অলকানন্দা #পর্ব-৫১,৫২,৫৩

0
992

#অলকানন্দা
#পর্ব-৫১,৫২,৫৩
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
৫১

১২৬.
পরীক্ষা শেষ। মাহা আর চৈতি মিলে প্ল্যান করলো তারা ধানমন্ডি লেকে যাবে। আতিয়া জামান চৈতি পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার আগুন সুন্দরী। কাঁধ সমান চুল, খাড়া নাক। সে কি তেজ! আর তার বান্ধবী মাহা হোসেন। মায়াবী মুখ। অভূতপূর্ব মিষ্টি গলার সুর। হলদে ফর্সা মুখটা। কোমড় সমান কোঁকড়া চুল। শান্ত, ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে। এরা দুইজনে দুই মেরুই বলা চলে। তবুও বন্ধুত্ব অটুট। একদিন সময় করে বেরিয়ে পড়লো দুজনে। বাস থেকে নেমে রিকশায় চড়ার পরেই বিপত্তি বাঁধে। হঠাৎ করেই পিছন থেকে একটা বাসের ধাক্কায় রিকশা উল্টে দুজনেই পড়ে যায় সড়কে। ব্যথাও পেয়েছে অনেকটা। আশেপাশের মানুষের সহায়তায় হাসপাতালে আসে তারা। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফিরে যায় হলে। সেদিন আর ধানমন্ডি লেক দেখা হয় না তাদের। মাহার নামে তোলা একটা সিম চৈতি চালায়। মূলত চৈতির সিমটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। মাহার কাছে দুটো সিম থাকায় একটা চৈতি চালাতো। ঐ সিমটা মাহা ব্যবহার করেনি বেশি একটা। বলা বাহুল্য তারা দুই বান্ধবী এক আত্মা এক প্রাণ। হাসপাতাল থেকে ফিরার পরপরই এক অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে চৈতির ফোনে। এই নাম্বারটা তারা হাসপাতালে দিয়েছিলো। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যাক্তি মূলত মাহার খোঁজ করেন। চৈতি নিজেকেই মাহা হিসেবে পরিচয় দেয়। লুবান নামের লোকটার প্রেমে পড়ে যায় চৈতি। মাতৃহীন মেয়েটা ভালোবাসাময় কথায়, স্নেহময় বার্তায় আবেগঘন হয়ে পড়ে। প্রণয়ের ছয় মাস পর লুবান তাকে অফার করে সিলেটে আসার। সিলেটে আসলেই কেবল তার দেখা পাওয়া যাবে। এসব কিছুই চলছিলো মাহা থেকে লুকিয়ে। চৈতির ভয়। মাহা কিংবা লুবান যদি সবটা জেনে তাকে ভুল বুঝে! লুবানকে তখনো দেখেনি চৈতি। তবুও প্রগাঢ় ছিল তার ভালোবাসা। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে চৈতি মাহাকে সিলেট ঘুরার পরিকল্পনার কথা বললো। মাহা যদিও একটু আঁচ করতে পেরেছে বিষয়টা। কারণ চৈতি প্রচুর কথা বলতো ফোনে। মাহা চৈতির প্রস্তাবে রাজি হয়। সিলেট যাওয়ার পথে ট্রেনে বসেই সব কথা চৈতি মাহাকে খুলে বলে। হঠাৎ করেই ভিষণ অপরাধবোধ জেগে উঠে চৈতির মাঝে। এভাবে মাহা সেজে সে একটা লোকের সাথে দিনের পর দিন কথা বলেছে। মন খারাপ হয়ে সিটে হেলান দিতেই মাহা আশ্বস্ত করে তাকে। অপরাধবোধ কমাতে অদলবদলের সিদ্ধান্ত জানায়। সিলেটে যতদিন থাকবে ততদিন মাহা হবে চৈতি আর চৈতি হবে মাহা। একে অপরকে ডাকবেও সে নামে। কেবল চৈতির অপরাধবোধ লাঘবের জন্য, চৈতির মন ভালো করার জন্য মাহার উদ্ভট বুদ্ধি। শুধু কি তাই? তাদের যারা কল্পনা করছে তাদের ঘোলাটে ধোঁয়াশায় রাখতেই এই চিন্তা। তাদের মস্তিষ্কেও চলতে থাকুক কে মাহা কে চৈতি! মাহার কথা ছিলো পরে সুযোগ বুঝে সত্যিটা জানিয়ে দিলেই চলবে। বিভ্রান্ত কল্পনাকারীরা কল্পনা করলো আতিয়া জামান চৈতি। হলদে ফর্সা গাঁয়ের রঙ, অসম্ভব মায়াবী মুখাবয়ব। কোমড় সমান চুল। অভূতপূর্ব তার গলার সুর। মাহা হোসেন। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির আগুন সুন্দরী। কাঁধ সমান চুল, খাড়া নাক। আদতে তার উল্টো। এই পরিবর্তন কেবল ছিলো বন্ধুর প্রতি বন্ধুর মায়া। বন্ধুটিকে অপরাধবোধ থেকে মুক্ত করার ছোট একটা উপায়। তারপর সিলেট যাওয়ার পর একে একে সব ঘটনা ঘটে। নামের মাহা হোসেনের সাথে ঘটলেও সব ঘটছিলো চৈতির সাথে। অস্বাভাবিক সকল ঘটনার পর তারা উঠলো রুমানার বাড়ি। সেদিন বিকেলে কথা ছিলো দেখা করার। মাহা ওরফে চৈতি দেখা করতে যায়। চৈতি ওরফে মাহা দাঁড়িয়ে থাকে বিরাট এক গাছের পিছনে। হঠাৎ চৈতিকে আঘাত করা হয়। আবছা আলোয় ব্যাক্তিটাকে দেখেনি গাছের আড়ালে থাকা মাহা। সে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে। সেই সুরে এক ঘা’ত’ক তার দিকে দৌড়ে আসে। সে দৌড় দেয় উল্টোপথে। তাকে কেউ একজন ধরে ফেলে। টেনে নিয়ে যায় কোথাও। জ্ঞান ফিরতেই মাহা আবিষ্কার করে সে কোনো অন্ধকার ঘরে বন্দী। ছটফট করে মাহা। নীল চোখ। রবার্ট নাম। সূক্ষ্ম একটা পিঁপড়ার কামড়ের মতো আঘাত মাহা অনুভব করে ঘাড়ে। নীল চোখের রবার্ট চলে যায়। খাজা নামের শক্ত পোক্ত শরীরের লোকটা মাহার শরীরে বাজেভাবে হাত বুলোয়। কামড়ে সেখান থেকে পালিয়ে এলোমেলো ছুটে মাহা। ঘাড়ে আঘাত তখনো। জোরে চিৎকার দিয়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
হুট করে চোখ মেলে তাকায় মাহা। এই স্মৃতিগুলো সে ভুলে গিয়েছিলো। কি অদ্ভুত! মাহা উঠে দাঁড়ায়। তাকে সম্পূর্ণ জানতে হবে। তার মস্তিষ্ক এই ধাক্কা নিতে পারছেনা। শব্দহীন পায়ে ঘরে প্রবেশ করে। সার্থক তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। মাহা সুযোগ বুঝে বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে। নিকষ অন্ধকার ঠেলে ছুটে যায় সেই লাইব্রেরিতে। নিজের মোবাইলটা সাথে ন্যায়। আলো সে জ্বালাতে পারবেনা। মোবাইলের আলোই তার ভরসা। বাইরে তখন নিশুতি রাতের কান্নার শব্দ। ঘেউউউ করে টানা সুরে ডেকে চলেছে এক কুকুর। মাহা লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে। উন্মাদের মতো খুঁজে বের করে সে ডায়েরি। মোবাইলে আলো জ্বলছে। সেটা পাশের টেবিলে রেখে ডায়েরির পাতা উল্টায় মাহা। আর কোনো লেখা নেই। তবে একটা পৃষ্ঠায় নকশা আঁকা। কোনো ঘরের নকশা। অন্ধকার সহনীয় হয়ে উঠেছে চোখে। আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে মাহা বুঝতে পারে। এটা তো এই লাইব্রেরিরই নকশা। নকশায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ পাশে বুক সেলফ দু’দিকে সরানো। ভিতরে রাস্তা। মাহা আরো অবলোকন করে গুলশানে বাসার লাইব্রেরিটা ঠিক এমনই ছিলো। এতদিন মাহার মাথায় আসেনি বিষয়টা। মাহা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দক্ষিণ পাশের বুক সেলফের সামনে দাঁড়ায়। কি করে খুলবে এটা? প্রায় শ’খানেক বই এই সেলফে। একটা করে বই সরিয়েও কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেনা মাহা। অপারগ হয়ে ধাক্কালো খানিক সময়। না, কোনো ক্রমেই খুলছেনা। মাহার জানতেই হবে এর পিছনে আরো কি কি রহস্য লোকানো আছে!

(চলবে)…

#অলকানন্দা
#পর্ব-৫২
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

১২৭.
লেখিকা ‘Agatha Christie’ এর দুটি বই ‘The Mysterious Affair at Styles’ এবং ‘The M’ur’de’r of Roger Ackroyd’ এই দুটি বই ছিলো একদম বুক সেলফের মাঝে। মাহা বই দুটি নিচে ফেলে দিতেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে বুকশেলফের মধ্যখান ভাগ হয়ে যায়। আচানক এমন হওয়ায় মাহা ভয়ে পেয়ে খানিকটা পিছিয়ে আসে। মোবাইলের আলো ফেলে ভিতরে। ঘুটঘুটে আঁধার। মোবাইলের আলোয় ঝাঁপসা একটা রাস্তা আবিষ্কার করে মাহা। ভয়ে ভয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। কেমন একটা ভ্যাঁপসা গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। পঁচা, গলা, বিগলিত কিছুর শক্ত একটা গন্ধ। মাহা সাহস নিয়ে ভিতরে যায়। ছোট গলি। যত ভিতরে প্রবেশ করছে গন্ধ ততই প্রবল হচ্ছে। একসময় গলির শেষমুখে এসে মাহা বৃহৎ কামড়া খুঁজে পায়। সম্মুখে খালি। ঝাঁপসা আলোয় কিছুই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছেনা। হাঁটতে হাঁটতেই কিছু একটার সাথে পায়ে ধাক্কা খেয়ে সে নিচে পড়ে যায় সে। মোবাইলও নিচে পড়ে যায়। আলো নিভে গেছে। মাহা হাতড়ে খুঁজে চলেছে মোবাইল। একসময় কি যেন লাগে মাহার হাতে। মাহা হাত দিয়ে চাপ দিতেই তার হাত জিনিসটার ভিতরে প্রবেশ করে। গলিত তুলতুলে কিছু একটা। মাহা পায়ের কাছে মোবাইলের অস্তিত্ব পেতেই অন্য হাতে তা নেয়। এবং লাইট জ্বালাতেই সে চিৎকার করে উঠে। থরথর করে কাঁপছে তার শরীর। একটা মৃ’ত গলিত লাশের হৃদপিণ্ডের দিকটায় হাত প্রবেশ করিয়েছে মাহা। মাহা দ্রুত হাত টেনে খুলে। হাতে লালচে, আঠালো গলিত মাং’স। মোবাইলের আলো চোখে সহনীয় হয়ে উঠে। মাহা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এক সারিতে সাদা কাপড় কিংবা কাপড় বিহীন কতগুলো লা’শ। পাশে লা’শ রাখার ফ্রিজ। লা’শ রাখার ফ্রিজগুলো খুবই সরু থাকে। চতুর্ভুজ আকৃতির বক্সের ন্যায়। ভিতরে মৃ’ত দেহ শোয়ানোর মত জায়গা। চেয়ারে বেঁধে রাখা একজন ব্যা’ক্তির লা’শ। চোখ গলে গেছে। শরীরের মাংস অবশিষ্ট নেই। কেবল কং’কাল। আরেকপাশে ছি’ন্ন কতগুলো মু’ন্ডু। দেয়ালে বড় অক্ষরে লেখা HBP (human body parts)। কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করে রাখা, চোখ, কিডনি আরো কয়েক ধরনের অঙ্গ। মাহা আঁতকে উঠে। তরতর করে শরীর ঘামছে তার। ক্লাস্টোফোবিয়ায় আক্রান্ত মাহার দম আঁটকে আসছে। মাহা বিকট এক চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

____________

মাহার যখন চোখ খুলে সে আবিষ্কার করে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। আলো আঁধারের খেলা হলরুমে। সামনে রকিং চেয়ারে বসে মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে সার্থক। মাহা যখন চোখ মেলে সার্থকের দিকে চাইলো তখনই তার মাউথ অর্গান বাজানো বন্ধ হয়। শান্ত চোখে সে তাকায় মাহার পানে। শান্ত তার দৃষ্টি।
“ঐঘরে কেন প্রবেশ করলে মাহা?”

রাগে, ক্ষোভে ক্রন্দনরত গলায় মাহা বলে,
“আপনার সত্যটা দেখে ফেলে কি ক্ষতি করে ফেললাম?”
“না, মাহা। তুমি কোনো কালে আমার ক্ষতি করতে পারো না। তুমি আমার পবিত্রা।”
“চুপ!”

সার্থকের শান্ত কথার পিঠে মাহা চিৎকার করে উঠে।
“আপনি একটা সিরিয়াল কি’লা’র। মানসিক ভাবে বিকৃত মানুষ।”
“প্লিজ মাহা। আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি..
“কি সাফাই দিবেন আপনি? এত এত খু’ন আপনি নিজ হাতে করেছেন। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে সার্থক। আমি আপনাকে ভালোবেসেছিলাম। আপনার বাড়ি গাড়ি সবটা খু’নের টাকায়!”
“চিৎকার করো না মাহা। তোমার শরীর খারাপ করবে।”
“আমার সাথে নাটক করার প্রয়োজন নেই। আপনি বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ সার্থক। আপনিই চৈতিকে খুন করেছেন, তাই না? আমাকে সব খুলে বলুন। নয়তো আমি আ’ত্মহ’ত্যা করবো।”
“মাহা!”

করুণ গলা সার্থকের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সার্থক।
“হাসপাতাল থেকে ডক্টর জিনিয়ার মাধ্যমে EHC এর অধিকারী সম্পর্কে জানতে পারি। ঢাকায় আমরা চাইলেই তাকে খু’ন করে গু’ম করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের তাকে জীবন্ত লাগবে। ঢাকা এয়ারপোর্টের কড়া সিকিউরিটিতে আমরা চাইলেই তাকে নিয়ে বিদেশ যেতে পারতাম না। সিলেট থেকে তা সহজ হতো। মিস তাজ বারবার মানা করে দিয়েছিলো ঢাকা শহরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না গু’ম করতে। কারণ গু’ম হওয়া শিক্ষার্থী কে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাস্তায় নামে। আন্দোলন করে। তাই চাচ্ছিলাম এমন কিছু করবো যাতে সবাই ভাবে মেয়েটা বিদেশে চলে গিয়েছে স্বেচ্ছায়। লুবানকে কাজে লাগালাম। শুরু হলো লুবানের নাটক। সিলেটে লুবানের টানে ছুটে আসে সে। রুৎবা পাগলী তার হাত ধরে সতর্ক করে দিয়েছিলো তাকে। বাইক নিয়ে আমার লোকেরাই পিছু করেছিলো তোমাদের খাসিয়া পল্লী যাওয়ার পথে। এখানে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়। লেগুনা চালকও আমার লোক। তাদের কাজই মাঝ রাস্তায় লোক নামিয়ে দেওয়া। পরে ট্রাকে পি’ষে তাদের শিকার করা। তারা ভুলে তোমাদের উপরেই আক্রমণ করে বসে। পরে আমার নির্দেশে ফিরে আসে। ঐদিন বিকেলে লুবানের সাথে দেখা করতে আসো তোমরা। জিদানকে পাঠাই আমি। সে নতুন WCS এ। সাথে রবার্ট, মুইংচিন, খাজাও ছিল। আমার আর লুবানের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিলো বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে। বেশি পন্ডিতি দেখাতে গিয়ে চৈতিকে খুন করে জিদান। আমি আজো জানিনা তোমার জায়গায় চৈতি কেন গিয়েছিলো সেদিন। অদ্ভুত ব্যাপার আমাদের লোক মাহা হোসেনের ছবি দিয়েছিলো তাও ছিলো চৈতির। ভুলে চৈতিকে মাহা ভেবে তার ছবিই আমাদের নিকট দেয় সে। আমরা চৈতিকে মাহা ভেবে বসলাম। ভাগ্য খেলছিলো আমার সাথে।

কেন এর উত্তর সার্থক না জানলেও মাহা তো জানে! চৈতিকে অপরাধবোধ থেকে বাঁচাইতেই মাহা এই ছোট একটা খেলা খেলে।

“গাছের পিছনে দেখার পর তারা আটক করে তোমাকে। নিয়ে যায় জঙ্গলের ভেতর আমাদের আরেক আস্তানায়। রবার্ট একজন বিজ্ঞানী ছিলো। ছিলো বলছি কারণ আমি তাকে খু’ন করেছি। সে এক ফর্মুলা আবিষ্কার করে। এটা মূলত আতঙ্কবাদী, জ’ঙ্গি জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি করেছিলো সে। তারা বো’ম বানানোর জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের কিডন্যাপ করে। বো’ম বানিয়ে ফেলার পর যদি সেই বিজ্ঞানীর শরীরে এই ইনজেকশন পুশ করা হয় তাহলে সেই ব্যাক্তি বিগত কয়েকদিন, কয়েকমাস কিংবা কয়েকবছরের স্মৃতি ভুলে যাবে। যাতে বিজ্ঞানীরা যদি বেঁচেও ফিরে তারা যেন কিছু বলতে না পারে। এই ফর্মুলা সফল হলে কোটি কোটি টাকা কামাতো রবার্ট। তার প্রয়োজন ছিলো একটা মানুষের। যে তার গিনিপিগ হতে পারবে। সে তোমাকে গিনিপিগ বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো এবং তোমার রক্তে ইনজেকশন পুশ করে ফর্মুলা প্রবেশ করালো। তবে তুমি বেঁচে ফিরে গেলে। জিদান রুমানাকে বুঝ দিলো। জিদান আমার মত হতে চাইতো সবসময়। তাই সে একটা ছিন্ন পা আগুন পাহাড়ে ফেলে আসে। আমি জানতাম না পুলিশের এএসপি তোমাদের পরিচিত। জিদানের নির্বুদ্ধিতার কারণে আমি রাগে, ক্ষোভে তখন উন্মাদ প্রায়। সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়লো তোমার উপর। জিদান সকল খোঁজ দিচ্ছিলো আমাকে। সিদ্ধান্ত নিলাম ফেরার পথে ট্রেনে খু’ন করবো তোমাকে। তাও নিজ হাতে।

সার্থকের কথায় আঁতকে উঠে তার পানে চায় মাহা। ভিতরটা অন্তঃসারশূন্য লাগছে। এতবার মৃ’ত্যুর সম্ভাবনা থাকার পরেও আজ মাহা জীবিত! তার কারণে চৈতির জীবন গিয়েছে। ভিষণ কষ্ট হচ্ছে মাহার বুকে। রুদ্ধ হয়ে আসা কন্ঠে সে বলে,
“আপনি..আপনি আমাকে খু’ন করার জন্য গিয়েছিলেন সার্থক!”

সার্থক মাথা নুইয়ে বলে,
“হ্যাঁ, মাহা। তবে বিশ্বাস করো তোমার মায়াবী চেহারা, তোমার কণ্ঠ, তোমার উপস্থিতিতে জীবনে প্রথমবারের মতো এক ধাক্কা লেগেছিলো আমার বুকে। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম তোমার নাম মাহা শুনে। হলুদ অলকানন্দার মতো মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেললাম আমি। আমার মতো নরপিশাচের হৃদপিণ্ডের লাবডাব বেড়ে গেলো মাহা তোমার সংস্পর্শে এসে। ট্রেনে ডা’কাত হামলা হওয়ার পর যখন তোমাকে নিয়ে জঙ্গলে ছুটে গেলাম। তখন আমার মস্তিষ্ক বলছিলো সুবর্ণ সুযোগ শেষ করে দাও একে। আমার মন বলছিলো ‘না’। তোমাকে কোলে নিয়ে, বুকের মাঝে নিয়ে অনুভব করলাম আমার এতকালের উত্তপ্ত বুকটা শান্ত হয়েছে। অদেখা এক বন্ধনে তোমার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলাম আমি। এতটা শান্তি আমি কেবল মায়ের কোলে পেতাম। আমি পারলাম না তোমাকে খু’ন করতে। তারপর আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে। তোমার পালিয়ে যাওয়া। জানো ভিষণ রাগ হয়েছিলো আমার সেদিন। রবার্ট, মুইংচিন অবশ্য আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। আমি মানিনি। মুইংচিন তোমাকে হাসপাতালে হ’ত্যার চেষ্টা করে। তোমার প্রতি তার অনেক ক্রোধ ছিলো। তাকে আমি হুকুম করেছিলাম এমনটা যেন দ্বিতীয়বার না হয়। তারপরও রবার্ট তোমাকে অপহরণ করে। আমি সেখান থেকেই তোমাকে রক্ষা করে আমার বাড়ি নিয়ে আসি। এমিলিনের আমাদের সুখ সহ্য হতো না আমি বেশ বুঝতাম। তারপর লুবান তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে আমি তাকে হ’ত্যা করি। রবার্ট তোমাকে গিনিপিগ বানাতে চেয়েছিলো। আমি তাকেও হ’ত্যা করি। মাহা, আমি তোমার উন্মাদ প্রেমিক। এমিলিন, নিভা মিলে আমাদের সন্তান কে পৃথিবীতে আসতে দেইনি। আমি তাদেরও পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেই। ডেভিড তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আমি তাকেও হ’ত্যা করি। মেরি তোমাকে মা’র’তে চেয়েছিলো তাকেও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেই। তোমার বেলায় আমি কাউকেই যে ছাড় দিতে পারিনা মাহা।

“মুইংচিনকে মারলেন কেন?”
মাহার শান্ত, ভগ্ন গলায় প্রশ্ন।

“মুইংচিন ছোট বাচ্চাদের মাং’স খেতে ভালোবাসে। লাইব্রেরিতে র’ক্তা’ক্ত হাতে মুইংচিন কে দেখে ফেলে রাতুল। রাতুলকেও অবলোকন করে মুইংচিন। আমি তাকে বারবার সতর্ক করেছি সে যেন তোমার কিংবা তোমার পরিচিত কারো ক্ষতি না করে। তারপরও সে রাতুলকে গু’ম করে খু’ন করে ভক্ষণ করে। আমি জিদানকে নির্দেশ দেই সে যেন দোষী হয়। নয়তো ফাঁসতে হবে আমাকে। তাজের সাথে বিয়ের পর থেকেই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। আমি চাইলেও সে আমার কোনো উপকার করবেনা। আবার ক্ষতিও করবেনা। যদিও রেজওয়ানের টিমে আমাকে বাঁচাতেই ঢুকেছিলো সে। রেজওয়ান কে বিভিন্ন ভাবে কনফিউজড করে দেয় তাজ। মাতব্বর শরীফের সিলেট আসার খবরটাও সেই দেয় আমাকে। আমার লোকজন মাতব্বর শরীফকে গায়েব করে। আমি গু’লি করি রেজওয়ানের হাতে। ভিতরে চেয়ারে বসানো লা’শটাই মাতব্বর শরীফের। যাই হোক রুমানা কষ্ট পাওয়ায় তুমি কষ্ট পেলে। তাই মুইংচিন দুনিয়া ছাড়লো। বিশ্বাস করো মাহা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি।”
“তাহলে এসব কাজ কেন করছেন?”
“কারণ আমি অপারগ। WCS এর সদস্যরা চারপাশে ওৎ পেতে আছে। ছিঁড়ে খাবে তোমাকে। আমি তা কিভাবে হতে দেই মাহা? আমি যতদিন এই আসনে আছি তুমি নিরাপদ থাকবে।”
“আমার এমন নিরাপত্তা চাইনা। আমার এমন জীবন চাই না।”

মাহা চিৎকার করে কাঁদে। নাহারকে পাহাড়ায় বসিয়ে সার্থক বাইরে বেরিয়ে যায়। আজকের মধ্যেই তার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে হবে। মাহা ঘুমের ভান ধরে পড়ে আছে। হাতের বাঁধনটা প্রায় খুলে ফেলেছে। নিজের চোখের সামনে এত অন্যায় দেখেও মাহা কিছুতেই চুপ করে থাকবেনা। তবুও সার্থক নামক মানুষটার জন্য বুক পুড়ছে মাহার। মাহা কেমন করে থাকবে সার্থক বিনে!

(চলবে)…

#অলকানন্দা
#পর্ব-৫৩
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

১২৮.
নাহার হলরুমের বাথরুমে গিয়েছে। তার মোবাইলটা সোফায় রাখা। সোফার সামনেই মেঝেতে মাহাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। বাগানে ঝুলানো টিমটিমে লাইট থেকেই ঘরে আলো ঢুকছে। মাহা হাতের বাঁধন খুলে ফেলে। সার্থক শিথিল করেই বেঁধেছিলো। মাহা যেন ব্যথা না পায়। মাহা উঠে দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। অতঃপর দৌড়ে আসে সোফার কাছে। শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে তার। মস্তিষ্ক বিরান হয়ে আছে। এক বুক ভালোবাসে মাহা সার্থক কে। কিন্তু তাই বলে একটা নরপি’শা’চ, নরখাদক কে মাহা কি করে ছেড়ে দিতে পারে! কত কত প্রাণ গিয়েছে তার হাতে! আরো হয়তো যাবে। নিজের চোখে সবটা দেখে মাহা কি করে চুপ করে থাকবে! সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে মন বলছে, “তাকে রেজওয়ানের হাতে তুলে দেওয়া মানে তার ফাঁ’সি নিশ্চিত।” মাহা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে। মোবাইলটা সোফায় রাখা। লক নেই। এটা মাহা জানে। রেজওয়ানের নাম্বার মাহার মুখস্থ।
“সৃষ্টিকর্তা, এমন পরিস্থিতি কেন দিলে আমাকে? যার সামান্য জ্বর, সামান্য ব্যথা আমি সহ্য করতে পারিনা আমি কেমন করে তার মৃ’ত্যু সহ্য করবো! আমি কেমন করে তাকে ছাড়া থাকবো? আমার মানুষটা কেন আমার হয়েও আমার হলোনা? এই দুঃখ আমি সইবো কেমনে? আমার পৃথিবী যাকে ঘিরে সেই মানুষটা বিনে আমি থাকবো কেমনে!”

হু হু করে কেঁদে উঠে মাহা। মাহা তো তাকে ভালোবাসে। সার্থকের ফাঁ’সি হলে মাহা কি করে বাঁচবে! মাহার মনে হয় থাকুক না আমার মানুষটা অপবিত্র। আমি তার সাথেই থাকবো। সার্থক কে ছাড়া পৃথিবী মাহা কল্পনাও করতে পারেনা। কেন মাহার সাথেই এমন হয়! যাদের মাহা ভালোবাসে তারাই ছেড়ে চলে যায়। সার্থক কে ছাড়া মাহা থাকতে পারবেনা। না, সার্থক কে ছাড়া মাহার পৃথিবী অচল। মাহার জীবন অচল। সোফায় কতক্ষণ বসে থাকে মাহা। মাথায় ভিষণ ব্যথা হচ্ছে। মাথা চেপে ধরে বসে থাকে সে। হালকা চোখ বুজে আসে। চোখের সামনে চৈতির অবয়ব। মাহার উপর হাসছে চৈতি। মাহাকে চিৎকার করে বলছে, “তুই একটা বিবেকহীন মানুষ মাহা। তুই একটা স্বার্থপর। ভালোবাসার কাছে আজ তোর বিবেক বিবর্জিত! ছিঃ! ধিক্কার তোকে।” মাহা চোখ মেলে তাকায়। নাহার দরজা ধাক্কাচ্ছে। বারবার বলছে, “ম্যাডাম, দরজা খুলেন। মাহা ম্যাডাম।” মাহার সেসবে খেয়াল নেই। সে কাঁপা হাতে মোবাইল হাতে নেয়। ছোট করে একটা মেসেজ পাঠায় রেজওয়ানের কাছে।
“আমাকে সাহায্য করুন রেজওয়ান ভাই। আমি খুব বিপদে আছি।”

পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে মোবাইলটা লুকায় মাহা। উঠে দাঁড়াতেই দেখে সার্থক পিছনে দাঁড়িয়ে।
“কি করছিলে তুমি মাহা?”

সার্থকের শান্ত সুরে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে মাহার। তুঁতলিয়ে সে বলে, “ক..কই। কিছু না তো।”
“আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করো না মাহা। আমি কিন্তু সব ধ্বং’স করে দিবো।”

সার্থক ঠান্ডা সুরে বলে। চোখ দুটো অদ্ভুত লাল। বাম হাত মুঠ করে রাগ নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে সে। মাহার লুকানো মোবাইলটা এক টানে নিয়ে মেঝেতে আছাড় মারে সার্থক। মাহা ভয়ে চোখ বুজে আছে। টেবিলের উপরে রাখা কাঁচের প্লেটের মতো শো পিসটা মেঝেতে ফেলে দেয় সার্থক।
“আমাকে রাগিয়ো না মাহা। আমি রাগলে কতটা ভয়ং’কর হতে পারি তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।”

মাহা মাথা নুইয়ে কাঁদছে। সার্থক মাহার গাল চেপে ধরে। যদিও আলতো করে। তবে কঠোর সুরে বলে,
“আর এক ফোঁটা অশ্রু যদি এই চোখ থেকে পড়ে। আমি এই মুহূর্তে বাইরে গিয়ে দশটা খু’ন করবো। তুমি অনামিকা আঙুলের আমার দেওয়া আংটি কেন ফেলে দিয়েছো মাহা? আনসার মি!”

সার্থকের চিৎকারে আঁতকে উঠে মাহা কান্না থামানোর চেষ্টা করে। আংটিটা কখন মেঝেতে পড়েছে মাহা নিজেও জানেনা। মাহার হাত ধরে তাকে উপরে নিজেদের ঘরে টেনে নেয় সার্থক। সব ব্যবস্থা সে করে এসেছে। রবার্টের রেখে যাওয়া ফর্মুলা এখনো তার কাছে আছে। ডেভিড যেদিন মাহার সাথে খারাপ আচরণ করলো সেদিন রাতেও মাহার শরীরে তা প্রবেশ করিয়েছিলো সার্থক। যাতে মাহা কোনো ডিপ্রেশনে না থাকে। আজ যখন অর্ধেক সত্য জেনেই ফেলেছিলো তাই সম্পূর্ণ সত্য মাহাকে জানিয়ে দেয় সার্থক। এবারে ফর্মূলা প্রবেশ করাবে শরীরে। মাহার যখন চোখ খুলবে এখনকার কোনো কথাই মনে থাকবেনা তার। নতুন জায়গা, নতুন পরিস্থিতি, নতুন জীবন। সার্থকের মাহাকে চাই! মিথ্যা, ছল সব করে হলেও তার মাহাকে চাই। যেকোনো মূল্যে চাই। নিজেদের ঘরে ঢুকে মাহাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সার্থক। পাগলের মতো ড্রয়ারে ফর্মূলার কাঁচের বোতল খুঁজে। মাহা চুপ করে বসে আছে খাটে। ভাষাহীন হয়ে পড়েছে। সার্থকের ঝাঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো। চোখে মুখে উদভ্রান্ত ভাব। সাদা শার্ট ঘামে ভিজে চুবচুবে। অদ্ভুত ভাবে মাহার গাঁয়েও আজ সাদা থ্রি পিস। সার্থক ফর্মুলা খুঁজে পায়। আরেক ড্রয়ার খুলে ইনজেকশনের ভিতর ফর্মুলা প্রবেশ করায়। ঘরে কড়া লাইটের আলো। ড্রয়ারের ভিতর প্রেগ্ন্যাসি কিট দেখে থমকে যায় সার্থকের হাত। স্পষ্ট পজিটিভ। সার্থক চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে, “তুমি প্রেগন্যান্ট মাহা?”

মাহা নিশ্চুপ। সার্থক আরো ক্ষেপে যায়। ডাক্তারের মাধ্যমে মাহাকে জানিয়েছিলো মাহা মা হতে পারবেনা। গর্ভ নিরোধক ঔষধ দিতো মাহাকে সে। তাও মাহা প্রেগন্যান্ট হলো কি করে!
“তুমি আমার দেওয়া ঔষধ খাওনি মাহা!”

মাহা কোনো উত্তর দেয়নি। সার্থক রেগে আশেপাশে থাকা সবকিছু ভাঙচুর শুরু করে।
“কেন আমার কথার অবাধ্য হও তুমি! আমি কি তোমাকে কম ভালোবাসি! এই বাচ্চার কারণে মৃ’ত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছো তুমি। আমার বাচ্চা চাইনা। এই বাচ্চা আমি এবরসন করাবো।”

সার্থকের কথায় চমকে উঠে মাহা। হাত চলে যায় পেটে। নিজের সন্তানকে মে’রে ফেলতে চাচ্ছে সার্থক।
“আপনি এতটা নির্দয়!”
“তোমার জন্য আমি অনেক অনেক নিষ্ঠুর হতে পারি।”

সার্থক ড্রয়ারের কাছে ছুটে যায়। সেখানে ইনজেকশন রাখা। মাহা বুঝতে পারছে এই ইনজেকশন যদি মাহার শরীরে একবার পুশ করা হয় তাহলে মাহা সব ভুলে যাবে। বাচ্চার কথাও ভুলে যাবে। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে মাহা। সার্থক পিছন থেকে চিৎকার করছে, “আমার আসল রূপ দেখতে না চাইলে চুপচাপ ফিরে এসো। আমি কিন্তু ভয়ং’কর হতে পারি।”

মাহা উদভ্রান্তের মতো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। সার্থক পিছনে আসছে। হাতে ইনজেকশন। নরপিশাচের মতো লাগছে তাকে। নরম, কোমল সার্থক যেন রাগের তাড়নায় হিং’স্র হয়ে উঠেছে।
“মাহা, থামো। মাহা, আমি রেগে গেলে কিন্তু সব ধ্বং’স করে দিবো।”

হলরুমটায় আলো আঁধার। মাহা সোফার পিছনে গিয়ে লুকায়। সার্থক হলরুমের মাঝে দাঁড়িয়ে। নরম গলায় ডাকছে,
“মাহা, সোনা। সামনে আসো। আমি কিছু করবো না সোনা।”

ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে মাহা। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। হাত কামড়ে কান্নার আওয়াজ বন্ধ করে মাহা। হিঁচকি উঠে গেছে তার। সার্থক ডাকছে কোমল সুরে, “মাহা, অলকানন্দা আমার।”
“মাহা। আমি জানি তুমি টেবিলটার নিচে।”

সুর টেনে বলে সার্থক। উঁকি দেয় ডাইনিং টেবিলের নিচে। ভয়ংকর শীতল সার্থকের গলা। নিরব রজনী চিড়ে ভুতুড়ে লাগছে সে সুর। মাহাকে না পেয়ে টেবিলের উপরে রাখা গ্লাস ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে। সার্থক সোফার দিকটায় আসতেই হামাগুড়ি দিয়ে বড় পিলারটার পিছনে ছুটে যায় মাহা। সার্থক আবার সুর করে বলে,
“মাহা, তুমি কি এখানে?”

মাহাকে সোফার পিছনে খুঁজে না পেয়ে টি-টেবিলে লাথি মারে সার্থক। ‘মাহা!’ বলে চিৎকার করে উঠে। মাহা পিলারের পিছনে দাঁড়িয়ে। পাশে থাকা টেবিলে একটা ছাই রঙের চিনামাটির ফুলদানি রাখা। বেশ শক্ত। সার্থকের প্রাচীন জিনিসের অনেক শখ। এই ফুলদানিটা নিলামে বড় শখ করে চীন থেকে কিনেছিলো সার্থক। মাহা ফুলদানিটা হাতে নেয়। সার্থক আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে পিলারের কাছে। মাহা ফুলদানি হাতে দাঁড়িয়ে। সার্থক ‘মাহা’ বলে উঁকি দিতেই শরীরের সমস্ত জোরে মাহা আঘাত করে সার্থকের মাথায়।

(চলবে)…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here