অলকানন্দা #পর্ব-২২,২৩,২৪

0
358

#অলকানন্দা
#পর্ব-২২,২৩,২৪
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
২২

৬৪.
রেজওয়ানের গলা দিয়ে খাবার নামলোনা। হরেকরকম খাবারে সুসজ্জিত টেবিল। গোশতের বহু আইটেম। তাছাড়া দেশি, বিদেশি বিভিন্ন লোভনীয় খাবার। মাহা সার্থকের পাশে মাথা নিচু করে বসে আছে। আসলে মাহা বুঝতে পারছেনা তার কি বলা উচিত। খাবার টেবিলে নিভা, রবার্ট, মুইংচিন, লুবান বসে। তারা তাদের মতো কথা বলে যাচ্ছে। হাসি – তামাশা করছে। রবার্ট বাংলা জানেনা। তাছাড়া সে কথা কম বলে। খুবই অল্প। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে তার বাড়ি। সাদা ফর্সা গাঁয়ের রঙ। গোল্ডেন রঙের চুল, ব্লু চোখ। বাংলায় কথা বলতে পারেনা রবার্ট। ইংরেজিতে মত বিনিময়ে অভ্যস্ত সে। কিন্তু মাহার সাথে কথা হলেই ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলে রবার্ট। রেজওয়ানের চোখ পড়লো মাহার দিকে। মাথায় শাড়ির আঁচল। লাল টকটকে শাড়িতে কি যে অপরূপ লাগছে হলদে ফর্সা মেয়েটাকে! আচ্ছা, মাহা তো এখন অন্যকারো বউ! রেজওয়ানের কি পাপ হবে ওর দিকে তাকালে?
“মিঃ রেজওয়ান? খাচ্ছেন না যে? খাবার মজা হয়নি?”

সার্থকের প্রশ্নে রেজওয়ান বলে,
“না, না। আসলে আমার এখন খাওয়ার মুড নেই।”
“তা বললে হবে? আপনি মাহার বড় ভাইয়ের মতো। ওর বিশেষ দিনে একটু খাওয়া দাওয়া না করলে হবে? একটু পায়েস অন্তত খান।”
“হুম।”

পায়েসের দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে আছে রেজওয়ান। ভাগ্যটা এতটা নির্মম না হলেও পারতো! লুবান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহার দিকে। মাহা খেয়াল করেছে। অদ্ভুত লাগছে তার। রেজওয়ানের সাথে আলাদা একটু কথা বলা প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু ব্যস্ততায় তা সম্ভব হয়নি। অনেকটা ঘোরের মাঝেই কবুল বলেছে মাহা। সার্থক যদিও বেহায়ার মতো প্রথমবারেই গড়গড় করে কবুল বলে দিয়েছে। ঘরে হাসির রোল পড়ে গিয়েছিলো তখন। মাহার কি যে লজ্জা লাগছিলো! নিভা তো হাসতে হাসতে বলেই ফেললো,
“ভাইয়া, তোমার বউকে কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছেনা।”

সার্থক মুচকি হেসেছিলো তখন। বেহায়া লোক!

“লুবান? তোর সাথে আমার কিছু প্রয়োজনীয় কথা ছিল?”

লুবান থাই স্যূপ খাওয়া থামিয়ে বললো,
“কি কথা?”
“তোকে কয়েকমাসের জন্য কানাডা যেতে হবে?”
“হঠাৎ?”
“আছে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ।”

৬৫.

লুবান আর কোনো শব্দ করেনি। চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মাহা হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। যাক লুবানের থেকে রেহাই পাবে সে। খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে রাত দশটা বেজে গিয়েছে। রেজওয়ানের প্রস্থান করার সময় হয়ে এলো। মনটা মানছেনা। মনকে কড়া করে বকে শক্ত করলো রেজওয়ান। সোফা থেকে বিদায় নিয়ে উঠে দাঁড়ালো রেজওয়ান।

“আসি, মাহা।”

মাহাও রেজওয়ানের সাথে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে। রেজওয়ান অনেক চেষ্টা করছে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতে।

“রেজওয়ান ভাইয়া?”
“হুম, মাহা। কিছু বলবে?”
“আপনার সাথে কথা বলার তো সুযোগই পেলাম না আমি। আপনাকে অনেক কথা বলার আছে ভাইয়া।”
“আমারও কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন মাহা। আজতো সম্ভব না। তুমি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবে?”
“আমি চেষ্টা করবো। যদি সম্ভব হয় কল করে জানাবো আপনাকে। সার্থক.. সার্থক খুবই ভালো ভাইয়া। আমার মতো এতিম, অসহায় মেয়েকে সহায়তা করেছে ও। কয়জনে করে এমনটা।”

রেজওয়ান মনে মনে বললো,
“তুমি যদি আমাকে একটা সুযোগ দিতে মাহা। আকাশের চাঁদটা তোমার পায়ে এনে রাখতাম আমি।”

মুখে বললো,
“সার্থক খুবই ভালো ছেলে, মাহা। তুমি ভালো থাকলেই হলো।”
“আমি আপনাকে আমার বড় ভাইয়ের মতো দেখে এসেছি ভাইয়া। আন্টিও আমাকে অনেক স্নেহ করেন। বাবা, চৈতিকে হারিয়ে এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা হয়েছি আমি। আপনাকেই কেবল একজন ভালো বন্ধু, গুরুজন হিসেবে মেনে এসেছি। আমার অনেক কষ্ট ভাইয়া। আমি কখনো কাউকে বুঝাতে পারবোনা। আমার জন্য একটু দোয়া করবেন ভাইয়া।”

মাহা অশ্রুসিক্ত চোখে বলে উঠলো। হলুদ ফর্সা মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। বাবা ও বাবা, চৈতি রে..
সবার কথা মনে পড়ছে তার!

“প্লিজ, মাহা। কেঁদোনা। দোয়া করি সুখী হও। ভালো থেকো। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে স্মরণ করবে মাহা। আমি যে অবস্থায় পারি, যেভাবে পারি তোমাকে সাহায্য করবো।”

৬৬.

বলেই প্রস্থান করলো রেজওয়ান। একবারের জন্যও পিছু ফিরে চাইলোনা। বহু উৎকন্ঠা নিয়ে সার্থকের ঘরে বিশাল খাটের উপর বসে আছে মাহা। নিভা কিছুক্ষণ আগেই বসিয়ে দিয়ে গেলো তাকে। সার্থক কি আজ নিজের অধিকার চাইবে? মাহার তো সময় প্রয়োজন। মনের অবস্থাও ভালোনা। সদ্য বাবা হারিয়ে মনের গভীরে ক্ষত হয়ে আছে। গভীর ক্ষত। তাছাড়া পবিত্র সম্পর্কে জড়ালেও এত তাড়াতাড়ি কি নিজেকে কারো অধীনে ছেড়ে দেওয়া যায়? ঘরে নীল আলো জ্বলছে মিটিমিটি। এসির টেম্পারেচারটা বোধহয় কম। নয়তো এতো শীত লাগার কথা না! রীতিমতো কাঁপছে মাহা। গাঁয়ে লাল টকটকে শাড়ি। সার্থকের দেওয়া। বহু কল্পনা শেষে ঘরে ঢুকলো সার্থক। হাত থেকে রোলেক্স ঘড়িটা খুলতে খুলতে এগিয়ে এলো মাহার কাছে। মাহার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। মাহার পাশের টেবিলে ঝুঁকে ঘড়িটা রাখলো সার্থক। নিস্তব্ধতা চারপাশে। শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজও শোনা যাচ্ছে। সার্থক ঝুঁকেই তাকালো মাহার পানে। আস্তে আস্তে বললো,
“চেঞ্জ করোনি যে? যাও চেঞ্জ করে আসো।”
“হু…হুম।”

মাহা কোনোমতে উঠেই সোফার উপরে রাখা একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে। অনেকটা সময় পর নীল রঙের সুতি একটা থ্রি পিস পরে বাইরে বের হলো মাহা। সার্থক পাঞ্জাবি পরিবর্তন করে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়েছে। অপরপাশটা খালি। মাহা বুঝলো ঐটা ওর জন্যই। সেও চুপচাপ শুয়ে পড়লো পাশটায়। ঘুম আসছেনা। কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে তার।
“মাহা?”
“হুম?”
“তুমি কি আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে মাহা?”

কেমন যেন করুণ আকুতি সার্থকের কন্ঠে। মাহার কি হলো সে নিজেও জানেনা। একছুটে সার্থক কে জড়িয়ে ধরলো সে। সার্থক হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাহার কোঁকড়া চুলে। মাহা চোখ বুজে সার্থকের বুকে মাথা দিয়ে আছে।

“মাহা?”
“হুম?”
“আমার জীবনটা অনেক অন্যরকম। আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো আমি বেড়ে উঠেনি মাহা। মাত্র দশ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছি প্লেন দূর্ঘটনায়। অতঃপর খালামণির কাছে মানুষ হয়েছি। আমার বড় হওয়া, বেড়ে উঠা, ডাক্তারি পড়াশোনা সবই কানাডাতে। নিভা আমার খালাতো বোন। খালামণির মৃত্যুর পর আমি অনেক ভেঙে পড়ি। তখন নিভা, রবার্ট মিলে সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশে আসবে। আমিও পরিবেশ পরিবর্তন করে একটু ভালো থাকবো। তারপর কানাডা ছেড়ে, নিজের শহর ছেড়ে চলে আসি বাংলাদেশে।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সার্থক। অতঃপর আবার বললো,
“আমি খুব একা মাহা। আমার পৃথিবীটা খুব ছোট। বিশ্বাস করো সেদিন যখন তোমাকে প্রথম ট্রেনে দেখলাম। আমার পৃথিবী থমকে…

বলতে বলতেই মাহার মুখের দিকে তাকালো সার্থক। মাহা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। সার্থক হালকা হেসে চুমো খেলো মাহার কপালে। চোখ বুজলো সেও৷

(চলবে)…

#অলকানন্দা
#পর্ব-২৩
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

৬৭.
মাহা এই বাড়িতে এসেছে আজ পনেরো দিন। এই পনেরো দিনে ঘটে গিয়েছে অনেককিছু। লুবান কানাডা চলে গিয়েছে। কিন্তু যাওয়ার আগে খুবই অসভ্য একটা কাজ করে গিয়েছে সে। আল্লাহ সহায় ছিলো বলে সেদিন বেঁচে গিয়েছিলো মাহা। এই তো সাতদিন আগে। সার্থক বাসায় নেই। উপরতলায় বাড়ির মানুষ বেশি একটা আসেনা। বাগান, অদ্ভুত মাছ, টিভি আর বই। এভাবে কাটছে মাহার দিন। নিভা মাঝেমধ্যে উপরে আসলে যা একটু কথা হয়। সার্থকের বিশাল একটা বইয়ের সংগ্রহশালা আছে। সেই যে মাহা সেদিন অদ্ভুত একটা প্রাণীর ছবি টানানো দেখেছিলো দেয়ালে সেই ছবিটার পাশেই দরজাটা ছিলো। তালাবদ্ধ। প্রথমদিন মাহা ছবিটায় লেখা নাম খেয়াল করতে পারেনি। দ্বিতীয়দিন সে যখন আবার দেয়ালে তাকালো ছবিটা সেখানে নেই। নিভাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো এমিলিন ছবিটা পরিষ্কার করা কালে ভেঙে ফেলেছেন। এমিলিন হলেন সেই বৃদ্ধা কাজের মহিলা। যিনি মাহার সাথে কথা বলেন নি। সার্থকের কাছে মাহা জিজ্ঞেস করেছিলো এই তালাবদ্ধ ঘরে কি আছে। সার্থক কিছু না বলেই তার হাত ধরে ঘরের সামনে নিয়ে চলে আসে। অতঃপর দরজাটা খুলে দিতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মাহা। সারাঘরের দেয়াল জুড়ে বইয়ের থাক। দেশ-বিদেশের হরেকরকম বই। ঘরের মাঝে একটা টেবিল রাখা। টেবিলের চারপাশে চারটা চেয়ার। সার্থক নিজের ঝাঁকড়া চুলে হাত চালিয়ে মন কাড়া হাসি দিয়ে বলেছিলো,
“বুঝলে মাহা। আমার বই সংগ্রহের বড় শখ। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর সময় যে বই পছন্দ হয়েছে তাই কিনে এনেছি।”

মাহা হালকা গলায় বলেছিলো,
“বাংলায় লেখা বই আছে তো?”
“তুমি আমাকে ঠিক কি মনে করো বলোতো? কানাডায় বড় হয়েছি মানছি। তাই বলে আমি বাংলা সাহিত্য পড়বোনা?”

এদিকে আসো। ঘরের ডানদিকটায় মাহাকে টেনে নেয় সার্থক। মাহা তাকিয়ে আছে সার্থকের হাতে ধরে রাখা নিজের হাতটার দিকে। পরিচয় হলো বেশিদিন তো না। অথচ লোকটা এতো আপন করে নিলো তাকে? এই লোকটা এতো ভালো কেন! ঝাঁকড়া চুলের মানবটাকে কে বলেছিলো এতো ভালো হতে!

“এই যে ম্যাডাম দেখুন।”

শরৎচন্দ্র, বিভূতি-ভূষণ, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে হুমায়ুন আহমেদ সবার বই সারি সারি করে রাখা সেখানে। কি যে সুন্দর লাগছে দেখতে! মাহার হাতটা ছেড়ে ঘরে থাকা বড় কাঁচের জানালাটা খুলে দিলো সার্থক। আলোর দলেরা মুহূর্তেই এসে ভিড় জমালো ঘরে। জানালার পাশে সার্থকের পাশে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিচে রাখা ফুলদানিতে পা লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মাহা। সার্থক দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। মাহার ব্যথার চেয়ে বেশি লজ্জাই লাগছে। তখনো চোখমুখ কুঁচকে রেখেছে মাহা। সার্থক উদ্বিগ্ন গলায় পায়ে হাত দিয়ে বললো,
“মাহা? এই মেয়ে বেশি লেগেছে?”

মাহা তখন কি যে বলেছিলো। খেয়াল নেই। তবে লজ্জা পেয়েছিলো খুব। সার্থক কোলে করে ঘরে নিয়ে এসেছিলো তাকে। সেই থেকে মাহার অবাধ বিচরণ সেই লাইব্রেরি ঘরে। পছন্দের বইগুলো হাতে পেয়ে শোক কাটিয়ে নতুন করে নিজেকে খুঁজে পায় মাহা।

৬৮.
তেমনই একদিন। এক ম্লান দুপুরে ভালো লাগছিলোনা মাহার। সার্থক জরুরি কাজে হসপিটাল গিয়েছে। মাহা নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানে কিছু মুহূর্ত কাটালো। আগামীকাল লুবান চলে যাবে। মাহার শান্তি লাগছে খুব। লুবানের দৃষ্টি খুব জঘন্য। লাইব্রেরিতে ঢুকে শরৎচন্দ্রের “পরিণীতা” বইটা হাতে নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায় মাহা। মনটা আজ বড়ই উদাস লাগছে। বাবা মারা যাওয়ার পর কবর যিয়ারত করার ভাগীদারও মাহা হতে পারেনি। নিজেকে হঠাৎ করেই নিজের কাছে নিকৃষ্ট লাগছে তার। কেমন মেয়ে! বাবার কবর পর্যন্ত যিয়ারত করা তার ভাগ্যে নেই! আকাশে কয়েকটা চড়ুই উড়ে বেড়াচ্ছে। কি যে সুন্দর লাগছে। নিচে ছোট একটা মাঠ। যদিও মানুষজন এদিকে বেশি একটা আসেনা। মাঠের পাশে একটা ছোট পুকুর। পুকুরের চারপাশে গাছপালা। হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দে ভাবনা বন্ধ হয় মাহার। তড়িৎ গতিতে পিছনে ফিরে আঁতকে উঠে মাহা। দরজা লাগিয়ে লুবান দাঁড়িয়ে। বৃহদাকার শরীর।
“আপ..আপনি!”

কালো মুখে বিদঘুটে হাসে লুবান। আস্তে আস্তে মাহার কাছে এগিয়ে আসে সে। ব্যাঙ্গ করে বলে,
“কি করবো ভাবি? আপনি তো আমার সামনে ধরা দেন না।”
“মানে?”

ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে মাহার। কি বলবে! কি ভাববে কোনো ঠাউর সে করতে পারছেনা। মাহার একেবারে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে লুবান।
“প্লিজ, আপনি…আপনি এমন করছেন কেন। আমাকে যেতে দিন।”

মাহার বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। কি শব্দ তৈরি করবে ঠাউর করতে পারছেনা তার বাকযন্ত্র। মাহার পরনে সবুজ রঙা থ্রি-পিস। মাথায় উড়না। হলদে ফর্সা মুখটায় চিন্তার রেশ। মাহার হাত থেকে বইটা নিয়ে নিচে ফেলে দিলো লুবান। অতঃপর মাহার মাথা থেকে সবুজ উড়নাটা খুলে নিলো একটানে।
“এসব কি দিয়ে রাখেন ভাবি। আপনার কোঁকড়া চুলগুলো তো ভিষণ সুন্দর।”

মাহা চিৎকার করে উঠলো একবার। দ্বিতীয়বার চিৎকার করার সুযোগ পেলোনা সে। তার মুখ হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো লুবান। বিরক্তিতে চোঁ শব্দ করে বললো,
“কি যে করেন না ভাবি। আপনার নাগর তো হাসপাতালে। এখানে হাজার চিৎকার পারলেও সে আসবেনা।”

মাহা এবার কান্নাই করে দিলো। এদিকে লুবান খারাপ স্পর্শ করছে তার ঘাড়ে, শরীরে। মাহা চিৎকার করবে সে শক্তি তার নেই। মুহূর্তেই যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেললো মাহা। নিজের পবিত্র শরীরে অপবিত্র স্পর্শে মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। পাশে ছোট টেবিলে একটা টেবিলল্যাম্প রাখা। ধস্তাধস্তি করে লাভ হবেনা মাহা জানে। বৃহদাকার লুবানের সাথে সে কোনো ক্রমেই পারবেনা। আস্তে করে ডানহাতে তুলে নিলো টেবিলল্যাম্পটা। লুবান যখন মাহার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়াতে ব্যস্ত তখনই পিছন থেকে তার মাথায় ল্যাম্পটা দিয়ে জোরে আঘাত করলো মাহা। ভিষণ চমকে মাথার পিছনের অংশটা দুহাতে আঁকড়ে ধরে একটা খারাপ গালি মাহার উদ্দেশ্যে ছুঁড়লো লুবান। মাহা ততক্ষণে দরজা খুলে বেরিয়ে গেছে। পিছন ফিরে দৌড়ানোর একপর্যায়ে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো মাহা। তাকাতে হলোনা আর।

৬৯.
মন আপনা-আপনি বুঝে গেলো লোকটা কে। আঁকড়ে ধরলো মাহা নিজের আপন মানুষটাকে। সার্থক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কতক্ষণ। হাতে থাকা শপিং এর প্যাকেটগুলো পরে গেলো নিচে। নিজেকে ধাতস্থ করে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে?”

শক্ত তার কন্ঠ। মাহা কিছু বলার আগেই লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলো লুবান। আর কোনো কিছু বলার প্রয়োজন মনে করলোনা সার্থক। মাহাকে ছাড়িয়ে লুবানের দিকে তেড়ে গেলো সে। মুখ বরাবর ঘুষি লাগিয়ে এলোপাতাড়ি মারলো লুবানকে। লুবানের মত শক্তপোক্ত শরীরও সার্থকের শক্তির সামনে পেরে উঠছেনা। লুবান একবার মুখ খুলে বলেছিলো,
“সার্থক, একটা মেয়ের জন্য তুই তোর এতদিনের বিশ্বস্ত বন্ধুটার উপর..

আর কিছু বলার আগেই একটা ঘুষি পড়লো তার মুখে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে নিভাসহ রবার্ট, মুইংচিন, এমিলিন, পরিচারিকা কয়েকজন ছুটে এলো উপরে। নিভা ঝগড়া থামালো দুজনের। সেদিন রাতেই বাড়ি ত্যাগ করেছে লুবান। মাহা এতকিছুর পরে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো এমিলিনের মুখের হাসি দেখে। যেখানে সবাই উদ্বিগ্ন সেখানে তিনি এতো খুশি কেন! প্রশ্নটা আজো ভাবায় মাহাকে।

_______________

মিস তাজের দেওয়া ফাইলটা অনুসন্ধান করে বারবার সিলেটের দিকেই ইঙ্গিত পেয়েছে রেজওয়ান। যদিও কাজকর্মে অনেকটা উদাসীন হয়ে উঠেছে সে। এইতো একটু আগেও প্রলয় তাকে ওয়ার্নিং দিয়েছেন। সে একমাসের সময় চেয়েছে। দীর্ঘদিনের ভালোবাসা হারিয়ে কি করে কাজ মন দিবে রেজওয়ান! এত সহজ সবকিছু!

(চলবে)

#অলকানন্দা
#পর্ব-২৪
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

৭০.
বাগানের অলকানন্দা গাছটা ভিষণ সুন্দর। সবুজের মাঝে থোকায় থোকায় কি সুন্দর ফুলগুলো ফুটে আছে। মাহা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে নির্ণিমেষ। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সার্থক ঘরে ল্যাপটপে কাজ করছে। হয়তো কোনো দরকারি কাজ। মাহা বিরক্ত করেনি। ওদের সম্পর্কটা এখন বন্ধুত্বে রূপ নিয়েছে। মাহা আসলে বুঝেনা তার মন কি চায়। নিজের অনুভূতি নিয়ে নিজেই সন্ধিহান। ছোটবেলা থেকেই একাকী ছিল তার জীবন। মাহা যখনই যাকে ভালোবেসেছে সেই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ভালোবাসতে বড্ড ভয় মাহার। অবচেতন মন হয়তো কবেই সার্থকের মায়ায় আটকে গিয়েছে। লম্বা চওড়া মানুষটা, ঝাঁকড়া চুলগুলোতে হাত দেওয়ার বড়ই বদঅভ্যাস। যখন কথা বলে মুখে গাম্ভীর্য রেখেই হাসে। মাহার কি যে ভালোলাগে। আশপাশের মানুষের সাথে মাহার খুব একটা পরিচয় নেই। তাছাড়া এই বহুতল ভবনে সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। প্রতিবেশীর খবর নেওয়া তারা খুব একটা পছন্দ করেনা।
“মাহা।”

সার্থকের ডাক শুনে ঘরে ছুটে এলো মাহা। সার্থক ল্যাপটপ পাশে রেখে ডানহাতটা মাথার উপর রেখে শুয়ে আছে।
“কি হয়েছে আপনার?”
“আমাকে এককাপ কফি করে দিতে বলো।”

সবসময়ের মতো উৎফুল্ল শুনালোনা সার্থকের সুর। মাহার সাথে কথা বলার কালে সার্থক নরম সুরে কথা বলে। এমনভাবে যেন একটু জোরে কথা বললেই মাহা ভয় পাবে। মাহা একছুটে নিচে রান্নাঘরে চলে এলো। যদিও সে খুব একটা রান্নাঘরে আসেনা। এমিলিন ছিলেন রান্নাঘরে। মাহা কফি খুঁজে পাচ্ছিলোনা। সে বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পায়নি এমিলিনের কাছে। হতাশ হয়ে নিজেই খোঁজ করছিলো। তখনই আরেক পরিচারিকা মেরি তার হাতে কৌটা বের করে দিলো। মেরি মেয়েটা কানাডিয়ান। নিভার মুখে শুনেছিলো মাহা। যদিও সে বেশি একটা নিচে নামেনা। উপরেই সময় কাটে তার। মাহা কফি বানিয়ে উপরে চলে এলো। সার্থক তখনো মাথার উপর হাত রেখে শুয়ে। মাহা ডাকলো,
“শুনছেন? সার্থক। আপনার কফি।”

সার্থক উঠলোনা। মাহা আবার ডাকলো। বাইরে খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালাটা আটকানো প্রয়োজন। ঘর ভেসে যাচ্ছে পানিতে। সাদা টাইলস পানিতে ছেয়ে যাচ্ছে। মাহা কফির কাপটা রাখলো পাশের টেবিলে । নীল রঙা উড়নাটা টেনে মাথায় দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলো জানালার কাছে। তবে তা হলোনা। সার্থক তার ডানহাত টেনে ধরেছে। অজানা কারণেই কেঁপে উঠলো মাহা।
“আপনার কফি পাশে রাখা।”

সার্থক শুনলোনা সেসব কথা। একটানে মাহাকে নিজের বুকের উপর নিয়ে এলো। মাহা আজ নতুন কোনো সার্থক কে দেখছে। যার চোখে তৃষ্ণা। কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা। মাহা উঠে যেতে চাইলে তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সার্থক।
“কি..কি করছেন আপনি?”
“শসস্।”

মাহার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হলো তাকে। সার্থকের কপালের উপরে চুলগুলো এলোমেলো, অবিন্যস্ত। দৃষ্টি বিনিময় হলো দুজনের। দমকা হাওয়ায় জানালার কপাট নড়ছে। সার্থক ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো,
“প্লিজ, মাহা। আজ তোমাকে আমার ভিষণ প্রয়োজন।”

মাহা মুখে কিছুই বললোনা। নিরবতা সম্মতি ভেবে সার্থক ডুব দিলো মাহার মাঝে। প্রিয়তমার নরম অধর নিজের অধরে ডুবিয়ে দিয়ে একাকার হয়ে গেলো দুজনে। বাইরে প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়েছে। ভিতরে নিজেদের মাঝে উন্মাদনায় মত্ত দুটো দেহ। তাদের মাঝেও উষ্ণতার ঝড় বইছে।

৭১.

রাতেরবেলা সবাই খেতে বসেছে। রবার্ট, মুইংচিন, নিভা, সার্থক এবং মাহা। রবার্ট বরাবরই কম কথার মানুষ। মুইংচিন নিজের আদো আদো বাংলায় কথা বলে। মাহার খুব মিষ্টি লাগে শুনতে। সার্থক, মাহা সামনাসামনি বসেছে। একান্ত মুহূর্তের পরে মাহা একবারের জন্যও সার্থকের সামনে যায়নি। সার্থক মাহার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। চোখাচোখি হতেই চোখ টিপলো সে। মাহা হতভম্ব হয়ে গেলো। এই ডাক্তার যে এতটা বেহায়া তার জানা ছিলোনা। মাহা দ্রুত মাথা নামিয়ে খাওয়ায় মন দিলো। নিভা সবই খেয়াল করেছে।

“কি ভাইয়া? আজ এতো খুশি কেনো তুমি?”

সার্থক মাহার মুখপানে তাকিয়ে বললো,
“আমার বসন্ত এসেছে বুঝলে নিভা।”
“বসন্ত তো সে কবেই এসেছে, ভাইয়া।”

নিভার বোকা প্রশ্নে সার্থক হাসলো। অতঃপর বললো,
“আমার বসন্তের ফুল আজকেই ফুটেছে।”

মাহা দ্রুত টেবিল ছেড়ে উপরে চলে এলো। ডাক্তারের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আবোল তাবোল বকছে খালি। টেবিলে হাসির রোল পড়ে গেলো। দূর থেকে কেউ একজন সেদিকে তাকিয়ে রইলেন অগ্নিচোখে। হাসিতে বড্ড গাঁ জ্বালা করছে তার। মাহা ঘরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। হাতে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন বইটা। দুপুরে বৃষ্টি হওয়ায় হালকা শীত পড়েছে। বাইরে ফকফকা চাঁদের আলো। মাহা নিজেদের একান্ত মুহূর্তের কথাগুলো ভেবে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে উঠছিলো। তার হলুদ ফর্সা মুখটা লাল টকটকে হয়ে উঠেছে। লুবান যাওয়ার পর থেকে মাহা বেশ ভালো আছে এ বাড়িতে। একে একে মনে পড়ছে ফেলে আসা অতীত দিনগুলো। এই একুশ-বাইশ বছরের জীবনে কতকিছু দেখেছে সে। ছোটবেলা মা মারা যাওয়ার পর বাবা আবার বিয়ে করলেন। ছোট মাহা ভেবেই নিলো আসন্ন মহিলা সত্যিই তার আরেক মা। কিন্তু এক গাছের ফল কি আর অপর গাছে জোড়া লাগে! সৎমায়ের ব্যবহারে দিনদিন আবেগশূন্য হয়ে পড়ছিলো মাহা। স্কুলে কোনো বন্ধু-বান্ধবী নেই। একেবারে একা জীবন মাহার। কলেজেও তাই। বাবা আদর করতেন লুকিয়ে। সৎ মাকে ভয় করতেন কিনা! মাহা জানতো তার বাবা তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। রেজওয়ানের বাবা আর মাহার বাবা বন্ধু ছিলেন। রেজওয়ান আসতো প্রায়ই মাহাদের বাসায়। মাহাকে টুকটাক সাহায্য করতো। মাহাও তাকে নিজের বড় ভাইয়ের মতোই দেখে। এতকিছুর পরেও মনে আপনজনের খাতাটা ছিল শূন্য। এমন কেউ ছিলোনা যে মাহাকে বুঝবে। মাহা যার সাথে নিজের সমস্তটা তুলে ধরতে পারবে। একটা মানুষ। একটা মনের মানুষ। একটা আপন মানুষ। ভার্সিটি কোচিং করা কালে চৈতির সাথে পরিচয়। কি মিষ্টি মেয়েটা। মাহার মনে হলো সে একটা বোন পেয়েছে। একটা ভালো বন্ধু পেয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগে চান্স পাওয়ার পর থেকে জীবনটা অনেক বদলে গিয়েছিলো মাহার। যদিও বন্ধুমহল সীমিত। তবুও খুবই ভালো সময় কাটছিলো তার। পরে কি যেন হলো। আবছা স্মৃতি। মাহার মনে আছে তাদের পরীক্ষা শেষ হলো। ফোনে কারো সাথে খুব কথা হতো। কার কথা হতো! তার না চৈতির! তারপর মাহা যখন চোখ খুললো নিজেকে আবিষ্কার করলো রুমানাদের বাসার সামনে। কি করে এলো! কেন এলো! কিভাবে এলো! কোনো কিছুই মাহার মনে নেই। অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন আসে ঘুমালে। সেগুলো বাস্তব না কল্পনা মাহা জানেনা।

৭২.

অতঃপর ঘটে গেলো কত ঘটনা। অনাঙ্ক্ষিত বিয়ে, চৈতির মৃত্যুর খবর, বাবার মৃত্যুর খবর, সৎ মায়ের দোষারোপ। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কি হলো তা মাহার খেয়াল নেই। কিন্তু যখন চোখ খুললো তখনই কারো বুকে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে। এতটা আপন কখনো কাউকে লাগেনি। লোকটার মায়ায় পড়েছে মাহা। মনের ভিতরে ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যাখা। মাহা তুই প্রেমে পড়েছিস। ডাক্তারকে তুই ভালোবাসিস। মাহা চিন্তায় পড়লো তার মতো চালচুলোহীন মেয়েকে কি মেনে নিবে এত বড় মাপের মানুষটা! মাহার মনে দ্বিতীয় ভয় সে ভালোবাসলেই তো দূরে চলে যায় আপনজনেরা। মাহার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে সার্থক স্বীকৃতি দিলো তাকে। পরিস্থিতি, মন, মস্তিষ্ক সব ভাবনায় মত্ত হয়ে মাহাও সায় দিলো সে সিদ্ধান্তে। মানুষটার ভালোবাসায় পড়েছে মাহা। কখনো এতটা আপন কাউকে মনে হয়নি। এতটা নিজের কাউকে মনে হয়নি। শুধু এই ঝাঁকড়া চুলের মানুষটাকে নিজের মনে হয় মাহার। এই পৃথিবীতে মাহার একমাত্র আপনজন। তাই তো আজও সেই মানুষটার একান্ত ডাকে সাড়া না দিয়ে মাহা পারেনি। এসব ভাবতে ভাবতেই মাহার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা নিরব অশ্রু ফোঁটা গড়িয়ে পড়লো। আল্লাহর কাছে খুব করে চাইলো মাহা। এই মানুষটা যেন সবার মতো হারিয়ে না যায়। এত কষ্ট মাহা সইতে পারবেনা। মাহার দম বন্ধ হয়ে যাবে। এই মানুষটাকে মাহার চাই। সারাজীবনের জন্য চাই।

হঠাৎ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সার্থক। ঘাড়ে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিতে দিতে বললো,
“ভালোবাসি, অলকানন্দা।”

মাহাকে নিরব দেখে নিজের দিকে ফিরালো সার্থক। মাহার চোখ-মুখ লাল। কেঁদেছে বোধহয়। বুকটা ছেৎ করে উঠলো তার। কোনো কি অপরাধ করে ফেলেছে সার্থক। এভাবে মাহাকে কাছে টেনে নেওয়াতে মাহা কি খুশি না! সার্থক আজ প্রচুর মানসিক পীড়ায় ছিল। মাহার সান্নিধ্যে তা কেটে গিয়েছে অনেকটা। সে কি কোনো ভুল করে ফেললো! থমথমে গলায় সার্থক বললো,
“আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি মাহা? আমি ক্ষমা চাচ্ছি তবুও দয়াকরে তুমি কেঁদোনা। আমি..

মাহা খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সার্থক কে। মুখের কথা মুখেই রইলো। হাতটা চলে গেলো মাহার মাথায়। হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সার্থক জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে বউ?”

মাহা ভেঙে আসা গলায় বললো,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি সার্থক। আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না আপনি। আমার সব ভালোবাসার মানুষ গুলো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে সার্থক।”

সার্থক হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাহার মাথায়। তারও চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো কি?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here