অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২ #পর্ব_৫

0
1904

#অল্প_পাগলামী_সীমাহীন_ভালোবাসা২
#পর্ব_৫
#FarJana_Akther

আহ্ করে চিল্লিয়ে পেঁছনে তাকাতেই দেখে ফাইয়াজ ওর চুল ধরে টানছে।গাড়ির দরজা খুলে ফাইয়াজকে হিয়ার কোলে দিয়েই কাব্য নিজের সিটে উঠে বসে।কাব্য গাড়িতে উঠে বসতেই আফজাল সাহেব প্রশ্ন করেন __

-কিরে উল্টা ছেলে কোথায় গেছিস কাউকে কিছু না বলে?
মুখ চেপে হেঁসে বলেন আফজাল সাহেব।

কাব্য সিট বেল্ট বাঁধতেছিলো,আফজাল সাহেবের কথা শুনেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় কাব্যর।

~কি বললে আব্বু তুমি? আমি উল্টা? তোমার উপরও কি এই পেত্নীর প্রভাব পড়ে যাচ্ছে নাকি ধীরে ধীরে?
হিয়ার দিকে ইশারা করে বলে কাব্য।

~এই আমার ছেলেকে কেউ উল্টা বলবেনা, আমার ছেলে হলো ডিজিটাল উল্টা।
মুখ চেপে হেঁসে বলে কথাটি আফিয়া বেগম।
~আম্মু তুমিও।
বিরক্তি ফেস করে বলে কাব্য।

হিয়া তো রাগে আগুন, এতো বড় কথা মুখের উপর সহ্য হচ্ছে না হিয়ার।হিয়া ফাইয়াজকে কাব্যর কোলে দিয়ে কান্না কান্না ফেস করে গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনই কাব্য হিয়ার হাত আঁকড়ে ধরে,

~ছাড়ুন বলছি আমার হাত, আসছে দরদ দেখাতে,, যান নাহ সুন্দরীদের কাছে যান, পেত্নীর হাত ধরছেন কেনো?
মুখটাকে বাংলার প্যাঁচার মতো করে কথাগুলো বলে হিয়া।

সবাই পেঁছনে বসে মুখ চেপে হাসতে থাকে, খেয়াল করে কাব্য। তাই এই বাদাম পাগলীকে শান্ত করার জন্য এক প্যাকেট বাদাম সামনে ধরলো কাব্য। চট করে কাব্যর হাত থেকে বাদামের প্যাকেট টা ছুঁ মেরে নিয়ে নেই হিয়া, কাব্য ফাইয়াজকে আবার হিয়ার কোলে দিয়ে দেয়, ফাইয়াজ বেশ মজা নিচ্ছে।
কাব্য পেঁছনে থাকা মা বাবা কেয়া তিনজনকে তিনটা বাদামের প্যাকেট দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো।
হিয়া বাদাম পেয়ে সব রাগ ভুলে গেছে, সে নিজেও বাদাম খাচ্ছে আর কাব্যকেও মাঝে একটা দুইটা করে খাইয়ে দিচ্ছে।

কেয়া বাদাম খাচ্ছে না, হাতে প্যাকেট টা নিয়ে জানালার গ্লাস দিয়ে আনমনা হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,চোখ এড়ালো না আফিয়া বেগম এর।

জানিনা কেনো মনটা এতো খারাপ হয়ে আছে, ভাগ্য কখন কাকে কোথায় টেনে নিয়ে যায় সেটা কেউ বলতে পারেনা।জানিনা ভাগ্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এখন আমায়।
কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেয়া।

ফাইয়াজ ঘুমিয়ে পরেছে,হিয়াও বাদাম খেয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে।ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরে সিটের সাথে হেলান দিয়ে চুপ হয়ে বসে বাহিরের প্রকৃতি দেখছে সে।

কাব্য বিরক্তি নিয়ে ওর মাকে জিজ্ঞেস করে হিয়াদের বাসা চলে আসছে আর কতদূর।

~এই তো এই সূর্যমুখী হাউজের সামনে দাঁড়া। কাব্য অবাক হয়, হিয়া কথাটা শুনে যেনো লাফিয়ে উঠে।

~মানে? আমরা নাকি ছেলেদের বাসায় যাবো, তবে এই বাসার সামনে দাঁড়াবো কেনো?
গাড়ি থামিয়ে কাব্য ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে।
আফিয়া বেগম কিছু বলেনা, চুপ হয়ে আছে। সবাই আফিয়া বেগমের দিকে প্রশ্নসুচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

~এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো সবাই? নামো গাড়ি থেকে।
এটা বলেই আফিয়া বেগম কেয়াকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভেতরে চলে যায়।

হিয়া অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বসে আছে। কাব্য গাড়ি থেকে নেমে হিয়াকে দরজা খুলে দেয়, হিয়া নামেনা।

~এভাবে হা হয়ে আছো কেনো? আমি সিউর তুমি সব জানতে তবুও আনছো আমায় জোর করে।
রাগান্বিত কন্ঠে বলে কাব্য।

ভরকে যায় হিয়া।
~আজব তো, এভাবে ভেড়ার মত চিল্লাচ্ছেন কেনো? আ আমি ওসব কিছু জানতাম না, সব আম্মুর কারসাজি, হুম।
বাবুকে নিন আমি নামবো।
কাব্য ফাইয়াজকে নিলে হিয়া গাড়ি থেকে নামে। অনেকদিন পর নিজের বাসার বাতাস, ভালোই লাগছে হিয়ার।
হিয়া ঘরে প্রবেশ করেই দূরে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। এতোদিন পর বাবা মাকে পেয়ে হিয়া বেশ আনন্দিত।
পুরো ঘর যেনো সে একাই জমজমাট করে ফেলেছে।
কেয়া বেশ লাজুক সুরে কথা বলছে আলিয়া বেগমের সাথে, কেয়া এবার সব বুঝতে পারছে তার জন্য কাকে পাত্র ঠিক করা হয়েছে, নিজের অজান্তেই যেন কেয়ার মনটা হেসে উঠে। আলিয়া বেগমের বেশ পছন্দ হলো কেয়াকে। মিজান সাহেবেরও বেশ ভালো লেগেছে কেয়াকে। তারা এখন নিহানকে নিয়ে চিন্তিত। নিহান যদি কেয়াকে রিজেক্ট করে দেয় তবে তাদের মানসম্মান আর কিছুই থাকবেনা, ভাবছেন মিজান সাহেব।

নিহান মন খারাপ করে বসে আছে নিজের রুমে, হিয়া নিহানের পেঁছনে ধীরে ধীরে এসে বলে “কি দুলামিয়া, আমাকে না বলে বিয়ে করবে চুপিচুপি ভাবলে কি করে হুমমমম??”
হঠাৎ হিয়ার এমন সব কথা শুনে চমকে উঠে নিহান, এমনিতেই মন খারাপ তার উপর হিয়ার এসব আবুলতাবুল কথা, মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে নিহানের।

~দেখ আপু আব্বু আম্মুকে বুঝা, আমার বিয়ের বয়স হয়নি এখনো।
~আচ্ছা বিয়ের বয়স না হলে প্রেমের বয়স কিভাবে হয়েছে?
একটু মজা করে বলে হিয়া।
~কি বলস এগুলো? কিসের প্রেম, কোনো প্রেমেটেমে পড়িনি আমি, বিন্দাস আছি সিঙ্গেল লাইফে।
তাহলে তো বেশ ভালোই,, নিচে আই। সবাই আসছে।
~সবাই মানে?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিহান।
~নিচে গেলেই দেখতে পাবি।
এটা বলেই হিয়া চলে যায়, যাওয়ার সময় আবার নিহানকে আস্তে করে বলে যায় “দেখিস আবার আমার ননদের দিকে নজর দিসনা”

নিহানের রাগ উঠে যায় এটা শুনে, রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে নিহান নিচে যায়।

নিহান নিচে এসে সবাইকে সালাম করে, কেয়ার দিকে একবার তাকায়। নিহান এখনো বুঝতে পারেনি কেয়া-ই যে সেই মেয়ে যার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে।
কেয়া মুচকি হাসে নিহানের দিকে তাকিয়ে, নিহান আঁড়চোখে তাকায় কেয়ার দিকে।
কাব্য চুপচাপ এক পাশে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। নিহান কাব্যর পাশে গিয়ে বলে “জিজু তোমার কি শরীর খারাপ করছে?”
~নাহ ভাই, লাইফটা প্যারাময়, জীবনে আর যায় করো না কেনো কিন্তু বিয়ে করিওনা। হিয়ার কানে যায় কথাটা। হিয়া দৌড়ে এসে বলে “তো করছেন কেনো বিয়ে, ডেকে এনেছিলাম বিয়ে করতে আপনাকে”?
~অযথা ঝগড়া করিওনা তো।
বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে কাব্য।
~ও আমি কথা বললেই ঝগড়া হয়ে যায় এখন।

~ আরে আপু তুই এমন করতেছোস ক্যান? জিজুর শরীর ভালো লাগছেনা মনে হয়।
নিহান হিয়াকে চোখ রাঙিয়ে বলে।

~তুই চুপ কর, বাঁদরামি করবিনা আমার সাথে।
~আজিব, আমি কি করলাম আবার।
কাব্য বলে উঠে ” থাক ভাই, ওর সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই, পাগলামী আর কম হবেনা ওর এই জীবনে।
নিহান কাব্যর পাশে বসতে বসতে বলে “আমার মামা টা কই”?
কাব্য বলে ” ফাইয়াজ ঘুমিয়ে পড়েছে”
~তাহলে জিজু তুমিও কিছুক্ষণ ফাইয়াজের সাথে রেস্ট করো, যাও। ভালো লাগবে।
কাব্য সোজা উঠে হিয়ার রুমের দিকে চলে যায়, কারণ ফাইয়াজ হিয়ার রুমে। হিয়া বাঁকা চোখে তাকায় আছে কাব্যর যাওয়ার দিকে। ভীষণ মাথাব্যাথা করছে কাব্যর, রাগের ঠেলায় আর হিয়াকে বলতে ইচ্ছে করছেনা এক কাপ রং চা বানিয়ে দেওয়া কথা।

কেয়া নিহানের পাশে আসতেই নিহান বলে “কেমন আছো তুমি?”
~এই তো আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আপনিতো ভালো নেই মনে হয়,,
~নাহ, তেমন কিছুনা। তুমি বসো, আমার কাজ আছে।
এটা বলেই নিহান নিজের রুমে চলে যায়।
যারা আসার কথা তারা আসলোনা কিন্তু আমার বোন কেনো তার পুরো পরিবার নিয়ে হাজির, ধুর বাবা, ভালো লাগছেনা।। জীবনটাও বড্ড অদ্ভুত, কখনো হাসায় আবার কখনো কাঁদায়।
নিজে নিজে বিড়বিড় করে নিহান।



আফিয়া বেগম বুঝতে পারে কাব্যর শরীর ভালো লাগছেনা, উনি হিয়াকে দিয়ে কাব্যর জন্য রং চা পাঠিয়ে দেয়, হিয়া কিছু না বলে চুপচাপ চা নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

নিন আপনার চা।
কাব্য হিয়ার কথা শুনে চোখ মেলে তাকায়। হিয়া পাশের টেবিলে চা রেখে চলে যাচ্ছে তখনই কাব্য বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে বসতে বলে আর কত পাগলামি করবে? কেনো শুধু শুধু রাগ করে আছো এখন আবার?
কিছু বলেনা হিয়া, কাব্য উঠে গিয়ে পেঁছন থেকে জড়িয়ে ধরে থুঁতনি রাখে হিয়ার কাঁধে।
~ছাড়ুন, কি করছেন এসব?
~নাহ, আগে দিয়ে যাও।
নেশালো কণ্ঠে বলে কাব্য।
হিয়া অবাক হয়ে বলে কি দিয়ে যাবো?
~মিষ্টি
হিয়া লজ্জা পাই, এই মেয়েটার লজ্জা একটু বেশিই।
কাব্য হিয়াকে নিজের দিকে ঘুরাই, চোখ বন্ধ করে রাখে হিয়া। কাব্য ধীরে ধীরে হিয়ার ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে এগুতেই হিয়া লজ্জায় মুখ লুকায় কাব্যর বুকে।
~ইস্ এতো লজ্জাবতী হলে কী হয় রাজকুমারী?
কাব্য মুচকি হেঁসে বলে।
হিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য হিয়ার কোমর জড়িয়ে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় হিয়ার ঠোঁটে। চোখ-মুখ খিঁচে ফেলে হিয়া।



নিহান গিটার হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বেলকনিতে ইজিচেয়ারে বসে আছে চুপচাপ।

কারো আকাশে মেঘ জমেছে বেশ, বাদল হাওয়া দিচ্ছে সারা,, এই বুঝি টপকে পড়বে বৃষ্টিফোটা।

এমন মধুর কথন শুনে নিহান চোখ মেলে তাকাতেই_____

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here