অলকানন্দা #পর্ব-৩০,৩১,৩২

0
320

#অলকানন্দা
#পর্ব-৩০,৩১,৩২
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
৩১

৮৭.
“তুমি যা বলছো ভেবে বলছো তো রেজওয়ান? তুমি একটা দাগী আসামি কে নিয়ে সিলেট যেতে চাও!”

প্রলয় চ্যাটার্জী ভিষণ অবাক হয়েছেন। অবাক হলে তিনি আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসেন। সেই সাথে মিঃ সম্বোধনটাও করেন না।
“স্যার, আমি যা বলছি ভেবে বলছি। আমাকে একটা সুযোগ দিন।”
“এই নিয়ে কতবার তো একই কথা বললে। এটাই কিন্তু তোমার শেষ সুযোগ রেজওয়ান। এরপরে আমি কেসটা সিআইডি কে হস্তান্তর করবো। তুমি ড্রা/গের কেসটা দেখবে। এই কেস নিয়ে এখন মিডিয়ায় বেশি মাতামাতি নেই। এটা সিআইডি আস্তে ধীরে সলভ করুক।”
“স্যার, তাহলে কি আমি সুযোগটা পাচ্ছি?”
“মিঃ রেজওয়ান তোমায় আমি ভরসা করি। তবে এটাই শেষ।”

রেজওয়ান কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো। অতঃপর বেরিয়ে এলো বাইরে। মুন্সিকে বললো,
“জেলখানায় যাবো একটু।”

অন্ধকার ঘরে কথা হচ্ছে দুজন মানব-মানবীর। তেজস্বী মানবী যেন সবটা জেনেও এই মানুষটার সামনে অপারগ। ভালোবাসা কি এতই শক্তিশালী! এতটা তেজস্বী মেয়েকেও বদলে দেয়।
“আগামীকাল সিলেট যাবে। সাথে কড়া পাহারা থাকবে। প্লিজ তুমি কিছু করতে যেও না। নির্ঘাত ধরা পড়বে।”

বাঁকা হাসলো সামনের মানুষটা। এ যেন বাঘকে বলা শিকার করোনা। মানবী কিছুটা কষ্টমাখা গলায় বললো,
“তুমি কি আমায় কোনোদিনও বুঝবেনা? এতটাদিন তোমাকে এত সব ইনফরমেশন দিচ্ছি। তুমি কি বুঝতে পারোনা? আমি তোমাকে ভালোবাসি?”

হা হা করে হেসে উঠলো অন্ধকার মানব। অতঃপর গম্ভীর সুরে বললো,
“কেন? আমি খারাপ জানোনা? একজন দেশরক্ষী হয়েও আমার মতো অপরাধীর সাথে তোমার এতো সখ্যতা মানায় না। এই মুহূর্তে আমি ঠিক কি করতে পারি তুমি নিশ্চয়ই তা জানো?”
“আমি সব মেনেই তোমাকে ভালোবাসি।”
“একটু জুস খাবে?”

ঘাবড়ে গেলো অন্ধকার মানবী। কষ্টমাখা গলায় বললো,
“তুমি খুব খারাপ। খুব।”
“আমি তো তা জানি।”

মানবী বেরিয়ে গেলো। অন্ধকার মানব সোফায় বসে মাউথ অর্গান বাজাতে ব্যস্ত। সেই সাথে ছক কষে নিলো আগামীদিনের। বাঁকা হাসলো আবারও। যে কাজটা সে করে সে কাজটা তার ভিষণ প্রিয়। পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে এই কাজ থেকে ফেরাতে পারবেনা। ভোরের দিকে মাতব্বর শরীফকে নিয়ে রেজওয়ান রওনা দিলো সিলেটের পথে। কাকপক্ষীও এই খবর জানেনা। সাথে আছেন পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা। দুটো গাড়ি। সবাই ছদ্মবেশে আছে। মাতব্বর শরীফকে ভয়ানক লাগছে দেখতে। এতদিনপর বাইরের আলো গাঁয়ে লাগায় কুঁকড়ে গিয়েছিলেন তিনি। এত আলো সহ্য হচ্ছিলোনা তার। এখন সয়ে এসেছে অনেকটা। বড় বড় দাঁড়ি। লালচোখ। কতটা ভয়ানক লাগছে তাকে দেখতে! স্বয়ং পুলিশ কর্মকর্তারাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। মুন্সির রাগও হলো নিজের স্যারের উপর। কি দরকার দাগি আসামির কথা শোনার! স্যার কি বোকা? গাড়ি চলছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে। হঠাৎ থেমে গেলো গাড়ি। স্থানটা নির্জন। দুপাশে জঙ্গল। রেজওয়ান প্রশ্ন করলো,
“কি ব্যাপার মুন্সি? গাড়ি থামালে কেন?”
“স্যার, সামনের গাড়ি থেমে গেছে।”

৮৮.

সামনের গাড়িতে মাতব্বর শরীফ রয়েছেন। রেজওয়ান তৎক্ষনাৎ বের হওয়ার জন্য গাড়ির দরজা খুলতেই ধোঁয়ায় ভরে গেলো চারপাশ। কাঁদুনে গ্যাসের দাপুটে প্রভাবে চোখ জ্বলছে সবার। রেজওয়ান সময় নষ্ট না করে জলদি বের হলো। পিস্তল হাতে নিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার বাম হাতে গুলি করলো কেউ। লাল রঙের তরল গলগল করে বের হচ্ছে। রেজওয়ান অসহায় হয়ে বুজে আসা চোখে কেবল দেখলো মাতব্বর শরীফকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন। এরপরের ঘটনা রেজওয়ান জানেনা।

রেজওয়ানের জ্ঞান ফিরলো দিন দুয়েক পর। ততদিনে সারাদেশে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। “পুলিশের ব্যর্থতায় নিখোঁজ হলেন সিরিয়াল কিলার মাতব্বর শরীফ”। প্রলয় চ্যাটার্জীসহ অন্যান্য বড় কর্মকর্তাদের উপর উপরমহল থেকে চাপ আসছে। সারাদেশে থমথমে পরিবেশ বিদ্যমান। আবার সেই ২০১২ কেউ দেখতে চায়না। রেজওয়ানের উপর অনেকটা ক্ষিপ্তও তিনি। কি দরকার ছিল একজন দাগী আসামি কে বাইরে আনার! প্রলয় চ্যাটার্জীকে দেখে উঠে বসার চেষ্টায় রেজওয়ান। সাথে আরো কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
” আপনি অসুস্থ মিঃ রেজওয়ান। উঠার চেষ্টা না করাই ভালো।”
গম্ভীর গলায় বললেন প্রলয়। রেজওয়ান ভয় পাচ্ছে।
“আপনি যে কাজটা করেছেন তা একদম ঠিক করেননি রেজওয়ান।”

হাতের ব্যথা নিয়েই উঠে বসলো রেজওয়ান। প্রলয় এবার গুরুগম্ভীর সুরে বললেন,
“একটা দাগী আসামি গায়েব। গত দুদিন যাবত মিডিয়া, মন্ত্রী পরিষদ সব জায়গা থেকে চাপ আসছে আমার উপর। আমি আপনাকে ভরসা করেছিলাম রেজওয়ান। আপনি ভরসার অবমাননা করলেন। আজ থেকে আগামী ছয়মাসের জন্য আপনাকে বরখাস্ত করা হলো। নোটিশ শীঘ্রই পৌঁছে দেওয়া হবে আপনাকে।”

কথাটুকু সেরেই বেরিয়ে গেলেন প্রলয় চ্যাটার্জী। এই ভয়টাই পাচ্ছিল রেজওয়ান। ভিতরটা ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে তার। আশার আলো দেখতে পেয়েও আবার সেই তিমিরেই তলিয়ে গেলো যেন।

মাহার পরীক্ষা আজ শেষ। এখন হাতে কিছুদিন ছুটি রয়েছে। মাহা ভেবেছে সার্থককে বলবে তাকে যেন একবার নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যায়। কত মাস পেরিয়ে গেলো। বাবাকে দেখা হয়না! বুকটা কেঁপে উঠে মাহার। বাবার কবর যিয়ারত করার জন্য ছটফট করে মন। সার্থক অনেক সুখে রেখেছে মাহাকে। মাহার একাকী জীবনে অপার্থিব সুখের সন্ধান দিয়েছে। মাহা মাঝে মাঝে ভাবে, “আচ্ছা, এতো সুখ তার কপালে সইবে তো! সে তো যাকে ভালোবাসে সেই হারিয়ে যায়। সার্থকও কি তবে….

আর ভাবতে পারেনা মাহা। ঝাঁকড়া চুলের মায়াময় মুখটা না দেখে মাহা বাঁচবে কি করে! মানুষটা যাদু জানে। এই কয়েকটা মাসে কত আপন করে নিয়েছে তাকে। তবে একটা ব্যাপার বড্ড বেমানান। রবার্ট বেশি একটা মাহার সামনে আসেনা। সার্থক বলেছে রবার্টের আশেপাশে বেশি না যেতে। সাইন্টিস্টদের মাথায় নাকি ঝামেলা থাকে। মাহার কাছে বড় অদ্ভুত ঠেকে এই রহস্যময় বাড়িটা। সিঁড়ি দিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে উপরে উঠছিলো মাহা। হঠাৎই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো তার। কিছু বুঝে উঠার আগেই….

(চলবে)….

#অলকানন্দা
#পর্ব- ৩১
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

৮৯.
কিছু বুঝে উঠার আগেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে পড়ে গেলো মাহা। লাল রঙা তরলে ছেয়ে যাচ্ছে সবুজ রঙের কৃত্রিম গালিচাটা। মাহার চোখ বুজে আসছে। কেবল দেখতে পাচ্ছে কেউ একজন খুব চিৎকার করে তার দিকে ছুটে আসছে। মাহা বিরবির করে,
“সার্থক”
অতঃপর চোখ দুখানা বুজে যায় তার। সার্থক সবে হাসপাতাল থেকে ফিরেছে। প্রিয়তমার এহেন রূপে সার্থক ভীত, হতভম্ব। দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে অলকানন্দার বুকে। হৃৎস্পন্দন কেমন পরীক্ষা চালায়। মাথা তুলে নিজের সাথে মিলিয়ে ধরে, চিৎকার করে উঠে,
“এই প্রাণপাখি। চোখ খুলো, সোনা। চোখ খুলো অলকানন্দা।”

এত বছরের অভিজ্ঞ একজন ডাক্তার হয়েও কি ছেলেমানুষী আবদার। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে সার্থক। মস্তিষ্ক বলছে,”বোকা মানব এই মুহূর্তে নারীদেহটি হাসপাতালে না নিলে ছেড়ে চলে যাবে এই জগৎসংসার।” সার্থক চিৎকার করে দুরুক্তি করে। “না, না আমার অলকানন্দা আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা। কোথাও না।” সার্থকের গগনবিদারী চিৎকারে নিভা, এমিলিন, মেরি, মুইংচিন, রবার্ট সহ অন্যান্য সব পরিচারক, পরিচারিকা দৌড়ে আসে বিশাল হল রুমটায়। চোখ কপালে উঠে সকলের। কৃত্রিম সবুজ গালিচায় র’ক্তের স্রোত বয়েই চলেছে। সার্থক পাগলের মতো প্রলাপ বকছে। হিতাহিতজ্ঞান সত্যিই লোপ পেয়েছে তার। নিভা চিন্তাগ্রস্থের ন্যায় দৌড়ে আসে সার্থকের পানে।
“ভাইয়া, কি হয়েছে ওর?”

সার্থক রক্তলাল চোখে তাকায় নিভার দিকে। নিভা চুপসে যায়। সংকুচিত হয়। এই চোখের মানে অজানা নয় তার। বিধ্বংসী সে নজর। নিভা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। কেউ আগাবার সাহস পায়না। সার্থক কারো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার তোয়াক্কাও করেনা। কোলে উঠিয়ে প্রাণভোমরা কে নিয়ে চলে হাসপাতালে। ও নেগেটিভ র’ক্তধারী মাহার শরীর থেকে প্রচুর র’ক্তক্ষরণ হয়েছে। সার্থক দুদণ্ড বসে থাকেনি কোথাও। পাগলের মতো র’ক্তের সন্ধান করেছে। অবশেষে ডক্টর ওয়াসিফের ছেলের দুব্যাগ র’ক্তে মাহার বিপদ কেটেছে খানিকটা। সারারাত সার্থক মাহার পাশেই বসেছিলো। ভোরের আলো ফুটছে পূর্বদিগন্তে। নাম না জানা পাখির কলকাকলি কানে ভাসছে। ছিমছাম কেবিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সার্থক সাদা বেডে পড়ে থাকা মলিন ঘুমন্ত মুখটার পানে চেয়ে আছে নির্নিমেষ। এই মেয়েটাই যে তার সব। তার হৃদয়ের একচ্ছত্র রাণী। তার মনোরাজ্যের সিংহাসনের অধিকারিণী। সার্থকের অলকানন্দা।
সার্থক ভেবেছিলো মাহা প্রেগন্যান্ট। গত কয়েকদিনের গতিবিধি নতুন অতিথি আগমনের জানান দিচ্ছিলো যেন। ভেবেছিলো প্রেগ্ন্যাসি কিট দিয়ে পরীক্ষা করতে বলবে মাহাকে। আজ হাসপাতালে এসে সে ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মাহা প্রেগন্যান্ট নয়। শরীর দুর্বল, প্রেশার লো। ডাক্তার ওয়াসিফই গতকাল মাহার অপারেশন করেছেন। মাথায় গভীর আঘাত পেয়েছে মেয়েটা। যান্ত্রিক ফোনটা বেজে উঠছে একটানা। হাসপাতালের নিস্তব্ধতা ভেদ করে যা ভিষণভাবে কানে লাগছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিসিভ করলো সার্থক।
“ডক্টর ফায়রাজ আপনি আমার কেবিনে আসুন।”
“জ্বি, ডক্টর।”
ঘুমন্ত মাহার কপালে একটা আর্দ্র চুমু খেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সার্থক। গন্তব্য ডক্টর ওয়াসিফের কেবিন।
“আসবো?”
মাহার সিটি স্কেনটাই মনোযোগের সাথে দেখছিলেন ডক্টর ওয়াসিফ। ডক্টর ওয়াসিফ নিউরোলজি, গাইনেকোলজি দুই বিভাগেই সমান পারদর্শী। অসাধারণ তার মেধাশক্তি। ডাক্তারি সেক্টরে আসার পর জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্ত তিনি ডাক্তারি পড়ায় ব্যয় করেছেন। দিন, দুনিয়া সংসার ভুলে কেবল সময় দিয়েছেন এই ডাক্তারি জগতের পিছনে। সার্থকের ডাকে সেদিকপানে তাকিয়ে ভিতরে প্রবেশের নির্দেশ দেন।

৯০.
“বসুন ডক্টর ফায়রাজ।”
“মাহার ব্রেন কন্ডিশন কেমন ডক্টর?”
“এখন কিছুটা ঠিক আছে। তবে আমি এমন কেস এর আগে কখনো দেখিনি ডক্টর ফায়রাজ। ওর ব্রেনের কিছু নার্ভস অদ্ভুত ঠেকছে আমার কাছে। তারা নিশ্চল আবার সচলও। বিষয়টা খুবই জটিল। আমার ধারণা ওর শরীরে এমন কোনো তরল পদার্থ পুশ করা হচ্ছে যার ফলে ওর নার্ভস নিশ্চল হয়ে পুনরায় সচল হয়ে উঠছে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা ডক্টর ফায়রাজ। আপনার স্ত্রী কি বিগত কয়েকমাসের ঘটনা মনে রাখতে পারছে?”

হঠাৎই একটা কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে সার্থকের। মাথার দুপাশে শিরাগুলো দপদপ করে ফুলে উঠে। হাত মুঠো করে নিজেকে শান্ত করে সার্থক। গম্ভীর অথচ শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“পুশ করা হচ্ছে মানে?”
“আমার ধারণা তরলটা কিছুঘন্টা পূর্বেও আপনার স্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে।”

এবারে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে সার্থকের। আসছি বলে বেরিয়ে পরে ডক্টর ওয়াসিফের কেবিন থেকে। নার্স নাজমা ফোন করলেন ডক্টর জিনিয়া তাবাসসুমকে। জিনিয়া কিছুদিনের ছুটি নিয়েছে। হাসপাতালে তার আসা হয়না গত দুদিন যাবত।
“হ্যালো, ম্যাডাম।”
“জ্বি, নাজমা আপা বলুন।”
“ম্যাডাম স্যারের ওয়াইফের অপারেশন হয়েছে গতকাল রাতে। খুবই ক্রিটিকাল সিচুয়েশন ছিল। এখনও আই.সি.ইউ তে ভর্তি।”
“কোন স্যার?”
“সার্থক স্যার”
“হোয়াট!”
বিস্মিত হলো জিনিয়া।
“কি হয়েছে?”
“মাথা ফেটে গেছে।”
“এখন কেমন আছে?”
“কিছুটা ভালো।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। আজ রাখছি নাজমা আপা।”
“ওকে, ম্যাডাম।”

ফোনটা কেটে দেয় জিনিয়া। নাজমা ভেবেছিলেন হয়তো একটু বাহ্বা বা উপহার পাবেন খবর চালানের জন্য। তার কিছুই হলোনা। মনঃক্ষুণ্ন হলো নার্স নাজমার। ডক্টর জিনিয়া পরিবর্তন হয়ে গিয়েছেন। অনেকটা পরিবর্তন চোখে পড়ে।

_____________

সারাদিনেও মাহার অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। সেই আই.সি.ইউ তে সাদা বেডটায় কতশত যন্ত্রপাতির ভিড়ে শুয়ে আছে মাহা। সার্থক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহার হলদে ফর্সা মুখমণ্ডলের দিকে। বুকটা খচখচ করছে বেদনায়। মাথায় রাগ চড়ে আছে। আজ তবে হোক একটা ধ্বংসলীলা। মাহার মুখে অজস্র চুমু খেয়ে একটা জরুরি কাজে বাইরে বেরিয়ে যায় সার্থক।
অন্ধকার ঘর। চারদিকে কেবল দেয়াল। ছোট একটা দরজা। ঘরে ডুকতেই নাকে লাগে তীব্র গন্ধ। কি বিদঘুটে সে গন্ধ! এমন নিকষ কালো আঁধারে জ্বলে উঠে একটা টিমটিমে হলদে লাইট। নীল চোখের ফর্সা এক মানবকে বেঁধে রাখা হয়েছে। ব্যথায় আর্তনাদ করছে মানবটি। তার সামনে কাঠের চেয়ারে ঘাড় বাঁকিয়ে বসে আছে এক ছায়ামানব। গুরুগম্ভীর তার নিস্তব্ধতা, গাঁ ছমছমে তার বাঁকা হাসি। নীল চোখের মানব বারকয়েক শুকনো ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভিজানোর চেষ্টা চালায়। সে ব্যর্থ। জিহ্বাও যে শুকিয়ে আসছে। এই পৃথিবীর গুটিকয়েক মানুষ জানে সামনের মানুষটা ঠিক কতটা নির্মম! তার হৃদপিণ্ডখানা টেনে ছিঁড়ে বের করে নিলেও অবাক হবেনা সে। মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে ছায়ামানব। তরতর করে ঘামছে নীল চোখের মানব। দেখা যাক কি বিধ্বংসী খেলা হয় আজ।

(চলবে)…

#অলকানন্দা
#পর্ব-৩২
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

৯১.
ওয়েন্ডিগো হলো একটি পৌরাণিক প্রাণী বা অশুভ আত্মা যা কানাডার পূর্ব উপকূলীয় বন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট সমভূমি অঞ্চল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট লেক অঞ্চল এবং কানাডা, অ্যালগনকুইয়ান-পারিবারিক ভাষার বক্তা হিসাবে আধুনিক জাতিতত্ত্বে গোষ্ঠীভুক্ত এর আশেপাশে অবস্থিত ফার্স্ট নেশনসের লোককাহিনী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ওয়েন্ডিগোকে প্রায়শই একটি নরক আত্মা বলা হয়, কখনও কখনও মানুষের মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণী হিসাবে চিত্রিত করা হয়, যা মানুষের উপর ভর করে। ওয়েন্ডিগো অতৃপ্ত লোভ/ক্ষুধার অনুভূতি, অন্য মানুষকে নরখাদক করার উপায়, সেইসাথে এর প্রভাবে যারা পড়ে তাদের হত্যা করার প্রবণতাও আছে। এই আত্মা এক অতৃপ্ত আত্মা। যা মানুষের ভিতরে বিদ্যমান নরপশুটাকে জাগিয়ে তুলে। তাকে বিধ্বংসী করে তুলে। ওয়েন্ডিগো হায়নার চেয়েও ধারালো। কখনো নিজের শিকারকে সে ছেড়ে দেয়না। ছায়ামানব। সে ওয়েন্ডিগোর মতো ধারালো কিংবা তার চেয়েও বেশি। মাউথ অর্গান বাজানো শেষে নীল চোখের ব্যাক্তিটার সামনে এসে দাঁড়ায় ছায়ামানব। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। বহুদিন শিকার হত্যা না করার তৃষ্ণা। নীল চোখের মানব কাঁপা কাঁপা সুরে ব্রিটিশ এক্সেন্টে বলে,
“এবারের মতো দয়া করো। শেষ একটা চান্স দাও। আমি কখনো ঐ ভুল করবোনা। কখনো না।”
হা হা করে হেসে উঠে ছায়ামানব। শত কাকুতি মিনতি তাকে কাবু করতে পারেনা। একজন নারী ছোট ঘরটার দরজায় বারেবারে নিজের সঙ্গীর প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছেন। আটকানো দরজাটা খোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে ছায়ামানবের যে মনে দয়া নেই, মায়া নেই। সে তো ধ্বংসের রাজা। ছুরি দিয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে গলায় একটান দেয়। গলগল করে বেয়ে পড়ছে লাল তরল। ছটফট করতে থাকে নীল চোখের মানুষটা। একটা মুরগের গলা কাঁ’ট’লে যেমন ছটফট করে ঠিক তেমন। বাইরে নারীর চিৎকার বাড়ে দ্বিগুণ হারে। একসময় থেমে যায় ভিতরের আর্তনাদ। সে সাথে থেমে যায় বাইরের আর্তনাদ। বহুদিনের অভস্ত্য হাতে ধারালো ছু’রি চলে ব্রিটিশ মানবের দেহে। বহু আকাঙ্ক্ষিত কাজটা করতে পেরে সাময়িক স্বস্তি পায় ছায়ামানব। অতঃপর…. স্বাদ গ্রহণ করে ভিন্ন কিছুর।

কেটে গিয়েছে একটা মাস। মাহা এখন অনেকটাই সুস্থ। গুলশানের ফ্ল্যাটে গড়েছে নিজ সংসার। ঘরের প্রতিটা কোণায় কোণায় তার বিচরণ। ল্যাব ঘরটা এখন আর নেই। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে কতগুলো খাঁচা। খাঁচায় বন্দী হরেকরকম বিদেশি পাখি। লং টেল প্যারাডাইস, সালফার ক্রেস্টেড ককাটেল, মং প্যারাকিট,ওয়াক্সউইং, ইনকা টার্ন, ইডার, জাভা, চ্যাটারিং লরি, পার্লে কুনুর আরো কত পাখি! একজোড়া লাভ বার্ডও রয়েছে। কি যে সুন্দর দেখতে! নিভার আচরণে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। চুপচাপ থাকে। কালো রঙের জামা পরে সবসময়। মাহার সাথেও বেশি একটা কথা বলেনা। উদাস তার ভঙ্গি। মাহা হাসপাতাল থেকে ফিরে শুনেছে রবার্ট নাকি কিছুদিনের জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছে। হয়তো তাই নিভার মন খারাপ থাকে। মাহা প্রথম কয়েকদিন চেষ্টা করেছিলো নিভার সাথে হাসিখুশি কথা বলতে। তবে নিভা যেন কোনো পাথর। বাইরে ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ছে। মাহা নিজেদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে। দৃষ্টি বাইরে বৃষ্টির দিকে। হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাহা চিনে এই স্পর্শ। তার একান্ত প্রিয় মানুষটার স্পর্শ। মাহার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে তাতে চুমুক দিলো সার্থক।
“কি করছেন? আমার এঁটো তো।”
“হুম।”
“কি হুম? রাখেন এটা। আমি কফি করে এনে দিচ্ছি।”
“মিষ্টতা কোথায় পাবো আমি?”
“চিনি দিবো তো।”

সার্থক মুচকি হেসে মাহাকে নিজের দিকে ফিরালো। নাকটা আলতো করে টেনে দিয়ে বললো,
“তুমি বড্ড অবুঝ মাহা।”
মাহা জানেনা কেন! তবে এই লোকটাকে তার পৃথিবীর সবচেয়ে আপন একজন মনে হয়। একান্ত নিজের। মাহা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সার্থক কে। দুয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখ বেয়ে। সার্থক মাহার অগোছালো চুলে ভালোবাসার পরশ দিলো।
“আমাকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যাবেন?”
“প্রশ্ন নয় আদেশ করবে রাণী।”
মনের উদাসীনতার মাঝেও যেন হাসি পায় মাহার। লোকটা এমন কেন!
“কালকে নিয়ে যাবেন?”
“দেখি হসপিটালে যোগাযোগ করে। ছুটি পেলে নিয়ে যাবো।”
“আচ্ছা।”
নিস্তব্ধতা। বাইরে এক পশলা বৃষ্টি। সার্থকের বুকে মাথা দিয়ে আছে মাহা। এত শান্তি কেন এই বুকটায়!

৯২.
চাকরি থেকে রেজওয়ানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ একটামাস যাবত রেজওয়ান ঘরে বসে। অন্ধকারে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এত এত তিরস্কার সত্যিই আর নিতে পারছেনা রেজওয়ান। বেলা চারটা ত্রিশ। প্রতিদিনের মতো কলিং বেল বেজে উঠলো। সাবিনা বেগম দরজা খুলে দিলেন। তিনি জানেন কে আসবে। প্রতিদিনের মতো আজো এশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
“আসো ভিতরে আসো।”
সোফায় এসে বসে দুজনে। হাতের ব্যাগটার দিকে নজর যায় সাবিনা বেগমের। গত পনেরোটা দিন যাবত এই মেয়েটা কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে আসছে রেজওয়ানের জন্য। প্রথম যেদিন খিচুড়ি আর কালা ভুনা করে নিয়ে এসেছিলো সাবিনা বেগম হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কার জন্য?”। এশা মাথা নিচু করে আস্তে করে বলেছিলো,”আপনার ছেলের জন্য।” মেয়েটা কষ্ট পাবে বলে সাবিনা বেগম বলেন না। রেজওয়ান তো এসব খাবার মুখেও তুলেনা। এশা খাবার নিয়ে আসে এত আশা নিয়ে। সাবিনা বেগম যেন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেন না। শ্যামবতী মেয়েটার মুখে ভিষণ মায়া।
“আন্টি, আমি আজ আপনার জন্য আর আপনার ছেলের জন্য একটু হাঁসের মাংস, চালের রুটি করে নিয়ে এসেছি। খেয়ে বলুন না আন্টি কেমন হয়েছে।”
বলতে বলতেই বাটিগুলো মেলে সাবিনার সামনে তুলে ধরলো এশা। খুব সুন্দর ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। সাবিনা বেগম রুটি ছিঁড়ে হাঁসের মাংস তার ভিতরে পুরে মুখে দিলেন। এক কথায় অসাধারণ স্বাদ। ঝাল হাঁসের মাংস আর রুটি এত মজা! তিনি আগে কত খেয়েছেন এমন কখনো খান নি। পুরো তিনটে রুটি, অর্ধেক বাটি হাঁসের মাংস খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন সাবিনা। তিনি একটু ভোজনরসিক বটে। খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
“তুমি তো চমৎকার রান্না করো মেয়ে।”

এশা একটু লজ্জা পেলো যেন। হবু শাশুড়ীর প্রশংসা প্রত্যেক হবুবউয়েরই ভালোলাগে। হায় হায়! কিসের হবুবউ আর কিসের শাশুড়ী! বোকা পুলিশ তো কিছুই বুঝেনা। আর এখন তো বিরহে দিন পাড় করছেন তিনি।
“আপনার ছেলের ভালোলাগবে তো আন্টি?”
“তুমিই না হয় ওর ঘরে গিয়ে খাবারটা দিয়ে এসো।”
“আমি?”
“হুম, রেজওয়ানের খাবারটা দিয়ে আসো তো মা। আমি একটু পাশের বাসায় যাবো।”

সাবিনা চাচ্ছেন এশাকে সুযোগ দিতে। তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। এশা একটা প্লেটে খাবার সাজিয়ে রেজওয়ানের দরজার সামনে দাঁড়ালো। নক করবে কি করবেনা! বুকটা ধুকপুক করছে তার। কতদিন বোকা পুলিশটাকে দেখা হয়না! দরজায় নক করেই ফেললো এশা। ভিতর থেকে গম্ভীর কন্ঠ,
“মা, বিরক্ত করো নাতো।”
প্রিয় কন্ঠ! কতদিন বাদে শুনলো এশা। বুকটা এখনো অশান্ত।
“আমি, আমি এশা।”
“কি চাই?”
“আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম।”
“খাবোনা এখন। তুমি যাও।”
“প্লিজ, একটু খান। আমি অনেক কষ্ট করে আপনার জন্য হাঁসের মাংস আর চালের রুটি করে নিয়ে এসেছি। আপনার অনেক পছন্দের না?”
“বিরক্ত করো নাতো।”
“এমন করছেন কেন? একটু খেলে কি হয়?”
এশা নাছোড়বান্দা। আজ একনজর লোকটাকে দেখতে তার মনটা ছটফট করছে। কি করে বুঝাবে সে। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো রেজওয়ান। বিধ্বস্ত দশা। এলোমেলো চুল, পরনে একটা নীল টি-শার্ট আর শর্টস। এশা একধ্যানে তাকিয়ে আছে। তার মনে অবাধ্য সব ইচ্ছে জাগছে। রেজওয়ান ধমকে উঠলো,
“এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার?”
“ইয়ে মানে”
“থাপড়ে দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব মেয়ে। প্রতিদিন কি নাটক শুরু করেছো তুমি? আমার যা একটু সম্মান অবশিষ্ট আছে তাও ধূলোয় মিশিয়ে দিতে চাইছো?”
“না মানে..
“একদম চুপ। কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝিনা? আর মা তোমাকে বাড়িতে জায়গা দেয় কেন! প্রতিদিন খাবার রান্না করে নিয়ে আসছো। আশেপাশের মানুষ দেখছেনা। আমার সম্মান শেষ করে কি মজা পাচ্ছো তুমি?”
“আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।”
“আমি ভুল বুঝছি। আমি? আর এসব কেন আনো আমার জন্য!”
কথাটা বলেই এশার হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা নিচে ফেলে দিলো রেজওয়ান।
“কাজটা আপনি ঠিক করেন নি মিঃ রেজওয়ান।”
ছলছল চোখে কথাটা বলে দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো এশা। সাবিনা সিঁড়িতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার?”
জবাব না দিয়েই দৌড়ে পালায় এশা। রেজওয়ান ঠাস করে নিজের ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ আগে প্রলয় চ্যাটার্জি ফোন করেছিলেন। কিছু কটু কথা শুনিয়েছিলেন। সেই রাগ এশার উপর দেখালো রেজওয়ান।

৯৩.
কতক্ষণ যাবত এক নাগাড়ে কলিং বেল বেজেই চলেছে। মেরি দরজা খুলে দিলো। সামনে একজন বিদেশি লোক দাঁড়িয়ে। মেরিকে দেখে কুশল বিনিময় করলো লোকটা। ব্রিটিশ এক্সেন্টে বললো,
“কেমন আছো মেরি?”
“ভালো, আলবার্ট। প্লিজ আপনি ভিতরে আসুন।”

আলবার্ট সোফায় এসে বসলো। মুইংচিনও এসে বসেছে পাশে। বহুদিনের পরিচয় তাদের। মুইংচিনের চেহারাটা মলিন। আলবার্ট সোফায় হেলান দিয়ে মেরিকে বললো,
“এক কাপ কফি পেলে মন্দ হয়না মেরি। সাথে বিশেষ…
“ডক্টর স্যারের নিষেধ আছে।”
“ওকে, তাহলে কফিই নিয়ে আসো।”

কথাটা বলে মুইংচিনের দিকে তাকালো আলবার্ট।
“কি মুইংচিন উদাস কেন?”
“কেন টুমি জানোনা?”
“উফ্, তোমার এই ভাঙা ভাঙা বাংলা বেশ শোনায় কিন্তু মুইংচিন।”
“মজা করোনা আলবার্ট।”
“সরি, সরি।”

দুহাত উপরে তুলে বললো আলবার্ট। নিভা কালো একপোশাক জড়িয়েছে সারা গাঁয়। ঘর থেকে বেশি একটা বাইরে বের হয়না সে। আলবার্টের কন্ঠস্বর শুনে হলরুমের সোফার কাছটায় এসে দাঁড়ালো নিভা।
“কেমন আছো নিভা?”
“খুব ভালো। পৃথিবীর সমস্ত সুখের ঊর্ধ্বে আছি আমি।”
“এই তুমি কি রাগ করলে?”
“না তো। তোমাদেরই তো সময়। আমরা তো জলে ভেসে আসছি।”
“আহা, রাগ করছো কেন? আমি কি তা বলেছি?”

মেরির মুখে আলবার্টের আসার খবর শুনে খানিকটা চিন্তিত হলো সার্থক। আচ্ছা, সে কি একটু শান্তি পাবেনা! দরজায় দাঁড়িয়ে ঘুমন্ত মাহার মুখপানে চাইলো সার্থক। কি নিষ্পাপ! কি পবিত্র! কেন পবিত্র আর অপবিত্রের মেলবন্ধন হয়! নিয়তি কেন এমন অদ্ভুত খেলায় নেমেছে? সার্থক তো বেশ ছিলো নিজের ছন্নছাড়া জীবনে। এখন যে সার্থকের বাঁচতে ইচ্ছে জাগে। একটু ভালো থাকার ইচ্ছে জাগে। সুন্দর একটা সংসার গঠনের ইচ্ছে জাগে। ফ্রেশ হয়ে এসে বেডরুমের দরজাটা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে নিচের দিকে পা বাড়ালো সার্থক।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here