অরুণিকা #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||বোনাস পর্ব-০১||

0
1160

#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||বোনাস পর্ব-০১||

৬১.
খুব সাদামাটাভাবেই একটা বছর কেটে গেলো। এই একটা বছর ব্যস্ততার মাঝেই নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিল আরাফ। এখন সে পড়াশুনা নিয়েই খুব ব্যস্ত। কলেজ থেকে টিউশন, টিউশন থেকে বাসা, এভাবেই তার দিন কাটছে। টিউশনের অর্ধেক টাকা সে সায়ন্তনীর মায়ের হাতে দিয়ে দেয়। সায়ানকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে আরাফ। তাদের ভালো বাসায়ও নিয়ে এসেছে। এখন সায়ন্তনীর মা তার ছেলেকে নিয়ে শতাব্দীদের মহল্লায় থাকেন। তারা এখন আগের তুলনায় স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন।

কাছের মানুষকে হারালে, অনেকেই পাথর হয়ে যায়৷ আর আরাফ গম্ভীর থেকে গম্ভীরতর হয়ে গেছে। সে হাসে না, কারো সাথে আড্ডাও দেয় না। সে কেমন যেন চুপসে গেছে। তবে সায়ন্তনীর মৃত্যু শুধু আরাফকে পরিবর্তন করে নি, ইমনকেই হয়তো সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন তার মধ্যে আর চঞ্চল ইমনকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আগের সেই ইমন এখন পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। এখন সে পড়াশুনায় খুবই মনোযোগী হয়েছে। পাশাপাশি ছোট একটা ব্যবসা করছে। তবে মাওশিয়াতের সাথে তার সম্পর্কটা ভালোই চলছে। মাওশিয়াত তার বাবা-মাকে ইমনের ব্যাপারে জানালে তারাও আর আপত্তি করেন নি। আর তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, মাওশিয়াতের পড়াশুনা শেষ হলেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেবেন। তবে ইমন মিস্টার মিরাজ আর মিসেস তিশাকে জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ের পর মাওশিয়াত তার সাথে বাংলাদেশেই থাকবে। তবে ছুটিতে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসবে৷ ইমনের এ প্রস্তাবে মিরাজ হোসেনের একটু আপত্তি ছিল। কারণ মাওশিয়াত তাদের একমাত্র মেয়ে। কিন্তু শেষে মেয়ের অতিরিক্ত ইচ্ছে দেখে তিনি আর কিছু বললেন না।

আর মাত্র এক বছর, এরপর ইভান আর আরাফ ছাড়া বাকী চারজনেরই পড়াশুনা শেষ হয়ে যাবে। এদিকে রহমত চাচাকে তারা জানিয়ে দিয়েছে আগামী বছর দেশে ফিরবে। ইমন এসেই মৈত্রী গ্রুপের দায়িত্ব নেবে। যদিও মৈত্রী গ্রুপটির এখন আর কোনো অস্তিত্বই নেই। শুধু কোম্পানির সেই পুরোনো ফ্যাক্টরি আর ভবনটি এখনো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এখনো জায়গাটা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়া হয় নি। আর কেউ সেই জায়গার দাবী নিয়েও আসে নি। তবে এতোবছরেও যেহেতু জায়গাগুলো অক্ষত আছে, তাহলে আরো এক বছর অক্ষত থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বিকেলে রান্নাঘর থেকে চায়ের ট্রে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো অরুণিকা। ইভান, ইমন, আহনাফ আর তূর্য সোফায় বসে আছে। তাহমিদ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“আরাফ কোথায়?”

আরাফ গোসল সেরে চুপচাপ সোফায় বসে চায়ের কাপ হাতে নিলো। সবাই চুপচাপ চায়ে মনোযোগ দিলো। কারো মুখে কোনো কথা নেই৷ এদিকে অরুণিকা একপাশে বসে আহনাফের ফোনে গেইমস খেলছে। সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে এবার আহনাফ বলল,
“আমি এই সপ্তাহে আমার শখের বাইক কিনতে যাচ্ছি।”

আহনাফ কথাটি বলেই সবার মুখের দিকে তাকালো। অরুণিকা উৎসুক কন্ঠে বলল,
“আমিই কিন্তু প্রথম তোমার বাইকে চড়বো।”

আহনাফ হেসে বলল, “আচ্ছা।”

এবার তূর্য বলল,
“আমার একটা ভালো প্ল্যান আছে। আমরা তো আগামী বছর দেশে ফিরবো। ইভান আর আরাফই হয়তো এখানে আরো এক বছর থাকবে৷ এখন এখান থেকে যাওয়ার আগে আমাদের একটা ট্যুর দেওয়া উচিত।”

আহনাফ বলল,
“তুই আমার মনের কথা বলেছিস।”

তাহমিদ বলল,
“আমার তো সমস্যা নেই। কিন্তু বাকীরা….”

সবাই আরাফের দিকে তাকালো। অরুণিকা সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বসা থেকে উঠে আরাফের পাশে এসে বসলো। আরাফ অরুণিকার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার চায়ে মনোযোগ দিলো। অরুণিকা বলল,
“আরাফ, তুমি যদি না যাও, তাহলে আমিও যাবো না। তুমি আমাকে স্কুলের পিকনিকে যেতে দাও নি। বলেছ তোমরা ঘুরতে নিয়ে যাবে। এখন তোমরাই সারাদিন বাসায় বসে থাকো।”

আরাফ বলল,
“অরু আমাকে জোর করো না। আমার পড়াশোনা আছে।”

“এতো পড়াশুনা করে কি হবে? শেষমেশ তো ডাক্তারই হবে, তাই না? তো ডাক্তার যেহেতু কাল পরশু হবেই, তাহলে এখন কেন রোগীদের মতো আচরণ করছো?”

“আমি রোগীদের মতো আচরণ করছি?”

“হ্যাঁ, তুমিই তো বলেছ একা একা থাকা একটা মানসিক রোগ।”

আরাফ চুপ করে রইলো। অরুণিকা বলল,
“এখন যাবে কি যাবে না, তা-ই বলো।”

আরাফ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “আচ্ছা, যাবো।”

করিম সিদ্দিক ছেলের সাথে বসে এই বছর কোথায় ঘুরতে যাবেন, তাই ভাবছেন। একমাস হলো তিনি দেশে ফিরেছেন। প্রতিবারের মতো এবারও তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে ডুব দিতে চাচ্ছেন। আদিল বাবাকে বলল,
“আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল দার্জিলিং যাওয়ার। এবার বরং আমরা সেখানেই যাই।”

করিম সিদ্দিক ছেলের মতামতে সম্মতি দিয়ে স্ত্রীকে ডেকে বললেন,
“কই শুনছো। এবার আমরা দার্জিলিং যাবো ভাবছি।”

মিসেস জুলেখা রুম থেকেই চেঁচিয়ে বললেন,
“তোমরা বাবা-ছেলে মিলে ঘুরাঘুরি করে টাকাগুলোই শুধু নষ্ট করবে, আর তো কোনো কাজ নেই।”

করিম সিদ্দিক এবার মেয়েকে ডেকে বললেন,
“মা, কোথায় তুমি?”

উপমা বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার স্টারের গান শুনছে। কানে হেডফোন থাকায় সে বাবার ডাক শুনতে পায় নি। আদিল বোনের রুমে এসে দরজা ধাক্কা দিতেই উপমা নড়েচড়ে বসলো। আদিল রুমে এসে চেয়ার টেনে বসলো। উপমা বলল,
“জানি এখানে কেন বসেছ। তোমরা দু’জন ঘোরার প্ল্যান করে, এখন আমাকে মায়ের কাছে পাঠাবে রাজী করানোর জন্য। শুনো, আমি কোথাও যাচ্ছি না, ভাই।”

“তুই এতো নিরামিষ কেন বল তো?”

“দেখ, ভাই। আমার ঘুরতে ভালো লাগে না। আর ওখানে নেটওয়ার্ক না থাকলে আমি আমার স্টারের কোনো আপডেটই পাবো না।”

আদিল বিরক্ত হয়ে বলল,
“মানুষ ট্যুর দেওয়ার জন্য সঙ্গী পায় না, আর তুই স্বয়ং নিজের বাবার কাছ থেকে অফার পেয়ে মানা করে দিচ্ছিস! তোর মতো মেয়েকে জেলখানায় বন্দি করে রাখলেও কোনো সমস্যা হবে না।”

“হ্যাঁ হবে না। আমাকে শুধু আমার স্টারের গান শুনতে দিলেই হবে। আমার আর কিচ্ছু লাগবে না।”

আদিল উপমাকে রাজি করাতে না পেরে একরাশ হতাশা নিয়ে বাবার কাছে ফিরে এলো।

এদিকে তূর্য আর আহনাফ অনেক চিন্তাভাবনা করে দার্জিলিং যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। সবাই তাতে মত দিতেই অরুণিকা বলল,
“আমি যদি পাহাড় থেকে পড়ে যাই?”

আহনাফ বলল,
“বেহুশের মতো হাঁটলে তো পড়বেই।”

“দেখো আমি বেহুশের মতো হাঁটি না। তোমরাই তো সব জিনিসপত্র এদিক-ওদিক ছড়িয়ে রাখো।”

“হ্যাঁ পাহাড়েও তোমার জন্য সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়েই রাখা থাকবে। সোজাসুজি রাস্তা তুমি কোথাও পাবে না। তাই তোমাকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।”

অরুণিকা বুকে হাত গুঁজে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমি ওখানে যাবো ঠিক আছে, কিন্তু আমার তো কোনো ভালো জামা নেই।”

এবার তূর্য বলল,
“আজই তোমাকে শপিংয়ে নিয়ে যাবো।”

“কিন্তু আমি বাইকে করেই শপিং করবো।”

“আচ্ছা, তাহলে আহনাফ নিয়ে যাবে।”

“না ওর সাথে যাবো না। ও অনেক কিপটে৷ দোকানদারের সামনে আমাকে বকাঝকা করে।”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“আর তুমি মার্কেটে গেলে আমার পুরো মানিব্যাগ খালি করে আসো। আর আমি দর কষাকষি করবো না? দর করি দেখেই একটার পরিবর্তে চারটা জিনিস কিনতে পারো।”

তূর্য অরুণিকাকে বলল,
“দর কষাকষি করতে হয়, টুইংকেল।”

অরুণিকা বলল, “তুমি তো করো না।”

আহনাফ বলল,
“লাখপতি তাই। একটা এলবাম বের হলেই তো ও লাখপতি হয়ে যায়। তুমি বরং লাখপতির সাথেই ঘুরো। আমার বাইকের দিকে নজর দিও না।”

অরুণিকা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আমি তো মজা করেছি। সত্যি সত্যি বলি নি তো।”

আহনাফ বাঁকা হেসে সোফায় গিয়ে বসলো। অরুণিকা আহনাফের পাশে বসে বলল,
“আমি কিন্তু প্রথম তোমার বাইকে চড়বো বলেছি। আর ছোটদের দিয়ে কিছু শুরু করলো বরকত আসে।”

আহনাফ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“তুমি ছোট?”

“অবশ্যই। আঠারো বছরের নিচে সবাই শিশু।”

অরুণিকা কথাটি বলেই দাঁত বের করে হাসি দিলো। পরের দিন আহনাফ তার বাইক বের করলো। অরুণিকা গ্যারেজে এসে বাইকটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। তার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। আহনাফ বুকে হাত গুঁজে অরুণিকার সেই হাসিটাই দেখছে। এবার সে নিজে হেলমেট পরে অরুণিকাকেও ছোট একটা হেলমেট পরিয়ে দিলো৷ তারপর বাইকে উঠে বসলো। বাইক সোজা করে চাবি ঘুরিয়ে বলল,
“উঠে বসো।”

অরুণিকা বলল,
“আমি উঠতে পারবো না।”

“এই হাতলের ভার দিয়ে উঠো।”

অরুণিকা হাতলের উপর পা দিয়ে সিটের উপর ঝুলে পড়লো। তার পা দু’টি একপাশে ঝুলছে, মাথাটা অন্য পাশে ঝুলছে। ইমন দূর থেকে অরুণিকাকে দেখে হেসে দিলো। আহনাফ পিছু ফিরে দেখলো অরুণিকা বাইকের উপর ঝুলে আছে। সে বিরক্তির সুরে বলল,
“বানরের মতো ঝুলে আছো কেন? সোজা হয়ে বসো।”

অরুণিকা আবার হাঁটু দুইটা বাইকের উপর উঠিয়ে পেছন দিক থেকে আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আহনাফ, আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। আমি পড়ে গেলে?”

ইমন তাদের কাছে এসে অরুণিকাকে ধরে সোজা ভাবে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“এভাবেই বসতে হয়।”

অরুণিকা ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমি কিভাবে বুঝবো, আমি আগে কখনো বাইকে উঠেছি, বলো?”

আহনাফ বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,
“শক্ত করে ধরে বসো।”

অরুণিকাও আহনাফের কথামতো তাকে এতো শক্ত করেই চেপে ধরেছে যে তার শার্টটাই নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“অরু, আমার শার্টের ভাঁজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি তো তোমাকে এভাবে চেপে ধরতে বলি নি।”

“তোমার এই শার্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি আমি?”

আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে অরুণিকার দিকে তাকালো। অরুণিকা বলল,
“আরেহ এভাবে চোখ দুইটা জোঁকের মতো না বাঁকিয়ে বাইক সামনে নিয়ে যাও। এখনো এক জায়গায় বসে আছো কেন?”

আহনাফ বাইক চালিয়ে গ্যারেজ থেকে বের হতেই অরুণিকা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
“রোলারকোস্টারের মতো টানছো কেন? আস্তে চালাও।”

“এটা রিক্সা না যে আস্তে চলবে।”

“এইটা কেমন বাইক! দুইপাশে হ্যান্ডেল রাখবে না? এখন আমি পড়ে গেলে?”

“আজব তো! তোমার জন্য নতুন পদ্ধতিতে কে বাইক তৈরী করবে? বাইক এমনই হয়। চড়লে চড়ো, নয়তো নামো। আমার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করো না।”

অরুণিকা আহনাফের কথায় চুপ হয়ে গেল। কিন্তু অর্ধেক যেতে না যেতেই সে চিৎকার করতে লাগলো। আহনাফ বাইক থামিয়ে বলল,
“তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে?”

অরুণিকা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
“তোমার বাইক তো রোলারকোস্টারের চেয়েও বেশি ভয়ংকর। আমি যাচ্ছি না তোমার সাথে।”

অরুণিকা বাইক থেকে নামার আগেই আহনাফ বলল,
“আচ্ছা, তুমি সামনে বসো। তখন আর ভয় পাবে না।”

আহনাফ অরুণিকাকে সামনে বসিয়ে আবার বাইক স্টার্ট দিলো। অরুণিকা যদিও এবার চুপচাপ বসে রইল, কিন্তু সে তার হাত দুইটা আহনাফের হাতের সাথে পেঁচিয়ে রেখেছে। এরপর শপিং শেষে ফেরার সময় অরুণিকা আহনাফের দিকেই ঘুরে বসলো। আহনাফ বলল,
“এভাবে বসেছো কেন, সোজা হয়ে বসো।”

অরুণিকা বলল,
“রাস্তার দিকে তাকাতে ভয় লাগছে।”

“তাহলে চোখ বন্ধ রাখো।”

“না।”

অগত্যা আহনাফ রাজি হলো। অরুণিকা যদিও নিজের সুবিধামতো বসলো। কিন্তু আহনাফের খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। অরুণিকা আহনাফের মনের অবস্থা বুঝতে পারলো না। এই বয়সে তার বোঝার কথাও না। ছোটবেলা থেকেই সে ছ’জনের কোলে কোলেই বড় হয়েছে। তাই সে বুঝতে পারছে না, সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।

আহনাফ দাঁতে দাঁতে চেপে রেখেছে। বাইকের হাতলটাও শক্ত করে ধরে রেখেছে, তার দৃষ্টি একদম সামনের দিকে। যতোটুকু সম্ভব বাইকের স্পিড বাড়িয়ে সে বাসায় পৌঁছালো। অরুণিকা নামতেই সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এদিকে অরুণিকা প্যাকেটগুলো নিয়ে ধিন ধিন করে উপরে চলে গেলো। আর আহনাফ বাইক গ্যারেজে পার্ক করিয়ে সামনের দোকান গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো৷ ইদানীং তার এই বাজে অভ্যাসটা বেড়ে যাচ্ছে। ইমন থেকেই মূলত এই অভ্যাস তার কাছে এসেছে। সায়ন্তনীর মৃত্যুর পর থেকেই মানসিক চাপ মুক্ত থাকার জন্য ইমন সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে। কারণ তার মনে হচ্ছে, একটা অসুস্থ মানুষকে সে অনেক বড় আঘাত দিয়েই এই পৃথিবী থেকে বিদায় দিয়েছে। আর ইমনের দেখাদেখি এখন আহনাফও সিগারেট খায়। দু’জনই মানসিক চাপে আছে। ইমনের মানসিক চাপের যথাযথ কারণ আছে, কারণ আরাফ সায়ন্তনীর মৃত্যুর পর থেকেই চুপচাপ হয়ে গেছে, আর তার সাথে অনেক কম কথা বলে। অন্যদিকে আহনাফ অরুণিকার কাছে আসা, দূরে যাওয়া, তূর্যের সাথে সখ্যতা, তার অভিযোগের কারণ হওয়া, মোটামুটি অরুণিকার সব বিষয়েই সে মানসিক চাপে পড়ে যায়। এখন অরুণিকা যতোই বড় হচ্ছে, আহনাফ ততোই পাগল হয়ে যাচ্ছে। তাকে হারানোর ভয় আগে থেকে আরো বেশি বেড়েছে। আর অনুভূতিগুলো দিন দিন গাঢ় হয়ে যাচ্ছে।

চলবে —

(পরের বোনাস পর্বে দার্জিলিং ট্যুর হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here