রিকার প্রথম পাতার শিরোনাম দেখে মুহূর্তেই তাদের মুখটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো। অরুণিকা সবাইকে পত্রিকার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও মাথা ঝুঁকিয়ে দেখলো, একপাশে তার বাবার ছবি। সে হেসে বলল,
“বাবা, দেখো বাবা। বাবা কি এখন আমাকে নিতে আসবে?”
পত্রিকার পাতায় মোটা অক্ষরে লেখা,
“মৈত্রী সোসাইটিতে গণহত্যা, মৈত্রী গ্রুপের এমডির লাশ শনাক্তকরণ, বাকীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।”
ছ’জনেরই চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। ইভান বলল,
“কে করেছে এসব?”
রহমত সাহেব বললেন,
“তোমাদের শত্রুপক্ষ মির্জা গ্রুপ আর তোমাদের থানার ওসি এর সাথে যুক্ত আছে। এটাই অনেকেই আন্দাজ করছে।”
আরাফ অবাক কন্ঠে বলল,
“আমাদের থানার ওসি? এটা কিভাবে সম্ভব? উনি তো অরুণিকার মামা হোন।”
চলবে-