#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-০৪||
০৮.
তূর্য অন্যমনস্ক হয়ে ঘরের চৌকাঠের উপর বসে আছে। সে গ্রামের একটা দোকান থেকে ফোন চার্জ করে এনেছিলো। আর এরপর থেকেই পুরোনো ছবি দেখেই তার সময় কাটছে। তার মনোযোগ ভাঙলো অরুণিকার পায়ের শব্দে। সে লাফিয়ে লাফিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। তূর্য অরুণিকাকে তার পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“একটা গান শুনবে?”
অরুণিকা ফ্যালফ্যাল করে তূর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে যদি এখন মাথা নাড়িয়ে না বলে, তবুও তূর্য তাকে গান শুনাবে। কারণ এই কয়েক দিনে যতোবার তূর্য এই প্রশ্ন করেছে, ততবারই অরুণিকা কোনো আগ্রহ দেখায় নি। কিন্তু তূর্য ঠিকই গান গেয়েছিল। আজও এর ব্যতিক্রম হলো না। সে কন্ঠে গান ধরলো।
“দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ,
কষ্টের তীব্রতায় করেছে আমায় লালন,
হটাত কোথায় না বলে হারিয়ে গেলো
জন্মান্তরের বাধন কোথা হারালো?
.
সবাই বলে ঐ আকাশে লুকিয়ে আছে,
খুঁজে দেখো পাবে দূর নক্ষত্র মাঝে,
রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস?
কোথায় আছে কেমন আছে মা?
ভোরের তারা রাতের তারা মাকে জানিয়ে দিস..
অনেক কেঁদেছি, আর কাঁদতে পারি না..”
তূর্য পুরো গান শেষ করতে পারলো না। ফুঁপিয়ে উঠা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। অরুণিকা গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পিঁপড়েদের খেলা দেখছিলো। তূর্য অরুণিকার মনোযোগ কেঁড়ে নিয়ে বলল,
“তোমাকে একটা ছড়া শেখাবো। আমার কাছে আসো।”
অরুণিকা বাধ্য মেয়ের মতো তূর্যের কাছে এলো। তূর্য অরুণিকাকে তার পায়ের উপর বসিয়ে বলল,
“আমি যা বলবো তাই বলবে। ঠিক আছে?”
অরুণিকা মাথা নাড়লো। তূর্য মাথা দুলিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বলতে লাগলো,
“টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার..”
অরুণিকাও তূর্যের মতো মাথা নেড়ে হাত দুলিয়ে ছড়াটি তার মুখে মুখেই বলতে লাগলো। ছড়া শেষ করে তূর্য বললো,
“তোমাকে এই অরুণিকা নামটা কে দিয়েছে বলো তো!”
অরুণিকা মুখে চিন্তার চাপ এনে কিছু একটা ভেবে বলল, “সবাই!”
তূর্য হেসে বলল,
“অরুণিকা নামটা আমার ভালো লাগছে না! আমি তোমাকে আর অরুণিকা ডাকবো না। আজ থেকে তোমার নাম..”
তূর্য কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “টুইংকেল।”
অরুণিকা মুখে হাত চেপে হাসলো। তার হাসিটা তূর্যের ভালোই লাগলো। আর সাথে সাথে তার ছোট বোনের কথা মনে পড়ে গেলো। মা এভাবেই তার পাশে বসিয়ে তার ছোট বোনকে ছড়া শেখাতো।
হঠাৎ পেছন থেকে ইভান এসে বলল,
“তূর্য, তুই সকালে নাস্তা করিস নি?”
“টুইংকেলের জন্য রেখে দিয়েছি। ও তো আবার দুপুরে মোটা চালের ভাত খেতে পারবে না।”
ইভান ভ্রূ কুঁচকে বললো, “টুইংকেল?”
তূর্য ইশারায় অরুণিকাকে দেখিয়ে বলল,
“এই পিচ্ছিটাই এখন থেকে আমার টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার।”
ইভান বিরক্তির সুরে বলল,
“ওর প্রতি তোদের এতো দুর্বলতা কেন? আরাফ দিন-রাত ওর পেছনেই ব্যস্ত থাকে। এখন তুই আর ইমনও।”
“ওর জায়গায় যদি আমার বোন থাকতো, তাহলে কি তুই এভাবে বলতি? ও ভাই হারিয়েছে। আজ আমি যদি না থাকতাম, আমার বোন যদি বেঁচে থাকতো, তাহলে কি তুই এমন করতি? তুই আর আহনাফ ওকে একটু বেশিই বিরক্ত করিস।”
ইভান চুপ করে রইলো। অরুণিকার সাথে চেঁচামেচি করার আহনাফের যথেষ্ট কারণ আছে। আর তারা চাচাতো ভাই-বোন। একই পরিবারেই বেড়ে উঠেছিল, তাই তাদের মধ্যে ছোটখাটো মারামারি লেগেই থাকতো। কিন্তু ইভানের তো অরুণিকার প্রতি বিরক্ত হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ইভান শুধু শুধুই কেন মেয়েটাকে বকে তা সে নিজেও বুঝতে পারে না। আর অরুণিকাও ইভানকে প্রচন্ড ভয় পায়৷ কিছুক্ষণ আগেই ইভানকে এদিকে আসতে দেখে, সে তূর্যের হাত খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো, আর এমন অভিনয় করছে যেন মনে হবে সে ঘুমিয়ে আছে।
ইভান অরুণিকার দিকে একনজর তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, “ড্রামা কুইন।”
ইভান চলে যাওয়ার পর তূর্য বলল,
“বাঘ চলে গেছে। এখন চোখ খুলতে পারো।”
অরুণিকা এক চোখ খুলে দেখলো ইভান নেই। তারপর বলল, “বাঘ কি!”
তূর্য মোবাইলে বাঘের ছবি বের করে দেখিয়ে বলল,
“এটা হচ্ছে বাঘ।”
অরুণিকা হেসে বলল,
“রয়েল বেঙ্গল টাইগার।”
“ওপস, তুমি তো দেখছি বাঘ চেনো।”
“হ্যাঁ, চিড়িয়াতে দেখেছি। বাবা বলেছিলো ওটা টাইগার।”
চিড়িয়াখানা শব্দটা অরুণিকার মনে থাকে না। তাই সে চিড়িয়াখানার পরিবর্তে চিড়িয়া বলে।
এদিকে দুপুরে খাবারের সময় ইভান খেয়াল করলো অরুণিকা তার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। আর সকাল থেকেও তার সামনে আসে নি। অরুণিকা ইভানকে ভয় পেলেও অন্তত এমনভাবে কখনোই নিজেকে গুটিয়ে রাখে নি। কিন্তু আজ এমন ভাবে ভয় পাচ্ছে, একদম চোখের দিকেও তাকাতে পারছে না।
ইমন অরুণিকার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি ওভাবে লুকিয়ে আছো কেন? কি ব্যাপার?”
ইমনের কথা শুনে সবাই অরুণিকার দিকে তাকালো। অরুণিকা এবার কাঁদোকাঁদো মুখে আরাফের পেছনে লুকিয়ে গেলো। ইভান থতমত খেয়ে বসে আছে। আর তূর্য হাসি চাপানোর চেষ্টা করছে। ইভান তূর্যের মুখের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললো,
“তুই ওকে কি বলেছিস, বল।”
তূর্য মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“তুই নিজেই জিজ্ঞেস করে দেখ। কর, জিজ্ঞেস কর।”
তারপর তূর্য অরুণিকাকে বলল,
“টুইংকেল, কেঁদো না। তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও, নয়তো আমি কি বলেছি মনে আছে?”
অরুণিকা আরাফের পেছনে বসে ফুঁপিয়ে উঠলো। আরাফ তাকে সামনে টেনে এনে বলল,
“কি হয়েছে অরু? তুমি ভয় পাচ্ছো কেন?”
অরুণিকা ইভানকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
“তূর্য বলেছে আমি খাওয়া-দাওয়া না করলে টাইগার এসে আমাকে খেয়ে ফেলবে।”
ইভান অবাক হয়ে বলল,
“টাইগার কে?”
অরুণিকা আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওই ছেলেটা টাইগার। ওকে বলো আমাকে খেয়ে ফেললে আমি ওর পেট ছিদ্র করে বের হয়ে যাবো।”
অরুণিকার কথায় সবাই হেসে উঠলো। ইভান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“একটা চড় মেরে তোমার যে ক’টা দাঁত আছে সব ফেলে দেবো। খাও। ফাজিল মেয়ে।”
ইভানের এক ধমকে অরুণিকা ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিলো। আর এই কান্না থামাতে আরাফকে খাওয়া ছেড়েই তাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হলো।
০৯.
তাহমিদ খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন। যেটা-সেটা সে খায় না। খুব বাছাবাছা খাবার খায়। আর তার একটা গুণ হলো সে খেতে ভালোবাসে। সে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে খেতে থাকে। এমনও হয় খেতে খেতেই তার অর্ধেক সময় পার হয়ে যায়। তার আবার রান্না-বান্না করার শখও আছে। মা রান্না করার সময় সে পাশে দাঁড়িয়ে অনেক কিছুই শিখে ফেলেছিল। সে মাকে সবসময় বলতো, বড় হয়ে সে নিজের রেস্টুরেন্ট খুলবে। আর সেই রেস্টুরেন্টের প্রথম কাস্টমার হবে, তার মা৷ তাহমিদের সেই স্বপ্নটা কখনো পূরণ হবে কিনা তা সে নিজেও জানে না। কিন্তু তার আফসোস রয়ে গেলো, মা তার হাতে রান্না করা কোনো খাবারই খেতে পারলো না।
তাহমিদ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশও একদম সহ্য করতে পারে না। কিন্তু এই বাড়িতে আসার পর থেকেই তার সেই পরিবেশে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে। এদিকে তাদের থাকার জন্য রহমত চাচা কয়েকটা মাদুর এনে দিয়েছেন। তার উপর কোনো বেডশিটও নেই। বালিশগুলোও কোথা থেকে তুলে এনেছেন কে জানে? তেলচিটে দাগ দেখে তারা সব ক’টা বালিশই একপাশে স্তুপ করে রাখলো, আর তাদের কাঁধের ব্যাগগুলোই বালিশ হিসেবে ব্যবহার করতে লাগলো।
এই ঘরে মশার অভাব নেই, অথচ মশারীর অভাব ঠিকই আছে। পুরো গ্রামের কোনো দোকানেই তারা মশারী খুঁজে পায় নি। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তারা এমন একটা গ্রামে আছে যেখানে মানুষগুলো ফোনও ব্যবহার করতে জানে না। গতকালই এক ভদ্র লোক শহরে থাকা তার ছেলের সাথে কথা বলার জন্য আহনাফকে বলছিলো ফোনে নম্বর চেপে দিতে। আহনাফ অবাক হয়ে ভদ্রলোককে তার ছেলের সাথে কথা বলিয়ে দিলো।
এদিকে কয়েলের ধোঁয়ার গন্ধে আরাফের এলার্জি। তাই সে এতোদিন পাশের রুমে মশার কামড় খেয়েই ঘুমাচ্ছিল। অন্যদিকে অরুণিকা আরাফের আশেপাশেই থাকে, আর রাতে তার সাথেই ঘুমায়। তাই সারারাত হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে অরুণিকাকে মশা থেকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বে ছিলো আরাফ আর তূর্য।
সকাল হতেই রহমত সাহেব ঘরে এসে সবাইকে উঠিয়ে দিয়ে বললেন,
“তোমরা তাড়াতাড়ি উঠো। আমাদের এক্ষুণি এখান থেকে বেরুতে হবে।”
রহমত চাচার ভীত কন্ঠ শুনে ছয়জনই লাফিয়ে উঠে পড়লো। কোনোভাবে ব্যাগপত্র গুছিয়ে অরুণিকাকে নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়লো। তারা বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে অনেক দূর চলে এলো। হঠাৎ পেছন ফিরে ঘরটির দিকে তাকিয়েই থমকে গেলো ইমন। অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো, “আগুন।”
রহমত চাচা তাদের বিলের পাশে থাকা একটা সাঁকোর নিচে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
“তোমাদের শত্রুপক্ষ জেনে গেছে তোমরা বেঁচে আছো। ওরা জেনে গিয়েছে তোমরা সেদিন স্কুলের পিকনিকে গিয়েছিলে।”
আহনাফ অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ওরা কিভাবে জানলো?”
“ওদের কাছে সব তথ্য আছে।”
এবার ইভান বলল,
“কিন্তু ওরা এই ঠিকানা কিভাবে পেলো?”
রহমত চাচা চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
“আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। তোমরা ছ’জন বেঁচে আছো এটাই হয়তো জানে। অরুণিকার ব্যাপারে ওদের কোনো ধারণা নেই। তোমাদের আজই এই দেশ ছাড়তে হবে। নয়তো এরা তোমাদের খুঁজে বের করে ফেলবে।”
এরপর কলকাতাগামী বাসে উঠিয়ে দিয়ে রহমত সাহেব সবার হাতেই প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র দিয়ে দিলেন। আর বাস থেকে নামার সময় বললেন,
“তোমরা যেখানেই যাচ্ছো, নিশ্চিন্তে থাকো। তোমাদের কিছু হবে না। আর অরুণিকা তোমাদের আপন বোন নই, কেউ যদি এই সত্যটা জানে অনেক সমস্যা হবে। এই বয়সী একটা মেয়েকে অনেকেই দত্তক নিতে চাইবে। তোমরা নিজেরাই বুঝবে তোমাদের কি করা উচিত।”
আরাফ বলল,
“আমি ওকে কোথাও যেতে দেবো না। ও আমাদের সাথে থাকবে। দত্তক কেন নিতে চাইবে?”
“সমাজটা এমনই। যেখানে বাবা-মার কাছেও সন্তান ভাগাভাগি হয়ে যায়, সেখানে তোমাদের সাথে তো ওর কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। তাহলে কিভাবে পারবে ওকে নিজেদের কাছে রাখতে? তবে চিন্তা করো না। আমি এর সমাধানও করে রেখেছি। বাকীটা আল্লাহর ইচ্ছা।”
আরাফ শক্ত করে অরুণিকাকে জড়িয়ে ধরলো। অরুকে সে কোথাও যেতে দেবে না। আহনাফ আর অরুণিকা ছাড়া তার আর কোনো আত্মীয়ই নেই। অরুণিকাকে হারিয়ে ফেললে সে আরো অসহায় হয়ে পড়বে। এদিকে আহনাফ সবসময় অরুণিকার উপর ক্ষিপ্ত থাকলেও, রহমত চাচার কথা শুনে তার মুখটা একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে আলতো করে অরুণিকার ছোট হাতটি তার হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে বলল,
“অরু, তোমাকে আমরা কোথাও যেতে দেবো না। তোমাকে বড় হতে হবে। আমরাই চাচ্চুর স্বপ্ন পূরণ করব। তোমাকে পড়ালেখা করাবো। তারপর ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো। আমাদের নাগালের বাইরে তুমি যেতেই পারবে না। কারো সেই অধিকার নেই যে তোমাকে কেঁড়ে নিয়ে যাবে। এতো সহজ নাকি? কোথা থেকে অপরিচিত কেউ আসবে, আর দত্তক নিয়ে চলে যাবে?”
প্রায় ২২ ঘন্টা পর তারা কলকাতায় এসে পৌঁছালো। বাস স্টেশনে এসে থামতেই তারা নেমে পড়লো। যেই লোকটা তাদের নিতে আসবে, রহমত চাচা তার একটা ছবি পাঠিয়েছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সেই লোকটাকে খুঁজে পাওয়া গেলো। তিনি নিজের পরিচয় দিলেন, সালেহ আলী নামে। এরপর সালেহ আলী, আরো একঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে তাদের নিয়ে এলো একটা মহল্লায়। এতো মানুষের ভীড় দেখে অরুণিকার খুব আনন্দ লাগছিল। সে উৎসুক দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো। মহল্লায় ভ্যানগাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফেরিওয়ালা। অরুণিকা খেলনার ভ্যানগাড়ি দেখে বলল,
“আমি ওটা নেবো।”
আরাফ অরুণিকার কথা না শুনেই হাঁটতে লাগলো। এখন তারা কোথায় যাচ্ছে সেটাই তাদের ভাবনার বিষয়, এটা ওটা নেওয়ার মতো টাকাও তো তাদের নেই।
অনেকক্ষণ হাঁটার পর মহল্লার শেষ দিকের একটা গলিতে ঢুকে পড়লেন ভদ্রলোক। আর তাদের নিয়ে এলেন একটি সেমি-পাঁকা বাড়িতে।
ঘরে ঢুকতেই ছোট একটা বারান্দা, ভেতরে বড় একটা রুম। তার সাথে লাগানো একটা মাত্র ওয়াশরুম, আর ঘরের মধ্যেই রান্নাঘর। যদিও ঘর পরিষ্কার থাকায় কিছুটা স্বস্তি লাগছে। তবুও এতোটুকু একটা ঘরে ছ’জন একসাথে কিভাবে থাকবে?
সালেহ আলী ঘরের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমি পাশের ঘরেই আমার বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকি। এখন তোমরা বিশ্রাম করো। আমি পরে আসবো।”
সালেহ আলী চলে যেতেই তারা ঘরটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। ঘরে একটি মাত্র ফ্যান। তবে দুইটা লাইটের ব্যবস্থা আছে। একপাশে টেবিল ফ্যানও রাখা আছে। দুইপাশে দু’টো খাট বিছানো আছে। আর তাতে পরিচ্ছন্ন কাঁথা-বালিশও রাখা আছে। একপাশের খাটের সাথে লাগানো একটা টেবিল। সেই টেবিলে রান্নার জিনিসপত্র সাজানো আছে। অন্য পাশে গ্যাসের চুলা। এদিকে ওয়াশরুমেও সবকিছু ঠিকঠাকই আছে। অন্তত আগের ঘরটি দেখে এটা একটু উপযুক্ত। এবার ছ’জনই ব্যাগপত্র মেঝেতে ফেলে দু’টো খাটেই তিনজন করে গাদাগাদি করে শুইয়ে পড়লো। অরুণিকা তাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি কোথায় ঘুমাবো?”
ইভান বাইরে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
“সামনে একটা বারান্দা আছে। তুমি ওখানেই ঘুমাবে।”
অরুণিকা ইভানের কথা শুনে ধীর পায়ে সামনে গিয়ে উঁকি মেরে বারান্দা দেখে এলো। তারপর এক দৌঁড়ে ঘরে ঢুকে বলল,
“ওখানে অনেক অন্ধকার। আমার ভয় লাগবে।”
আহনাফ বিছানা ছেড়ে উঠে বলল,
“আমি আর আরাফ নিচে থাকতে পারবো।”
ইমন হেসে বলল,
“বাহ! কি মায়া!”
ইমন, ইভান আর তাহমিদকে বিছানা থেকে উঠিয়ে অরুণিকাকে সেই খাটে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা পুরাটাই তোমার দখলে। আর পাশেরটা আমরা ভাগাভাগি করে নেবো।”
অরুণিকা খুশি হয়ে হাত-পা মেলে বিছানায় শুয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
“আমি মাঝখানে থাকবো। আমার এই পাশে বাবা, আর এই পাশে মা থাকবে।”
অরুণিকার এমন কথায় মুহূর্তেই পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেলো।
চলবে-
(💙অরুণিকার একটা আদুরে নাম পছন্দ করতে বলেছিলাম। অনেকেই কমেন্ট করেছিল। একজন টুইংকেল নামটা বললো। তাই সেই নামটাই নিয়ে নিলাম)