অল্প থেকে গল্প?
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:১৫
ইদানীং রাতে আনোয়ারা বেগমের ভালো ঘুম হয় না।ঘুমের ওষুধ খাওয়া লাগে নিয়মিত।ওষুধের কার্যকারীতায় যদিও শেষরাতের দিকে সামান্য ঘুম হয়,খুব ভোরে আবার চোখ ছুটে যায়।আজকে সন্ধ্যাবেলা ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন তিনি।রাতের খাবারের পর ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।অনুর গলা শুনে উঠে বসলেন,
—আম্মা আসবো?
—আসো বউমা!
অনু ভেতরে ঢুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
—কিছু বলবে?
অনু আরো কিছুক্ষন চুপিচাপি দাঁড়িয়ে থেকে আচমকা উনার পা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।আনোয়ারা বেগম ভড়কে গেলেন।তাড়াতাড়ি ওকে টেনে তুলে নিজের পাশে বসালেন।স্নেহার্দ্র গলায় বললেন,
—কি হয়েছে বউমা? উপল কিছু বলেছে?
অনু মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।
—তাহলে কাঁদছো কেন?
—আমি অনেক অশান্তি করেছি আম্মা!আমি আপনাদের সবার আমাকে মাফ করে দেন।
আনোয়ারা বেগম এবার বুঝলেন।মৃদু হেসে বললেন,
—আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া তিনি তোমাকে সুস্থ করে দিয়েছেন।আর কোন দিকে মন দিও না মা।এবার স্বামী সংসার এর দিকে মনোযোগ দাও,মেয়েটার দিকে নজর দাও!
—আর ভুল হবে না আম্মা!
আনোয়ারা বেগম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
—যাও মা শুয়ে পড়ো।
অনু ধীরপায়ে বেরিয়ে গেলো।আনোয়ারা বেগম স্বস্তি ফিরে পেলেন।উপলের চিন্তায় অস্থির হয়ে ছিলেন তিনি।মেয়ের চিন্তায় ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যেত না।সারাদিন অফিস করে এসে অনুর সাথে অশান্তি।দিনদিন খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিলো!যাক!এবার অনু সুস্থ হয়েছে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পরেরদিন ভোরবেলা অনু যথারীতি নাশতার রেডি করছিলো।ছবি ঢুলুঢুলু ভাবে কিচেনের দরজায় এসে বলল,
—আপু তুমি?
রাত জেগে পড়েছে সে।চোখদুটো লাল হয়ে আছে।অনু হাসিমুখে বলল,
—যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি নাশতা দিচ্ছি।
—আমি হাতে হাতে হেল্প করে দেই?
—লাগবে না, অনেক কষ্ট করেছিস।
ছবি সরু চোখে তাকালো।প্রশ্নবোধক দৃষ্টি,দ্যাট মিনস, ‘তুমি সুস্থ হয়ে গেছো আপু?’
প্রতিউত্তরে অনু মিষ্টি করে হাসলো।
নাশতা রেডি করে উপলকে ডাকতে গেলো সে।একপাশে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছে উপল!মিষ্টি লাগছে!বিয়ের পর প্রথম সকালে যেমন মিষ্টি লেগেছিলো ঠিক তেমন!পাশে অনুপলা ঘুমাচ্ছে।
অনু ওর পিঠে হাত বুলিয়ে আস্তে করে ডাক দিলো,
—এই শুনছো?
—উঁ!
—অফিসে যাবে না? সাড়ে আটটা বাজে!
—ওহো!আজকে ফ্রাইডে অনু!
জিভ কাটলো অনু।দিন,ক্ষন, তারিখ সব কিছুর হিসেব ভুলে বসে আছে সে।আবার ডাক দিলো সে।
—এই শোনো না?
উপল ঘুমের ঘোরেই ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো।
—আবার কি?
—সবাই একসাথে নাশতা করবো।ওঠো না প্লিজ।
উপল পাশ ফিরে শুলো।ঘুমের মাঝেও স্পষ্ট বিরক্তি ফুটে উঠেছে চেহারায়।অনু আবার ডাক দিলো,
—এই?..ওঠো না!
—ঠিক আছে যাও।
ছবি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ বসেছে।অনু ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে টেবিলে রাখতে রাখতে বলল,
—এই ছবি যা তো শুদ্ধকে ডেকে নিয়ে আয়।সবাই একসাথে নাশতা করবো।
—আমি?
—হ্যাঁ তুই!কোন সমস্যা?
—ঠিক আছে যাচ্ছি।
শুদ্ধর ঘরের দরজা বন্ধ।ছবি টোকা দিলো।
—কাম ইন।
শুদ্ধ অনেক্ষন আগেই উঠে গেছে।পড়তে বসেছে।ছবি বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।কি এত পড়েন উনি?
বিরক্তি চেপে বলল,
— আপু আপনাকে ডাকছে।
শুদ্ধ বই থেকে মুখ তুললো।চশমাটা নাকের ওপর ঠেলে দিয়ে বলল,
—ভাবি উঠে গেছে?
—হুম।নাশতা খেতে ডাকছে।
—গ্রেট নিউজ!
শুদ্ধ বই রেখে উঠে দাঁড়ালো।বলল,
—চলো।
ছবি আগে আগে বেরোচ্ছে শুদ্ধ তার পেছনে।আনোয়ারা বেগমের রুমের কাছে এসে শুদ্ধ বলল,
—তুমি যাও আমি আসছি।
আনোয়ারা বেগম নামাজ পড়ে শুয়েছেন।অনু ইতোমধ্যে দুবার ডেকে গেছে।রাতে ভালো ঘুম না হওয়ায় এখনো তন্দ্রাভাব কাটে নি।শুদ্ধ উনার পাশে বসে বলল,
—দারূণ একটা খবর আছে মা।ভাবি ভালো হয়ে গেছে।
—আমি জানি।রাতে আমার ঘরে এসেছিলো।
—তাই নাকি?
—হ্যাঁ।প্রথমে তো ভয় পেয়ে গেছিলাম কান্নাকাটি দেখে।পরে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করি।তবুও ভালো সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আরেকজন তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছে।
—ও তোমাকে ভয় পায় মা!
—আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে ভয় পাবে? নাকি আমি তাকে গিলে খাবো?
শুদ্ধ আনোয়ারা বেগমের হাত চেপে ধরে বলল,
—তুমি তো মা!তুমি সবই বোঝো!
আনোয়ারা বেগম নরম হলেন।মাথা নাড়িয়ে বললেন,
—গাধাদের আমার একদম পছন্দ না!
শুদ্ধ হেসে উঠে বলল,
—ঠিক আছে চলো মা।ভাবি নাশতা করতে ডাকছে।
আনোয়ারা বেগম ছেলের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।উনার এই ছেলেটাকে উনি প্রাণাধিক বেশি ভালোবাসেন।কি সুন্দর মায়াভরা নিষ্পাপ মুখ!হাসলে মনে হয় যে সারা পৃথিবী আলোকিত হয়ে গেছে অথচ আল্লাহতা’লা দুনিয়ার সবচেয়ে গাধা,বেকুব কাণ্ডজ্ঞানহীন মেয়েটাকেই ওর কপালে জুটিয়েছে।ছেলের দুঃখে উনার কলিজাটা ফেটে যায়!
ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—আয় চল।
আজকে নাশতার টেবিলে বড়সড় আয়োজন।শুক্রবারে অনু সবসময়ই ব্রেকফাস্টে বেশি আইটেম রাখে।তারওপর আজকে অনেকদিন পর সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।তাই আজকে একটু বেশিই করেছে পরোটা,ভুনা মাংস, ডিম,টোস্ট,ব্রেড, জ্যাম, সেমাই, ফ্রুটসসহ টেবিল ভর্তি খাবার।
সবার শেষে উপল এসে বসলো নাশতার টেবিলে।ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তার।ঘুমঘুম চোখে পরোটা মুখে দিলো সে।ছবি মুখ টিপে হাসছে।আনোয়ারা বেগম ধমক লাগালেন,
—হয় খা!নয়ত ঘুমা।
ব্যস উপলের ঘুম উধাও!ছবির হাসি বন্ধ!শুদ্ধ চুপচাপ খাচ্ছিলো।আনোয়ারা বেগমের ধমক শুনে চশমার ফাঁকে একবার ছবিকে দেখে নিয়ে উপলকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
—চলো ভাইয়া?আজকে বাজারে যাই?
—যাবি?
—অনেকদিন তুমি আর আমি একসাথে বাজার করি না!
উপল খুশি হয়ে গেলো।আগ্রহভরে বলল,
—ঠিক আছে চল,আজকে দুইভাই মিলে বাজার করবো।
নাশতা শেষে দুইভাই বাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।বাজার করে ফেরার সময় উপল একাই বাজার নিয়ে ফিরে এলো।শুদ্ধ গেছে চুল কাটাতে।
অনু অনুপলাকে ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছিলো।উপল ভেতরে ঢুকে ক্লান্ত মুখ ফ্যানের নিচে বসে বলল,
—বাপরে বাপ!আগুন পড়ছে বাইরে!
দরদর করে ঘামছে সে।রোদের তাপে মুখ কালো হয়ে গেছে।ছবি এনে শরবত দিয়ে গেলো।
—পাবদামাছ এনেছো?
আনোয়ারা বেগম পাবদা মাছ খেতে চেয়েছেন।অনু বাজারে যাওয়ার সময় বারবার করে বলে দিয়েছিলো পাবদামাছ নিয়ে আসার জন্য।উপল বলল,
—আজকে বাজারে পাবদা মাছ উঠে নি।সারাবাজার ঘুরেছি।
অনুপলা ঘুমিয়ে পড়েছে।অনু ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।বাজার সদাই সব সামলাতে হবে।
অনু রান্না করছিলো।শুদ্ধ বাসায় ফিরেছে।আসার সময় পাবদা মাছ নিয়ে এসেছে।অনুর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।
—কত করে নিলো কেজি?
—ছয়শ!
—অনেক দাম নিলো।
—হুম!লাস্ট এই এককেজিই ছিলো মাছওয়ালার কাছে!আমি কিনবো ভেবে ব্যাটা দাম ছাড়লো না।
—ঠিক আছে তুমি যাও আমি শরবত পাঠিয়ে দিচ্ছি।
শুদ্ধ মাছের থলিটা অনু হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।অনু ঠান্ডা পানি দিয়ে একগ্লাস শরবত গুলে ছবির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
—যা শুদ্ধকে দিয়ে আয়!
শুদ্ধ গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।ছবি আজকেও কোন নক ছাড়াই ঢুকে গেলো।শুদ্ধ সবে গায়ের টি-শার্টটা খুলছিলো।ছবি ভেতরে ঢুকেই ভিমরি খেলো।লজ্জায় মাথায় নিচু করে ফেললো সে।শুদ্ধ ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় ওকে দেখে টি-শার্টটা আবার গায়ে দিয়ে নিলো।
ছবির ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় দুটো বাড়ি মারতে।সে যে কেন নক করতে ভুলে যায়!লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না সে।
শুদ্ধ ওর অবস্থা দেখে একটু মজা করার সিদ্ধান্ত নিলো।দুষ্টু হেসে বলল,
—নক করো নি কেন?
—মনে ছিলো না।
শুদ্ধ খানিকটা ঝুঁকে ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো,
—তোমার বুদ্ধিসুদ্ধি কবে হবে ছবি?সেদিন তুমি ভাবিদের ঘরে নক না করে ঢুকে গেছিলে।আজকে বলছো মনে ছিলো না,ধরো এখন যদি আমি খালি গায়ে বসে থাকতাম অথবা শাওয়ার নিয়ে বেরোতাম শুধু একটা টাওয়েল পরে…
ছবি ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো,
–ছিঃ!ছিঃ! কি বলছেন এসব?
–ছিঃ!ছিঃ!করছো কেন? হতেও তো পারতো?
ছবি লজ্জায় মরে যাচ্ছে।শুদ্ধর সামনেই কেন সবসময় বোকামি গুলো করে সে।
শুদ্ধ মুচকি হেসে বলল,
—শরবত কি আমার জন্য?
ছবি ঘাড় নাড়ালো।
—দাও?
শরবতের গ্লাসটা দেওয়ার সময় ছবির হাত দুটো অনবরত কাঁপছে।শুদ্ধ ঠোঁট কামড়ে ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ছবির লাজুক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।এর মানে ‘শরবত নিচ্ছেন না কেন?’
শুদ্ধ ওর মনের কথা বুঝতে পেরে বলল,
—আমি ভাবলাম তুমি চিনি মিক্স করছো!
ছবি ইচ্ছে করছে শরবতের গ্লাসটা ফেলে রেখে একছুটে এখান থেকে পালিয়ে যায়!শুদ্ধ কি জানে তার টি-শার্টের ফাঁকে উঁকি দেওয়া ফর্সা বুকটা ছবিকে কি পরিমান প্রকম্পিত করছে।
শুদ্ধ হাত বাড়িয়ে শরবতের গ্লাসটা নিলো।ছবি খালি গ্লাস ফেরত নেওয়ার অপেক্ষা করলো না,গ্লাস হাতে দিয়েই প্রস্থান!এখানে বেশিক্ষণ থাকলে হার্ট এটাক করবে সে!এমনিতেই মাথা ঘুরছে।বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজ করছে!ভাগ্যিস শুদ্ধকে খালি গায়ে দেখে নি, তাহলে তো সে মরেই যেত!কোন রিস্ক নিতে চাইলো না সে।
দুপুরের সবাই একসাথে খেতে বসলো।বাসায় আবার পুরোনো পরিবেশ ফিরে এসেছে।আগের সেই গুমোটভাবটা আর নেই।আনোয়ারা বেগম ছেলেদের সাথে পুরোনো গল্প জুড়ে দিয়েছেন।অনু আর ছবি খেতে খেতে চুপচাপ শুনছিলো।আবার সবকিছু আগের নিয়মে ফিরে এসেছে ভেবে স্বস্তি পেলো সবাই।
দেখতে দেখতে উচ্চমাধ্যমিক এর রেজাল্ট বেরলো।জিপিএ ৪.৭৫ পেয়েছে সে।তার একমাসের মাথাতেই ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো।মেডিকেলে হয় নি,খুব মন খারাপ ছিলো ওর।কারণ মেডিকেল কোচিং করেছে সে!মেডিকেল কোচিং করে ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া খুবই টাফ! তবুও কপালগুনে পেয়ে গেছে সে।ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সয়েল সাইন্স পেয়েছে সে।জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ক্লাস শুরু হবে।এখন নভেম্বর,আপাতত দেড়মাস ছুটি।হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো ছবি!ভর্তি পরীক্ষার টেনশনে ওর রাতের হারাম হয়ে গেছিলো।
কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই ছবির মন খারাপ হয়ে গেলো।পড়াশোনা নেই,কাজকর্মও বলতে গেলে তেমন কিছু নেই।রাশেদ সাহেব এবং তার স্ত্রী ওমরা করতে গেছেন।সুতরাং চিটাগাং যাওয়ারও উপায় নেই! তারপর শুদ্ধ তিনমাসের ট্রেনিংয়ে জাপান গেছে।
একা একা ছবির হাঁসফাঁস লাগছে।এমনিতেই শুদ্ধর দেখা পায় না সে।এখন একটু ছুটি পেয়েছে তাও উনি জাপান চলে গেলেন।ভীষণ রাগ হলো ছবির!অনুপলাকে নিয়েই সময় কাটে তার।এরমাঝে কাজের কাজ একটাই হলো অনু ওকে বিভিন্ন ধরনের রান্না আর হাতের কাজ শিখিয়েছে।
অবশেষে হোস্টেলে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এলো।যাওয়ার সময় আনোয়ারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না ছবির!হুট করে কেন এত কান্না আসছে সে নিজেও জানে না।খুব খারাপ লাগছে ওর!
—আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আন্টি।আমাকে আপনি মাফ করে দেন।আমি তো আপনার মেয়ের মত।মেয়ে ভুল করলে মা শাসন করে।আমি তখন বুঝি নি আন্টি।আমার ভুল হয়ে গেছে।
—এতদিন পরে তোমার মনে হলো তুমি ভুল করেছো?
ছবি মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে উঠলো।সে যে ভয়ে আনোয়ারা বেগমের সামনে আসতো না এটা কি করে বোঝাবে উনাকে? তবুও হাল ছাড়লো না।উনার পায়ের কাছে বসে বলল,
—আমি এতকিছু জানি না।আপনি আমাকে মাফ না করলে আমি আপনার পা ধরে বসে থাকবো।
—দেখো মেয়ে তুমি আমার ছেলের সাথে বেয়াদপি করেছো।চাইতে হলে ওর কাছে ক্ষমা চাও!
ছবি মনে মনে ভেংচি কাটলো।জীবনেও চাইবে না সে!সারাক্ষণ পড়াশোনা,সেমিনার,কলেজ নিয়ে থাকে।তো থাকুক!ছবি কি উনার লাইফে আছে নাকি? তবে আনোয়ারা বেগমকে সে ভালোবেসে ফেলেছে।এই রাগী,বদমেজাজি,জেদী মহিলার ভেতরে নরম কোমলমতী মাতৃসত্ত্বার সন্ধান ছবি পেয়ে গেছে।ইনাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করে সে!ছবি দ্বিগুন বেগে উনার পা চেপে ধরে বললেন,
—আগে আপনি বলেন আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েছেন? না বললে আমি ছাড়বো না।
আনোয়ারা বেগম বিপাকে পড়ে গেলেন।ছবিকে উঠিয়ে বললেন,
—ঠিক আছে যাও।মন দিয়ে পড়াশোনা করো!
উপল সাথে যাচ্ছে ছবিকে দিয়ে আসতে।বেরোনোর সময় উপল অনু কানে ফোন ধরিয়ে বলল,
—শুদ্ধ কথা বলবে।
ছবির প্রচুর কান্না পাচ্ছে।ফুঁপিয়ে উঠলো সে।ওপাশ থেকে শুদ্ধ হেসে উঠে বলল,
—কাঁদছো কেন?
—আপনি বুঝবেন না!
—আমি সবই বুঝি।
ছবি আবারও ফুঁপিয়ে উঠলো।
—শোনো।কান্নাকাটি বাদ!মন দিয়ে পড়াশোনা করবে ঠিক আছে? একদম ফাঁকিবাজি করবে না।
—আমি একটুও পড়াশোনা করবো না।
শুদ্ধ আবারও হাসলো।
—তাহলে কিন্তু বাসায় আসা বন্ধ হয়ে যাবে।
—আপনি খুব নিষ্ঠুর!
—তুমি বুঝি খুব ভালো?
ছবি উত্তর দিলো না।ভীষণ রাগ হচ্ছে সবার ওপর।বাসায় থেকে পড়াশোনা করা যেত না? ওকে হোস্টেলেই থাকতে হবে এমন তো কোন কথা নেই? সবার এককথা বাসা থেকে ক্যাম্পাস দূর হয়ে যাবে।তারওপর ঢাকা শহরের জ্যাম!
—ছবি?..শোনো?
—বলুন।
—মন দিয়ে পড়াশোনা করবে কেমন?
—ঠিক আছে করবো।খুশি?
—রাগ করেছো?
—না।..রাখছি আমি!
—শোনো?
—আবার কি?
—ওখানে গিয়ে আবার ভালোবাসার চ্যাপ্টার পড়তে শুরু করো না যেন।ওটা শুধু আমি পড়াবো।
লাইন কেটে গেছে।ছবি ফোন হাতে নিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তিরতির করে কাঁপছে সারা শরীর!শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল রক্তের স্রোত বইছে।চোখ বেয়ে আনন্দঅশ্রু বেরোচ্ছে।বিনাবাক্যে হোস্টেলের জন্য বেরিয়ে গেলো সে।
.
.
চলবে