অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ১৪

0
2448

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ১৪
নাফিসা মুনতাহা পরী

– আমি একই ভাবে ছাদে বসে আছি প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে। দুরে ফযরের আযান দিচ্ছে। তবুও বৃষ্টি থামার কথা নাই। শুভ্র আজ যা করল সেটা সীমার বাহিরে। ফুপিয়ে কাঁদছি। মাথা ব্যাথা করছে।




– তুমি এখানে এখনও এভাবে পরে আছো বলে শুভ্র আমার কাছে আসল।
-…………………………..?
– শুভ্র ওড়না আর মোবাইল টা নিয়ে পরীর কাছে এসে দাড়িয়ে বলল ওঠো বলে হাত টেনে ধরল।
– আমি হাত ঝিটকে ফেলে দিলাম।
– ও আর কিছু না বলে পরীকে কোলে নিয়ে নিচে নামতে লাগে এবং ওর রুমে নিয়ে যায়।
– আমাকে নেমে দিতেই ওকে জোড়ে কামড় বসে দিয়ে ধরে থাকি।
– শুভ্র তো অবাক। এর ভিতর যে আগুন জ্বলে সেটা বুঝতে পারল শুভ্র।
– এই তোমার দাতে এত্ত জোর কই থেকে আসে বলে ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়।




– পরীর হাত ধরে টেনে ওয়াস রুমে নিয়ে গিয়ে সাওয়ার অন করে দেয়। ইচ্ছা মত ২ জনে ভিজছে।
– শুভ্র বলল কিরে কিছু বলছো না কেন ওহ আমাকে বুঝি ড্রেস ও চেঞ্জ করে দিতে হবে বলে পরীর গায়ে দিতেই পরী ঠাশশশ্ করে একটা চড় মেরে বলে just leave now.
– শুভ্র একটু হেঁসে বলল বাহ্ মুখে বুলি ফুটেছে বলেই চলে গেল।




– এভাবে আরও কিছুদিন কেটে গেল। মৃদুলের সাথে পরী কথা বলা সম্পূর্ন অফ করে দিছে। শুভ্র যা ভয় দেখাইছেনা ওকে বিশ্বাস নাই।
– একদিন ভার্সিটিতে যাই আডমিড উঠাইতে।
– বিদ্যুৎ আমাকে ডাকল সাথে অনেকে ছিল।
– হুম কিছু বলবি?
– সেদিনের পর তো আমার সাথে কথাই বললি না পরী।
– কি বলব! বলার মত কিছু নাই। তাছাড়া আমি বিবাহিত একটা মেয়ে।
– কিহ্ মিথ্যা কথা কেন বলছিস। তোর বিষয়ে সব জানি।
– সব জানিস তো এটা জানিসনা আমি বিবাহিত।
– পরী পাগলামো করিস না বলে বিদ্যুৎ ওর হাত ধরল।
– আমার হাত ধরার সাহস তোকে কে দিল বলেই সবার সামনে একটা চড় বসিয়ে দিল।
– বিদ্যুৎ উল্টা পরীকে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল তোর সাহস কি করে হয় আমাকে চড় মারার!
– আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুধু চোখের জল ফেলে চলে আসতেই বিদ্যুৎ বলল এর প্রতিদানের ফলাফলের জন্য প্রস্তুত থাকি। তোকে আমার হাত পা ধরতে হবে। মনে রাখিস আমি কি তখন হারে হারে টের পাবি।




– বাসায় এসে দেখলাম বাসা ভর্তি অনেক মানুষ। আমি সেদিকে কান না দিয়ে উপরে চলে আসলাম।
– গা ম্যাশ ম্যাশ করছে মনে হয় জ্বর আসবে।
– পলা আন্টি আমার রুমে এসে বলল পরী তোমাকে একটা খবর দেওয়ার আছে। শুভ্রর আর্শীবাদ ঠিক হয়ে গেল। নিতু মেয়েটা দেরী করতেই চাচ্ছেনা। পারেনা যে আজই বিয়ে হোক।




– আমি চুপ করে শুধু সুনলাম। ভালতো বিয়ে হয়ে যাওয়াটাই বেটার। আর কত দিন!
– তোমার খারাপ লাগছেনা?
– নাতো বরং আনন্দ হচ্ছে। কোনদিন হিন্দু বিয়ে দেখিনি এবার দেখব, খাব, মজা করব। জাষ্ট ইনজয় আর ইনজয়।
– পরী ও তোমার স্বামী হয় তবুও একথা গুলো বলছো?
– আমি বিয়ে মানিনা আন্টি। ওটা আমার ধর্মের রিতীতে বিয়ে নয় তাই সব বাদ।
– আমাকে কিছু খাবার দিয়ে যাও তো আন্টি ঝাল ঝাল কিছু।
– পলা রুম থেকে হতাশ হয়ে চলে গেল। আমি পড়তে বসলাম কারন আর ৬ দিন আছে বাঁকি পরীক্ষার।




– বাসায় প্রচুর লাইটিং এর কাজ চলছে কাল শুভ্রর এঙ্গেজমেন্ট+ আর্শিবাদ। লোকজনে সমাহর। অনেক আত্বীয়স্বজন এসে গেছে এর মধ্য। তাদের গেষ্ট রুমে রাখা হয়েছে।




– আমার সাথে কথা বলার মত কেউ নেই খুব একা লাগছে। বেলকুনিতে বসে আছি মনমরা হয়ে। এমন সময় অনিতা আন্টি আর শুভ্রের বাবা আমার কাছে আসল। আমি উঠে দাড়িয়ে বললাম কিছু বলবেন?
– পরী এখনও সময় আছে তুমি যদি চাও এটা কান্সেল করে দিব। আর্শীবাদের পর আর কোন উপায় থাকবেনা কিন্তু। তুমি খুব ভুল করছো। ধর্ম টা সব ফ্যাক্ট না। শুভ্র তোমাকে খুব ভাল বাসে আমি চাইনা যে ও সারা জিবন কষ্টে থাকুক এক নিঃস্বাসে কথা গুলো অনিল পরীকে বলল।




– আঙ্কেল আমি পারবনা নিজের ধর্মকে পরিবর্তন করতে। তাই সম্ভব না আমার পক্ষে আর এগুনোর।
– তোমায় ধর্ম পরিবর্তন করতে বলেনি তো কেউ। তুমি তোমার ধর্ম নিয়ে থাকবা আর শুভ্র ওর টা। এটাও করতে পারবেনা?
– না সম্ভব না আন্টি।
– মা আমার ছেলেটা শেষ হয়ে যাবে। ছোট বেলায় ওর অনেক বড় অসুখ হয়েছিল। অনেক মানত পুজা করে অকে ফিরত আনছি মা ওকে কষ্ট পাওয়ার জন্য না। আমার ছেলের মত তুমি কাউকে পাবেনা। জিবনে কোন মেয়ের দিকে তাকায়নি। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে
পরে থেকেছে। আজ সে সফল। তোমার সাথে ওর ভাগ্য জুড়িয়ে আছে বলে হয়ত ঐ দিন দুর্ঘটনাজনিত কাজটি ঘটেছিল। ওর কোন দিকে তুমি কূর্টি খুজে পাবেনা। প্রথম কোন মেয়েকে আমার কাছে কান্না করতে করতে চেয়েছে আমি মা হয়ে কেমনে ছেলের কান্না সহ্য করি বল। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাও না মা।




– আমি ওনাদের সামনে হাটু গেড়ে বসে কাঁদতে লাগলাম। আন্টি আমি সব হারিয়েছি শেষে এই ধর্ম টুকু আকড়ে ধরে পড়ে আছি। আমার ধর্মে অনুমতি নাই। শুভ্র যদি ইসলাম………. কথা শেষ না হতেই আন্টি চলে গেলেন।
– অনিল আঙ্কেল আমার পাশে বসে বলল আর কি কোন উপায় নেই! শুভ্র যদি মুসলিম হয় আমরা বাহিরে বের হতে পারবনা মা। আমাদের সমাজ আছে। কিছু করার নাই!




– আঙ্কেল আপনি জানেন না হয়ত আমার বাবা -মা নেই। বাবার আদর কি আমি জানিনা। যেদিন অর্পিতার নিখোঁজ এর পর শুভ্র এনে আপনাদের কাছে অর্পিতাকে দাড় করাল আর আপনি আর আন্টি ওকে দেখে যখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন আদর করলেন তখন বিস্বাস করেন সেটা দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা রুমে এসে কেঁদেছি। আমাকে এরকম আদর করার মত কেউ নেই কারন আমি এতিম। আপনাকে বাবা বলে ডাকতে খুব ইচ্ছা হয় কিন্তু ডাকতে পারিনা।
– আমাকে কেউ কখনও আদর করে এক লোকমা ভাত মুখে তুলে দেয়নি। আমি জানিনা সেটার স্বাধ কেমন। আমিতো চাইনি আমার জিবন এরকম হোক। আমার ভাগ্য যে ভাল না আঙ্কেল। আমার করার কিছু নেই। আমায় ক্ষমা করে দেন বলে ফিকরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।
– উনি আমার কথা শুনে চোখ মুছে চলে গেলেন।




– পরী কথাগুলো বার বার অনিলকে ভাবাচ্ছে। ও যদি উন্ন কোন ঘরে বিয়ে হয়ে যায় তাহলে সেখানে কতটুকু সুখ পাবে জানিনা। একমাত্র শুভ্রর দ্বারা ও সুখী হতে পারে। কিন্তু ও যে শর্ত দিয়েছে সেটা মানা অসম্ভব। রাতে ঘুম আর আসলো না এসব চিন্তা করতে করতে। কি করা যায়।




– সকালে আমি নামায পরে পড়তে বসেছি। এমন সময় মৃদুল বার বার কল দিচ্ছে। মনটা ভাল নাই তবুও আজ রিসিভ করলাম।
– পরী…..
– হুম
– কেমন আছো সোনা! আমার কথা একবারও মনে পরেনা?
– মৃদুল তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
– কিছু কেন যত খুশি বল। আমি আজ আমার পরীর সাথে কথা বলছি এতেই অনেক পাওয়া।
– মৃদুল I am not varjin girl.
– What?
– হুম আমার শুভ্রের সাথে সব হয়ে গেছে। আমি তোমাকে ঠকাতে চাইনা। বল এখন তোমার অভিমত কি?
– মৃদুল কল কেটে দিল।
– আমি একটু হাসলাম। এই ভালবাসা আমার প্রতি। একবার যাচাই ও করলনা আমি সত্যি না মিথ্যা বলছি।
– একটা মাসেজ করলাম কল কেটে দিলে কেন মৃদুল?




– মৃদুলের ব্যবহারে খুব কষ্ট পেলাম। রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করছেনা।
– সকাল ১০ টা পার হয়ে যাচ্ছে এখনও খাবার কেউ দিয়ে যায়নি। অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি কারও নজর থাকেনা।
– আমি মাথায় বড় ঘোমটা টেনে নিচে গেলাম। ফ্রীজ থেকে কিছু খাবার নেওয়ার জন্য।
– বাসা ভর্তি মানুষ। ফ্রীজ খুলতেই একজন বলে উঠল এই মেয়ে তুমি কে। আমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম।
– না মানে পানি খাব।
– কিচেনে যাও এখানে কি?
– আমি আর কোন কথা না বলে কিচেনে গিয়ে দেখি বাসার কয়েক জন কাজের লোক খুব ব্যস্তর সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
– আমাকে দেখে বাসু কাকা এসে বলল পরী দিদি কিছু লাগবে?
– খুব খুদা লাগছে কাকা কিছু আছে?
– উনি জ্বিভে কামড় দিয়ে বলল দুঃখিত দিদি আপনাকে খাবার দিতে আজ ভুলে গেছি আপনি রুমে যান আমি খাবার দিয়ে আসছি।





– রুমে এসে বসে পড়লাম। দিনটা এভাবেই কেটে গেল। রাতে বিশাল পার্টির আয়োজন করা হয়েছে ৮ থেকে শুরু হবে। জমজমাট সব অবস্থা। শুভ্র সেনের এঙ্গেজমেন্ট বলে কথা।



– সন্ধার নামায পরে কেবল খাটে বসেছি এমন সময় নিতাই দাদু আমার রুমে এসে বলল পরী চলতো আমার সাথে!
– আমি অবাক হয়ে বললাম কোথায় যাব দাদু?
– আরে চলোই না বলে আমার হাত ধরে টেনে নিচে আনল।
– নিচে এসে দেখি অর্পিতা যা সাজ দিছেনা মনে হয় থাক আর নাই বলি।
– এই দিদি আমাকে কেমন দেখাচ্ছে? (অর্পিতা)
– aswm লাগছে অর্পিতা।
– তুমি কই যাচ্ছো?
– জানিনা রে বলেই বাসা থেকে দাদুর সাথে বের হয়ে এলাম।




– দাদু আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে ডাইভার কে কোথায় যেন যেতে বলল।
– দাদু আমরা কোথায় যাচ্ছি?
– গেলেই দেখতে পাবা……..




– ১৫ মিনিট পর আমরা একটা পার্লারের সামনে নামলাম। এখানে কেন দাদু?
– কাজ আছে বলে আমাকে পার্লারের ভিতর নিয়ে গিয়ে ওদের বলল সাদা শাড়িতে হালকা সাজ এবং খোপায় ফুল। এমনিতেই ও সুন্দর তাই গর্জিয়াস কোন সাজ না। ১ ঘন্টার মধ্য রেডী করে দাও। পার্টিতে এটেন্ড করতে হবে আমাদের।
– ok sir বলে ওরা কাজ করতে শুরু করে দিল।
– আমিতো ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছি।



– মা! বাবা কোথায় সব শুরু হয়ে গেল বাবাকে যে দেখছিনা?
– বিমলা অনিলের দিকে তাকিয়ে বলল আমি ও দেখছিনা তো। কই গেল! এখানেই তো ছিল।



– শুভ্র পরীর রুমে এসে দেখল ও নেই। সব জায়গা খুজল তবুও নেই। শুধু বিছানায় ফোন পরে আছে।
– ফোন টা অন করতেই দেখল মৃদুলের সাথে ও আবার যোগাযোগ করেছে। এই মেয়ে কোন দিন শুধরাবে না বলে শুভ্র বের হয়ে গেল রুম থেকে।



– নিতু সহ ওর পরিবারের সবাই এসে গেছে। ৮.৩০ বেজে গেছে পার্টি জমে উঠেছে। কিন্তু নিতাই সেন এখনও আসেনি। এটা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তা করছে।



– রাত ৯ টার দিকে অনিল ওর বাবাকে দেখল একটি মেয়ের হাত ধরে ভিতরে ঢুকল। পুরনো আমলের সাজ মেয়েটির। বাবা কি শুরু করল বলে কাছে যেতেই হেসে উঠল এই পরী তুমি? আমিতো ভাবলাম কেনা কে?
– এই সম্মান দিয়ে কথা বল এটা তোর নতুন মা আরও একটা আছে বলে অর্পিতাকে কাছে ডাকল নিতাই।
– পরী দিদি তোমাকে যা লাগছে না। ফাটাফাটি। ক্লাসিক সাজে যে কাউকে এতটা সুন্দর লাগে সেটা আজ দেখলাম।
– কি ২ গিন্নী আমার সাথে সবসময় থাকবে। কিরে অনিল কেমন লাগছে তোর নতুন ২ মাকে হুম।
– বাবা দারুন লাগছে বলে অনিল হেসে দিয়ে চলে গেল।




– দিদি আজকে আমরা খুব আনন্দ করব কেমন?
– ওকে মাই ডিয়ার বলে ওকে নিয়ে রুমে আসলাম এবং ফোনটা নিয়ে নিচে নামলাম।
– আবার ২ জন দাদুর কাছে গিয়ে হাজির। দাদু তো সবাইকে আমাদের ২ জন কে গার্লফেন্ড বলে সবার সাথে পরিচয় করে দিচ্ছে। একজন তো বলেই ফেলল নিতাই তোর ভাগ্য দেখছি খুব ভাল রে এই বয়সে এমন ২ টা সুন্দরী গার্লফেন্ড পাওয়া চাট্টিখানী ব্যাপার।
– যার পার্টি তার হুস নাই পাড়া পড়শির ঘুম নাই সেটা হইছে আমাদের।




– আমি দাদু আর অর্পিতা পুরো পার্টি মেতে রেখেছি। বিমলা ওদের দেখে রেগে গিয়ে নিতাই কে বলল বুড়ো বয়সে কি ভিমরতি শুরু করেছো?
– কেন বিমলা তোমার হিংসা হয় বলে ওনাকে পাত্তা না দিয়ে আমাদের নিয়ে সোজা স্টেজে উঠলেন। হ্যালো এভরিবডি আমি আর আমার প্রিয় ডাবল সুইটহার্ট আপনাদের সামনে একটা ডান্স উপহার দিব বলে বলল মিউজিক অন……….
– আমি আর অর্পিতা তো অবাক। এই তোমরা নাচ ভাল নাচলে পরে অনেক উপহার আছে ২ জনের জন্য।
– ডোলারে ডোলারে ডোলারে ঐশ্বরিয়ার গানটি চালু হল। কি আর করা বাধ্য হয়ে নাচতে লাগলাম ২ জনেই
আর দাদু যতটুকু পারে কোমড় দোলাচ্ছে। আমি আর অর্পিতা ভাল ডান্স সবাইকে উপহার দিলাম। সবশেষে আমি আর অর্পিতা স্টেজেই একসাথে হাত পেতে বললাম এবার আমাদের উপহার।
– দাদুর একফ্রেন্ড উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে বলল কিরে নিতাই ঘুষ দিয়ে ওদের নাচিয়েছিস।
– তুইও নেচে দেখা ব্যাটা বলে আমাদের নিয়ে নেমে গেলেন।



– জিবনটা যে এতটা সুন্দর আগে কোনদিন বুঝতে পারিনি।
– দাদু বারের সামনে গিয়ে বসল। বেচারা হাপিয়ে গেছে। এই তোমরা দুজনে জাষ্ট একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসো আমি আসছি।
– দাদু তুমি ডিংক করবা তাই না বলে অর্পিতা দাদুর দিকে তাকালো।
– যখন সব কিছু বুঝিস তাহলে জিঙ্গাসা করিস কেন?
– আমিও আজ খাব কত দিনের সখ দারু খাবো। পরী দিদি তুমি খাবা?
– আস্তাগফিরুল্লাহ কখনও না। তোমাদের সখ হয়েছে তোমরা সখ মিটাও বলে আমি ওখান থেকে চলে এলাম।



– এই অর্পিতা কম করে খা তাছাড়া তোর বাবা দেখলে আমাকে আর আস্ত রাখবেনা।
– অর্পিতা এক পেগ খেয়ে বলল বয়সটাই উড়তি বয়স……… তাইতো এভাবেই উড়বো………. বাবা এসে কিছু বললে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিব হিহিহিহিহি।
– নিতাই সেন তো অবাক অর্পিতার কথা শুনে। এই মেয়ে বলে কিরে একে এখনি থামাতে হবে না হলে মান ইজ্জত সব শেষ বলেই নিজে আর না খেয়ে অর্পিতাকে টেনে পরীর কাছে দিয়ে গেল। পরী ওকে দেখতো বলে চলে গেল দাদু।




– এই পরী দিদি আজ যা তোমাকে লাগছে না! আমি ছেলে হলে তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম। দাদার চয়েস আছে।
– তুমি চুপ করবা না আমি চলে যাব!
– অর্পিতা মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে থাকল।
– আমার সামনে একটু দুরে শুভ্রকে দেখতে পেলাম। কফি কালার ধুতি আর গোল্ডেন শেরওয়ানী ভালয় লাগছে দেখতে। তাছাড়া আমি মনে করি সুন্দর মানুষকে যা পরাবে তাই সুন্দর লাগবে।




– এই দাদা এদিকে আয়তো বলে অর্পিতা শুভ্রকে ডাক দিল।
– শুভ্র এদিকে আসতেই আমি পাশ ফিরলাম অন্য দিকে তাকালাম।
– অর্পিতা ডিংক করেছিস?
– না না দাদা আমিতো দারু খেয়েছি। বেশি ঙ্গান দিতে এলে তোকেও ফু দিয়ে উড়ে দিব হুম।
– অর্পিতার কথা শুনে আমি আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। আমি আর অর্পিতা ২ জনেই অট্টো হাঁসিতে বেহুঁশ হওয়ার পথে।
– অর্পিতা তোমার দাদা কে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিবে! হাহাহাহাহাহা পারও বটে কথা বলতে। যা ওজন শরীরের………….
– শুভ্রর শরীরে এত্ত ওজন তুমি কি করে জানলে পরী! বলেই নিতু এসে আমার সামনে দাড়াল।
– লও ঠেলা নিতু দি তোমার আগে তোহ ওর জানা কথা বলতেই আমি ওর মুখ চেপে ধরে হির হির করে টেনে আনলাম। অর্পিতা তোমার দাদার বিয়ে দেখছি তুমি ভেঙ্গে দিবা। চলো এখান থেকে বলে ওকে রুমে এনে আন্টিকে ডেকে আনলাম। দেখেন আপনার মেয়ে কি খাইছে ওরে সামলান বলে চলে আসলাম।



– কিছু ভাল লাগছে আর। এখনি সুখ আসে এখুনি দুঃখ বড় অদ্ভুত জিবন।
– ছাদে আসলাম আবার। নিচে খুব জোড়ে মিউজিক চলছে। শব্দে মাথা ব্যাথা শুরু করে দিছে।
– ফোন অন করে দেখি মৃদুলের অনেকগুলো কল এবং মাসেজ।
– কল দিতেই ও ব্যাক করে বলল কই ছিলা।
– কেন?
– তোমার পরীক্ষার শেষ দিনে দেখা করছি এটাই ফাইনাল। আর টেনশন করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। মনযোগ দিয়ে পড়। আমি এখন একটু বিজি আছি বাই বলে কেটে দিল।



– বড়সর একটা নিঃস্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আকাশে চাঁদ নেই। ভাবছি আর হিসেব করছি জিবনে কি পেলাম আর কি হারালাম।
ইয়া আল্লাহ্ সুখ কি আমাকে দিবেনা?
– নিচে শব্দ সোনা যাচ্ছে এঙ্গেজমেন্টের ঘোষনা দিচ্ছে হয়ত কিছুক্ষন পর সেটাও হয়ে যাবে। সব শেষ।


– এসে দোনলায় বসে পড়লাম। বুকে অচেনা এক ব্যাথা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। জিবনের শিক্ষার অভাব নাই।



– শুভ্র নিতুকে আংটি পড়িয়ে দেয় আর নিতু শুভ্রকে। এটা শেষ…… একটু পরে আশীর্বাদ ও হয়ে গেল। তারপর খাওয়া দাওয়ার পথে। পার্টি শেষের দিকে। শুভ্র পরীকে অনেকক্ষণ থেকে খুজছে কিন্তু পাচ্ছেনা। মেয়েটা কই গেল।


– শুভ্র সব জায়গায় ওকে খুঁজল কিন্তু পেলনা শেষে ছাদে এসে দেখে ও দোলনায় বসে আছে। ওকে দেখে হাফ ছেড়ে যেন বাঁচল।
– পরী তুমি এখানে কেন? খাবার খাইছো!
– আমার খোঁজ নিতে হবেনা যান আপনার বউয়ের খোঁজ নেন।
– তাতো নিবোই কিন্তু তুমি এত চটে যাচ্ছো কেন?
– চটবো কেন! এখানে চটার কি দেখলেন। সুখী থাকুন আপনি আর নিতু।
– সেটাইতো তুমি চাও এতো দিন ধরে। তোমার মোটামুটি সব ইচ্ছাই পুরুন করছি তাই এটা বাদ দেই কিভাবে?
– আমি আর কোন কথা না বলে দোলনা থেকে উঠে একদম ছাদের কিনারায় চলে আসলাম।
– পরী এত কাছে যেওনা পরে যাবা।
– আমি পরি মরি যা খুশি তাই করি তাতে তোমার কি?
– আমার কি সেটা তুমি ভালো করেই যানো পরী।
– পরী যে এই কাজটি করবে শুভ্র কোনদিন কখনও কল্পনা করেনি। পরী পিছন ফিরে এক দৌড়ে এসে শুভ্রকে জড়িয়েই কাঁদতে লাগল।
– শুভ্র পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কি ব্যাপার এত চেঞ্জ।
– পরী কিছু হয়েছে! তোমায় কেউ বকেছে? তোমার শরীর খারাপ?
– জানিনা বলে শুভ্রকে আরও জোড়ে বুকের সাথে চেপে ধরে।
চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here