অস্তিত্বের খোঁজে,পর্বঃ ২৩

0
2245

অস্তিত্বের খোঁজে,পর্বঃ ২৩
নাফিসা মুনতাহা পরী



– গাড়ি থেমে যাওয়াতে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই।


– পরী,,,,, রিলাক্স আমি দেখছি বলেই শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে গেল। তখন রাত ১২ টা পার হয়ে গেছে।


– শুভ্র আশেপাশে সব খুঁজে দেখল কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পেলনা। শুভ্র নিজে দেখেছে একটা লোক গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছে কিন্তু সে কোথাও নাই।



– আমিও গাড়ি থেকে নেমে শুভ্রর কাছে যেতেই শুভ্র একটা ধমক দিয়ে বলল কে তোমাকে গাড়ী থেকে নামতে বলেছে?


– আমি কিছু না বলে ওর হাত টা ধরে দাড়িয়ে রইলাম।


– শুভ্র ভূত টুত কিছু না তো?


– Just shut up……. কি পাগলের মত প্রলাপ বকছো। শুভ্রও কিছুটা বুঝতে পারছে সামথিং রং। কিন্তু পরীকে কিছু বললে ও আরও ভয় পেয়ে যাবে তাই নিজেকে শান্ত রেখে পরীকে নিয়ে আবার গাড়ীতে উঠল।



– গাড়ী স্টার্ট দিল শুভ্র…… কিন্তু খুবই স্লো গতিতে চলছে। প্রচন্ড ভারী লাগছে আর যতই স্পীড দিচ্ছে তবুও একই ভাবেই চলছে।



– আমার আর বুঝতে বাঁকি রইলনা….. আমারা কার মধ্য পরে গেছি। রাস্তাটা পুরোই ফাঁকা,,,,,,,,২ ধারে চাপা গাছ। কি করব মাথায় কিছু আসছেনা। হঠাৎ মথায় বুদ্ধি আসল এরা কোরানের তেলায়াত শুনলে চলে যায় তাই ফোনটা বের করে ” সুরা বাকারা ” চালু করে দিলাম।


– কিন্তু গাড়ি একেবারে থেমে গেল। মনে হয় পিছন থেকে কেউ ধরে রেখেছে।

– শুভ্র আবার গাড়ি থেকে নামতে চাইলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম না না তুমি যেও না। যা হয় হোক। পুরা রাত এখানে থাকতে হলে থাকব তবুও নেমনা তুমি।

– পরী কিছু হয়নি। মনে হয় ইন্জিনে কোন প্রবলেম হইছে,,,,,, তুমি থাক জাষ্ট আমি দেখে আসব।

– আমি এবার কেঁদে ফেললাম। না না তুমি নামবা না একদম,,,,, আমরা কোন কিছুর মধ্য পরে গেছি। তুমি যেওনা। কারন আমি গ্রামে মানুষ হয়েছি এগুলো সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানি। এরা কতটা ভয়ঙ্কর।


– শুভ্রও বুঝতে পারছে এধরনের কিছু সমস্যা। শুভ্র একটু জোরেই বলে উঠল,,,,,,,,, আপনারা কে আমরা জানিনা। প্লিজ আমাদের যেতে দিন। অনেক রাত হয়ে গেছে বাসায় ফিরতে হবে।


– কিন্তু কোন রেসপন্স নাই।


– প্লিজ আল্লাহ্ সাহায্য কর আমাদের বলেই কাঁদতে লাগল পরী।


– প্রায় ১৫ মিনিট ধরে “সুরা বাকারা ” চলে এবং শেষে একটা আযান হয় এতেই মনে হল বিকট শব্দে কেউ কাউকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যাচ্ছে আর গাড়ি একাকি চলতে শুরু করল।

– শুভ্রও আর দেরি না করে ড্রাইভ করতে শুরু করল।

– আমরা বাসায় চলে আসলাম। বাসায় ঢুকতেই পলা বলে উঠল শুভ্র এত্ত দেরী করে কেউ? বউদি কতবার কল দিচ্ছিল তোমাকে না পেয়ে। আমি মিথ্যা কথা বলেছি,,,, যে তোমরা ঘুমিয়েছ।

– স্যরি আন্টি কাজ ছিল একটু,,,,,, আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। (শুভ্র)

– আমি রুমে এসে অযু করে একবালতি পানিতে ২ হাত ডুবিয়ে রুকাইয়া পানি প্রস্তুত করে শুভ্রকে বললাম এই পানি দিয়ে গোসল কর।

– এটা কি!(শুভ্র)

– কিছু না তুমি এটা দিয়েই গোসল করবে বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। নিজের জন্যও পানি প্রস্তুত করে গোসল দিলাম।


– যা ভয় পাইছি আমি…. শুভ্র না থাকলে আমি নিশ্চত হার্টফেল করতাম। শুভ্রর রুমে এসে দেখি ও টাওয়াল পড়ে চুল মুছছে।


– শুভ্রর ফর্সা পিঠ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে…… ওটা দেখে আমার কানে মনে হয় শো শো আওয়াজ করছে। ফিলিংস এসে মনে বার বার ধাক্কা দিচ্ছে। আমি সোজা ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।


– শুভ্র একটা মুচকি হেঁসে বলল খুব ভয় পেয়েছিলা পরী?

– হুম খুব,,,,,,,,,,,,, বলেই ওর ভিজা পিঠে কিস♥ করলাম।

– পরী কি করছো,,,,, অনেক রাত হয়ে গেছে যাও সুয়ে পর।(শুভ্র)

– না,,,,,,,, যাবনা।

-শুভ্র এবার ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন পর আবার বলল………

– আচ্ছা পরী! তোমার পিরিয়ড কি রেগুলার হচ্ছে না অফ? শুভ্র পরীর প্রেগন্সসি কনফার্ম করতে কথাটা জিঙ্গাসা করছিল।

– এবার শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে খাটে এসে বসে পড়লাম। খুব লজ্জা পাইছি।

– পরী এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। আমার টেনশন হচ্ছে,,,, বল আমাকে?

– এতে টেনশনের কি হল বুঝলাম না। আর আমি যদি কিছু বলি তাহলে নিশ্চিত ডাক্তারের কাছে আবার নিয়ে যাবে। কি লজ্জার বিষয়। প্রবলেম হচ্ছে বাট বলা যাবেনা।

” নাতো শুভ্র,,,,,,,,,,,, সব ঠিক আছে মাথা নিচু করে বললাম কথাটি।


– শিওর বলছো তো?

– হুম সত্যি বলছি,,,,,,,,,( বিপদ আসলে মানুষের মনে হয় হিতাহিত বোধ থাকেনা যেটা পরীর ক্ষেত্রে ঘটছে)


– শুভ্র বলতে চেয়েছিল সেই দিনের ব্যাপার গুলো কিন্তু সব যখন ঠিক আছে তাহলে আর বলার দরকার নাই। কারন বললে কি ভুল বুঝতে কি বুঝবে বলা যায় না। যে পরীর টার ছেড়া,,,,, রিক্স না নেওয়ায় বেটার।


– শুভ্র কি ভাবছো?

– কিছু না,,,,, খুদা লাগলে কিছু খেয়ে নাও। না হয় ঘুমিয়ে পর পরী।

– ধুর,,,,, বর আমার কিছুই বোঝে না।

– শুভ্র চেঞ্জ করে এসে খাটে সুয়ে পড়ল আর আমাকেও ঘুমাতে বলল।

– শুভ্র আমার ঘুম আসছেনা।

– কিহ্ রাত ২ টা বেজে গেছে এখনও তোমার ঘুম আসছেনা!

– না আসলে আমি কি করব।

– ওকে আসো তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই এমনি ঘুম চলে আসবে।



– শুভ্রর কথা শুনে মাথায় একটা বেশ বুদ্ধ এল,,,,,,, এবার শুভ্র তুমি কই যাবা বলেই আমার কামিজটা খুলে শুভ্রর কাছে গিয়ে পাশ ফিরে সুয়ে বললাম মাথায় হাত বুলাতে হবেনা আমার পিঠে সুড়সুড়ি দিয়ে দাও এমনি আমার ঘুম আসবে। ওকে আমি ফ্রী নিব না। আমিও তোমার পিঠে দিব। তুমি ১০০ বার আমি ১০০ বার। তবে আমারটা আগে দিতে হবে। নাও নাও শুরু কর।



– শুভ্র তো হতবাক পরীর কথা সুনে। ছোট বাচ্চারা যেগুলো ঘুমাতে গেলে কাজ করে,,,,, একই কাজ পরী শুভ্রর সাথে করছে। কি পাজি মেয়েরে বাবা….. মুক্ষম চ্যাল দিতে যানে।


– পরী,,,,,,,,,, তুমি কি আমার ধর্য্যর পরীক্ষা নিচ্ছ এই রাতে!


– পরীক্ষা নিব কেন,,,,, এটা খুব কাজ করে আমার ঘুম আসতে তাই করতে বলছি। কেমন বর তুমি,,,,, একটুকু কাজ করতে পারছো না? নাও নাও জলদি শুরু করে দাও বলে শুভ্রর কাছে আরও ঘেষে গেলাম।


– শুভ্র চোখমুখ শক্ত করে পরীর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। আর পরীর গায়ে লোম সাথে সাথে শিউরে উঠল। এই মেয়ে আমাকে পাগল করে ছাড়বে!


– প্রায় ১০০ টা দিয়ে ফেলল তাও শুভ্রর কোন রেসপন্স নাই। লাষ্ট প্লান ওর উপর প্রয়োগ করলাম। ওর দিকে মুখ ফিরে বললাম ওকে এবার আমার পালা আমি তোমাকে দিব এখন।


– আমার লাগবে না বলেই শুভ্র সুয়ে পড়ল। আর হ্যাঁ জামাটা গায়ে দাও।


– মেজাজ আমার ৩৬০ ডিগ্রীতে উঠে গেল। কিহ্ আমাকে ইগ্নোর করা বলেই শুভ্রকে একা ধারছে কিস♥♥♥♥করতে লাগলাম।


– এবার শুভ্র রেগে গিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে বলল……….. এই রাতে কি শুরু করছো হুম!
“ঘুমন্ত সিংহ কে জাগাইও না শেষে লোড নিতে পারবানা কিন্তু। তাই ঘুমিয়ে পড়।

– শুভ্রের কথা শুনে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম।
শুভ্রর পিঠ খামচেঁ ধরলাম।

– এবার শুভ্র একঝটকানে পরীকে নিচে ফেলে বলল খুব সখ তোর তাইনা আমাকে চেতানো,,,, আজ তোর মজা বুজাবো বলেই শুভ্র পরীর হাত ২ টা ধরে ওর সুধা পান করতে লাগল। মধুচন্দ্রিমা।




– পরদিন সকাল ১১ টার দিকে সবাই বাসায় ফিরল। শুভ্র ততক্ষনে অফিসে চলে গেছে।


– নিতাই পরীর রুমে এসে দেখল ও সুয়ে আছে।

– পরী বলে কয়েকবার ডাকতেই আমি চোখ মেলে দেখি দাদু দাড়িয়ে আছে।

– পরী তোমার শরীর কি খুব খারাপ! এই অবেলায় সুয়ে আছো?



– কি আর বলব,,,,, নিজের ইচ্ছায় শুভ্রকে চেতাইতে গিয়েছিলাম যার ফলাফল পুরু শরীর ব্যাথায় ডাক ধরে আছে। আর গলায় অসংখ্য দাগ। এগুলো নিয়ে ওদের সামনে ক্যামনে যাব।


– একটু জ্বর এসেছে দাদু। কেমন আছেন আপনি? আর কখন আসলেন!

– ভাল,,,,,,,, একটু আগে আসছি। তোমাকে দেখতে না পেয়ে তোমার রুমে আসলাম।
ওকে রেষ্ট নাও,,,,,, মেডিসিন নিছ?

– না দাদু,,,,,খাবার খেয়ে নিব নি।


– আচ্ছা,,,,, সমস্যা হলে আমাকে বল কেমন,,,,, কথাটি বলেই চলে গেলেন তিনি।


– আমি সুয়ে পড়লাম। কেবল চোখ ধরেছে এমন সময় অর্পিতা চিক্কুর মেরে পরী দিদি বলেই এক হাঁক ছাড়ল।


– আমি ধরপড়িয়ে উঠে বসে পড়লাম,,,,,, চেয়ে দেখি অর্পিতা।

– অর্পিতা,,,,,তুমি! এত্ত জোড়ে কেউ চিক্কুর মারে?

– স্যরি পরী দিদি। তোমার নামে পিঠা আনছি খাবা?


– আমি অর্পিতার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা বড়সর বাটিতে অনেক গুলো পিঠা। আমার পিঠা খুব পছন্দ তার চট করে ওর হাত থেকে বাটিটা নিয়ে বললাম কই পাইলা পিঠা?

– অর্পিতা আমার পাশে বসে বলল বৌদির মা তোমার জন্য পাঠিয়েছে,,,,,, তুমি আগে চলে আসছো তো তাই।


– অহ্ বলেই খেতে লাগলাম। দারুন ছিল পিঠা গুলো,,,,হরেক রকমের। অনেকগুলোর তো নামই জানিনা। পিঠা খেতে খেতে ওকে বললাম তুমি কেমন আছো অর্পিতা?

– ভাল আছি দিদি। গায়ে ওড়না জড়িয়ে আছ কেন?

– ঠান্ডা লাগছে খুব,,,,,,মনে হয় জ্বর আসবে তাই।

– কি হয়েছে তোমার পরী?(অনিতা)

– কেমন আছেন আন্টি?

– হুম ভাল,,,,, গায়ে জ্বর আসলো কিভাবে বলেই আমার কপালে হাত দিল মা।

– হুম জ্বর আসছে তো বলেই পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল ওর ঘাড়ে রক্ত মরে গিয়ে কালশিটে দাগ পরে গেছে। অনিতা খুব ভাল করে দেখে যা বুঝার বুঝে গেল। মনে মনে শুভ্রকে হাজারটা গালি দিল। বিস্বাস করে ওর সাথে মেয়েটাকে পাঠাইছি আর জানোয়ার টা করছে কি বলেই রাগী একটা ভাব নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।


– মার ওভাবে তাকানো দেখে আমি চুপসে গেছি ভয়ে। কিছু আন্দাজ করেনি তো! ওড়নাটা ভাল করে জড়িয়ে নিলাম।




– অনিতা কিচেন রুমে এসে দুধ গরম করতে লাগল। এমন সময় পলা আসতেই অনিতা খেঁকিয়ে উঠে বলল তোকে আমি কিসের জন্য এখানে পাঠিয়েছিলাম?

– কি হইছে বৌদি?(পলা)

– অনিতা আর কিছু না বলে গ্লাসে দুধ ঢেলে নিয়ে ওর রুমে এসে ২ টা ব্যাথার মেডিসিন দুধের সাথে মিশিয়ে একটু চিনি মিশ করে পরীর রুমে আসল।

– অর্পিতা ও পরী ২ জনেই গল্প করছিল আর হাসছিল।


-পরী দুধটা খেয়ে নাও তো?(অনিতা)

– এই সময় দুধ! আগে পিঠা খাই?

– না গ্লাসের সব দুধ খতম কর তার পর পিঠা। আর পিঠাতো কেউ খেয়ে ফেলছেনা,,,,, ওগুলো তোমার জন্যই।

– কি আর করা দুধ টুকু এক নিঃস্বাসে শেষ করে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম শেষ,,,,,,

– গুড গার্ল,,,, বলেই উনি গ্লাস নিয়ে চলে গেলেন।

– দুধ খেয়ে পেট ভরে গেছে কি আর পিঠা খাব। প্রচুর ঘুম চলে আসছে। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।

– অর্পিতা চেয়ে দেখে পরী ঘুমাই পড়ছে তাই কিছু না বলে পিঠার বাটি নিয়ে চলে গেল।




– শুভ্রের হাতে একটা খাম। ওর সিলেটে পোষ্টিং হয়েছে। যা শুভ্রের জন্য মোটেও সুখকর নয়। হঠাৎ বদলি এটাই মাথায় আসছে না। নিশ্চয় টাকা খাওয়ার ধান্দা উপর মহলের।



– সন্ধ্যার পর শুভ্র বাসায় এসে সোজা ওর মায়ের রুমে গেল। অনিতা কিছু হাতের কাজ করছিল।


– মা কেমন আছো?

– অনিতা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলল কিছু বলবি?

– মা আমার উপর চটে কেন আছে? কথাটি কি বলব না বলবনা ভেবে শুভ্র বলেই ফেলল মা আমার সিলেটে
পোষ্টিং হইছে…… কাল পরশুর মধ্য যেতে হবে।


– কবে হল,,,,, কই কিছু বলিসনি তো?

– আজই লেটার পাইছি মা!

– অহ্ আর কিছু বলবি?

– আমি চলে যাচ্ছি মার কোন রিয়াক্ট ই না দেখছি। মা তুমি কি আমার উপর কোন বিষয়ে রেগে আছো?

– নাহ্ তো! তুই কি এমন কোন কাজ করেছিস যে তোর উপর রেগে যাব?

– মা,,,,, আসলে একটা কথা বলতাম…… আমার সাথে যদি পরীকে নিয়ে যেতাম তাহলে আমার একটু সুবিধা হত। খাওয়া দাওয়ার সমস্যা আরকি। ওকে কি আমার সাথে নিয়ে যাব!



– অনিতা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,,,, বাছা….. তোমার কি মতলব সেটা বুঝছো আমি বুঝিনা! তোমার কার্যসিদ্ধি কখনও করতে দিচ্ছিনা।
না ওকে নিয়ে গিয়ে কোন কাজ নাই। আর তাছাড়া ছোট মেয়ে ও কি রান্না করতে পারে? ওর যেয়ে কোন কাজ নাই। নিজের কাজ নিজে একাই করতে পারিসনা! অনিতা বেশ জোড়েই কথাগুলো বলল। আজ অনিতা শুভ্রের উপর বেশ চটে গেছে।


– শুভ্র আর একটা কথাও না বলে রুম থেকে বের হয়ে আসে।



– অর্পিতা মার রুম থেকে আসছিল। ওকে ডাক দিলাম। ও আমার কাছে আসলেই ওকে বললাম…..
অর্পিতা! আন্টি শুভ্রের উপর চিল্লাচাটি করল কেন?


– অহ্ তুমি তো জান না পরী দিদি! কাল পরশুর মধ্য দাদা সিলেট চলে যাচ্ছে। দাদার পোষ্টিং হইছে সিলেটে। আর কি যেন বলছিল। জানিনা মা কেন চিল্লাচাটি করল!



– কিহ্,,,,,, আমার মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগল। শুভ্র সিলেট যাবে কেন? আর এটার জন্য মা ওকে ধমক দিয়ে কেন কথা বলল। আমি এক মুহুত্ব দেরি না করে রুমে চলে আসলাম। ঠিক থাকতে পারছিনা। বরের কাছে যে যাব! তার জন্যও সুযোগ খুঁজতে হয়। যা হয় হোক বলেই রুম থেকে বের হয়ে শুভ্রের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে দেখি ও শার্ট খুলছে। আমি ঐ অবস্থায় ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম তুমি কই যাচ্ছো?


– পরী ছাড় তোমার গায়ে ঘাম লেগে যাবে তো!

– লাগুক,,,,, আগে বল কই যাচ্ছো,,,,, অর্পিতা বলল তুমি নাকি সিলেট চলে যাচ্ছো?

– শুভ্র দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বলল হুম পরী। করার কিচ্ছু নাই।

– আমাকেও সাথে নিয়ে চলনা,,,,,,, তাছাড়া তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হবে।

– শুভ্র পরীকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল সেটাই বলতে মার কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু মা,,,তো রাজিই হল না।

– আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।

– শুভ্র এবার পরীকে একটা ট্রী টেবিলের উপর বসিয়ে নিজে ফ্লোরে বসে পরী কোলে মুখ লুকিয়ে বলল,,,,,, আমার ও যে যেতে মন চায় না পরী,,,, তোমাকে ছেড়ে।

– আমিও ফ্লোরে বসে পড়লাম ওর পাশে। কোন উপায় নেই শুভ্র?

– দেখি ওখানে আগে শিফর্ট হই। তারপর কিছু করা যায় কিনা।

– আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম।

– শুভ্র বুঝতেই পারছে পরীর নোনা জল ওর পিঠ বেয়ে পড়ে যাচ্ছে। শুভ্র একটু কঠিন হয়ে বলল,,,,, পরী এত্ত কান্না করে কেউ। যদি আমি মারা যাই তখন কি করবা হুম….!

– প্লিজ এমন কথা বল না। আমি মরে যাব তাহলে।

– ওকে কান্না থামাও,,,,,,, তোমার শরীর কি ব্যাথা করছে এখনও?

– না আমি ঠিক আছি। ( ছেলে ব্যাথা দেয় আর মা মেডিসিন দিয়ে ব্যাথা সারায়,,,,, চমৎকার শাশুড়ি)

– রুমে যাও পরী। আমি ফ্রেস হয়ে একটু ঘুমাব। শরীরটা ভারী হয়ে আছে। পুরো দিন ঘুমাইতে পারিনি,,,,, কাল আবার রওনা দিতে হবে।

– আমি ওর কথা সুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে দরজার কাছে আসতেই শুভ্র বলে উঠল ,,,,, দরজাটা খুলে রেখ পরী,,,,, আমি কিন্তু তোমার রুমে যাব।

– আমি খুব খুব খুব খুশি হয়ে বললাম শুভ্র রাতে আমি আসি তোমার রুমে?

– নাহ্ রিক্স নেওয়ার প্রয়োজন নাই তোমার,,,,,, আমার পরিবারকে আমি চিনি। তারা কখন ঘুমাই কি করে সব জানি। তাই কাজটা আমার জন্যই সহজ। দরজাটা জাষ্ট খুলে রেখ।


– ওকে বলে চোখের জল মুছে,,,, দরজা খুলে চলে আসলাম আমার রুমে।



– শুভ্রও ফ্রেস হয়ে সুয়ে পড়ল এবং ঘুমিয়ে পড়ল। বেচারা না পাড়ছে রাতে ঘুমাতে না পাড়ছে দিনে। তাই সুয়ে পড়তেই চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসল।



– রাত ১০ টার দিকে অনিতা এসে শুভ্রকে ডাক দিল।

– মা কিছু বলবে?

– খাবি,,,,, নিচে চল।

– মা খুব ঘুম পাচ্ছে পরে খাব। তোমরা খেয়ে নাও বলেই শুভ্র আবার ঘুমিয়ে পড়তেই অনিতা শুভ্রকে টেনে তুলল।
“সারা রাত কি চুরি করতে বেরিয়েছিস না নাইট গার্ডের কাজ করছিস যে এত্ত ঘুম! বেশ খোঁচা দিয়েই কথাটা অনিতা শুভ্রকে বলল।

– মা,,,, কিসব আজে বাজে বকছো?

– তোর দাদু, বাবা অপেক্ষা করে আছে জলদি ফ্রেস হয়ে নিচে আয় বলেই অনিতা চলে গেল।

– কি আর করা। শুভ্র উঠে জলদি ফ্রেস হয়ে ট্রী শার্ট গায়ে দিয়েই নিচে গেল।
সবাই ওর অপেক্ষায় করছে। শুভ্র গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। অনিতা শুভ্রকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।

– শুভ্র তোর পোষ্টিং নাকি সিলেটে হইছে?(নিতাই)

– হ্যাঁ দাদু।

– যাচ্ছিস কবে?(অনিল)

– কাল বিকেল ৩ টার দিকে রওনা দিব বাবা।

– শুভ্র খাচ্ছে আর সবার সাথে কথা বলছে আর আমার বুক ফেঁটে যাচ্ছে মনে হয়। চোখে পানি টলমল করছে। গলা ভারি হয়ে আসছে গলা দিয়ে আর খাবার নামছেনা।

– শুভ্রই আগে খারার শেষ করে বলল অর্পিতা খাবার কমপ্লিট করে আমার রুমে আসিস তো,,, বলেই শুভ্র চলে গেল।

– আস্তে আস্তে সবাই চলে গেল শুধু আমি বসে রইলাম। পলা আন্টি এসে বলল পরী তুমি কেন বসে আছো?

– আমি কিছু না বলে চলে আসতেই পলা আন্টি বলে উঠল শুভ্র চলে যাচ্ছে দেখে মন খারাপ?

– আমি ওনার দিকে তাকিয়ে নিশব্দে মাথা নাড়িয়ে ফুপাতে লাগলাম।

– তোমার এই পিরিতী যদি কর্তা মার কানে একবার যায় তো তোমায় আস্ত রাখবেনা,,,,, রুমে যাও(পলা)

– আমি রুমে এসে বসে কেঁদেই চলছি। আমি মেনেই নিতে পারছিনা ও চলে যাচ্ছে।



– অর্পিতা শুভ্রর রুমে বসে আছে আর শুভ্র এক এক করে সপিং ব্যাগ ওর সামনে রাখল।

– দাদা এগুলো কি?

– দেখ,,,,,,পছন্দ হয় কিনা?

– অর্পিতা সব প্যাকেট খুলে দেখল,,,,,,,, ও বেশ খুশি হয়ে বলল এগুলো আমার জন্য!

– মা, বৌদি,তোর,পরী, দিদুন আর পলা আন্টির জন্য। যা সবাইকে দিয়ে দে।

– এমন সময় কৌশিক আর নিদ্রা রুমে ঢুকে বলল এত্ত কি দিচ্ছিস অর্পিতাকে!

– তেমন কিছু না,,,,,,জাষ্ট কিছু ড্রেস আর জুয়েলারি।

– কি ব্যাপাার সব মেয়েদের দিচ্ছিস আমরা ছেলেরা কি করলাম শুভ্র!

– ওদের মত অবলা যদি হস তাহলে তোকেও দিব দাদা……..

– এই শুভ্র আমরা কি অবলা বলেই নিদ্রা গম্ভীর হয়ে গেল।

– না না তোমরা অবলা কেন,,,,,, তোমরা তো রনচন্ডী বলেই কৌশিক হাহাহা করে হেঁসে উঠল।

– কৌশিক তোমরা কিন্তু আমাদের অপমান করছো!(নিদ্রা)


– দাদা চুপ কর দেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মেয়ে তাই এদের কিছু বলতে নেই।( শুভ্র)


– অর্পিতা যাও তো পরীকে ডেকে নিয়ে আসো আজ এদের একটাও ছাড় নেই। ( নিদ্রা)


– অর্পিতা উঠে যেতেই শুভ্র ওকে থামিয়ে বলল ওর আসার প্রয়োজন নাই। কারন শুভ্র ভাল করেই জানে পরী কাঁদছে। কারন ডাইনিং টেবিলে ও নিশব্দে কাঁদছিল। সবাই কথার ব্যাস্ততার মধ্য ভাগ্গিস মগ্ন ছিল বলে ওকে কার প্রশ্নর কোন সম্মুখীন হতে হয়নি।


– রুমে অনিতা সহ সকলে আসল শুধু পরী ছাড়া। সবাই অনেকক্ষন জমিয়ে আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেল। আর শুভ্র নিজের লাগেজ গোছাতে শুরু করল। সব ব্যাপারে শুভ্র একজন দ্বায়িত্ব শীল ছেলে। নিজের কাজ নিজেই করে।



– অনেক রাত হয়ে গেছে তাই আমি শুভ্রকে ম্যাসেজ দিলাম,,,,,, শুভ্র কই তুমি! কখন আসবা,,,,,,,,, আমার কিছু ভাল লাগছেনা তো?


– শুভ্র মাসেজ রিপ্লাই দিল,,,,,,,,,সব কিছু গোছগাছ করছি সোনা। সময় হলে এমনি যাব তুমি ঘুমিয়ে পড়।(শুভ্র)


– আমি বেডে সুয়ে পড়লাম,,,,, রাত ১২ টা পার হয়ে যাচ্ছে তাও শুভ্রটা আসছেনা। ওর আসায় জেগে থাকতে থাকতে আমি একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।



– রাত ৩ টার দিকে নিজের রুমের দরজাটা ভাল করে লাগিয়ে পরীর রুমে আসল শুভ্র এবং দরজা বন্ধ করে দিল।
চলবে——————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here