অল্প পাগলামি সীমাহীন ভালোবাসা,প্রথম_পর্ব

1
7227

#অল্প পাগলামি সীমাহীন ভালোবাসা,প্রথম_পর্ব
#ফারজানা_আক্তার

কারো গরম নিঃশ্বাস হিয়ার মুখে পড়তেই হিয়া কাঁপনি দিয়ে উঠে, চোখগুলো মিটমিট করে অথচ চোখ খোলার সাহস সে পাচ্ছেনা। পিপাসায় যেন কলিজাটা খাঁখাঁ করছে।

এইতো পাঁচ মিনিট আগের কথা_____

ভাইয়া দশ টাকার বাদাম দিন তো____

বাদাম নিয়ে পেঁছনে ঘুরতেই হিয়া একটা ধাক্কা খেলো খুব জোরে সুরে। হিয়া চোখ বন্ধ করে রেখেছে ভীষণ এলোমেলো হয়ে মুখের উপর পরে আছে তার চুলগুলো। কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে। চোখে হালকা কাজল,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, ঠোঁটের নিচে একটা আকর্ষণীয় তিল, যেন কোনো স্বপ্ন পরি। খুব শক্ত করেই তার কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে কাব্য।

হিয়া ধীরে ধীরে মিটিমিটি করে চোখ খুলতেই দেখে কেউ একজন তার মুখের উপর হা হয়ে পড়ে আছে, হিয়া খুব জোরে কাব্য এর নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। হিয়ার বুকের ভিতর কেমন যেন ধুকপুক শুরু হয়ে গেলো, এই প্রথম কোনো পুরুষ তাকে স্পর্শ করেছে।

হিয়া অনেক চেষ্টা করেও কাব্যকে ছাড়াতে যখন ব্যার্থ হয় তখন সে দিলো এক চিৎকার। হিয়ার চিৎকার শুনেই কাব্য এর হুঁশ ফিরলো। সাথে সাথে তাকে ছেড়ে দেয়,আর দাঁতে দাঁত চেপে বলে “এই ফাজিল মেয়ে এতো চেঁচামেচি করছো কেন”? হিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে ” আপনি কে”?
কাব্য রেগে যায় এমন প্রশ্ন শুনে, কারণ যেখানে কাব্য এর সামনে কেউ মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস পাইনা সেখানে এই মেয়ে এভাবে তার সাথে কথা বলার সাহস পেলো কোথায়। কে এই মেয়ে?

হিয়া হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ” এ্যাঁএ্যাঁ আমার সব বাদাম নষ্ট হয়ে গেলো রে, এখন আমার কি হবে? আমার দশ টাকা…..আঁআঁআঁ… আর কাব্য কে বকা দিতে লাগলো “বজ্জাত,হনুমান,রাম ছাগল, কালো বানর, উগান্ডার জিরাফ চোখে দেখেনা এতো বড় একটা সুন্দরী মেয়েকে”

এবার তো কাব্য রেগে তেলে বেগুন, ধৈর্যের একটা সীমা আছে,, এই মেয়ে সীমা অতিক্রম করছে। সে গিজগিজ করে হিয়াকে একটানে নিজের বাহু ডুরে আবদ্ধ করে নিলো, খুব শক্ত করেই ধরেছে যার কারণে সে নড়তে পারছেনা। হিয়ার যেন পিপাসায় কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।

কাব্য দাঁতে দাঁত চেপে বলে “এতো সাহস কে দিয়েছে তোমায়? কাব্য আহমেদ এর সাথে এভাবে কথা বলছো তুমি?” হিয়া তখন মুখ ভেংচিয়ে বলে “কোথাকার কাব্য টাব্যরে? ছাড়ুন আমায় নয়তো চিৎকার করে লোক জড়ো করবো আমি।” এটা শুনে কাব্য ছেড়ে দিলো তাকে। মেয়েটা কোনো পাগলের থেকে কম না, লোক ডাকলে ডাকতেও পারে। “ডাইনি” এটা বলেই কাব্য চলে যেতে লাগলো, আর এমন সময় হিয়া দৌড়ে কাব্য এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় “আমার দশ টাকা দিয়ে যান আঙ্কেল” করুণ সুরে।

কাব্য কপাল ভাজ করে চোখ বড় বড় করে বলে “What?? আঙ্কেল কি হ্যাঁ?আর এই মেয়ে তুমি কি ভিকারি? দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে।।”
হিয়া- এতো বড় গাড়ি থাকতেও এতো কিপটা কেন আপনি? মাত্র দশ টাকা দিতে চাইছেন না।
কাব্য- What???

এবার তো কাব্য এর রাগ চরমভাবে বেড়ে গেছে,, কাব্য আর দেরি না করে এবার গাড়ির সাথেই চেপে ধরেছে হিয়াকে। হিয়া চটপট করছে কিন্তু সে কিছুতেই কাব্যকে সরাতে পারছেনা, হাত চেপে ধরেছে যার কারণে হাতও নাড়াতে পারছেনা। হিয়া চোখ বন্ধ করে করুণ সুরে বলে “প্লিজ ছাড়ুন আমায়,আজ আমাকে দেখতে আসবে।সময়মতো বাড়িতে পৌঁছাতে না পারলে আম্মু আমার মাথায় চুল একটাও রাখবেনা”
কাব্য ভ্রু কুঁচকে বলে “তোমাকে যে বিয়ে করবে তার জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে” এটা বলেই কাব্য তাকে ছেড়ে দিলো, হিয়া নিজের হাতকে বুকে জড়িয়ে মনে মনে বলে “আর তোর মতো গন্ডারকে যে বিয়ে করবে তার জীবনটা লবন ছাড়া তরকারি হয়ে যাবে”
হিয়া- আমার দশ টাকা __(কপাল ভাজ করে)
এই মেয়ে তো বড্ড ইতর। কাব্য চিল্লিয়ে বলে দিবোনা টাকা,, যা ফুট
হিয়া- তাহলে আমাকে লিভ দিন,, আসলে আমার গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে হঠাৎ।
কাব্য- ঠিক আছে, উঠো গাড়িতে কিন্তু কেনো বাঁদরামি করতে পারবেনা,,

হিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। গাড়ি চলছে আর কাব্য মাঝে মাঝে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে হিয়ার দিকে, মেয়েটা চঞ্চল হলেও চেহারায় অদ্ভুত এক মায়া আছে। অন্যদিকে হিয়া বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে, কারণ সে কথা না বলে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনা। সে আর চুপ হয়ে থাকতে না পেরে তার এক বান্ধবী কে কল দিলো।
হিয়া- হ্যালো রিতা
রিতা- কিরে তুই এইসময় কল দিছোস?তোকে না আজকে দেখতে আসছে?
হিয়া- হ্যাঁ তবে একটা কথা শোন
রিতা- আচ্ছা বল
হিয়া- তুই কি ফ্রী আছোস?
রিতা- হ্যাঁ, কেন?
হিয়া- একটু আমাদের বাসায় আসবি?
রিতা- আচ্ছা আসতেছি। কিন্তু কি হয়েছে বলবি তো আগে
হিয়া- আজ আমি খুবই নার্ভাস, এই প্রথম কেউ আমাকে দেখতে আসছে আর এই প্রথম কেউ আমাকে স্পর্শ করেছে। (কথাটি বলেই হিয়া চোখমুখ বন্ধ করে জ্বিবাই কামড় দিয়েছে আর সাথে কলটাও কেটে দিয়েছে)

হিয়া কথাটি বলতেই কাব্য এর কানে বারি খেয়েছে কথাটি,, তার মানে এই মেয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই, আর থাকবেও কিভাবে যে জল্লাদি মেয়ে বয়ফ্রেন্ড তো একদিনেই পালাবে। কি মেয়েরে বাবা মাত্র দশ টাকার জন্য পিঁছুই ছাড়ছেনা কিছুতেই। না জানি আজ কার কপাল পুড়বে। কাব্য ড্রাইভ করছে আর এসব ভাবছে

এমন সময় হিয়া কাব্য কে ডাক দিলো “থামুন থামুন থামুন” কাব্য গাড়ি থামিয়ে গিজগিজ করে বলে “এই মেয়ে আবার চিল্লাছো কেন?

হিয়া রাগি রাগি ভাবে বলে উঠে “না চিল্লালে যে আপনি কানে শুনেনই না,কালা কোথাকার”। এটা বলেই সে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে গেলো। কাব্য ব্রু কুঁচকে বলে “কি বললে তুমি?” হিয়া বলে “না মানে আসলে বলছি যে আমার দশ টাকা।” এবার তো কাব্য চোখ লাল করে হিয়ার দিকে তাকাতেই হিয়া গায়েব।

কাব্য চোখ বন্ধ করে চিন্তা করে, কি মেয়েরে বাবা অল্প কিছুক্ষণেই মাথাটা উলটপালট করে দিয়ে চলে গেলো। কিভাবে সহ্য করে এই মেয়ের বাড়ির মানুষগুলো তাকে? কিন্তু বলতে হয় যে চোখ দুটো তার নেশায় ভরপুর।। অসাধারণ চাহনি কিন্তু স্বভাবটা অন্য মেয়েদের থেকে একদমই আলাদা। এত বড় ঘরের মেয়ে হয়েও কি কেউ দশ টাকার জন্য এভাবে পিঁছু লাগে নাকি??সত্যি অবাক হয়েছি আমি। এই প্রথম কেনো মেয়েকে দেখে স্পন্দন আমার কথা বলেছে “এই লীলাবতীর লীলা খেলায় আমি ডুবে থাকতে চাই অনন্তকাল” তবে কি আমি এই মেয়ের প্রেমে পড়েছি? না, না কিছুতেই না,এটা কখনোই সম্ভব নয়, এই মেয়ে আস্তা একটা রাক্ষসী।

কাব্য চোখ খুলতেই দেখে এটা তো সেই বাড়ি যে বাড়ির ঠিকানা তার মা তাকে দিয়েছে। তার মানে এই তাঁরছিড়া মেয়েটা সেই মেয়ে……………………আল্লাহ রক্ষা করো আমায়____

চলবে

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here