অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ২৬

0
2067

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ২৬
নাফিসা মুনতাহা পরী


-“”” আল্লা……..হ্”” আমাকে কেন স্বপ্ন দেখাইলা! আর কেনই বা আমাকে এটা ভাঙ্গতে হবে। কোনদিন ভাবিনি আমাকে শুভ্রের থেকে দুরে থাকতে হবে…….
আমি শুভ্রের জন্য পৃথিবীতে হয়ত আসছি জুটি হিসাবে তাহলে কেন ওকে ছেড়ে আমাকে দুরে থাকতে হবে। বুকের ভিতর অসহ্য ব্যাথা তরপরাচ্ছে।



– পরী…..! আমার কল কেন রিসিভ করিসনি। আর এত্ত বেয়াদপ কবে থেকে হলি।(শুভ্র)


– চোখ মুছে বললাম,,,,,, স্যরি শুভ্র আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও এমনটা হবেনা।


– স্যরি মাই ফুট…….. কোন ভাল মেয়ে এত্ত রাত অবদি বাসার বাহিরে থাকে? তোর এত্ত সাহস কি করে হয় রাত ১০ টা অবদি বাসার বাহিরে থাকা?


– আমি বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে শুভ্র…..


– ল্যাপটপ নিয়ে জলদি আমার রুমে যা।


– আমি এখনও গোসল করি নাই শুভ্র! গোসল করে যাই!


– যা বলছি তাই কর…….. একটা কথা আর বলবি না। go


– আমি ড্রেস, ল্যাপটপ,চাবি,ফোন নিয়ে শুভ্রের রুমে চলে গেলাম এবং এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।


– পলা চট করে বলে উঠল কি ব্যাপার বৌদি সূর্য কোন দিকে উঠছে পরী শুভ্রর রুমে গেল তারপর দরজা বন্ধও করে দিল।


– ওরা স্বামী- স্ত্রী যা পারে তা করুক,,,,,,,, তোর সমস্যা কি! বলেই অনিতা কাজে মনযোগ দিল।


– পলা বেশ খুশি হল যাহোক বৌদি মেনে নিছে সব।




– চোখের পানি বাধ মানছেনা আমার। ল্যাপটপ সেটিং করতেই শুভ্র ভিডিও কল দিল।


– পরী,,,,,! সামনে আসবি না তোকে টেনে বসাব আমি। কাছে থাকলে এতক্ষন কানের নিচে ৫০ খানা চড় পড়ত। কি হল,,,,, আসবি সামনে?



– ওড়না দিয়ে ভাল করে মুখ চোখ মুছে শুভ্রর সামনে একটা হাঁসি দিয়ে বসে পড়লাম।


– পরীকে দেখে শুভ্রের পুরো দিনের একরাশ ক্লান্তি দুর হয়ে গেল যেন।

শুভ্রের দেবীটা কি এই শুভ্রের উপর রাগ করেছে খুব?(শুভ্র)



– শুভ্রের কথাটি শুনে আমার বুকের ভিতর তুলপার করতে লাগল।
এরে ছেড়ে আমি কেমনে থাকব বলেই ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলাম।



– পরীর কান্না দেখে শুভ্রর প্রচন্ড খারাপ লাগল।

পরী! কি হইছে সোনা?
আমার কথায় কি খুব কষ্ট পাইছো সোনা?
শুভ্র কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।



– না শুভ্র,,,,,, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার ভাল লাগছেনা কিছু।


– শুভ্র ল্যাপটপের স্কীনে পরীর মুখে হাত দিয়ে বলল কি হইছে তোমার আমাকে বল। আচ্ছা আমাকে বলতে তোমার অস্বস্তি হলে মাকে বলতে পার। তাও তুমি কান্না করনা। কান্না আমার একদম বিশ্রী লাগে পরী।



– পরী কেবল শুভ্রকে কিছু কথা বলতে যাবে এমন সময় অনিতা দরজায় এসে নক করে।



– পরী চোখটা মুছে জলদি দরজা খুলে দিয়ে বলল মা কিছু বলবেন?


– তোমার নামে কিছু চপ বানিয়ে আনলাম। এসেতো কিছু খাওনি। অনিতা দেখল পরীর চোখ ২ টা বেশ লাল। কিন্তু কিছু বলল না।


– মা! আমারতো পেট ভরাই আছে।


– থাক ভরা,,,, তবুও খেয়ে নিও বলে আমার হাতে ট্রে টা দিয়ে বলল এখন থেকে শুভ্রের রুমেই থাকতে পারো পরী,,, কথাটা বলে মা চলে গেল।


– আমি ট্রী টেবিলে খাবার টা রেখে এসে শুভ্রকে বললাম শুভ্র আমি গোসল সেরে আসি!


– কি যেন বলতে চাইছিলা সেটা বলে যাও।


– আমার মনে নাই শুভ্র।


– শুভ্র আর কিছু না বলে বলল ফোন ওয়াশ রুমে নিয়ে যাও বলেই কল কেটে দিল। শুভ্র বুঝতে পারল পরী ওকে কোন কথা বলতে চাচ্ছেনা।


– মন খারাপের ভিতর ও আমার প্রচন্ড হাঁসি পেল ওর কান্ড দেখে।


– আমি ফোনটা নিয়ে সেট করে ওকে কল দিয়ে সাওয়ার চালু করলাম।


– শুভ্র এক দৃষ্টিতে পরীর গোসল দেখছে এবং ভিডিও টা সেভ অপসনে চাপ দিয়ে মুচকি হেঁসে উঠল।


– আমি যেন সব ভুলে গেলাম,,,,,, শুভ্র তোমার সাথে গোসল করতে আরও ভাল লাগত তাইনা?


– টেনশন নিও আমি এবার এসে তোমার এই সখটাও অতিব চমৎকার ভাবে পূর্ন করব যাতে তোমার সারা জিবন মনে থাকে।



– আমি টাওয়াল পড়ে রুমে আসতেই শুভ্র কল কেটে দিল। আমি চুলটা ভাল করে না মুছতেই ল্যাপটপে আবার কল দিল।


– পরী টাওয়াল না পড়লেও চলতো কিন্তু।


– খুলে ফেলব বলেই ওর দিকে চেয়ে দুষ্টমি একটা হাসি দিয়ে উঠলাম।


– হুম ,,,,,,,, পরী আলমারিতে ড্রয়ারে আমার যতগুলো শার্ট আছে সব বের করতো?


– কেন?


– এত্ত কথা কেন বল হুম! যা বলছি তাই কর।


– আলমারি থেকে সব শার্ট বের করে বললাম এবার কি করব।


– তুমি একেকটা করে পড়। আর আমাকে দেখাও।


– শার্ট গুলো তো নতুন ছিল শুভ্র। নষ্ট হবে তো!


– যা বলছি তাই কর।


– আমি শুভের সামনে একেকটা শার্ট পরে,,,,,,, তারপর চেঞ্জ করতে থাকলাম।


– শুভ্রের ২ টা চোখ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পরীকে দেখছে আর স্কীন শর্ট দিচ্ছে। পরীকে এভাবে কখনও দেখা হয়নি শুভ্রের।


– শুভ্র তুমি পিক তুলে নিচ্ছো? যদি কেউ পেয়ে যায়!


– শুভ্রকে তুমি বোকা ভাব! তুমি যানো না পরী আমি যখন নিউয়র্কে পড়তাম তখন একটা স্যার আমাদের কিছু আস্যাইমেন্টের কাজ দিয়েছিল। আমি স্যারের পুরো আইডি হ্যাক করে কাজ অনায়াসে করছিলাম। পরে স্যার বুঝতে পেরে আমাকে পানিশমেন্ট হিসাবে আবার একটা কাজ দেয়। সেটাও আমি একই ভাবে কাজ কমপ্লিট করি। পরে স্যার আরও কাজ দিয়েছিল বাদবাকি গুলো নিজে থেকেই করেছিলাম। স্যার পরে বলছিল আমাকে এটা শিখাবা!
আমি তাকে বলেছিলাম স্যার আমি যেমন তেমন স্টুডেন্ট না সেটা আপনার আগেই বোঝা উচিত ছিল কিন্তু বার বার পানিশমেন্ট দিয়েছেন। তাই কাজটা আমি আপনাকে শিখাবোনা। তাই এব্যাপারে আমাকে শিখাতে এসো না পরী! তোমার বর কে হ্যাকার ও বলতে পারো।


– বাব্বা আমার বর দেখছি সেই লেভেলের এক্সপার্ট সব দিকে।


– পরী তুমি বার বার পেটে হাত দিচ্ছো কেন? পেটে তোমার বাবু আছে নাকি হুম,,,,,,,


– কথাটা শুনে আমার কলিজা অবদি শুকিয়ে গেল। আমার চোখ ছলছল করতে লাগল।


– কিন্তু শুভ্রের সেদিকে খেয়াল নেই কারন শুভ্র অনেকটা আসক্ত হয়ে গেছে পরীকে এই অবস্থায় দেখে।


– পরী তোমার চুলগুলো সামনে নিয়ে আসতো?


– আমি চুলগুলো সামনে নিয়ে এলাম। চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।


– পরী! তুমি চুলগুলো কিন্তু একদম ভাল করে মোছ না। তবে এভাবে বেশ লাগছে।



– এবার শুভ্র ওর ট্রী শার্টটা খুলে ঠিক বুকের মাঝখানে হাত দিয়ে বলল পরী এখানে কিস♥ করতো আমাকে।


– আমি কয়েকটা ফ্লাই কিস♥ করলাম।


– পরী এভাবে না,,,,,,, এভাবে বলেই কয়েকটা কিস♥ করে দেখালো শুভ্র।


– আমি বেশ গভীর করে অনেক শব্দ করে কিস♥ করলাম।


– শুকরিয়া আমার মিষ্টি বউ। আমার রাত জাগা দেবী বলেই কিস♥ করতে লাগল শুভ্র।


– এবার পরী কান্না করে বলল শুভ্র আমার তোমাকে খুব প্রয়োজন। আমি স্ট্রেজ নিতে পারছিনা আর। আমার নিঃস্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।


– পরীর যে কিছু একটা হয়েছে সেটা শুভ্র ভাল করে বুঝতে পারছে। কিন্তু ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কালকেই ও বাসায় ফিরবে। কিন্তু এটা পরীর জন্য সারপ্রাইজ।



– চিন্তা করনা সব ঠিক হয়ে যাবে সোনা,,,,,,, পরী,,,,,,,,! চোখ বন্ধ করে শুধু এই শুভ্রকে ফিল কর।


– হুমমমমম বলেই চোখ বন্ধ করে ওর কথা শুনছিলাম। যাকে বলে কথার আদর।





– তুমি যান পরী! আমি ১৮ টা সুরা মুখস্থ করে ফেলেছি। কোরআনও খুব ভাল করে মোটামুটি শিখে ফেলছি বলেই কয়েকটা সুরা পরে পরীকে শুনাল শুভ্র।


– শুভ্র তোমার কন্ঠ তো দারুন……. আমার থেকেও ভাল করে সুরা পাঠ করছো।



– তাই! দেখ ল্যাপটপে আমার অনেক সিক্রেটস আছে বলেই সব দেখে দিয়ে শুভ্য পরীকে বলল তুমি দেখ আমি খাবার নিয়ে আসি। পুরা দিন কিছু খাওয়া হয়নি আমার।


– শুভ্র তুমি পুরো দিন খাওনি কেন?


– তুমি পুরোটা দিনে কল রিসিভ করবা না আর আমি মুখে খাবার তুলতে পারব?
আর কখনও এরকম করনা,,,, ,, আমার কষ্ট হয়তো পরী!


– স্যরি শুভ্র। I LOVE YOU my heart ♥


– I Love You Too my mehebuba♥…..

ওকে তুমি দেখ আমি খাবার নিয়ে আসি বলেই শুভ্র চলে গেল।



– আমি শুভ্রের পিক দেখতে লাগলাম। বিভিন্ন কনসার্ট করেছে বিভিন্ন স্থানে সব ফেন্ডরা মিলে। তাছাড়া আরও অনেক বড় বড় অকেশনে বিভিন্ন স্টাইলে পিক তোলা। আমি আবিভূত হয়ে গেলাম শুভ্রের এতটা ট্যালেন্ট দেখে। ওর সমন্ধে আমার আরও জানার দেখছি ষোল আনাই বাঁকি রয়েছে।


– শুভ্র প্লেটে খাবার নিয়ে পরীর সামনে বসে বলল কি দেখা হইছে?


– শুভ্র তুমি এতটা সুন্দর করে গান পারো আমাকে বলনি তো?


– হুম এত্ত গুনের জন্য তোমার বর সব মেয়েদের কাছে অনেক ফেমাস যা তুমি যানো না হয়ত।


– শুভ্র তুমি আমাকে তোমার জিবনে পরবর্তী তে রাখবে তো?


– এবার শুভ্র ভিষন রেগে গিয়ে বলল তোকে কি আমি সাধে বিয়ে করেছি যে সখ মিটল আর ছুড়ে ফেলে দিব? বললাম তো জিবনে কোন মেয়ের সাথে সখে কথা বলিনি প্রয়োজন ছাড়া। এমনকি তোর সাথেও না।


– বারে বকা দিচ্ছো কেন! ভয় করেতো তোমাকে নিয়ে যদি তুমি হারিয়ে যাও!


– আমি না আমার মনে হয় তুই আমার লাইফ থেকে হারিয়ে যাবি। অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে পর।


– তোমার শার্ট গুলো গুছিয়ে রাখি! তারপর ঘুমাই?


– না আমি বাসায় গিয়ে গুছিয়ে রাখব তুমি ঘুমাও।

– আচ্ছা বলেই চেঞ্জ করার জন্য ড্রেস হাতে নিতেই শুভ্র ওর শার্ট টা আমার গায়ে থেকে খুলতে নিষেধ করল।


-পরী এভাবেই ঘুমাওনা,,,,,,,,,,,, আমার এভাবেই তোমাকে বার বার দেখতে ইচ্ছা করছে।


– ওকে শুভ্র বলে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লাম। প্রচুর পরিশ্রম গেছে আজ তাই শুতেই চোখ জুড়িয়ে ঘুম নেমে আসল।



– শুভ্র খাবার কমপ্লিট করে বুকের নিচে বালিশটা রেখে ল্যাপটপ টা কাছে নিয়ে পরীকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরে।



– শেষ রাতের দিকে খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখে শুভ্রর ঘুম ভেঙ্গে যায়। পুরো শরীর ঘেমে ভিজে গেছে শুভ্রের। পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে ও গভীর ঘুমে মগ্ন।

কাল ভালই ভাল বাসায় গিয়ে পরীকে পেলেই হয়। আর ঘুমাল না শুভ্র। এভাবে কিছুক্ষন কেটে যেতেই ফজরের আযানের সুর কানে ভেসে উঠল।

তার কিছুক্ষন পর শুভ্র পরীকে কয়েকটা ডাক দিতেই পরী চোখ মেলে পিটপিট করে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।


– পরী যাও গোসল দিয়ে ফ্রেস হয়ে নামায পড়ো। আর হ্যাঁ ভুলভাল ডিসিশন নিবেনা কিন্তু। বলেই কয়েকটা কিস♥ করল শুভ্র পরীকে।


– আমি ঘুমে ঢুল ঢুল চোখে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালাম।


– পরী ওয়াশরুমে চলে গেলে শুভ্র লাইনটা কেটে দিয়ে উঠে পড়ল।


” সকালটা কেটে গেল এভাবেই। দুপুরে আমরা সবাই খাইতে বসেছি এমন সময় কৌশিকদা বলে উঠল মা! আজকের রান্নাটা গতকালের তুলনায় একটু খারাপ হইছে। সাথে অর্পিতাও যোগ দিল।



– বিমলা বলল এই প্রতিদিন কি রান্না ভাল হয়? এতে ঢোল পিটিয়ে বলার কি আছে তোদের?


– কেন দিদুন যেদিন ভাল হবে সেদিন প্রসংসা করতে কি আমি কার্পন্য করি নাকি হুম(কৌশিক)


– এই তোদের এত্ত পাকামো কথা বলতে হবেনা,,,,,,,, তোরা একদিন রান্না করে আমাকে খাওয়াস। তারপর বড়বড় কথা বলতে আসিস।(মা)


– আমি মার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি অন্যমনস্ক ভাবে কথা বলছেন। তার মানে উনি হয়ত কষ্ট পেয়েছেন।


– অনিতা শুভ্রটাকে খুব মিস করছে। শুভ্র হলে কোনদিন অন্তত তার মায়ের রান্নার ভুল আজ অবদি ভুল ধরেনি। সবাই ভাল মন্দ খাচ্ছে আর আমার ছেলেটা যে কি খাচ্ছে। তবে অনিতা একটু খুশি কারন আজ শুভ্র আসবে সন্ধার দিকে। শুভ্র কল করে আসার কথাটি বলেছিল।



– আমি খাবার খেয়ে চলে আসলাম আমার রুমে। কয়েকটা ভিডিও করলাম আমার এবং ল্যাপটপে সেভ করে রাখলাম দেন সুয়ে পড়লাম।



– বিকেলের দিকে শুভ্রর ফোনে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আমি রিসিভ করে সালাম দিয়েই বললাম কেমন আছো শুভ্র!


– সালাম নিয়ে বলল পরী তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে সোনা!


– কি সারপ্রাইজ বলেই একটা কিস♥ করলাম শুভ্রকে।


– আর ৪৫ মিনিট পর বাসায় আসছি। আমি রাস্তায়।


– কিহ্ তুমি বাসায় আসছো,,,,,, আমাকে কেন বলনি বলেই ধরপড় করে উঠে বসলাম।


– কেন আমি আসাতে তুমি খুশি নও পরী!


– শুভ্র আমাকে কখনও ভুলে যেওনা প্লিজ বলেই ফোন কেটে দিলাম। আমার প্রেগন্সসি রির্পোট ল্যাপটপের নিচে রেখে একটা ব্যাগ আর ফোন নিয়ে মার রুমের দিকে গেলাম।


– শুভ্র অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন একটা ছেলে। তাই বুঝতে পারল পরী কিছু একটা করতে যাচ্ছে। কাল থেকে সব কিছু পরিবর্তন পরীর মাঝে দেখেছে তাই শুভ্র আজ বাসায় ব্যাক করছে। শুভ্র সিটে একটা হাত দিয়ে বারি দিয়ে বলল এত্ত বড় ভুল আমি কিভাবে করলাম।

ওকে কেন কল দিতে গেলাম। এতটা রিক্স হত না বলেই ওর মাকে কল দিল।



– পরী অনিতার রুমে গিয়ে বলল মা আমি একটু আসছি। বাহিরে যাচ্ছি। এদিকে শুভ্রর কল বাজছে। অনিতা সেদিকে তাকাতেই পরী জলদি সিড়ি দিয়ে নামতে লাগল।


– পরী আস্তে যাও পরে যাবা তো?(অনিতা)


– মা শুভ্র হয়ত আপনাকে কল দিছে রিসিভ করুন বলেই খালি পায়ে আধা দৌড়ে বাসা থেকে বের হলাম। এখন দাড়োয়ান মানেজ। দাড়োয়ান এর কাছে গিয়ে বললাম শুভ্র আসছে চাচা আমি একটু রাস্তায় দাড়িয়ে আছি বলেই বের হলাম।

যেহেতু মেইন রাস্তায় বাসা আমাদের তাই ট্রাক্সি পেতে দেরী হলনা। আমি টাক্সি দাড়াতে বলেই,,,,,, বললাম মামা চলেন ট্রাক্সি ব্যাক করুন। কারন এই রাস্তা দিয়ে শুভ্র আসছে। ও আমাকে ধরে ফেলবে।



– না ম্যাম গাড়ি ব্যাক করবনা বলেই টাক্সি নিয়ে যেতেই বললাম ৩ ডবল ভাড়া দিব বলেই ১ হাজার টাকা তাকে দিয়ে উঠে পড়লাম।


– উনিও টাকার জন্য টাক্সি ব্যাক করল।



– ২ বার কল বাজতেই অনিতা শুভ্রের কল রিসিভ করে বলল কোথায় তুই এখন?


– মা পরী কই?




– কেন! একটু বাহিরে গেল। বলল একটু পর আসছে।


– মা! আমার মন বলছে পরী বাসায় ফিরার জন্য বাসা থেকে বের হয়নি। জলদি তুমি ওকে আটকাও। প্লিজ মা জলদি কর। ও বেশি দুর যেতে পারেনি।


– অনিতা শুভ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। কি বলছিস শুভ্র মেয়েটা আমাকে বলে গেল। কিছুক্ষন পরেই চলে আসবে।


– না মা তুমি বোঝার চেষ্টা কর ও আর ফিরবেনা। তুমি জলদি যাও।


– অনিতা এবার নিচে দৌড়ে নেমে এসে বাহিরে চলে গেল।


– অনিতার দৌড়ানো দেখে পলা আর বিমলাও অনিতার পিছে গেল। কি এমন হল যে অনিতা ওভাবে দৌড়াল।


– অনিতা একদম রাস্তায় বের হয়ে দেখে পরী নাই। এতটুকু সময়ের মধ্য গেল কোথায়। ভিতরে এসে দাড়োয়ান কে বলল “পরিমল! পরী কই?


– আঙ্গে মা! দিদিতো চলে গেল শুভ্র বাবা আসবে বলে।


– অনিতা বাসায় এসে আবার শুভ্রকে কল দিয়ে বলল শুভ্র পরী তো নাই। কি বলেছিস ওকে যে মেয়েটা এভাবে চলে গেল। নিশ্চয় কিছু বলছিস মেয়েটাকে। ভাল মেয়ে দুপুরে সবার সাথে খেল আর এখন নেই,,,,,, বোকা বানাচ্ছিস আমাকে!



– মা কথা বলার সময় নাই জলদি আকাশকে বল বাহিরের গেটের সিসি ক্যামেরা চেক করতে। পরী কোন দিকে গেছে ওটা দেখে বোঝা যাবে। জলদি কর মা!



– কি হয়েছে বৌমা এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?(বিমলা)


– মা! সব শেষ বলেই অনিতা আকাশের কাছে গিয়ে বলল আকাশ বাহিরের সিসি ক্যামেরা চেক করতো।


– ওকে ম্যাম বলেই সিসি ক্যামেরা চেক করে অনিতাকে দেখাল। অনিতা দেখল পরী অপজিট দিকে একটা টাক্সি নিয়ে চলে যায় জলদি। পায়ে জুতা অবদি নাই মেয়েটার।


– অনিতা শুভ্রকে কল করে সব বলল।


– ওকে মা আমি ২০ মিনিটের মধ্য আসছি।


– অনিতা রাস্তায় এসে দাড়িয়ে আছে শুভ্রের জন্য।

প্রায় ২৫ মিনিট পর শুভ্রের গাড়ি অনিতার সামনে দিয়ে চলে গেল। শুভ্র শুধু গ্লাস খুলে হাত ইশারা করে দেখাল।


– অনিতার চোখ ছলছল করে উঠল। এইতো বেশ দিব্যি ছিল মেয়েটা কিন্তু কেন এমন করল।



– ভয় আর কষ্ট নিয়ে টাক্সিতে বসে আছি। আমি শুভ্রকে কখনও মুখ দেখাতে পারবনা। কিন্তু কই যাবো সেটাও জানিনা। কিন্তু বাসায় আর ফিরবনা।


– ম্যাম আপনি কই যাবেন কিছু তো বললেন না।


– চলেন,,,,,,, আমি দেখছি বলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।


– শুভ্র ভেবে পায়না কি হল যে এত্ত বড় ডিসেশন নিল পরী। ওকে আজ পেলে ওর ভিমরতি যদি না ছুটাইছি।
কত কষ্ট দিবে আমাকে। ও জানেনা পরীকে ছাড়া শুভ্র থাকতে পারবেনা।



– ট্রাক্সি অনেক দুর চলে আসছে তাই বললাম মামা এখানে থামান।


– এখানে আপনি আসতে চাইছিলেন? জায়গাটা অনেক খারাপ ম্যাম। আপনি সুন্দরী মেয়ে মানুষ এখানে থাকা রিক্স ম্যাম আপনার জন্য তারপর সন্ধ্যা নেমে আসছে।



– চিন্তা করেন না আমার এখানে আত্বীয় আছে। আমি সেখানেই যাব বলে টাক্সি থেকে নামলাম।
টাক্সি ডাইভার ও আর কিছু না বলে চলে গেল।



– আমিও রাস্তা থেকে নেমে অজানা পথে হাটতে লাগলাম। একটু পর হয়ত মাগরিবের আযান দিবে……..

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here