অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ২৫

0
2105

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ২৫
নাফিসা মুনতাহা পরী



– আমি ল্যাপটপ সহ সব কিছু নিয়ে শুভ্রর রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে এলাম। তারপর আবার শুয়ে পড়লাম। শুভ্রও আর কল দেয় নি।


– এদিকে শুভ্র ও সব গুছিয়ে ঘুমিয়ে পরে।



– সবাই সকালের নাস্তা সেরে উঠে গেলে আর পরী সোজা অনিতার রুমে গেল।

– আন্টি আসব?

– হুম আসো। কি ব্যাপার পরী অনেকদিন এই রুমে আসনা তো আজ হঠাৎ কি মনে করে এলে বাবা!

– কেন আঙ্কেল আমার কি আসা মানা? বাবার কাছে যখন খুশি মেয়ে আসতেই পারে।

– তোমার সাথে আমি কথায় পারবনা বলে অনিল অফিসের জন্য রুম থেকে বের হয়ে গেল একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে।

– অনিতা কিছু কাজ করছিল। পরী বসো,,,, কিছু বলবে?

– না,,,, আপনি তো ফ্রী নাই আন্টি।

– মা আমার কাছে এসে বলল সমস্যা নাই তুমি বল।

– আমার বাসায় চাচী আমাকে অনেক কথা শুনাত দেন গায়েও হাত তুলেছে অনেক বার। কিন্তু আমার এই মা টা আমাকে যতটা ভালবাসা দিছে সেটা কোথাও পাইনি। এখন মনে হচ্ছে আল্লাহ্ যা করে সব কিছু ভালর জন্যই করে।

– অনিতা পরীর ওভাবে অপলক চেয়ে থাকা দেখে আরও কাছে এসে বলল,,,,,,, চুপ করে কেন আছো মা?

– পরী চট করে বসে থেকেই অনিতাকে জড়িয়ে ধরে ওর শাড়ীর মধ্য মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগল।

– অনিতা পরীর কান্ড দেখে হতবাক হয়ে গেল। কি হয়েছে পরী! তোমাকে কেউ কিছু বলছে,,,,,বল আমায়।

– মেয়েটা চুপ করে নিশব্দে কেঁদেই যাচ্ছে?

– এবার অনিতার খুবই খারাপ লাগল। শুভ্রর কাজগুলোতে হয়ত পরী খুব কষ্ট পাইছে তাই এভাবে কাঁদছে মেয়েটা। আসলেই মেয়েটাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি।

” শুভ্র কিছু বলেছে পরী! বল শুধু একবার ওর কি হাল করি বলেই ফোন হাতে নিয়ে শুভ্রকে কল দিতে যাবে এমন সময় পরী বলল আমাকে কেউ কিছু বলেনি মা……..

– পরীর মুখে মা ডাক শুনে অনিতা স্তব্ধ হয়ে যায়। কারন কোন মানুষ চট করে কিছু বলেনা। তার মানে পরী আগে থেকেই ওকে মা বলে মেনে নিছে।


– জানেন আমার মা নাই। কোনদিন দেখিওনি। কেমন দেখতে সে ছিল। মায়ের শরীরের গন্ধ কি জিনিস আমি জানিনা। বাবা টাও চলে গেল আমাকে রেখে এতিম করে। অনেক কষ্ট যন্ত্রনা সহ করে আজ আমি এখানে এসে নতুন একটা মাকে পেয়েছি। আমি কি আপনাকে মা বলে ডাকতে পারি?


– পরীর কথা গুলো শুনে অনিতার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। অনিতা বলল ডাকতে মন চাইছে ডাকবে এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে মা। বরং আমার আরও একটা সন্তান বেড়ে গেল বলেই অনিতা নিজেকে পরীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে ওর সামনে বসল।

– পরী শুভ্র এতটা খারাপ না যে তোমাকে ওভাবে বিশ্রী ভাষায় গালি দিবে! কারন আমি ওকে এটা শিক্ষা দেইনি। হয়ত অন্য কেউ তোমাকে গালি দিছে আর তুমি সেটা শুভ্রকে ভেবে চড় মেরেছিলে।

শুভ্র সব সহ্য করতে পারে কিন্তু ওর অপমান আর ওকে কেউ ধোঁকা দেওয়া এগুলো সহ্য করতে পারেনা। তাই তোমার সাথে সেদিন অমন ব্যবহার করেছে। তুমি যদি চাও আমরা তোমাকে তেমন জিবন সাজিয়ে দিব যেমনটা তুমি চাও।


– জানেন যেদিন শুভ্র সিঁদুরটা পড়িয়েছিল সেদিন বাসায় এসে চাচী আমাকে যাইচ্ছা তাই বলে গালি দিয়েছে। চাচাটাও আমার কথা শোনেনি,,,,, সবার সামনে আমাকে চড় মারে। ভাবছিলাম নিজেকে শেষ করে দিব। ৫/৭ বার গলায় দড়ি দেওয়ার ট্রাই করছি কিন্তু পরে নিজেকে শান্ত করে অজানা পথে পাড়ি দিয়ে আজ এই জায়গায় আমি।


– অনিতার কথা সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেল পরীর কথা শুনে। এত্ত কথা সে জানতনা। পরীর উপর দিয়ে কতটা ঝড় গেছে তাহলে।


– দেখ পরী শুভ্রর হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার ছেলেটা না বুঝে ভুল করে ফেলেছে।


– পরী কোন জবাব না দিয়ে অনিতার কোলে মাথা রেখে বলল আমার একটা মা চাই আন্টি। আমার একটা বাবা চাই। ঠিক অর্পিতা যেমনটা আপনাদের কাছ থেকে শাসন, আদর, ভালবাসা পায় অমনটাই আমার চাই। আমাকে দিবেন?


– এই বোকা মেয়ে তুমিতো আমাদের মেয়ের মত। এগুলো চাওয়ার কি আছে? আচ্ছা পরী তোমার চাচা-চাচী তো কোন দিন কি তোমার খোঁজ নিবে না?


– এবার পরী ফিকরে কেঁদে উঠে বলল ওরা আমাকে চায় না আন্টি। এতিম দের কেউ থাকেনা। এরা বাসার কাজের মেয়েদের মত জিবনযাপন করে। আমাকে ওদের প্রয়োজন নাই। আমি না থাকাতে ওরা বেঁচে গেছে আন্টি। স্বার্থের পৃথিবীতে একমাত্র স্বার্থের দাম ছাড়া আর কোনকিছুর দাম নেই। অপয়া মেয়ে আমি। সুখ আমার কপালে বেশিদিন টিকে না। এই ছোট্ট জিবনে অনেক কিছু সহ্য করেছি। মৌলিক চাহিদাটাও
আমার কখনও পুরুন হয়নি। চাচী কত্ত ভাতের প্লেট কেড়ে নিছে। কতদিন না খেয়ে থেকেছি। কত মৃত্যু কামনা করেছি।


– পরী চুপ কর মা। আর এগুলো শুনবো না। কেন অতীত মনে করে কষ্ট পাচ্ছো?


– আমিতো মনে করতে চাইনা মা,,,,,,, কিন্তু বার বার মনে পরে যায়।


– অনিতা অনেক কথা বলে ওর পরিবার সম্পর্কে, শুভ্র সম্পর্কে। আরও অনেক গল্প। কিন্তু পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে ও ঘুমিয়ে গেছে। হয়ত অনেক ক্লান্ত ছিল মনের দিক থেকে।


– অনিতা ওভাবেই বসে আছে পরীকে নিয়ে। মেয়েটার চোখ ২টো এখনো ভেজা।এমন সময় অর্পিতা পরীর ফোন এনে বলল পরী দিদি তোমাকে কে জানি কল দিছে।

অনিতা অর্পিতাকে ইশারা করল চুপ করতে। ফোনটা রিসিভ করে হালো বলতেই শুভ্র কোন কথা না বলেই কেটে দিল কল।


– পরীর কল মা কেন ধরল? তার মানে মা কাছে!


– কল কেটে যেতেই অনিতা ফোন রেখে দিয়ে ওমন ভাবেই বসে রইল।


– ঠিক ১৫ মিনিট পর আবার কল দিল শুভ্র।


– শুভ্র কত বার ফোন দিতে হয়! আর তুই এত্ত
বেহায়া কেন বল তো?


– শুভ্র ওর মায়ের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় লজ্জায়। আর কিছু বলেনা।


– পরী আমার রুমে ঘুমাচ্ছে। পরে কল দিস।


– মা তুমি কেমনে জানলা আমি কল দিছি! নাম্বার টা তো তুমি জান না…..


– তোর প্রতিটা নিঃস্বাস আমি ভাল করে বুঝতে পারি তাই অন্তত তুই আমাকে তোকে চিনাতে আসিস না।


– ওকে মা ফোন রাখছি।


– আরে শোন না!(অনিতা)


– বল শুনছি মা!


– তুই পরী কে যেভাবেই বিয়ে করনা কেন আজ আমি খুব খুশি। তোর জন্য এই পারফেক্ট।


– আর কিছু বলবে মা! তোমার কথা শুনে আমি রিতিমত ঘাবড়ে ও লজ্জা ২টাই পাচ্ছি।


– না আর কিছু না বলে অনিতা কল কেটে দিল।


– অনিতা পরীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল ” ও থাকলে কি পরীকে মেনে নিত!” অনিতার চোখ ছলছল করে উঠল।



– মার হাত ছোয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আমি চট করে উঠে বললাম স্যরি মা,,,,, ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। না জানি আপনাকে কতটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম।



– মা একটু হেঁসে বলল শুভ্র কল দিয়েছিল। যাও কথা বল। ছেলাটা আমার অস্থির হয়ে গেছে।


– স্ট্রেঞ্জ! মা কোন রিয়াক্ট না করে আমার হাতে ফোনটা দিয়ে চলে গেল?


– আমি রুমে এসে ফ্রেস হয়ে শুভ্রকে কল দিলাম।


– শুভ্র কলটা কেটে দিয়ে ভিডিও কল দিল।
জান, সোনা, কলিজা I Love you বলে অনেক গুলো কিস ♥♥♥♥করল পরীকে।
বউ কি কর?


– I Love you tooo my কলিজা।
কিছু না শুভ্র! ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মার রুমে।


– জানিতো সোনা আমার পরীটা ঘুমাইছিল।

পরী! আমি খিচুরি রান্না করব আমাকে শিখাইয়ে দাওতো বলে শুভ্র কিচেনে ঢুকল।


– তুমি সকালে কিছু খাওনি শুভ্র?


– নাহ্,,,,,, কিছুক্ষন আগেই ঘুম ভেঙ্গেছিল। তোমাকে কল দিয়ে পেলাম না তাই বসে ছিলাম এতক্ষন।


– আমি ওকে বলছি কি কি দিতে হবে আর শুভ্র সেগুলো বের করছে।

শুভ্র সবজি কাটছে। ওর সবজি কাটা দেখে মনে হল ও সব কাজ নির্ভুল ভাবে অনায়াসে করে যাচ্ছে। তারমানে ও সব পারে।


– শুভ্র তুমি সব কাজ পারো তাই না?


– এতক্ষনে বুঝলা?


– তাহলে আমার জন্য কেন ওয়েট করছিলা।


– সব পারলে কি হবে বল,,,,, খিচুরির ভিতর বউয়ের ভালবাসা না মিশালে যে আমার চলে না তাই তোমার অপেক্ষা বলেই দ্রুত সব কাজ করতে লাগল।


– শুভ্র! তুমি একদম সুপার ম্যান,,,,, সব কাজ পার বলেই পরী ওকে কিস♥♥♥♥ করতে লাগল।


– ফোনটা কিস করতে করতে ভেঙ্গে ফেল পরী। ফোনে এত্ত যে কিস♥ করছো আমার কাছে একটা আসছে?


– নাহ্। মনের সুখ মিটাচ্ছি।


– শুভ্র হেঁসে বলল মনের সুখ!
যখন কিস♥ গুলো কাছেই পাইনা তাহলে কেন দাও পাগলের মত কিস এভাবে?


– তুমি যে কাছে নেই শুভ্র! তাই খুব কষ্ট হয়।


– শুভ্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল আজকে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব পরী!


– আমিতো এখানে,,,,,, তুমি কেমনে নিয়ে যাবা আমায়?


– সেটা দেখলেই বুঝতে পারবে। জাষ্ট সারপ্রাইজ পরী!


– অনেক কথা হল,,,, এর মধ্য খিচুরি রান্না কমপ্লিট হয়ে গেল।

ওকে শুভ্র তুমি খাও। আর শোন তুমি খিচুরিতে ১ টা মাত্র কাচা মরিচ দিছো তার সাথে হাপ চামুচ চিনি। আমি হলে কখনও এটা খাইতে পারবোনা।


– তা পারবে কেন! ঝালখোর কোথাকার।(শুভ্র)

– হুম,,,,,আর কিছু????? আর তুমিতো মিষ্টি খোর।


– তাই! তুমি আমাকে কতটা ভালবাস পরী?


– অনেক অনেক অনেক বলে ২ হাত প্রসারিত করে দেখালাম। I Love you শুভ্র♥


– I Love you tooo jan বলেই শুভ্র বলল আমি তোমার সাথে বাজি ধরে বললাম এই খাবার একদিন তুমি খাবা সেচ্ছায় আমার সাথে।


– কখনও না। তোমাকে ভালবেসে খাব কিন্তু সেচ্ছায় না বুঝলা?


– ওকে ডান। তুমি বাজিতে হারবা শিউর বলেই ও কল কেটে দিল।


– যাক বাবা আর কথা বলার সুযোগই দিলনা?



– আমি গোসল সেরে যহরের সালাত আদায় করে নিচে কিচেনে গেলাম। মা রান্না করছে। অতিব চমৎকার তার রান্না।


– মা আপনার ছেলে ঝাল খেতে কেন পারেনা? আপনারা তো মোটামুটি খান কিন্তু শুভ্র খায়না কেন?


– এটা ওর জন্মগত অভ্যাস। অনেক চেষ্টা করিয়েছি কিন্তু ঝাল ও একদমই খেতে পারেনা। ওর সাথে কথা হল?


– হুম মা বলেই ওনাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলাম।


– পরী তুমি যদি এভাবে জড়িয়ে ধর আমাকে রান্না করব কি করে?


– আমি মা কে ছেড়ে দিয়ে বললাম আপনাকে জড়িয়ে ধরতে আমার খুব লোভ করে তাই জড়িয়ে ধরলাম মা!



– পুরাটা দিন এভাবে কাটল। শুভ্রর একটা কথা বারবার মনে পড়ছে। সময় একদিন আমাদের হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিবে পরী। তখন আমরা নিজেরাই অবাক হব। হুম কিছুটা ফলছে কথাটা। মা মেনে নিছে সব।



– সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শুভ্র কল দিয়ে বলল পরী চল তোমাকে নিয়ে সপিং যাই।


– কিভাবে?

– শুভ্র আমার সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ি নিয়ে বাজারে গেল এবং কল কেটে দিয়ে ভিডিও কল দিয়ে প্রতিটা জিনিস দেখাচ্ছে আর বলছে পরী এটা কেমন এটা নিব! এভাবে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে অনেকগুলো দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করল আমাকে দেখিয়ে। অদ্ভুদ রকম ভাল লাগছিল। প্রতিটা জিনিস আমাকে একটা একটা করে দেখাচ্ছিল। তারপর বাসায় এসে আমাকে লাইনে রেখেই ফ্রেস হতে গেল দেন কিছু টাইম পর এসে বলল কেমন লাগল আমার সাথে শপিং করতে?



অসম্ভব রকম ভাল লাগছে শুভ্র বলেই কয়েকটা কিস♥♥♥♥ করলাম।



– পরী তুমিতো জানো না আমি এখানে একটা হুযুর রেখেছি যে আমাকে ২ ঘন্টা টাইম দেয় রাতে কোরআন শেখানোর জন্য। এখানে এসে এই কাজটা ভাল হয়েছে। বাসায় থাকলে পারতাম না। হাতে ১ মাস সময় তাই জলদি শেষ করতে চাচ্ছি।



– বাহ্ দারুন কাজ করেছো তোহ্। সময়টা জেনে নিলাম কখন পরে ও। একমাস হাতে টাইম মানে?


– এখানে ১ মাস আমি আছি। ওদেরকে লেটার পাঠিয়ে দিছি কিন্তু এর বিনিময়ে আমাকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। তারপর কাজটা করতে পেরেছি।


– ওখানে এত্ত টাকা কোথায় পেলে শুভ্র?


– বোকার মত কেন কথা বল! টাকা মানেজ করা কোন ব্যাপার হল। আর তাছাড়া তোমাকে ছাড়া আমি এখানে বড্ড কষ্টে আছি পরী! কথাটি বলেই শুভ্র চুপ হয়ে গেল।


– শুভ্রর কথা শুনে ঝরঝর করে আমার চোখ দিয়ে পানি পরে গেল। আমারও খুব কষ্ট হয় যে শুভ্র।

– শুভ্র বেশ বুঝল এ এখন কাঁদবে।
ওকে এখন রাখছি একটু কাজ করে রাখতে হবে। এশার নামাযের পর হুযুর আসবে। ভাল থাক জান। আর হ্যাঁ ফোন সবসময় কাছে রাখবা। একবারের উপর যদি ২বার কল দিতে হইছে তোহ্ তোমার খবর আছে কিন্তু বলেই কয়েকটা কিস♥ করে শুভ্র কল কেটে দেয়।


– আমার কান্না আর থামছেই না। শুভ্রকে ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হয়।


– এভাবে আরও কয়েকটা দিন যায়। একদিন আমি ভুল করে ফোনটা রেখে দিদুনের কাছে চলে যাই। আর তাছাড়া এই টাইমটাই শুভ্র কোরআন শিখে।


– আমি, বাবা আর দিদুন মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম। একটু পর দাদু এসেও যোগ দিল। এই পরিবার টা অসম্ভব রকমের ভাল। সবাই সবার সাথে মিল। পলা আন্টি মচমচে পিয়াজু ভেজে দিয়ে গেল আড্ডাটা যেন জমে ক্ষীর হয়ে গেল। আড্ডা শেষে আমি উঠতেই বাবা বলল রাতের খাবার খেয়ে উপরে যেও পরী।


– কি আর করা একটু ওয়েট করে রাতের খাবার খেয়ে ১০ টার পর রুমে চলে আসলাম। এতক্ষনে শুভ্র ফ্রী হয়ে গেছে হয়ত বলে ফোনে হাত নিয়ে দেখি ১০+ কল দিছে শুভ্র। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। জানিনা আজ আমার কপালে কি আছে বলেই কল দিলাম কিন্তু রিসিভ হয়না। এরকম করে বার বার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ হয়না। শেষে কান্না করতে লাগলাম। পুরোটা রাত ওকে ট্রাই করছি কিন্তু কল রিসিভ হয়নি।




– এভাবে খুব কষ্টে ৩ টা দিন কেটে গেল। শুভ্র বাসার সবার সাথে কথা বলে শুধু আমার সাথে বলেনা। খুব কষ্ট লাগে। এই তিন দিনে কত হাজার বার যে কল দিছি অকে গুনে শেষ করা যাবেনা।


– ৫ দিনের বেলায় আমার রুমে আমি সুয়েছিলাম। হঠাৎ প্রচুর গা গুলায়। ওয়াসরুমে প্রচুর বমি করতে করতে অস্থির হয়ে যাই। শরীর খুবই খারাপ হতে শুরু করে। রুমে এসে আবার সুয়ে পরি। বান্ধবীর কাছে সুনেছিলাম বেবি কনসিভ্ করলে নাকি এমন হয়। আমি জলদি নেটে সার্চ দিলাম। হুম সব উপস্বর্গ মিলে গেছে। ওহ্ মাই গড আমার পেটে বাবু আছে বলেই আমার বান্ধবী শিরীনকে কল দিলাম। ওর মা একজন গাইনীকোলজিষ্ট। শিরীন আমাকে লোকেশন বলে দিল। আমি রেডী হয়ে কিছু টাকা নিয়ে মার কাছে গিয়ে বললাম মা! আমি একটু বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তাই আসতে একটু লেট হতে পারে। পরীর হাঁসি মুখ দেখে অনিতা আর কিছুনা বলে
অনুমিত দিল যাওয়ার। বাসার গাড়ীতে যেও পরী। আর টাকা আছে তোমার কাছে?

– হুম আছে মা। আর গাড়ীর প্রয়োজন নাই। আমার রিক্সাই বেশ লাগে।




– রাস্তায় শিরীনের সাথে কথা বলতে দেখি শুভ্র কল দিল। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে শিরীনের সাথে কথা বলতে লাগলাম। আমার তো বাবু আসছে তাই তোমার রাগ নিয়ে তুমি থাকো শুভ্র!


– আমি আর শিরীন অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষায় আছি।
টেষ্টের রির্পোট এর অপেক্ষায়। কিছুক্ষন পর শিরীনের মা আন্টি শুধু আমাকে ডাকল।


– আমি একা যাব বলেই শিরীনের দিকে তাকালাম।


– আরে আমি অবিবাহিত তাই মা আমার সামনে কিছু বলতে চাচ্ছেনা। কোন সমস্যা নাই তুই ভিতরে যা আমি আছিতো এখানে।


– আমি ভিতরে গিয়ে ওনার সামনে বসলাম।


– পরী! মিষ্টি খাওয়াও তুমি কনসিভ্ করছো। সাড়ে ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট তুমি বলেই আমার দিকে হাসি মুখে তাকাল।


– কিন্তু আমার মাথা ঘুরে গেল। শুভ্র সাথে সম্পর্কই আমার ২ মাস ঠিকমত হয়নি সেখানে ৩ মাস কিভাবে হয়। আমি চুপ করে গেলাম।


– কি পরী! তুমি খুশি হওনি?


– আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম হইছি আন্টি।


– এর পর আন্টি আরও অনেক কথা বলল। কি সমস্যা হতে পারে আর কি কি করতে হবে। আরও অনেক কিছু।


– এরপর শিরিন আমাকে জোর করে ওদের বাসায় নিয়ে গেল। বাসায় কাজের লোক আর ওর ছোট ভাই ছাড়া কেউ ছিলনা। ও অনেক গল্প করল খাওয়াল।



– সন্ধার পর আমি মাকে কল দিয়ে বললাম মা আমার ফিরতে দেরী হবে বলেই আন্টির সাথে কথা বলিয়ে দিলাম। এদিকে শুভ্র অনেক বার কল দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আমার ভিতরে এতটা খারাপ লাগছিল যে শুভ্রর সামনে দাড়ানোর ইচ্ছা টাই মরে গেছে।



– শুভ্র এদিকে ছটপট করছে। নাম্বার বিজি তার পর ৬/৭ ঘন্টা ধরে কল করছে তবুও মেয়েটা কল ধরছে না। শেষে বাধ্য হয়ে ওর মাকে কল দিল।


– হ্যাঁ শুভ্র বল।


– মা পরী কই?


– ওর এক বান্ধবীর বাসায় গেছে ফিরতে একটু রাত হবে,,,,, কেন?


– মা ৯ টা পার হয়ে গেছে এত্ত রাত অবদি কোন মেয়ে বাহিরে থাকে?


– সেটা তোকে ভাবতে হবে না। নিজের চরকায় নিজে তেল দে।


– শুভ্র আর কিছু বলল না। কল কেটে দিয়ে চুপ থাকে। পরীর ভিতর এত্ত চেঞ্জ কেন? যে শুভ্রকে ছাড়া কিছু বোঝেনা আজ কি এমন হল যে কল রিসিভ করার মত সময় নাই?



– রাত ১০ টার দিকে আন্টি আমাকে বাসায় পৌছে দিল। আন্টি মার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে বলল আপা আমার ১১.৩০ এর দিকে একটা সার্জারি আছে আমাকে এখুনি যাইতে হবে। পরীর খেয়াল রাখবেন বলে চলে গেল আন্টি। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাগ্গিস কিছু বলেনি আন্টি।



– আমি রুমে এসে অনেকক্ষন ধরে কাঁদলাম। এটা কি করে সম্ভব। আমিতো কারো কাছে যাইনি তাহলে। হঠাৎ মনে পড়ল পূজার ভিতর বিকাশ আমাকে কিছু খাইয়েছিল। তারপর ২ দিন ধরে ঘুমাইছি তার মানে বিকাশ!



– নিজেই নিজেকে প্রচন্ড ঘৃনা করতে লাগলাম। কান্নার বাধ যেন আর থামছেই না। কি করে মুখ দেখাব আমি যখন শুভ্র জানবে। একরাশ হতাশা নিয়ে বেলকুনিতে বসে কাঁদতে লাগলাম।



– বার বার ফোনে কল বেজেই চলছে কিন্তু ধরতে মন চাচ্ছে না।
– আরও কয়েকবার কল আসতেই রুমে এসে কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই পুরো শরীর আমার কেঁপে উঠল—————-

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here