#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৩৭||
৬৪.
রাতে কটেজের বাইরে ফায়ারপ্লেস তৈরি করে সবাই গোল হয়ে বসলো। তূর্য তার গিটার নিয়ে এসে বলল,
“চল, একটা গেইমস খেলি।”
অরুণিকা উৎসাহ নিয়ে বলল,
“আমিও খেলবো।”
“আচ্ছা। কিন্তু টুইংকেল, গেইমসটা তোমার জন্য একটু কঠিন হবে।”
আরাফ বলল,
“সমস্যা নেই। ও যতোটুকু পারবে আর কি।”
“আচ্ছা, এখন খেলাটা হচ্ছে, আমি যেকোনো পাঁচটা গানের যেকোনো অংশের সুর গিটারে তুলবো। সুরগুলো কিন্তু মনে রাখতে হবে। তারপর সেই পাঁচটা গান এক একজনকে দেওয়া হবে। যার ভাগ্যে যেই গান পড়বে। আর এরপর তাকে জিজ্ঞেস করবো সেটা কোন গান। যারা পারবে না, তাদের আমার ইচ্ছেমতো একটা প্রশ্ন করবো। উত্তর দিতে না চাইলে এক চামচ লবণ খেতে হবে।”
ইমন অবাক হয়ে বলল,
“এক চামচ লবণ! এটা কেমন আজগুবি শর্ত!”
“এই শর্ত মানতে না চাইলে, সত্য কথা বলতে হবে। সঠিক উত্তর দিলেই তো ঝামেলা শেষ।”
ইভান বলল,
“কিন্তু লবণ কোথায় পাবি?”
তূর্য তার পাশে থাকা একটা পলিথিন দেখিয়ে বলল,
“নিয়ে এসেছি।”
এরপর খেলা শুরু হলো। তূর্য গিটারে সুর তোলার আগে বলল,
“তাহমিদ সাবধান! না পারলে সব তথ্য ফাঁস হতে পারে।”
যদিও তূর্য এই কথা তাহমিদকেই বললো, কিন্তু তার মনোযোগ আহনাফের দিকে। সে মনে মনে ভাবছে,
“আজ তো আমি কিছু একটা করবোই, আহনাফ। তোর মাথায় কি চলছে, এটা বের করার জন্যই তো এই খেলার আয়োজন করেছি।”
মোট ছ’টা গানের ছন্দ তুলে তূর্য বলল,
“আরাফ দ্বিতীয়টা বল।”
খুবই পরিচিত গান হওয়ায় আরাফ সহজে উত্তর দিয়ে দিলো। ইভান আর ইমনও একইভাবে পেরে গেলো। এবার তাহমিদকে দিলে সে কোনোভাবেই গানটা মনে করতে পারছিলো না। তাই এবার তূর্য তাহমিদকে জিজ্ঞেস করলো,
“এখন যেহেতু পারিস নি, তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে তুই বাধ্য।”
তাহমিদ বলল,
“আচ্ছা, ঠিক আছে। দেবো।”
“প্রশ্ন হচ্ছে, তুই কি শতাব্দীকে ভালোবাসিস?”
তাহমিদ হালকা হেসে বলল,
“আমি জানতাম তোর মাথায় এমন উদ্ভট প্রশ্নই আসবে। তাই আমি প্রস্তুত ছিলাম। আর আমার উত্তর হচ্ছে, না। আমি ওকে ভালোবাসি না। ভালোবাসা এতো সহজ না যে হুট করে হয়ে যাবে।”
“তাহলে কি পছন্দ করিস?”
“একটাই প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল, যার উত্তর দেওয়া শেষ।”
“ঠিক আছে। এখন শতাব্দীকে এই কথা জানানো উচিত।”
তাহমিদ খানিকটা চমকে উঠলো। পরক্ষণেই বলল,
“আমার সমস্যা নেই।”
এবার অরুণিকা আর আহনাফ দু’জনই তূর্যের দেওয়া গানের সুরটা ধরতে পারলো না। যদিও তূর্য আহনাফকে ইচ্ছে করেই কঠিন সুরটাই ধরিয়ে দিয়েছিল, যেই গান আহনাফ কখনোই শুনে নি। এদিকে অরুণিকা না পারায় তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, সে ছ’জনের মধ্যে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। অরুণিকার উত্তর ছিল আরাফ। আর এরপর তূর্য আহনাফকে প্রশ্ন করল,
“ছোটবেলায় টুইংকেলকে তুই সহ্যই করতে পারতি না, এখন ওর মনোযোগ খোঁজার কারণ কি?”
আহনাফ আর আরাফ দু’জনই এই প্রশ্নে চমকে উঠলো। ইভান তূর্যের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। কারণ অরুণিকাও সেখানে উপস্থিত আছে। কিন্তু তূর্য তাতে ভ্রূক্ষেপ করলো না। এদিকে ইমন আর তাহমিদও আহনাফের উত্তর শুনার জন্য কৌতূহলি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। আহনাফ এবার অরুণিকার দিকে তাকালো। অরুণিকাও তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে হালকা কাশি দিয়ে বলল,
“ও যখন ছোট ছিল, তখন খুব দুষ্টু ছিল। এখন সব কথা শুনে।”
তূর্য হেসে বলল,
“আমার প্রশ্নের উত্তর তো এমন হওয়ার কথা না।”
“তাহলে তোর প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমি জানি না।”
“তাহলে এক চামচ লবণ খেতে পারবি?”
“হুম পারবো।”
তূর্য এবার অরুণিকাকে বলল,
“টুইংকেল, তুমি কিন্তু নিজ হাতে খাইয়ে দেবে।”
অরুণিকা মাথা নেড়ে এক চামচ লবণ আহনাফের সামনে নিয়ে গেলো। আরাফ রাগী কন্ঠে বললো,
“তূর্য, মজার ছলে বাড়াবাড়ি করবি না কিন্তু। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
তূর্য বলল,
“এক চামচ লবণ খেলে কিছু হবে না।”
আহনাফ বলল, “সমস্যা নেই। আমি খেতে পারবো।”
অরুণিকা একবার আরাফের দিকে তাকালো। আরাফ তাকে ইশারায় না করলো। অরুণিকা এবার আহনাফের মুখের কাছে চামচ নিয়ে সেটি হালকা বাঁকিয়ে অর্ধেক লবণ আহনাফের শার্টের উপর ফেলে দিলো। চামচে অল্প একটু লবণ ছিল সেটাই আহনাফ বুঝে উঠার আগেই তার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। অরুণিকা আহনাফকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে বিধায়, বিষয়টা তূর্য খেয়াল করলো না। শুধু আহনাফই বুঝলো, তাও ঘটনা ঘটার সেকেন্ড খানিক পর। পরে সে বিষয়টা পুরোপুরি ঢাকার জন্য দাঁড়িয়ে গেল, যাতে সব লবণ মাটিতে পড়ে যায়। আর এমন ভান করলো, যা দেখে মনে হবে, লবণ খেয়ে তার অনেক খারাপ লাগছে। এবার আহনাফ সোজা তার রুমে চলে গেলো। অরুণিকাও পিছু পিছু গেলো। গিয়ে দেখলো আহনাফ একপাশে বসে আছে। অরুণিকা তার পাশে বসে বলল,
“দেখেছো, আমি তোমাকে কেমন লবণ থেরাপি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছি।”
আহনাফ অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ দেখলাম।”
“এখন আমাকে কি দেবে?”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“তোমার এতো ঘুষ কেন লাগে?”
“এটাই তো আমার আয়ের একমাত্র পথ। তোমরা বাইরে গিয়ে কাজ করো। আমাকে তো যেতে দাও না। তাহলে আমি কিভাবে টাকা পাবো? এই ছোটখাটো কাজ বা সাহায্যের পরিবর্তে আমাকে টাকা দেবে। তোমারও কাজ হয়ে যাবে, আমিও কিছু আয় করলাম।”
আহনাফ অরুণিকার কথা শুনে হালকা হেসে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“যা ইচ্ছে নাও।”
অরুণিকা পুরো মানিব্যাগ খালি করে দিয়ে বলল,
“থাক, সবই নিয়ে নিলাম। ইচ্ছেমতো নিতে গেলে, তোমার ওই বড় আলমারিতে যেই টাকার ব্যাগ আছে, ওইটাও খালি হয়ে যাবে।”
আহনাফ তার দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকাতেই সে উঠে চলে গেলো।
সকালে তূর্য রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে একা একা হাঁটতে লাগলো। কিছুদূর যাওয়ার পর সে দেখলো একটা বেঞ্চের উপর গতকালকের সেই মেয়েটি বসে আছে। তূর্য এই মুহূর্তে সেই মেয়েটিকেই পটানোর উদ্দেশ্যে সামনে এগুচ্ছে।
তূর্যের একটা অভ্যাস হলো, মেয়ে পটানো। সে সব মেয়েদের সাথেই এমন ভাবে কথা বলবে, যাতে মেয়েরা তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু সে কারো ব্যাপারেই ওতোটা গম্ভীর হয় না। কারণ প্রেমে ফেলা আর প্রেম করা দুইটা তার কাছে দুই মেরুর মুহূর্ত। প্রেমে ফেলা তার দৃষ্টিতে মানসিক আনন্দ, প্রেম করা তার দৃষ্টিতে মানসিক অশান্তি। মূলত তাকে প্রেমে অনাগ্রহী করে তুলেছে তার বন্ধুদের বিগত সময়ের মর্মান্তিক সম্পর্কগুলো।
তূর্য এবার মেয়েটির পাশে বসে পড়ল। মেয়েটি কান থেকে হেডফোন খুলে তূর্যের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। উপমা ভালোভাবে তূর্যকে দেখে বললো,
“আপনি তো গতকালকের সেই ফাজিল ছেলে!”
তূর্য কোনো উত্তর না দিয়ে উপমার দিকে তাকালো। হঠাৎ উপমা মনে মনে ভাবলো,
“আরেহ, এটা তো ইন্ডিয়া, এই ছেলে হয়তো আমার বাংলা ভাষা বুঝছে না।”
এবার উপমা ভাঙা ভাঙা কন্ঠে ইশারায় ছেলেটিকে বলল,
“মেনে কাল নিচে পারা। তুম হাসা, হোয়াই?”
উপমার কথা শুনে তূর্য হেসে বলল,
“আমি বাংলা বুঝি। বাই দা ওয়ে, আপনার হিন্দি শুদ্ধ হয় নি।”
উপমা একটু লজ্জা পেয়ে বলল,
“আমি হিন্দি পারি না। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।”
“আমিও পারি না। যদিও এখানেই থাকি।”
উপমা উঠে চলে আসতে যাবে তখনই তূর্য বলল,
“আমি চাঁদগাঁও থাকতাম। আপনি চট্টগ্রামের কোথায় থাকেন?”
উপমা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
“আমি চট্টগ্রাম থাকি, ওইটা আপনি কিভাবে বুঝেছেন?”
তূর্য হেসে বলল,
“আপনার ভাষা শুনে। আপন ভাষা শুনলে কি বুঝবো না নাকি?”
উপমা বুকে হাত গুঁজে বলল,
“আমার বাসা দামপাড়া।”
“ওহ ওইদিকে আমি অনেকবার গিয়েছিলাম।”
উপমা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই তূর্য উঠে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“উঠে যাচ্ছেন কেন? বসুন।”
“না, আমি ছেলেদের সাথে কথা বলি না।”
উপমার কথা শুনে তূর্য মনে মনে হাসলো। এবার সে বলল,
“আমিও মেয়েদের সাথে কথা বলি না। কিন্তু আপনি চট্টগ্রামের এটা শোনার পর থেকে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। আসলে গত আট বছর ধরে আমি কলকাতায় থাকি। দেশের কাউকে আজ এতো বছর পর দেখেছি।”
উপমা তূর্যের কথা শুনে কিছুটা আগ্রহী হলো। বলল,
“এতো বছর এখানে কি করছেন?”
“পড়াশুনা করতে এসেছি।”
“ওহ আচ্ছা।”
তূর্য মলিন মুখে বললো,
“আসলে আমার বাবা-মা মারা গেছে। পরিবারের আর কেউ নেই৷ পরিচিত মানুষ এই দেশে ছিল, তাই এখানে চলে এসেছি। আমার অনেক ইচ্ছে করে দেশের কারো সাথে বসে গল্প করতে।”
উপমা তূর্যের কথা শুনে আবার সেই বেঞ্চে গিয়ে বসলো। তূর্য মনে মনে হেসে বলল,
“মিশন ওয়ান কমপ্লিট৷ এবার মিশন টু, এই মেয়ের সাথে ভাব জমানো।”
তূর্যও এবার উপমার পাশে বসল। উপমা জিজ্ঞেস করলো,
“কি নাম আপনার?”
“আমি তূর্য আহমেদ। আপনি?”
“আমার নাম উপমা।”
“বাহ! কি সুন্দর নাম।”
উপমা মুচকি হাসলো। তূর্য হেডফোন দেখিয়ে বলল,
“কি শুনছিলেন এতোক্ষণ?”
“রিকির গান শুনছিলাম।”
তূর্য উপমার কথা শুনে চমকে উঠলো। বলল,
“কার গান?”
“রিকি দা স্টার।”
তূর্য হালকা কাশি দিয়ে বলল,
“আপনি ওর গান শুনেন?”
উপমা উৎসাহিত কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, আমি ওর ভক্ত। আমার রিকিকে অনেক ভালো লাগে। ও এখানে এসেছে দেখেই আমিও এই জায়গায় এসেছি।”
তূর্য তার শার্টের ভেতরে থাকা টি-শার্টটা ঢেকে দেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে শার্টের বোতম বন্ধ করতে লাগলো। কারণ সেই টি-শার্টটা পরে সে গতকাল রাতেই একটা ছবি তুলে ছেড়েছে। উপমা ফোন বের করে তূর্যের সামনেই সেই ছবিটা বের করে দেখালো আর বলল,
“দেখুন, মাথায় ক্যাপ পরাতে মুখটা দেখা যাচ্ছে না। নয়তো আমি ওকে ঠিকই খুঁজে নিতাম।”
তূর্য বলল,
“আপনি না দেখেই প্রেম করছেন? বাহ, বেশ তো।”
উপমা ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“প্রেম করছি না, ভালোবাসি ওকে।”
তূর্য গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“সামনে পেলে কি করবেন?”
উপমা অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“কিছুই করতাম না। শুধু তাকিয়ে থাকতাম।”
তূর্য মনে মনে হাসলো। এবার সে উপমাকে রাগানোর জন্য বলল,
“এভাবে একটা অচেনা ছেলের প্রতি দুর্বলতা রাখা ঠিক নয়। ছেলেটা তো ফ্রডও হতে পারে। তার চেয়ে দেখার পর বন্ধুত্ব করা ভালো। যেমন আমাদের মধ্যে হয়েছে।”
উপমা দাঁড়িয়ে বলল,
“কি বললেন, আপনি? আমাদের বন্ধুত্ব কখন হলো? আর আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! আপনি আমার সামনে রিকিকে ফ্রড বলছেন? ফ্রড হচ্ছেন আপনি।”
তূর্যও দাঁড়িয়ে গেলো। বলল,
“আরেহ, আরেহ তুমি ভুল ভাবছো আমাকে?”
উপমা চেঁচিয়ে বললো,
“আপনি থেকে তুমি? বাহ! আপনাদের মতো ছেলেদের আমি ভালোভাবেই চিনি। সবই মেয়ে পটানোর পরিকল্পনা। দেখুন, আমি আপনার কথায় পটবো না। আমার অন্য কেউ আছে।”
তূর্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “রিকি?”
উপমা জোর গলায় বলল, “হ্যাঁ।”
তূর্য হেসে বলল,
“ওটা তো সম্ভব না। রিকি তো সেলেব্রিটি। ও তো আপনার সাথে কথাও বলার সময় পাবে না। তবে আমি, মানে আমার মতো সাধারণ ছেলেদের হাতে অনেক সময় আছে। আপনি বরং কোনো সাধারণ ছেলের সাথেই…..”
উপমার চোখ দু’টো চিকচিক করে উঠলো। তূর্য সাথে সাথেই তার কথা থামিয়ে দিলো। উপমা অন্যদিকে তাকাতেই তূর্য বলল,
“আই এম সরি। আমি হয়তো ভুল কিছু বলে ফেলেছি।”
উপমা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
“রিকির সময় নাও থাকতে পারে, ও যেহেতু সেলেব্রিটি। কিন্তু আমার যথেষ্ট সময় আছে।”
কথাটি বলেই উপমা চলে গেলো। উপমা পুরো রাস্তা কেঁদেছে। মনে মনে ভাবছে,
“কি দরকার ছিল একটা অপরিচিত ছেলের সাথে এতো কিছু শেয়ার করার? ছেলেটা এখন দিলো তো অপমান করে?”
এদিকে তূর্য মনে মনে বলল,
“রিকি দা স্টার, তুই তো আমার চেয়ে সেরা, ভাই। আমি তো মেয়ে পটানোর জন্য ভাষা খুঁজে পাই না। আর তুই ভাষা ছাড়া, কথা ছাড়াই মেয়েদের পটিয়ে ফেলেছিস।”
এদিকে শতাব্দী আয়নার সামনে বসে বসে চুল বাঁধছিল। তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে সে পেছন ফিরে দেখলো ডুমুর। ডুমুরকে দেখে সে মুচকি হেসে বলল,
“আরেহ, ডুমু এতো সকাল সকাল! আয় না।”
ডুমুর গম্ভীরমুখে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। শতাব্দী কিছুটা অবাক হলো। সে বলল,
“কি হলো, ডুমু? দরজা আটকালি কেন?”
ডুমুর চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“দিদি একটা ঘটনা ঘটে গেছে।”
“কি ঘটনা?”
“দিদি, বিষয়টা আমাদের নিয়ে নয়, আরাফ ভাইয়াদের নিয়ে।”
শতাব্দী ডুমুরকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে বলল,
“কি হয়েছে বল!”
“আরাফ ভাইয়াদের সাথে ধোঁকা হয়েছে।”
“মানে?”
“বাবা কাল রাত্তিরে রহমত চাচার সাথে কথা বলছিল। মা তখন সব শুনে ফেলেছে। তাই সকাল থেকেই বাবা-মায়ের ঝগড়া। মা বলছে চাচাজান ভাইয়াদের সাথে প্রতারণা করছে। বাবা বলছে, চাচাজান ভুল করছে না। এটাই করা উচিত। কি বিষয় নিয়ে এতো কথা হচ্ছে ওটা আমি বুঝতে পারি নি। কিন্তু রহমত চাচা ভাইয়াদের ধোঁকা দিচ্ছে, এটা আমি ভালোভাবেই শুনেছি।”
“রহমত চাচা তো উনিই, যিনি ওদের এখানে পাঠিয়েছিলেন!”
“হ্যাঁ গো দিদি৷ আরো একটা কথা শুনলে অবাক হবে তুমি। ভাইয়ারা আমাদের মতো না। ওই দেশে ওদের অনেক টাকা আছে। অনেক বড় ঘরের ছেলে। শুনেছি, ওদের বাবা-মাকে খুন করা হয়েছিল। ওরা নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য এখানে এসেছে। পড়াশুনা শেষে ওরা দেশে ফিরে ওদের বাবা-মার খুনীদের শেষ করে ফেলবে। মানে ভাইয়ারাও মানুষ মারবে।”
শতাব্দী আঁতকে উঠলো। ডুমুর আবার বলল,
“দিদি, অরুণিকার জন্যই চিন্তা হচ্ছে। বাচ্চাটা কি সব ঝামেলায় পড়ে গেছে!”
শতাব্দী বলল,
“আমি কিছুটা জানতাম। কিন্তু ওরা যে এখানে ওদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য এসেছে এটা জানতাম না। ভেবেছি, সালেহ চাচা ওদের পরিচিত।”
“আমিও তো এটাই জানতাম গো দিদি। আমি ভেবেছি, ওরা আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।”
“এখন ওদের বাবা-মাকে কি রহমত চাচাই মেরেছিলেন?”
“না, দিদি। কি বলছো এসব? রহমত চাচা তো এমন মানুষ না। আমি চাচাকে কতোবার দেখেছি। উনি মানুষ খুন করার মতো খারাপ নন। কিন্তু কিছু একটা তো করেছেন, যেটা ভুল।”
চলবে—