#অরুণিকা
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৬৭||
১১০.
কেবিনের বাইরে আরাফ, তূর্য আর তাহমিদ দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার বের হতেই আরাফ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এখন কি অবস্থা?”
“চিন্তার কোনো কারণ নেই। গুলি হাতেই লেগেছিল। আমরা বের করে নিয়েছি। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।”
এদিকে নিয়াজ হোসেন কাঁপা শরীর নিয়ে এগিয়ে আসতেই আরাফের সামনে এসে হোঁচট খেলেন। আরাফ আর তাহমিদ দু’জনই তাকে ধরে বেঞ্চে বসালো। নিয়াজ হোসেন চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
“রিয়াজের কি অবস্থা?”
তাহমিদ আশ্বস্ত করে বলল,
“এই মাত্র ডাক্তার বেরিয়ে বলল, তিনি এখন আশংকা মুক্ত।”
নিয়াজ হোসেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন ডাক্তার আরাফের কাছে এসে বলল,
“আরাফ, আহনাফের ক্ষতের জায়গায় ড্রেসিং করিয়ে দিয়েছি। ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে। যদিও ক্ষত ওতোটা গভীর ছিল না, নয়তো অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।”
কিছুক্ষণ পর অরুণিকা হাসপাতালে এসে পৌঁছালো। আরাফকে দেখে সে দৌঁড়ে এসে বলল,
“ইমন মৌ ভাবীকে ফোন করে বলল আহনাফকে এই হাসপাতালে এনেছে! কেন এনেছে এখানে? কি হয়েছে ওর?”
আরাফ অরুণিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“চিন্তার কোনো কারণ নেই। পিঠে ছুরির আঘাত লেগেছিল। এখন ও ঠিক আছে।”
“তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ওকে দেখতে যাও নি?”
“দেখে এসেছি। ও ভালোই আছে। ওর একা থাকতে ইচ্ছে করছিল। আমাদের চলে যেতে বললো, তাই বেরিয়ে এলাম।”
“আমি ভেতরে যাই? ওকে দেখে আসি?”
“হুম, যাও।”
অরুণিকা ভেতরে ঢুকেই আহনাফকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আহনাফ অরুণিকার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরুণিকা আহনাফের পাশে বসে বলল,
“তুমি কাউকে না বলে ওই লোকটাকে ধরতে গেলে কেন? এখন তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো?”
আহনাফ ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“কিছু তো আর হয় নি। বেঁচেই আছি।”
অরুণিকা আহনাফের হাত ধরে বলল,
“আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম, জানো?”
অরুণিকার চোখে অশ্রু দেখে আহনাফ বলল,
“কাঁদছো কেন?”
“কাঁদবো না কেন? অদ্ভুত তো! তোমার কিছু হয়ে গেলে?”
অরুণিকা ভেংচি কেটে ব্যঙ্গ করে বলল,
“কাঁদছো কেন! এটা আবার কেমন অদ্ভুত প্রশ্ন?”
আহনাফ বলল,
“যাও এসব ফোঁপাফুপি বন্ধ করো। আমি বেঁচে আছি।”
অরুণিকা মলিন মুখে কিছুক্ষণ আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহনাফ মুখ ঘুরিয়ে নিতেই অরুণিকা অভিমানী মুখে চিমটে কেটে বলল,
“তুমি সব সময় আমার সাথে টেরামি করো। তুমি একদম ভালো না। আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি, আর তুমি ভাব দেখাচ্ছো?”
আহনাফ ভ্রূ কুঁচকে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পটর পটর বন্ধ করো তো, ভালো লাগছে না।”
অরুণিকা আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। আর আহনাফ আনমনে হাসলো। অরুণিকা যে অভিমান করেছে তা আহনাফ ভালোই বুঝতে পেরেছে। তবুও সে অরুণিকার অভিমান ভাঙাবে না। কারণ সে চায় অরুণিকা তাকে গুরুত্ব দিক। তার কথা না বলা, অভিমান করে থাকাটা বুঝে যাতে আহনাফকে তার প্রাপ্য স্থানটা দিতে শিখুক।
অরুণিকা বের হওয়ার পর আরাফ, তূর্য আর তাহমিদ আহনাফের কাছে গেলো। তূর্য বলল,
“এখন কেমন লাগছে?”
আহনাফ মুচকি হেসে বলল,
“ভালো লাগছে। আচ্ছা, তোরা কিভাবে জানলি আমি ওখানে গিয়েছি?”
“টুইংকেল বলেছে।”
“অরু কিভাবে জানলো? আমি তো ওকে বলে বের হই নি।”
“জানি না। এতো কিছু জিজ্ঞেস করার সময় পাই নি। ও বললো, আর আমরা তাড়াতাড়ি চলে গেলাম।”
“রিয়াজুর রহমানের কি অবস্থা?”
“এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তবে আউট অব ডেঞ্জার।”
“রুকন এখন কোথায়?”
আরাফ বলল, “মারা গেছে।”
আহনাফ অবাক কন্ঠে বললো,
“মানে? কিভাবে?”
“কয়েকটা গুলি একসাথেই লেগেছিল। অরুণিকা বলার সাথে সাথেই আমরা গাড়ি নিয়ে ওখানে চলে গেলাম। তারপর গিয়ে দেখলাম মুখোশধারী কিছু লোক, বাইরে থাকা দারোয়ানদের উপর হামলা করছে। তাদের মধ্যেই আহত একজন জানালো, একটা লোক কোথা থেকে এসে ভেতরে ঢুকে তাদের উপর হামলা করেছে। এদের মধ্যে কয়েক জনকে মেরে আমরা ভেতরে গেলাম। আর ইভান ভেতরে ঢোকার আগেই টিয়ারগ্যাস ছাড়লো। আমরা আসলে বুঝতেই পারছিলাম না কারা রিয়াজুর রহমানের লোক, আর কারা হামলাকারীর পক্ষে। টিয়ার গ্যাস ছাড়ার পর দেখলাম ভেতরে তুই আর রিয়াজুর রহমান ছাড়া কেউ নেই। লোকটা তোকে আঘাত করে, রিয়াজুর রহমানের উপর হামলা করতে গেলো। আমরা লোকটাকে বিভ্রান্ত করার জন্যই গুলি ছুঁড়তে লাগলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে চেয়ারে বাঁধা রুকনকে খেয়াল করি নি। ও আমাদের ছোঁড়া গুলিতেই মারা গেছে।”
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এতোদিন পর খুনিকে ধরার একটা সুযোগ পেয়েছি, আর তোরা বোকার মতো গুলি চালিয়েই সেই সাক্ষীটাকেই মেরে ফেলেছিস?”
তাহমিদ বলল,
“রিল্যাক্স। ভুল হয়ে গেছে। কি আর করার? কেউ একজন তোর উপর ছুরি চালিয়েছিল। রিয়াজুর রহমানকে মারতে চাইছিল। আমরা শুধু তাকে ভয় লাগাতেই গিয়েছিলাম। এক কোণায় যে চেয়ারে ওই রুকনটাকে বেঁধে রেখেছিস ওটা আমরা কিভাবে বুঝবো, বল? আমরা কি আগে থেকে কিছু জানি?”
তূর্য বলল,
“আর যাই বলিস। ভালোই হয়েছে মরেছে। ওর মতো বিশ্বাসঘাতকের জন্যই আমরা আমাদের পুরো পরিবারকে হারিয়েছি। মরে জাহান্নামে যাক, আমাদের কি? আমরা তো আর ওকে দেখেশুনে মারি নি। আর মুরশিদ মামা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। ওকে এতোক্ষণে দাফনও দিয়ে দিয়েছে হয়তো।”
আরাফ বলল,
“আর শুনতে চাইবি না আমরা কাকে ধরেছি?”
আহনাফ কপাল ভাঁজ করে বলল, “কাকে?”
“রহমতুল্লাহ ধরা পরেছে। ইভান আর ইমন উনাকে নিয়ে থানায় গেছে। তোদের উপর উনিই হামলা করেছিল।”
তূর্য বলল,
“দেখিস, এবার কেমন থরথর করে সব বলে দেয়।”
এদিকে তূর্য লিফটে উঠতেই উপমাকে দেখে থমকে গেলো। আহনাফ আর অরুণিকার আক্দের পরই উপমা আবার বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিল। এরপর আর তাদের দেখা হয় নি। আর আজ উপমাকে হাসপাতালে দেখে তূর্য ভয় পেয়ে গেলো। সে উপমার কাছে এসে ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“তুমি এখানে কি করছো? বাবা, মা ওরা ঠিক আছেন তো?”
উপমা তূর্যকে ভালোভাবে দেখে বলল,
“হ্যাঁ, ভালো আছেন। আমি আমার বসকে দেখতে এসেছি।”
“বসকে মানে?”
“রিয়াজুর রহমানকে। শুনলাম উনার উপর হামলা হয়েছে।”
তূর্য মাথা নাড়লো। উপমা আবার বলল,
“এও শুনলাম, এবারও আপনাদের কাজে সাহায্য করতে গিয়েই আমার ভাইয়ের মতো তিনিও হামলার শিকার হয়েছেন। মোটামুটি আপনাদের আশেপাশে থাকলেই মৃত্যু নিশ্চিত, এর কোনো সন্দেহ নেই। তবে স্যারের ভাগ্য ভালো। তাই তিনি বেঁচে গেলেন।”
উপমা কথাগুলো বলেই লিফট থেকে নেমে গেলো। সে তূর্যকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। এরপর উপমা উপরে উঠেই রিয়াজুর রহমানের কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো। নিয়াজ হোসেন ফোন দিয়ে বলেছিলেন, তার জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার পর থেকেই রিয়াজুর রহমান আফসোস করে বলছেন তাকে দেখতে কেউ আসছে না। বন্ধুর এই অবস্থা দেখে নিয়াজ হোসেন উপমাকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করে বললো রিয়াজকে দেখতে আসার জন্য। আর অসুস্থ রোগীকে দেখতে যাওয়া ভালো। তাই উপমাও সেই অনুরোধ ফেলতে পারলো না। নিয়াজ হোসেন উপমার কল দেখেই কেবিনের বাইরে এসে বললেন,
“তুমি বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছো? ভেতরে আসো।”
উপমা মাথা নেড়ে ভেতরে ঢুকলো। রিয়াজুর রহমান উপমাকে দেখেই প্রশান্তির হাসি হাসলেন। উপমা সালাম দিয়ে বলল,
“এখন কেমন লাগছে স্যার?”
রিয়াজুর রহমান মুচকি হেসে বললেন,
“এতোক্ষণ প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিল। কিন্তু এখন তোমাকে দেখে সব ব্যথা কমে গেছে। তুমি হয়তো আমার ব্যথা সারানোর ওষুধ।”
উপমা রিয়াজুর রহমানের কথা শুনে নিয়াজ হোসেনের দিকে তাকালো। তখনই তূর্য কেবিনে ঢুকলো। তূর্যকে দেখেই রিয়াজুর রহমান বললেন,
“কোথাও শান্তি নেই। যেখানেই যাই, কেউ না কেউ আসবেই।”
তূর্য উপমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“কেমন আছেন মিস্টার রিয়াজ?”
“এতোক্ষণ ভালো ছিলাম। এখন হঠাৎ ব্যথাটা বেড়ে গেলো।”
উপমা রিয়াজুর রহমানের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তূর্য উপমার হাত ধরে বলল,
“দেখা করা শেষ হলে, চলো।”
রিয়াজুর রহমান ভ্রূ কুঁচকে বললেন,
“মিসেস উপমা মুক্ত পাখির মতো স্বাধীন। শুধু শুধু তাকে খাঁচায় বন্দি না করাই ভালো।”
তূর্য শক্ত করে উপমার হাত ধরলো। রিয়াজুর রহমান বললেন,
“আরেকটু বসুক না। আমার ভালোই লাগছিল।”
নিয়াজ হোসেন রিয়াজুর রহমানের হাত ধরে তাকে থামাতে গেলেই রিয়াজ বলে উঠলেন,
“আহা, নিয়াজ, হাতটা তো ভেঙেই দিচ্ছিস। এভাবে ধরেছিস কেন? এই বুড়ো বয়সেই প্রাণটা নিয়ে নিবি নাকি? বিয়েই তো করলাম না এখনো।”
তূর্য উপমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“তামাশা শেষ হলে বেরিয়ে এসো। আমার ভালো লাগছে না এসব।”
তূর্য হনহনিয়ে বেরিয়ে আসতেই উপমা রিয়াজুর রহমানকে বলল,
“স্যার আপনি বিশ্রাম নিন। আমি আজ আসি।”
রিয়াজুর রহমান আর কিছু বললেন না। উপমা বের হতেই তিনি বাঁকা হেসে বললেন,
“এভাবে একটু আধটু যদি তার যত্ন পাওয়া যায়, তাহলে পুরো হাতটা ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও আপত্তি নেই।”
নিয়াজ হোসেন বিরক্তির সুরে বললেন,
“আম্মাকে এখনো কিছুই বলি নি। তুই এখন আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লাহ আল্লাহ কর। ওকে দেখেছিস? এবার চুপচাপ ঘুমা।”
“ঘুমাবোই তো। এখন তো শান্তির ঘুম ঘুমাবো।”
একদিন পর আহনাফকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হলো। বাসায় আনার পর থেকেই অরুণিকা আহনাফের পিছু লেগেই আছে। রাতে সবাই আহনাফের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই অরুণিকা স্যুপ নিয়ে রুমে ঢুকলো। আহনাফ তাকে দেখেই বলল,
“আবার কেন এসেছো? আমি এখন ঘুমাবো।”
অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে রুমে ঢুকেই আহনাফের মুখোমুখি বসে স্যুপের বাটিটা রেখে বলল,
“আমি নিজ হাতে বানিয়েছি। খেয়ে নাও।”
“খাবো না।”
“কেন?”
“এতো রাতে কেউ স্যুপ খায়?”
“না খেলে বানিয়েছি কেন? এতো কষ্ট করে বানিয়েছি। খাবে মানে খাবে।”
আহনাফ স্যুপের বাটিটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হাত নাড়াতে ইচ্ছে করছে না। হাত ব্যথা করছে।”
অরুণিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“সোজাসুজি বললেই পারো, খাইয়ে দাও, অরু। তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে।”
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“খাবো না আমি। যাও এখন।”
অরুণিকা স্যুপের বাটিটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি আহনাফের মুখের সামনে চামচ ধরলো। আহনাফ মনে মনে খুশি হলেও মুখে বিরক্তির ভাব রেখে স্যুপ খেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আহনাফ জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কিভাবে জানলে আমি ওখানে গিয়েছি?”
অরুণিকা এদিক-ওদিক তাকিয়ে আহনাফের একদম কাছে চলে এলো। আহনাফ অরুণিকার কান্ডে একদম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সে অবাক হয়ে অরুণিকার দিকে তাকিয়ে রইল। অরুণিকা আহনাফের কানের কাছে এসে বলল,
“শুনো বলছি।”
আহনাফ কানে হাতে দিয়ে বলল,
“অরু, কানের কাছে এসে কেন বলছো? এমনিতেই বলো।”
অরুণিকা আহনাফের মুখে হাত রেখে বলল,
“আস্তে। সিক্রেট কথা কি মাইক নিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলবো?”
আহনাফ অরুণিকার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মুহূর্তে তার খুব ইচ্ছে করছিলো অরুণিকাকে কাছে টেনে নিতে, তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে। আহনাফ ঘোরের মধ্যেই অরুণিকার গালে হাত রাখার আগেই থমকে গেলো। হঠাৎ তার অরুণিকার বলা কথাটি মনে পড়ে গেলো।
“আমাকে স্পর্শ করার লোভ চড়ে বসেছে, তাই তো আমাকে বিয়ে করতে চাইছো।”
অরুণিকার বলা এই বাক্যটি মনে পড়তেই আহনাফ হাত গুটিয়ে নিলো। অরুণিকা আহনাফের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি বাসা থেকে বের হওয়ার পরই আরবান মামা কাকে যেন ফোন করে বললো ওই জায়গায় যেতে। আর উনি তোমাকে খুব ফলো করে। জানো, উনিই ইমানকে বলেছে আমি ওকে পছন্দ করি। তুমি তো ওইদিন আমার সাথে রাগ করেছো। আমার কথা শুনতেই চাও নি। আমি সেদিন ইমানের সাথে এমনি এমনি দেখা করতে যাই নি। এটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম, ও কিভাবে জানলো, আমি ওকে পছন্দ করি। আর ও কি বললো জানো? এসব নাকি আরবান মামা ওকে বলেছে।”
অরুণিকা কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
“কেমন লাগে বলো তো, আহনাফ? আমার না কি লজ্জা লেগেছিল! ও এখন সব জেনে গেছে। আমি ওকে বিয়ে করার জন্য তোমার সাথে ঝগড়া করেছি এসবও জেনে গেছে।”
আহনাফ চুপ করে রইলো। অরুণিকা আবার বলল,
“জানো, ইমানও আমাকে ভালোবাসে।”
আহনাফ এবার বলল,
“ভালোই তো। শেষমেশ তুমি তোমার ভালো লাগার মানুষের ভালো লাগা হতে পারলে। কিন্তু এটা শুধু ভালো লাগার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আমি এর বেশি কিছু হতে দেবো না। এখন যাও এখান থেকে।”
অরুণিকা চুপচাপ আহনাফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল,
“পুরোটাই তো শুনলে না। থাক, আমি আর বলবোই না।”
অরুণিকা উঠে চলে যেতেই আহনাফ আরাফকে ফোন করে নিচে নামতে বললো। আরাফ আহনাফের ঘরে এলে সে অরুণিকার বলা কথাগুলো আরাফকে বললো। তারা এবার ভালোভাবেই বুঝতে পারছে, আরবান তালুকদার রহমতুল্লাহর সাথে জড়িত আছেন। কারণ রহমতুল্লাহকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। রহমতুল্লাহকে একবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি পুত্রশোকে কাঁদছেন। কিছুই স্বীকার করছেন না। তবে তিনি শোক কাটিয়ে উঠে যে সব বলবেন এটা নিয়ে সবাই নিশ্চিত আছে। তাই হয়তো আরবান তালুকদারের ছটফটানি বেড়ে যাচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ পর, আহনাফ আর অরুণিকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের আয়োজনের কথাবার্তা চলতে লাগলো। ঘরোয়া পরিবেশে মেহেদি অনুষ্ঠান শেষ করে, খুব তোড়জোড় করেই আহনাফ তার বিয়ের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিলো। বিয়ে নিয়ে অরুণিকারও যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। তাই সে অরুণিকার পছন্দমতো সবকিছু সাজানোর পরিকল্পনা করছে। আহনাফ অরুণিকাকে নিয়ে আজ বিয়ের শপিংয়ে যাবে। তাই সে অরুণিকাকে নেওয়ার জন্য তার রুমে আসতেই দেখলো রুমের দরজা খোলা। ঘরে ঢুকে অরুণিকাকে খুঁজতেই টেবিলে থাকা অরুণিকার ফোনটি বেজে উঠল। ফোনের স্ক্রিনে ইমান নামটি দেখে আহনাফ থমকে গেলো। ইমান অরুণিকাকে এখনো ফোন দেয়? কিন্তু কেন?
আহনাফ চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এদিকে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অরুণিকা ইমানের ফোন দেখে দরজা আটকে দিলো। অরুণিকাকে দরজা আটকে দিতে দেখেই আহনাফের রাগ উঠে গেলো। সে হনহনিয়ে নিচে নেমে তার রুমে ঢুকে ধড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। এদিকে অরুণিকা ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ইমান বলল,
“আমি বলেছিলাম না, তোমার কথা রাখবো।”
“কি করেছেন এখন?”
“আমি আরবান তালুকদারের সব তথ্য বের করে নিয়েছি। উনার ছেলেরা উনাকে ঘর থেকে বের করে দেয় নি। ওরা তো দেশেই থাকে না। তিনি নিজেই এই বছরের শুরুতে দেশে এসেছিলেন।”
“আগে কোথায় ছিলেন?”
“আমেরিকাতে।”
“এতোটুকুই?”
“কেন কম কিছু জানালাম?”
“হ্যাঁ, এসব তথ্য তো আরাফরাই বের করেছে। আমি ওদের ল্যাপটপে দেখেছি, এসব আগে থেকেই সংগ্রহ ছিল।”
“আচ্ছা, তুমি উনার সম্পর্কে কেন জানতে চাইছো?”
“কারণ আমার মনে হচ্ছে, উনি আমার আর আহনাফের ক্ষতি করতে চান।”
ইমান একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল,
“আচ্ছা, আমি আরেকটা সূত্র পেয়েছি। হয়তো ওই সূত্রধরে এগুলে কোনো ক্লু পেতে পারি। কাল কি আমার সাথে একবার দেখা করবে?”
“কোথায়?”
“খুলশি টাওয়ারের সামনে থেকো। আমি ওখানে আসবো।”
চলবে—-