অশুভ খেলা,পর্ব: 02

1
3051

অশুভ খেলা,পর্ব: 02
লেখায়: সাদিক হাসান

অধ্যায়- ৩;
সাক্ষাৎ।

ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলাম। আবারো সেই স্বপ্ন দেখেছি। ভয়ানক সেই স্বপ্ন। কিন্তু এটাই আমার ভবিষ্যত। সে এসেছে। সে আমাকে আটকাতে এসেছে যাতে আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছতে না পারি। কিন্তু আমাকেও কিছু একটা করতেই হবে। আমাকে আটকানোর মতো ক্ষমতা কারো নেই। আমি শাওন আহমেদ।কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে।
বিছানা থেকে উঠে পড়লাম আমি। চোখটা লেগে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু ঘুম আর হবে না বুঝতে পারছি। সামনে তাকিয়ে দেখলাম সেই মেয়েটা নেই।
দেড়টা বেজেই গেছে প্রায়। কিন্তু এই রাতের বেলা চলন্ত ট্রেন থেকে মেয়েটা গেলো কোথায়!
এইরকম অবস্থায় অন্য কারো কথা চিন্তা করা আমার উচিত নয়। কিন্তু আমার কারণে কোন সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ুক সেটা আমি কখনোই চাইবো না। ঢাকা এসেছিলাম এই বিপদ থেকে মুক্তির জন্য। আমার পথ চেয়ে বসে রয়েছে অনেকেই। বিপদ থেকে মুক্তির উপায় পেয়ে গেছি। সেই জন্যই চট্টগ্রাম ফিরছি আবার।
নিজের কেবিন থেকে বের হলাম আমি। মেয়েটাকে যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে আমাকে।
কেবিন থেকে বের হয়ে আশেপাশে খুঁজতে শুরু করলাম। প্রথমে গেলাম বাথরুমে। সেখানেও থাকতে পারে মেয়েটা। আমার সাথে যেই থাকবে তারই জীবন হুমকির মুখে এখন। তাই মেয়েটাও হয়তো বাদ যাবেনা।
কিন্তু বাথরুমে খুঁজে পেলাম না।
যখনই ফেরার জন্য পা বাড়িয়েছি, অমনি চোখ গেলো আধা খোলা একটা দরজার দিকে।
একটা টয়লেটের দরজা আধা খোলা অবস্থায় রয়েছে।
মনের মধ্যে সন্দেহ জাগে, তাই সেখানে গিয়েই থমকে গেলাম। কেননা মেঝেতে পরে ছিল কালো কোর্ট গায়ে দেওয়া ট্রেনের টিটিই এর দেহ।
লোকটার নাকের কাছে আঙুল দিয়ে দেখলাম এখনো বেঁচে আছে সে। তাই আর সময় নষ্ট করলাম না।
টয়লেটের মধ্যে সেই পুরনো অশুভ গন্ধ টের পাচ্ছিলাম। যেটা আমাকে বারবার জানান দিচ্ছিল তার উপস্থিতি।
লোকটা বেঁচে আছে, তাই লোকটার দিকে এখন নজর না দিলেও চলবে।
সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম ক্যান্টিনে।
কিন্তু এখানেও নেই মেয়েটা।
-“কাউকে খুঁজছেন নাকি!”
প্রশ্নটা শুনে পিছনে ঘুরে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটা হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আমার দিকে একটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“ভাবলাম আপনি মনে হয় কাউকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। তাই এই কফি অর্ডার দিলাম। চলুন এক জায়গায় বসে খাওয়া যাক।” আবারো বললো সেই নীল চোখের মেয়েটা।
একটু নিশ্চিন্ত হলাম আমি। মেয়েটার সাথে সাথেই এখন থাকতে হবে আমাকে।
ট্রেনে খুব একটা ভিড় নেই আজকে। মানুষজনও যে যার মতো ঘুমিয়ে আছে।
সেই অবস্থায় আমি এবং মেয়েটা একটা টেবিলে বসে পড়লাম। মানুষ বলতে আমরা দুজনই তখন সেখানে।
আমি আবার কফি খেতে পছন্দ করিনা। তাই কাপটা টেবিলেই রাখা ছিল। মেয়েটা কফি খেতে খেতে বললো,
-“আপনাকে কেমন জানি মন মরা লাগছে। কারণটা জানতে পারি? আর কাকেই এইরকম করে খুঁজছিলেন?
-“না আসলে তেমন কিছুনা। জার্নি জিনিসটা খুব একটা ভালো লাগেনা আমার। তাছাড়াও এদিকেই আসছিলাম। একা থাকতেও কেমন জানি লাগছিল।”
-” ওহহ। তা কফি খাচ্ছেন না কেনো?” আমার কথার পিঠে জবাব দিলো মেয়েটা।
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ভদ্রতার খাতিরে যখন কফিতে চুমুক দিতে যাব ঠিক তখনই ধুপ করে একটা আওয়াজ হয়।
ক্যান্টিনে বসা লোকটা দেখলাম মাটিতে পরে গেছে।
বুকের মধ্যে ধুক করে উঠলো। “ইনকিরিস!”
নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো নামটা।
তাকিয়ে দেখলাম, সেই মেয়েটাও যেনো বিস্মিত হয়ে গিয়েছে।

অধ্যায়- ৪;
আসল পরিচয়,

বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সালমা। মাটিতে মুখ থুবড়ে পরে রয়েছে ক্যান্টিনের লোকটা।
যেনো অদৃশ্য কোন শক্তি লোকটাকে ফেলে দিয়েছে।
হুট করেই তাদের টেবিল কাঁপতে শুরু করে। আরো এক দফা অবাক হয় সে। কোন ভূমিকম্প ছাড়াই হুট করে টেবিল কেনো কাঁপতে যাবে।
এদিকে সালমা খেয়াল করে দেখে সামনে বসা লোকটার মুখে চিন্তার ভাঁজ। যেনো লোকটা জানে ঠিক কী হচ্ছে তাদের সাথে।
হঠাৎ করেই লোকটা উঠে দাঁড়ালো। আর বিড়বিড় করে কী সব জানি পড়তে লাগলো।
সালমা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে তার দেওয়া কফি টেবিলের উপর রেখে দিয়েছিল সেই লোক। সেটাও পরে গেছে মাটিতে। সেই কফিতেই ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল, সেটা খাওয়ানোর পরপরই নিজের কাজ করত সে। কিন্তু সব ভেস্তে যাচ্ছে।
মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো সালমার। সে উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই একটা অদৃশ্য শক্তি তার গলা চেপে ধরে।
হাত দিয়ে নিজের গলা ছাড়াবার চেষ্টা করতে থাকে সালমা। কিন্তু কোন লাভই হলোনা। শুধু এইটুকু বুঝলো কোন লোমশ হাত তার গলা পেচিয়ে রেখেছে। পুরো ক্যান্টিন জুড়ে পাওয়া যাচ্ছে একটা কটু গন্ধ। বের হওয়ার একমাত্র দরজাও বন্ধ হয়ে গেলো হঠাৎ করে। নিজেকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেও কিছুই হলো না।
এমন সময় পিছন থেকে একটা ভারী পুরুষ কণ্ঠ বলে উঠলো,
-“শাওন! তোর মৃত্যু আমার হাতেই লেখা আছে। আমার বিনাশ করতে চাস তুই? এই ইনকিরিস কে ধ্বংস করতে পারবি না তুই আর তোর হুজুর! তোর হুজুর কে শেষ করে রেখে এসেছি আমি। এইবার তোর পালা। তোকে শেষ করে আমি যাব আমার দামিনীর কাছে। তখন আর কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।”
কথা গুলো শুনেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো সালমার।
কারণ ক্যান্টিনে তারা দুইজন ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে তৃতীয়জন কোথাথেকে এলো!
অশুভ কিছু টের পাওয়ার সাথে সাথেই দমে যায় সালমা। বুঝতে পারে ভয়ানক বিপদের মধ্যে রয়েছে সে। যে করেই হোক তাকে এখান থেকে উদ্ধার পেতে হবে। সে তো শুধুমাত্র নিজের প্রতিশোধ নিচ্ছিল মাত্র।
হঠাৎ সালমার চোখের সামনে দৃশ্য পাল্টাতে শুরু করে। ঘোরের মধ্যে যেতে থাকে সে। যাওয়ার আগে দেখতে পায় সেই লোকটা, যার নাম শাওন, তিনি এখনও বিড়বিড় করে কিছু উচ্চারণ করেই যাচ্ছে।
শুধু এইটুকু বুঝতে পারলো, লোকটা আয়াতুল কুরসি পড়ছে।
একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলো সালমা। চোখ মেলে দেখলো, একটা ট্রেনের মধ্যে বসে রয়েছে সালমা। সেই একই ট্রেন, তুর্ণা এক্সপ্রেস।
ট্রেনটা প্রায় ফাঁকাই ছিল। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে কিছু ছেলে উঠে পড়ে।
একটা ফার্স্ট ক্লাস কেবিনে সালমা একাই বসে আছে। আর কোন যাত্রী হয়তো আসেনি।
হঠাৎ করে ট্রেনের টিটিই দরজা খুলতে বলে টিকিট দেখানোর জন্য। সালমাও টিকেট দেখায়। আর চলে যায় লোকটা।
কিছুক্ষন বাদে আবারো সেই টিটিই দরজা খুলতে বলে কোন কারণে। সালমা যেনো অনুভূতি শুন্য হয়ে গিয়েছে। নিজের ইচ্ছায় সে কোন কিছুই করছে না। বরং সে নিজেকেই যেনো দেখতে পারছে।
যেনো বহু আগের ভয়ানক কোন স্মৃতি আবারো ফিরে এসেছে তার মস্তিষ্কে।
দরজা খোলার সাথে সাথে সাত আটজন ছেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে কেবিনে ঢুকে পড়ে। প্রতিটা ছেলের চেহারা একদম হিংস্র জানোয়ারের মতো লাগছিল। পুড়ে যাওয়া চেহারা প্রত্যেকের।
ছেলে গুলো ধীরে ধীরে এগুতে থাকে সালমার দিকে।
তাদের মধ্যে ট্রেনের টিটিই ও ছিল।
সবাই এক এক করে ঝাঁপিয়ে পরে তার উপর। অবশ হয়ে যাওয়া সালমা কিছুই করতে পারছিল না। শুধু চিৎকার দিতে থাকে সে। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। ছেলে গুলো তাকে শকুনের মতো ছিড়ে খায়।
শেষবারের মতো একবার চিৎকার করে ওঠে সালমা হক। সাথে সাথে চোখ খুলে যায় তার।
সামনে তাকিয়ে দেখে সেই লোকটা তার মুখের উপর ঝুঁকে আছে।
ধরফরিয়ে উঠলো সালমা। এই ভয়াবহতা সে আর মনে করতে চায়না।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সে ওই ক্যান্টিনেই পরে আছে। কিন্তু দরজাটা এইবার খোলা রয়েছে।
সালমা সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নেয়। অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি এখনো তার। জামার আড়াল থেকে একটা ছুরি বের করে লোকটার গলায় ধরে আর বলে,
-“এখনই বল, কি হচ্ছে এখানে? না হলে তোকে এখানেই শেষ করে দিবো।”
সালমা খেয়াল করে দেখলো লোকটা মুচকি মুচকি হাসছে।
এটা দেখে আরো রেগে গেলো সে। ছুরিটা দিয়ে গলায় একটু খোঁচা দিলো, এবং আবারো একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।
এইবার লোকটা মুখ খুলল। বললো,
-“ওর নাম ইনকিরিস। খারাপ একটা জ্বীন সে। অনেক শক্তিশালী। আর আমি দুঃখিত আমার জন্য আপনাকে আঘাত পেতে হয়েছে।”
কথাটা শুনেই নিজের জায়গায় যেনো দমে যায় সালমা। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রাখে। এইসবে কখনো বিশ্বাস না করলেও চোখের সামনে ঘটা ঘটনা গুলো কিছুতেই অবিশ্বাস করতে পারছে না।
তাই এইবার সে একটু নরম হয়ে বললো,
-” ঠিকাছে। আমাকে পুরোটা বলবেন। কোন অজুহাত শুনতে চাইনা। সেটা জ্বীন হোক বা অন্য কিছু! এখানে কেনো এলো সে? আপনার সাথেই বা কিসের শত্রুতা? আর বড় কথা আপনিই বা কে?”
-“ঠিকাছে ।সব বলছি। আমার কারণে আপনি আঘাত পেয়েছেন। তাই আমার কর্তব্য আপনাকে সব জানানো। তার আগে বলে রাখি, জ্বীনেরা মানুষের মনে প্রবেশ করতে পারে। মনের গভীরে থাকা ভয়টা তারা বের করে আনে। হয়তো, আপনার মনের গভীরে থাকা কোন ভয় ইনকিরিস আরো ভয়ানক ভাবে আপনাকে দেখিয়েছে। তাই আমি আবারও দুঃখিত। সে আবারও আমাদের উপর হামলা করতে পারে। চলুন কেবিনে বসে কথা বলা যাক।

ফার্স্ট ক্লাস কেবিনে বসে রয়েছে সালমা এবং সেই লোকটা। সালমা শুধু নিজের নামটা বলেছে লোকটাকে। আর কিচ্ছু জানায়নি লোকটাকে। এখন অপেক্ষা করছে লোকটার কাছ থেকে তার কথা শোনার জন্য।
লোকটা বলতে শুরু করলো,
-“আমার নাম শাওন আহমেদ। আমি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম মাধ্যমিক পর্যন্ত। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি জেনারেল লাইন থেকে। যখন কলেজে উঠি তখন ঢাকাতে আসতে হয়েছিল আমাকে। বিল্ডিং এর শহরে গ্রাম থেকে আসা ছেলেটা খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারত না কখনোই। তাই সেই ছেলের জীবনে আসে একটা মেয়ে। মেয়েটার নাম দামিনী। হিন্দু ছিল মেয়েটা। কিন্তু মায়াবী সেই মেয়ে নিজের মায়ায় আমাকেই ফেলে দেয়। অজ্ঞাত কারণে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বও হয়ে যায়। ধীরে ধীরে দুইজনই বুঝতে পারি আগুন দুই পাশেই লেগেছে।
আমরা দুইজনই দুইজন কে পছন্দ করতে শুরু করে দেই। কিন্তু আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যেই বাধা ছিল সেটা হলো আমাদের ধর্ম। সমাজের কঠিন বাস্তবতা আমাদের দুইজনেরই জানা ছিল। তবুও আমাদের বন্ধুত্ব কখনো ভাঙেনি।
এরই মাঝে আমি আমার সব কথা ওকে জানিয়েছিলাম। আমার শৈশব, মাদ্রাসায় কাটানো সেইসব দিন সব।
ওকে এও বলেছিলাম যে, আমি যেই মাদ্রাসায় পড়তাম সেখানকার হুজুর জ্বীন তাড়াতে পারত। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসতো তার কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। আমার নিজের চোখে দেখা অনেক ঘটনা আছে যেগুলো আমি শুনাতাম দামিনীকে। দামিনীও অবাক হয়ে শুনত আর মাঝেমাঝে শিউরে উঠত। ওর এইরকম রোমাঞ্চিত হওয়া মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগত আমার। আমিও একটু আধটু টোটকা জানতাম। বলতে গেলে সাধারণ ভাবে খারাপ কিছু যাতে আছর করতে না পারে সেটা শিখেছিলাম হুজুরের থেকেই। অনেক প্রিয় ছিলাম আমি হুজুরের।
ভালোই চলছিল আমাদের দিন। কিন্তু হঠাৎ বিপর্যয় আসে। দামিনীর বাড়িতে জেনে যায় যে, তাদের মেয়ে একজন মুসলমানের সাথে ঘোরাফেরা করছে। তাই তারা একটা ভালো পাত্র দেখে তার সাথে দামিনীর বিয়ে দিয়ে দেয়। আমরা তো আগে থেকেই জানতাম নিয়তিতে এইরকম কিছু একটাই লেখা আছে। তাই আমরাও মেনে নেই। কিন্তু নিজেদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, কেউ কাউকে কখনো ঘৃণা করব না। চিরকাল বন্ধু হয়েই থাকবো একে অপরের।”

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থেমে গেলো লোকটা।
সালমা গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রতিটা কথা শুনে যাচ্ছিলো। লোকটা থেমে যেতেই কিছুটা বিরক্ত হয় সে। লোকটাকে প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই আবারো সেই গন্ধ নাকে লাগে তার। সেই অশুভ বিশ্রী গন্ধ যেটা একটু আগে পেয়েছিল।

অধ্যায়- ৫;
আঘাত।

পুরনো কথা মনে করতে শাওনের বেশ কষ্ট হচ্ছে। চোখের কোণে পানি চলে এসেছিল তার। শেষবার যখন দামিনীকে দেখেছিল তখন বিছানায় পরে কাতরাচ্ছিল মেয়েটা। চোখের নিচে কালী পরে গেছিল। শুকিয়ে গিয়েছে অনেক আগের তুলনায় অনেক। আগের সেই চেহারার আর কিছুই চেনা যায়না এখন।
আগের দামিনীকে ফিরিয়ে দিতেই শাওন এই কঠিন কাজ নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।
কিন্তু আবারো সে অশুভ গন্ধ টের পাচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগে আয়াতুল কুরছি সূরা সহ, আরো বেশ কিছু আমল করে ইনকিরিসকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রেখেছিল শুধু। কিন্তু তাকে পুরোপুরি শেষ করার উপায় এখানে নেই। কিন্তু এই যাত্রা তাকে নিরাপদে শেষ করতেই হবে।
শাওন সালমার ওইরকম আচরণের কথা এখনো জানতে চায়নি। সুন্দরী নীল চোখের মেয়েটা ছুরি নিয়ে এইরকম কেনো করতে যাবে? কি উদ্দেশ্যে তার? এইসব ভাবার সময় নেই আর হাতে।
নিজের ব্যাগের কাছে কিছু একটা নিতে যাবে ঠিক তখনই শাওনকে ধাক্কা দেয় কিছু একটা।
সঙ্গে সঙ্গে লোহার দরজার সাথে প্রচণ্ড জোরে বারি খায়।
ধীরে ধীরে তার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতে শুরু করে। বুঝতে পারে ইনকিরিস তার মনের ভিতরের ভয়টাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।

অন্ধকার একটা ঘরে রয়েছে শাওন। দূরে একটা এনার্জি লাইট জ্বলছে শুধু।
ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে একটা অবয়ব।
শাওন ভালো করে খেয়াল করে দেখলো সেটা আর কেউ নয়, বরং দামিনী।
মেয়েটা ধীরে ধীরে তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
মুখের কাছ থেকে যেই চুল গুলো সরিয়ে ফেলল সাথে সাথে শাওন চিৎকার করে কয়েক হাত পিছিয়ে যায়।
দামিনীর পুরো মুখ জুড়ে রক্ত লেগে আছে। সেই চেহারা নিয়েই জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো সে। আর চিৎকার করে বলতে লাগলো,
-“মেরে ফেলেছি। তার রক্ত খেয়েছি আমি। বাঁচতে পারবি না তুই। তোকেও শেষ করবো একই ভাবে।”
কথাটা বলেই দামিনীর ঘাড় এক পাশে কাত হয়ে।
নিজের চুলের ঝুটি এক হাত দিয়ে ধরে এক টানে ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে নেয় সে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়তে শুরু করে ঘাড় দিয়ে।
এদিকে তার কাটা মাথা শাওনের দিকে তাকিয়ে উপহাস করে হাসতে শুরু করে। নির্মম সেই হাসির আওয়াজ শুনে যে কারো আত্মা চমকে উঠবে।

চলবে……

1 COMMENT

  1. ইসলাম ধর্মকে অপমান করেছেন। কারণ এই গল্প টিতে লিখেছেন শাওন মুসলিম এবং দামিনী হিন্দু। এবং তারা একে অপরকে ভালোবাসে এবং প্রেম করে। কিন্তু শাওন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে এবং একজন মাদ্রাসার ছাত্র জানে যে ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম অবৈধ। কিন্তু এই গল্পটিতে শাওন মাদ্রাসার ছাত্র হয়েও বিয়ের আগে প্রেম করেছে যা মাদ্রাসার ছাত্র কখনো করে না। তাই আমি বলছি গল্পটিতে আপনি ইসলামকে অপমান করেছেন।

    এখন আপনি বলবেন এটি কাল্পনিক গল্প। তাই বলে কী আপনি ইসলামকে অপমান করবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here