অলকানন্দা #পর্ব- ৫৪,৫৫ শেষ

0
1265

#অলকানন্দা
#পর্ব- ৫৪,৫৫ শেষ
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি
৫৪

১২৯.
মাহা যখন সার্থক কে আঘাত করে তখন সার্থকের চোখে ছিলো বিস্ময়। সার্থক বিশ্বাস করতে পারে না তার মাহা, তার অলকানন্দা তাকে আঘাত করেছে। মাহা সার্থক কে আঘাত করার কালে তার শরীরে কোথ থেকে যেন পৈশাচিক শক্তি এসে জড়ো হয়। অত্যধিক জোরে আঘাত করে সে সার্থক কে। সার্থকের হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায় ইনজেকশন। সার্থক মাথা চেপে ধরে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। যতটা জ্বালা সে শরীরে অনুভব করছে তার থেকে অধিক জ্বা’লা হচ্ছে তার অন্তরে। তার অন্তর চিৎকার করে বলে, “আমি মা’রা গেলে তোমার কি হবে মাহা? তোমার যে এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তুমি যে একা হয়ে যাবে। মাহা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

সৃষ্টিকর্তা, কখনো আপনার কাছে কিছু চাইনি। অনেক ভুল করেছি জীবনে। আজ চাচ্ছি, আমার মাহাকে আপনি ভালো রাখবেন।”

মুখে বলার মতো সময় সার্থক পায়না। মাহা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লাল তরলে মেঝে ভেসে যাচ্ছে। সার্থকের চোখ বুজে আসছে। যন্ত্রণায় মেঝেতে কাঁতরাচ্ছে সে। মাহা ঝাঁপিয়ে পড়ে সার্থকের বুকে। চিৎকার করে বলে,
“না, না সার্থক। প্লিজ না, প্লিজ। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। সার্থক, সার্থক…

মাহা পাগলের মতো চিৎকার করছে। সার্থকের গালে হাত রেখে ডেকে চলেছে তাকে। সার্থক অবশ হয়ে আসা শরীরে বিড়বিড় করে,
“ভালো থেকো মাহা। ভালোবাসি।”

চেষ্টা করে মাহার এলোমেলো চুলে একখানা চুমু খেতে। পারেনা। অনেক র’ক্তক্ষরণ হয়েছে তার । ক্রমাগত হচ্ছে। সারাজীবনের মতো এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে সার্থক। রেখে যায় ক্রন্দনরত অসহায় এক প্রেয়সীকে। পেটে নিজের সন্তান কে। নিজের সাম্রাজ্যকে। সুখী হয়ে সংসার করা সার্থকের আর হয়না। মাহা পাগলামি করে। সার্থকের চুলে, গালে, ঠোঁটে হাত বুলায়। চুমু খায় অজস্র। নাম ধরে ডাকে। সার্থক কথা বলেনা কেন! সার্থকের কপালে চুমু খেয়ে মাহা বলে,
“আমি আপনাকে আঘাত করতে চাইনি তো। রাগ করেছেন? প্লিজ উঠুন না। আমার ভয় লাগছে তো। এই সার্থক। উঠুন না। এই যে আমি কানে ধরছি। আর আপনার অবাধ্য হবো না। আপনার সব কথা মেনে নিবো। আপনি যা বলবেন তাই করবো। আপনি আমার নাম ধরে একবার ডাকুন না সার্থক।”

মাহার সাদা জামা সার্থকের র’ক্তে মাখামাখি। মাহা অহেতুক কথা বলতে বলতে সার্থকের বুকে মাথা রেখেই অজ্ঞান হয়।

_______________

পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে মাহা আর সার্থক কে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায় রেজওয়ান। মিস তাজও আছে সাথে। তাজের ভিতরটায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিছু ভালোবাসা থাকে নিরবে। তাজের ভালোবাসাটাও ঠিক তেমনি ছিলো। সকালবেলা মাহার মেসেজ দেখার সাথে সাথেই প্লেনে করে সিলেট ছুটে আসে রেজওয়ান। অতঃপর সিলেট পুলিশ ফোর্স কে নিয়ে প্রবেশ এই বাংলো তে। মাহাকে বারবার ফোন করেও তার খোঁজ পায়নি রেজওয়ান। তাই চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছিলো তার। হাসপাতালে নেওয়ার সাথে সাথেই সার্থক কে মৃ’ত ঘোষণা করে কর্তব্যরত ডাক্তার। মাহাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। শরীর প্রচন্ড দুর্বল। বেশি চাপ পড়লে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। ‘মাহা প্রেগন্যান্ট’ শুনে আরো অবাক হয় রেজওয়ান। রুমনাকে কল করে হাসপাতালে আসতে বলে। রুমানা, অনিক রওনা দিয়েছে। এশা সিলেট থাকায় ওকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলে রুমানা। ইনভেস্টিগেশন চালানো হয় বাংলোতে। লাইব্রেরির সেই ঘর থেকে বের করা হয় শত খানেক লা’শ। নাহারকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মাঝে সার্থকের ডায়েরি খুঁজে পায় তাজ। আশেপাশে অন্যরা আছে। তবুও সে পাতা উল্টোয়। কয়েক জায়গায় নিজের নাম দেখে সেই পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে ফেলে তাজ। এটা সত্যি সার্থক কে তাজ ভালোবাসতো। অদ্ভুত মায়া কাজ করতো মানুষটার প্রতি। সেই পূর্ণিমার রাতে ক্রস ফায়ার করার সময় দুটো চোখ দেখে তাজ বুকে ধাক্কা অনুভব করে। মন বলে এই মানুষটার সাহায্য না করলে তোর জীবন বৃথা তাজ। তাকে কাছে চাইনা। কেবল একটু সান্নিধ্য চাই। কতশতবার সার্থক কে বাঁচিয়েছে তাজ। বয়স ত্রিশের কোঠা পেরিয়েছে তবুও এখনো বিয়ে করেনি। এএসপি রেজওয়ান কে ভুল ফাইল দেওয়া, চৈতি যে নাম্বারে কথা বলতো লুবানের সাথে সে সিমের তথ্য গোপনসহ আরো কত ছলনা। সার্থকের মৃ’ত্যুতে তাজেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এসবে তার নাম জড়ালে ফাঁ’সি নিশ্চিত। বাড়িতে প্রতিবন্ধী ভাই, অসুস্থ মা-বাবা তাদের কি হবে! নিজের নাম কোনোভাবেই এসবে জড়াতে চায় না সে। সার্থকসহ যারা তাকে চিনতো তারা সবাই মা’রা গিয়েছে। তাই ডায়েরির যে পৃষ্ঠাগুলোতে তার নাম পেয়েছে সব ছিঁড়ে ফেলেছে সে। তারপর ডায়েরি তুলে দেয় রেজওয়ানের হাতে। সব পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় রেজওয়ান। এসবও সম্ভব! লাইব্রেরি অনুসন্ধান কালে আরো একটা ডায়েরি খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে WCS এর সকল সদস্যের নাম, ঠিকানা লিখা আছে। সারাদেশে স্রোতের চেয়েও অধিক গতিতে ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। কারফিউ জারি করা হয়। ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও মাহার জ্ঞান ফিরেনি। পোস্ট’মর্টেম করা হয় সার্থকের দেহ। যে নিজ হাতে চিড়ে ফেলতো মানব দেহ। আজ তার দেহ চিড়ে ফেলে ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত করা হয়। রেজওয়ানসহ কয়েকটি টিম মিলে খুঁজে খুঁজে ক্রসফায়ার করে WCS এর সদস্যদের। উপরমহল থেকে এটাই নির্দেশ করা হয়েছে। সবাই ভাবছে মাহারও এসবে সম্পৃক্ততা রয়েছে। মাহার জ্ঞান ফিরার অপেক্ষায় দেশবাসী। রেজওয়ানের কষ্ট হচ্ছে। প্রিয় মানুষটার সুখ তো সে সবসময় আল্লাহর কাছে চাইতো। তার সব দোয়ায় মাহা থাকতো। আজ… দীর্ঘশ্বাস আসে রেজওয়ানের বুক চিড়ে। আইসিইউ তে শোয়ানো মাহার নিথর দেহের পানে চেয়ে থাকে সে। এশার সাথেও দেখা হয়। কথা হয়না। রুমানা, অনিক এসে পৌঁছেছে।

______________

তিনদিন পর যখন মাহার জ্ঞান ফিরে মাহা সম্পূর্ণ এক পাথর মানবী। পাণ্ডুর তার মুখখানা। চুপচাপ, গুরুগম্ভীর তার আচরণ। রেজওয়ান সহ আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার নানা রকম প্রশ্ন করে তাকে। মাহা শুধু একটাই কথা আওড়ায়,
“আমি সার্থক কে মে’রে ফেলেছি।”

আর কোনো কথা তার মুখে নেই। ঢাকার গুলশানের বাড়ি থেকেও উদ্ধার করা হয় লা’শ, মানব শরীরের অংশ। মিডিয়া, দেশবাসী সরগরম। চ্যানেলে চ্যানেলে এই খবর। রেজওয়ান মাহাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। মাহাকে কি করে নির্দোষ প্রমাণ করবে সে!

ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করা হয় তাদের। লা’শবাহী গাড়ি দিয়ে যখন সার্থকের লা’শ ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছিলো তখন হুট করেই মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে যায় গাড়ি। দুপাশে ঘন জঙ্গল। কর্তব্যরত অফিসার ও ড্রাইভার দেখেন গাড়ির চারপাশে ঘোর অন্ধকার। কারা যেন ঘুরছে। জ্ঞান হারান তারা। চোখ খুলে তারা আর সার্থকের লা’শ খুঁজে পাননি। সমস্ত জায়গা হতে সার্থকের ছবিগুলোও উধাও হয়ে যায়।

(চলবে)….

#অলকানন্দা
#পর্ব- ৫৫ (সমাপ্তি পর্ব)
#লেখিকা_আনিকা_রাইশা_হৃদি

১৩০.
মৃ’ত মানুষেরেরা কখনো ফিরে আসেনা। এই জগতে মৃ’ত মানুষের ফিরে আসার কোনো নিয়ম নেই। সার্থকও আর ফিরে আসেনি। তার লা’শও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাহা যখন সার্থক কে আঘাত করেছিলো তখন এক পৈশাচিক শক্তিতে ভর করেছিলো তাকে। আ’ঘাতটা এতই তীব্র ছিলো যে মাথা ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিলো। র’ক্তে ভেসে গিয়েছিলো মেঝে।
_____________

নাহার, খাজা থেকে জবানবন্দি নেওয়া হয়। তারা জানায় মাহার এসব কর্মকাণ্ডে কোনো হাত নেই। এদিক থেকে রক্ষা পায় মাহা। কেস থেকে অবশ্য সম্পূর্ণ রেহায় পায়নি। তবে সার্থক কে হ’ত্যা করার কেসটা তখনও চলছে। রেজওয়ান নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মাহাকে রক্ষা করার জন্য। মাহা! সে এক পাথর মানবী। কোনো অশ্রু তার চোখ দিয়ে বের হয়না। কোনো শব্দ তার কন্ঠে নেই। চুপচাপ, নির্বাক। এশা, রুমানা প্রায়শই আসতো জেলে মাহার সাথে দেখা করতে। সাবিনাও এসেছেন অনেকবার। এশাকে বহুদিন বাদে চোখের সামনে দেখে ফন্দি আঁটেন তিনি। অনেক হয়েছে। এখন যদি এই অপরাধীকে রেজওয়ান ঘরে তুলে তাহলে তা কোনোক্রমেই তিনি মেনে নিবেন না। যদিও তিনি জানেন মাহা নিজেই কখনো যাবেনা। তবুও সাবধান হতে ক্ষতি কি! এশার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেন তিনি। বহু কসম, ছল ছুতোয় রেজওয়ানকে বাধ্য করেন এশাকে বিয়ে করতে। মায়ের এই রূপে খুবই কষ্ট পায় রেজওয়ান। এশাও পরিস্থিতির শিকার। জেলখানা, কোর্ট সব জায়গায় টানা হেঁচড়া কালে জন্ম নেয় মাহা আর সার্থকের সন্তান। আহা! একেই বলে ভাগ্য! যে মাহাকে চারটা বছর ফুলের টোকা দেয়নি সার্থক। যে মাহার সামান্য অসুখে হাসপাতাল তোলপাড় করে ফেলতো সার্থক। আজ সে মাহা নিজের সাথে লড়াই করে, প্রসব বেদনা সয়ে সরকারি হাসপাতালের এককোণে ডাক্তারদের বহু অবহেলার শিকার হয়ে জন্ম দেয় তাদের ভালোবাসার ফসলকে। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কান্না করে মাহা। এতদিনের জমানো সকল দুঃখ, কষ্ট বেরিয়ে আসে তার বুক চিড়ে। মাহার কান্নায় ধরণীও কাঁদে সেদিন। মুষলধারে বৃষ্টি নামে আকাশের বুক হতে। এলোমেলো মাহা সহস্র চুম্বন এঁকে দেয় সার্থকের রেখে যাওয়া শেষ চিহ্নের কপালে, গালে। চিৎকার করে বলে, “বাবা, তোমাকে পেতে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে বিসর্জন দিলাম। সে নেই। আমার অন্তরটা যে ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত হয়ে আছে বাবা।” নিজের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি মাহা অনুভব করে নিজের অশান্ত বুকে।

বাংলাদেশ। এখানে একটা কেসের শুনানি চলে মাসের পর মাস। কখনো কেটে যায় কয়েকবছরও। মাহা নিজের সন্তানকে নিয়ে গাজীপুর কারাগারে জীবন পাড় করে। রেজওয়ান আসে। অসহায় চোখে চেয়ে থেকে চলে যায়। কারাগারে মাহার পরিচয় হয় অরি চাকমার সাথে। মাহার থেকে বছর পাঁচেকের বড়। মাহা যখন বাচ্চা হাতে জেলে আসে তখন কি করে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবে, কি করে কোলে নিবে কিছুই বুঝতে পারতো না। ছেলেটাও ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতো। মাহা ছেলেকে দেখে কাঁদতো। কেউ এগিয়ে না আসলেও অরি এগিয়ে আসে। মাহাকে যত্ন করে। মাহার ছেলেকে যত্ন করে। অরির বাড়ি ছিলো টাঙ্গাইল। ওর যখন বয়স সতেরো তখন বাবা মায়ের সাথে তাঁত বুনতো অরি। অরির বাবা মা ছিলেন তাঁতি। ছনের ঘর তাদের। একদিন তার মামাতো ভাই মাঝরাত্রে নির্যাতন করতে আসে তাকে। অরি ব’টি হাতে কুপিয়ে হ’ত্যা করে নিজের মামাতো ভাইকে। কেস হয়। জেল হয়। তারপর থেকে অরি এই জেলে। বহুবছর হয়ে গেছে। সাজা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। মাহা ছাড়া পাওয়ার দুদিন আগেই ছাড়া পায় অরি। মাহা খালাস পাওয়ার পিছনে রেজওয়ানের ভূমিকা ছিলো অনেক। মাহার জন্য জেলগেটের বাইরে বসেছিলো অরি। মাহা নিজের ছাড়া পাওয়ার কথা রুমানা, অনিক কে জানায়নি। রেজওয়ান, এশা কেউই মাহাকে আর খুঁজে পেলো না। মাহার সৎমা, ভাই, বোন ওর দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলো তারাও এসে হতাশ হয়। কাউকে না জানিয়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে দূরে পাড়ি জমিয়েছে মাহা। সার্থকের সব সম্পদ সিল করা হয়েছে। সেসবে কোনো আগ্রহও মাহার নেই।

বছর চারেক পর…

চট্টগ্রামের এক প্রত্যন্ত গ্রাম। পাহাড়ে ঘেরা চারপাশ। দূরে বয়ে চলেছে নাম না জানা এক নদী। গাছগাছালিতে মুখরিত চারপাশ। কাঠের তৈরি বাড়ি। বাড়ির সামনে উঠোনে তাঁতের কলে শাড়ি তৈরি হচ্ছে। বড় অর্ডার এসেছে। একশ শাড়ি তৈরি করতে হবে। অরি সমান তালে কাজ করে চলেছেন। সময় কম কাজ অনেক বেশি। গেরুয়া রঙের শাড়ি পরুয়া এক নারী। চুলে তার খোঁপা করা। চোখে চশমা। সবার কাজই ঘুরে ঘুরে দেখছেন তিনি। বিশজন মহিলার ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন দক্ষ হাতে। এমন সময় পনেরো বছরের এক কিশোরী দৌড়ে আসে। চিৎকার করে বলে,
“মাহা আম্মা, অর্থ বাবারে কোথাও খুঁজে পাইতাছি না।”

ছেৎ করে উঠে মায়ের মন। কলিজার টুকরার কিছু হলে সে কেমন করে থাকবে!

‘পাইতাছোস না মানে!’ অরি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে দাঁড়ায়। মাহা তাকে কাজ করতে বলে নিজেই বেরিয়ে পড়ে রিনি নামের কিশোরীর সাথে। কয়েক জায়গায় ঘুরেও অর্থের খোঁজ পাওয়া যায় না। ছেলেটা এত দুষ্টু হয়েছে! মাকে অশান্তিতে না ফেললে ওর হয়ই না। অলকানন্দা ফুলের বাগান। এক অলকানন্দা গাছের সামনে বল হাতে দাঁড়িয়ে আছে অর্থ। গভীরভাবে কি যেন পর্যবেক্ষণ করছে। মাহা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। মাকে দেখে হকচকিয়ে যায় অর্থ। সার্থকের মতো চোখ, সার্থকের মতো নাক, মুখ। চুলও ঝাঁকড়া। যেন সার্থকেরই কৈশোর রূপ অর্থ। মাহা পাগলের মতো চুমু দেয় অর্থের চোখে,মুখে। অসহায় কন্ঠে বলে,
“মাকে, টেনশনে ফেলে কি সুখ পান বাবা?”

সামান্য হেসে মায়ের চোখের অশ্রু মুছিয়ে অর্থ বলে,
“মা, দেখ কি সুন্দর অলকানন্দা ফুল। একদম তোমার মতো।”

থমকে যায় মাহা। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অর্থের পানে। অতঃপর অর্থের হাত টেনে ধরে রওনা দেয় বাড়ির দিকে।

পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি অলকানন্দা ফুলের গাছ। সবুজ পাতায় ঘেরা থোকায় থোকায় হলদে ফুলগুলো বড়ই মোহনীয় দেখতে। সেই সাথে রহস্যময়ও।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here