অশুভ খেলা,পর্ব: 03 (শেষ পর্ব)

0
2964

অশুভ খেলা,পর্ব: 03 (শেষ পর্ব)
লেখায়: সাদিক হাসান

সালমার দিকে আবারো এগিয়ে আসছে সেই ছেলে গুলো। তাদের চোখে মুখে ভোগের আগুন জ্বলজ্বল করছে যেনো।
এইবার আর কারো মুখ পোড়া নয়। প্রত্যেকের মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সব গুলো ছেলেদের মধ্যে একটা ছেলের মুখ এইবার আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে তার কাছে।
জয়ের মুখ। জয়ের সেই চেহারা আজও ভুলতে পারেনি সে। কিন্তু এইবার জয়ের ঠোঁট সেলাই করা।
ধীরে ধীরে ভয় করতে শুরু করে ওর। চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।
সালমার সাধারণ জ্ঞানটুকুও যেনো লোপ পেয়ে গিয়েছে।
ছেলে গুলো আবারো তার দিকে এগিয়ে আসছে।
জয়ের সেলাই করা মুখ দিকে তাজা রক্ত গড়িয়ে সালমার মুখের ওপরই পড়ছে, কেননা জয় নামের সেই ছেলেটা ঝুকে আছে সালমার ঠিক উপরে।
ছেলেটার বুকের ঠিক বাম পাশে বিশাল একটা গর্ত, এবং সেখান থেকে বিশ্রী কালো পোকা কিলবিল করতে দেখলো সালমা।
নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। বমি করে দিলো।
চোখ বন্ধ করে চিৎকার করতে শুরু করলো কিন্তু কোন লাভই হলো না।
এইবার সেই ছেলে গুলো তার দিকে উপহাস করে হাসতে শুরু করে দেয়, এবং ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসে।
প্রতিবার একেকজন আসছিল, একেকজন চলে যাচ্ছিলো নিজেদের ক্ষুধা মিটিয়ে।
একের পর এক চেহারা পাল্টাচ্ছিল শুধু। যেনো চেহারা গুলো গেঁথে আছে সালমাল হৃদয়ে।
কোন কিছুই করার নেই তার। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেলো তার শরীর। শুধু চোখ দিয়ে দেখতে লাগলো পিশাচ গুলোর কর্মকান্ড। সালমার চোখের কোনা দিয়ে যেনো পানি নয়, বরং রক্ত ঝরছিল।

অধ্যায়- ৬;
কিছু গল্প।

চোখের সামনে এই ভয়ানক দৃশ্য আর সহ্য হচ্ছে না আমার। কিন্তু আমি জানি এটা শুধুমাত্র আমার মনের ভয় ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। ইনকিরিসের শক্তির মূল উৎস হলো আমার ভয়। তাই আমাকে যে করেই হোক নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এখনো আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দামিনী। কিন্তু আমি জানি সব আমার কল্পনা। এবং এটা আমার কল্পনা, তাই আমাকেই যা করার করতে হবে।
মাটিতে লুটিয়ে পরে গেছিলাম আমি। সেখান থেকে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম এক লড়াইয়ের জন্য।
মনের শক্তিকে বাড়ানোর জন্য দামিনীর সেই মিষ্টি হাসি আরো একবার মনে করলাম।
এইবার এই খেলা শেষ করতে হবে।
দামিনীর অবয়বের দিকে তাকিয়ে আমিও জোরে জোরে হাসতে শুরু করে দিলাম।
আমার হাসি দেখে থেমে যায় শয়তানটার হাসি।
এক হাতে মাথা ঝুলিয়ে নিয়েই আমার দিকে তেড়ে আসতে থাকে।
আমার স্বপ্ন এটা, তাই আমি যা চাইবো তাই হবে।
চোখ বন্ধ করে অন্ধকার ঘরের চারিদিকে আলোর কথা চিন্তা করলাম। চারদিকে ফুলের বাগান এবং তার ঠিক মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি।
চোখ খোলার সাথে সাথে আবিষ্কার করলাম চারিদিকে আলোর ছড়াছড়ি। আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি সবুজ ঘাসের ওপর।
মনে মনে আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ দিয়ে আবারো আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে নিজের হাতে একটা তলোয়ার চিন্তা করলাম।
কেননা এখনো সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই শয়তানটা। আমার দিকেই এগিয়ে আছে।
তলোয়ার হাতে এগিয়ে গেলাম দামিনীর দিকে। সেও আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
মাথাটা আবারো নিজের ঠিক জায়গায় লাগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এইবার তার শরীর পরিবর্তন হতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে কালো লোমশ জানোয়ারের রূপ ধারণ করে সেটি। মুখটা বিকৃত হয়ে যায়। পুরো শরীরে পোকা কিলবিল করছিল যেনো। চোখের শূন্য কোটর
থেকে দুটো পোকা বেরিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। পঁচা মাংসের গন্ধ ভক করে নাকে আসলো আমার।
সেই জানোয়ার মন্থর গতিতে আমার দিকে এগিয়ে আসে।
আমি আল্লাহর নাম নিয়ে, সেই শয়তানের ঘাড়ে তলোয়ার দিয়ে কোপ বসিয়ে দেই।
ঘাড় থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেনো পুরো দুনিয়া কেঁপে ওঠে আমার। সামনে তাকিয়ে দেখি শয়তানটার দেহ গলে যাচ্ছে।
পঁচা মাংসের গন্ধ এখন রূপ নেয় পোড়া গন্ধে।
আমার চারপাশের দৃশ্য ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগে। অন্ধকার গ্রাস করে ফেলে আমাকে।

-“উঠুন, উঠুন। এই যে মিস সালমা! আপনি ঠিক আছেন তো?”
শাওন খেয়াল করে দেখলো সেই মেয়েটার জ্ঞান ফিরছে ধীরে ধীরে।
হাফ ছেড়ে বাঁচলো সে। বুঝলো মেয়েটার কিচ্ছু হয়নি। যখন সে জ্ঞান ফিরে পায় তখন দেখে মেয়েটা মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করছে। বিড়বিড় করে কিছু বলছে। কিন্তু তার এক বিন্দুও বুঝে উঠতে পারেনি সে। কিন্তু শাওন এইটুকু বুঝতে পেরেছে, তার সামনে থাকা মেয়েটার জীবনে আরো অনেক বেশি কষ্ট রয়েছে। শুধু তাই নয়! মেয়েটা একটা খুনী। খবরে কাগজে তখন যেই খুন গুলোর কথা সে শুনেছে সেগুলো আর কেউ নয়, বরং তার সামনে থাকা মেয়েটাই করেছে।
কেননা শাওন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেয়েটার নকল চুল খুলে গেছে। মাটিতে পরে যাওয়ার ধাক্কায় একটা চোখের লেন্সও পরে রয়েছে মাটিতে।
সালমা নামের মেয়েটাকে জাগানোর আগে শাওন চেক করেছে তার ব্যাগ, এবং খুঁজে পেয়েছে বিশাল আকৃতির একটা সুঁই এবং শক্ত সুতো।
এবং সেটা থেকেই তার সব কনফিউশন দূর হয়ে যায়। কিন্তু শাওনের কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটার এই কাজের পিছনে রয়েছে একটা গল্প। এবং এই ট্রেন যাত্রার শেষ সময় পর্যন্ত সেই গল্প শাওনকে শুনতে হবে। অবশ্য তার নিজের গল্পও বলার আছে মেয়েটাকে।
মেয়েটা চোখ খুলতেই শাওন একটা সবুজ চোখ এবং একটা নীল চোখ দেখতে পেলো। তারমানে মেয়েটার চোখ সবুজ! মনে মনে বললো শাওন।
মেয়েটা উঠেই পানি চাইলো তার কাছে। শাওন পানির বোতল এগিয়ে দেয় এবং তাকে কিছুটা সময় দেয় শান্ত হওয়ার। এরপর বলে,
-“মনে হচ্ছে আপনারও অনেক কিছু বলার আছে আমাকে। তাহলে আমার গল্পটা নাহয় আগে শেষ করে নেই। তারপর আপনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে বলতে পারেন, মুখ সেলাই করে লোক গুলোকে খুন করার আসল কারণটা ঠিক কী?”
শাওন খেয়াল করে দেখলো তার কথা শুনে বেশ ভালোভাবেই চমকে উঠলো মেয়েটা।
সাথে সাথে আবিষ্কার করলো যে তার মাথার নকল চুল নেই। সাথে একটা লেন্সও গায়েব।
মেয়েটার এইরকম ব্যস্ত হয়ে ওঠা দেখে শাওন নিজেই তাকে আশ্বস্ত করে যে সে কাউকে কিচ্ছু বলবে না ।কারণ তার জীবনটাই তো একটা অভিশাপ। আর এই দীর্ঘ যাত্রায় অনেকটাই চিনতে পারছে একে অপরকে।
যখন শাওন দেখলো মেয়েটা শান্ত হয়ে এসেছে তখন সে আবারও তার গল্প শুরু করলো।

দামিনীর পরিবার থেকে ওকে বিয়ে দেওয়ার এক এক করে চার বছর কেটে যায়। সুখেই ছিল সে। তার স্বামী দারুণ একজন মানুষ। খুব ভালোবাসে মেয়েটাকে। বাড়ির লোকজনও ভালোই।
কিন্তু চার বছর পরেও যখন দামিনীর কোন সন্তান হচ্ছিল না তখন আর দশ টা পরিবারের মতো তার শশুর বাড়ির লোকেরাও কথা শুনাতে শুরু করে।
কিন্তু দামিনীর স্বামী তার পক্ষে থাকায় শশুর বাড়ির লোকেরা খুব বেশি একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিল না।
এক পর্যায়ে তারা সুযোগ পেয়ে যায়। এক মাসের জন্য দামিনীর স্বামীকে ব্যাবসার কাজে বাহিরে যেতে হয়। তখন থেকেই দামিনীর পরিবার ওকে নানান কথা শুনাতে থাকে। এতোদিন বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে গিয়েও যখন কিছু হয়নি তখন তারা যেতে শুরু করে বিভিন্ন পুরোহিতদের কাছে।
মেয়েটাকে তারাও ভালোবাসত। তারা চাইতো না মেয়েটার কোন ক্ষতি হোক, কিন্তু পরিবারের বংশধর নিয়ে হিন্দু সমাজের বাড়াবাড়ি একটু বেশিই ছিল বিধায় দামিনীর উপর চাপ পড়তো বেশি। কেননা পরিবারের একমাত্র ছেলে ছিল তার স্বামীই।
একদিন দামিনীর শাশুড়ি খবর পায় একটা গ্রামে নাকি বহু পুরোনো একটা মন্দির আছে। সেখান এক পুরোহিত থাকে। আর ওখানকার ভগবান নাকি জাগ্রত খুব।
যেই শোনা সেই কাজ। তারা দামিনীকে সেখানে নিয়ে যায়। নিয়ম অনুসারে রাতের বেলা মন্দিরে থেকে দেবীর পূজা করতে হবে। এবং সেই পূজা একা দামিনীকেই করতে হবে, অন্য কেউ থাকতে পারবে না। আরো বেশ কয়েকজন মেয়ে ছিল। তারাও আশ্বাস দেয় যে তারা দামিনীকে দেখে রাখবে।
দামিনী সেখানে থাকতে চায়নি। কিন্তু প্রতিদিন কথা শুনতে শুনতে তার ভিতরেও একটা জেদ চেপে যায়। সেও থাকতে চায়।
মন্দিরে রয়ে যায় সে। মন্দিরের ভিতর দেবীর কক্ষে তাকে ধ্যানে বসতে বলে বাহিরে চলে যায় পুরোহিত।
কিছুক্ষন ধ্যানে বসার পর দামিনীর বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং সেখান থেকে উঠে বাহিরে বের হয়।
মন্দির থেকে কিছুটা সামনেই আলো দেখতে পেয়ে মনে করে সেখানে পুরোহিত আছে। তার কাছেই জিজ্ঞেস করার জন্য এগিয়ে যায়।
ঘরের কাছে গিয়ে কিছু কথাবার্তা তার কানে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে জমে যায় সে নিজের জায়গায়।
পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গিয়েছিল দামিনীর। আসলে মন্দিরের সেইসব মহিলারা ছিল পুরোহিতের কাছের লোক। এখানে যেই সব মেয়ে রাতের বেলা থাকে তাদের যে কোন উপায়ে পুরোহিতের বিছানা গরম করার জন্য পাঠাতো সেই সব মেয়েরা। দামিনীর সাথেও সেটাই করা হতো। খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে দেওয়া হতো এবং শেষ পর্যন্ত খারাপ কাজ করে আবারো রেখে দেওয়া হতো ঠিক জায়গায়। কেউ কিছুই বুঝতে পারতো না।
কিন্তু তাদের ভাগ্য খারাপ যে দামিনী আগে থেকেই সব জেনে যায় এবং সিদ্ধান্ত নেয় সেখান থেকে পালানোর।একা মেয়ে, শরীরে শাড়ি এবং গহনা।
এবং সুন্দরী।
এই রাতের বেলা কোথায় যাবে সে! কিন্তু এখানে সে কোনভাবেই থাকতে পারবে না। তাই সিদ্ধান্ত নেয় যা হওয়ার হয়ে যাক সেখান থেকে তাকে বের হতেই হবে।
রাতের অন্ধকারে দৌঁড়াতে থাকে দামিনী। কেননা পালাতে গিয়ে মন্দিরের পুরোহিত তাকে দেখে ফেলেছে।
তারাও পিছু পিছু আসছে তাকে ধরার জন্য।
দামিনী দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এক পর্যায়ে একটা ঝোপের আড়ালে এসে পরে। সেখানে একটা কদম ফুলের গাছ ছিল। ঝোপের আড়ালে সে কদম গাছের সাথে দাঁড়িয়ে ছিল দামিনী।
মন্দিরের সেই পুরোহিত এবং তার সঙ্গীরা যখন সেখান দিয়ে চলে যায় তখন দামিনী সেখান থেকে বের হতে নেয়। কিন্তু ঝোপের সাথে শাড়ির আচল বেঁধে যায় এবং দামিনীর বুক উন্মুক্ত হয়ে যায়।
সেখানেই ঘটে বিপত্তি।
মন্দিরের পুরোহিত কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে আসছিল সেই পথেই। তখন শাড়ি টানাটানির শব্দে যা বোঝার বুঝে নেয় তারা।
এইবার খুব সহজেই দেখে ফেলে দামিনীকে। দামিনীর শাড়ি তখনও ঝোপের সাথে আটকে ছিল।
শুধু একটা ব্লাউজ আর উন্মুক্ত পেট দেখে পুরোহিত নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারায়।
খারাপ চিন্তা নিয়ে সে যেই দামিনীকে স্পর্শ করতে যাবে সাথে সাথে কোন এক অদৃশ্য শক্তি আছড়ে ফেলে তাকে মাটিতে।
রাতের নিস্তবদ্ধতা ছাড়াও একটা হিংস্র জানোয়ারের এগিয়ে আসার পদশব্দ শুনতে পাচ্ছিল পুরোহিত এবং তার সাথের মেয়েরা।
পুরোহিত উঠে আবার দামিনীকে ধরতে যাবে তখন নাকি সে দেখতে পায়, কদম গাছ বেয়ে নেমে আসছিল সাক্ষাৎ এক পিশাচ।
পুরো শরীর জুড়ে নাকি তার পোকা কিলবিল করছিল। গাছের সাথে ঘষা লেগে যতোই নিচে নামছিল ততই খুলে খুলে পড়ছিল শরীরের মাংস।
পঁচা গন্ধ আর সহ্য করতে না পেরে, এবং ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা। যাওয়ার সময় নাকি দামিনীর চিৎকার শুনতে পায়।
কিন্তু তারা আর পিছে তাকায়নি। সোজা পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে।
সকালে গ্রামের লোকেরা দামিনীকে উদ্ধার করে সেখান থেকে। জ্ঞান ফিরলে সব শুনে তার মুখ থেকেই। এরপর গ্রামের লোকেরা মিলে সেই পুরোহিতকে খুঁজে বের করে এবং তার মুখ থেকেও একই কথা জানা যায়।
এরপরই শুরু হয় ইনকিরিসের তাণ্ডব। ইনকিরিস একটা কাফের জ্বীন। এরা আরো বেশি হিংস্র হয়ে থাকে। আর ইনকিরিসের নজর পড়েছিল দামিনীর উপর। সেই কদম গাছেই ছিল তার বাস। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দামিনীর শাড়ি সেখানেই খুলে যায়, এবং এটাই আসল কারণ।
ইনকিরিস চায় দামিনীর সাথে মিলিত হতে। দামিনীর গর্ভে নিজের সন্তান জন্ম দিতে চায়। এবং সেটার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে ইনকিরিস। সে আগে দামিনীকে দুর্বল করে দিচ্ছে। শারিরীক এবং মানসিক দুই দিক থেকেই দুর্বল করে দেওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট দিনে সে মিলিত হবে। তার আগে কোন পুরুষ দামিনীকে স্পর্শ করলেই তার ক্ষতি করে দিবে সে।
দামিনীর স্বামীকেও অনেকবার আঘাত করেছে জ্বীনটা। কিন্তু কোন বড় ধরনের ক্ষতি করেনি।
অনেক হুজুর, পুরোহিত লাগিয়েও ইনকিরিসকে যখন তাড়ানো গেলো না তখন দুর্বল শরীর নিয়েই দামিনী আমার নাম ঠিকানা তার স্বামীকে বলে।
এবং ডাক পরে আমার।
আমি নিজে কোন বিশেষজ্ঞ নই। তাই ধারণা করতে পারিনি ইনকিরিস ঠিক কতটা শক্তিশালী ছিল।
তাই আমার হুজুরকে সব বলি। হুজুর আমাকে জানায়, দামিনীর ব্যবহার করা একটা পোশাক, এবং এক গোছা চুল নিয়ে তার সাথে দেখা করতে।
সেই জন্যই আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসি, এবং ঢাকা থেকে সোজা গ্রামে আমার হুজুরের কাছে যাই।
হুজুর, দামিনীর পোশাক এবং চুলের মাধ্যমে ইনকিরিসকে তার সামনে হাজির করে।
কিন্তু ইনকিরিস এতটাই শক্তিশালী যে হুজুরও কাত হয়ে যায় তার সামনে।
কিন্তু হুজুর আমাকে জানায় কিছু সময়ের জন্য হলেও তিনি ইনকিরিস কে আটকাতে পারবে। আর সেই সময়ের মধ্যে আমাকে চট্টগ্রাম গিয়ে দামিনীর শরীরের ছিটিয়ে দিতে হবে পবিত্র জমজমের পানি, এবং দামিনীর হাত কেটে সেখান থেকে রক্ত বের করে, সেই রক্ত জমজমের পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
এতে শরীরের শিরায় পৌঁছে যাবে পবিত্র পানি এবং ইনকিরিস আর তার ধারে কাছে আসতে পারবে না। কিন্তু তবুও আরেকটা কথা থেকে যায়, দামিনীর কাছে যেতে না পারলে ইনকিরিস আমাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই ইনকিরিসকে ধ্বংস করতে হলে সবার আগে তাকে বন্দি করতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমি যখনই দামিনীর ওখানে গেছিলাম তখন থেকেই ভয়ানক সব স্বপ্ন দেখতে হচ্ছে আমাকে। অনেকবার আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে ইনকিরিস। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। এইবার তার খেলা শেষ করার সময় এসেছে।

শাওন আহমেদের কথা গুলো শেষ হওয়া পর্যন্ত অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে সালমা। তার মনের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
-“আচ্ছা, দামিনী তো এখন আরেকজনের। তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, একটা সংসার আছে। তাহলে আপনি কেনো নিজের জীবন ঝুকিতে ফেললেন? জ্বীনটা তো আপনাকে মেরেও ফেলতে পারে! তখন?”
সালমা খেয়াল করলো তার কথা শুনে লোকটার মুখে হাসির ঢেউ খেলে গেলো।
লোকটা বললো,
-“ম্যাডাম, সবার আগে আমি একজন মানুষ। মানুষের বিপদে যদি মানুষ পাশে না দাঁড়ায় তাহলে কী হয়? তারপর আমি একজন মুসলমান। একজন সত্যিকারের মুসলমান কখনো তার কথার খেলাপ করেনা। দামিনীর কাছে ওয়াদা করেছিলাম সব সময় বন্ধু হয়ে পাশে থাকবো। এবং আমি আমার কথা রাখবো।”
কথা গুলো শুনে সালমার চোখের কোণে পানি জমে উঠলো। পুরোনো অনেক কথা ভেসে উঠলো মানসপটে। যদি সে এমন করে চিন্তা করতো!
মনে মনে ভাবলো সালমা।
এরপর লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো,
-” ইনকিরিস কি আবারো আক্রমণ করতে পারে না আমাদের? কী করে নিশ্চিত হচ্ছেন যে সে আর আক্রমণ করবে না?”
-” ইনকিরিসের শক্তি হলো আমাদের ভয়। সে আমাদের মনের মধ্যে ভয় দেখায়। আর আমি ওকে আমার মনের মধ্যেই হারিয়েছি। তাই সে আর সহজে আমাকে আক্রমণ করার কথা চিন্তা করতে পারবে না। তারও শক্তিক্ষয় হয়েছে অনেক। তাই বলা যায় আগামী যাত্রাপথ নিরাপদেই পার হওয়া যাবে। এখন আপনার গল্প বলুন আমাকে, যদি চান আপনি তবে!”
সালমা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলো। চিন্তা করছে সে লোকটাকে বিশ্বাস করবে কি-না! সব কথা কি বলা উচিত হবে লোকটাকে?
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো সে। বলবে সবটা। তার জীবনের প্রতিটা কথা সে বলবে লোকটাকে।
শুরু করলো সে প্রথম থেকেই,

গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিল সালমা হক। তাদের গ্রামেরই একটা ছেলে শহরে পড়াশোনা করতো। মাঝেমাঝে গ্রামে আসতো সেই ছেলেটা। তখনই সালমাকে দেখে মনে ধরে যায় তার।
সালমাও পছন্দ করতো ছেলেটাকে।
ছেলেটার নাম ছিল জয়। প্রেম, ভালোবাসা সবই হয়।
কিন্তু, প্রতিটা বাংলা সিনেমার মতো, ভালোবাসার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবার। সালমার পরিবার কিছুতেই মেনে নিবে না সেই ছেলেকে।
তাই তারা ঠিক করে ট্রেন ধরে পালিয়ে যাবে। এবং চট্টগ্রামে গিয়ে বিয়ে করবে।
বেছে নেয় তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনের টিকেট কেটে দিয়েছিল জয় নিজেই। টিকিট ধরিয়ে দেয় সালমাকে, আর বলে, বাড়ি থেকে বেশ কিছু গহনা আর টাকাও যাতে সাথে নেয়। কেননা নতুন জায়গায় সেগুলোর প্রয়োজন পড়তে পারে।
সরল মনে সালমা বিশ্বাস করেছিল ছেলেটাকে।
সে ঠিক সময় পৌঁছে যায় স্টেশনে। এবং জয়ও একই সময় পৌঁছে যায়। বেশ অনেক গুলো গয়না এবং টাকা চুরি করে এনেছিল সালমা।
মনে মনে বেশ খুশি ছিল সে। ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবন কাটাবে।
কিন্তু ট্রেন চলতে শুরু করার কিছু আগে আরো কয়েকজন ছেলে ঢুকে পরে তাদের কেবিনে।
ট্রেন কিছুদূর যাওয়া পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এক ঘন্টা পরেই সালমা বুঝতে পারে সে বিপদে পড়েছে।
ধীরে ধীরে বের হয় জয়ের আসল চেহারা।
যেই ছেলে গুলো পড়ে উঠেছিল তারা আসলে ছিল জয়ের বন্ধু। জয়ের লোভ ছিল সালমার টাকার ওপর।
সালমার চোখের সামনে যেনো তার স্বপ্ন ভেঙে যেতে শুরু করে। চিৎকার করতে থাকে সে। কিন্তু ট্রেনের টিটিই সেটা শুনে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সেও যোগ দেয় সেই নরপিশাচদের সঙ্গে।
এক এক করে সবাই ছিড়ে খায় সালমার নরম দেহ।
শেষ পর্যন্ত তাকে ওই অবস্থাতেই রেখে দেয় এবং জয় আর তার বন্ধুরা এক এক করে নেমে যায়।
তারা টিটিই কে দায়িত্ব দিয়েছিল যাতে সে নিজেই সালমাকে খুন করে।
কিন্তু লোভী টিটিই এর উদ্দেশ্য ছিল আরও খারাপ।
সে তার চেনা এক দালালকে ডেকে সালমাকে বিক্রি করে দেয় তার কাছে। লোকটা জানতো, সেই দালালের খপ্পর থেকে কখনো বের হতে পারবে না, গ্রামের সেই অসহায়, দুর্বল মেয়েটা। বরং প্রতিটা রাত মুখোমুখি হতে হবে নতুন নতুন কাস্টমারের।

অধ্যায়- ৭;
অন্তিম লড়াই।

মেয়েটার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। একটা মায়াবী, নিষ্পাপ চেহারা লুকিয়ে আছে মেয়েটার মধ্যে। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে কি বানিয়ে দিয়েছে? তার শেষ কাস্টমার এবং সেই দালালকে খুনের মাধ্যমেই শুরু হয় মেয়েটার নতুন যাত্রা।
সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ রাত কাটিয়েছে তার সাথে। কিন্তু কারো মনেই তার জন্য এতটুকু মায়া কাজ করেনি। স্বাভাবিকভাবেই মেয়েটার মস্তিষ্কে ঢুকে গেছে, সমাজের প্রতিটা মানুষ এক। সবাই খারাপ, হোক সেটা ছেলে বা মেয়ে!
নিজের কাস্টমারদের লিস্ট সে চুরি করে নেয় তার দালালের কাছ থেকে। তার দালাল ছিল একজন জানোয়ার। সে ওইসব লোক গুলোর ভিডিও পর্যন্ত ধারণ করে রাখত যাতে ভবিষ্যতে কোন সমস্যা হলে মোকাবেলা করা যায়।
দালালকে খুন করার পর মেয়েটা সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। এবং এই তূর্ণা এক্সপ্রেস থেকেই শুরু করে তার নতুন এক যাত্রা।
সেইসব কাস্টমারদের ভিডিও পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে আসতো ট্রেনে। এবং খুন করে দেয় কয়েকজন কে। নৃশংসতার সাথে খুন করত এবং তাদের ব্ল্যাকমেইল করেই টাকা নিত অনেক। নিজের পরিচয় গোপন করতেও বেগ পেতে হয়েছে অনেক।
তার আসল লক্ষ্য শাস্তি দেওয়া সেই বিশ্বাসঘাতকদের। এবং সেটা করেই ছাড়বে মেয়েটা।
এখানে আমার কিছু বলার বা করার নেই, এই ট্রেনের সেই টিটিই ওই রাতের একটা চরিত্র।
এবং তাকেও ভয়ানক ভাবে মরতে হবে। ঠোঁট সেলাই, এবং যেই হৃদয়ে কোন মায়া দয়া নেই সেই হৃদয় বের করে ফেলা। এটাই শাস্তি তাদের।
মেয়েটার গল্প শেষ হতে হতেই আমার গন্তব্য এসে গেছে। এখন আমার যেতে হবে।
ট্রেন থেকে নামার আগে সালমার ফোন নাম্বার নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। যদিও সেটা তারই নাম্বার কি-না সন্দেহ আছে!
যদি বেঁচে ফিরতে পারি তবে অবশ্যই যোগাযোগ করবো তার সাথে। আমিও সাহায্য করতে চাই গ্রামের সরল সেই মেয়ে, সালমা হককে।
একটা সিএনজি ভাড়া করে সোজা চলে আসলাম দামিনীদের বাসায়।
আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম তাদের দে আমি সকালের মধ্যেই চলে আসব এবং কাজ শুরু করবো।
ব্যাগটা নিজের কাছে আরো ভালো করে ধরে সোজা চলে গেলাম দামিনীর ঘরে। সেখানে আগে থেকেই তার স্বামী অভিষেক দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে তার মুখে একটা আশার আলো ফুটে উঠলো।
কিন্তু জানিনা সেটা কতক্ষণ থাকবে!
দামিনীর বিছানার দিকে তাকিয়ে আরেকবার দমে গেলাম। কেননা চট্টগ্রাম ছাড়ার আগে যা দেখে গিয়েছিলাম, এখন অবস্থা তার থেকেও ভয়াবহ।
দুই দিনে যেনো আরো শুকিয়ে গেছে।
শরীরের জায়গায় জায়গায় কাটা দাগ।
-“এইসব হলো কি করে?” জিজ্ঞেস করলাম তার স্বামীকে।
-“পুরো রাত ছটফট করেছে। নিজেকে নিজেই আঘাত করেছে আর বারবার আপনাকে অভিশাপ দিয়েছে চিৎকার করে।”
-“বুঝলাম।” জবাব দিলাম আমি। ট্রেনে থাকাকালীন আমার কোন ক্ষতি করতে না পেরে ইনকিরিস দামিনীর উপর অত্যাচার করেছে।
ঘরের মধ্যে পা রাখলাম আমি।
পা রাখার সাথে সাথে যেনো পুরো শরীর জুড়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।
সে ঘরে প্রবেশ করতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।
বুঝতে পারছি সামনে আমার বিশাল বিপদ।
বাহিরে থেকে শুনতে পেলাম অভিষেক দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। তাদের মনেও আমাকে নিয়ে চিন্তা।
কিন্তু এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাকে একটা লড়াই করতে হবে।
হাতের কবজিতে হুজুরের দেওয়া একটা তাবিজ বেঁধে নিলাম। এটার কার্যকারিতা শুধু এক ঘণ্টার জন্য। চিৎকার করে অভিষেককে শান্ত হতে বললাম আর একজন ডাক্তারকে নিয়ে আসতে বলেই সামনে ঘুরে দাঁড়ালাম।
সামনে তাকিয়ে দেখি, দামিনীর বিছানা মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে উঠে গেছে।
আর দামিনী বসে আছে সেটার উপর। সে আমার দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললো,
-“আজ কোথায় পালাবি তুই? আমার হাতে আজ তোর শেষ দিন। কেউ বাঁচাতে পারবে না তোকে। তোর হুজুরও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেও পারেনি আমাকে আটকাতে। বরং তাকেই মরতে হয়েছে।
কথাটা বলেই দামিনী এক লাফে আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পরে।
সরে যাওয়ার সুযোগ আর পেলাম না।
আমার গালে নিজের নখ দিয়ে আচড় দেয় সে।
মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সাথে সাথে নিজের ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করলাম।
সেখান থেকে কিছুটা পানি নিজেরে হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলাম দামিনীকে লক্ষ্য করে।
কিন্তু কোন কাজ হলো না।
বরং ঘরের মধ্যে যেই হালকা লাইট জ্বলছিল সেটাও নিভে গেলো।
অন্ধকারে ডুবে গেলাম আমি। দরজা, জানালা সব বন্ধ।
আগে থেকেই আন্দাজ করা ছিল এইরকম কিছু একটা হবে। তাই একটা টর্চ জ্বালিয়ে নেই।
এক কোণায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দামিনী। দেখলাম তার হাতের এক পাশ পুড়ে গেছে।
ভুল হচ্ছে কিছু একটা।
পবিত্র পানি দামিনীর শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে।
আগেই বোঝা উচিত ছিল আমার।
ইনকিরিসকে সবার আগে বের করে আনতে হবে ওর শরীর থেকে। তারপর যা করার করতে হবে।
ব্যাপারটা হয়তো ইনকিরিসও বুঝতে পেরেছিল।
তাই সেও ভয়ানক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে দেয়। সে জানে আমার দুর্বল জায়গা হলো দামিনী।
তাই সে নতুন শক্তি নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতে শুরু করে।
কোনোমতে আমি পাশ কাটিয়ে বেঁচে যাই।
কিন্তু হাত থেকে টর্চ পরে গেছে আমার। এইবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাকে। শক্ত হতে হবে আমাকে।
তাই চিৎকার করে বললাম,
-“ইনকিরিস! তুই কি ভেবেছিস আমি তোর এই অশুভ খেলাকে মেনে নিব? দামিনী যেমন আমার দুর্বলতা তেমনি সে আমার শক্তিও।”
কথাটা বলেই আরো কিছুটা পানি ঢেলে নিলাম হাতে, আর ছুড়ে দিলাম ওকে লক্ষ্য করে।
চিৎকার করে সরে গেলো ইনকিরিস।
একটু একটু করে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিলাম।
কারণ আমি জানি, ইনকিরিস জানে দামিনীকে ওর চাই জীবিত। ইনকিরিসের অশুভ উদ্দেশ্য পূরণের দামিনীকে প্রয়োজন তার। আর একারণেই দামিনীর কোন ক্ষতি সে হতে দিবে না।
সে নিজেও দামিনীকে আঘাত করেছিলো। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই প্রাণনাশের মতো ছিলোনা।
কিন্তু এইরকম করে জমজমের পানি দিতে থাকলে এক পর্যায়ে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মারাও যেতে পারে সে।
তাই বাধ্য হয়েই দামিনীর দেহ থেকে বেরিয়ে এলো ইনকিরিস।
এইবার তার আসল রূপ আমি দেখলাম।
বিকৃত এক জানোয়ার।
মুখ গলা দিয়ে কালো রক্ত পড়ছিল। মুখ হা করতেই একদলা পোকা বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।
পুরো শরীরের অজস্র ক্ষত।সেগুলোতে কিলবিল করছিলো সাদা, কালো অসংখ্য পোকা।
বমি আসলেও অনেক কষ্টে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।
চোখে মুখে একটা হাসি খেলে গেলো আমার।
ইনকিরিস নিজ গতিতে আমার দিকে তেড়ে আসতে থাকে।
কিন্তু আমাকে স্পর্শ করার সাথে সাথে ছিটকে দূরে সরে যায়।
দূর থেকে সে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করবে, তার আগেই আমি ছুটে চলে গেলাম দামিনীর কাছে।
এইবার আর কিচ্ছু করার নেই ইনকিরিসের।
সবার আগে আমি জমজমের কিছুটা পানি খাইয়ে দিলাম ওকে ।এরপর ব্যাগ থেকে এক টানে বের করে নিয়ে এলাম হুজুরের দেওয়া একটা ছুরি। সেটা দিয়ে দামিনীর হাতের কিছুটা কেটে সেই কাটা অংশ জমজমের পানি দিয়ে সুন্দর করে ধুয়ে দিলাম।
এখনো আমার কাছে অনেকখানি পানি বাকি আছে।
এইবার আমি চলে গেলাম ইনকিরিসের দিকে। সে পালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু তার আগেই আমার উচ্চারিত আয়াতুল কুরসি তাকে আটকে দেয় সেখানেই।
হুজুরের জন্য আমার বুকটা হাহাকার করে উঠলো। পুরো জীবন যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলো, তাদের একজনের হাতেই মরতে হলো হুজুরকে!
আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে ইনকিরিসের দিকে ছিটিয়ে দিলাম জমজমের পানি।
তার শরীর থেকে দলা আকারে বের হতে থাকলো পঁচা মাংস।
ব্যাগ থেকে আমি একটা বোতল বের করলাম। সেটা সামনে ধরলাম ইনকিরিসের।
তাকে আদেশ করলাম ভিতরে ঢোকার।
আরো কিছুটা যন্ত্রনা ওকে দেওয়ার পর বোতলের মধ্যে আটকে নিলাম।
বোতলটা ব্যাগে ঢুকিয়ে চলে এলাম দামিনীর কাছে। শেষবারের মতো ওর মায়াবী সেই চেহারার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে ওর কপালে ভালোবাসার একটা স্পর্শ একে দিয়ে বের হয়ে এলাম ঘর থেকে। জানি এটা ভুল হচ্ছে আমার। কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারলাম না।
বিপদ মুক্ত সবাই এখন।
দামিনীর স্বামী অনেকবার অনুরোধ করলো থাকার জন্য। দামিনীর জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত যেনো আমি থাকি অন্তত। তাদের কে আশ্বস্ত করে অনেক কষ্টে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। কেননা আমি চাইনা, দামিনী আমায় দেখে আবারো পুরোনো কথা মনে করুক।
আজ পুরো চট্টগ্রাম ঘুরবো। আর রাতের বেলার জন্য, নাইট কুইন তূর্ণা এক্সপ্রেস তো আছেই।
ঘুরতে ঘুরতে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসে পড়লাম।
সেখানে খবর দেখাচ্ছে।
হঠাৎ একটা কথা কানে আসতেই চোখ আটকে খবরে।
লোকটা বলছিল,
“এইবার রহস্যজনক ভাবে খুন হলো, নাইট কুইন খ্যাত তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিটিই আমজাদ।”
মুচকি হাসি খেলে গেলো আমার ঠোঁটে।
নিজের অজান্তেই পকেটে হাত চলে গেলো আমার।
আগে থেকেই সেভ করে রেখেছিলাম নাম্বারটা। ডায়াল করলাম সেখানে। কয়েকবার রিং হতেই ওপাশ থেকে শোনা গেলো এক নারী কণ্ঠ। ” হ্যালো। কে বলছেন?”
চেনা কণ্ঠস্বর। পুরো এক রাত জার্নি করেছি একসাথে। চিনতে তো হবেই।
আমি শুধু জবাব দিলাম, “আমি।”

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here