গল্পঃ #অসময়ে_রোদন ( ৬ষ্ঠ পর্ব শেষ)
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার
অরুণকে এমন নৃশংসভাবে কে আঘাত করলো? গলায়,হাতে,পায়ে,বুকে সবখানে ছুড়ির আঘাত মনে হচ্ছে!
আঘাতগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করলো, বিভিন্ন জায়গা ভয়ানকভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। কয়েক জায়গার মাংসপিণ্ডদ্বয় বিধ্বস্ত হয়ে আলাদা হয়ে গেছে।
অরুণের হুশহীন বডিটাকে টেনে নিজের কাঁধ পর্যন্ত নিয়ে ফয়সাল আমাকে বললো,
___ আবিদা প্লিজ ধরো, এখনি ওকে নিয়ে ডক্টরের কাছে নিতে হবে, নইলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। ওর বেঁচে থাকাটা অন্তত আমাদের জন্য ভীষণ জরুরী।
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ওর পায়ের দিকে ধরলাম। কোনো রকম বাইরে নিয়ে রাস্তায় নামালাম। ফয়সাল ওকে নিয়ে রাস্তার মধ্যেই বসলো, আর আমি গাড়ীর জন্য এদিক ওদিক ছুটছিলাম। কিন্তু এই মূহুর্তে রাস্তায় রিকশা, অটো ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছেনা, আর সেগুলোও যাত্রীপূর্ণ।
হঠাৎ করে আমার পা পর্যন্ত এসে একটা দামী গাড়ী থামলো। মনে হচ্ছে এই বাসায়ই এসেছে।
আমি সরে গিয়ে সাইড দিলাম, তখন জানালা খুলে একটা ডাক আসলো,
___আবুওওও….
আমার এবার টনক নড়লো, এই কণ্ঠস্বর! আমি গাড়ীর জানালার দিকে তাকিয়েই বিরাট চমকের সাথে বলে উঠলাম,
___সনিকা?
তৎক্ষনাৎ ভেতর থেকে আম্মুউ বলে আরেকটা আওয়াজ আসলো। সেটা শুনতেই আমি এক দৌঁড়ে জানালা পর্যন্ত গেলাম। স্নেহা? আমার স্নেহা!
আমি গ্লাসের উপরে পাগলের মতো হাত বুলাচ্ছিলাম। সনিকা গাড়ীর দরজা খোলতেই আমি ভেতরে গিয়ে এক টানে স্নেহাকে আমার কোলে তুলে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর সনিকার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললাম,
___ তুমি তুমি? আমার মেয়ে? আচ্ছা সেসব পরে। এখন অরুণকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। ওর জীবন মরণ লড়াই! তুমি ফয়সালকে একটু সাহায্য করো, আমি আর আমার মেয়েকে আর ছাড়ছিনা। প্লিজ সনিকা তুমি তারাতাড়ি ওকে আনো।
সনিকা পুরো ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। আমার কথামতো কোনো প্রশ্ন না করে তারাতাড়ি অরুণকে এনে গাড়ীতে তুললো। গাড়ী ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই সনিকা দেখলো আমি স্নেহার গালে কপাকে চুমু খাচ্ছি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম এই দৃশ্যে সে মুচকি হাসছে। আমি তাকাতেই সে বললো,
___ কি করে এসব হলো? কে মারলো অরুণকে?
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
___আমি কিচ্ছু জানিনা। আমাদের থেকে বাচ্চা দেওয়ার নাম করে অরুণ ও তার স্ত্রী অনেক টাকা নিয়েছে, জানিনা সে কোথায় আর টাকাগুলো কোথায়! বলেছে সিনথিয়ার নামক কারো কাছ থেকে আমাদের বাচ্চাকে এনে দিবে, কিন্তু সে উধাও, সাথে অরুণেরও এই অবস্থা।
এইটুকু বলেই আমি স্তব্ধ হয়ে সনিকার দিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বললাম,
___তুমি সিনথিয়া? বাসে সেদিন তুমি ছিলে?
সনিকা অবাক হয়ে বললো,
___কোনদিন? সেদিন যে অরুণের সাথে দেখা করেছিলাম, বাসে একটা মেয়ে স্নেহার গাল ছুঁয়েছিলো, ওটা তুমি ছিলে?
দুজনেই দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কিন্তু সনিকা কেন অবাক হলো বুঝলাম না। আমি স্নেহার দিকে তাকিয়ে বললাম,
___তুমি আমার বাচ্চাকে কিনে নিয়েছিলে? কেন নিয়েছো?
সনিকা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো ,
___ কোনো এক সময়ের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে!
আমি আবারও অবাক হয়ে বললাম,
___ কৃতজ্ঞতা?
সনিকা হেসে বললো,
___ মনে আছে সেই কলেজ জীবনের কথা? আমার সেইকালের প্রেম! একটা ভয়ানক সময়ে তোমার অবদান! সেদিন তুমি না থাকলে আমি হয়তো গাড়ী চাপা পড়ে নিজ ইচ্ছেতেই মরে যেতাম! তারপর তুমি আমাকে বুঝালে জীবন কি! সত্যিকার প্রিয়জন আসলে কারা হয়। আর আমরা কাদের জন্যই এমন বোকামী করি! আমার মা নিজের সর্বস্ব দিয়ে আমাকে এতো যত্নে মানুষ করেছিলো, সেদিন বাড়ি ফিরে দেখেছিলাম মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। মা’কে কেউ জানিয়েছিল আমি এক ছেলের জন্য রাস্তাঘাটে পর্যন্ত পাগলামো করে বেড়াই। তখন মা আমাকে মুখ ফুটে কোনো বকাঝকা করেনি, কিন্তু আমি বুঝেছিলাম আমার অল্প খারাপ সময়ের কথা শুনে আমার মায়ের এই অবস্থা হয় যদি, তাহলে আমি একেবারে না থাকলে তার কি অবস্থা হবে? আমাকে তো অভিশাপ না দিলেও আমি ইহকাল পরকালের জন্য একেবারে অভিশপ্ত হয়ে যাবো। সেদিন রাতে সারারাত মায়ের পাশে শুয়ে কান্না করেছি, সেটাই বোধহয় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কান্নার শেষ কান্না ছিল।
তোমার সাথে এরপর কথা হয়নি, তোমার লিখে দেওয়া ফোন নাম্বারটাও হারিয়ে ফেলেছিলাম। এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই মায়ের কথামতো আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আর আমি আলহামদুলিল্লাহ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের একজন, আল্লাহ আমাকে কোনোদিকে অসুখী রাখেনি। জীবন সঙ্গী বলো, পরিবার বলো, টাকাপয়সা বলো সবদিকেই আমি চাওয়ার চেয়েও বেশি পেয়েছি।
আমার একটা ছেলে আছে, অমিত! তার ৮ বছর চলে। কিন্তু তোমার মেয়েকে কিনে নিজের নিয়ে নিয়েছি, কারণ কখনো তোমার কাছে ফিরিয়ে দিবো বলেই।
নয়তো ওরা এমন কারো কাছে বিক্রি করতো যার থেকে তুমি কোনোদিনও তোমার সন্তানকে ফিরে পেতেনা।
তুমি যেমন আমাকে আমার মা’র কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলে? আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিলে ঠিক সেটার মতোই তোমার ঋণ পরিশোধ করতে তোমার মেয়েকে নিজের করে নিয়েছি। তবে সে খুব কান্না করে ওর দাদুর জন্য, ওর বাবার জন্য। আমি ওদের সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসতাম, কিন্তু সেদিন অরুণ রাগান্বিত হয়ে বললো, এখন থেকে স্নেহা কাঁদলে শুধু ওর সাথে দেখা করাতে, ওর মা’র সাথে যেন দেখা না করাই। অরুণ আমাকে কোনো রকম সন্দেহ করবে বলে আমি কোনোভাবেই জানতে পারিনি তুমি কোথায় থাকো! তবে আমার বিশ্বাস ছিল কোনো একদিন নিশ্চয়ই তোমার সাথে দেখা হবে, সেদিন তোমার মেয়েকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আমার জন্য শ্রেষ্ঠ পাওয়া!
আমি মনোযোগ দিয়ে সনিকার কথা শুনছিলাম। স্নেহা বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। জানিনা সে সনিকার সব কথা বুঝতে পারছে কিনা, তবে এটা বুঝতে পারছি সে আমাকে পেয়ে ভীষণ খুশি! আমিও আজ ভীষণ খুশি। সনিকা কথা থামানোর সাথে সাথে আমি সনিকার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
___ দেখো আমি সেদিন তোমাকে বুঝিয়েছিলাম, অথচ আমি নিজেই পরবর্তীতে মানুষ চিনিনি ! সে যাই হোক, আমাকে এটা বলো, অরুণের সাথে প্রেম,বিয়ে আর এই বাচ্চা ব্যাপারে তোমায় কে বললো? আমাদের মধ্যে তো সেদিন শুধু নাম জানাজানি আর তোমাকে বুঝানোর মতো এক ঘন্টা কথা হয়েছিল। তুমি বলেছিলে আমার নামকে ছোট করে আমাকে আবু বলে ডাকবে। নিজের নাম বলেছিলে সনিকা। তাহলে এই এই সিনথিয়া?
সনিকা মুখ মলিন মুখেও আলতো হেসে বললো,
___ আমি সিনথিয়া জামান সনিকা! কর্মসংস্থানে আমি সিনথিয়া ম্যাম, আর প্রিয়দের কাছে শুধু সনিকা! এবার মূল কথা বলি, তোমার যেই হাসপাতালে সিজার হয়েছে ওটা আমাদের হাসপাতাল। সেখানে যেই ডক্টর তোমার সিজার করেছিলো, তাকে মৃত বাচ্চা নিয়ে কয়েকটা মিথ্যে বলতে বাধ্য করেছে অরুণ। অবশ্য বহু টাকার প্রলোভনও দেখিয়েছে। আর সেসব বাচ্চাগুলো ওরা বিক্রি করেছে। কয়েকদিনে আমাদের হাসপাতাল নিয়ে অভিযোগের মাত্রা এতো তীব্র হলো যে সেখানে আর কোনো পেসেন্ট সিজার করতে আসেনা। আমাদের হাসপাতালে ও নিয়ে তদন্ত করতে গিয়েই পেলাম প্রথম যেই বাচ্চাকে মৃত বলে ঘোষণা করেছিলো, সেই পেসেন্টের নাম আবিদা! এটা দেখে তখনই অদ্ভুতভাবে তোমার চেহেরাটাই ভেসে উঠেছিলো। তবে শিউর ছিলাম মা। কিন্তু আমাদের সেই ডক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানলাম ওটা আসলে যে চুরি করেছে তার নিজেরই সন্তান ছিল। আগ্রহটা তখনি বহুগুণ বেড়েছিল, তারপর তাদের নামে পুলিশি মামলা স্থগিত রেখে আমি খোঁজ লাগালাম। কারণ তাদেরকে এমনিতেই ধরতে পারবোনা, আমাদের সেই ডক্টরও ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে নারাজ, এতে নাকি তার পরিবারের ক্ষতি হবে। এছাড়া ওদেরকে নিয়ে মামলা দেওয়ার মতো কোনো তথ্যও নেই, ভীষন চালাক এরা, কোনো কিছুর প্রমাণ রাখেনা।
আশপাশ থেকে খোঁজ নিয়ে আমি তাদের একজন ক্রেতা হিসেবে সেখানে পৌঁছালাম, আবিদা নামক মেয়েটার বাচ্চার সন্ধান করাটাই ছিল আমার মূখ্য কাজ। কিন্তু পৌঁছে দেখি ততক্ষণে বাচ্চা বিক্রি করে দিয়েছে, আমি বললাম আমি কারো থেকে শুনে এখানে এসেছি, বাচ্চাটা সুন্দর ছিল নাকি। আমার সেই বাচ্চাটাই লাগবে, প্রয়োজনে ওই দম্পত্তি থেকে বেশি টাকা দিবো। এই লোভে ওরা রাজী হয় সেই বাচ্চা দিতে। আমি ওর নাম দেই স্নেহা, আর ওকে দেখেই বুঝে গেলাম আমার সন্দেহই ঠিক। এটা আমার চেনা সেই আবিদারই সন্তান। প্রথমত আবিদার নাম, দ্বিতীয়ত তোমার মুখের গঠন! তারপর থেকেই স্নেহা আমার। কিন্তু ওদের পেছনে সর্বক্ষণ আমার লোকেরা লেগে আছে, ওরা যত বাচ্চা বিক্রি করতে চেয়েছে সব আমি অন্যদের মাধ্যমে কিনিয়ে তাদের মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আর অরুণের বউ যাকে বিশ্বাস করে টাকা রাখার ব্যাংক বানিয়েছে, অরুণকে ছেড়ে গোপনে সম্পর্ক রেখে চলেছে সে আমার স্বামীর খুব কাছের একজন, আমাদের সাজ্জাদ ভাই । আমাদের টাকা ঘুরেফিরে আমার কাছেই ফিরে আসে! এতদিন ধরে আমি অপেক্ষায় ছিলাম স্নেহাকে কবে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিবো, এদিকে স্নেহা ওর বাবা আর দাদুকে দুইদিন না দেখলেই অসুস্থ হয়ে যায়। আর অপেক্ষায় ছিলাম অরুণ কবে নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মারার দৃশ্যটা স্বচক্ষে দেখবে! আজকে এসেছিলাম হুট করে ওর বউয়ের হাতে এতো টাকার ব্যাপারটা নিয়ে কিছু বুঝতে, যেটা ইতোমধ্যে তোমরা দিয়েছো। কিন্তু এসে অরুণকে এভাবে দেখবো ভাবিনি।
এখন ওদেরকে ধরার পালা, ওর সাথে আর কে কে জড়িত এসব বের করতে হবে। আর এসবের প্রধান সাক্ষ্য দিবে অরুণ নিজে!
এসব বলতে বলতেই আমরা পৌঁছে গেলাম। আমরা হাসপাতালে গেইটে গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়েছি। সনিকা হাসপাতালের কারো নাম্বারে ফোন লাগানোর সাথে সাথে কয়েকজন এসে অরুণকে ভেতরে নিয়ে গেলো। ইমারজেন্সি চিকিৎসায় সাথে সাথে ভর্তি করানো হলো। ডক্টরের কথায় যা মনে হলো, ওর কন্ডিশন খুব খারাপ!
তারা আশংকা দিলো অরুণ বেঁচে থাকলেও তার কণ্ঠেনালী হারাবে, কারণ গলায় মারাত্মক আঘাত পড়েছে, তবে সেটা মৃত্যুমুখী হয়নি। এরপর হাতে পায়ের মারাত্মক আঘাতের জন্য আবার পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
অরুণের মাও এসেছে৷ স্নেহা তার দাদুকেও আজ কাছে পেয়েছে। তবে সে কি বুঝেছে জানিনা, শুধু বারবার আঙ্কেল বলে বলে কাঁদছিলো। ওর দাদুর কান্না দেখে ওর কান্নারও যেন কোনো অন্ত নেই।
‘
অরুণ সুস্থ হতে অনেকদিন লাগলো। জ্ঞানই ফিরেছে তিনদিনের মাথায়। কিন্তু সে আর কথা বলতে পারে না। হুইলচেয়ারে বসে একটু নড়াচড়া করে। বা হাতে অল্প বশ ছাড়া আর জগতে সবকিছু অসম্ভব। দুচোখে চারপাশে তাকিয়ে থেকে শুধুই কাঁদে! স্নেহা ওকে আঙ্কেল বলে যখন জড়িয়ে ধরে, তখন তার কান্নার বেগ আরো বেড়ে উঠে।
এদিকে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা আইনে তোলা হলো। সেখানে সাক্ষী হিসেবে আছে বাকহীন পঙ্গু অরুণ। প্রথমে সবাই হাসাহাসি করছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে তার হাতে থাকা প্রমাণাদি আর তাকে তার বউ নিজে টাকার জন্য মারার চেষ্টা করছিলো, সেই বিষয়টা সামনে আসতেই সবাই চমকে গেলো। অরুণ তার বাম হাতে লিখে ভীষণ কষ্টে তার জানা সব তথ্য আদালতে পেশ করলো। তাতে সকল অপরাধীর সাথে সে নিজেকেও অপরাধীর অন্যতম একজন বলে স্বীকার করে। সবকিছু তদন্ত করে দেখা গেলো অরুণের সব কথা সঠিক। অপরাধী হিসেবে ঘোষিত হলো সে নিজে আর তাদের সহায়তা করা পুরো টিম।
বাচ্চা ফেরতের সাথে সাথে জরিমানার সহিত টাকাগুলোও যার যার মতো করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য অরুণ এবং আর বউয়ের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বিক্রি করতে হয়েছে। সত্য এবং শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে অরুণের শাস্তির পরিমাণ কম হলো, সাথের ছেলেপুলেদেরও কম হলো। কিন্তু অরুণের বউয়ের বিরুদ্ধে বেড়িয়ে এলো আরো নতুন ইস্যু। অরুণকে নির্মমভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা আর ভিন্ন ভিন্ন অপকর্মের জন্য দীর্ঘ তদন্তসহ কঠোর শাস্তি মঞ্জুর হলো।
তবে অশ্রুসিক্ততা অরুণকে দিচ্ছে তার থেকেও ভয়াবহ শাস্তি। সবাই তাকে করুণা করে ক্ষমা দিয়েছে ঠিকি, কিন্তু ক্ষমা করতে পারেনি সে নিজেই নিজেকে। নিজের ভুলের জন্য নিজের সন্তানের কাছেও সে বাবা না হয়ে, হয়েছে আঙ্কেল!
সময় হারিয়ে, সবকিছুতে নিঃস্ব হয়ে সে প্রতি বাক্যের শুরুতে একটা শব্দ নিয়েই আক্ষেপ করে, যদি! যদি!
আমিও বলি, সত্যিই যদি সে সময় থাকতে বুঝতো!
তাহলে অসময়ের এই রোদন তাকে ভাসাতে পারতোনা, আর সেও এতটা ডুবে যেতোনা! এবার যে তাকে ডুবে ডুবেই বাকি জীবনটা
বেঁচে থাকতে হবে। এটাই তার ভাগ্যে লেখা ছিলো। সে সময়ের মূল্য বুঝলোনা যে! এই রোদন তার প্রাপ্য, তার প্রাপ্য :- (
(সমাপ্ত)