অলিন্দ্রীয়া,পর্ব_৪_৫_ও_৬
তৃধা আনিকা
পর্ব_৪
নাহিদ ভাইয়ার সাথে আপুর কি কথা হলো আমরা জানি না। শুধু দেখা গেল, বিকেলে এসেই লিয়াপু সোজা উপরের ঘরে চলে গেল। রাতে নিচে খেতেও এলো না। পরদিন সকালে মা এসে বললেন,
—লিয়াকে ডাকাডাকি করেও সারা পাচ্ছি না।
দরজা ভাঙ্গা হলো। ডাক্তার ডাকা হলো। ডাক্তার বললেন, হসপিটালাইজড করতে হবে।
আমি, অংক ভাইয়া আর মায়াবু ছাড়া সবাই লিয়াপুকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলেন।
মায়াবুকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন,
—আপায় বড়বাবার সব ওষুধ খাইয়া ফেলছেন! ঘটনা খুবই খারাপ। যম আইসা জান কবচ করতে গিয়াও করে নাই। মনে হয়, আপার মুখটা দেইখা মায়া হইলো তাই জান কবচ করে নাই।
হাসাপাতাল থেকে আপু ফিরে এলেন চারদিন পর। তাঁর চেহারা বিধ্বস্ত! গায়ের রং মরে গেছে, চোখ কোটরে গিয়ে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। গলায় মুক্তোর লকেট নেই, হাতের ব্রেসলেট নেই, সাদা টি-শার্টের সাথে আপুর ফ্যাকাসে মুখটা দেখে রূপায়নের মনে হলো, এ তার লিয়াপু কিছুতেই হতে পারে না, কিছুতেই না!
লিয়াপু পুরোদমে সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন, সবার সাথে খাওয়া ছেড়ে দিলেন, ছবি আঁকাআঁকিও বন্ধ। রুম থেকে প্রায় বেরই হন না।
শুধু আমাদের দুই ভাইকে দেখলে বলেন,
—-মাই সুইটমিট ব্রাদার্স, আই এম স্যরি। ভেরি স্যরি!
জীবন থেমে যাওয়া বলতে কি কোনো ব্যাপার আছে? কেউ যদি বলে নেই, তাহলে সেটা মিথ্যা। লিয়াপুর এই ঘটনার পর, রূপায়নদের বাড়ির সবার জীবন থেমে গেল। ব্রেকফাস্ট টেবিলে বাবা-দাদুই’র ঝগড়া বন্ধ হয়ে গেল, মায়াবুর জিনিসপাতি ভাঙ্গা বন্ধ হয়ে গেল, অংক ভাইয়ার অংক আবিষ্কার বন্ধ হয়ে গেল, ছোটচাচার নাম ছোট করা বন্ধ হয়ে গেল এবং সবশেষে আমার ক্যাডেট কলেজ ভর্তি প্রিপারেশন বন্ধ হয়ে গেল। মনে হলো সবাই স্ট্যাগন্যান্ট করে গেছে একজায়গায়।
এরমাঝে এক সকালে ব্রেকফাস্টে মা জানালেন,
—লিয়া এবার পরীক্ষা দিচ্ছে না, সে ড্রপ করে রিপিট করতে চায়। তাঁর পড়াশোনা হচ্ছে না।
বাবা দাদুইকে বললেন,
—আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিবো বাবা। অফিসিয়াল প্রাইমারি কথাবার্তা শেষ। পেপারস রেডী করা হচ্ছে।
আমার ভালো লাগছে না।
দাদুই এতদিন যে চড়টা বাবাকে দিতে যেয়েও দিতেন না, সে চড়টা দাদুই বাবাকে আজ দিলেন।
বাবা একটুও রাগ করলেন না। বরং হেসে বললেন,
—বাবা, আমার ঠিক কোথায় ভুল ছিল যে আমার মেয়েটা এরকম কষ্ট পাচ্ছে? আমি সারা জীবন সৎ থেকেছি, ক্লিয়ার থেকেছি। তাহলে?
দাদুই বাবার মাথায় হাত রেখে বললেন,
—খারাপ ছাত্রদের পড়াশোনা দেখবি ক্লাস এইট নাইনেই শেষ। কিন্তু ভালো ছাত্রদের অনেক পড়াশোনা করতে হয়, পরীক্ষাও বেশি। বিসিএস দেয়, ডাক্তাররা এফসিপিএস করে। তেমনি ভালো মানুষদেরও পরীক্ষা বেশি! তোর পরীক্ষা চলছেরে, জিলু। মন দিয়ে পরীক্ষাটা দে, তুই পাস করে যাবি।
বাবা শব্দ করে কেঁদে ফেললেন।
আমরা সবাই বাবার কান্নাতে অস্থির হয়ে পড়লাম।
সেই সময়টাতেই আমরা প্রথম বুঝতে পারি, আমরা আমাদের অলিন্দ্রীয়া আপুকে সবাই ঠিক কতটা ভালোবাসি।
পর্ব_৫
অলিন্দ্রীয়ার এই ঘটনায় সবাই যখন স্টাক হয়ে আছে, বড় ফুফুই সমাধান বের করেছেন। দফায় দফায় বাবা আর দাদুইকে ফোন করে কথা বলেছেন এবং বাড়ির এই জগাখিচুড়ি অবস্থাকে ঠিক করতে সেই সমাধান নিয়ে আজ বড় ফুফু এসেছেন।
সন্ধ্যায় ফ্যামিলি মিটিং ডাকা হয়েছে। ছোটরা বাদে বড় সবাইকে থাকতে হবে। প্রত্যেক পরিবারের যেমন একজন নীরব প্রভাবশালী আত্মীয় থাকে; যার কথা, বুদ্ধি, সিদ্ধান্ত সবার মেনে নিতে হয়! রূপায়নের বড় ফুফু হচ্ছেন সেই ধরনের মানুষ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। তাঁর নাম ড. শরীফা চৌধুরী।
ফুফু এসেই সকাল থেকে এক দফা গোপন মিটিং সেড়েছেন, বাবা-মা আর দাদুইর সাথে। টপ সিক্রেট মিটিং। সন্ধ্যার মিটিং এ সবাই ডট ইন দ্য টাইমে এলেও, অলিন্দ্রীয়া এলো সবার শেষে।
ফুফু সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
—আই হেইট দোস পিপল হু আর নট সিনসিয়ার এবাউট দ্য টাইম।
অলিন্দ্রীয়া ব্যাখ্যা দেবার স্বরে বললো,
—পড়ছিলাম ফুফু। কখন ৬টা বাজলো খেয়াল করিনি।
—স্টপ ইট, লেজি গার্ল। এসব লেইম এক্সকিউজ এখানে দেয়া যাবে না।
এখন সবাইকে যা বলতে ডাকা হলো তা-হলো, লিয়া
আর পড়াশোনা করবে না। তাঁর পড়াশোনা আজ থেকে বন্ধ। সে খাবে-দাবে, ঘুমাবে, নিজের মতো করে থাকবে। শুধু নো স্টাডি।
অলিন্দ্রীয়া সোফায় বসা ছিল, ঝট করে দাঁড়িয়ে গেল।
—নো স্টাডি! হোয়াই? পড়াশোনা বন্ধ মানে? আমার প্রিপারেশন ভালো না, অনলি এই এক্সামটা ছাড়ছি।আই’ল রিপিট দিস কোর্স।
—পড়বি না মানে পড়বি না। ব্যস! পড়াশোনার বাহানায় বাইরে যাবি, ছেলেপুলে দেখে প্রেমে পড়বি, সেই ছেলে রিফিউজ করলে বিষ খাবি, এসব করার কোনো দরকার নেই। আমাদের পরিবারের একটা রেপুটেশন আছে। তোর জন্য পুরো ফ্যামিলির রেপুটেশন খারাপ হতে দেয়া যাবে না।
অলিন্দ্রীয়া রিকোয়েস্টের গলায় বললো,
—আই এম স্যরি ফুফু! আমি পরীক্ষা দিবো।
—বিষ খাবার কি দরকার ছিল? খুব বেশি অসম্মানজনক কি কিছু ঘটেছিলো লিয়া?
—আই ওয়ান্ট টু কন্টিনিউ বাবা, প্লিজ। স্যরি ফুফু।আই এম স্যরি।
ফুফু বললেন,
—নো পড়াশোনা। ডিসিশান ফাইনাল। তোর বাবা-দাদুই’র সাথে কথা হয়ে গেছে। তোমাকে যাস্ট জানাবার দরকার ছিল। নাউ গেট লস্ট।
—ফুফু, আমি কি সবার সামনে বলবো সেদিন একচুয়েলি কি হয়েছিলো?
—অফকোর্স বলতে পারিস। বাট এতে যে ডিসিশন বদলাবে তা ভাবিস না।
—সেদিন যখন নাহিদকে প্রপোজ করতে গেলাম সে আমায় রিফিউজ করলো। তবে সেটা নরমাল কোনো রিফিউজ ছিল না। গিয়ে দেখি শয়তানটা ও’র গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে। ও’র বেশ কতগুলো বন্ধুও এসেছিলো। আমাকে সুন্দরভাবে ‘না’ বলা তো দূরে, কুৎসিত আর নোংরা কথা বলছিলো।
—নোংরা কথা বললেই মরে যাবি?
—শুধু তাই না ফুফু, নাহিদের বন্ধুরা আমার ছবি তুলছিলো। বাবার নাম ধরে বলছিলো, হেব্বি মালদারের মেয়ে তো দেখি। তা তোমার নাহিদকে কত রাতের জন্য চাই? ও’র গার্লফ্রেন্ড বলে যাকে পরিচয় দিয়েছিলো, সেই মেয়েটা আমার গায়ে হাত দিয়ে বললো, থাকে থাকে বড় লোকের মেয়েদের এরকম শোয়ার দোষ থাকেই! বাকি ছেলেগুলো বলতে থাকলো তা কয় নম্বর এটা এবং আরো অনেক নোংরা কথা ওরা আমায় বলেছিল।
বলতে বলতে ঘৃণায় অলিন্দ্রীয়া যেন শিউরে উঠলো। এরপর একটু থেমে বললো,
—ফুফু এরকম থার্ড স্ট্যান্ডার্ড কথাবার্তা শুনতে শুনতে এক পর্যায়ে ওখান থেকে আমি এক ছুটে বেরিয়ে আসলাম।
—ওখানে এতগুলো ছেলেপুলে এসেছে দেখেও কথাগুলো শোনার জন্য বসে থাকলি কেন?
অলিন্দ্রীয়া নিজেকে সামলালো,
—ফার্স্টে ওরা ২জনই ছিল। এরপর নাহিদ যখন বললো, চারবছর ধরে ঐ মেয়েটা ও’র গার্লফ্রেন্ড তখন আমি ভালোভাবেই চলে আসতে চাইলাম। মুহূর্তেই আশেপাশের থেকে কুকুরটার বন্ধুগুলো বেরিয়ে এলো। আমি বুঝতেই পারলাম না পছন্দ আর ভালোলাগার মতো সুন্দর একটা বিষয়কে কিভাবে এত নোংরা করে ফেললো? আমাকে পরিবারসহ অপমান করার পর বাবার কথা, দাদু’ইর কথা ভেবে আমার নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছিলো তখন ফুফু। সাডেন শকটা আমি নিতে পারিনি। আই এম স্যরি।
—তুই এইজন্য মরে যাবার চেষ্টা করবি? যদি কিছু হয়ে যেত?
—হয়নি তো।
—ইন ফিউচার এরকম হবে না যে গ্যারান্টি কি?
অলিন্দ্রীয়া মনে মনে বললো, ফুফু তুমি অতি বুদ্ধিমতী মহিলা আমি জানি। তার মানে এই নয় যে, আমার মাথায় একদমই বুদ্ধি নেই। বুদ্ধির যে খেলাটা তুমি খেলতে চাচ্ছো, আমি তাতে তোমাকে সত্যিই হারিয়ে দিবো। কিন্তু একটু হেসে মুখে বললো,
—যেকোনো শর্তে আমি এগ্রি করবো। অনলি পড়াশোনাটা কমপ্লিট করতে চাই।
—আর ইউ ড্যাম শিওর লিয়া?
—ইয়েস আই এম, ফুফু।
—আমার শর্ত হলো, বিয়ে করতে হবে। আমরা পছন্দ করে বিয়ে দিবো।
—বিয়ে?
—লেট মি কমপ্লিট। যাস্ট বিয়ে। সংসার তোকে এক্ষুণি করতে হবে না। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করা অবধি তুই তোর মতো করেই থাকবি। তোর
বাবার মেয়ে হয়েই থাকবি। অনলি মাথায় রাখবি, তোর একটা হাজবেন্ড আছে। কোনো কাজে দরকার হলে তুই তাকে ডাকতে পারবি। তারপর তোর যখন মনে হবে তুই রেডী, তখন সংসারটা করিস।
—বিয়েটা কখন করতে হবে?
—দেখা যাক। ছেলেকে পাওয়া যাক। সে এখন কানাডাতে আছে।
অলিন্দ্রীয়া বললো,
—আর ইউ ডান ফুফু? শেষ হলে আমি উঠবো।
বলেই অলিন্দ্রীয়া উঠে দাঁড়ালো।
—নো আই এম নট ডান।
অলিন্দ্রীয়া আবারো বসে পড়লো।
পর্ব_৬
—তুই কি ছেলেকে দেখতে চাস? ছেলে সম্বন্ধে কিছু জানতে চাস?
—নো ফুফু। আমি ধরে নিচ্ছি এটা একটা এগ্রিমেন্ট। সো নাথিং টু নো।
—তাও শোন। ছেলেটার ফ্যামিলি নেই, মাতৃপিতৃহীন ছেলে। তাঁর পড়াশোনা আমি চালিয়েছি। আমার কলাবাগানের বাসায় সে থাকতো। সে আমাদের ডিপার্টমেন্টে লাস্ট ব্যাচ স্টুডেন্টদের মধ্যে টপ টেনদের এক জন ছিল। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে জব করছে। ফরেন রিসেপশান ডিপার্টমেন্টে। ফরেন কান্ট্রি’র যে মালামালগুলো আসে, সেগুলোর জন্য ও’র বিভিন্ন দেশে যেতে হয়। এখন সে ইউরোপ কান্ট্রিগুলো দেখছে। এইট মান্থস হলো জয়েন করেছে।এখন তাঁর গ্রুমিং পিরিয়ড চলছে। তাঁর স্যালারি পারহেপস…
কথার মাঝেই অলিন্দ্রীয়া বললো,
—ফুফু, আমি কিচ্ছু জানতে চাই না। শুধু তাকে বলে দিও, আমার এই লাইফ স্টাইলটাতে সে যাতে না আসে!
—আসবে না। তুই ভাবিস না যে তোকে জলে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা করা হচ্ছে তোর ভালোর জন্যই করা হচ্ছে। তোর এরকম একটা ঘটনার পর এরকম শর্তে কোনো ওয়েল অর্গানাইজড ফ্যামিলির ছেলে কি তোকে বিয়ে করতে রাজি হতো? হতো না।তবে হ্যাঁ, ‘শূণ্য থেকে বরেণ্য’ বলে যদি কোনো বাংলা বাগধারা তৈরি হয়, তবে এই ছেলেটা হবে তাঁর যোগ্য উদাহরণ!
—আমি কোনো এক্সপ্লেনেশন চাচ্ছি না।
—বাট আমি ক্লিয়ার করতে চাচ্ছি। তুই ধরে নিস না যে তাঁর কোনো কমতি আছে বিধায় সে এরকম একটি স্ট্রেঞ্জ বিয়ে করতে চাচ্ছে। তুই তো জানিসই কিছু দরিদ্র ভালো ছাত্রদের আমি ব্যাকিং দেই। তাকে আমি সেরকম দিয়েছি। আমি যদি বলি, সে একটা পাথরকেও বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে। তাঁর মা-বাবা, গার্ডিয়ান যাই বলিস; সবই আমি। সে আমার প্রিয় স্টুডেন্ট!
—তুমি তাঁর উইকনেসের সুযোগটা নিচ্ছো?
—হু বলতে পারিস তাই। তবে আমি শিওর তুই তাঁর পাত্রী হিসেবে মোটেও অযোগ্য নস। আফটার অল, সে একটা নাইস ফ্যামিলি পাচ্ছে। তোর বাবা-দাদুই তাঁর সাথে কথা বলেছেন। সব বুঝিয়ে বলবার পর আমি তোর সাথে কথা বলেছি।
অলিন্দ্রীয়া হাসলো।
—আগেই সব সেট করা ছিল?
—আমার নিজের কোনো মেয়ে থাকলে, আমি তাকেই জামাই হিসেবে ফার্স্ট ক্যাটাগরির চয়েসে রাখতাম। তবে একটা কন্ডিশন, তুই তাকে কখনো ছাড়তে পারবি না এবং যখন কাপল লাইফটা সত্যিই শুরু করতে চাইবি তার আগে আমরা ঘটা করে সিরিমনি করবো। সবাই তখন জানবে।
—বিয়ের পর ক্যারিয়ার কি অত স্মুথ হয় ফুফু?
—লিয়া, আমার বিয়ে হয়েছিলো ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে। তোর ফুফা হাইস্কুলের টিচার। আমি পড়াশুনা চালিয়ে গেলাম। তারপর কামরুল হলো, কামাল হলো। আমি যখন ইংল্যান্ডে পি এইচডি করতে যাই, কামালকে তখন দেড় বছরের রেখে যাই।আজ আমি যা, তোর সামনেই। তাছাড়া তোর তো এটা বিয়েই না। শুধু তোর যাতে প্রেমে পড়ার আর সাধ না জাগে সেই ব্যবস্থা।
অলিন্দ্রীয়া মনে মনে বললো, ফুফু তোমার ঐ সেরা ছাত্রটিকে আমি তুলোধুনা করবো। সেই বাধ্য হয়ে আমায় ছেড়ে যাবে।
—ফুফু, তুমি সব এরেঞ্জ করো।
—তুই কিন্তু বিয়েটা হবার আগ পর্যন্ত কোনো বইয়ে হাত দিবি না। তোর রুম লক করে আমি চাবি নিয়ে যাচ্ছি। নাউ গেট আউট, আই এম ডান।
অলিন্দ্রীয়া বাইরে এসেই বললো,
—মাই সুইটমিট ব্রাদার্স, আমার একটা মিষ্টি কুমড়ার সাথে বিয়ে। তবে বিয়ে করে আমি এখানেই থাকবো। মন খারাপ করার কিছু নেই।
আমরা মহাবিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলাম,
—মিষ্টিকুমড়োও বিয়ে করে?
—না, তবে এটা বোধহয় মানুষরূপী মিষ্টিকুমড়ো।
আমরা তিন ভাই-বোন একসাথে হেসে উঠলাম।হাসতে হাসতে লিয়াপুর চোখে পানি এসে গেল।
অনেকদিন পর আজ লিয়াপু ঠিক আগের মতো। সবুজ টিশার্টের উপর তাঁর মুক্তোর লকেটটা দারুণভাবে দুলছে। আপুকে পুরো গ্রিন ফ্লাওয়ারের মতো দেখাচ্ছে। আচ্ছা, গ্রিন কালারের কি কোনো ফ্লাওয়ার আছে? থাকলেও থাকতে পারে। রূপায়ন এসব ভাববে না। আপাতত তার আপুই গ্রিন ফ্লাওয়ার!
হাসি থামিয়ে লিয়াপু বললেন,
—মিষ্টি কুমড়াটাকে দেখাশোনার দায়িত্ব তোদের।পারবি না?
আমরা এবারও মহানন্দে মাথা নাড়লাম।
—চল ছবি আঁকি। আজ সত্যিই একটা মিষ্টি কুমড়ো আঁকবো।
আপুর হাতে বোটল গ্রিন কালার। কৌতূহলে তাঁর চোখ চকচক্ করছে। আমরা দু-পাশে বসে আপুর মিষ্টি কুমড়ো আঁকা দেখতে থাকলাম।
মায়াবু এসে বললেন,
—আপা, আজকে কি আঁকেন? ও আল্লাহ এইডা কি? জাহাজ নাকি? ইঞ্জিনওয়ালা আঁকবেন নাকি ইঞ্জিন ছাড়া? উড়োজাহাজ নাকি আপা? লাম্বা মনে হইতাছে।
আমরা কেউই জবাব দিলাম না।
(চলবে)