অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২ #পর্ব_২

0
1871

#অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২
#পর্ব_২
#FarJana_Akther

হিয়া গোসল করে রুমে এসে দেখে কাব্য নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে,, রেগে-মেগে এগিয়ে যায় হিয়া কাব্যর দিকে। কাব্যকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে “উঠুন বলছি, বাবু কই”?
~আসো সোনা তুমিও ঘুমাও।
ঘুম ঘুম কন্ঠে হিয়ার হাত টেনে বলে কাব্য।
~ছাড়ুন ছড়ুন আমায়, বাবু কই বলুন?
ঝাঁকিয়ে হাত ছাড়িয়ে একটু চিল্লিয়ে বলে হিয়া।
হুড়মুড় করে উঠে বসে কাব্য।
~কি হয়েছে? সকাল থেকে এমন করতেছো কেনো?
ভ্রু কুঁচকে বলে কাব্য।
~তো কেমন করবো? আপনার কাছে ফাইয়াজকে রেখে গিয়েছিলাম আর আপনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন, আবার আমাকেও বলছেন ঘুমাতাম,বাহ্ শখ কত বুইরার।
চোখ-মুখ উল্টিয়ে বলে হিয়া।
~বাবুকে কেয়া নিয়ে গেছে। তুমি নাহ একটু বেশি বেশিই করো।
কাব্য এটা বলতেই হিয়া যেতে নিলে কাব্য হিয়ার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নেই, হিয়া ছটপট করে আর সাথে তো খিল ঘুসি আছেই।।
~উঁহু এতো সহজে ছাড় পাবেনা সোনা, আমাকে বুইরা বলার শাস্তি তো পেতেই হবে গো।
দুষ্টু হেঁসে চোখ টিপ মেরে বলে কাব্য।
হিয়া ভয়ে ঢুক গিলে,,চোখ ছোট ছোট করে তাকায় কাব্যর দিকে। কাব্য দুষ্টু হাসে।
~বলছি কি, শোনেন না,, আজকের জন্য কি ক্ষমা করা যায়না?
আমতাআমতা করে বলে হিয়া।
~নাহ, ছাড় পেলে পাঁচ মিনিটও লাগবেনা আবার বলতে তোমার।
আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে কাব্য।
কাব্য হিয়ার ঠোঁটের দিকে একটু এগুতেই হিয়া কাব্যকে ধাক্কা দিয়ে ভেংচি কেটে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
কাব্য হাসে, কারণ এটা নতুন নয়, রোজকার কান্ড।



কয়েকদিন পর

নিহান আসছে ফাইয়াজকে দেখার জন্য। ড্রয়িংরুমে বসে হিয়ার সাথে এটা ওটা ভালো মন্দ বলতে থাকে, এর ফাঁকে ফাইয়াজের কথা তিনবার জিজ্ঞেস করছে নিহান। কিন্তু হিয়া তা এড়িয়ে যায়, আর নিজের কথা নিজে বলতেই থাকে। নিহান বেশ বিরক্ত হতে লাগে, কিন্তু সেটা ভয়ে হিয়াকে বুঝতে দিচ্ছেনা। পরে অনেকক্ষণ পর নিজের বকবকানি শেষ হলে নিজে নিজেই বলে ফাইয়াজ ছাঁদে আছে কেয়ার সাথে। এটা বলার সাথে সাথেই হিয়ার ফোনে কল আসে কাব্যর, হিয়া চলে যায় সেখান থেকে।

নিহান মনে মনে ভাবতে থাকে, কেয়া কে? আগে তো কখনো এই কেয়ার নাম শুনিনি। হিয়া চলে গেলে নিহান ছাঁদের সিড়ির দিকে পা বাড়ায়। তখন পেঁছন থেকে কেউ ডাক দেয় তাকে।



হিয়া ফোন নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসে, বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়, পড়ন্ত বিকেলে নিভু নিভু সূর্যের আলো। বেশ মনোমুগ্ধকর,,,,

~এই শুনেন আপনি কেনো কল দিয়েছেন আমি জানিনা, আসার সময় কিন্তু আমার বাদাম আনতে ভুলবেননা।।
এক হাত দিয়ে কানে ফোন গুঁজে আর অন্য হাত কোমরে রেখে কথাগুলো বলে হিয়া।
~আরে সোনা, এত্তো চিন্তা করো কেনো? আমি তো তোমাকে ভুলতে পারি কিন্তু তোমার বাদামকে নয়।
দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে কাব্য, হিয়া বুঝতে পেরেছে কাব্য রেগে গেছে তবুও হিয়া ঠিক করে কথা না বলে এরংবেরং করে কথা বলছে।
~ঠিক আছে ঠিক আছে, কি বলবেন দ্রুত বলেন, মেলা কাজ পড়ে আছে আমার।
একটু ভাব দেখিয়ে বলে হিয়া।
রাগে ফুসফুস করছে কাব্য।

~আসতে একটু দেরি হবে,, একটা কাজে বাহিরে যেতে হবে।
~আচ্ছা, কত দেরি হবে শুনি?
~১০টা বাজবে বা তার বেশিও হতে পারে
দাঁত চেপে বলে কাব্য।
হিয়ার মন খারাপ হয়, প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে চলে আসে কাব্য আর আজকে এতো দেরি। হিয়া কিছু বলার আগে কাব্য টুস করে কল কেটে দেয়। আরো বেশি মন খারাপ হয়ে যায় হিয়ার। মনে মনে হাজারটা গালি দেয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাব্যকে।



নিহান পেঁছনে ঘুরে দেখে আফিয়া বেগম হাসিমুখে দাঁড়িয়ে, সালাম দিয়ে কৌশল বিনিময় করলো তারপর উনাকে বলে ফাইয়াজের কাছে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো, নিহান সিঁড়ি বেয়ে উঠছে উপরে কিন্তু সে তো আর জানেনা ছাঁদে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে।

নিহান ছাঁদে উঠে এদিকসেদিক তাকায়। একটু ছাঁদের ভেতরের দিকে যেতেই নিহান দেখতে পেলো লম্বা ঘন কালো চুলে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদের রেলিং ঘেসে। চুলগুলো ঠিক কোমর ছুঁই ছুঁই। পড়ন্ত বিকেলের হালকা হাওয়ায় চুলগুলো উড়ছে বেশ।
নিহান একটু সামনে এগুতেই দেখে ফাইয়াজ ওই মেয়ের কোলে। নিহান কিছু না ভেবেই ফাইয়াজকে ডাক দিয়ে সামনে গিয়ে ফাইয়াজকে নিজের কোলে নিয়ে নেই। ফাইয়াজ তো মামাকে দেখো হেব্বি খুশি। কেয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে।
~আ আপনি?
কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে কেয়া।
নিহান তো বেশ চমক পেয়েছে কেয়াকে দেখে।
~ওও তাহলে তুমিই কেয়া। তুমি কবে আসছো? নাকি আর যাওয়া হয়নি বিয়ের পরে?
~আসলে আমার আর যাওয়া হয়নি, সবাই চলে গেছে লন্ডন, আমি একটা কাজে দেশে থেকেছিলাম, আর ভাবি বলতেছে এখন না যেতে তাই।
~ওয়েট ওয়েট ভাবি মানে? আচ্ছা তুমি এই বাসার মানুষের কি হও?
কেয়া হেঁসে দেয় নিহানের কথায়, এতো ঘুরিয়ে নিহান প্রশ্ন করছে যে কেয়া না হেঁসে আর পারলোনা। কেয়া একটু হাসতে হাসতে বলে

~ফাইয়াজের আম্মু আমার ভাবি, আর আমি উনার খালাতো ননদ। আমরা পুরো পরিবার লন্ডন থাকি তাই তেমন একটা আসা হয়না এখানে আমার। এবার আপনার পরিচয় দেন মিস্টার।
~আমি এই যে এই ফাইয়াজ বাবুর একমাত্র মামা। তারমানে তুমি আমার বেয়ান লাগো,, তাইতো?
শেষের কথাটা একটু কেয়ার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে নিহান। কেয়া লজ্জা পেয়ে চলে যায় সেখান থেকে। কেয়া নিচে চলে আসে। নিহান সেখানে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে হায় মারডালা, এভাবে সপ্নের পরির দেখা মিলবে এখানে এসে ভাবতেই পারিনি, কেয়া এখানে আছে জানলে তো আরো আগে আসতাম।



রাত ১০টা বাজছে আরো ১ঘান্টা আগে, মানে এখন ১১টা বাজে। কাব্য এখনো আসেনি, হিয়ার চিন্তার শেষ নেই।
নিহান আজকে আর যায়নি। সবাইকে খাইয়ে দিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে হিয়া। ফাইয়াজকে ঘুম পাড়িয়ে আফিয়া বেগমের কাছে দিয়ে এসেছে। চিন্তায় কান্না চলে আসছে হিয়ার। অনেকগুলো কল দিয়েছে কাব্যকে কিন্তু কাব্যর ফোন বন্ধ। এমনকি আফজাল সাহেবকেও বলে যায়নি কাব্য কোথায় কি কাজে যাবে।
আফিয়া বেগম ফাইয়াজকে আফজাল সাহেবের কাছে রেখে হিয়ার কাছে আসলো, এসে দেখে হিয়া বসে বসে কাঁদছে। হঠাৎ ধুকপুক করে উঠে আফিয়া বেগমের বুক। তিনি দ্রুত এসে হিয়াকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে কাঁদছে কেনো? হিয়া উনাকে দেখে দ্রুত চোখ-মুখ মুছে নেই।
~নাহ আম্মু কি কিছু তো হয়নি?
একটু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে হিয়া।
~কিছু না হলে কাঁদছো কেনো?
~আসলে আম্মু উনাকে সেই সন্ধ্যা থেকে কল দিচ্ছি, কিন্তু উনার ফোন বন্ধ বলছে। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আম্মু।
~চিন্তা করিসনা মা, কিছু হবেনা আমাদের কাব্যর। আমি তোর আব্বুকে বলে দেখি কি করা যায়।
এটা বলেই আফিয়া বেগম তার রুমের দিকে পা বাড়ালেন। হিয়া আবারো সোফার সাথে গা এলিয়ে দিয়ে নিরাশ হয়ে বসে পড়ে। সাথে সাথেই একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে হিয়ার নাম্বারে। হিয়া অচেনা নাম্বার দেখে চমকে যায়, হঠাৎ অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো কেনো? উনি নয়তো?
কাব্যর কথা ভেবেই দ্রুত কল রিসিভ করতে গেলে কল কেটে যায়, হিয়া ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে আবার যদি কল আসে সাথে সাথেই রিসিভ করবে বলে।

প্রায় ১৫মিনিট পর আবার কল আসে একই অচেনা নাম্বার থেকে। হিয়া দ্রুত রিসিভ করে
~হ্যা হ্যালো ক কে ব বলছেন?
কিছুটা থেমে থেমে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে হিয়া।
~আপনার নাম কি হিয়া?
~হ্যাঁ কেনো?
~আমি একটা ফোন পেয়েছি, মাঝ রাস্তায় পড়ে ছিলো ফোনটা। ফোনটা অন করেই সেখানে আপনার নাম্বার পেলাম সবার উপরে।
~ফোনটা একটু কষ্ট করে আবার অন করে একটা কল দিবেন আমার নাম্বারে প্লীজ?
হিয়া লোকটাকে মিনতি করে বলে।
~সরি বোন, ফোনটা আর অন হচ্ছে না।
বলেই লোকটা কল কেটে দিলো।

হিয়া সেখানে বসে পরলো ধপাস করে। উনার কোনো ক্ষতি হলোনা তো? নাহ নাহ এসব কি ভাবছি আমি,, উনার কিছু হবেনা, কিছু হবেনা উনার। কেয়া এসে হিয়ার এই অবস্থা দেখে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে।

তখনই আফিয়া বেগম এসে হিয়াকে যা বললো, হিয়া তো_____

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here