অস্তিত্বের খোজে,১২,১৩

0
2562

অস্তিত্বের খোজে,১২,১৩
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১২



– নিদ্রা আপু আমাকে হাত ধরে টেনে কারে উঠাইলো। আমি বুঝতে ছিলাম না আসলে আমার সাথে কি ঘটছিল। এরা কই থেকে আসল। সব কি আগেই প্লান ছিল! আর্পিতা কি আমার সাথে ইচ্ছা করে এসব কাজ করল।




– আমায় বাসায় এসে দাড় করিয়ে বাসার সবাই কে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগল নিদ্রা আপু।
– কি হয়েছে রে নিদ্রা ষাঁড়ের মত চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?(বিমলা)


– দিদুন তুমিই ঠিক। এই মেয়ে যে কত্ত বড় খারাপ আজ যদি আমি ফলো না করতাম তাহলে কোনদিনই জানতে পারতাম না।
– কি হয়েছে বলবি তো? (বিমলা)



– ও অর্পিতাকে নিয়ে গিয়ে প্রেমলীলা করার সুযোগ করে দিছে একটি ছেলের সাথে। অর্পিতা না হয় কিন্তু এ! এতবড় মেয়ে হয়ে কিভাবে এ কাজ করল।(নিদ্রা)
– স্বাধে আর বলি ওরে বাসা থেকে বের করে দাও। তা না করে ওকে দেবী সাজিয়ে মন্দিরে রেখে পুজা দেয় তোর দাদু আর শুভ্র। আমার সংসার টাকে শেষ করে দিল।



– অনিতা পরীর সামনে এসে জোড়ে একটা চড় মেরে বলল তোকে বিশ্বাস করে নিজের মেয়েকে তোর হাতে তুলে দিছি…. নিজের মেয়ের মত দেখেছি আর তুই কি করলি আমার মেয়েটার সর্বনাশ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস। শুভ্র কে তো শেষ করেছিস এবার মেয়েটার দিকে নজর দিয়েছিস! তোর কি ক্ষতি করেছি যে আমাদের নিয়ে এভাবে সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছিস?




– আমি অর্পিতার দিকে একবার তাকাতেই ও মাথা নিচু করল। এটা অন্তত ওর কাছে আশা করিনি। সত্যটা বলতে পারত। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ফ্লোরে পরে যাচ্ছে।



– নিতাই সেন সব শুনে গম্ভীর হয়ে বলল অনিতা আমি কখনও মানব না যে পরী এই কাজ করতে পারে। দেখ আমাদের অর্পিতার ঘাপলা আছে। আমি মানুষ চড়িয়ে খাই। তাই অন্তত আমাকে বুঝ দিতে এসো না। পরী যাও তোমার রুমে এখানে নাটক তোমাকে দেখতে হবেনা।




– অনিতা এবার প্রথম শশুরের কথার উপর কথা বলল। বাবা একটা পরের মেয়ের জন্য আপনি আমার মেয়েটাকে দোষ দিচ্ছেন! এতটা প্রিয় হয়ে গেল সে আপনার।



– অনিতা যা যানোনা তা নিয়ে তোমায় তর্ক করতে যেওনা। এর ভুল যেদিন বুঝবা সেদিন মাফ চাওয়ার মত সময় পাবানা। আগে নিজের মেয়েকে সামলাও তারপর পরের মেয়েকে নিয়ে টানা টানি কর। কি হল! পরী এখনও দাড়িয়ে আছো? যাও আর নাটক দেখতে হবে না বলে নিতাই সেন চলে গেল।




– আমি কান্না করতে করতে উপরে এসে দরজা বন্ধ করে খাটে বসে কাঁদতে লাগলাম। আমি এখানে থাকতে চাইনা কেন এরা বোঝেনা!



– জিবনে অনেক মেয়ে দেখেছি ওর মত বেয়াদপ মেয়ে কখনও দেখিনি। সবার মুখের উপর দরজা ওভাবে লাগিয়ে দিবে তাই বলে!
আর হ্যাঁ অর্পিতা তোমায় যদি দেখছি পরীর সাথে মিশতে তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন বলেই নিদ্রা চলে গেল।



– আমি বার বার মৃদুলকে কল দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু ও রিসিভ করছেনা। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে কল দিয়েই যাচ্ছি রিসিভ করছেনা। কতবার যে মাসেজ করলাম কোন রিপ্লাই নেই।



– মানুষের বিপদে কাউকে পাশে পাওয়া যায়না। আমি চাপা কাঁন্না করছি। শেষে রেগে গিয়ে ফোনটা একটা আছাড় মারলাম গায়ের জোরে। যার ফলাফল ফোনটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেল।



– আমি সন্ধার পর দাদুর রুমে গিয়ে উকি দিলাম। উনি বসে আছেন। আমি ওনাকে ডাকতেই বিমলা দিদুন বলে উঠল এই মেয়ে তোমার লজ্জা নেই তুমি আবার এখানে এসেছো?



– দাদু রুম থেকে বের হয়ে আমাকে বাসা থেকে বের করে আনলেন। উনি একটা রিক্সা নিয়ে আমাকে উঠতে বলেই উনি উঠে গেলেন। আমি অবাক হয়ে ওনার সাথে উঠলাম রিক্সাই ।



– পরী আমরা আজ রিক্সা ভ্রমন করব চলো। ( নিতাই)
– আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।
– পরী কি হয়েছিল সেখানে আমাকে খুলে বল বলে উনি গম্ভীর হয়ে গেল।
– আমি জগিং এর থেকে সব ঘটনা খুলে বললাম এবং আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলাম।
– দাদু সব বুঝতে পেরে বলল কেঁদনা পরী। অর্পিতার এধরনের কাজ করা ঠিক হয়নি একদম।



– দাদু আমাকে নিয়ে একটা ফুসকার দোকানে নামল। পরী আজ আমার পক্ষ থেকে তোমাকে খাওয়ার টিপস্ দিচ্ছি। কি কি খাবা বল।
– আমি ওনার দিকে চেয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম হাফ প্লেট ফুসকা হাফ প্লেট চটপটি। তারপর বিরিয়ানি, আইসক্রিম আর ২ হাত ভরে চকলেট। কি পারবেন তো খাওয়াতে?



– কি বলো তুমি এই নিতাই সেন পারবেনা এটা কি হয় বলেই অর্ডার দিল খাবার।
– আমার সাথে উনিও খেলেন। যানো পরী আমিও রেনুর সাথে এভাবে শেষ রাস্তায় খেয়েছি। আর আজ বলে একটা মুচকি হেসে দিলেন।



-আমি খাবার শুরু করে দিছি। কষ্টময় দিন শেষে এরকম সারপ্রাইজ জাষ্ট অসাধারণ।
অনেক মজা করলাম। রেস্টুরেন্টে আবার নিয়ে গেল। বিরিয়ানির অর্ডার দিতেই একজন বলে উঠল স্যার মেয়েটি কে?
– উনি হেঁসে বললেন খুব স্পেশাল কেউ।
– আমি হাঁসতে লাগলাম ওনার কথায়।
– খেয়ে আমরা আবার রিক্সাই উঠে পড়লাম। পুরো শহর ঘুরে বেড়ালাম। প্রায় রাত ১১ টার দিকে বাসায় ফিরলাম। আসার সময় অনেকগুলো চকলেট অর্পিতার জন্য দাদু নিয়ে আসলাম।




– বাসায় এসে দেখলাম সবাই যার যার রুমে তাই সোজা আমার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ফোনটা ফ্লোরে পড়ে ছিল ভাঙ্গা অবস্থায় কিন্তু এখন সেটা আমার বেডে পড়ে আছে। হয়ত পলা আন্টি গুছিয়ে তুলে রাখছে।



– আমি ফ্রেস হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছেনা। কেন যে ফোনের উপর রাগ ঝাড়লাম এখন মৃদুলের সাথে কেমনে কথা বলব। বেশ ছট পট করতে লাগলাম। এভাবেই প্রায় ৭/৮ দিন কেটে গেল। মৃদুলের সাথেও আর কথা হয়না।



-একদিন ভার্সিটি থেকে রুমে এসে দেখি আমার বেডে একটা গিফট্ পেপারে মোড়ানো একটা ছোট বক্স। আমি ওটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। কাউকে না পেয়ে বক্সটি খুলে দেখি একটা অনেক দামী ফোন। নিচে একটা চিরকুঠ তাতে লেখা গিফট্। দাদু দিয়েছে? কিন্তু উনি জানলো কি করে আমার ফোন নেই। ধুর যা মনে তাই হোক বলে ফোনে আমার সিম উঠায়ে চার্জে দিলাম।



– সন্ধার পর আমি নামাযে দাড়াবো এমন সময় অর্পিতা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল পরী দিদি স্যরি। আমি সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম।



– আমি অর্পিতাকে এক ধাক্কায় দুরে সরে দেই। এই Don’t tach me and don’t talk me……
-একদম আমাকে ছুবেনা। দেখছো না আমি নামাযে দাড়িয়েছি। তোমার ঘাম আমার গায়ে লাগলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি এখানে কেন এসেছো। আমার ইচ্ছা নেই তোমার চেহারাও না দেখা বলেই নামাযে দাড়িয়ে যাই।



– অর্পিতা অপমান হয়ে কেঁদে ফেলে এবং চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
– যাওয়ার সময় শুভ্রর সাথে ধাক্কা খেল অর্পিতা।
– এই কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন!
– অর্পিতা A to Z সব বলল শুভ্রকে।
– অর্পিতার কথা শুনে শুভ্র ক্ষেপে গিয়ে পরীর রুমে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। কারন পরী নামায পরছিল।



– নামায পড়া শেষ করে উঠে শুভ্রকে দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। এই তুমি আবার আমার রুমে আসছো? সমস্যা কি তোমার!



– শুভ্র কোন কথার জবাব না দিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগল।
– আমি ভয় পেয়ে বললাম শার্ট কেন খুলছো?
– শুভ্র শার্ট খুলে কোন কথা না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফেলে অনেক জোড়ে।
– আমি ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করি বার বার কিন্তু উনি এবার আমার হাত মুচরিয়ে ধরে বলল বেশ অহংকার তোমার বেড়ে গেছে না! দেখি তুমি কেমনে অপবিত্র হয়ে যাও বলে শুভ্র ওর গাল আমার গালের সাথে ঘষিয়ে দিল আর ওর পুরো শরীর আমার সাথে।
– আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম শুভ্র কি করছ। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ছাড়ো আমায় বলতেই ও আমাকে কষিয়ে ২ টা চড় মেরে আমায় খাটে ফেলে দিল ধাক্কা মেরে।
– শুভ্র শার্ট গায়ে জড়িয়ে বলল যদি অর্পিতার সাথে আবার এরকম ব্যবহার করেছো তাহলে এর থেকেও বেশি খারাপ অবস্হার রুপ নিবে।



– আমি খাট থেকে উঠে শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে বললাম তোমার সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত তুলা?
– পরীর চিৎকারে নিদ্রা, অনিতা সহ পলা অর্পিতা চলে আসে।
– শুভ্র এবার আমার সামনে এসে আঙ্গুল তুলে বলল যা বলেছি তা মাইন্ডে রাখবা এতে তোমার ই মঙ্গল। তাছাড়া……….



– শুভ্র কি করছিস আর কি হয়েছে ওর সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেন বলে অনিতা ছেলের কাছে আসল।
– গালে ২ টা থাপ্পড় লাগাও শুভ্র। বেয়াদপ মেয়ের গলার ঝাজ দেখছো?




– বৌদি বউটা আমার তাই অপরাধ করলে আমি ওকে শাসন করব এখানে তৃতীয় পক্ষের কথা বলা আমি একদম পছন্দ করিনা। আর এখানে কি সার্কাস দেখতে আসছো তোমরা! বলেই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– আমি অর্পিতার দিকে ঘৃনার চোখে একবার তাকালাম। অর্পিতা বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– এই তুমি কি শুরু করে দিছো বলতো আমাদের কি শান্তিতে থাকতে দিবেনা। তোমাকে না পারছি গিলতে না পারছি ফেলে দিতে।



– আমি থাকতে চাইনা এই বাসায় সেটা আপনার ছেলেকে জানিয়ে দিবেন। আমার ইচ্ছাও নেই এভাবে কথা শুনে থাকার। ভাগ্য বোঝেন! আমার ভাগ্য খারাপ না হলে আমি এত কথা শোনার পরও এভাবে পরি থাকি?
– আর নিজের মেয়ের কাছে সত্যিটা দয়া করে শুনে দেখবেন সেদিনের ঘটনাটি কি। আমি চুপ করে আছি বলে এই না যে আমি দোষী বলে অন্য দিকে মুখ করে দাড়ালাম।



– ওরা চলে গেল সবাই রুম থেকে। আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাথরুমে রাগে আর কান্নায় ফেটে পড়ি।



– রাত সাড়ে নয়টার দিকে পলা খাবার নিয়ে দরজায় নক করল কয়েকবার তার পরী দরজা খুলে দিল।
– শুভ্র কি তোমায় মেরেছে পরী!
– না আন্টি একটু বকা দিছে এ আর নতুন কি?
– জানো পরী আজ অনিতা বৌদি অর্পিতাকে খুব মেরেছে। আর বলছে এতবড় খেল কেমনে খেললি তুই। একটা পরের মেয়ের কাছে আমাকে ছোট করলি।



– এটা আরোও আগে করা উচিত ছিল আন্টি। আর আমি খাব না আমার ভাল লাগছেনা। আপনি এগুলো নিয়ে যান।
– পালা কিছু না বলে খাবার গুলা রেখে দিয়ে বলল শুভ্র বলেছে তুমি না খেতে চেলেও যেন রুমে রেখে যাই।
– ও পেয়েছেটা কি। ওর কথা মত আমায় চলতে হবে!
– পলা কিছু না বলে চলে গেল।




– রাত ১২ টার দিকে ফোন অন করতেই একের পর এক মেসেজ আসতেই লাগল। জলদি সাইলেন্ট করে ফেললাম। মৃদুলের সব মাসেজ। পড়ার আর সময় পেলাম না তার মধ্যই কল আসল।
– রিসিভ করতেই মৃদুল বলে উঠল পরী?
– উমমমম
– মৃদুল শুনেই কিস করতে লাগল পাগলের মত ফোনে। আমি কাঁদছি আর ওর কিস গুলো গুনছি।
– পুরো হাজার টা কিস করে বলল কই ছিলা তুমি। কতবার কল দিছি। নাম্বার বন্ধ তোমার।
– আমি কোন কথা না বলে শুধু বললাম তোমার কিস করা শেষ!
– বলতে দেরি কিস করতে ওর দেরি নেই। সাথে সাথে আবার পাগলের মত কিস করতে শুরু করল। এবার আর গুনি নাই।



– পরী আমি বিজি ছিলাম সোনা তাই রিসিভ করতে পারিনি বলে এত কষ্ট দেওয়ার অধিকার তোমায় দেই নি। কেন এতটা কষ্ট আমায় দিলা!
– মৃদুল যানতো আমি কি অবস্থায় থাকি বলে সব ঘটনা ওকে খুলে বললাম এবং কেঁদে উঠলাম।
– মৃদুল কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। পরী চলে আসো আমার কাছে। আসতে পারবা না!
– দাদুর জন্য কোথাও যেতে পারিনা মৃদুল।



– পরী কেঁদনা প্লিজ আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি তোমার কতটা কষ্ট হচ্ছে। তুমি যদি আগেই ওদের সত্যটা বলতে তাহলে আজ জল এত দুর গড়াতো না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হয়। জেদটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবা।



– মৃদুল আমার সাথে দেখা করবে?
– মৃদুল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল তোমার পরীক্ষা না কিছুদিন পর। শেষ পরীক্ষায় তোমার সাথে দেখা করব।
– এবার খুশিতো ম্যাম!
– উমমমম খুব খুশি বলে একটা মুচকি হাঁসি দিলাম।
– পরী আর রাত জেগো না ঘুমিয়ে পড়। কিছু খেয়েছো!
– না…….
– জলদি খেয়ে নাও। খাবারের উপর রাগ করতে নেই। আমরা দেখা করছি তোমার শেষ পরীক্ষায় that’s final…..
-হুম….
– খেয়ে ঘুমিয়ে পড় আমা প্রিয়। I love you pari…♥
– I love you toooo Mredul….



– খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
– সকালে দরজায় জোড়ে জোড়ে ধাক্কায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। পলা জোড়ে জোগে চিৎকার করে পরীকে ডাকছে।
– আমি ধরপড়িয়ে উঠে দরজা খুলে পলা আন্টিকে দেখে চুপসে গেলাম।

চলবে……….

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১৩

” পলা আন্টিকে বললাম কি হয়েছে আন্টি ও রকম কেন করছেন?
– পরী জানো অর্পিতা বাসায় নেই। কোথায় যেন চলে গেছে। কাল বৌদি মেয়েটাকে খুব মেরেছে। গিন্নী মাতো সেই তোমাকে ঝাড়তেছে। তুমি যেন ও দিকে যেও না।
– সেদিকে না হয় গেলাম না কিন্তু অর্পিতা কোথায় গেল। বাসার সবাই খোঁজ করেছে?




– ভোর থেকে খোঁজ করছে সবাই। কিন্তু কোন খোঁজ পায়নি। বাসার মান সম্মানের ভয়ে থানায় ও যেতে পারছেনা।
– আমি একটা হাই তুলে বললাম চিন্তা করোনা এসে যাবে। ও যে ভীতু অন্তত এই ধরনের কাজ করবেনা।
– পরীর কথা শুনে পলা একদম বাক্কেল হয়ে গেল। এই মেয়ে বলে কি। অর্পিতা বাসায় নেই এর দেখি কোন চিন্তায় নেই। কিছুদিন আগেও কি মিল ছিল ২ জনের আর এখন!




– সকাল ১১ টা বেজে গেল অর্পিতার কোন দেখা নেই। বাসার সবাই ভেঙ্গে পড়েছে। আমি নিচে নেমে সোফায় গিয়ে বসে চুপ করে আছি।
– এই পরী তুমি না বললা অর্পিতা নাকি চলে আসবে! কই এলো না তো।
– হুম আন্টি সেটাই ভাবছি খুব চিন্তার বিষয় দেখছি।




– বিমলা দিদুন আমার সামনে এসে ও দিদি ভাই বলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল। অনিতা আন্টি রুম থেকে নাকি বেরই হয়নি। এক কান্নায় আছে।
– পরী! মাকে যদি কাল ওভাবে কথা না বলতে হয়ত আজ অর্পিতা বাসায় থাকত। রেগুলার ১টার পর ১ টা সমস্যা বাসায় তুমি দাড় করাচ্ছো। আমাদের বাঁচার মত পথ রাখছোনা তুমি।
– নিদ্রা আপুর কথা শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে ওনার দিকে চেয়ে আছি আমি।
– দিদুন ও এই সুযোগে আমাকে ইচ্ছা মত ঝাড়লো। আমার আর গায়ে লাগছে না। এমনিতেই মহিলা আমায় দেখতে পারেন না আর আজ আবার এই বিপদের সময়। কথার মেশিন সেই থেকে চালু করেছে এখন অবদি থামছেই না। কি বাচাল মহিলারে।




– আমি একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে দিদুন কে বললাম আর যাই হোক আপনার ওমন নাতনী বাসা থেকে বের হয়নি। একটু খুজে দেখেন বাসায় আছে বলে উপরে উঠতেই অনিল আঙ্কেল বলল পরী এই সময় এধরনের কথা বললেই কি নয়!



– আমি পিছন ফিরে বললাম আপনাকেই এতক্ষন খুজছি আঙ্কেল আসেন আমার সাথে আপনার ভীতু মেয়ে কই আছে আপনাকে দেখিয়ে দেই।


– দেখছেন বাবা কি রকম মুখের ভাষা। দেন দেন আর ও তেল দেন। কিছু না বলে মাথায় উঠেছে।(নিদ্রা)


– আমি ও দিকে কোন কথা না বলে উপরে উঠতেই শুভ্রকে পেলাম। ওর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। এমনিতেই যে গৌর রং তার গায়ের তার ভিতর কান্না হয়ত করেছে। লাল আপেলের রং ধারন করেছে যেন। দেখে বেশ দয়া হলো।


– শুভ্রর হাত ধরে ওকে আমার সাথে নিয়ে গেলাম। এই প্রথম শুভ্রর হাত নিজ ইচ্ছায় ধরেছি তাও কোন অভিমানে নয়।
– ওকে নিয়ে ছাদে আসলাম। ও অবাক হয়ে কেবল কথা বলতে লাগবে আমি মুখে হাত দিতে চুপ থাকতে ইশারা করলাম। ও একদম চুপ।




– পাশে চিলাকোঠা রুমে ঢুকলাম ২জন। শুভ্রতো নাক সিটকাচ্ছে।
– অর্পিতা অনেক নাটক দেখাইছো বের হয়ে আসো। তোমাকে কেউ কিছু বলবেনা দেখ তোমার শুভ্রদা এসেছে।
– কোন সাড়াশব্দ নেই। শুভ্র রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– ওর চেহারা দেখে আমি একটা বড়সড় ঢোক চিপলাম এবং বললাম ও ভাবে তাকিয়ে কেন আছো! অর্পিতা এখানেই আছে।
– শুভ্র হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল মজা করা বাদ দাও। মনতো চাচ্ছে কষিয়ে ২ থাপ্পড় লাগাই কিন্তু তোমার কপাল ভাল আমার মোড অফ বলেই পা বাড়াল।




– অহ এতদিন তাহলে খুশির ঠেলায় আমার গায়ে হাত তুলেন মি. শুভ্র! আজ…….ব বলেই একটা ভাঙ্গা আলমারির পাশ থেকে অর্পিতাকে হাত ধরে টেনে আনলাম।
– আমি ওর গায়ে হাত দিতেই ও হাউমাউ করে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
– অর্পিতার কান্না শুনে শুভ্র পিছন ফিরে দাড়িয়ে পড়ল। অর্পিতা আমার থেকে হাত ছাড়িয়ে ছুটে গিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর ওর ২ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছিল ২ গাল দিয়ে টপ টপ করে। আহ্ কি ভালবাসা ২ ভাইবোনের।




– নাহ্ একে এভাবে দেখলে হবে না শেষে ওর মায়ায় পড়ে যেতে পারি বলে নিচে নেমে আমার রুমে এসে বই নিয়ে বসলাম। সামনে পরীক্ষা অনেক পড়া বাকি আছে।




– শুভ্র অর্পিতাকে নিয়ে নিচে নামতেই সবাই হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। পলা দৌড়ে অনিতার রুমে গিয়ে বলল বৌদি অর্পিতাকে পাওয়া গেছে। আমরা ছোট বেলা থেকে অর্পিতাকে দেখে আসছি আর পরী কয়েক দিনের মেয়ে হয়ে ওর সব কথা বুঝে ফেলল?




– আজ ভার্সিটিতে যেতে চাইলাম তাও যাওয়া হলো না এই অর্পিতার জন্য। যাই হোক ওকে পাওয়া গেছে। একদিন কথার ছলে বলেছিল রাগ করে থাকলে ও ঐ জায়গায় গিয়ে লুকায়। আগে বিস্বাস করিনি এখন করতে হলো ওর কান্ড কারখানা দেখে।




– দিনগুলো বেশ ভালয় কাটছিল। আমি আমার মত চলি। মৃদুল, পড়াশুনা, দাদুর সাথে মাঝে মাঝে বাহিরে যাওয়া বেশ চুটিয়ে ইনজয় করছি।




– একদিন নিদ্রা আপু এসে বলল পরী চল রেডী হও।
– আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম কই যাবো আপু?
– আমরা বাহিরে যাচ্ছি। তোমার দাদা, আমি,শুভ্র, অর্পিতা একটা কাজে যাচ্ছি। তুমি কি মনে করবা তাই বলতেও পারছিনা। চলতো রেডী হও বলে আমার হাতে একটা শাড়ী ধরিয়ে দিল।
– আপু আমি শাড়ী পড়তে পারিনাতো।
– যাও মাকে বল উনি দারুন শাড়ী পড়াতে পারেন বলে চলে গেলেন।




– আমি বাধ্য হয়ে অনিতা আন্টির কাছে গেলাম।
– আমাকে দেখে উনি বলল কিছু বলবে?
– না মানে এই শাড়ীটা পড়তাম একটু পড়িয়ে দিবেন! নিদ্রা আপু আপনার কাছে আমাকে পাঠিয়ে দিল।
– তুমি কি নিদ্রাদের সাথে যাচ্ছো?
– হুম আপু জোড় করল তো তাই।
– উনি কিছুটা ভ্রু কুচকে বলল তোমাকে সেখানে কেন নিয়ে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছিনা। তবে নিজেকে সামলিয়ে রাখ। উনি বলল ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে নাও আমি আসছি বলে দরজা ভিরে দিয়ে চলে গেল।




– আমি ব্লাউজ গায়ে দিতেই মা বলে ডেকে কেউ দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল।
– আমি চট করে ওড়না শরীরে জড়িয়ে ফেললাম। আল্লাহ্ দরজাটা নক্ করতে ভুলে গেছি। কোন পুরুষ মানুষ আসলো না তো!




– দরজা নক করে পোশাক বদলাতে পারনা! আমার জায়গায় যদি দাদা বা বাবা আসতো তাহলে কি সম্মান টা থাকত? নিজের টা তো নেই সাথে আমারটাও রাখবা না দেখছি।
– আমি চেতে উঠে বললাম এই দেখছো তো দরজা বন্ধ নক করে আসতে পারোনা! আবার বড় বড় মুখের বুলি ঝাড়ছো?




– মার রুমে আমি যখন ইচ্ছা তখন আসব…… তোমাকে কি সেধে আসতে হবে?(শুভ্র)
– আপনি যাবেন! বলতেই অনিতা আন্টি রুমে এসে পড়ল।
– এবার শুভ্র বেশ লজ্জা পেয়ে গেল।
– এই তোরা কি সবসময় ঝগড়া করেই যাবি। নিজেদের উপর কি দয়ামায়াও নাই। আর শুভ্র তুই এখানে কেন?
– একটা কাজে আসছি মা। পরে বলব বলেই চলে যেতেই অনিতা বলে উঠল পরী কে কি ওখানে যাওয়া খুব দরকার?
– হুম খুব বলেই শুভ্র চলে গেল।
– অনিতা বিষন্ন মনে পরীকে শাড়ী এবং মাচিং করে জুয়েলারি এবং সুন্দর করে খোপা বেঁধে দিল।
– পরী তোমাকে আমার খুব পছন্দ। খুব সখ ছিল কিন্তু তোমাকে হয়ত আর নিজের ছেলের বউ হিসাবে রাখতে পারবনা আর। সাবধানে চলে যাও।



– আমি ওখান থেকে আমার রুমে এসে মোবাইল আর পার্স নিয়ে সোজা কারে বসলাম।
– কিছুক্ষন পর ওরা সবাই এলো।
– অর্পিতা পরীকে ডেকে নিয়ে আয় তো বলে শুভ্র ডোর খুলতেই আমায় দেখতে পেল।
– অর্পিতা যাওয়া লাগবেনা ও এখানেই আছে। আমার পাশে এসে নিদ্রা ও অর্পিতা বসল।
কৌশিক আর শুভ্র সামনে। শুভ্র ড্রাইভ করছে।




– ১ ঘন্টা পর আমরা একটা বিলাশ বহুল রেস্টুরেন্ট এ এসে নামলাম গাড়ি থেকে। জিবনে প্রথম শাড়ী পড়েছি। হাটতে পারছিনা ঠিক মত। তবুও কষ্ট করে হাটতে লাগলাম।
– একটা টেবিলে আমাদের বসতে বলে শুভ্র খাবার অর্ডার দিল।
– অর্পিতা আমরা এখানে কেন এসেছি?
– দাদার জন্য বউ দেখতে?
– মানে?
– শুভ্রদা র জন্য মেয়ে দেখতে আসছি। মেয়েটা শুভ্রদার কলিগ। আজ পছন্দ হলে বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।
– অর্পিতার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এর জন্যই তখন আন্টি আসতে নিষেদ করছিল!




– আমি খুব অপমান বোধ করছিলাম। আমাকে দেখানোর জন্য প্লান করে এরা এখানে নিয়ে আসল!
– আমি চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছি। শুভ্র মনে হয় বার বার তাকাচ্ছে।

– পরী আজ তোমাকে জাষ্ট ওয়াও লাগছে বলে নিদ্রা আপু আমার দিকে তাকালো।

– আমি স্মিত হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানালাম।
– খাবার চলে আসল। একটার নামও আমি জানিনা। সব বিদেশী খাবার। দেখলেই গা গুলাচ্ছে।
– একটু পর একটা মেয়ে এবং একটা ছেলে সাথে তার ওয়াইফ আসল।
– বুঝলাম এই মেয়েটিকে দেখতেই আসছে ওরা। আমি অর্পিতার সাথে কথা বলতে বাস্ত হয়ে গেলাম।



– মেয়েটির নাম নিতু। নিতু এসে একদম শুভ্রর পাশে বসল। যা পারে তা করুক আমার কি তাতে বলে খেতে লাগলাম।
– মেয়েটি কে শুভ্র! বলে নিতু ভ্রু কুচকে শুভ্রেরর দিকে তাকালো।
– আমাদের বাসায় থাকে মুসলিম মেয়ে। পরী নাম ওর। বিবাহিত ও।
– আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ও একটু হাসল।




– ওরা ২ জন ২ জনকে পছন্দও করেছে
একটা দিন দেখে বাসায় অবিভাবক পাঠিয়ে দিবে আর্শিবাদের জন্য ডেট করতে।
– শুভ্র বেশ মনে হয় খুশিতে আছে। ন্যাকামো দেখলে শরীর জ্বলে যায়।




– ঘন্টা ২ য়েক গল্প করল ওরা এর পর নিতু বলল কিছু মনে না করলে একান্তে শুভ্রর সাথে কথা বলতাম।
– আরে এখানে মনে করার কি আছে যাও তোমরা।
– ওরা বাহিরে চলে যেতেই আমি নিদ্রা আপুকে বললাম আপু আমরা তাহলে বাসায় যাই বলে অর্পিতাকে নিয়ে বের হলাম।



“- আমি আর অর্পিতা একটা রিক্সা নিয়ে বাসার পথে আসতে লাগলাম।
– অর্পিতা তোমরা প্লান করে আমাকে এখানে এনেছো তাই না?
– ও আমার কথা শুনে চুপ করে থাকল।
– কথাটা বাদ দায়ে ওকে বললাম সেই ছেলের সাথে কি তোমার সম্পর্ক এখনও আছে অর্পিতা!
-ও থতমত খেয়ে বলল কেন দিদি?
– অল্প বয়স আবেগে পড়ে গেছ তাই বুঝতে পারছোনা কি সর্বনাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো।
– ও আমাকে খুব ভালবাসে দিদি।
– ও কিসে পড়ে?
– তোমার সেম ক্লাসে।
– ওকে চল আজ ওকে পরীক্ষা করি। যদি তুমি ঠিক থাক আমি নিজে তোমাকে সবসময় হেল্প করব আর যদি আমি ঠিক থাকি তোমাকে ওকে ছাড়তে হবে। প্রমিস!
– ওকে বলে অর্পিতা ওর বফ কে কল দিয়ে আসতে বলল।




– আমি কিছুটা দুরত্বে বসে আছি আর মৃদুলের সাথে চ্যাট করছি।
– অর্পিতার বফ এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন কথা বলতে লাগল। অনেকক্ষণ পরে অর্পিতা উঠে আড়ালে গেল। এবার আমার কাজ। আমি ছেলেটির সামনে গিয়ে বললাম ভাইয়া আমাকে একটা হেল্প করবেন?
– ছেলেটি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল জ্বী আপু বলেন কি করতে হবে। বসুন এখানে।
– আমি বসে ফোনের বিভিন্ন সফটওয়ার সম্পর্কে জিঙ্গাসা করতে লাগলাম।
– টোপ ফেলেছি এখন ব্যাটা গিললেই হয়।
– আপু আপনার নাম কি!
– ফারিয়া।
– কিসে পড়েন?
– সব ডিটেলস্ বললাম। এবার আসি ভাইয়া।
– আপু আপনার নাম্বারটা দেওয়া যাবে!
– ওকে বলে দিলাম।
– লাষ্ট মুহুত্বে বলেই ফেলল আপু আপনি এত সুন্দর কেন?
– জানিনা বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসলাম। মনে হয় কাজ হয়েছে।



– অর্পিতাকে নিয়ে বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বেচারা অর্পিতার মুখ শুকিয়ে গেছে।
– বাসায় এসে ফ্রেস হতেই অর্পিতা চলে আসল আমার রুমে।
– দিদি নোমান কিন্তু ও রকম ছেলে না। আর তুমি সুন্দর অনেক তাই যে কেউ তোমার সাথে একটু কথা বলবে।
– তাই! তোমার শুভ্র দা কে বলো তো কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে?
– আমি বিশ্বাস করি ও কখনও তাকাবেনা।
– তাহলে তুমি দাদাকে কেন ভালবাস না দিদি। দাদাকে কেন কষ্ট দাও।
– আমি চুপ করে থেকে বললাম তুমি বুঝবা না।



– কথা শেষ না হতেই নোমানের ফোন। আমি অর্পিতাকে দেখিয়ে দিয়ে বললাম দেখ তোমার ভদ্র হিরো কল দিয়েছে!
– স্পিকারে ফোন দিয়ে কথা চলতে লাগল।
– আপনি কি রিলেশন করেন ভাইয়া সাথে একটা মেয়েকে দেখলাম।
– আরেহ না ওটা আমার ছোট বোন ছিল।
– আপনি করেন রিলেশন?
– না তেমন কাকে পাওয়া যায়নি যে আমাকে বুঝবে।
– কি বলেন আপনাকে দেখে তো আমি ফিদা হয়ে গেছি। বলে অনেক কথা বলল।
– শেষে এক পর্যায়ে প্রপোজ করে বসে।
– অর্পিতা রাগে কল কেটে দিল।
– অর্পিতা আশা করি প্রমিস টা রাখবা। ও চোখের পানি মুছে চলে গেল রুম থেকে।




– হায়রে জিবন।
– রাত ১০ টার দিকে পলা খাবার দিয়ে গেল পরীকে।
– খাবার খেয়ে একটু পড়লাম। ঘড়িতে দেখলাম রাত ১২.১০ মিনিটে মৃদুল কে কল দিলাম। কিন্তু ধরলনা। কয়েকবার দিতেই কেটে দিল। আমার রাগ চরম পর্যায়ে পৌছে গেল। রুম থেকে বের হয়ে ছাদে গেলাম। আকাশে আধখানা চাঁদ। বেশ আলো ছড়াচ্ছিল। খুব বাতাশ হচ্ছিল মনে হয় বৃষ্টি হবে।




– এমন সময় মৃদুলের কল এলো। প্রথমে ধরলাম না। আবার দিল। আবার দিল। এভাবে ৭ বার দেওয়ার পর ধরলাম।
– জান সোনা আমার কলিজা স্যরি বাহিরে ছিলাম তাই দেরী হয়ে গেল বলে কয়েকটা কিস করল।
………………………………..?
– কথা বল সোনা এমন করছো কেন! আমার কষ্ট হয়না বুঝি?
………………………………….?
– I Love you jan কথা বল।
– তুমি এভাবে কেন কথা বলছো। আর এত রাত অবদি কই ছিলা?
– স্যরি কাজে ছিলাম একটু আদর করনা।
– বিষন্ন মনে কয়েটা কিস করলাম এই প্রথম ওকে।
– মৃদুল…….?
-…………………?
– এই মৃদুল বলতেই কল কেটে গেল।
ধুর ভাল লাগেনা। নেটওর্য়াক প্রবলেম।



– কতদিন থেকে এই প্রেমলীলা চলছে পরী?
– আমি থমকে গিয়ে পিছন ফিরে দেখি শুভ্র।
– আমার পুরো শরীর জমে ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি থতমত হয়ে গিয়ে বললাম মানে!
– আমার সামনে এসে ঠাশশশ্ করে একটি চড় দিয়ে বলল কত দিন থেকে চলছে এসব! ছেলেটার কে?
– আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে বললাম ও মৃদুল ওকে আমি ভালবাসি। প্লিজ আমাকে মুক্ত করে দাও। আমার আর এজিবন ভাল লাগেনা।



– আমি কাঁদছি আর ও অন্ন দিক ফিরে কাঁদছে। আমার উপায় নেই আর।
– এমন সময় ও আমার কাছে এসে শক্ত করে ধরে বলল আমার মধ্য কি নেই যা তুই মৃদুল নামে ছেলেটার মধ্য পাইছিস?
– ধর্ম যেটা তোমার মধ্য নেই যা ওর ভিতর আছে। আর তুমি কি নেশা করেছো শুভ্র।
– শুভ্র আমার কথায় কান না দিয়ে বলল তোর জন্য কত কেঁদেছি জানিস। জোরে কাদতে পারিনা লজ্জায়। রুমে হাই পাওয়ারে বক্সে song চালিয়ে দিয়ে কাঁদি আমি আর তুই অন্য ছেলের সাথে প্রেম করে বেরাস? তোর আর অর্পিতার মধ্য পার্থক্য কি থাকল।
– শুভ্র প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও……….
– মুক্তি বলতেই জোগে বৃষ্টি নামতে শুরু হল। ও আমার একদম কাছে একে আমার ঠোটে কিস করে বলল আমি রোজ এভাবে নিতুকে আদর করব তোর কিছু হবেনা?
– না।
– এবার আমার ঘাড়ে, ঠোটে, বুকে, পিঠু কিস করে বলল আবার ভেবে দেখ তুই স্যতি কষ্ট পাবি না তো?
– না না না আমায় ছাড় বলছি বলে ধাক্কা দিলাম।
– ও আমাকে আবার ঠাশশশ্ করে চড় মেরে বলল ভাল যখন বাসিস না আমার জিবনে কেন এলি। মৃদুল কি জানেনা তুই বিবাহিতা মেয়ে।
– আমি ফিকরে উঠে বললাম যানে।
– তাহলে নিশ্চয় বলেছিস আমাদের মধ্য শারিরীক সম্পর্ক হয়নি!
……………………………?
– আমি জানিতো এটাই তোর মেইন অস্ত্র। সুযোগটা আমি তোকে দিয়েছি। আর না বলে পরীর ওড়নাটা একটানে খুলে ফেলল। ভালবাসা যখন বুঝিস না তাহলে দেখ কেমনে ভাল বাসতে হয় বলেই ওর ২ হাত মুঠোর ভিতর ধরে।
– আমি কিন্তু চিৎকার দিব শুভ্র ছেড়ে দাও বলছি তুমি নেশার ভিতর আছো। এই অবস্থায় ভুল করোনা পস্তাবে কিন্তু।
– দে না চিৎকার তোর গলার জোর কত আছে। সবাই দেখুক শুভ্র কাপুরুষ না বউকে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় সেটা জানা আছে বলে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
– আমি উপায় না পেয়ে ওর হাতে কামড় দিলাম। ও আমাকে আবার একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল এবার দেখ কামড় দেওয়ার কি জ্বালা বলে ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিল। আমি শব্দ করতেই ও ওর ঠোট দিয়ে আমার ঠোট চেপে ধরল।



– শারিরীক সম্পর্ক ছাড়া শুভ্র সব কিছু করে পরীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল ফ্লোরে।
– মৃদুলকে বলিস আমি তোর পুরো শরীর ব্যবহার করেছি। আবার যদি যোগাযোগ করিস বাঁকিটাও পুরুন করব। দেখি ও এবার তোকে কেমনে গ্রহন করে। আমার ভালবাসা দেখেছিস কিন্তু ক্রোধ দেখিস নি।

– আজ থেকে কষ্টের দিন গোনা শুরু করে দে। এত এতটা আঘাত পাবি যে নিজের ভুলগুলো শুধরানোর জন্য আমাকে আর খুজে পাবিনা বলে শুভ্র চলে গেল।

চলবে________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here